হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-২৪+২৫

0
759

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ২৪+২৫

কেটে গেছে আরো দুই সপ্তাহ।এই দুই সপ্তাহে অনেক কিছু পাল্টে গেছে।
বর্ষা আর বর্ষণের উপর রেগে নেই।সব রাগ অভিমান ভেঙে গেছে।ওদের সম্পর্কটা এখন স্বাভাবিক।বর্ষণ আর মেঘলার সাথে দিগ্বিজয়ের সম্পর্কটা আরো উন্নত হয়েছে।মেঘলার জন্মের আগে বর্ষণ যে বাবাকে দেখেছিল এখন আবার সেই বাবাকে ফেরত পেয়েছে।যে ছিলেন সন্তান অন্তঃপ্রাণ।মেঘলা আর বর্ষণ দিগ্বিজয় বাবুর আর মেঘনাদেবীর দুই চোখের মণি।রিয়া,টিয়া,বর্ষা আর মেঘকেও তারা নিজের সন্তানের ন্যায় ভালোবাসেন।মেঘলা এখন খুব হ্যাপি।নতুন করে মা-বাবাকে পেয়ে।তাছাড়া শশুরবাড়িতেও মেঘের মা-বাবা ওকে খুব ভালোবাসেন।আগে তো বাসতেনই এখন ভালোবাসাটা আরো বেড়েছে।একমাত্র ছেলের একমাত্র বউ বলে কথা।তবে মেঘ এখনো মেঘলার রাগ থুক্কু অভিমান ভাঙাতে পারে নি।মেঘলা প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা মেঘের সাথে কথা বলে না।
আকাশ আর বৃষ্টিও নিজের বাবা হারানোর কষ্টটা থেকে এইকয়দিনে বেরিয়ে এসেছে।তবে নীলা আকাশের সাথে আর শ্রাবণ বৃষ্টির সাথে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করে নি।নীলা আকাশকে আর শ্রাবণ বৃষ্টিকে ইগনোর করে।আকাশের এতে বিশেষ কিছু যায় না আসলেও বৃষ্টির কষ্ট হয়।বৃষ্টি এখন বোঝতে পারছে মেঘলার কষ্টটা।প্রিয় মানুষটিকে পেয়েও না পাওয়ার দুঃখ।হয়ত শ্রাবণ ওর থেকে দুরে নেই।কিন্তু শ্রাবণের মন থেকে ও অনেক দুরে।
🌿
মেঘলাঃ কোথায় যাচ্ছি?(ভ্রু কোচকে)
মেঘঃ গেলেই দেখতে পাবি।সারপ্রাইজ কি কেউ বলে দেয় আগেই।ওখানে গেলে তুই খুব খুশি হবি।এর পরও যদি তুই আমাকে ক্ষমা না করিস তো..
মেঘলাঃ তো?
মেঘঃ আমি আবার লন্ডন ব্যাক করব।
মেঘলা চোখ গরম করে মেঘের দিকে তাকাল।মেঘে মেকি হেসেঃ তোকে নিয়ে।হিহিহি।তোকে ছাড়া আমি যেতে পারি নাকি।আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র ওয়াইফাই।তোকে ছাড়া তো আমি শ্বাসই নিতে পারব না।
মেঘলাঃ আর আমি মরে গেলে?
