#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
।।পার্টঃ১৭।।
মেহমাদের রাগে সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।সে পারলে এই মুহুর্তে সব ধ্বংস করে দেয়।
সম্ভৃষা ভিতু কন্ঠে বলে,
–” যুবরাজ মাথা ঠান্ডা করুন! এভাবে রেগে এরকম করলে হবে নাহ!”
মেহমাদ হাওয়ার গতিতে গিয়ে সম্ভৃষার গলা চেপে ধরলো।চিৎকার করে বললো,
–” তুমি আমাকে আটকালে কেন সম্ভৃষা?? কেন আটকালে??”
গলা চেপে ধরায় সম্ভৃষা ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারছে নাহ।তার চোখ প্রায় উল্টিয়ে আসছে।তা দেখে মেহমাদ সম্ভৃষাকে ছেড়ে দিয়ে দ্রুত শ্বাস ফেলে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করছে।
সম্ভৃষা কাশতে কাশতে হাঁপানো কন্ঠে বললো,
–” যুবরাজ আমি আপনার ভালোর জন্যেই থামিয়েছি আপনাকে।আপনি কি করতে যাচ্ছিলেন তার বিন্দু মাত্র ধারনা আছে আপনার?আপনি রাজকুমারিকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন?রাজকুমারিকে মেরে ফেললেই কি আপনি তাকে নিজের করে পেয়ে যাবেন?উহু! মনে আছে দেড়শ বছর আগের কথা যা এই বইয়ে লিখে গিয়েছেন স্বয়ং রাজতান্ত্রিক।যে আপনি রাজকুমারিকে জোড়পূর্বক নিজের করতে পারবেন নাহ।আপনার প্রতি তার ভালোবাসা জেগে উঠলেই আপনি তাকে নিজের করে পাবেন।কিন্তু জোড়পূর্বক না।সে নিজের ইচ্ছেতে আপনার কাছে আসলে তো ভালো।আর যদি সেটা নাহয় তবে আপনাকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে।”
মেহমাদ দুহাতে নিজের চুল খামছে ধরে হুংকার দিয়ে বললো,
–” এক্ষুনি তুমি এই প্রস্থান ত্যাগ করো।নাহলে আমি তোমার প্রাণ নিতে বাধ্য হবো।”
সম্ভৃষা পরিস্থিতি খারাপ দেখে দ্রুত সেখান থেকে প্রস্থান নিলো।সম্ভৃষা যেতেই মেহমাদ এতোজোড়ে চিৎকার করলো।যেন ভূমিকম্প হচ্ছে এভাবে চারপাশ কাঁপতে লাগলো।মেহমাদ দুহাতে মুখ ঢেকে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।এতোটা নড়কীয় যন্ত্রনা তো তার এই দেড়শ বছরের অপেক্ষাতেও হয়নি।তবে আজ কেন?আজ কেন মনে হচ্ছে তার সব শেষ,সে নিঃস্ব, তার আর কোন কিছুই নেই,তার এতো অপেক্ষা, এতো ভালোবাসা সব কি তবে গভীর ছিলো না।সে কি মন থেকে গভীরভাবে ভালোবাসতে পারিনি?
মেহমাদ কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,
–” হে আমার সৃষ্টিকর্তা,আমার ভালোবাসায় তবে কি জোড় ছিলো নাহ।কেন? আমিই কেন?আমার সাথেই কেন হলো এমনটা?কেন তিলে তিলে প্রতিটা মুহূর্তে আমি এই ভালোবাসা নামক মরন যন্ত্রনায় ভুগছি।আমি কি দোষ করেছি! ভালোই তো বেসেছিলাম তাই নাহ?ভালোবাসা কি অপরাধ?তবে আমি তো একা দোষ করেনি?আমাকে সে কেন ভালোবাসা শেখালো?আমি তো চাইনি ভালোবাসতে?সে কেন এলো আমার জীবনে? যদি আমি ভালোবেসে অপরাধ করে থাকি তবে পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ ও অপরাধী তারাও তো ভালোবাসে।তবে আমি একা কেন শাস্তি পাবো?কেন?কেন?কেন?”
