কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-৩৯+৪০

0
2356

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৩৯

— যেমন করছিস না ,,মনে হচ্ছে বিয়েটা তুই একাই করেছিস।।। আর এখন বাচ্চার বাবা তুই একাই হচ্ছিস ।। আমাকে দেখ কিভাবে অফিস আর বউ দুই সামলিয়েছি।।(রুমে ঢুকতে ঢুকতে নিবিড়)

— কি বললে তুমি,,,সামলিয়েছো তাও আমার আমাকে ।। তুমি কাছে সময় ছিলো । সারাদিন কাজ করে এসে বলতে সরি সোনা অফিসে কাজ ছিলো।। একবার তো নিজের ছোট ভাইকে দেখেও শিখতে পারতে,,কিভাবে কেয়ারিং করতে হয় ।। (কোমরে হাত দিয়ে হিয়া)

— হয়েছে তোরা ঝগড়া থামা ।। আমি মিষ্টির প্রতি কেয়ারিং দেখাবো ,,না তো কার প্রতি দেখাবো।। ও আমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গিফট দিচ্ছে।। আচ্ছা ভাবি তুমি থাকো ,,আর মিষ্টির কি লাগে খেয়াল রেখো আর ভাই চল অফিসে লেট হয়ে যাচ্ছে।। (আবির)

কথাগুলো বলেই আবির আমার কাছে এসে আমার কপালে ঠোঁট দুটি ছুয়িয়ে দিয়ে পেটে হাত রেখে মুচকি হাসি দিয়ে টাটা বলে চলে গেল।।

সারাদিন আপি আর তার মেয়ে হীড়কে নিয়ে বীজি ছিলাম।। হীর তো সারাক্ষণই আমার পেটে হাত রেখে তার ছোট ভাই বোনদের সাথে কথা বলেছে। সত্যি মেয়েটা খুব খুশি হয়েছে।। আমিও সারাদিন হীড়ের সাথে খেলে ক্লান্ত হয়ে গেছি তাই খুব ঘুম পেয়েছিল ,, বিকেলের দিকে ঘুমিয়ে পড়লাম।

আবিরের ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার,, তাকিয়ে দেখি আবির আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।। কিন্তু সে কি করে আমার বাড়িতে এলো সেটাই বুঝতে পারছি না।।
তাও আবার এতো রাতে ।।

— কি হয়েছে মিষ্টি ,, শরীর খারাপ।। নাকি মন খারাপ ।। শুনলাম তুমি নাকি সেই বিকাল থেকে ঘুমাচ্ছো ।। কিছু খাই নি ।। তোমার জন্য খাবার এনেছি খেয়ে নাও ।।তারপর আবার ঘুমিও কেমন ।। এইবার ওঠো।। (আমাকে টেনে তুলে আবির)

— আপনার সাহস কি করে হলো ।।আমাকে ছোঁয়ার ।। আর আমার বাড়িতে কি করছেন।। আবার অনুমতি না নিয়ে আমার বেডরুমে চলে এলেন।।(রাগি দৃষ্টি দিয়ে আমি)

— কি বলছো মিষ্টি।। রুমে আসতে হলে তোমার পারমিশন কেন নিবো।। আর তোমাকে ছোঁয়ার জন্য আমার আবার কিসের সাহসের দরকার হবে।। (আবির)

— ওয়াট ননসেন্স।। অপরিচিত মানুষকে ছুঁতে ,,তার রুমে ঢুকতে পারমিশন তো লাগবেই।।(আমি)

আর কিছু বলার আগেই আবির আমাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিলো। আমাকে দেয়ালে লাগানো দুজনের ছবিটার দিকে তাকাতে বললো ।।আমিও তাকালাম । হঠাৎ মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলাম।। তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে তাকে জরিয়ে ধরলাম।।

— সরি আবির ,, আমার যে মাঝে মাঝে কি হয় আমি নিজেই জানিনা।। সবকিছুই ভুলে যাই ।।আজকে আবার তোমাকে ভুলে গেলাম।। (কাঁদতে কাঁদতে বললাম আমি)

— সেই কথাটা তো আগে বলো নি ।। কবে থেকে এমন হচ্ছে।।(কৌতূহল নিয়ে আবির)