এতে মেঘ খুব রেগে যায় জোরে ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে দেয়।মেঘলার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে ওর থিতুনি চেপে ধরেঃ একবার বলেছিস বলেছিস আর যদি কোনোদিন তোর মুখে এই কথা শুনি তাহলে জিভ টেনে ছিড়ে ফেলব।বোবা বউ নিয়ে সংসার করতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
মেঘ খুব জোরেই চেপে ধরেছিল তাই মেঘলা ব্যথা পেলেও মুখ দিয়ে টু শব্দটি করে নি।শুধু অদ্ভুত দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিল।এই দৃষ্টিই যথেষ্ট মেঘের রাগ পানি করার জন্য।মেঘ মেঘলাকে ছেড়ে দিল।বাইরে দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল।তারপর মেঘলাকে নিজের বুকে টেনে এনেঃ প্লিজ প্রেমতরঙ্গী এমন কথা আর বল না।আমার খুব কষ্ট হয়।১৪টা বছর তোকে ছাড়া কীভাবে কাটিয়েছি শুধু আমিই জানি।আর তোকে হারাতে চাই না।প্লিজ আমাকে ছেড়ে কোথায় যাস না।খুব ভালোবাসি তোকে।লক্ষ্মীটি আমার আমাকে ছেড়ে কোথায় যাস না।
বলে মেঘলার কপালে অধর জোড়া ছুঁয়াল।একহাত দিয়ে মেঘলাকে ধরে রেখেই অন্য হাত দিয়ে ড্রাইভিং করল।
মেঘলা কিছুই বলল না।মুচকি হেসে চুপটি করে মেঘের বুকে মাথা রাখল।এই স্থান যেন ওর জন্য পরম শান্তির স্থান।চোখ বুঝে মেঘের হার্টবিট শুনতে বেশ ভালোই লাগছে।
কিছুক্ষণ পর মেঘের গাড়ি একটা বাড়ির সামনে থামল।মেঘ মেঘলাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামল।মেঘলা দেখল একটা বড় বাড়ি।বাড়িতে কামসে কাম ১৮-২০ জন মানুষ অনাহেসে থাকতে পারবে।বাড়িটা যেন মেঘলার স্বপ্নের মতো।গেট সুন্দর কারুকার্য করা।গেটের উপর বিভিন্ন ধরনের শায়িত গাছ এসে উপছে পড়েছে।গাছের আকর্ষণীয় পাতা আর ফুল গেটের আর গেটের দুদিকে বাউন্ডারির সৌন্দর্য আরো বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে।মেঘলা বাড়িটা দেখে হা হয়ে গেছে।
তখন ওখানে চারটা এসে থামল।একটা গাড়ি করে বর্ষণ বর্ষা আর মেঘলার মা-বাবা,একটাতে রিয়া-টিয়া নীলাআকাশ,একটাতে শ্রাবণ,বৃষ্টি আর নীলার মা-বাবা,একটাতে বর্ষণের মা-বাবা।সবাই গাড়ি থেকে নামল।মেঘলার মতো বৃষ্টি,শ্রাবণ,বর্ষণ,বর্ষা,নীলাকাশ আর রিয়া-টিয়া অনেকটা শকড।একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।মেঘলার,নীলার,বর্ষার মা-বাবা আর মেঘ মুচকি হাসছে সবার চেহারা দেখে।
মেঘলাঃ কি ব্যাপার সবাই এখানে?আর আমাদের এখানে আসার কারণটা?
মেঘঃ উহু তুই বড্ড প্রশ্ন করিস।আগে ভেতরে চল।পরে সব জানতে পারবি।
কেউ আর কথা না বাড়িয়ে ভেতরে ঢুকল।দেখতে পেল বাড়ির একপাশে একটা বড় বাগান।যেখানে সবার প্রিয় ফুলের গাছ লাগানো।অপরপাশে একটা সুইমিংপুল।মেঘলা ভ্রু কোচকে মেঘের দিকে তাকাল।মেঘঃ আব..দাঁড়িয়ে কেন ভিতরে চল।
বাড়ির ভিতর ঢুকে সবাই আরো অবাক।বাড়ির বাইরের দিকে থেকে ভিতরে দিকটা আরো সুন্দর।যে কারো মন কারার জন্য যথেষ্ট।
বর্ষণঃ ভাই এবার তো বল এখানে কেন নিয়ে এসেছিস।
মেঘলাঃ এটা কার বাড়ি?
মেঘঃ আমাদের।
আকাশঃ মানে??
মেঘঃ এটা আমাদের সকলের বাড়ি।
শ্রাবণঃ কি বলছিস স্পষ্ট বল না।
মেঘঃ আরে ভাই আমাদের বউদের যাতে নিজের মা-বাবাকে ছেড়ে থাকতে না হয়।আর না তো শশুরবাড়ি ছাড়তে হয় সেজন্য আজ থেকে আমরা একই বাড়িতে থাকব।আমি পাপা,পাপাই আর আংকেলের সাথে আরো আগেই কথা বলেছি।উনারা রাজি হওয়ায় আমরা সবাই মিলে এই বাড়িটা কিনেছি।
বর্ষাঃ কি..আজ থেকে আমরা সবাই এই বাড়িতে থাকব।
মেঘঃ ইয়াহ মেরি বেহনা।এবার বল সবার বাড়ি পছন্দ কি না।
সবাইঃ খুউউব।
দিগ্বিজয়ঃ তো সবাই নিজেদের পছন্দ মতো একটা রুম সিলেক্ট করে নাও আর ফ্রেস হয়ে পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখ।আগের বাড়ি থেকে তোমাদের সবার প্রয়োজনীয় সবকিছু আসছে।সব এলে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিও।
সবাইঃ ওকে।
বলে যে যার যার মতো করে একটা রুম বেছে নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেল।
🌿
মেঘঃ প্রেমতরঙ্গী তোর বাড়িটা পছন্দ হয়েছে।
মেঘলাঃ হু।
মেঘঃ এত শুকনো জবাব দিচ্ছিস কেন?
