হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব-১৪+১৫

0
681

#হৃদয়ের_স্পন্দন💙
#পর্ব_১৪
#নন্দিনী_চৌধুরী

[২০.]

হাতে একটা ছবি নিয়ে বসে আছে একটা ছেলে।ছবিটাতে একটা মেয়ে শাড়ি পড়া নীল রং এর।মেয়েটার মুখে কোনো সাজ নেই।চুলগুলো খুলা।বাতাসে উড়ছে চুল গুলো,মুখে এক চিলতে হাসিঁ।ছেলেটা মেয়েটার ছবিতে একটা চুমু দিয়ে বলে,

“কেমন আছো শরৎশুভ্রতা।ভালো আছো।আমাকে মনে পরে তোমার।আচ্ছা আমার শুন্যতা কি তুমি অনুভোব করো।খুব জানতে ইচ্ছা করে আমার মতো তুমিও কি ভালোবাসা অনুভব করো।তোমার কি আমার মতো “হৃদয়ের স্পন্দন “হয়।আমি ভেবেছিলাম তোমাকে জানাবো মনের কথা।কিন্তু দেখো চেয়েও যেতে পারছিনা তোমার কাছে।ভালোবাসি শরৎশুভ্রতা খুব ভালোবাসি।”

ছবিটা বুকে জরিয়ে শুয়ে পরে ছেলেটা।চোখের কোণে নোনাঁ জল এসেগেছে তার।চোখ বন্ধ করেই চুপ করে শুয়ে থাকে সে।

সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভাংগে শুভ্রতার।আড়মোড়া ভেংগে উঠে পড়লো সে।উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে আসলো।সাবিনার জন্য স্যুপ আর বাকিদের জন্য নাস্তা বানাতে লাগলো।নাস্তা বানিয়ে টেবিলে সব রেখেদিলো।এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠেনি।শুভ্রতা কলেজে যাওয়ার ড্রেস পড়ে বেরিয়ে আসে।রাস্তার ধার দিয়ে হেটেঁ যাচ্ছে শুভ্রতা।সকালের বাতাসটা ভালোই লাগছে তার।শুভ্রতা হেটে হেটে যাচ্ছে তখন খেয়াল করলো একটা বাচ্চা ছেলে বল দিয়ে খেলতে খেলতে একদম রাস্তার মাঝে এসে গেছে।একটা দ্রুত ট্রাক ওর দিকে এগিয়ে আসছে।শুভ্রতা জলদি দৌড়ে ছেলেটার কাছে গেলো ওকে বাঁচাতে। শুভ্রতা ছেলেটাকে কোলে নিয়ে যাওয়ার আগেই দেখে ট্রাক একদম ওদের কাছে চলে আসছে।শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে নিলো।আল্লাহ আজ কি শেষ হয়ে যাবে ও।কিছুক্ষন পর শুভ্রতা অনুভব করলো কিছুই হয়নি ওর বরং ও কোনো বলিষ্ট হাতের মাঝে বন্দি আছে।শুভ্রতা আসতে করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে একটা মাস্ক পড়া লোক ওকে আগলে ধরে রেখেছে।চোখে তার কালো সানগ্লাস।শুভ্রতাকে তাকাতে দেখে লোকটা ওকে ছেড়ে দিলো।ইতিমধ্য বাচ্চাটার মা বাবা আসলো।শুভ্রতাকে ধন্যবাদ দিলো তারা।শুভ্রতাও তাদের কাছে বাচ্চাকে দিয়ে বলে পরেরবার খেয়াল রাখতে।বাচ্চাকে নিয়ে তারা চলে যায়।এভার আবার শুভ্র‍তা লোকটার দিকে তাকায়।শুভ্রতা ধির কন্ঠে বলে,

শুভ্রতা:ধন্যবাদ আপনাকে।আমার আর বাচ্চাটার জীবন বাচাঁনোর জন্য।
আরিয়ান:এরপরের বার রাস্তায় সাবধানে চলা ফেরা করবেন।
শুভ্রতার মাস্কের ভিতর থেকেও কন্ঠ বুজে যায়।একদম শিশিরের মতো কন্ঠ তার।শুভ্রতা চমকে যায়।প্রতিউত্তরে সে কিছু বলবে তখন একজন অফিসার এসে বলে,