চারদিকে নিস্তব্ধতা থেকে পেঁচার ডাক শোনা যাচ্ছে,আর শো শো বাতাসের শব্দ আর মেহমাদের কান্না ছাড়া কিছুরই আওয়াজ আসছে নাহ।ইসস! সে-কি কান্না বুক ফাটা হাহাকার তার।এতো বিষাদ,এতো যন্ত্রনা কারো পক্ষে কি সহনীয়?মানুষ হলে সে এতোক্ষনে নিশ্চিত মরে যেতো।
আসলে কি জানেন?
ভালোবাসা মনের একটি অনুভূতি। এ অনুভূতিটাও কেউ দেখতে পায় না, অনুভব করে বুঝে নিতে হয়। এ ভালোবাসা শুধু মানুষে মানুষে নয়। সব অপ্রাতাশিত কারোর প্রতিও হতে পারে। ভালোবাসা হবে নিখুঁত। যেখানে থাকবে সম্মানবোধ। কোনো প্রতারণা থাকবে না।ভালোবাসা একদিনের জন্য নয়। একদিনে দেখানোর মতো ভালোবাসা বলতে কিছু নেই। প্রতিনিয়ত ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা জয় করতে হয়।মেহমাদ ও নিজের ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে জয় করে নিবে।আচ্ছা! যদি সে হেরে যায় তবে?তবে কি হবে?নাহ! সে জোড় করে আর কিছুই করবে নাহ।আর না এতোটা নির্দয় সে নয়।সে প্রথমে তার হৃদয়াক্ষিকে নিজেদের অতীতের সেই সোনালী মুহূর্তগুলো উপলব্ধি করাবে তারপর সে জানতে চাইবে তার মনের অনুভূতি! যদি তার মনে সে তার প্রতি সেই পুরনো ভালোবাসা জাগিয়ে তুলতে তাহলে তো তার থেকে বেশি সুখী কেউ হতে পারবে নাহ।আর যদি তার শেষ সিদ্ধান্ত অমত হয় তাহলে মেহমাদ আর জোড় করবে না! সে চায়না তার একপাক্ষিক ভালোবাসার কারনে দুটো ভালোবাসার মানুষ আলাদা না হয়ে যাক।সে জানে এই যন্ত্রনা কতোটা তীব্র।
–” আমি যাবো আমার হৃদয়াক্ষিকে নিজের মনের কথা জানাবো।আমাদের ভালোবাসার মুহূর্তগুলো উপলব্ধি করাবো।আমি আমার স্বর্বষ দিয়ে চেষ্টা করবো।”
বলতে বলতে মেহমাদ হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
—————-
রাত প্রাই অনেক এখন।কিন্তু আলিশার পানির তৃষ্ণা পেয়েছে কোনমতে সে চোখ বুজেই উঠে বসলো।ঘুমে সে ঢুলে পড়ে যাচ্ছে।হালকা চোখ খুলে দেখে তার চার বান্ধবি হাঁ করে ঘুমোচ্ছে।আলিশা আবারো কতোক্ষন ঝিম ধরে বসে রইলো।সে এখন কিভাবে বের হবে ভেবে পাচ্ছে নাহ?এক একটার ঠিক-ঠিকানা নেই।আলিফা তো ডিরেক্ট ওর পায়ের তলায় গিয়ে ঘুমিয়ে আছে।