মেঘলাঃ এই বাড়িটা কেন কিনেছ?
মেঘঃ তোর পছন্দ হয় নি?
মেঘলাঃ কথা ঘুরিও না।বল এই বাড়িটা কেন কিনলে?এসব কেন করছ?
মেঘঃ (মুচকি হেসে) #হয়ত_তোমারই_জন্য।
মেঘলা একপলক মেঘের দিকে তাকাল।
মেঘঃ তো জন্য সব করছি।তুই মুখে হয়ত তোর এক্সপ্রেশন বলছিস না কিন্তু আমি জানি তুই খুব খুশি।আর আমি তোর খুশির জন্যই সব করছি।হুম বাকিরাও খুশি বাট তুই সবার থেকে বেশি।আমি জানি এতদিন পর নিজের মা-বাবাকে কাছে পেয়ে তোর ওদের কাছে থাকতে ইচ্ছা করছে।আবার মাম্মাম পাপাইকে ছেড়ে আসতে ইচ্ছা করছে না।আর যে যতই বলুক না কেন বিয়ের পর কতদিনই বা বাপের বাড়ি থাকা যায়?তুই জন্মের পর থেকেই তোর বাবামায়ের স্নেহ ভালোবাসা পাস নি।এখন দুদিনে সেই অভাবটা পূরণ হবে না।যদি বাকি জীবনটাই মা-বাবার কাছে কাটিয়ে দিস তবে হয়ত কিছুটা পূরণ হবে।তাই এই ডিসিশনটা নিলাম।এতে যেমন তুই খুশি তেমন বাকিরাও।আমি বর্ষা,বৃষ্টি আর নীলার কথাও ভেবেছি।বর্ষা আমার বোন।ওর থেকেও আমি ১৪বছর দুরে থেকেছি।এখন যখন ফিরে আসলাম তখন ওর বিয়ে হয়ে গেছে।যদি আমরা এক বাড়িতেই থাকি তাহলে আমি আমার বোনটাকেও কাছে পাবো।আর বর্তমানে বৃষ্টি আর নীলা দুজনেই ম্যারিড লাইফে অখুশি।যদি বৃষ্টি নিজের ভাই আর নীলাও নিজের পরিবারের কাছে থাকতে পারে তবে ওদের কিছুটা ভালো লাগবে।
মেঘলাঃ সবার কথা এত কেন ভাবো?
মেঘঃ তুই ভাবিস বলে।আমি জানি তুইও নীলা আর বৃষ্টিকে নিয়ে চিন্তিত সে মুখে তুই যতই বৃষ্টির উপর রেগে থাকার ভান করিস না কেন।আসলে কি বল তো তুই কোনোদিনও নিজের আপনজনদের উপর রেগে থাকতে পারবি না।BTW তুই আমার উপর আর রেগে নেই তো? তোর খুশির জন্য এতকিছু করলাম এখন তো ক্ষমা করে দে।
মেঘলাঃ আমি তোমার উপর রেগে নেই।
মেঘঃ বাট অভিমান করে আছিস।আর কি করলে তোর অভিমান ভাঙবে?এতদিন তো দূরে সরিয়েই রেখেছিস।
মেঘলাঃ তুমি আমাকে ১৪বছর কষ্ট দিয়েছ।আমিও ১৪বছর তোমার কাছে থেকেও দুরে থাকব।
মেঘঃ কিহহহহহ।প্লিজ বউ এমন করে না।
মেঘলাঃ বউ(ভ্রূ কোচকে) কে বউ
মেঘঃ তুই।
মেঘলাঃ কেউ যেন বলেছিল বেস্টফ্রেন্ডের বোন মানে নিজের বোন।(আড়চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে)দাভাই তো তোমার বেস্টফ্রেন্ড আর আমি দাভাইয়ের বোন মানে তোমারও ব..