অফিসার:আরিয়ান স্যার।গাড়ি ঠিক হয়েগেছে।
আরিয়ান:ঠিক আছে চলো।

আরিয়ান আর অফিসারটা চলে গেলো।শুভ্রতা অবাক নয়নে চেয়ে রইলো তাদের দিকে।

শুভ্রতা:এসব কি ভাবছি আমি।শুধু কন্ঠ একরকম বলে কি উনি শিশির হতে যাবে নাকি।আমিও না একটা পাগল।

শুভ্রতা রিকশা নিয়ে চলে গেলো কলেজে।

আরিয়ান আজকে থানায় না গিয়ে এসেছে একটা বাড়িতে।সেখানে এসে গাড়ি থেকে নেমে সোজা চলে গেলো উপরে।উপরেএ রুমের দরজা খুলে একটা রুমে গেলো সে।বিরাট বড় একটা ছবি লাগানো দেয়ালে।আরিয়ান ছবিটায় হাত দিয়ে স্পর্শ করছে।
আরিয়ানের চোখে পানি জমে গেছে।আরিয়ান চোখের পানি মুছে চোখ মুখ শক্ত করে বলে,

তোমার মৃত্যুর আসল রহস্য আমি বের করবোই।এই রহস্য জানার জন্যেইতো আমার এতো বড় বলিদান।আমাকে যে জানতেই হবে সব।এই নতুন পরিচয় নিয়েই আমি আসল অপরাধিকে ধরবো।

আরিয়ান চোখের পানি মুছে মাস্ক পরে সানগ্লাস লাগিয়ে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে।

রেস্ট্রুয়েন্টে বসে আছে মৌ হাসান মুখামুখি।মৌকে দেখে হাসানের খুব চিন্তায় আছে।হাসান মৌকে জিজ্ঞেশ করলো।

হাসান:মৌ কি হইছে তোমার?
মৌ:একটা জিনিশ ভাবছি।
হাসান:কি?
মৌ:আচ্ছা হাসান তুমি কি একটা জিনিশ খেয়াল করেছো?
হাসান:কি?
মৌ:যখন শিশির স্যার মারা গেলো সেদিন মেহেদি কিন্তু তেমন রিয়েক্ট করেনি।আবার যখন হেডকোয়াটার থেকে ওকে শিশির স্যারের জায়গা দিতে চাচ্ছিলো ও না করলো।কিন্তু আরিয়ান স্যার যে এখন শিশির স্যার এর জায়গায় আসলো মেহেদি এখানেও তেমন রিয়েক্ট করেনি।আমি যতটুকু মেহেদিকে চিনি ওর তো এতো ঠান্ডা থাকার কথা না।দিব্বি ও আরিয়ান স্যারের সাথে কাজ করছে।কিন্তু ওর তো শিশির স্যারেএ চলে যাওয়ার কোনো আফসোস নেই।
হাসান:হুম জিনিশটা আমিও খেয়াল করেছি।তবে ওতোটা গায়ে মাখিনি।তবে তুমিও যখন বলছো তখন ব্যাপরটা ভাবার।তোমার কি মনে হচ্ছে বলতো।
মৌ:আমার মন বলছে ওই আরিয়ান আমাদের শিশির স্যার।এটা কোনো কাকতালিও কথা হতেই পারেনা।যে শিশির স্যার মারা যাওয়ার এক মাসের মাথায় তার মতো দেখতে কেউ এখানে চলে আসলো।আমার দৃড়ো বিশ্বাস এটাই শিশির স্যার।
হাসান:কিন্তু সেটা কিভাবে হবে।উনি তো নতুন এসেছেন এখানে।আর তার থেকে বড় কথা উনি শিশির হলে উনি নিজের ফ্যামিলিতে না গিয়ে কেন অন্য ফ্যামিলিতে থাকছে।আর আরিয়ান স্যার আগে সিলেটে ছিলেন।এখানে জয়েন করার ২দিন আগে এই শহরে এসেছেন।উনি শিশির কিভাবে হবে।
মৌ:এই সব কিছু জন্যেই তো মানতে পারছিনা।আবার মন বলে উনিই শিশির।নাহলে তুমি ভাবো সেই তেজ,সেই রাগ সেই একই তাকানো কিভাবে কারো এক হতে পারে।আমার মাথায় আসছেনা কিছু।
হাসান:তুমি বেকার চিন্তা করছো।এগুলা নিয়ে চিন্তা করোনা।চলো যাওয়া যাক।
মৌ:চলো তাহলে।

