#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ৩
Faria Siddique
৫.
সকালে
আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার দুইপাশে আমার দুইভাই আর আমার পায়ের কাছে আমার বাবা বসে আছে।আমি ওদের দেখে ধরফরিয়ে উঠে বসলাম।তারাতারি উঠার কারনে আমি হাতে ব্যাথা পেলাম।
আমি উহু করে শব্দ করে উঠলাম।সাথে সাথে আমার বাবা এসে আমার হাতটা ধরে বাবার হাত বুলিয়ে দিল।দাভাই আর ভাইয়া আমার দিকে রাগিভাবে তাকিয়ে আছে।
আমি অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছি বাবা আর ভাইয়াদের দিকে।কারন তারা কেউ আমার সাথে কথা বলছে না।আমার এবার রাগ উঠে গেল।
আমিঃতোমরা কি আমার সাথে কথা বলবা নাকি আমি এক্ষুনি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে চলে যাব।
দাভাইঃসাহস থাকলে বাইরে পা দিয়ে দেখা।
ভাইয়াঃতোকে কিছু বলি না বলে এই না যে তুই যা ইচ্ছা তাই করবি।
বাবাঃতুমি এক্সিডেন্ট করেছ সেটা আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না।
আমি কিছু না বলে মন খারাপ করে বসে আছি।
আমিঃকালকে আপুর জন্য খুব মন খারাপ করছিল তাই একটু বাইরে গিয়েছিলাম কিন্তু আমি কি জানতাম যে এসব কিছু হয়ে যাবে।(মন খারাপ করে)
আমার কথা শুনে আমার ভাইয়ারা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল।আমি তাদেরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।
বাবাঃহয়েছে হয়েছে আর কান্না করতে হবে না।
তারপর আমরা সবাই খেয়ে সোফায় গিয়ে বসলাম।
দাভাইঃআমাদের একটা ডিল আছে খান গ্রুপের সাথে।
ভাইয়াঃ হুম তোমার আর আমার যাওয়ার কথা।
দাভাইঃনা আমি যাব না আমার আরেকটা মিটিং আছে।তুই আর টুকু যাবি।
আমিঃআমি!!!!!!(অবাক হয়ে)
দাভাইঃহুম তুই।
ভাইয়াঃএমন ভাবে বলছিস যেন তুই এর আগে কোন ডিল ফাইনাল করিস নাই।
আমিঃসেটা না।আমি যে ডিলটা করবো সেটার জন্য আমার কোন প্রিপারেশন নাই।
দাভাইঃসময় তো আছেই।কালকে সকালে তোদের ওখানে যেতে হবে।
আমিঃ কিন্তু……
বাবাঃপ্রিন্সেস আর কোন কথা না দাভাই যা বলছে তাই হবে।যাও গিয়ে প্রিপারেশন নাও।
আমি আর কোন কথা বা বলে রুমে গিয়ে আমার ল্যাপটপ নিয়ে ভাইয়ার রুমে চলে গেলাম।ভাইয়ার সাথে ডিল নিয়ে কিছু কথা বলে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।
প্রেজেন্টেশন রেডি করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেল তাই খান গ্রুপের সম্পর্কে কোন খবর না নিয়েই ঘুমিয়ে পরি।
আমি ঘুমাই আর আপনারা আমার ভাইয়াদের সম্পর্কে কিছু জেনে নিন।
দাভাইঃ
(ফারদিন সিদ্দিকী শুদ্ধ।লন্ডনের টপ বিজনেসম্যানদের মধ্যে একজন।দেখতে খুবই সুন্দর।উচ্চতা ৬” ২।আমার দাভাই শান্ত স্বভাবের হলেও খুবই জেদি।আর যদি একবার রেগে যায় তাহলে তো হয়েছে।)
ভাইয়াঃ
(ফারহান সিদ্দিকী স্রোত। ভাইয়াও লন্ডনের বিখ্যাত বিজনেসম্যান।উচ্চতা ৬” ১।দেখতে সুন্দর হলেও খুবই রাগি,বদমেজাজী আর জেদি।রাগ সব সময় নাকের ডগায় থাকে।ঠিক আমার মত😜।)
আমার দুইভাই আর বাবা এখন থেকে এখানেই থাকবে।কারন আমি নাকি তাদের দেয়া কোন শর্তই মানছি না।তাই তারা এখানে থাকবে আর মাঝেমাঝে লন্ডন যাবে।
আর বাবা এখানে এসেছে শুনে এখানকার সবচেয়ে বড় হসপিটালের মালিক বাবাকে রিকুয়েস্ট করেছে যাতে তার হসপিটালে বাবা চিফ ডাক্তার হিসেবে জয়েন করে।বাবা বলল যতদিন না আমাদের হসপিটালের কাজ শেষ হচ্ছে বাবা ওইখানেই জয়েন করবে।
আমারও খুব খুশি লাগছে কারন আমরা সবাই একসাথে থাকব।
৬.