মেঘঃ স্টপপপপপ।তুই আমার বউ।ওয়ান এন্ড অনলি বউ।বাজে কথা একদম বলবি না।
মেঘ রাগে গজগজ করছে।মেঘলা যে আকাশকে বলা ওর কথা যে ওকেই ফেরত দেবে ভাবে নি।মেঘের মুখের হাবভাব দেখে মেঘলর খুব হাসি পাচ্ছে।কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিয়েছে।
🌿
বৃষ্টিঃ শ্রাবণদা তুমি আমার সাথে এরকম কেন করছ?
শ্রাবণঃ কি করছি।
বৃষ্টিঃ কি করছ বোঝতে পারছ না?
শ্রাবণঃ বৃষ্টি যা বলার স্পষ্ট বল হেয়ালি করিস না।আমার এখন তোর হেয়ালি শুনার টাইম নেই।(বিরক্তি নিয়ে)
বৃষ্টিঃ (ঠোঁট চেপে কান্না সংবরণ করার চেষ্টা করে) আমাকে কষ্ট দিতে তোমার খুব ভালো লাগে তাই না?
শ্রাবণঃ তোর যদি অন্য কাউকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে তাহলে আমারও তোকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে।
বৃষ্টিঃ কিন্তু শ্রাবণদা তখন তো আমি ছোট ছিলাম।এর পরিণতি এরকম কিছু হবে বোঝতে পারি নি।আমি ভেবেছিলাম মেঘলা মেঘদাকে ভুলে দাভাইয়ের কাছে চলে আসবে আর মেঘদাও মেঘলাকে ভুলে অন্যকারো কাছে।
শ্রাবণঃ কিন্তু তা হলো না।তোর এই কাজের জন্য আমার খুব কাছের তিনজন ১৪বছর ধরে কষ্ট পেয়েছে।তুই খুব ভালো করে জানিস নীলা আর মেঘুকে আমি আলাদা চোখে দেখি না।তোর জন্য আমার দুই বোন কষ্ট পেয়েছে।১৪বছর আগে যদি তুই এমনটা না করতি তাহলে হয়ত আকাশ নীলাকে..মেঘ আমার বন্ধু কম ভাই তোর জন্য ও শুধু মেঘুর থেকে দুরে যায় নি নিজের পুরো পরিবারের থেকে গেছে।আমাদের সভ বন্ধুদের থেকে।এর পরেও তুই ভাবলি কি করে আমি তোকে ক্ষমা করে দেব।এবার তুই নিজেই উপলব্ধি কর ভালোবাসা হারানোর কষ্ট।আমি তোকে খুব শীঘ্রই ডিবোর্স দেব।তোর থেকে অনেক দুরে চলে যাবো।১৪বছর পর ফিরে আসব।যদি ১৪বছর আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারিস তো আমি তোর নইলে আমাকে ভুলেযা।
বলে গটগটিয়ে চলে গেল।শ্রাবণ যাওয়ার পর বৃষ্টি হাটুতে মুখ গুজে কাঁদতে লাগল।একটা অন্যায়ের ফলাফল এত ভয়ংকর হবে ভাবতে পারে নি।এখন হাড়ে হাড়ে তা টের পাচ্ছে।
🌿
কেটে গেছে আরো ২মাস।আজ নীলা খুব খুশি।যদিও আকাশের থেকে ওর কোনো এক্সপেকটেশন নেই তবুও নিজের মধ্যে আকাশের অংশের উপস্থিতি টের পেয়ে আজ নিজেকে সবচেয়ে সুখি মনে হচ্ছে।মাতৃত্বের স্বাদ উপলব্ধি করতে পারবে ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।
কয়েক দিন ধরেই নীলা নিজের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করছিল।ঘন ঘন বমি হওয়া।মাথা চক্কর দেওয়া ইত্যাদি।লাস্ট মান্থের পিরিয়ডও মিস গেছে।তাই টেস্ট করায়।আজ রিপোর্ট পেয়েছে।পজিটিভ।নীলা বাড়ি ফিরেই আগে মেঘলাকে রিপোর্ট দেখায়।মেঘলাও খুব খুশি হয়।নীলাকে জড়িয়ে ধরেঃ আ’ম সো হ্যাপি নীলু।এট লাস্ট আমি মাসিমনি হবো।উফ আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে তোকে বলে বোঝাতে পারব না।
নীলা মেঘলার রিয়েকশন দেখে হা।
মেঘলাঃ এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?