— ঐ যে অরিনেশন এর দিনে যে ,, তোমার সাথে রাগ করে চলে এলাম না ।। সেদিন থেকে ব্যাথা করতো ।। তখন প্রপার চিকিৎসা নেওয়াতে বুঝতে পারিনি।। তারপর তোমার সাথে বিয়ে হওয়ার আগে যে কোইনসিডেন্ট টা হলো ,,তখন থেকেই ব্যাথা করে কিন্তু কিছুদিন ধরে সবকিছু ভুলে ভুলে যাচ্ছি।। ( আমি)

— সেটা তো আমাকে জানানো দরকার ছিলো ।। জানাও নি কেন।।( আবির)

— আসলে আমি ভেবেছিলাম,,এটা এই সময়ে হয়ে থাকে।। (মাথা নিচু করে আমি)

— বুঝেছি,,,কালকে তোমাকে নিয়ে একবার হসপিটালে গিয়ে দেখতে হবে ।। আজকের মতো খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।। কালকের পর তো আর আমি অফিসে যাবো না।। বাড়িতেই থাকবো ।। দেখো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।। (আবির)

তারপর আবির আমাকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।।আজকে আর আবির রাত জেগে অফিসের কাজ করেনি ।। আমার হাত বুলিয়ে দিয়ে আমাকে তার বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ।। আবিরের বুকে এই ঘুমটাই যে শেষ ঘুম হবে ,,, জানতাম না।। হয়তো বা আমাও ঘুমাতে পারবো।।

🍁 🍁 🍁

গাড়ি চলেছে নিজের আপন গতিতে।। আবির আজকে আর অফিসে যায়নি।। আমাকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে।। রুম থেকে আমাকে কোলে করে নিয়ে বেরিয়েছে।। একদম হাঁটতে দেওনি ।। একাই হয়তো ওর কেয়ারিং।। সিট বেল্টটাও বাঁধতে পারিনি।। আমার মা পেট ,,সিট বেল্টটা ছোট,,তার উপর বাঁধলে পেটে ব্যাথা পাই ।। তাই খোলাই রেখেছি।। আবিরের ফোনের আওয়াজে আর ধ্যান ভাঙল।।তিনি ফোনটা রিসিভ করে কথা বলছে আর ড্রাইভ করছে ।। যেটা আমার একদম অপছন্দের তালিকায় আছে।।

— আবির গাড়িটা সাইড করে কথা বলো ।। কথা বলতে বলতে ড্রাইভ করা একদম ঠিক নয় ।। (আমি)

— মিষ্টি প্লিজ কথা বলো না জাস্ট ফাইভ মিনিট।। আজকে অফিসের একটা ইনপ্রটেন্ট মিটিং আছে ,,সেটা এটেন্ট করতে হবে ।।(আবির)

— আমার তাতে কোনো সমস্যা ছিলো না ,,আপনি নাহয় কালকে আমাকে চেকআপ করতে নিয়ে যেতেন।। আর তখন যাননি,,তাহলে একটা কাজ করুন ,,গাড়িটা সাইড করে ফোনে কথা বলে নিন ।। আমাদের তো এপয়েন্ট করাই আছে ,,দেরিতে গেলেও সমস্যা হবে না ।। (আমি)

— মিষ্টি প্লিজ ।। চুপ করো তো ,,দেখছো তো ইমপ্রটেন্ট কাজ করছি ।। আমি ঠিক দুটোই সামলে নিবো ,,তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।। ( ড্রাইভ করতে করতে আবির)

— হে…!! আমি তো দেখতেই পারছি আবির ।। আপনি আমাকে সারাজীবন মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করে ফেলছেন।। কাজ,,কাজ,,কাজ ,,আর কাজ ।। আপনার কাজে আমার চেয়ে কাজের ইনপ্রটেন্ট এতো বেশি থাকতে ,,আগে আপনি কাজটা করে নিতেন।। আমার প্রতি কেয়ারিং না দেখালেও চলতো।। এমন যেন কোনো দিন নাহয় ,,, আপনার এই কাজের জন্যই কখনো আমাকে আর আমার বেবীদের হারাতে হয় ।। (আমি)

— জাস্ট শাট আপ মিষ্টি।। চুপ করো।।(চেঁচিয়ে বললো আবির)

আমিও আর কোনো কথা বললাম না।। আবিরের মা ইচ্ছে তাই করুক।। ভালো লাগে না ,,,ওর থেকে এমন বিহেব পেতে কিন্তু কিছুই করা নেই।।