শুভ্রতা বাসায় এসে শিশিরের রুমে আসলো।শুভ্রতা রোজ গুছিয়ে রাখে রুমটা।আজ বোড্ড বেশিই মনে পরছে শিশিরকে।শুভ্রতা শিশিরের ছবির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,

“তুমি প্রেম বীরোহ দিয়েছিলে”
“আমি সদরে তা গ্রহন করেছিলাম”
“তুমি শুন্যতায় পুড়িয়েছিলে”
“আমি তাতে পুড়ে জ্বলে গিয়েছিলাম”
“তুমি চোখের জোলে ভিজাতে চেয়েছিলে”
“আমি আজোও ভিজে যাচ্ছি সেই জোলে”
“তুমি হৃদরের স্পন্দন বন্ধ করে দিয়েছো”
“আমি সেই হৃদয়ের স্পন্দন আজোও অনুভোব করছি”

শুভ্রতা শিশির ছবিটা ছুঁয়ে দিচ্ছে।শুভ্রতা এক কঠিন শুন্যতা অনুভোব করছে।শুভ্রতা অনুভোব করছে সে যে কতটা ভালোবেসেফেলেছে শিশিরকে।তাইতো অনুভোব করছে এই হৃদয়ের স্পন্দন।

সাবিনা বেগম রুমে বসে আছেন।মহুয়ার বিয়ের পাশাপাশি শুভ্রতার বিয়ের কথা ভাবছেন তিনি।কিন্তু শুভ্রতাকে বলার সাহস সে পাচ্ছেনা।শখ ছিলো নিজের ছেলের বউ করার কিন্তু হায় ভাগ্যের কি পরিহাস।আজ ছেলেটা নেই বলে অন্যের ঘরে পাঠাতে হবে মেয়েটাকে।সাবিনা ভেবেনিয়েছেন শুভ্রতার সাথে কথা বলবেন তিনি।

একটা চেয়ারে বসে আছেন একজন লোক।হাতে তার একটা ছবি।ছবিটা দেখছেন আর শয়তানি হাসি দিচ্ছেন তিনি।ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,

“অনেক দিনের শখ আমার পুরন হয়েছে।যেভাবে তোর বাবা মারা গেলো সেই একই কারনে তুই সে ভাবে মরলি।আমার পথে আর কোনো বাধা নেই।ইসসস ভাবতেই কষ্ট লাগছে তোর মা বোন আর শুভ্রতার জন্য।হাহাহাহা,এভার কে বাঁচাবে তোর বোন আর শুভ্রতাকে।

বস্!

কারো ডাকে পিছনে ফেরে লোকটা।তার এক চেলা দাঁড়ানো তার সামনে।

লোকটা:বল
চেলা:বস থানায় এক নতুন অফিসার এসেছে।আরিয়ান মাহামুদ।এসেই হারিয়ে যাওয়া মেয়ে গুলোর ইনভেস্টিকেশন শুরু করেছে।আমাদের যে দুইটা লোক অখানে পুলিশ সেজে আছে তারা জানালো আজকে।
বস:উম,,,শোন আগে ফিরোজদের জেল থেকে ছাড়াতে হবে।তারপর ওই অফিসারকে দেখছি।আর এখন খুজে কি লাভ।মেয়েগুলোকে পাচার করা শেষ।তোরা আগামিকাল জেলে হানা দে।ফিরোজকে বের করতে হবে।
চেলা:ঠিক আছে বস।