আলিশা উঠে আসতে চাইলো কিন্তু এগুলোর মাজে সুয়ে এমনভাবে সে আটকে আছে যে ও বেরও হতে পারছে নাহ।আলিশা দিক দিশা না পেয়ে পায়ের কাছে আলিফাকে হালকা করে দু-একবার ডাকলো।আলিশা হালকা নড়েচড়ে আবারো আগের ন্যায় ঘুমিয়ে পড়লো।আলিশা এখন বিরক্তিতে প্রাই অতিষ্ট।তার মন চাইছে সবগুলোকে টেনে ধরে বসিয়ে ধপাধপ কয়েকটা চড় থাপ্পড় মেরে দিতে।আলিশা আবারো দু-তিনবার আলিফা,মিম আর নূরকে ডাকলো উহুঁ কারো সাড়া নেই।
–” হারামিরা মরার ঘুম ঘুমাইছে খাসি গুলান মন চাইতেছে জুতা দিয়া বাইরাইয়া ঘুম ছুটাইয়া দেই।”
রেগেমেগে আলিশা দিলো আলিফাকে একটা লাত্থি মেরে।ঘুমের মাজে আচমকা লাত্থি খাওয়ায় আলিফা হুশ করেতে না পেরে মিমের পা খামছে ধরে।যেহেতু ও পায়ের তলায় ঘুমিয়ে আছে তাই মিমের পা ধরে থেকেই ধরাম করে নিচে পড়লো।আর আলিশা পড়ে গিয়ে পালটি খেয়ে একেবারে আলমারির সাথে বাড়ি খেলো
–“ও মা গো আমার মাথা আল্লাহ্ রে।” আলিফা চিল্লিয়ে উঠে।
আর এদিকে মিমের পায়ে খামছে ধরার কারনে বেচারি ব্যাথার চোটে কুকিঁয়ে উঠে বসতে চাইলে পিছলে পড়ে যেতে নেয় কারন সে একেবারে বিছানার কিনারায় চলে গিয়েছিলো বাচাঁর জন্যে আলিশাকে ধরতেই মিম আলিশাকে নিয়েই নিচে ধপাস করে পড়লো।
–” ওমা গো আমার আমি শেষ গো কোন ভূটকি ডা আমার উপড়ে পড়লো গো।” মিম ককিয়ে উঠলো।
আর এদিকে হঠাৎ এমন আওয়াজে নূর লাফিয়ে উঠে পাশ থেকে ফ্লাওয়ার ব্যাস হাতে নিয়েই চোখ বুজে বলছে,
–” কিচ্ছে? কিচ্ছে?কে কি করলো?এই সাদ্দুনি উঠ চোর আসছে।উঠ সব চুরি করে নিয়ে গেলো।”
সাদুও ঘুম থেকে উঠে বিছানায় চোখ বুলালো দেখে আলিফা,মিম,আলিশা কেউ নেই।
সাদু চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থেকে ওদের খুজতে লাগলো।বালিশের তলায়,কাঁথার নিচে,পাশে রাখা ওর উড়নার নিচে তারপর ঠোঁট উলটে নূরকে ঝাপ্টে ধরে বলে,
–” নূর! নূর কে আর তিনিটা শাকচুন্নি গেলো কোথায়?ওদের তো খুজে পাচ্ছি নাহ।”
নূর ফ্লাওয়ার ব্যাসটা আরো একটু শক্ত করে ধরে অন্ধকার ঘরে ড্রিম লাইটের আলোতে তাকিয়ে থেকে হালকা আওয়াজে বলে,
–” আল্লাহ্ চোর কি এই তিনটা ডাইনিকে ভুল করে নিয়ে গেলো না-কি?”
–” আল্লাহ্ আমাদের কি হবে এখন নূর?যদি আমাদেরকেও নিয়ে যায়?”