— আহহ!! ( চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে আমি)

আমার চিৎকার শুনে আবির সামনের দিকে তাকালো ।। আবির ব্রেক করার আগেই আমাদের গাড়িটা অন্য একটা গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করলো ।। আমার সিট বেল্ট না বাঁধার কারনে ছিটকে নিচে পড়ে যাই ,,,মাথায় আঘাত পাই ।। রক্ত বের হচ্ছে।। কিন্তু এখনো জ্ঞান আগে সবটা দেখতে পারছি ।। অজান্তেই মনে হচ্ছে ,,যদি আমার কিছু হয়ে যায় ।।তাহলে ,,, ।। আমার বেবীরা যেন আমার জীবন দিয়ে বেঁচে যায়।। পেটে হাত রেখে বলে উঠলাম….

— আমি নিরুপায় সোনারা।। আজ হয়তো তোর মা তোদের বাঁচাতে পারবেনা।। ক্ষমা করে দিস তাকে ।।

এরমধ্যেই আবির গাড়ি খুলে বেরিয়ে রাস্তা থেকে আমাকে কোলে তুলে নিলো।। আবিরের মাথা কেটে রক্ত ঝরছে ।। সিট বেল্ট বাঁধার কারনে তার কিছুই হয়নি।। আমরা প্রায় হসপিটালের কাছাকাছি ছিলাম ।। তাই সেখানে পৌছাতেও বেশি সময় লাগলো না।। কিন্তু হসপিটালে পৌঁছানোর আগেই আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।। তখন একটাই কথা বলছিলাম…

— আজ যদি আমার কিংবা আমার বাচ্চাদের কিছু হয়ে যায় আবির ।। তাহলে কোনো দিন শান্তি পাবে না।। আমি কিছুতেই তোমাকে শান্তিতে থাকতে দেবো না।।।

অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে আমি ।।আর করিডোরে আমার প্রিয় জনেদের ভীর।। আজ সবাই আমাকে এক নজর দেখতে এসেছে কিন্তু আমি দেখতে পারছি না
।। প্রায় ৪ ঘন্টা পর আমার দুটো সন্তানের জন্ম দিয়েছি ।। হ্যা আমাদের টুইন বেবী হয়েছে।। একটা ছেলে আরেকটা মেয়ে কিন্তু সেটা দেখা তার কান্না আমি শুনতে পাইনি।। যখন ডাক্তাররা আমার বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছে তখন আমার বাচ্চাদের বাচানো চেষ্টা করেছে।।
অনেকক্ষন পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হতে দেখে আবির দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গেল…

— ডাক্তার আমার ওয়াইফ ,,আর বেবীরা ।। কেমন আছে তাঁরা।।

— আপনার টুইন বেবী হয়েছে ।। ছেলে মেয়ে।।

— আররর আআমমার ওওয়াইফ!!( কাঁপা কাঁপা গলায় আবির)

— আই এম সরি আবির।। আমাদের কিছু করার নেই ।।আমরা যথা সম্ভব চেষ্টা করেছি ,, কিন্তু পারি নি।। চাইলে আপনারা ওনাকে একবার দেখতে পারেন।।

ডাক্তারের কথা শুনে সবাই প্রায় থমকে গেছে।। আর হানির বাবা মা তার ছোট প্রিন্সেস কে হারালো ।। আবির তা রাজ্যের রানিকে হারালো ।।

— কি জানো বলছিলে তুমি হিয়া…,,আমাকে আবিরের মতো হতে ,,আমি পারবো না আবিরের মতো নিজের প্যাগনেন্ট বউকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সময় ড্রাইভ করে খুন করতে ।। হে….!! আমার কাছে আমার কাজ আর ওয়াইফ দুটোই ইনপ্রটেন্ট।। হবে সিচুয়েশন অনুযাযী।। আবির আজ তুই শুধু হানিকেই খুন করিস নি করেছিস।। অবুঝ দুটো বাচ্চার মাকে ।। সারা এই পৃথিবীতে আসতেই পারলো ,,, তাদের কেন শাস্তি দিলি বলতে পারবি ।।। খুনি তুতুইইইইই।। (চেঁচিয়ে বললো নিবিড়)

কোনো কথাই আজ আবিরের কান অবধি পৌঁছাচ্ছে না ।। শুধু কানে ভাজছে ,,হানির বলা সেই কথাগুলো সেই কথা সে এক্সিডেন্টের আগে বলেছিলো.!!!!!

