হয়তো_তোরই_জন্য পর্ব-০২

0
3270

#হয়তো_তোরই_জন্য (The crazy lover)
#পার্ট_২
#নিশাত_জাহান_নিশি

তমা হেচকি তুলে কেঁদে মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানালো। জায়ান মুচকি হেসে তমার চোখের জল গুলো মুছে দিলো।

তমা নাক টানতে টানতে জায়ানকে ক্রস করে যেই না ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল অমনি জায়ান তমার হাত ধরে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,

—-“শাড়ি ছাড়াই কি ওয়াশরুমে চলে যাবি?”

তমা মাথা নাঁড়িয়ে না জানালো। জায়ান কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তমাকে ওর দিকে ঘুড়িয়ে তমার গালে হাত রেখে বলল,,,,,

—-“আমাকে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে তমা? প্লিজ আমার সাথে ঠিক ভাবে কথা বল।”

মুহূর্তেই তমা কড়া কন্ঠে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“আমি পারব না তোমার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলতে। তুমি খুবই ভয়ংকর এক্টা লোক। তোমাকে দেখলেই আমার ভয় লাগে। মন চায় তোমার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াই। তোমাকে আমি চোখের সামনে সহ্য করতে পারি না।”

জায়ান তমার হাতটা ছেড়ে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,

—-“কেনো আমাকে ভয় পাস কেনো? এতোটা বছরে ও আমার প্রতি তোর ভয় কাটে নি? সাত সাতটা বছর আমি তোর থেকে দূরে থেকেছি! শুধুমাএ তোর ভয়কে জয় করার জন্য। ভয়ের বদলে তোর চোখে অসংখ্য ভালোবাসা দেখার জন্য। কিন্তু না, আমি পারলাম না। সাত বছর অপেক্ষার পরে ও ব্যর্থ আমি। ভেবেছিলাম দেশে ফিরেই তোর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখব। ভেবেছিলাম তুই হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে উঠবি। কিন্তু দেখ… হলো এর পুরো উল্টোটা। তুই এখানো আমাকে ভয় ই পাস। কবে তোর মন থেকে আমার ভয় দূর হবে বল? আর কতো অপেক্ষা করব আমি তোর জন্য? আর কতো? আনসার মি ডেম ইট?”

তমা ধপ করে মাটিতে বসে মাথায় হাত দিয়ে জোরে চিৎকার করে বলল,,,,,

—-“তুমি আমার চোখের সামনে ঐ ছেলেটাকে মেরেছ। চোখ বুঝলেই আমি ঐ ছেলের রক্তাক্ত দেহটা দেখি। আমার হাত, পা ভয়ে শিউরে উঠে। চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়ে। পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। নিজেকে তখন বড্ড ভীতু মনে হয়। কিছুটা সময়ের জন্য আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। সাত সাতটা বছরের মধ্যে এমন এক্টা রাত বাদ পড়ে নি যে আমি ঐ ছেলেটাকে স্বপ্নে দেখি নি। প্রতিরাতে ছেলেটা আমাকে তাড়া করে। মনে হয় ছেলেটা আমার চোখের সামনে চলাফেরা করছে, আমার নাম ধরে ডাকছে। ভিতরটা তখন ছটফট ছটফট করে। মরণ যন্ত্রনা তখন চোখের সামনে ভেসে উঠে। খুব ভয় করে আমার খুব।”

জায়ান উদ্বিগ্ন হয়ে তমার পাশে বসে তমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে তমার মাথায় বিলি কেটে নরম স্বরে বলল,,,,,

—-“শান্ত হ তমা। প্লিজ শান্ত হ। আমি তো ঐদিন অকারণে ছেলেটাকে মারি নি। ছেলেটা আমার তমার উড়না ধরে টান দিয়েছিলো তাও আবার আমার এলাকায় এসে। তাই তো মাথাটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। তুই তো জানিস আমার প্রচন্ড রাগ উঠে গেলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না। তাই কন্ট্রোললেস হয়ে ঐদিন ছেলেটাকে খুব মেরেছি। ছেলেটা তো পুরোপুরি মরে নি তমা। সে এখনো বেঁচে আছে হয়তো পঙ্গু হয়ে। তাহলে তুই কেনো এতো ভয় পাস? কেনো বার বার ঐদিনের কথাটা মনে করিস? ভুলে যেতে পারিস না ঐ ভয়ংকর অতীতটা?”

