হয়ত তোমারই জন্য পর্ব-২৬

0
737

#হয়ত_তোমারই_জন্য
ঐশিতা সেন
পর্বঃ ২৬

হসপিটালের কলিডোরে বসে আছে আকাশ পাশে শ্রাবণ।
নীলার অবস্থা খুব আশংকাজনক।এটা শুনে আকাশের বুকে চিনচিন ব্যথা শুরু হয়।মনের মধ্যে নীলাকে হারানোর ভয় ঝেঁকে বসেছে।মেঘলাকে হারিয়েও এতটা কষ্ট হয়ত পায় নি।অনেকক্ষণ মনের সাথে যুদ্ধ করে নিশ্চিত করেছে নীলাকে ভালোবাসে।এই কমাস নীলার সাথে থেকে নীলার টেক কেয়ার করতে করতে কখন এই স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র বন্ধনে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছে নিজেও জানে না।মেঘলাকে হয়ত ভুলতে পারে নি।মনের কোনো এক কোণায় মেঘলার জায়গা আছে।যা চাইলেও কেউ দখল করতে পারবে না।কিন্তু নীলাকেও ভালোবাসে।মেঘলাকে হারিয়েছে নীলাকে হারালে মরে যাবে।নীলাকে চায়।নীলাকে হারানোর আশংকা থেকেই বোঝতে পেরেছে নীলাকে কতটা ভালোবাসে।এখন শুধু ঈশ্বরের কাছে নীলা আর নিজের সন্তানের সুস্থতা কামনা করে প্রার্থনা করছে।
🌿
অনেকক্ষণ পর অটি রুম থেকে একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনা গেল।বাইরে উপস্থিত সবাই উদ্বিগ্ন।তখন নার্স সাদা তোয়ালে মুড়িয়ে এক ছোট্ট বাচ্চাকে নিয়ে বাইরে এলেন।
নার্সঃ মিসেস নীলার হাসবেন্ড কে?
আকাশ উঠে দাঁড়াল।নার্সের কাছে এসে দাঁড়াল।
নার্সঃ আপনিই মিস্টার নীলা?
আকাশ উপর নিচে মাথা ঝাঁকাল।
নার্সঃ কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার সাহা।আপনি ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছেন।আপনার ছেলে..
বাচ্চাটিকে সামনে এগিয়ে।
আকাশঃ আ..ম আ..মার নী..লা?(কাঁপা কাঁপা গলায়)
নীলাঃ আপনার স্ত্রী ও বেবি একদম সুস্থ আছেন।মিসেস নীলাকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ায় উনি ঘুমিয়ে আছেন।একটু পর কেবিনে দেওয়া হলে দেখা করতে পারবেন।তবে ভীড় করবেন না।
বলে নার্স আকাশের কোলে বাচ্চাটিকে তুলে দিয়ে চলে গেলেন।
আকাশ বাচ্চাটিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল।দু চোখ বেয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।আনন্দের অশ্রু।
নীলার জ্ঞান ফিরলে দেখতে পায় ওর পাশে আকাশ একটা বাচ্চাকে নিয়ে বসে আছে।বাচ্চাটি আকাশের বুকে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।
নীলাকে জ্ঞান ফিরতে দেখে আকাশঃ নীলপাখি(শীতল কণ্ঠে)
আকাশের শীতল কণ্ঠে কর্ণগোচর হওয়ার সাথে সাথে নীলা কেঁপে উঠে।চোখ বন্ধ করে মুহূর্তটাকে উপলব্ধি করতে থাকে।
আকাশঃ তুই ঠিক আছিস?কোথায় কষ্ট হচ্ছে না তো?ডাক্তারকে ডাকব?
নীলা মাথা নাড়ল।চোখ খুলে আকাশের দিকে তাকাল।
আকাশঃ আ..আমাদের বেবি(বাচ্চাটিকে নীলার কাছে দিয়ে)
নীলার নিজের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে।চোখের কার্নিশ বেয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।আকাশ নীলার দিকে ঝুঁকে কপালে একটা চুমু খেল।মাথায় মাথা ঠেকিয়েঃ থ্যাংকস নীলপাখি আমাকে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার দেওয়আর জন্য।
আকাশঃ জানিস আমি না খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম।ভেবেছিলাম তোকে হয়ত হারিয়ে ফেলব।ভগবান আমার ডাক শুনেছেন।তোকে আমার থেকে কেড়ে নেন নি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাস না কোথাও।মেঘলাকে হারিয়েছি তোকে হারাতে পারব না।যদি তুই হারিয়ে যাস আমি সত্যি সত্যি মরে যাব।
নীলা আকাশের মুখ চেপে ধরল।অশ্রুসিক্ত নয়নে আকাশের দিকে তাকিয়েঃ একথা আর বল না।তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার আর আমাদের বাচ্চার কি হবে?