চলবে….💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৪০

“” হে..!! আমি তো দেখতেই পারছি আবির।। আপনি আমাকে সারাজীবন মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করে ফেলছেন।।কাজ কাজ কাজ আর কাজ।। আপনার কাছে আমার চেয়ে কাজের ইনপ্রটেন্ট এতো বেশি থাকতে,,,আগে আপনি কাজটা ই করে নিতেন।। আমার প্রতি কেয়ারিং না দেখালেও চলতো।।এমন যেন কোনো দিন নাহয়,,, আপনার এই কাজের জন্য আমাকে আর আমার বেবীদের হারাতে হয়।।””

কথাগুলো আবিরের মনে হচ্ছে কেউ বাজাচ্ছে।। আবির আর থাকতে না পেরে দৌড়ে তার মিষ্টির কাছে গেল ।। তার মিষ্টির মুখে এখনো একটা তৃপ্তিময় হাসি ফুটে আছে ।। চোখ দুটো বন্ধ ঠিকই কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে,, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাসছে।। একটু এগিয়ে গিয়ে আবির হানির হাতটা ধরলো।। শরীরটা এখনো গরম ,,মনে হচ্ছে রক্ত চলাচল করছে ।। অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিল মিষ্টিকে।।

— মিষ্টি আমার একটা ভুলের জন্য আজ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো না।। আমি কথা দিচ্ছি ,, সারাজীবন তোমার কথা মেনে চলবো।। তোমাকে একটুকুও কষ্ট পেতে দিবো না।। প্লিজ ফিরে এসো ,,, খুব ভালোবাসি তোকে।। যে ভালোবাসা হাজারবার বোঝালেও শেষ হবে ।।আজ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি এই পৃথিবীতে থেকে কি করবো ,,আমিও তোমার কাছে চলে আসছি ।। ( কাঁদতে কাঁদতে আবির)

একটা সিজার নিয়ে নিজের হাতে আঘাত করতে লাগলো আবির ।। রক্তে ভেসে যাচ্ছে আবিরের হাত ।। তার কিছু রক্ত ছিটকে পড়ছে হানির মুখে।। আজ আবিরকে থামানোর মতো কেউ নেই।।

🍁 🍁 🍁

৫ বছর পর—–

🎶🎶 যদি থাকতে তুমি
, বাঁচতে আমার লাগতো না কঠিন
যদি থাকতে তুমি….!!

🎶যদি থাকতে তুমি
কাটতো আমার দিনগুলো রঙিন
যদি থাকতে তুমি।।।।

🎶যদি থাকতে তুমি
সামনে তোমার এনে দিতাম সব
যা যা চাইতে তুমি ।।

🎶তুমি বলার আগে বুঝতাম আমার ,,
যখন মন খারাপ করে থাকতে তুমি।।

🎶এমন হবে কোন দিন আমি আগে ভাবিনি,,
এমন হবে কোন দিন আমি আগে ভাবিনি।।
যে আমায় ছাড়া বাচতো না আজ
সে কেন বিলিন….।।

যদি থাকতে তুমি……!!!🎶

এতো টুকু গেয়ে আবির থামতেই ,, চোখ পড়লো তার আদ্র,, আদ্রিতার দিকে ।। তারা তার বাবার বুকে ঘুমিয়ে আছে।। তাদের ঘুম না আসাতেই আবির গান গাইছিলো।। আবির একাই তার ছেলে মেয়ে দের মানুষ করেছে।। সবার থেকে দূরে রেখেছে।।। আবিরও ঘুমিয়ে পড়লো।।।

আবির চাইনি তার এই অভিশপ্ত জীবনের সাথে অন্য কারো জীবন জরাতে ।। তাই আবির সারাক্ষন তার সন্তানদের পাশে থেকে বাবাসহ মায়ের চাহিদাও পূরণ করার চেষ্টা করেছে।। এখন নিবিড় আর হিয়া আবিরদের সাথেই থাকে ।। হিয়া আর নিবিড়ের ২ বছরের একটা ছেলে আছে ।। তার নাম নীড়।। আর হিয়ান আর ঋতুর ও একটা ৩ বছরের ছেলে আছে ।। তার নাম তুয়ান।। আবিরের চাইনি ,, হানির জন্য কারো জীবনে কোনো প্রকার প্রভাব ফেলুক ,, তাই সে জোর করে বিয়েটা সাড়ে৪ বছর আগেই দিয়েছিলো।
এখন সবাই নিজেদের মতো আছে।।