আরিয়ান নিজের রুমে বসে আছে।হারিয়ে যাওয়া মেয়েটাকে এখনো খুজে পায়নি তারা।কোনো হদিস মেলেনি মেয়েটার।তার মধ্য আরো ৪টা নতুন মেয়ের নিখোঁজ এর রিপোর্ট এসেছে।আরিয়ান বুজতে পারছেনা কি করবে।আরিয়ান চুপ করে বসে আছে।ফিরোজরা যদি জেলেই আটকে থাকে তবে এই নতুন মেয়ে চুরি করা ধান্দাবাজ এলো কারা।আরিয়ান খুব চিন্তায় পরেগেছে।মেহেদিকে কল করে রুমে ডাকলো সে।

মেহেদি:স্যার ডেকেছেন?
আরিয়ান:হ্যা আসো ভিতরে আসো।
মেহেদি:জ্বী স্যার বলুন।
আরিয়ান:আচ্ছা মেহেদি আমাকে আপনাদের আগের আইজির ফাইলটা একটু খুজে দিনতো।ওই কেসের সাথে এই কেসের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা দেখবো।
মেহেদি:আমাকে আপনি একদিন সময় দিন স্যার।আমি ফাইল ডেটা বেয থেকে ফাইল বের করে আপনাকে দিবো।
আরিয়ান:আচ্ছা এখন আপনি যান।
মেহেদি:আচ্ছা স্যার।

আরিয়ান হেলান দিয়ে বসে পড়লো।ফোন ওন করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলে,

“তোমার ছোঁয়া পেতে মন বোড্ডো চাচ্ছে”
“ভোরের প্রথম প্রহরের প্রহলিকা তুমি আমার”
“রজনীর চন্দ্রের উপমা হয়ে আছো তুমি”
“এই মনের চিলেকোঠায় নাম যে লেখা আছে”
“শুধুই তোমার হে প্রানপ্রেয়শী”।

#চলবে

#হৃদয়ের_স্পন্দন
#পর্ব_১৫
#নন্দিনী_চৌধুরী

[২১.]

শুভ্রতার বিয়ের কথা চলছে।শুভ্রতা চুপচাপ বিয়েতে মত দিয়েদিয়েছে।একজন মায়ের অনুরোধ সে কি করে ফেলবে।তার বিপদে তারা যে তাকে অনেক সাহায্য করেছে।আশ্রয় দিয়েছে।সেই মানুষটার কথা ফেলবে কি করে সে।সাবিনার অনুরোধ রাখতেই চুপ করে রাজী হয়েগেছে সে বিয়েতে।

৪দিন আগের রাতের কথা,

শুভ্রতার সাবিনার বেগমের রুমে তাকে খাইয়ে মেডিসিন দিতে এসেছিলো।সব কিছু গুছিয়ে শুভ্রতা চলে যেতে নিলে সাবিনা তাকে ডাক দেয়।

সাবিনাঃশুভ্রতা শোন।
শুভ্রতাঃহ্যা মামনি বলো।
সাবিনাঃএদিকে আমার কাছে এসে বস।
শুভ্রতা সাবিনার কাছে গিয়ে বসলো।সাবিনা শুভ্রতার হাতটা নিজের হাতের ভিতরে নিয়ে বললো,
সাবিনাঃশুভ্রতা আমি যদি তোর কাছে কিছু চাই তুইকি আমাকে ফিরিয়ে দিবি মা।
শুভ্রতাঃতোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো সাদ্ধ্য আমার নেই মামনি আর না আছে সেই সাহস।তুমি যা চাও আমি তাই তোমায় দেবো।দরকার হলে নিজের জীবনটাও দিয়ে দেবো।
সাবিনাঃজীবন নয়রে।একটা নতুন জীবনের শুরু চাইছি আমি।
শুভ্রতাঃমানে?
সাবিনাঃশুভ্রতা আমি তোর বিয়ে দিতে চাচ্ছি।তোর এখন বিয়ের বয়স হয়েছে।জানিনা কবে আল্লাহ আমাকেও ডাক দেন। তাই তার আগেই আমি তোর আর মহুয়ার বিয়েটে দেখে যেতে চাই।তুই রাজী হয়ে যা মা।
শুভ্রতা সাবিনার কথা শুনে চুপ হয়ে যায়।সে কি বলবে সে জানেনা তবুও সে একটু সময় চেয়ে নেয়।সাবিনাকে শুইয়ে দিয়ে শুভ্রতা শিশিরের রুমে আসে।শিশিরের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে।ছবিটায় হাত রেখে বলতে লাগলো,

