হৃদয়ের ছোঁয়া পর্ব-০১

0
834

#পর্ব১
#হৃদয়ের_ছোঁয়া
#অর্ষা_আওরাত

কাজী কবুল বলার সময়ই বিধ্বস্ত অবস্থায় গায়ে হলুদের সাজে বাড়ির ভিতর ঢুকে বিয়ের আসরে প্রবেশ করলো ছোঁয়া। ভিতরে প্রবেশ করা মাত্রই বর হিসাবে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে অবাক নয়নে কিছুক্ষণ। শুধু তাই নয় তারই জায়গায় তারই নিজের আপন বোন বধু বেশে বসে আছে। এতো বাঁধা বিপদ অতিক্রম করলো যার জন্য অথচ তারই কিনা বিয়ে হচ্ছে নিজের আপন বোনের সাথে? বিস্ময় এর উপর বিস্মিতো হয়ে রইলো ছোঁয়া! ভালো করে চেয়ে দেখলো শুধু তার ভালোবাসার মানুষটির অন্য কারো সাথে বিয়েই করছে নয়। কিছুক্ষণ আগে যে ছোঁয়াকে ধর্ষন করতে চাইছিলো সেই ধর্ষনকারীই কিনা হৃদয়ের আপন ভাই! সেই কথা বিয়েতে আসার আগ মুহুর্তে বাইরে মানুষের কথা শুনে জানতে পেরেছে। একদিনে এতো অবাক করা ঘটনা মেনে নিতে পারছে না ছোঁয়া। কিন্তু সবই যে চরম সত্যি বিশ্বাস তো না চাইলেও করতে হবে।

বুকের ভিতর চিনচিনে কষ্ট হচ্ছে! মস্তিষ্ক মানতে পারছে না অবাক করা সত্যিটি! যাকে ভালোবাসে তারই কিনা বিয়ে হচ্ছে আজ! অথচ এই হৃদয় নামক মানুষটির সঙ্গেই আজ ছোঁয়ার বিয়ে ছিলো। হৃদয়ের পাশে বউ হিসাবে তার বসে থাকার কথা ছিলো কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে আজ তার জায়গা হলো বাড়ির বাইরে। আর হৃদয়ের পাশে অন্য কোনো মেয়ে নয় তারই বাড়িতে হৃদয়ের পাশে বধূ সেজে বসে আছে ছোঁয়ার নিজেরই বোন সোহা! হৃদয়স্থল মেনে নিতে পারছে না ঘটে যাওয়া ঘটনাটি! হৃদয়ের পাশে এখনো সোহা বসে আছে বউ সেজে। হয়তো ছোঁয়া না আসলে এতোক্ষণে বিয়েও হয়ে যেতো! মনের অন্তঃপুরী জ্বলে খাক হয়ে যাচ্ছে হৃদয়কে নিজের বোনের সাথে দেখে! কিন্তু যা স্বচক্ষে দেখছে সেটাই বা অস্বীকার করবে কি করে? যেটা দেখছে সবটাই যে চরম সত্যি! এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তার উপর আবার ছোঁয়াকে যে রেপ করতে চেয়েছিলো সে হৃদয়ের ভাই হয়! একের পর ঘটনা ছোঁয়াকে বিস্মিত’র উপর বিস্মিত করে তুলছে। মানতে পারছে না অবাক করা সত্যিগুলো। মাথা থেকে সব প্রশ্ন দূরে ঠেলে হৃদয়ের সামনে গিয়ে দাড়ালো ছোঁয়া ! প্রশ্নবিদ্ধ করলো হৃদয়কে?

–“মিঃ হৃদয় ইহসান এই তাহলে আপনার ভালোবাসার নমুনা? পুরো এক বছর ভালোবাসার নমুনা এটাই তাহলে বলুন? আমারই বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আবার আমারই আপন বোনকে বিয়ে করছেন? প্রতারণা করলেন শেষ পর্যন্ত?”

উপস্থিত সকলে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে! যেনো এখানে এই অবস্থায় কেউই আশা করে নি। কারো মুখে কোনো বাক্য নেই। ছোয়াঁ যদি এখানে এই অবস্থায় আসে তাহলে ওখানে হৃদয়ের পাশে কে? হাজারো প্রশ্নের উঁকি দিচ্ছে সকলের মনে তা উপস্থিত সবার মুখ চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