–” ধুরু ছেম্রি ডর দেখাস ক্যা?যা যাইয়া লাইটটা অন কর।”
–” আমি পারতাম নাহ? তুই যা।”
–” আমিও পারবো নাহ।”
এদিকে মনির সহ বাকিরা,আলম সিকদার,ফরিদা আলম,খোকন মির্জা,আলিশা,আলিফা,মেরাজ,আরিফ, মিমের বাবা, মা সবাই হাজির সাদুদের রুমের সামনে।
আফরান বললো,
–” মনির তুই তো এক্সট্রা চাবি এনেছিস জলদি লক খুল।”
আসলে এমন চিৎকার চেচাঁমেচি শুনে মনির সাথে করে ওদের সাথে এক্সট্রা চাবি নিয়ে এসেছি।মনির দ্রুত দরজা খুলতেই।নিবিড় আগেভাগেই ডুকে গিয়ে রুমের লাইটের সুইচ অন করতেই সবাই চোখ বড়বড় করে তাকালো।
সবাই দেখে আলিফা রুমের আলমাড়ির সাথে ল্যাপ্টে নিজের কপাল চেপে ধরে কোকাচ্ছে,মিমের উপর আলিশা পড়ে আছে মিম আলিশাকে ধরে ধাকাচ্ছে, নূর আর সাদু একে-অপরের ঝাপটে ধরে কি জানি বিরবির করছে আর নূরের হাতে ফ্লাওয়ার ব্যাস।এদিকে আলিশার লজিকটাই কারো মাথায় আসছে না।এ এরকম মিমের উপর চিৎপ্টাং হয়ে শুয়ে আছে কেন?দেখছে মিম ব্যাথা পাচ্ছে তাও উঠছে নাহ।
মিম আলিশা শেষমেষ এমন ধাক্কা দিলো এক ধাক্কায় আলিশা একেবারে খাটের তলায় চলে গেলো।
–” শালি আর জায়গা পাইলি না?আমার গায়ের উপর এমন বস্তা শরীর নিয়া পইরা আবার আমার উপরেই ঘুমাইতাছোস?”
মিমের কথায় হা সবাই।মানে একটা মেয়ে এভাবে কারো গায়ের উপর পড়ে গিয়েও কিভাবে ঘুমোতে পারে এটার লজিকটাও কারো মাথায় ঢুকছে নাহ।
আলিশা হামাগুড়ি দিয়ে খাটের তলা থেকে বের হয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো সবার দিকে।
#চলবে,,,,,
#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
।।পার্টঃ১৮।।
সাদু,নূর,মাথা নিচু করে বসে আছে আর ঘুমে ঝিমুচ্ছে।মিম কোমড় ধরে বসে আছে আর ওর মা পাশ থেকে ওর কোমড়ে গরম পানির সেক দিচ্ছেন।
আলিশা এখনো বিছানায় বসে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে মনিরের দিকে।আর কেমন যেন অদ্ভূত বিহেব করছে সাদু আর মনিরের দিকে তাকিয়ে।আর কেমন লজ্জামাখা হাসি দিচ্ছে।আলিফার মাথা ফুলে আলু হয়ে গিয়েছে আর ওর মাথায় বরফ ডলে দিচ্ছে আরিফ।
এদিকে সবাই মিটিমিটি হাসছে ওদের দিক তাকিয়ে।মনির তো ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে সাদুর দিকে।ফরিদা বেগম আর না পেরে হেসে দিয়েই বললেন,
–” আমাদের এখন যাওয়া উচিত ওদের ঘুমোতে দিন।”
গুরুজনরা সবাই মাথা ঝাকালো তারপর এক এক করে চলে গেলো।তারা যেতেই মনির সাদুকে প্রশ্ন করে,
–” লাইক সিরিয়াসলি তুমি বড় হবে কবে?”
সাদু ভ্রু-কুচকে তাকায় মনিরের দিকে।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
–” আমি অনেক বড় ঠিক আছে।এখন অনার্স ফার্ট ইয়ারে পড়ি।”
আফরান বিরক্ত স্বরে বললো,
–” হ্যা তাইতো দেখতে পেলাম তোদের বড় হওয়ার নমুনা।”
সাদু চিল্লিয়ে উঠে বললো,
–” আমার কি দোষ?এই শাকচুন্নি গুলো মাঝরাতে উঠে এমন ডাকাতের মতো করলে তো আই কিত্তাম?”
মনির চোখ-মুখ কুচকে তাকালো সাদুর দিকে,
–” এইগুলো কোন ধরনের ভাষা?”
নূর বললো,
–” তোর সমস্যা কি?”
–” তো আমার বউ এইসব আজগুবি ভাষা বলবে আমার তো সবচেয়ে বেশি সমস্যা!”
–” এহহ আসছে ওর বউ।
সবার আগে আমার বেস্টি।”
আলিফা ব্যাথাতুর গলায়ই বলে উঠলো,
–” সালি আমার এইদিকে ব্যাথায় জান চলে যায় আর তোরা ঝগরা করোস?”
