গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-৩৩

0
336

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩৩
________________

আয়নার সামনে বসে মাথার কিলিপ খুলতে খুলতে অবস্থা শেষ আদ্রিজার, ব্যাথা তো পাচ্ছে পাচ্ছে সাথে চুল ছিঁড়েও যেন হাতে চলে আসছে তাঁর। পরিশেষে মাথার ডানদিকের একটা কিলিপ খুঁলে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো আদ্রিজা। সাথে বললো,

‘ অবশেষে কিলিপ আন্টিরা বের হলো মাথা থেকে। উফ! অবশেষে শান্তি। এখন শুধু গলার হারটা খোলা বাকি তাঁর।’

আদ্রিজা চটজলদি গলার হারটা খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সাথে সাথে বিপত্তি ঘটলো আর একটা। আদ্রিজার চুলগুলো খোলা থাকায় হারের সাথে আঁটকে গেছে চুল। খুব বাজে ভাবেই পেঁচিয়েছে সেটা। এখন কি হবে? আদ্রিজা বার কয়েক চেষ্টা করলো সেটাকে ছাড়ানোর কিন্তু পারলো না। এরই মাঝে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো অভ্র। আদ্রিজার অবস্থাটা খেয়াল করেছে সে। অভ্র তাঁর মাথাটা মুছতে মুছতে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। আর আদ্রিজা হতাশ হয়ে সেইম ভঙ্গিতে বসে রইলো কিছুক্ষন। আরুকে ফোন করে ডাকবে রুমে, কিন্তু অভ্র যদি কিছু বলে তখন। বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে আদ্রিজা। আদ্রিজা আর একবার চেষ্টা করলো তাঁর গলার হারটা খোলার কিন্তু এবারও ব্যর্থ হলো সে।’

অন্যদিকে,

শুরুর দিক দিয়ে আদ্রিজার কার্যকলাপ বুঝতে না পারলেও এবার অভ্র বুঝতে পেরেছে আদ্রিজার সমস্যাটা আসলে কোথায়। অভ্র কিছু একটা ভেবে ফোন লাগালো আরুর নাম্বারে। কিন্তু আরু ফোন তুললো না এতে বেশ হতাশ হলো অভ্র। পর পর দু’বার ফোন করার পরও আরু ফোন না তোলায় অভ্র নিজেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। প্রথমে ভেবেছিল মাকে ডাকবে, কিন্তু বিষয়টায় কেমন যেন লাগলো অভ্রের কাছে তাই বেশি না ভেবে সে নিজেই এগিয়ে গেল আদ্রিজার দিকে।’

হুট করেই অভ্রকে নিজের দিকে আসতে দেখে খানিকটা চমকে উঠলো আদ্রিজা। গলার হারটাকে মোচরামুচরি করাটা ওখানেই থামিয়ে দিলো সে। অভ্র আদ্রিজার দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ আমি হেল্প করবো তোমায়?’

আদ্রিজা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো অভ্রের মুখের দিকে। তারপর বেশি না ভেবে মাথা নাড়িয়ে বললো সে,

‘ ঠিক আছে,,

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্র আর বেশি না ভেবে আদ্রিজার পিছনে দাঁড়ালো। তারপর আনমনেই আদ্রিজার পিছনের কিছু চুল সরিয়ে দিল সামনে। তারপর হাত দিলো হারের পিছনে অংশটায়।’

আচমকাই অভ্রের হাতের স্পর্শ পেতেই খানিকটা চমকে উঠলো আদ্রিজা। আয়নার দিকে তাকিয়ে রইলো সে। অভ্র ধীরে ধীরে আদ্রিজার পেঁচিয়ে যাওয়া চুলটাকে সরালো হারের সঙ্গ থেকে। এতে চুলে খানিকটা ব্যাথাও পাচ্ছিল আদ্রিজা তবে ব্যাথাটাকে পুরোপুরি হজম করে সামলে নিয়েছিল সে নিজেকে। আর অভ্র হার থেকে চুল সরাতে সরাতে বলে উঠল,

‘ দেখছো তুমি কাজটা করতে পারছো না তাহলে বার বার চেষ্টা করে নিজেকে আঘাত কেন দিচ্ছেছিলে ব্ল্যাকবেরি? জানো না বেশি আঘাত দিতে নেই নিজেকে। আর নিজেকে আঘাত দিলেই যে প্রতিবার আঘাতের সাথে আঁটকে থাকা জিনিসটা ফিরে আসবে তোমার কাছে এমনটাও তো নয়। তাই সবসময় নিজেকে আঘাত দিয়ে কাজ করো না ব্ল্যাকবেরি। আর নিজেকে একা ভেবো না আমি তো আছি তোমার সাথে। কখনো কোনো কাজে হেল্প লাগলে আমায় বলবে আমি সবসময় থাকবো তোমার পাশে।’

