হৃদয়ের ছোঁয়া পর্ব-২+৩

0
512

#পর্ব২+৩
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

পরিবেশ এখন নিস্তব্ধ,শান্ত। কোনো প্রকার কোনো কোলাহল নেই। সূর্য প্রায় ঢেলে পড়েছে। সন্ধ্যা হবার আভাস দিয়ে দিলো প্রকৃতি। কিয়ৎক্ষন পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনাটির জন্য বিয়ে বাড়ির কোলাহল পূর্ন পরিবেশ নিস্তব্ধতায় গ্রাস করেছে। প্রতিটি মুখ উদ্বিগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে সোহার দিকে। ছোঁয়ার মধ্যে কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলো না। হয়তো নিজের বিয়ের দিনে এতোগুলো অবাক করা ঘটনা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে কোনো কিছুতেই কোনে ভাবান্তর দেখা গেলো না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া। সোহা বলতে লাগলো,

–“আমি ঠিকই করেছি রে আপু। আমি হৃদয়কে ভালোবাসি আর ও আমাকেও ভালোবাসে। মোট কথা আমরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসি তাই এই বিয়েটা করতে চাইছি।”

সোহার কথা শুনে ছোঁয়া মাথা উঁচু করে কিঞ্চিৎ পরিমান হৃদয় আর সোহার দিকে তাকালো। হৃদয় কীরকম ভাবে রয়েছে। আর সোহা তার মুখ দেখে কেনো জানি মনে হচ্ছে না সে মিথ্যা বলছে। সোহার বলা বাক্যগুলো ছোঁয়ার মস্তিষ্কে তীরের ন্যায় বিধলো। কথাগুলো মনে পড়তেই গাল বেয়ে দু ফোঁটা অশ্রু কনা গড়িয়ে পড়লো। ছোঁয়া বলে ওঠলো,

–“এতোই যখন তোরা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসতিস তাহলে বিয়ে করে নিতি? আমাকে তোদের মাঝখানে টানলি কেনো? কেনো? অসম্মানিতো করলি আমাকে পুরো পরিবার, সমাজ এর সামনে? কেনো করলি এমনটা আমার সাথে তুই?”

শেষের কথাটি প্রায় অনেকটা জোড় গলায় চিৎকার করে বললো ছোঁয়া। বোঝাই যাচ্ছে কতোটা কষ্ট পেলে এভাবে কথা বলে মানুষ। সোহা মুখ খুলবে কিছু বলার জন্য ঠিক তার আগ মুহুর্তেই গালে পরপর দু’টো থাপ্পড় খেয়ে মাটিতে ছিটকে পড়ে গেছে! থাপ্পড় টা বেশ জোড়ে দেওয়ার কারনে মাটিতে পড়ে গেছে। মাটি থেকে ওঠে গালে হাত দিয়ে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে তার বাবা নামক মানুষটির দিকে! ভাবতেও অবাক লাগছে যে বাবা কি-না সোহাকে এতো ভালোবাসতো সেই বাবাই আজ তাকে সকলের সামনে এভাবে থাপ্পড় মারলো! তাঁদের বাবা প্রলয় আহম্মেদ বলে ওঠলো,

–“তোকে ছোটেবেলা থেকে এতো ভালোবেসে এসেছি কার এই নমুনা দেখালি তুই আজকে? নিজেরই আপন বড়ো বোনের বিয়েতে বউ সেজে বসে আছিস? এতোই যখন ইচ্ছে ছিলো আমাকে কেনো বললি না কোনো কিছু? কেনো সবার সামনে আমার বড়ো মেয়ের মান সম্মান নষ্ট করলি সাথে আমাদেরও।”

সোহা অশ্রু টলমল, করুন চোখ নিয়ে সামাদের দিকে তাকালো। সামাদ সোহার চাহনি দেখে বুঝে গেলো হয়তো সোহা সব বলে দিতে চাইছে। কিন্তু সামাদও সোহাকে তার চোখ দ্বারা ইশারা করে আস্বস্ত করলো। যার অর্থ হলো কিছু হবে না। যেমনটি আছে সবকিছু যেনো ঠিক তেমনই থাকে। সোহাও সামাদের ইশারা পেয়ে বলে ওঠলো,