হৃদয় কিছু বলবে তার আগেই ছোঁয়াকে দেখে ঘাবড়ে যায়! সমগ্র আকাশ পুরী যেনো তার মাথায় এসে পড়েছে! বাক্য হারা হয়ে গেছে ছোঁয়াকে দেখে! অবাক নয়নে কেবল ছোঁয়ার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। সে-তো কোনো প্রতারণা করেনি ছোঁয়ার সাথে তাহলে? এসব কি কথা বলছে? এক নজর চোখ বোলালো ছোঁয়ার দিকে, মেয়েটির পরনে এখনো কালকে রাত্রের গায়ে হলুদের কাপড় জড়ানো। মুখশ্রী মলিন হয়ে গেছে! কেমন যেনো চোখগুলো কোঠরে ঢোকে গেছে! সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো মস্তিষ্কে এখন একটাই কথা বাজছে ছোঁয়া যদি এখানে হয় তাহলে ওর পাশে বসে কে? সঙ্গে সঙ্গে নতুন বউয়ের দিকে তাকালো ছোঁয়ার জায়গায় বধু বেশে মেয়েটি বেশ বড়ো করেই এক হাত লম্বা ঘোমটা টেনে মাথাটুকু নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে! মুখ না দেখে চিনার অন্ত নেই যে বউয়ের জায়গায় বসে থাকা মেয়েটি আসলে ছোঁয়া নয়। হৃদয় বলে ওঠলো,

–“এসব কি বলছো ছোঁয়া? আমি তো তোমাকেই বিয়ে করতে চাইছি আর তোমাকেই তো ভালোবাসি তাহলে এসব কথা বলছো যে?”

ছোঁয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো হৃদয়ের দিকে! মায়াভরা ওই চোখ, চোখগুলো বলে দিচ্ছে সেখানে তার জন্য কোনো ছলনা নেই আছে শুধু এক শহর ভালোবাসা! পরক্ষনেই বধু বেশে বসে থাকা নিজের বোন সোহার কথা মনে পড়তেই রাগ চরমে ওঠে গেলো! হৃদয় যদি এসব বলে তাহলে কি? সবার সামনে বসে থাকা মেয়েটি মিথ্যে? ঘোমটা বড়ো দেবার কারনে কেউ সোহাকে চিনতে না পারলেও সোহার থুতনিতে থাকা বড়ো তিলটা ঘোমটার পাশ থেকে দেখে ছোঁয়া! তারপরেই আর কোনো সন্দেহ রইলো না তার যে হৃদয়ের পাশে বসে থাকা মেয়েটি আসলে নিজেরই ছোটো বোন। জমজ বোন হওয়ায় হয়তো কেউ চিনে নি সোহাকে। কিন্তু সোহা কেনো এমন করলো ছোঁয়ার সাথে? আর হৃদয়ই বা কিছু টের পায় নি? ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে প্রশ্ন করলো,

–“ও এখন তাহলে আমি মিথ্যা বলছি তাই তো হৃদয়? তাহলে এই মেয়েটি কে? যে কিনা তোমার সামনে বধু বেশে বসে আছে? এখন নিশ্চয়ই বলবা না যে তুমি কিছু জানো না?”

ছোঁয়ার কথা শুনে ছোঁয়ার মা সঙ্গে সঙ্গে এসে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরলেন! মেয়ের এরকম নাজেহাল অবস্থা কোনো মা’ই সহ্য করতে পারবে না তাই তো ছোঁয়ার মা মেয়ের কাছে চলে আসলেন। মেয়ের এরকম অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি করে প্রশ্ন করলেন,

–“ছোঁয়া তোর এই পাগলের মতন অবস্থা হলো কি করে বল? কোথায় ছিলিস তুই? তুই যদি এখানে হস তাহলে ওখানে কে? যাই হোক আর দেরি করিস না মা এবার বিয়েতে বোস কাজী সাহেব বসে আছেন যে?”

ছোঁয়া হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো নিজের মায়ের দিকে! তার মা কি’না এখন হৃদযকে বিয়ে করতে বলছে? তাও সবটা জেনেশুনে! তার মা কি করে এরকম একটা কাজ করতে বলছে ছোঁয়াকে? ছোঁয়া কিছুতেই এটা করবে না। মা’কে বলে ওঠলো,

–“আমাকে আটকে রাখা হয়েছিলো মা যাতে আমি বিয়ে করতে না পারি। আরো একটা কারন ছিলো যা এই মুহুর্তে কেউই ধারনা করতে পারবে না যে কি করার চেষ্টা করা হয়েছিলো আমার সাথে?”

শেষের কথাটি ছোঁয়া হৃদয়ের ভাই সামাদ এর দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বললো, সামাদ ও বুঝতে পেরেছে ছোঁয়া ঠিক কোন উদ্দেশ্য সামাদকে কথা গুলো বললো! সামাদ দৃষ্টি নত করে ফেললো ছোঁয়াকে দেখে। ছোঁয়া তার মা’কে বলল,

–” তুমি ভাবলে কি করে যে আমি হৃদয়কে বিয়ে করবো এখন? যে কি-না দু’টো মেয়ের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করছে তাকে?”