সাদু রাগি গলায় বললো,
–” আমাদের না বকে আগে এইসব কে করেছে তাকে বল।”
মিম,আলিফা দুইজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে আলিশার দিকে তাকালো।আলিশা এখনো ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে আছে।
মিম রাগে ফুসফুস করতে করতেই বললো,
–” আলিশার বাচ্চা তুই কিছু বলবি?”
মিমের কথায় আলিশা মুহুর্তেই মুখটাকে কাঁদো কাঁদো বানিয়ে নিয়ে বললো,
–” আমাকে বলছিস কেন?আমি কি করেছি?”
আলিফা এমনভাবে আলিশার দিকে তাকালো যেন পারলে এক্ষুনি ওকে কাঁচা খেয়ে ফেলবে।
–” তুই কিছু করিস নাই?আমাকে লাত্থি মারলো কে?তুই যদি লাত্থি না দিতি আমার কপালটা আজকে ভালো থাকতো।”
আলিশা এইবার দ্বিগুন রেগে বললো,
–” সবগুলো গন্ডারের মতো আমাকে চেপে ধরে ঘুমাস কেন?আমি যে একশবার ডাক দিলাম তখন?”
আরিফ এইবার আলিফাকে থামিয়ে দিলো কিছু বলার আগে।
–” হয়েছে আর ঝগরা করা লাগবে না।থামো! এমনিতেও কপালে অনেক ব্যাথা পেয়েছো।”
আলিফা আরিফের কথায় যেন আল্লাদে একেবারে গদগদ। সে বলে,
–” হ্যা সব ওদের দোষ।শাকচুন্নি গুলো ওলওয়েজ আমাকে বাশ দেয়।”
নূর রাগি গলায় বললো,
–” তো বাঁশ খাওয়ার মতো কাজ করিস কেন?”
আরিফ দেখলো অবস্থা বেগতিক তাই সে সবার সামনেই আলিফাকে কোলে তুলে নিলো।
আলিফা দ্রুত বললো,
–” আরে আরে কি করছেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
আরিফ হাটতে হাটতেই বললো,
–” গেলে তো দেখতেই পাবে এখন চলো আমার সাথে আর একটা কথা বললে কপালে ডানপাশটা আমি আলু বানিয়ে দিবো।”
সবাই হেঁসে দিলো আরিফের কথায়।এদিকে আলিফা কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে রইলো।
ওরা যেতেই এইবার মনির সাদুর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।সাদু আঁড়চোখে তাকায় মনিরের দিকে।কিন্তু মনিরের ভাব মুর্তির পরিবর্তন নেই।সে একইভাবে তাকিয়ে।এইবার সাদু সয্য করতে না পেরে চিল্লিয়ে উঠে,
–” সমস্যা কি আপনার? এমন করে কেন তাকাচ্ছেন?”
মনির একইভাবে তাকিয়ে থেকেই জবাব দেয়,
–” কিভাবে তাকালাম?”
সাদু এইবার নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে বললো,
–” ভাইয়া তোর বন্ধুকে বল এমনভাবে না তাকায় যেন।”
নিবিড় মাথা ঝাকিয়ে মনিরকে কিছু বলতে যাবে দেখে মনির তার দিকে সূক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে।নিবিড় মুখে আসা কথাটা গিলে নিয়ে বোনকে বললো,
–” তুই ওর বউ তো তোর দিকে তাকাবে না-তো অন্য মেয়ের দিকে তাকাবে?”
আলিশা এইবার কথার মাজে পিঞ্চ করে বললো,
–” আরে সাদু কাকে কি বলছিস?তোর ভাই হলো এক নাম্বারের ভীতুর ডিম।”
নিবিড় রাগি চোখে তাকায় আলিশার দিকে।আলিশাকে এতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
–” কিচ্ছে?এমন করে তাকান কেন?আমি কি আপনাকে ভয় পাই!”