–“ভুল কি করেছিলাম আমি বাবা? আমি তো শুধু হৃদয়কে ভালোবাসি। আর জানো শুধু আমি নই হৃদয়ও আমাকে ভালোবাসে।”

এবার আর সইতে পারলো না ছোঁয়া দাঁড়িয়ে যাওয়া থেকে দুম করে বসে পড়লো মেঝেতে! কে বুঝবে ছোঁয়ার এই যন্ত্রনা? নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছোঁয়ার নিজেরই বোন বারংবার বলছে তারা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসতো! অথচ এই হৃদয় কেই সে নিজেও ভালোবাসতো। ছোঁয়ার ভাবনার মাঝেই ছোঁয়ার বাবা বলে ওঠলো,

–“তাহলে আগে বলিস নি কেনো? কোনো কিছু আমাদের? কেনো লুকিয়েছিস সবটা? এতো কষ্ট করে মানুষ করেছি তোকে আজ এই দিনটা দেখবার জন্য? আর হৃদয় তুমিই বা কিছু বলো নি কেনো?”

সোহা তার বাবার কথার কিছু বলবে তার আগেই ছোঁয়ার মা এসে দাড়ালো সোহার সামনে। মা’কে দেখে সোহা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। বাবা তো তার গায়ে হাত তুললো এবার তার মা কি করবে তার সাথে? সেহার ভাবনার মাঝেই সোহাকে অবাক করে দিয়ে সোহার মাথায় হাত বুললো তার মা সুপ্তি বেগম। সোহা হাতের উল্টোপিঠ দ্বারা গালে বেয়ে পড়া অশ্রু মুছে মাথা উঁচু করে তাকালো তার মায়ের দিকে। তার মায়ের কি করুন চাহনি নিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সুপ্তি বেগম বলে ওঠলো,

–“তোর বাবা তোকে মেরেছে, তোর আপুও তোকে বকছে আমি কিছু করবো না রে? তুই শুধু একটিবার বল আমাকে কি হয়েছে তোর মা? কেনো তুই এরকম টা করলি? আমাকে বল আমি তো তোর মা আমি সবটা বুঝে নিবো।”

সোহা মমতা ভরা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এক মুহুর্তের জন্য ভাবলো বলে দিবে সবটা। কিন্তু পরক্ষনেই চোখ যায় অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সামাদ এর দিকে। সামাদ আবারো চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে তখনকার মতন সোহার দিকে। সোহার বুঝতে বাকি থাকলো না কিছু। সে তার মায়ের সামনে থেকে সরে গিয়ে বললো,

–“এতো দরদ দেখাতে হবে না তোমাকে। আমি যা বলেছি সবটাই ঠিক আর আমি এটাই করবো। তোমাদের যা ইচ্ছে হয় তোমরা বলো আমাকে।”,

সোহার তার মা’কে কথা বলতে দেরি হলো না তারপরেই গালে পরপর তিনটে থাপ্পড় পড়লো! সোহা প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে। সুপ্তি বেগম বলে ওঠলো,

–“হয়তো ভেবেছিলাম তুই সবাইকে ভয় পেয়ে এসব বলছিস। কিন্তু এখন দেখছি তুই যা বলছিস করতে চাইছিস সবটাই নিজের ইচ্ছেয় জেনে বুঝে। কি রকম মেয়েকে পেটে ধরলাম আমি যে কিনা নিজেরই বড়ো বোনের জীবন নষ্ট করার জন্য ওঠে পড়ে লেগেছে!”

আশেপাশের এলাকার মানুষ আত্নীয় স্বজন সকলে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো। কিন্ত সোহার যেনো তাদের কোনো কথাই কানে ঢুকছে না এরকম ভাব করে বসে আছে। আর ওদিকে ছোঁয়া পাথরের মূর্তির ন্যায় বসে রয়েছে এখনো। চুপচাপ হয়ে গেছে কোনো কথা বলছে না। সোহা কাজীর উদ্দেশ্য বলে ওঠলো,

–“আপনি বিয়ে পড়ানো শুরু করেন তো?”