“আমাকে মাফ করে দেবেন।আমি মামনির কথা ফেলতে পারবোনা।মামনি অনেক আশা করে আমার কাছে চেয়েছেন বিয়েতে রাজী হবার জন্য।আপনি যেমন আমার বিপদে আমার পাশে ছিলেন তেমনি মামনিও আমার পাশে ছিলো।এ বাড়িতে আমাকে চাঁপাকে আশ্রয় দিয়েছিলো।তার এই সামান্য চাওয়া আমি ফেলতে পারবোনা।নিজের ভালোবাসাকে বুকে চাপা দিয়ে আমি এই বিয়েটা করবো শুধু মামনিকে খুশি করতে।আমাকে মাফ করে দিয়েন।”

শুভ্রতা কথা গুলো বলে বেরিয়ে আসে শিশিরের রুম থেকে।হ্যা সে রাজী এই বিয়েতে।সে তার মামনির জন্য এই বিয়েটা করবে।খুশি করবে তার মামনিকে।পরের দিন সকালেই শুভ্রতা সাবিনাকে জানিয়ে দেয় সে রাজী।সাবিনা এটা শুনে খুব খুশি হয়।পাত্র তার আগে থেকেই পছন্দ ছিলো।তাই আর দেড়ি না করে পাত্রের মা বাবাকে ডাকান তিনি।

বর্তমানে,,

আজকে দেখতে আসছে শুভ্রতাকে পাত্রের মা বাবা।শুভ্রতাকে মহুয়া একটা গোলাপি কালারের শাড়ি পড়ায়।মুখে একদম নরমাল একটু সাজ।হাতে দুটো চিকন চুড়ি পরিয়ে দেয়।পাত্রের মা বাবা চলে এসেছেন।সাবিনাকে হুইল চেয়ারে করে চাঁপা নিয়ে আসে।সার্ভেন্টস তাদের বসার জায়গা দেয়।সাবিনা তাদের সাথে কথা বলতে শুরু করেন।চাঁপা নাস্তা পানি নিয়ে আসছে।কিছুক্ষন পর মহুয়া শুভ্রতাকে নিয়ে আসে ড্রয়িং রুমে।শুভ্রতাকে ছেলের মা বাবা সামনের সোফায় বসায়।শুভ্রতা বসে দুজনকেই সালাম দেয়।পাত্রের মা,

পাত্রের মাঃমাসাল্লাহ।তোমার নাম কি মা?
শুভ্রতাঃজি নৌশিন আহমেদ শুভ্রতা।
পাত্রের মাঃবেশ তুমি কিসের পড়ো?
শুভ্রতাঃইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।
পাত্রের মাঃআচ্ছা।আমি আরিয়ানের মা।আর উনি অরিয়ানের বাবা।যার সাথে তোমার বিয়ে হচ্ছে সে হলো আমাদের ছেলে আরিয়ান মাহামুদ।আরিয়ান তোমাকে আগে দেখেছে তাই আর দেখতে আসেনি।ওর পছন্দেই আমি তোমাকে দেখতে আসলাম। আমাদের ও তোমাকে অনেক ভালো লেগেছে।আমরা এই বিয়েতে রাজী।ভাবি আপনার কোনো আপত্তি নেইতো।
সাবিনা:না ভাবি আমার কোনো আপত্তি নেই।সত্যি বলতে আমিতো ভাবতে পারিনি আমার ছেলের মতো দেখতে আপনার ছেলেও হবে।আমি আরিয়ানের মাঝে আমার শিশিরকে দেখি।আমার কোনো আপত্তি নেই এই বিয়েতে।তবে ভাবি আমার শুভ্রতার গায়ের রং কালো বলে সবাই ওকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে।আপনারা ওকে সেরকম করিয়েন না।আমার অনুরোধ এটা।
আরিয়ানের মা:ছিহ ছিহ ভাবি কি বলছেন এসব।আমরা মানুষ অমানুষ নই।গায়ের রং কোনো ভ্যালু রাখেনা।যেটা ভ্যালু রাখে তা হলো এই মানুষের মন।মানূষ যত সুন্দর হোক দেখবেন অনেক সুন্দর মানুষের মনটা কত কালো।আবার কত কালো মানুষের মন কত সাদা।শুধু গায়ের রং দিয়ে মানুষ বিচার করা উচিত নয়।আমরা শুভ্রতাকে পছন্দ করেছি।কারন আমরা জানি শুভ্রতা কত ভালো মনের মেয়ে।আর আমার আরিয়ান ওর কালো রং দেখেই ওকে পছন্দ করেছে।তাহলে ভাবি আগামি শুক্রুবার শুভ কাজ সেরে ফেলি।
সাবিনা:আলহামদুলিল্লাহ।অবশ্যই ভাবি।এই চাঁপা যা মিষ্টি নিয়ে আয় মিষ্টি মুখ করি।