–” তোমাকে তো আমি…”
নিবিড়কে কথা থেমে যায় কারন মনির সবার সামনে সাদুকে কোলে নিয়ে চলে যাচ্ছে আর সাদু নিবিড়ের শার্ট খামছে ধরে আছে।মনির বিরক্ত হয়ে বললো,
–” কি হচ্ছে টা কি উম্মি?নিবিড়কে ছাড়ো!”
সাদু কাঁদো কাঁদো মুখ বানিয়ে বললো,
–” ভাইয়া বাঁচা!”
নিবিড় নিজের শার্টের সাদুর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে ওকে হাত নাড়িয়ে টাটা দেখালো।আর এই সুযোগে মনির সাদুকে নিয়ে পগারপাড়।
ওরা যেতেই নূর এইবার আলিশাকে বললো,
–” এইবার বল তোর সমস্যা কি?তুই কতোক্ষন থেকে এমন অদ্ভূত বিহেব করছিস কেন?”
আলিশা মুখটা কাচুমাচু করে বললো,
–“কি করেছি আমি? ”
–“সেটা তো তুই জানিস তুই কি করেছিস?”
–” আমি আবার কি করবো কিছুই করেনি।সব ঠিক আছে!”
নূর এইবার রাগি গলায় বললো,
–” তুই বলবি না-কি তোরে থাপ্রাইয়া মুতায় দিমু।
আলিশা একবার আঁড়চোখে ঘরের মাজে উপস্থিত নিবিড়,আফরান আর মেরাজের দিকে তাকায় তারপর নূরকে কাছে আসতে বলে মিম আর নূরের গলা দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
–” আমি কাল সাদু আর মনির ভাইয়াকে ডাকতে এসেছিলাম না!”
মিম ভাবুক ভঙিতে বললো,
–” হ্যা তো?”
–” আরে বাল আগে কইতে দে।”
আলিশা আবারও সিরিয়াস মুখভঙি করে বললো,
–” আমি কাল সাদুকে আর মনির ভাইয়াকে কিস করতে দেখেছি।”
লাজুক হাসলো আলিশা।মিম আর নূর হতভম্ব দৃষ্টিতে কতোক্ষন তাকিয়ে থেকেই চিৎকার দিয়ে উঠলো,
–” কিহহহহহহ বললি?”
আলিশা আবার দুটোকে চেপে ধরে নুইয়ে বলে,
–” হারামির দল মান ইজ্জত রাখবি না।এখানে ভাইয়ারা আছে।”
নূর আর মিম একবার মাথা উঠিয়ে তাকায় আফরানদের দিকে।দেখে আফরান,নিবিড়,মেরাজ ওদের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নূর আর মিম একে অপরের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো।
তারপর আবার আলিশার সাথে ফাসুর ফুসুর শুরু করলো।কথা শেষে তিনজন এমন ভাব ধরে বসলো যেন তারা কিছুই জানে নাহ।আফরান’রা এখনো একইভাবে তাকিয়ে আছে।
নিবিড় বললো,
–” তোমরা কি ঘোল পাকালে এতোক্ষন?”
আলিশা রহস্যময়ী হাসি দিয়ে বললো,
–” আমরা আবার এতো ভীতু মানুষদের এসব রহস্যময়ী কথা বলি না।”
নিবিড় আলিশাকে বললো,
–“আমি ভীতু?”
আলিশা পিঞ্চ করে বলে,
–“হ্যা আপনি ভীতু সেটা সবাই জানে।”
নিবিড় অনেক রেগে গেলো এমন কথায়।
রাগী গলায় বলে উঠে,
–“তোমাকে আজ দেখাবো আমি ভীতু না-কি অন্য কিছু।আজকের পর থেকে আমাকে আর পিঞ্জ মারার কথা বলবে নাহ।”
আলিশা ভয়ে এক ঢোক গিললো।আসলে বুজাই যাচ্ছে নিবিড় অনেক রেগে গেছে।
আলিশা হঠাৎ বললো,
–” আরে ওটা কি ওখানে?”