সোহার এই কথায়ই যেনো আগুনে ঘি ঢালার মতন কাজ করলো হৃদয়ের কানে! অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সোহার দিকে! রাগান্বিত স্বরে সোহাকে বললো,

–“ব্যস এবার থামো তুমি সোহা! অনেক হয়েছে এবার থামো মানে থামবে তুমি আর কোনো কথা না বলবে একদম। এতোক্ষণ আংকেল আন্টি কথা বলছিলো বলে কিছু বলি নি আমি। তার মানে এটা ভেবো না যে তোমার সব কথা শুনবো। আমি তোমাকে একবারো বলেছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি? না বলেছি যে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তাহলে তুমি আজ এতোবড়ো মিথ্যা কথা কিসের ভিত্তিতে বলছো? একসাথে এতোগুলো মিথ্যা বলতে তোমার বুক কাঁপছে না একটুও?”

এবার সোহার চোখ মুখে ভয়ের রেশ দেখা গেলো হৃদয়ের কথা শুনে! কিছু বলার আগেই একটি মেসেজ আসলো ফোনে। সোহা মেসেজের দিকে চোখ বুলিয়ে আর একবার সামাদের দিকে চোখ বুলিয়ে হৃদয়ের উদ্দেশ্য বললো,

–“ভালোবাসার কথা বলোনি কখনো তো কি হয়েছে? ভালোবাসবে বিয়ের পর থেকে। আর আমি আর আপুতো একই দেখতে কোনো পরিবর্তন নেই তাহলে কি সমস্যা? মনে করো সোহাই ছোঁয়া ব্যস।”

সোহার এরকম খাপছাড়া কথায় হৃদয়ের রাগ আরে সপ্তমে ওঠলো! রাগের চোটে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো,

–“আমাকে বাধ্য করো না সোহা তোমার গায়ে হাত তুলতে। তুমি ভালো করেই জানো আমি তোমাকে নয় ছোঁয়াকেই ভালোবাসি। সে তুমি যতোই ছোঁয়ার মতন দেখতে হও না কেনো কখনো ছোঁয়া হতে পারবে না।”

হৃদয় সেখান থেকে চলে গিয়ে ছোঁয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ছোঁয়ার হৃদয়কে দেখেও যেনো দেখেনি এরকম। হৃদয় মেঝেতে হাঁটু গেড়ে ছোঁয়ার হাত ধরে করুন স্বরে বলে ওঠলো,

–“তুমিও কি বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ঠকিয়েছি? বিশ্বাস করো ছোঁয়া আমি জানতাম না তখন আমার পাশে তুমি নও ছোঁয়া ছিলো। জানলে কখনোই এই বিয়ে করতাম না। আমি তো শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। শুধু তোমাকে আর অন্য কাউকে নয়। চলে কাজী সাহেব অপেক্ষা করছে আমাদের নতুন জীবনের সূচনা করা যাক? যেই জীবনে তুমি আর আমি নতুন করে সংসার পাতবো।”

ছোঁয়া মাথা উঁচু করে হৃদয়ের দিকে তাকালো। হৃদয়কে পুরো দেখে নিলো তার দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা। হৃদয়ের করুন চোখ যেনো বলছে তার বলা প্রত্যেকটি কথা সত্যি। কোনে মিথ্যা নেই মানুষটির মধ্যে। তাহলে কি তাকে আরো একটিবার সুযোগ দেওয়া উচিত? কিন্ত তাহলে সোহার বলা কথাগুলো?
#চলবে?