আকাশ হাসল।
আকাশঃ ভাবি নি তোকে কখন একথা বলল।আমি সত্যিই মন থেকে ফিল করে বলছি I love you Nilpakhi.
নীলার হৃদয়ে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।ও পেরেছে ভালোবাসার মানুষটির মনে জায়গা করে নিতে।ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।
নীলাঃ I love you too.
কিছুক্ষণ দুজনেই নিরব রইল।একে অপরের অস্তিত্ব ফিল করতে লাগল।নিরবতা কাটিয়ে নীলাঃ ব..বৃষ্টি?
আকাশঃ ঠিক আছে।আমরা আজ মা-বাবার সাথে সাথে মামা-মামি এন্ড পিসা-পিসি হয়েছি।বৃষ্টির ছেলে হয়েছে।
নীলাঃ সত্যিই?আমি দেখব আমাকে নিয়ে চল।
আকাশ চোখ গরম করেঃ চুপচাপ শুয়ে থাক।উঠেছিস তো ভালো হবে না।
আকাশের ধমক খেয়ে নীলা মুখ ফুলিয়ে শুয়ে রইল।
আকাশ মুচকি হেসে নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
আকাশঃ পরে বেবি এনে দেখাব কেমন?এখন রেস্ট নে।
🌿
মেঘলা আর মেঘ নীলার কেবিনে।মেঘলার কোলে নীলার বেবি।মেঘলা বাচ্চাটির গাল টিপে টিপে আদর করছে।খেলা করছে।আর বাচ্চাটি খিলখিলিয়ে হাসছে।মেঘ মুগ্ধ নয়নে মেঘলাকে দেখছে।
কিছুবাদে মেঘলাঃ নীলুউউ তোর বেবিটা এত কিউট কেন?তোর কিছুই পায় নি।একদম আকাশদার মতো হয়েছে।পুরো কিউটের ডিব্বা।চকলেট বয়।আকাশদার মতো ধলা বিলাই।দেখেছিস কি গোলাপি ঠোঁট জোড়া।দেখলেই ইচ্ছা করে..(আড়চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে)
নীলা চোখ বড় বড় করে মেঘলার দিকে তাকাল।মেঘলার ইঙ্গিত বোঝতে অসুবিধা হলো না।পরক্ষণেই কাহিনি বোঝতে পেরে মুখ টিপে হাসল।মেঘ রাগে ফুঁসছে।ইচ্ছে করছে মেঘলাকে তুলে নিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিতে।ওর সামনে অন্য কারো প্রশংসা।বাট প্রশংসা কার করছে।ছোট্ট বেবিটার নাকি আকাশের?
নীলাঃ মেঘু আমি বোঝতে পারছি না তুই ঠিক কার উপর নজর দিচ্ছিস।আমার বেবির উপর নাকি বরের উপর?
মেঘলাঃ ধরে নে দুজনের উপরই।জানিস না ফ্রেন্ডের সবকিছুর উপরই ফ্রেন্ডের ইকুয়াল রাইট থাকে।হিহি।
নীলা চোখ ছোট ছোট করে মেঘলার দিকে তাকিয়েঃ কোন শাস্ত্রে লেখা আছে?
মেঘলাঃ মেঘলা সেন শর্মার লেখা শাস্ত্রে😎
নীলাঃ তা তোর বরের উপরও বুঝি আমার সমান অধিকার আছে?(দুষ্টু হেসে)
মেঘলাঃ উহু নেই।ভুলে গেলি আমার বর তোর ভাই লাগে।
নীলাঃ আমার বরও..
মেঘলাঃ তোর বর আমার জিজু লাগে।আমি জিজুর আধি ঘরওয়ালি।
নীলাঃ বাহ!তোর বর আমার ভাই আর আমার বর তোর জিজু?হোয়াট আ লজিক!