হৃদয় কিছু বলবে তার আগেই চোখ জোড়া অশ্রুতে টলটল করে ওঠলো! শেষ মেষ কি তাহলে বিয়েটা হবে না? ছোঁয়া বেশ রুক্ষমূর্তি ভাব ধারন করেছে তা ছোঁয়ার মুখশ্রী দেখেই বোঝা যাচ্ছে! হৃদয় বেশ নাজেহাল অবস্থায় পড়েছে না পারছে বোঝাতে আর না পারছে কিছু বলতে!

–“এসব তুমি কি বলছো কি ছোঁয়া ? আমি ছেলেখেলা করেছি মানে কি? গোটা বছর একসাথে রয়েছিলাম আমরা সেটা তোমার কাছে এখন ছেলেখেলা মনে হচ্ছে! আমার এতোদিনের ভালোবাসা এতো কিছু সব ছেলেখেলা মনে হলো আজ আমাদের বিয়ের দিনে?”

–“ছেলেখেলা না কি বলবো তাহলে? তোমার ভালোবাসা যদি সত্যিই হতো তাহলে আজ বধু বেশে তোমার পাশে আমি থাকতাম অন্য কেউ না। ধরেই নিলাম যে তুমি সত্যি সত্যি ভালোবাসো আমাকে। কিন্তু তাহলে নিজের চোখে যেটা দেখছি সেটা কি বলো?”

হৃদয়ের এবার টনক নড়লো! সে-তো আসলেই জানে না যে মেয়েটি কে? আর দেরি নয় ছোঁয়াকে এখনি সবটা বোঝাতে হবে না হলে সবটা হাতের বাহিরে চলে যাবে।

–“ছোঁয়া বিশ্বাস করো আমি জানতাম না যে ওটা তুমি নও। ইনফ্যাক্ট এখানে উপস্থিত আমরা কেউই জানি না যে ওটা তুমি নও।”

— ছোঁয়া বিস্ফোরিত নয়নে উপস্থিত সকলের দিকে দৃষ্টিপাত করলো! সবাইই ইফতির কথায় হ্যাঁ মিলাচ্ছে মানে ছোঁয়ার ধারনা সম্পুর্ন ভূল! সে ভেবেছিলো হৃদয় হয়তো তাকে ঠকিয়ে সোহার সাথে বিয়ে করছে। কিন্তু এখন তা সম্পূর্ণ উল্টো মনে হচ্ছে। কিন্তু হৃদয় যদি ঠিক হয তাহরে সোহা বউ সেজে কেনো? ছোঁয়া আর সোহা জমজ হওয়ায় হয়তো কেউ চিনতে পারেনি? কিন্তু হৃদয় সে কি করে ছোঁয়াকে চিনতে ভুল করলো? কৌতুহল যেনো চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে ছোঁয়াকে কৌতুহলের মাঝেই উপস্থিত কিছু ব্যক্তি বলে ওঠলো,

–“ছোঁয়া হৃদয় সত্যিই বলছে রে। হৃদয় কেনো আমরা সবাইই জানি যে বধু বেশে ওখানে তুই ছিলি কিন্তু এখনতো পুরোটাই ভুল মনে হচ্ছে কারন তুই তো এখানে তাহলে ওখানে ওই মেয়েটি কে?”

সকলের কথা শুনে ছোঁয়া হৃদয়ের দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালো! তার মানে হৃদয় যে সবটাই সত্যি বলছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই আর। কিন্তু তাহলে হৃদয়ের পাশে সোহা কেনো? ছোঁয়ার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে হৃদয় বলে ওঠলো,

–“এখনি জানা যাবে সকল প্রশ্রের উত্তর ওই বউ সেজে বসে থাকা মেয়েটির ঘোমটা খুলে দিচ্ছি আমি!

ঘোমটা খুলে বউ সাজে বসে থাকা মেয়েটির মুখ দেখে সবাই যেনো অবাকের সপ্তম পর্যায়ে চলে গেছে! বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রয়েছে সবাই মেয়েটিকে দেখে। কিন্তু ছোঁয়ার কোনো ভাবান্তর হলো না সোহার মুখ দেখাতে। সে তো তখনি সবটা বুঝতে পেরেছিলো যখনি হৃদয়ের পাশে ঘোমটার আড়ালে সোহার মুখ দেখে ফেলেছিলো। ছোঁয়া অস্ফুট স্বরে সোহার উদ্দেশ্য বলে ওঠলো,

–“শেষমেষ কি-না তুইই আমার সাথে এরকম করতো পারলি সোহা? আমি নিজ চোখে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করতে পারতাম না যে এটা তুই? আমরা দেখতে জমজ হওয়ায় আমার সুযোগ টা তুই বেশ ভালোই কাজে লাগিয়েছিস দেখতে পাচ্ছি। ”
সোহা বলে ওঠলো,

–“আপু আমি যা করেছি একদম ঠিক করেছি। সবটা তোর ভালোর জন্য করেছি। আমি হৃদয়কে…….

#চলবে?