—“আমি পারি না জায়ান ভাইয়া। কিছুতেই পারি না। যতোই ভুলতে চেষ্টা করি ততোই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। তখন নিজেকে পাগল প্রায় মনে হয়।”

—“আ’ম স্যরি তমু। আমি বুঝতে পারি নি তুই এতোটা ভয় পাবি। না হয় কখনো তোর সামনে ছেলেটাকে মারতাম না।”

তমা জায়ানের থেকে নিজেকে সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। জায়ান এখনো নিচে বসে তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তমা শাড়ির আঁচল দিয়ে নাকের জল মুছে বলল,,,,,

—-“শাড়ীটা দাও। রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে যেতে হবে। সবাই হয়তো আমার জন্য ওয়েট করছে।”

জায়ান মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে ল্যাকেজ থেকে এক্টা গোল্ডেন শাড়ি বের করে তমার হাতে ধরিয়ে দিলো। সাথে এক্টা প্যান্ডেন্ট। শাড়িটা ছোট ছোট গোল্ডেন কালার পাথরে ভর্তি। পাথরের ঝলকানিতে পুরো রুম আলোকিত হয়ে আছে। তমা শাড়িটার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। জায়ানের পছন্দ বরাবরই খুব ভালো। সে যেটাই পছন্দ করবে সেটাই তাক লাগার মতো। যেমন তমা! তমা ও ঠিক তাক লাগার মতো।

তমা খুশি খুশি মনে শাড়ীটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। জায়ান তমার যাওয়ার পথে তাকিয়ে মুচকি হেসে আয়নার দিকে তাকিয়ে প্যান্ডেন্টটা ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখল। এলোমেলো হওয়া সিল্কি চুল গুলো জায়ান হাত দিয়ে সেট করছে। কুচকুচে কালো চোখের মনিতে তার আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। গোলাপী ঠোঁট জোড়া তার বার বার কেঁপে উঠছে। পুরো মুখ জুড়ে তার রহস্যময়ী হাসি। জিম করা ধবধবে সাদা বডিটা কালো রঙ্গের শার্টে ফুটে আছে। জায়ান প্রাণোচ্ছ্বল হাসি দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,,

—-“বউ….তোমার সাইকো বর ফিরে এসেছে। এইবার আমি তোমাকে সত্যিটা জানিয়েই ছাড়ব। তবে এখন না। ধীরে ধীরে তোমার মনে আমার জন্য প্রেম জাগাতে হবে। এরপর সত্যিটা সামনে আনতে হবে। অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে তোমার আর আমার মধ্যে। সব রহস্যের জট খুলে আমি নিজেকে তোমার কাছে প্রেজেন্ট করব। আপাতত না হয় আমাকে নিয়ে কনফিউশনে থাকো।”

এর মাঝেই জায়ানের হাতের সোনালী রঙ্গের ঘড়িটা টিকটিক করে বেজে উঠল। জায়ান আয়না থেকে চোখ সরিয়ে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল ০১:০৫ বাজছে ঘড়িতে। জায়ান নাক মুখ কুচকে ডান হাতের তর্জনি আঙ্গুল দিয়ে একনাগাড়ে কপাল ঘঁষছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—“ওহ্ সিট। দুপুর ০১:০০ বাজেই তো আমার আকাশের বাড়িতে উপস্থিত থাকার কথা ছিলো। এখন তো আরো পাঁচ মিনিট লস্ট হয়ে গেলো। ধ্যাত… আমি এই জীবনে টাইম মেন্টেইন করতে পারলাম না।”

কথাগুলো বলেই জায়ান বিড়বিড় করে তমার স্টাডি টেবিল থেকে এক্টা খালি খাতা বের করে ঝুড়িতে থাকা কলমটা নিয়ে কিছু এক্টা খুব মনযোগ দিয়ে খাতায় লিখছে। লিখালিখির প্রায় পাঁচ মিনিট পর জায়ান কলমটা মুখের মাঝ বরাবর পুড়ে গভীর মনযোগ দিয়ে লিখা গুলো পড়ে খাতা থেকে কাগজটা ছিড়ে বেডের উপর রেখে দিলো। কলমটা মুখ বের করে জায়ান কাগজটার উপর খুঁটিস্বরূপ রেখে দিলো। যেনো কাগজটা বাতাসে উড়ে না যায়।