মেঘলাঃ হুম এইতো ভালো বুঝছিস।ওয়ান এন্ড অনলি জিজু।দাভাই তো আমার ভাই-ই শ্রাবণদাকেও ভাই মানি।তাই ওরা আমার বেস্টুর বর হলেও জিজু বলতে পারব না।আর এই লোকটাকে তো জিজু বললে আমাকে তুলে আছাড় দিবে(মেঘের দিকে তাকিয়ে) তো বাকি রইল আকাশদা।উনাকে অন্তত জিজু থাকতে দে।নইলে আমি জিজু বিহীন হয়ে যাবো।এতটা বেস্টু থাকতেও জিজু নেই(কাঁদোকাঁদো হয়ে)
তখন আকাশ কেবিনে ঢুকল।আকাশকে দেখে মেঘলা আর কিছু বলল না।
মেঘঃ আচ্ছা বেবির নাম কি ঠিক করলে?
আকাশ+নীলাঃ নীলাশ সাহা আলয়(একসাথে)
বলে একে অপরের দিকে অবাক চোখে তাকাল।নাম নিয়ে আগে ডিসকাস করে নি।হঠাৎ করেই দুজনের মাথায় একই নাম চলে আসল।
মেঘলাঃ বাহ! দুজনের কি মনের মিল।একই নাম মাথায় এলো।ভেরি গুড।ওর মতো ওর নামটাও কিউট।আলয় সোনা তোমার নামটা পছন্দ হয়েছে?
বাচ্চাটিকে কি বুঝল কে জানে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।
মেঘলা আলয়কে আকাশের কোলে দিয়েঃ তিনজনে একাকি টাইম স্পেন্ড করো।আমরা বৃষ্টি আর বৃষ্টির বেবিকে দেখে আসি।
বলে চলে যাচ্ছিল।
আকাশঃ থ্যাংকস(হাসি মুখে)
মেঘলা প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকাল।আকাশ আর কিছু না বলে নীলার কাছে বসল।মেঘলা মুচকি হেসে মেঘের সাথে বেরিয়ে পড়ল।বৃষ্টির কেবিনে যেতে যেতে মেঘঃ আকাশের ঠোঁটের রং তো গোলাপি না তুই গোলাপি কেন বললি?
মেঘলাঃ আমি যেন দেখতে বসেছি আকাশদার ঠোঁটের রং কেমন?নিজের ঠোঁটই যে গোলাপি বেচারা ভুলেই গেছে।হাঁদা কোথাকার(বিড়বিড়িয়ে) আব.. সিগারেট খেত তো তাই কালো হয়ে গেছে।(মেকি হেসে)
মেঘঃ বাট কালোও তো নয়।
মেঘলাঃ এখন কি এখানে আকাশদাকে নিয়ে গবেষণা করতে বসবে(কপট রাগ দেখিয়ে)
মেঘঃ না না চল।
মেঘলা সামনে হাঁটতে লাগল।
মেঘঃ আমি কি এতই ডাফার তুই যে আমাকে রাগানোর জন্য কথাগুলো বলেছিস বুঝতে পারব না।মিচকা শয়তান।হাহাহা।
🌿
ছ’দিন পর নীলা আর বৃষ্টিকে ডিসচার্জ করা হলো।আকাশ আর শ্রাবণ ওদের বাড়ি নিয়ে এলো।আজ ষষ্ঠী পুজো।নীলার আর বৃষ্টির বেবির নামকরণ করা হবে যদিও নাম আগে থেকেই ঠিক।
নীলাকাশের ছেলের নাম- নীলাশ সাহা আলয়
বৃষ্টি-শ্রাবণের ছেলের নাম- বিভান রায় বারিশ।
🌿
রাতে মেঘলা মেঘের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে বুকের মধ্যে আঁকিবুঁকি করছে।মেঘ একহাত দিয়ে ফোন দেখছে অন্য হাত দিয়ে মেঘলাকে ধরে রেখেছে।
মেঘঃ কিছু বলবি?
মেঘলাঃ না।
মেঘঃ বলে ফেল।
মেঘলাঃ বলছিলাম কি বৃষ্টি আর নীলা খুব খুশি তাই না।ওদের একটা কিউট গলুমলু বেবি আছে।মা হওয়ার আনন্দটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আনন্দ তাই না?
মেঘঃ হুম তো?
মেঘলাঃ আব. আমিও মা হবো।
মেঘঃ হো।কেউ বারণ করেছে নাকি?
মেঘলা করুণ চোখে মেঘের দিকে তাকাল।মেঘ ফোনটা রেখেঃ তোর যা হতে ইচ্ছে করে হো।আমার কোনো আপত্তি নেই।(ঘড়ি দেখে)অনেক রাত হয়েছে।ঘুমিয়ে পড়।
লাইট অফ করে চোখজোড়া বুজে।মেঘলা দাঁত কিড়মিড় করে উঠে পড়ে।
মেঘঃ এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস।
মেঘলাঃ বললে না আমার যা হতে ইচ্ছে করে হতে।তোমার আপত্তি নেই।তাই যাচ্ছু
মেঘঃ হু তো কোথাও?