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিবেন। কালকের পর্বেই বিয়ে হয়ে যাবে। হয়তো হৃদয়ের সাথেই সোহার বিয়ে হবে। আর ছোঁয়ার সাথে সামাদের 😁

#পর্ব৩
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

চোখের মধ্যেই মানুষের সত্যি মিথ্যা লুকিয়ে থাকে। মানুষের চোখ দেখলেই বোঝা যায় সে কতোটুকু কথা সত্যি বলছে আর কতোটুকু কথা মিথ্যা বলছে। হৃদয়ের ছোঁয়ার জন্য আকুতি ভরা চোখে কোনো মিথ্যা দেখতে পাচ্ছে না ছোঁয়া! হৃদয়ের করুন দৃষ্টি শুধু ছোঁয়াতেই নিবদ্ধ হয়ে আছে এই মুহুর্তে। ছোঁয়া হৃদয়কে কিছু বলবে তার আগেই ছোঁয়ার বাবা প্রলয় আহম্মেদ বলে ওঠলো,

–“ওসব কথা পরে হবে। আমি বুঝেছি হৃদয় কোনে মিথ্যা কথা বলেনি আমাদের সাথে। যা করেছে সবকিছুই তোমার আদরের বোন সোহা করেছে। হৃদয় বা আর অন্য কারোর হাত নেই এতে। বেলা বয়ে যাচ্ছে তুমি বিয়ের আসরে বসো।”

ছোঁয়া তার বাবার কথা শুনে কিঞ্চিৎ পরিমান তাকিয়ে রইলো হৃদয়ের দিকে। মানুষটি ঠিক আগের মতনই তার দিকে করুন দৃষ্টিতে তার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে রেখেছে! আর সাহসে কুলোলো না ছোঁয়ার সেই মায়ার দৃষ্টি উপেক্ষা করার! ভুল হবে না হৃদয়কে আরো একটিবার সুযোগ দিলে। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো হৃদয়ের সাথেই ছোঁয়ার বিয়ে হবে।

–“হ্যাঁ বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই আর।”

ছোঁয়ার কথা শুনে আনন্দের ঝিলিক ফুটে ওঠলো হৃদয়ের চোখে মুখে! সাথে সাথে ছোঁয়ার বাবা, মা, হৃদয়ের বাবা, আত্নীয় স্বজন সবার মুখশ্রী আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো ছোঁয়ার হ্যাঁ বলায়। সবাই আনন্দে রয়েছে ছোঁয়ার কথা শুনে কিন্তু দু’টো মুখশ্রীতে আনন্দের বদলে কেবল রাগের আভাস ফুটে ফুঠছে! সোহা ছোঁয়ার কথা শুনে বলে ওঠলো,

–“তুই একটাবারও আমার দিকটা ভাবলি না আপু? এভাবে স্বার্থপরের মতন এরকম কাজ করতে পারলি আমার সাথে?”

ছোঁয়ার মুখশ্রীতে নির্মলতার ছাপ। শান্ত, নিবির্কার ভাবে বসে ছিলো। সোহার কথায়ও কোনো ভাবান্তর ঘটলো না। যেরকম ছিলো ঠিক ওভাবেই স্থির থেকে বললো,

–“হৃদয়ের সাথে আমান পরিচয় বছর ঘুরে গেছে। আর বাবা, মাও হৃদয়কে এতোদিনে ভালো করে চিনে গেছে। সব থেকে বড়ো কথা আমি এখনো ওর উপর বিশ্বাস হারায়নি। আমি জানি দিনশেষে হৃদয় শুধু আমাকেই বিচরন করে তার পৃথিবী জুড়ে। সুতরাং তুমি এসব আজেবাজে কথা বলে আমাদের দু বোনের সম্পর্কটা নষ্ট করবে না আশা করি।”