ফ্লোর থেকে ল্যাকেজটা নিয়ে জায়ান তমার ব্যালকনি টপকে ভেজা বিড়ালের মতো বাড়ি থেকে বের হয়ে গেইটের বাইরে পার্ক করা গাড়িটায় উঠে গাড়ি স্টার্ট করে ছুটল আকাশদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

তমা শাড়ি চেইন্জ্ঞ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে জায়ানকে চোখের সামনে দেখতে না পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে পুরো রুমটা তন্ন তন্ন করে জায়ানকে খুঁজতে লাগল। জায়ানের আবার লুকিয়ে থাকার স্বভাব। তাই তমা খাটের তল থেকে আলমারী পর্যন্ত সব ঘুটে ফেলল। বাট কোথাও জায়ান নেই।

তমা কিছুটা পেরেশান হয়ে যেই না খাটের উপর নজর দিলো অমনি সে কলম সহ কাগজটাকে দেখতে পেলো। তমা দৌঁড়ে গিয়ে কলমটা সরিয়ে কাগজটা হাতে নিয়ে কৌতুহলী দৃষ্টিতে কাগজটা পড়তে লাগল। কাগজটায় লেখা আছে,,,,,,

—“মাই সুইট তমু। আমি জানি এখন তুই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আমাক তন্ন তন্ন করে খুঁজবি। আশা করছি এতক্ষনে খাটের তল ও চেইক করে নিয়েছিস। যাই হোক এবার মূল কথায় আসি। আমি ইতালী থেকে ফিরেই সবার আগে তোকে দেখতে ছুটে এসেছি। এখনো বাড়ি যাওয়া হয় নি আমার। আগে আকাশদের বাড়ি যাবো, ঐখানের রিসিপশান সেরে তারপর বাড়ি যাবো। মামা, মামানি, তমাল ওরা ও কেউ জানে না আমি যে ওদের বাড়িতে এসেছি। ব্যালকনি টপকে লুকিয়ে লুকিয়ে তোরর রুমে ঢুকেছি। প্লিজ ব্যাপারটা গোপন রাখিস। মামা, মামানী, তমাল কেউ যেনো ব্যাপারটা না জানে। এমনকি তাহাফ ও না। এবার আসি তোর সাজ গোজের প্রসঙ্গে। নিশ্চয়ই এখন তুই শাড়িটা পড়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছিস? শুন এবার কি করবি। শাড়ির সাথে ম্যাচ করা প্যান্ডেন্টটা পড়বি। যেটা আমি তোর জন্য এনেছি। প্যান্ডেন্টটা ড্রেসিং টেবিলের উপরেই আছে। চোখে হালকা করে কাজল দিবি। ঠোঁটে লিপস্টিক দিতে হবে না। তোর ঠোঁট এমনিতেই সুন্দর। ভ্যাসলিন থাকলে ভ্যাসলিন দিবি। আর না থাকলে দিতে হবে না। চুলে খোঁপা করতে হবে না মাঝ সিঁথি করে চুলটা ছেড়ে রাখবি। ব্যাস এটুকুই। এর চেয়ে বেশি সাজ আমার পছন্দ না। আর এই সাজেই তোকে ভয়ংকর সুন্দুরী লাগে। সেজে গুজে মামানীর সাথে সোজা আকাশদের বাড়ি চলে আসবি। আমি তোর জন্য অপেক্ষা করব।”

তমা চিঠিটা পড়ার সাথে সাথেই নাক মুখ কুচকে চিঠিটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলল। খুব রাগ হচ্ছে ওর। ইচ্ছে করছে রুমের সব কিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে। তমা উওেজিত কন্ঠে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,