নীলাঃ তোর রিয়েকশন দেখে।না মানে একচুয়েলি এতদিন তোকে রোবট মনে হলেও আজকে মানুষ মনে হচ্ছে।না মানে মনে হচ্ছে আমার ১৪বছর আগের হারিয়ে যাওয়া মেঘুকে পাচ্ছি।এটাও সম্ভব?
মেঘলাঃ যার জন্য হারিয়ে গেছিলাম আর জন্যই হয়ত ব্যাক করছি।
নীলাঃ খুব ভালো।আমি আমার এই মেঘুকেই চাই।শুধু আমি একা না সবাই।
মেঘলাঃ তোর প্রেগ্ন্যাসির কথা আকাশদা জানে?
নীলাঃ না।তোকেই ফাস্ট জানালাম।জানি না আকাশদা কিরকম রিয়েক্ট করবে।বাট আই ডোন্ট কেয়ার।
মেঘলাঃ আমি সবাইকে জানিয়ে আসছি।চল আমার সাথে।
বলে মেঘলা নীলাকে নিচে নিয়ে গেল।নীচে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছিল।মেঘলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই বৃষ্টি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।
শ্রাবণঃ বিষ্টুটুউউউউ।
বলে বৃষ্টির কাছে গেল।
শ্রাবণঃ এই বিষ্টু কি হলো তোর উঠ না।চোখ খুল(বৃষ্টির গালে হালকা চাপড় দিয়ে)
মেঘঃ ওকে নিয়ে রুমে যা।আমি ডক্টরকে বলছি।
শ্রাবণ বৃষ্টিকে পাজাকুলো করে রুমে নিয়ে গেল।কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে সুসংবাদ দিয়ে গেলেন।শুনে শ্রাবণ স্তব্ধ।রিয়েকশন দিতে ভুলে গেছে।হাত অজান্তেই বৃষ্টির পেটে চলে যায়।দুচোখে পানি চিকচিক করছে।
মেঘলাঃ বৃষ্টিও মা হতে চলেছে।মানে আমি ডাবল মাসি হবো।তাহলে তো ডাবল মিষ্টি খেতে হয়।আজকে মনে হয় খালি সুসংবাদই পাবো।
মেঘলার কথা শুনে সবাই ভ্রূ কোঁচকে মেঘলার দিকে তাকায়।নীলা লজ্জা রাঙা হয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।
বর্ষণঃ মানে?
মেঘলাঃ সিম্পল আমাদের নীলুরানীও মা হতে চলেছে।আমাদের বাড়িতে দুজন নতুন অতিথি আসতে চলেছে।
মেঘলার কথা শুনে সবাই ডাবল খুশি হয়ে গেল।
আকাশের মনে কিরকম অনুভুতি হচ্ছে কাউকে বোঝাতে পারছে না।হ্যাঁ এখনো নীলাকে মেনে নিতে পারে।যে আসছে সে তারই একটা ভুলের ফসল।তবুও তো তারই অংশ।তার সন্তান।সন্তান কথাটা ভাবলেই একটা অন্যরকম সুখ অনুভব হয়।মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।মনের সব দুঃখ নিমিষেই দূরীভূত হয়।
🌿
মেঘলা আর আকাশ ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।মেঘলা দুরের আকাশের দিকে আর আকাশ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
মেঘলাঃ এভাবে আর কত দিন?
আকাশ মাথা তুলে প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে মেঘলার দিকে তাকাল।
মেঘলাঃ নীলা তোমার সন্তানের মা হতে চলেছে এবার তো ওকে এক্সেপ্ট করে নাও।তোমার দৃষ্টিতে নীলা হয়ত অন্যায় করেছে কিন্তু নীলা যা করেছে তোমাকে পাওয়ার জন্য।ঠিক ১৪বছর আগে তুমি যেটা করেছিলে।তোমার যদি মনে হয় তুমি নিরপরাধ তাহলে নীলাকে দোষী বলার তোমার কোনো অধিকার নেই।
কিছুক্ষণ থেমে
আমাকে ভুলে যাও।আমি এখন অন্য কারো স্ত্রী আর তুমি অন্যাকারো স্বামী।এখন তোমার আমার কথা ভাবা মানায় না।তুমি নীলার সাথে অন্যায় করছ।
আকাশঃ ভুলে যাবো?তুই কি পেরেছিস?১৪বছরেও মেঘকে ভুলতে পারিস নি?তাহলে আমি কি করে..