–সোহা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। কোনো বাক্য ননেই আর তার বলার জন্য! এখন শুধু চুপচাপ ছোঁয়ার আর হৃদয়ের বিয়ে দেখে যেতে হবে তাকে। সামাদ রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে হনহনিয়ে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে! আর ওদিকে সোহা এখন সবটা দেখছে। দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই এখন আর। অবশেষ সকল বাঁধা পেরিয়ে, তিন কবুল বলে আইনত রেজিস্ট্রি পেপারে সই করে ধর্মমতে ও আইনিমতে হৃদয় আরো ছোঁয়ার বিয়ে হয়ে গেলো। এখন থেকে হৃদয় আর ছোঁয়া একে অপরের হয় গেলো সারা জীবনের জন্য! বিয়ে সেড়ে ছোঁয়াকে রুমে নিয়ে বসানো হয়েছে ফ্রেশ করার জন্য। রুমে বাহিরের আত্নীয় স্বজন নেই। শুধু ছোঁয়ার বাবা, মা, সোহা আর হৃদয়ের বাবা, আর কাকা, কাকিমারা রয়েছেন। তারা সবাই মিলে রুমে এসেছে মূলত ছোঁয়ার মুখ থেকে সবটা জানান জন্য। ছোঁয়ার বাবা বললেন,

–“এবার বলে দে তো মা কি হয়েছিলো তোর সঙ্গে? গায়ে হলুদের সাজে এখনো আছিস কোথায় গিয়েছিলি তুই? সবটা খুলে বল আমাদের সবাইকে?”

ছোঁয়া তৎক্ষনাৎ বলে ওঠলো,

–“আমি তোমাদের সব কথারই উত্তর দিবো বাবা। তবে আপাততো আমার কিছু খাওয়ার দরকার, খুব ক্ষিদে পেয়েছে যে। সকাল থেকে কিছু খায়নি আবার বেঁধে রাখায় শরীর ক্লান্ত লাগছে প্রচুর। আগে আমাকে খেতে দাও তারপরে সব বলছি।”

ছোঁয়ার মা করুন দৃষ্টিতে এক পলক মেয়ের মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে রান্নাঘর থেকে খাবার এনে দিলো ছোঁয়ার সামনে। ছোঁয়া খাবার শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে। এবার সবকিছু বলার পালা সবাইকে। ছোয়া বলতে লাগলো,

–“সকালবেলা যখন আমার গায়ে হলুদ শেষে গোসল করানোর জন্য ওয়াশ রুমে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনি সোহা আমার কাছে এসে বলে আমার স্কুলের কোন পুরনে বন্ধু এসেছে আমার সাথে দেখা করতে। প্রথমে আমি রাজি হচ্ছিলাম না যাবার জন্য কিন্তু যখনি বললো যে খুব ইর্মাজেন্সি দরকারে নাকি সে ডেকেছে তখনি আমি যাই। আমাদের বাড়ির পেছন দিকটায় নাকি সে এসেছে এরকম বলেই সোহা আমাকে নিয়ে যায়। আমিও যাই ওর পিছু পিছু কিন্তু যখনি গেলাম কাউকে দেখতে পাইনি ওদিকে। সোহাকে কিছু জিগেস করবো এর আগেই আমার নাকে কোনো কিছু চেপে ধরা হয় রুমাল দিয়ে। কোনো কিছু বুঝে ওঠবার আগেই অজ্ঞান হয়ে যায়। যখনি জ্ঞান ফিরে দেখি যে আমাকে অন্ধকার একটা রুমে কোনো চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। মুখে কাপড় বাঁধা ছিলো বিধায় চিৎকারও করতে পারি নি। আশেপাশে কোনো লোকজন দেখিনি। দরজায় তালা মেরে রেখেছিলো ভেবেছিলো তালা দেওয়া আছে তাই পালাতে পারবো না। হলোও ঠিক তাই চেষ্টা করার সময় দু’জন ছেরে এসে আমাকে বাঁধা দিয়েছিলো আমি মাটি থেকে ধুলো নিয়ে তাদের চোখে মেরে পালিয়ে এখানে আসি। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম হৃদয়ের সাথে সোহার বিয়ে হচ্ছে। হয়তো আমি না আসলে বিয়েও হয়ে যেতো।”

কথাগুলো বলে তৎক্ষনাৎ ছোঁয়া কান্নায় নিমজ্জিত করলো নিজেকে! উপস্থিত সবাই নিশ্চুপ ভাবে সবকিছু শুনে যাচ্ছে। সবাইই অবাক হয়েছে ছোঁয়ার কথায়। তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে ছোঁয়ার বাবা, মা,।অতঃপর সবাই ছোঁয়াকে বুঝিয়ে শুনিয়ে রুম থেকে চলে যায়। ছোঁয়ার বাবা, মা এসে ছোঁয়াকে অনুরোধের সুরে বলতে লাগলো,