—“শুরু হয়ে গেছে আবার টর্চার। এই সাইকো ছেলেটা আবার আমার লাইফে ফিরে এসেছে। কয়েকটা বছর দিব্যিই তো ছিলাম। কোনো কিছুর জন্য কেউ বারণ করে নি। যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলেছি। আমার বি.এফ হিসেবে আকাশ ও তো আমার লাইফে এতোটা ইন্টারফেয়ার করে নি। মাঝখান থেকে এই জায়ান এসে আমার লাইফটা এলোমেলো করে দিচ্ছে। উফফ…অসহ্য লাগছে আমার সবকিছু। আমার লাইফটা বিষপাতা হয়ে গেলো। এমনিতেই আকাশকে নিয়ে বুকটা ব্যাথায় ফেঁটে যাচ্ছে তার উপর আবার পুরোনো পাগল এসে জুটল কপালে। ফুটা লাক আমার। এক্টু যে একা সময় কাটাবো তার ও জো পাচ্ছি না।”

তমা কথা গুলো বলছে আর কপাল চাপড়াচ্ছে। হুট করে তমা আবার কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,

—“জায়ান ভাইয়া যদি সবাইকে লুকিয়ে ব্যালকনি দিয়ে আমার রুমে ঢুকে তবে এক্টু আগে কে এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছিলো? জায়ান ভাইয়া নিশ্চয়ই বাড়ির ভিতরে ঢুকে দরজা ধাক্কাবে না। তাহলে কে ছিলো ওটা?”

হুট করেই আবার দরজা ধাক্কানো শুরু হলো। তমা নিজেকে কিছুটা সংযত করে চোখের পানি গুলো মুখে দ্রুত পায়ে হেঁটে দরজাটা খুলে দিলো। দরজা খোলার সাথে সাথেই তমার আম্মু মিসেস আন্জু্ুমান কড়া চোখে তমার দিকে তাকাল। তমা মাথাটা নিচু করে মিনিমিন করে বলল,,,,,

—-“কি হলো আম্মু? এভাবে শকুনের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো কেনো? কি করেছি আমি?”

—“না না তুমি তো কিছু করো নি। তুমি দুধের ধোঁয়া তুলসি পাতা। এক্টু আগে এসে অনেকক্ষন ধরে দরজা ধাক্কিয়ে গেছি বাট তোমার কোনো রেসপন্স ই ছিলো না। তখন ভেবেছিলাম তুমি হয়তো রেডি হচ্ছ কিন্তু এখন যা চোখের সামনে দেখছি তা তো নিতান্ত অবিশ্বাস্য। ফকিন্নির মতো শাড়ি এক্টা পড়ে বসে আছো।”

তমা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,,,,

—-“তাহলে তুমিই এক্টু আগে এভাবে দরজা ধাক্কাচ্ছিলে?”

—-“এক্টু আগে না অনেক আগেই।”

—-“তাহলে এক্টু আগে বললে যে!”

—-“উফফফ তমা…. কথার কথা বলেছি। তুই যখন ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকেছিলি তখন। আরো এক্টা ঘন্টা আগে। শাড়ীর সাথে ম্যাচ করা মেরুন কালার দুল দেওয়ার জন্য তোকে ডেকেছিলাম।”

তমা তব্দা লেগে দাঁড়িয়ে আছে। সে হিসেব মিলাতে পারছে না। তমা কৌতুহল নিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,

—-“হাতে গোনা পঁচিশ থেকে এিশ মিনিট আগে জায়ান ভাইয়া আমার রুমে ঢুকেছিলো। জায়ান ভাইয়া রুমে ঢুকার দুই মিনিট আগে থেকে কেউ আমার রুমের দরজা ধাকাচ্ছিলো। আম্মুর হিসেব অনুযায়ী আম্মু দরজা ধাক্কিয়েছে এক ঘন্টা আগে। আমার হিসেব অনুযায়ী কেউ দরজা ধাক্কিয়ে ২২ থেকে পঁচিশ মিনিট আগে। তাহলে হিসেবটা এই দাঁড়ালো যে, আম্মু ও দরজা ধাক্কায় নি আবার জায়ান ভাইয়া ও না। তবে দরজাটা ধাক্কালো কে? ওদের মাঝখানে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি আর কে হতে পারে????”