এরপর সবাই মিষ্টি মুখ করলো।শুভ্রতাকে একটা আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেলেন আরিয়ানের মা।শুভ্রতা এখনো চুপচাপ বসে আছে।সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার।আরিয়ান মানে সেই লোকটা যাকে ও সেদিন রাস্তায় দেখেছিলো।যে ওকে বাঁচিয়েছিলো।তার সাথেই ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।সব থেকে আজব এই লোকটা একদম শিশিরের মতো দেখতে।আচ্ছা শুভ্রতার অচেতন মন যা ভাবতে তা কি হতে পারে।আরিয়ান কি শিশির হতে পারে?

আরিয়ান আর মেহেদি বসে আছে এক সাথে ধাবায়।দুজনেই চা খাচ্চে।মেহেদি মুচকি মুচকি হাসছে দেখে আরিয়ান তাকে বলে,

আরিয়ান:কি ব্যাপার হাসছো কেন?
মেহেদি:না মানে এমনি স্যার।
আরিয়ান:এমনিতো পাগলেরা হাসে।তুমি পাগল হলে কবে?
মেহেদি:উইমা না না পাগল না।আসলে স্যার ভাবছি আপনার বুদ্ধির সাথে কেউ পারবেনা।কিভাবে নিজেকে মৃত বানিয়ে আবার আরিয়ান হয়ে ফিরে আসলেন।আবার এখন কিভাবে শুভ্রতা ম্যাম কে বিয়ে করছেন।সত্যি স্যার আপনার বুদ্ধির জবাব নেই।
আরিয়ান মেহেদির কথা শুনে হালকা হাসলো।তারপর চায়ের কাপ রেখে উঠে দাঁড়ালো।

আরিয়ান:মানুষ যখন ভালোবাসে তখন তার ভালোবাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সব করতে পারে।আমি আমরা শরৎশুভ্রতাকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু চাইলেই তার সামনে যেতে পারবোনা।কারন আমার শত্রুরা ওত পেতে বসে আছে আমার পরিবারের ক্ষতি করার জন্য।আমি চাইনা আমার একটা ভুল পদক্ষেপ মা,মহুয়া,শুভ্রতা,চাঁপার জীবনে বিপদ আনুক।শুভ্রতাকে বিয়ে করছি একান্ত ওকে নিজের কাছে রাখার জন্য।আমি জানি ইতিমধ্য তারা জেনে গেছে আমি যে নিউ অফিসার হয়ে এখানে আসছি।তাই আমাকে তারা দেখার আগে শুভ্রতাকে নিজের কাছে আনতে চাচ্ছি।মা,মহুয়া চাঁপার জন্য আমি অনেক করা গার্ড এর ব্যবস্থা করে রেখেছি।কিন্তু শুভ্রতাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাইনা।তবে মেহেদি আমাদের চোখ কান আরো খোলা রাখতে হবে।