মেঘলাঃ বাবা খুঁজতে যাচ্ছি।
মেঘঃ মানে?
মেঘলাঃ আমার বেবির বাবা ছাড়া আমি মা হবো কি করে।তাই বাবা খুঁজতে যাচ্ছি।বেবির বাবা।(দাঁতে দাঁত চেপে)
মেঘলার কথাটা ১মিনিট মাথায় ঘুরপাক খেয়ে বোধগম্য হতেই রেগে গেল।
একটানে মেঘলাকে নিজের উপর ফেলেঃ কি বললি?কি খুঁজতে যাচ্ছিস?
মেঘলাঃ বেবির বাবার জন্য গিফট।হিহিহি
মেঘ চোখ ছোট ছোট করে মেঘলার দিকে তাকিয়েঃ বিচ্ছুউ।তোর বেবি না জানি আরো কতবড় বিচ্ছু হবে।
মেঘলাঃ এ্যাঁ নিজে তো ধোঁয়া তুলসীপাতা (মুখ বাকিয়ে)
🌿
কেটে গেছে আরো একবছর।আজ আলয় আর বারিশের জন্মদিন।1st বার্থডে তাই সন্ধ্যায় পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।বাড়িতে পার্টির তোড়জোড় চলছে।সবাই কোমর বেঁধে কাজে লেগে পড়েছে।শুধু বসে বসে বোর হচ্ছে মেঘলা আর বর্ষা।মেঘলার প্রেগ্ন্যাসির ৮মাস চলছে আর বর্ষার ৯মাস।আরো দুদিন পরে বর্ষার ডেলিভারি ডেট।
মেঘলা আর বর্ষাকে কেউ কাজ করতে দিচ্ছে না।একটু পর পর মেঘ আর বর্ষণ এসে হাতে ফ্রুটের বাটি ধরিয়ে দেয়।দুজনের বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে খাবো না বললেই রাম ধমক খায়।
কিছুক্ষণ পর মেঘ এসে মেঘলাকে আর বর্ষণ বর্ষাকে রুমে নিয়ে যায়।

মেঘলাঃ উহু উহু..
মেঘঃ ভণিতা না করে কি বলবি বলে ফেল।
মেঘলাঃ আমার না ফুচকা খেতে ইচ্ছে করছে।
মেঘঃ তোর বাইরের আনহেলথি খাবার ছাড়া আর কি খেতে ইচ্ছা করে?
মেঘলাঃ ফুচকা আন হেলথি না। আনহেলথি হলে লোকে খেত না।
মেঘঃ অন্য সময় হলে খাওয়াতাম এই সময় এসব খাওয়া ঠিক না প্রেমতরঙ্গী।আমি ফ্রুট ন.
মেঘলাঃনায়ায়া।ফ্রুট খাইয়েই আমাকে উপরে পাঠাবে?ফুচকা এনে দাও না।বাবুও ফুচকা খেতে চাইছে। একদিন খেলে কিচ্ছু হবে না।
মেঘঃ না প্রেমতরঙ্গী নো ফুচকা।দেখ এই আট মাসে তোমার সব আবদার রাখেছি বাট যেসব খেলে তোমার ক্ষতি হতে পারে সেসব নট এলাউড।
মেঘলাঃ এ্যাঁ এসেছে আমার স্বাস্থ্যবিদ(মুখ বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে) আচ্ছা ঠিক আছে ফুচকা ক্যান্সেল।আইসক্রিম তো খেতে পারি।আইসক্রিম এনে দাও না প্লিজজজ🥺🥺
মেঘঃ উফ তুই শুধু এসব খাওয়ার বাহনা কেন করিস বল তো।এখন আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লেগে যাবে।এমনিতেই সিজন চেঞ্জ হচ্ছে তাই রিস্ক আছে।আবার আইসক্রিম খেতে চাইছিস।নো আইসক্রিম।
মেঘলাঃএকটু খাব বেশি না। প্লিইইইজজজজ
মেঘঃ না মানে না।
মেঘলাঃ ওকে নো আইসক্রিম চকলেট তো খেতে পারি।চকলেট এনে দাও।
মেঘঃ না এখন তুমি হেলথি খাবার আর ফ্রুট ছাড়া কিছুই খাবে না।
মেঘলাঃ ঠিক আছে লাগবে না কিচ্ছু লাগবে না।আমাকে কেউ ভালোবাসে না।আমি মরে গেলেই ভালো হবে কেউ আর বায়না করবে না কিছুর জন্য।শান্তিতে থাকবে।তখন দেখব কাকে এনে এসব দাও(মুখ ফুলিয়ে অভিমানী কন্ঠে)
মেঘলার কথা শুনে মেঘ রেগে গেল।দাঁতে দাঁত চেপেঃ মেঘলায়ায়া তোকে কতবার না বলেছি এসব কথা না বলতে।
মেঘের হুংকারে মেঘলা কেঁপে উঠে।মেঘ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ সংবরণ করে।শান্ত কণ্ঠেঃ ঠিক আছে আনছি।এই লাস্টই কিন্তু।এরপর আর নো বায়না।