— আজ আপনাকে একটু ছুলে আপনার আমাকে অসহ্য লাগে।। একটু সময় চাইলে বিরক্ত লাগে।। কথা বলতে চাইলে জ্বালানো হয়ে যায়।। সত্যিটা কি জানেন আবির,, ভালোবাসা মানুষটি কাছে থাকলে তার কদর থাকে না।আজ আমি আপনার কাছে একটু সময় চেয়ে পাইনা।।হয়তো আমি আপনাকে ছেড়ে এই পৃথিবী ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো।। সেদিন আপনি নিজ থেকে আমাকে সময় দিতে চাইবেন,, কিন্তু সেই সময়ের আমার কোনো প্রয়োজন হবে না।।(কাঁদতে কাঁদতে হানি)

— না মিষ্টি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেও না।। ( বলেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো আবির)

সেদিনের স্বপ্নটা আজ ৫ বছর ধরে সে দেখে।। হানির বলা কথাগুলো তার ঘুম কেড়ে নেই।আজও তার বেতিক্রম হয়নি।। আবির উঠে ব্লাকেটটা টেনে আদ্র আদ্রিতার শরীর ঢেকে দিয়ে বেলকেনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিজের কষ্টগুলোকে বিসর্জন দিতে লাগলো।।

— মিষ্টি অনেক শাস্তি তো দিলে আমাকে প্লিজ আর দিও না ।। এবার ফিরে আসো ।। তোমাকে ছাড়া আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।। পৃথিবীতে এতো অক্সিজেন ,, কিন্তু তবুও যে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।। আমার জন্য না হোক ।। তোমার অবুঝ বাচ্চাদের কথা ভেবে একবার ফিরে এসো।। হে….!! আমি ওদের বাবা মা দুজনের ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছি ।। কিন্তু তোমার অভাব আজও পূরন করতে পারি নি।। আজও আমি অপেক্ষার দিন গুনি ,,তুমি আসতে এই আশায় ।। প্লিজ ফিরে এসো মিষ্টি।।প্লিজ……!!!! ( হানি আর আবিরের ছবিটা হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আবির)

একা একা অনেকক্ষন হানির ছবিটার সাথে কথা বলে আবির তার ছেলে মেয়েদের কাছে গিয়ে,, তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।।

🍂 🍂 🍂

বাচ্চাদের চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায় আবিরের ।। উঠে চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে ,,তার ছোট সোনারা নেই ।। ওয়াশরুম থেকে ওদের গলা পাওয়া যাচ্ছে।। আবির আস্তে আস্তে হেটে সেদিকে গিয়ে দেখে আসতে আদ্র আদ্রিতাকে গোসল করিয়ে দিচ্ছি।। আবিরের চোখ দুটো জুরিয়ে যায় এমন দৃশ্য দেখে।।

— সোনামনিরা তোমরা আমাকে ডাক দিতে আমি তোমাদের গোসল করিয়ে দিতাম।।(আবির)

— পাপা ,, তুমি তো সবসময় আমাদের তৈরি করে দাও ।। আজ তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই আমরা নিজেরাই তৈরি হতে চেয়েছিলাম।(আদ্র)

— হ্যা পাপা।।। তুমি গিয়ে ঘুমাও আমরা ঠিক রেডি হয়ে স্কুলে পৌঁছে যাবো।।(আদ্রিতা)

— না সোনারা তোমাদের ঠান্ডা লেগে যাবে।। এসে আমি তোমাদের গোসল করিয়ে রেডি করিয়ে দেই ।। আজকে তো আবার তোমাদের মাম্মার সাথে দেখা করতে যাবো।। (বলেই আবির আদ্র আদ্রিতাকে গোসল করিয়ে বেডে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে লাগলো। তারপর একে একে তাদের স্কুলে ড্রেস পরিয়ে দিয়ে ,,দুই হাতে দুটো হেয়ার ব্রাশ নিয়ে একসাথে দুজনের চুল বেঁধে দিতে লাগলো ।। একসাথে চুল না বেঁধে দিলে,,একে অপরের চুল এলোমেলো করে দেয়।।
আমি ওদের রেডি করিয়ে কাঁধে ব্যাগ তুলে দিয়ে নিচে যেতে বললো।। কিন্তু ওরা দুই ভাই বোন বিরবির করে কথা বলতে লাগলো।।