সকালে রুদ্র খুব তারাতারি উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে গেল।কারন আজকে তার একটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট ডিল আছে।তাই সে না খেয়েই বেরিয়ে গেল।
রুদ্র আজকে কালো শার্ট আর সাদা কালারের জিন্স পরেছে।শার্টের ওপর সাদা আর কালো কালারের ব্লেজার,হাতে ঘড়ি,চুলগুলা একসাইডে স্পাইক করা।দেখতে একদম হিরোর মত লাগছে।
আর অন্যদিকে
আমিও রেডি হয়ে নিলাম।আজ আমি সাদা কালারের শার্ট আর কালো কালারের জিন্স পরলাম।শার্ট ইন করে চুলগুলা একসাইডে নিয়ে এসে বেনি করলাম।চোখে কাজল,হালকা লিপস্টিক, হাতে ঘড়ি।ব্যস আমি রেডি
নিচে গিয়ে দেখি ভাইয়া বসে আছে।আমি আর ভাইয়া সেইম কালারের শার্ট আর জিন্স পরেছি।আমি নিচে আসতেই বাবা আমাদের দুইজনকে আদর করে বিদায় দিলেন।
রুদ্র আর আমি একসাথেই অফিসে ডুকলাম।কিন্তু কেউ কাউকে খেয়াল করলাম না।
ভাইয়া গাড়ি পার্ক করে আমার সাথে আসলো। আমাদের দেখে রাজ আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো।
রাজ কোন কথা না বলে আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।কারন রাজ আমাকে চিনে ফেলেছে।কারন রুদ্র আমার ছবি দেখিয়ে রাজকে আমার সম্পর্কে সব খবর নিতে বলে।
রাজ আর কিছু না বলে আমাদের মিটিং রুমে নিয়ে গেল আর মনে মনে বলতে লাগলো
রাজঃবাহ রুদ্র স্যারের তো পছন্দ আছে।
আমাদের সাথে আরও অনেক কোম্পানির ওনার এখানে আছে।আমার আর ভাইয়ার জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আমি আর ভাইয়া ডুকতেই সবাই আমাদের দাঁড়িয়ে সালাম দিল।আমরাও সালাম দিয়ে বসে পরলাম।
রাজ রুদ্রকে ডাকতে চলে গেল।আর আমি বসে বসে প্রেজেন্টেশন দেখতে লাগলাম।ভাইয়ার তো কোন চিন্তাই নেই কারন সব দায়িত্ব আমার উপর।
আমি জানি আমার দুইভাই আমাকে শাস্তি হিসেবে আমাকে দিয়ে এই কাজটা করাচ্ছে।আমি রাগি লুক নিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম আর ভাইয়া আমাকে পাত্তা না দিয়ে বসে বসে মোবাইল দেখতে লাগলো।
রুদ্র রুমে প্রবেশ করতেই সবাই দাঁড়িয়ে গেল।আমি আর ভাইয়া দাড়াই নি।রুদ্র এসে আমার ভাইয়ার সাথে হাত মিলিয়ে বসে পরল।আমার মুখের সামনে ল্যাপটপ থাকায় রুদ্র আমার চেহারা দেখে নাই।
মিটিং শুরু হয়ে গেল।আমি প্রেজেন্টেশন দেওয়ার জন্য উঠে দাড়ালাম।আমি দাঁড়িয়ে রুদ্রের দিকে তাকাতেই দেখি রুদ্র আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমিও অবাক হলাম কিন্তু তা মুখে প্রকাশ না করে আমি প্রেজেন্টেশন দেয়ার জন্য এগিয়ে গেলাম।আমি খুব সুন্দর করে সব কিছু বুঝিয়ে দিলাম।সবাই হাততালি দিল।
আমি মুচকি হেসে রুদ্রের দিকে তাকাতেই দেখলাম রুদ্র এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আমি পাত্তা না দিয়ে ভাইয়ার পাশে বসে পরলাম।আর ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরল।
চলবে………….