মেঘলাঃ হ্যাঁ আমি ভুলতে পারি নি।কিন্তু নিজের জীবনের সাথেও অন্যকাউকে জরাই নি?তুমি জড়িয়েছ।প্রথম বার হয়ত তুমি ঠকে গেছ কিন্তু দ্বিতীয়বার তো নিজের ইচ্ছেয়ই করেছিলে।তাহলে কেন কষ্ট দিচ্ছো ওকে।তুমি আমাকে হারিয়ে কষ্ট পাচ্ছ আমি জানি।কিন্তু নীলাকে যদি এভাবেই অবহেলা করতে থাকো তাহলে একদিন ওকেও হারিয়ে ফেলবে।তখন আজকের আমাকে হারানোর কষ্ট থেকে নীলাকে হারানোর কষ্ট বেশি হবে।সেদিন পস্তিয়েও লাভ হবে না।আমার কথা গুলো একবার ভেবে দেখ।আদ যদি সত্যি সত্যি আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমাকে ভালোবেসে থাকো তো এক্সেপ্ট করে নাও।নীলাকে ওর পূর্ণ অধিকার দাও।ওর পাশে থাকার চেষ্টা করো।ওর ভালবাসা বোঝার আর ওকে ভালোবাসার চেষ্টা করো।গ্যারান্টি দিচ্ছি ঠকবে না।
বলে মেঘলা চলে গেল।আকাশ মেঘলার কথা গুলো ভাবতে লাগল।
🌿
মেঘঃ আর কত শাস্তি দিবি?
শ্রাবণঃ মানে?
মেঘঃ আমি জানি শ্রাবণ তুই বৃষ্টিকে শাস্তি দিচ্ছিস কিন্তু কত?এবার তো থাম।অনেক তো হলো।হ্যাঁ বৃষ্টি একটা ভুল করে ফেলেছে।কিন্তুশাস্তিটাও পাচ্ছে।বৃষ্টির জীবনে তিনজন মহত্বপূর্ন ব্যক্তি হলেন এক. ওর বাবা। দুই.আকাশ আর তিন. তুই। যাকে এতদিন বাবা জেনে এসেছে সে ওর বাবা না বরং বাবার খুনি জানার পর ওর অবস্থা কি হয়েছিল ভাবতে পারছিস।ওর মনের উপর দিয়ে অনেক বড় ঝড় বয়ে গেছে।আকাশ নিজের লাইফ নিয়ে ডিপ্রেশড তাই আকাশের থেকেও ও অনেক দুরে চলে গেছে।আর বাকি রইলি তুই।তুইও এতদিন ধরে ওকে অবহেলআ করে আসছিস।মনে মনে ও অনেকটা ভেঙে পড়েছে।ও নিজের কাজে যথেষ্ট অনুতপ্ত।এবার তো ওকে ক্ষমা করে দে।পুরোনো সব ভুলে যা।নতুন করে স্ন শুরু কর।তাছাড়া ও তোর সন্তানের মা হতে চলেছে।এখন ও মানসিক চাপে থাকলে রোর বাচ্চার ক্ষতি হবে।হয়ত বৃষ্টিকেও হারিয়ে ফেলবি এবার ভাব কি করবি।পরে যেন পস্তাস না।
মেঘ চলে গেল।শ্রাবণ ভাবতে লাগল।
🌿
কেটে গেছে আরো ৯মাস।এই নয়মাসে আকাশ নীলাকে মেনে নিয়েছে।নীলার যথেষ্ট কেয়ারকরে।প্রেগ্ন্যাসির সময় একটা মেয়ের যতটা খেয়াল রাখা উচিত আকাশ তা রেখেছে।নীলার সব বায়না মেনে নিয়েছে।কোনো কিছুর ক্রুটি রাখে নি।নীলাকে শারিরীক আর মানসিক দুই ভাবেই ফিট রাখার চেষ্টা করেছে।নীলা এতে আরো খুশি।
শ্রাবণও বৃষ্টিকে ক্ষমা করে সব নতুনভাবে শুরু করেছে।বৃষ্টিকে আগের মতো ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখে।ওর খেয়াল রাখে।
এখন বৃষ্টি আর নীলা সবসময়ই হাসি খুশি থাকে।