তমার মৌনতা দেখে মিসেস আন্জুমান তমার শাড়িটার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে চোখ বড় বড় করে শাড়িটায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,

—“ওয়াও এওো সুন্দর শাড়ি! পুরো শাড়িটাতে পাথরের কাজ। খুব স্মুথ শাড়িটা।”

উনি আবার তমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

—-“শাড়িটা তোকে কে দিয়েছে তমা? এমন শাড়ি তো আমরা তোকে কিনে দেই নি! তবে কি দিলো?”

তমা ওর চিন্তার জগত থেকে বের হয়ে কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে কাঠ কাঠ গলায় মিসেস আন্জুমানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“এএএইইইই শাড়িটা তো তো আমাকে লিমা গিফট করেছে। আমার বার্থডে তে লিমা গিফট করেছিলো এই শাড়িটা! শাড়িটা খুব কিউট তাই না আম্মু!”

—-“হুম হুম খুব কিউট। ঠিক আমার মেয়ের মতো। জানিস তমা, শাড়িটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।”

হুট করেই তমা বএিশ পাঁটি বের করে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,

—-“ইসসস…. শাড়িটা আম্মুর পছন্দ হয়েছে। এক কাজ করি শাড়িটা আম্মুকে দিয়ে দেই। ঐ সাইকো ছেলেটার কিছুই পড়তে আমার ভালো লাগে না। কেমন জেদ জেদ লাগে। এর চেয়ে বরং আম্মুকে পটিয়ে আমি শাড়িটা আম্মুর হাতে ধরিয়ে দেই। তখন ঐ পেঁচা মুখো বাঁদড় টা আমাকে বকতে ও পারব না। বাঁদড়টাকে বলে দিবো শাড়িটা আম্মুর বেশ পছন্দ হয়েছে তাই আম্মু শাড়িটা আমার থেকে নিয়ে গেছে। তখন নিশ্চয়ই ঐ বাঁদড়টা মামানিকে কিছু বলতে পারবে না। হাজার হলে ও আমার আম্মু উনার মামানী।”

তমা অনেক জল্পনা কল্পনা করে গলাটা খানিক ঝাঁকিয়ে মিসেস আন্জুমানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,

—-“শাড়িটা পছন্দ হলে তুমি নিয়ে নাও আম্মু। আমি না হয় এমন আর এক্টা শাড়ী কিনে নিবো।”

—-“না বেবি তোমার পছন্দের শাড়ি আমি নিবো কেনো? তাছাড়া এটা তোমার ফ্রেন্ডের গিফট। শাড়ীটা বরং তুমিই পড়ো।”

মিসেস আন্জুমান মুচকি হেসে তমার কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,

—-“তমু…তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে এসো। তোমার আব্বু আর তমাল খুব রেগে যাচ্ছে। সো কাম ফার্স্ট।”

তমা মুচকি হেসে মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানালো। মিসেস আন্জুমান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। তমা মুখটা ভাড় করে জায়ানের বলে যাওয়া ফর্মুলা ফলো করে আয়নার দিকে তাকিয়ে সাজতে শুরু করল। তমা সাজছে আর রাগে ফুসফুস করে বলছে,,,,,,

—“সাইকো টা কবে আবার দেশ ছাড়বে আল্লাহ্ মালুম। সাইকো টাকে দেখলেই ইচ্ছে করে জুতোর তলায় রেখে পিষে মারতে। কতো ইচ্ছে ছিলো ভয়ংকর রূপে সেজে ঐ প্রতারক আকাশটাকে আজ তাক লাগিয়ে দিবো। দেখাবো যে আমি ও ওকে ছাড়া ভালো আছি। দিব্যি সেজে গুজে বেড়াচ্ছি। বাট মাঝখান থেকে ঐ তুফানটা এসে আমার সব প্ল্যানিং ভেস্তে দিলো। উল্টো আমার উপর শাসন কায়েম করে গেলো। সাইকোটা এক্টু ও পরিবর্তন হলো না। আগের মতোই সাইকো রয়ে গেছে। যখন তখন ঠোঁট আঁকড়ে ধরে। ফাজিল ছেলে কোথাকার।”

তমা এভাবেই বিড়বিড় করছে আর রেডি হচ্ছে। তবে ওর মনে অনেক অজানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

#চলবে……..