— কি হয়েছে।। তোমরা দুজন কি কথা বলছো সোনারা ,, আমাকেও বলো আমিও শুনি।।।(কৌতূহল নিয়ে আবির)

— আর মাএ দুদিন পর তো আমাদের জন্মদিন ।। এই জন্মদিনে আমাদের কোনো দামী গিফট চাইনা ।। আমাদের অন্যএকটা গিফট চাই।।দেবে পাপা ।।(আদ্র)

— তোমরা নিজেরা আমার কাছে কিছু চাইছো,,আর আমি দিবো না।। বলো কি চাই !!!(আবির)

— মাম্মা……!!! ও পাপা দাও না আমার মাম্মাকে এনে।। আমার খুব ইচ্ছে করে আমার মাম্মাকে জরিয়ে ধরে ঘুমাতে।। কিন্তু পারিনা তো ।।(আদ্রিতা)

— যানো পাপা ।। স্কুলে সবার মা আছে আমাদের নেই।। সবাই অতো মজা করে তার মায়ের সাথে শুধু আমরাই পারি না।। প্লিজ পাপা এই গিফটটা এনে দাও জীবনে আর কিছুই চাইবো না।।প্রমিজ( আদ্র)

— আদ্র আদ্রিতা তোমরা নিচে যাও ।। তোমাদের স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।। (আবির)

— কিন্তু পাপা….!!

— কোনো কিন্তু না ।। বললাম না যেতে।।(চেঁচিয়ে বললো আবির)

তারপর আদ্র আদ্রিতা নিচে চলে গেল ।। আবির নিজে তৈরি হয়ে দেয়াল থেকে হানির ছবিটা নামিয়ে ,, ছবিতে একটা চুমু দিয়ে ।। নিজের গালের সাথে নিজের কপালটা লাগিয়ে বললো…

— সরি হানি ।। আজ প্রথম বার তোমার সোনাদের সাথে গলা তুলে কথা বললাম।। কি করবো বলো আমি যে নিরুপায়।।

বলেই ছবিটা আবার দেয়ালে লাগিয়ে নিচে চলে গেল।। আদ্র আদ্রিতাকে খাইতে দিয়ে ,,, বেরুতে নিলেই পেছন থেকে হিয়া বলে উঠলো….

— আবির নিজের জীবনটাকে আবার নতুন করে সাজাও।। আদ্র আদ্রিতার জন্য ।। ওদের মা প্রয়োজন,,সেটা কেন তুমি বুঝতে পারছো না।।

— ও আচ্ছা,, এবার বুঝতে পারলাম ।। ওদের মাথায় মায়ের কথাটা কে ঢুকালো।। তোমরা ভালোভাবে কান খুলে শুনে রাখো ।। আমি বিয়ে করছি না।। আর তোমাদের না আমি আমার বেবীদের সাথে মিশতে বারন করেছি ,,তার পরও কেন মিশছো।। কথা বলছো।। এরপর এমন দেখলে আমি ওদের নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবো মাইন্ড ইট।।।(চেঁচিয়ে বললো আবির)

বলেই আবির আদ্র আদ্রিতার হাত ধরে স্কুলের উদ্দেশ্য এ বেরিয়ে গেল।।
স্কুলে দিয়ে সে চলে এলে কবরস্থানে।। আবির মাঝে মাঝে সময় পেলেই এখানে আসে ।। কারন তার প্রিয় একজন মানুষ যে এখানে থাকে ।।।

— সরি আসতে একটু লেট হয়ে গেল। কি করবো বলো ,, সবাই বলছিলো ,,জীবনটাকে আবার নতুন করে সাজাতে ,,, কিন্তু আমি যে আমার মিষ্টিকে খুব ভালোবাসি ।। তাকে ছাড়া নতুন জীবনের কোনো মানে যে আমার কাছে নেই।। মিষ্টি আবির কখনো তার মিষ্টিকে ছাড়া থাকতে পারে না।।
আর কিছু বলার আগেই আবিরের ফোনে একটা ফোন আসে।। ফোনটা রিসিভ করে সে দৌড়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।।।।।

চলবে ……💞💞