আজকে সকালে হঠাৎ করে বৃষ্টির পেইন শুরু হয়।শ্রাবণ আর ওর মা বৃষ্টিকে নিয়ে হসপিটালে যান।মেঘলার বাবা,বর্ষার বাবা আর নীলার বাবাকে অফিস থেকে ফোন করে আনিয়েছেন।নীলার জন্য আকাশ বাড়িতেই রয়ে গেছে।মেঘ-মেঘলা,বর্ষা-বর্ষণ একটা ফিল্ড ওয়ার্কে সিলেট গেছে দুদিন আগেই।আজ বিকালে ফিরার কথা।মেঘলার মা আর বর্ষার মা ঘটনার কিছু আগেই মন্দিরে যান নীলা,বৃষ্টি আর ওদের অনাগত সন্তানদের নামে পুজো দিতে।টিয়া-রিয়া স্কুলে।অর্থাৎ বাড়তে শুধু নীলাকাশ আছে।
হঠাৎ আকাশের একটা কল আছে ডিপার্টমেন্ট থেকে।একটা ইমপর্টেন্ট কেসের জন্য এক্ষুনি হেড কোয়ার্টার যেতে হবে।যাওয়াটা খুব জরুরি না হকে যেত না।ওদিকে নীলা বাড়িতে একা।কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।অবশেষে চলেই যায়।যাওয়ার আগে
আকাশঃ নীলু বিছানায় থেকে একদম নামবি না।এখানে বসে না শোয়ে থাকবি।আমি বেশি টাইম নেব না চলে আসব।আর যদি অসুস্থ বোধ করিস তাহলে আমাকে ফোন দিবি।ফোন কাছেই রাখা।
যেতে গিয়েও ফিরে এসে নীলার কপালে অধর ছুঁইয়েঃ সাবধানে থাকিস।আমি যাব আর আসব।নীলার পেটের কাছে মুখ নিয়েঃ মাম্মাকে জ্বালিও না বাবু।পাপা তাড়াতাড়ি চলে আসব।দুষ্টু করো না সোনা।মাম্মার খেয়াল রেখ।
বলে নীলার পেটে আদর করে চলে যায়।
ওদিকে হসপিটালে ডক্টররা ওয়েট করছেন।বৃষ্টির পেইন শুরু হয়েছে তাই নরমাল ডেলিভারি করার প্রচেষ্টা করছেন।খুব প্রয়োজন না হলে সিজারিয়ান অপারেশনের ব্যবস্থা করবেন।
নীলার ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হওয়ায় বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।তখনি বেবি কিক মারে।অল্প ব্যথা হলেও নীলা মৃদু হাসে।কিন্তু ব্যথা নিরন্তর বাড়তে থাকে।নীলা পেট চেপে বসে পড়ে।ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।হাত বাড়িয়ে ফোন ধরতে গিয়েও ধরতে পারে না।গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে।বারবার আকাশকে ডাকছে।
কিছুক্ষণ পর আকাশ বাড়ি আসে।রুমে গিয়ে নীলাকে দেখে পা থেমে যায়।নীলার ব্লিডিং হচ্ছে।মাটিতে পড়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছে।আকাশ দেরি না করে নীলার কাছে যায়।নীলার দু গালে হাত রাখে।নীলা আকাশের হাত ধরেঃ আ..কাশ দা আ..মাদে.র ব..এবি।ও..কে বাঁচাও।আ..মি ম..রে গে..লে ওর খে..য়াল রেখ।
কষ্টে নীলার মুখ দিয়ে কথা বেরচ্ছে না।অনেক কষ্টে বলে।
নীলার কথা শুনে আকাশের বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভুত হয়।নিজেকে সামলিয়েঃ তোর কিছু হবে না দেখিস আর না আমাদের বেবি।প্লিজ শান্ত হো।কিচ্ছু হবে না।আমি এক্ষুনি তোকে..
নীলার রেসপন্স নেই।জ্ঞান হারিয়েছে।আকাশ নীলাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হসপিটালে যায়।
(চলবে)