আর একবার যদি মরার কথা বলিস আমি নিজেই তোকে খুন করব।মরার কথা মুখে আনবি না কিন্তু।
মেঘলা মাথা নাড়িয়ে ঠিক আছে বোঝাল।
মেঘ চলে গেল।
🌿
অনেকক্ষণ হয়ে গেছে মেঘের আসার নাম নেই।এদিকে মেঘলা একজায়গায় বসে থাকতে পারছে না।মেঘের অপেক্ষা করতে করতে হাঁপিয়ে গেছে।এদিকে নীচে শোরগোল বেঁধেছে।ঘরে বসতে একটুও ইচ্ছা করছে না।
মেঘলাঃ দুর।নিচে গিয়েই বসি।মেঘ হয়ত আমার জন্য চকলেট এনে দিতে ভুলে গেছে।কাজে লেগে পড়েছে।যা কাজ পাগল লোকটা।
এসব বলতে বলতে ঘর থেকে বেরোয়।চারদিকে মেঘকে খুঁজতে খুঁজতে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল।হঠাৎ করে একটা দড়িতে পা বেঁধে।স্লিপ খেয়ে একটা চিৎকার দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে পরে যায়।
মুহূর্তে মেঝে লাল বর্ণ ধারণ করে।মেঘলার চিৎকারে সবাই ছুটে আসে।মেঘলার অবস্থা দেখে প্রত্যেকে বাকহীন।
মেঘলার খুব কষ্ট হচ্ছে।জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।সব গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসছে।ঝাপসা চোখে মেঘকে দেখতে পেল।হাতে ফুচকা আইসক্রিম আর চকলেটের থলে নিয়ে মেঘলার রক্তাক্ত শরীরের পাশে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ।মেঘলাকে এই অবস্থায় দেখে হাত থেকে ফুচকা,আইসক্রিম আর চকলেটের থলে পড়ে যায়।দুচোখ চেয়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে।ধীর পায়ে মেঘলার কাছে যায়।মেঘকে কাছে পেয়ে মেঘলা মেঘকে আঁকড়ে ধরে।মেঘকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না।মেঘের বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে।
মেঘঃ মেঘলায়ায়ায়ায়া
বলে একটা চিৎকার দেয়।
বর্ষণ আর বর্ষা নিজেদের রুমেই ছিল।মেঘলার গগনবিদারী চিৎকার শুনে দুজনেই বেরিয়ে আসে।বর্ষা মেঘলার করুণ অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়।উত্তেজিত হয়ে পড়ে।এই ট্রমাটা মেনে নিয়ে পারে নি।হঠাৎ করে উত্তেজিত হওয়ার ফলে ওরও পেইন শুরু হয়।বর্ষণ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।মাথা হ্যাং হয়ে আসে।একদিন বোনের এই অবস্থা অন্যদিকে স্ত্রীর।কি করবে বোঝে উঠতে পারছে না।
🌿
মেঘ হসপিটালে মুর্তির মতো বসে আছে।ডক্টর বলেছেন বর্ষার কোনো কমপ্লিকেশন না হলেও মেঘলার হচ্ছে।সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ায় খুব জোরে পেটে আঘাত লেগেছে।বাচ্চা আর মা দুজনের অবস্থাই ক্রিটিকাল।যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে।সব পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলে গেছেন।
মেঘের কানে বারবার ডক্টরের কথাগুলো বাজছে।মেঘলার কিছুক্ষণ আগের বলা কথাগুলো বাজছে।তবে মেঘলা ওকে ছেড়ে চলে যাবে।ভয়ে বুক কেঁপে উঠে।নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে অটির দরজার দিকে তাকিয়ে রইল।

(চলবে)