মেহেদি:জ্বী স্যার।কিন্তু স্যার আপনি মিস্টার ইকবালকে সত্যি কথা জানাবেন কিভাবে।যে তার আসল ছেলে আরিয়ান……।
আরিয়ান:জানি এটা শোনার পর তারা অনেক ভেংগে পরবে।কিন্তু আপাদত জানাবোনা।একজন মা তার সন্তানকে কাছে পেয়ে অনেক খুশি।তার খুশিটা এতো তাড়াতাড়ি কেড়ে নিতে চাইনা।আমার এখন অনেক কাজ বাকি আছে।আসল আরিয়ানকে খোজা।আমার বাবার হত্যাকারীকে খোজা।এর জন্যইতো আমার এই রুপ।

মেহেদি:কিন্তু স্যার একটা কথা আমার মাথায় আসছেনা।মানে আসল আরিয়ান আর আপনার চেহারা এক কি করে হলো।মানে এটা একটা ম্যাজিক না।
আরিয়ান:আমাদের চেহারা এক কারন আসল আরিয়ান আমার নিজের আপন ভাই।
মেহেদি:কি!!!
আরিয়ান:হ্যা।
মেহেদি:কি বলছেন স্যার আমার তো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।
আরিয়ান:আসতে আসতে সব জানতে পারবা।এখন চলো থানায় যাওয়া যাক।

রাতে শুভ্রতা বসে আছে বারান্দায়।আকাশে একটা গোল থালার মতো চাঁদ উঠেছে।শুভ্রতা চাঁদটাকে দেখছে বসে বসে।তখন ওর ফোনে কল আসলো।শুভ্রতা ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল।শুভ্রতা ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরিয়ান বলে উঠে,

আরিয়ান:আসসালামু আলাইকুম।
শুভ্রতা চমকে যায় কন্ঠটা শুনে তবুও নিজেকে সামলে সালামের উত্তর দেয়।

শুভ্রতা:ওয়ালাইকুমুস সালাম।জ্বি কে বলছেন?
আরিয়ান:আমি আরিয়ান মাহামুদ।আমার মা আজকে আপনাদের বাসায় এসেছিলো বিয়ে কথা ফাইনাল করতে।
শুভ্রতা বুজতে পারলো এবার এটা আরিয়ান।তার অচেতন মন বার বার এই আরিয়ানের মাঝে শিশিরকে খোজে।তাইতো সে চমকে যায় বার বার।শুভ্রতা আসতে করে উত্তর দেয়,

শুভ্রতা:জ্বী চিনতে পেরেছি।
আরিয়ান:কেমন আছেন আপনি?
শুভ্রতা:আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
আরিয়ান:আলহামদুলিল্লাহ।কি করছেন?
শুভ্রতা:জ্বী কিছুনা।
আরিয়ান:আপনার এই বিয়েতে অমত আছে কি?
শুভ্রতা:জ্বী না।আমার কোনো অমত নেই।আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজী আছি।
আরিয়ান:হুম গুড।আচ্ছা তাহলে আপনি ঘুমান আমি কল রাখলাম।

আরিয়ান কল রেখে নিজেই নিজেকে বকতে লাগলো,

“সালা শিশির তুই কি বলতো,আরে নিজের বউয়ের সাথে এখোনি কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছিস। তাহলে সামনে সংসার করবি কিভাবে।আর তার উপর তাকে তুই ভালোবাসিস।কই প্রেম আলাপ করবি তানা দেখো কি হাই হ্যালো করে রেখে দিলি ফোন।না রে ভাই শিশির তোর ধারা প্রেম হবেনা।শিশির থেকেও হয়নি।আর আরিয়ান হয়েও হবেনা।তবে তাতে কি বিয়ে করবে প্রেম করবো😇।হু। ”

আরিয়ান নিজের মনে বীড়বীড় করতে লাগলো।আর এদিকে শুভ্রতা ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকানো।

“কি আজব লোকরে বাবা।যাকে বিয়ে করছে তার ব্যাপারে কিছু জানতেও চাইলোনা।খালি হ্যালো হাই বলে রেখে দিলো।কে জানে কোন পাথরের সাথে ঘর করতে যাচ্ছি।এক পাথরকে ভালোবেসেছিলাম।এখন আবার আরেক পাথরের সাথে ঘর করতে যাচ্ছি।দূর দূর ভাল্লাগেনা দূর।”

#চলবে