বলেই হারটা খুলে আদ্রিজার হাতে দিয়ে চলে গেল অভ্র। আর আদ্রিজা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্রের যাওয়ার পানে। অভ্রের লাস্ট কিছু কথার মাঝে একরাশ মুগ্ধতা খুঁজে পেয়েছে আদ্রিজা। এই মুগ্ধতার ভাবটা আরো আগে থেকেই ছিল আদ্রিজার তবে আজ যেন সেই মুগ্ধতাটা আরও বহুতগুলো বেড়ে গেল আদ্রিজার। আনমনেই বলে উঠল সে,

‘ আপনি ভীষণ ভালো অভ্র।’

আদ্রিজার কথাটা অভ্রের কানে গিয়েছে ঠিকই তবে কিছু বললো না সে। আনমনেই মুচকি হেঁসে বিছানায় বসে মোবাইল দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো অভ্র।’

___

রান্নাঘরে পাশাপাশি বসে আরু,আশিক একসাথে মুরগীর রান চিবাচ্ছে আর বক বক করছে। পাশেই আরুর ফোনটা সাইলেন্ট হয়ে পড়ে আছে। আর ফোনটা সাইলেন্ট থাকায় সাথে আশিকের সাথে বক বক করার ঠ্যালায় অভ্রের কলটা ঠিক টের পায় নি আরু। হঠাৎই মুরগীর রান চিবাতে চিবাতে বলে উঠল আরু,

‘ ভাগ্যিস তখন রিয়ানকে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলেছিলি না হলে তো আজ গেছিলাম।’

উওরে আশিকও মুরগীর রান চিবাতে চিবাতে বলে উঠল,

‘ আরে দেখতে হবে না মিথ্যে কথা কে বলেছে?’

হাসলো আরু।’

এবার ফ্ল্যাসবেকে যাওয়া যাক,

তখন যখন রিয়ান আরু আর আশিককে বাগানের সামনে দেখে বলেছিল,

‘ তোমরা দুজন এখানে?’

তখন আশিক আরু দু’জনেই অবাক চোখে তাকায় রিয়ানের দিকে। আরু তো আমতা আমতা করে বলে উঠল,

‘ আপনি?’

উওরে রিয়ানও বিস্মিত হয়ে বলে উঠল,

‘ হুম আমি কিন্তু আশিক এখানে,

‘ আসলে হয়েছে রিয়ান ভা,

আরুর পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আশিক এগিয়ে গিয়ে উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ আসলে হয়েছে কি রিয়ান ভাই? অভ্র ভাইয়ের বিয়ের জন্য গত দু’দিন আরুর সাথে দেখা হয় নি আমার, আর আমার আবার আরু ছুনার সাথে একদিন দেখা না হলেই ভালো লাগে না।’

বলেই আরুর গাল ধরে টান দিলো আশিক। আশিকের কান্ডে চোখ মুখ কুঁচকে তাকায় আরু আশিকের দিকে। তবে কিছু বলে না। আর আশিক পুনরায় রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,

‘ তাই আর কি, প্লিজ ভাইয়া আপনি আবার কাউকে বইলেন না প্লিজ প্লিজ।’

ব্যস আশিকের এতটুকু কথাতেই গলে যায় রিয়ান। আর সেও বেশি না ভেবে চলে যায় ওখান থেকে।’

পর পর কথাগুলো ভেবে আশিক আর আরু একসাথে হেঁসে দিল। আরু মুরগীর রান খেতে খেতে হাসতে হাসতে বলে উঠল,

‘ আমরা কি জোশ এক্টিং করছি দোস্ত? রিয়ান তো পুরো ফাপ্পা।’

‘ তাইলে এই খুশিতে একখান কবিতা শুনাই আরু ছুুনা,

উওরে আরুও কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠল,

‘ ঠিক আছে ক।’

আরুর কথা শুনে আশিক গলাটা ঝেড়ে বলে উঠল,

‘ ক্রিকেটে বল মেরে নিতে হয় রান,

‘ বাহ বাহ, বাহ বাহ (আরু)

‘ দাঁড়া পুরাডা কইতে দে,

‘ হুম ক,

‘ হুম ক্রিকেটে বল মেরে নিতে হয় রান
আজকে সারাদিন আরু,আশিক খেলেছে লুকোচুরি সাথে করেছে হেব্বি ফান।’

‘ আয় হায় বাহ বাহ।’

‘ সত্যি ওয়াও ওয়াও হইছে আরু ছুনা।’

‘ হুম একদম ফাস্ট ক্লাস।’

‘ তাহলে আর একটা শুনাই,

‘ হুম ক,

এবার আশিক সিরিয়াস হলো আরুর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ তোমার মায়াবী চোখের মাঝে ঠোঁট রাঙানো মিষ্টি হাসি,
তুমি কি জানো তোমার সেই হাসিকে আমি কত ভালোবাসি।’

আরু ঘুরে তাকালো আশিকের দিকে তারপর বললো,

‘ কি?’

হুস আসলো আশিকের বললো,

‘ আরে কবিতা বললাম তো। আচ্ছা শোন অনেক রাত হয়েছে এখন যেতে হবে বুঝলি। না হলে আম্মাজানে ঘরে ঢুকতে দিবে না আজ।’

উওরে আরুও বেশি না ভেবে বললো,

‘ আচ্ছা ঠিক আছে। কাল যাবি তো ভার্সিটি?’