আকস্মিক এমন কথায় সবাই আলিশা যেদিকে ইশারা করেছে সেদিকে তাকায় এই সুযোগে আলিশা তুফানের গতিতে দৌড়ে রুমের বাহিরে চলে গেলো।
মেরাজ বড় বড় চোখে তাকিয়ে বললো,
–” এটা কি হলো?”
নিবিড় দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–” আমাকে ধোকা দিয়ে পালিয়েছে।ওকে তো আমি ধরেই ছাড়বো।”
নিবিড় ও দৌড় লাগালো। এদিকে আলিশা দৌড়াচ্ছে আর বলছে,
–” ভাগ আলিশা ভাগ তোকে এই বজ্জাত ধরতে পারলে নিস্তার নেই।ব্যাথা বজ্জাত অনেক রেগে গেছে।”
পিছন থেকে নিবিড়ের গলা শোনা গেলো,
–” স্টোপ আলিশা তোমাকে আজ আমি ধরবোই।”
আলিশা আরো জোড়ে দৌড় লাগালো।এক দৌড়ে একেবারে দুতলার মিনি ছাদে চলে গেলো।এখন এদিক ওদিক তাকিয়ে পালানোর উপায় খুছছে।শেষে উপায় না পেয়ে পানির ট্যাংকির পিছনে গিয়ে লুকালো।চোখ খিচে বন্ধ করে আছে।
নিবিড় ছাদে এসে চারদিকে চোখ বুলালো কোথাও আলিশা নেই।
–” আশ্চর্য এখানেই তো আসলো গেলো কোথায়?”
হঠাৎ নিবিড়ের চোখ যায় ট্যাংকির একসাইড দিয়ে একটা কাপড়ের অংশ বের হয়ে আছে। নিবিড় বাঁকা হেসে সেদিকে এগিয়ে যেতে যেতে বিরবির করে বললো।
–” তো এখানে এসে লুকিয়েছে। হাহ্ আমাকে ভিতু বলে।এখন কে ভীতু তা তো প্রমান হলো।”
এদিকে আলিশা চোখ বন্ধ করে বির বির করে দোয়া দুরূদ পড়ছে।এসবের মাজে হঠাৎ কেউ একজন তাকে হেচঁকা টানে ট্যাংকির পিছন থেকে বের করে আনে।লোকটা আর আর কেউ না নিবিড়। আলিশা ‘ আম্মুউউউ’ বলে চিৎকার করে একেবারে নিবিড়ের বুকের উপর গিয়ে পড়লো।খোলা চুলগুলো এসে ছড়িয়ে পড়লো আলিশার চোখে মুখে। এলোমেলো চুল,চোখে মুখে ভয়ের ছাপ,ভ্রুজোড়া কুচকানো,অন্ধকারাচ্ছন্ন এই পরিবেশে আলিশাকে এই রূপে দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো নিবিড়ের।নিবিড় তার কাঁপাহাত জোড়া দিয়ে আলিশার মুখের উপর চুলগুলো সরিয়ে দিলো।আলিশা চট করে নিজের চোখ জোড়া খুলে তাকায় নিবিড়ের দিকে।
ইসস! নিবিড়ের হৃদয়টা বুজি ঝাঝড়া হয়ে গেলো এই চোখের চাহনীতে।মেয়েটা যেভাবে তাকায় মারাত্মকভাবে নিবিড়ের বুক কেঁপে উঠে।
নিবিড়ের কি হলো কি জানে হুট করে আলিশাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
–” তোমাকে দেখলে আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়,তোমার চোখের চাহনী আমার হৃদয়কে কাঁপিয়ে দেয় বড্ড বাজেভাবে,তোমার এলোমেলো চুলে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে মন চায়,আরো অনেক কিছু মন চায় কিন্তু কেন চায় বলতে পারবে?
কেন এই মনটা এইসব অদ্ভূত আবদার করে বলতে পারবে?”
আলিশা কি বলবে?তার কানে কোন কথাই ডুকছে না।আপাততো তার সাথে কি হচ্ছে এই মুহূর্তে সে এটা বুজার চেষ্টা করছে।
#চলবে,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।