–“ছোঁয়া তোর সাথে যা হয়েছে সেটা অবশ্যই খারাপ। আমরাও কল্পনা করতে পারিনি তোর বোন এরকম করবে। কিন্তু যা হয়েছে বাদ দিয়ে দে মা। এখানে হৃদয়ের কোনো দোষ নেই। তোকে কিডন্যাপ করা থেকে হৃদয়ের পাশে বউ সেজে বসা সবকিছুই সোহা করেছে। এতে হৃদয়ের কোনো হাত নেই। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো তুই হৃদয়কে এতো দিন ধরে চিনিস তুই আমাদের থেকে শতো গুনে ভালো বুঝিস হৃদয়কে। আর হৃদয়কে আমার বা তোর মায়ের কোনো খারাপ মনে হয়নি। তাই বলছি সোহাকে নিয়ে তুই তোদের দাম্পত্য জীবনে কলহ বাড়াস না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো যাতে সোহা তোদের জীবনে কোনো ভাবে কোনো ভুল বোঝাবুঝি তৈরী করতে না পারে।”

–ছোঁয়া মলিন দৃষ্টিতে বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে মাথা দোলালো। যার অর্থ হলো হ্যাঁ। সবশেষে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলে ছোঁয়াকে আবারো নতুন করে সাজানো হয় কনের সাজে! ছোঁয়ার খাওয়া আর কথার মাঝেই ছোঁয়ার জন্য নতুন করে শাড়ি গহনা কিনে আনেন তাড়াহুড়ো করে হৃদয়ের বাবা আর বড়ো বোন। পার্লারের মেয়েগুলো ছোঁয়কে লাল টুকটুকে বেনারসি পড়িয়ে দিলো ছোঁয়ার সর্বঅঙ্গ জুড়ে। চুলগুলে সুন্দর করে উঁচু করে খোপা করে দিলো সাথে গোলাপের গাজরা গুজে দিলো। মুখে ভারি করে মেকআপ বসিয়ে দিয়েছে। হাতে গলায় ম্যাচ করে জুয়েলারি পড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ছোঁয়া এখন বউয়ের সাজে পরিপূর্ণ তৈরী! ছোঁয়াকে সাজানো শেষ হতেই হৃদয়ের বাবা তাড়া দিতে লাগলেন বিদায়ের জন্য! অবশেষে চলে এলো সেই বিদায়ের মুহুর্ত। ছোঁয়ার বিদায়ের সময় কান্নায় ভারি হলো সমগ্র বিয়ের পরিবেশ! ছোঁয়াও অশ্রুতে ঢলে পড়েছে। সবশেষে ছোঁয়ার বাবা, মা, হৃদয়ের হাতে পরম আস্থা সহকারে তাদের মেয়েকে তুলে দিয়ে বিদায় জানালেন! বিয়ের সাজে সজ্জিত গাড়িটি চলে গেলো চোখের নিমিষে। গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটা অবলোকন করলো সোহা! গাড়ি চলে যেতেই হাতের উল্টোপিঠ দ্বারা অশ্রু কনাদের মুছে গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো! মনে মনে বুলি আওরাচ্ছে,

–“ক্ষমা করে দিস আপু। আমার কাছে নিজের ভালোবাসা বাচাঁনোর জন্য এই একটাই রাস্তা ছিলো।”

অপর দিকে কারো প্রতিহিংসা মূলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো বিয়ের সাজে চলে যাওয়া গাড়িটির দিকে! রাগান্বিত স্বরে বলে ওঠলো,
–“এতেই শেষ হবে না। সামনে আরো অনেক আছে।”

কথাগুলো বলেই বাঁকা মুচকি হেসে পকেটে হাত গুজে চলে গেলো আগন্তুকটি!

#চলবে?