‘ হুম তোরা গেলে আমিও আসছি।’

‘ ঠিক আছে।’

অতঃপর নিজের হাতটা পরিষ্কার করে আশিক চলে গেল। আর আরুও বেশি না ভেবে বসা থেকে দাঁড়িয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে নিজের হাতটা ধুয়ে চলে গেল সে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে। সত্যি আজ সে আর আশিক অনেক দৌড়েছে। পা টাও ব্যাথা করছে একটু একটু।’

____

খয়েরী রঙের শাড়ি পড়ে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিজা। আর তাঁর সামনেই শুয়ে আছে অভ্র। ঘড়ির কাঁটায় প্রায় এগারোটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। আদ্রিজা বুঝতে পারছে না কোথায় ঘুমাবে সে। কাল তো অভ্রের মাথা টিপে দিতে দিতে কখন কোথায় ঘুমিয়ে ছিল সেটাই মনে নেই তাঁর। কিন্তু আজ। আদ্রিজা কনফিউশানে ভুগছি ঠিক কোথায় ঘুমাবে সে সোফায় নাকি খাটে। আদ্রিজা ভাবছে আজ নয় কাল তাঁকে তো যেতেই হবে আর তাছাড়া অভ্রের পাশে ঘুমানোর অধিকার কি আছে তাঁর। তাহলে? আদ্রিজার ভাবনার মাঝেই অভ্র বলে উঠল,

‘ তুমি কি ভাবছো বলো তো?’

খানিকটা চমকে উঠলো আদ্রিজা। বললো,

‘ না মানে কোথায় ঘুমাবো আমি?’

অভ্র অবাক হলো, চরম অবাক হলো। বললো,

‘ কোথায় ঘুমাবে মানে এত বড় খাটটা তোমার চোখে পড়ছে না।’

‘ এখানে ঘুমাবো?’

‘ কি আশ্চর্য! মানুষ খাট ছাড়া কোথায় ঘুমায় আর তাছাড়া কাল কোথায় ঘুমিয়ে ছিলে তুমি।’

‘ কাল তো খাটের মাঝখানে, যাগগে আমি বরং সোফায় ঘুমাই আমার আবার ঘুমের মধ্যে ফুটবল খেলায় রোগ আছে।’

বলেই একটা বালিশ আর কাঁথা নিয়ে সোফার দিকে এগিয়ে গেল আদ্রিজা। আদ্রিজার কান্ডে অভ্র অবাক হয়ে বললো,

‘ আর ইউ সিরিয়াস ব্ল্যাকবেরি তুমি ওখানে ঘুমাবে?’

‘ হুম একশো পারসেন্ট শিওর।’

‘ ওকে এজ ইউর উইস। পড়ে ঘাড় কোমড় ব্যাথা করলে আবার বলতে এসো না।’

বলেই নিজের বালিশটা ঠিক করে ঘুমিয়ে পড়লো অভ্র। আর আদ্রিজাও বেশি না ভেবে সোফায় বালিশ রেখে কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। সাথে অভ্রের দিকে তাকিয়ে ভাবলো সে,

‘ আপনি আমার সাথে যতই ভালো ব্যবহার করুন না কেন অভ্র। আমি তো জানি ভিতরে ভিতরে আপনি আসলে কতটা কষ্টে আছেন। লাবণ্য আপুকে নিয়ে এখনো ভাবেন আপনি। আপনার পাশে ওইখাটে শোয়ার একমাত্র অধিকার যদি কারো থেকে থাকে সেটা হলো লাবন্য আপুর আমার নয়। আমি তো আপনার জীবনের কিছুদিনের নিয়তির ভেজাল মাত্র। তবে বেশি ভাববেন না অভ্র। আমি যে ভালোবাসার থেকে আঘাত পেয়েছি সেই আঘাত আপনায় পেতে দিবো না। লাবণ্য আপুও যদি আপনায় ভালোবেসে থাকেন তাহলে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আপনাদের মিল করিয়ে দিবো অভ্র। শুধু একবার লাবণ্য আপুকে ফিরতে দিন দেশে। আমি আরুর মুখে শুনেছিলাম লাবণ্য আপু নাকি তাঁর কাজিনের বিয়েতে আমেরিকা গেছেন একবার ফিরতে দিন শুধু। আপনার ভালোবাসা জড়িত কষ্ট আমি নিভিয়ে দিবো অভ্র।’

ভেবেই জোরে নিশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নিলো আদ্রিজা। সারাদিনের ধকলে বড্ড ক্লান্ত সে, তাই চোখ বুঝিয়ে নিতেই ঘুম এসে ভর করলো তাঁর চোখে।’

রাত একটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। হুট করেই চোখ খুলে আদ্রিজার দিকে তাকালো অভ্র। কেন যেন ঘুম আসছে না তাঁর। হয়তো আদ্রিজা সোফায় ঘুমিয়েছে বলে মনটা খচখচ করছে তার। অভ্র শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর এগিয়ে গেল সে আদ্রিজার দিকে।’

#চলবে….