#তোকে_ছাড়া_আমি_শূন্য
পর্বঃ১৩
#Faria_Siddique
২৩.
।
।
।
।
বসন্তের এই ভাপসা গরমে চারদিক অস্থির হয়ে পরেছে।রোদের প্রখরতায় চারদিক জ্বালিয়ে দিচ্ছে।প্রকৃতির এই রুপ আমাদের কাছে চিনাপরিচিত হলেও সহ্যকর নয়।চারপাশের সবাই বিরক্তিকর মুখ নিয়ে চলাচল করছে।ভার্সিটির গাছ গুলাতে ও নতুন নতুন পাতা এসেছে।যার কারনে গাছের নিচে ছায়াও কম পরছে।আর সবাই গরমে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গেছে।কারোর কারোর মুখ লাল হয়ে আছে।আবার কারোর মুখ ঘেমে একাকাত হয়ে গিয়েছে।সবাই সবার হাতে থাকা কিছু না কিছু দিয়ে বাতাস করছে।তাতে যদি গরম কিছুটা কম লাগে।রিকশাওলাদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।তাদের ক্লান্তিভরা মুখটা খুবই অসহায় লাগছে।পথের আশেপাশে ছোট ছোট পথশিশু গুলাও নিজেদের কাজ নিজেদের মত করে করে যাচ্ছে।তাদের দেখে মনে হচ্ছে এই গরম তাদের জন্য কিছুই না।
।
।
।
।
।
।
।
আমাদের ক্লাস অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।আমি আর বিশাল এখন ক্যান্টিনে বসে আছি।বসে আছি বললে ভুল হবে। আমরা বসে বসে ঠান্ডা খাচ্ছিলাম।তখনি রুশা আসল।
আমাদের পাশে বসলো আর ইশারায় একটা ঠান্ডা দিতে বলল।আমাদের তিনজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজ করছে।
চারদিকের কোলাহল আমাদের কানে এসে বারি খাচ্ছে।এতকিছুর মাঝেও বিশালের রাগে লাল হওয়া মুখটা স্বভাবিক হচ্ছে না।
কারন একটু আগে যা ঘটে গেল তা মনে করে আমার হাসি পেলেও বিশালের মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও খুব রেগে আছে।
।
।
।
।
ফ্ল্যাশব্যাক
।
।
।
।
আমি,বিশাল আর রুশা ক্লাস শেষ করে
ক্যান্টিনে এসে বসলাম।এই গরমে চা বা কফি আনতে না বলে লাচ্ছি আনতে বলে আমরা টেবিলে রাখা পানি খেয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগলাম।বিশাল আর আমি রুশাকে নিয়ে হাসতে লাগলাম।তারপর তিনজনে একটা সেলফি নিলাম।তারপর আবার কথা বলে হাসাহাসি করতে লাগলাম।হঠাৎ করেই ভাবনা এসে আমাদের টেবিলের কাছে দাড়ালো।আমরা কথা বলায় বিজি থাকায় ওর দিকে খেয়াল করি নাই।আমরা আমাদের মত কথা বলে যাচ্ছি।হঠাৎ ভাবনা আমাদের টেবিলের ওপর থাকা পানিটা বিশালের মাথায় ঢেলে দিল। আমরা তিনজন হা হয়ে আছি।আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না যে কি হল এটা। আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই ভাবনা তারাতারি চলে গেল।আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ভাবনা যেতেই বিশালও ওর পিছন পিছন যেতে চাইলে আমি হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেই।কারন এখন বিশাল যদি ভাবনাকে পায় তাহলে ওর কি যে হাল করবে আল্লাহই জানে।আমি বিশালকে বসিয়ে শান্ত করতে লাগলাম।এর মাঝেই রুশার কল এলে সে বাহিরে চলে যায়।
।
।
।
।
ফ্ল্যাশব্যাক শেষ
।
।
।
।
বিশাল চুপচাপ বসে আছে।মুখের লাল আভাটাও কমে আসছে।তার মানে রাগ কমছে আস্তে আস্তে।কিন্তু আমি জানি বিশাল কখনো ভাবনাকে ছেড়ে দিবে না।আজ না হোক কাল এর প্রতিশোধ নিবেই।বিশালের এই শান্ত অবস্থা যেন আমাকে আরও ভাবিয়ে তুলছে।কারন বড় কিছু ঘটার আগে পরিবেশ শান্তই থাকে।
।
।
।
।
এতকিছুর মাঝে আমার মাথা থেকে রুদ্রের কথা বের হয়ে গিয়েছে।আমি আর বিশাল গেইট দিয়ে বের হতেই দেখি রুদ্র গাড়ি সাথে হেলান দিয়ে হিরোর মত দাড়িয়ে আছে। মুখে মুচকি হাসি।রুদ্র এসে বিশালের সাথে হাত মিলালো। যেহেতু সকালে দাভাই বলেছে রুদ্রের সাথে আমার যাওয়ার কথা সেহেতু বিশাল আমাকে রেখে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।বিশাল যেতেই রুদ্রের মুখে রাগিভাব চলে এল।আমাকে হাত ধরে টেনে গাড়িতে নিয়ে বসালো। তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসল।তারপর রাগি সুরে বলল
রুদ্রঃতোমাকে আমি কতবার কল দিয়েছি?(দাতে দাত চেপে)
রুদ্রের কথা শুনে আমি তারাতারি আমার মোবাইল চেক করলাম।দেখলাম আমার মোবাইল বন্ধ হয়ে আছে।আমি আমতা আমতা করে বললাম
আমিঃএকচুয়েলি আমার ক্লাস হচ্ছিলো তাই বন্ধ করে রেখেছিলাম যে আর খোলা হয় নি।(ভয়ে ভয়ে)
রুদ্র কোন কিছু না বলে আমার দিকে ঝুকে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল
রুদ্রঃআজকের মত মাফ করলাম।কিন্তু পরেরবার যাতে এমন ভুল না হয় পিচ্ছিময় বালিকা।
বলেই আমার কানে একটা কিস করে সরে গেল।
আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলাম মশাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি তাকাতেই গাড়ি চালাতে শুরু করল।
।
।
।
।
২৪
।
।
।
।
মেহেক ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে ভাইয়াকে প্রথম দেখার কথা ভাবতে লাগল।
।
।
।
অতীত
।
।
।
তিন বছর আগে মেহেক দাভাইকে দেখে এয়ারপোর্টে।আমরা সবাই লন্ডন যাওয়ার সময় আমাদের দেখে।মেহেক গিয়েছিল তার বাবাকে রিসিভ করতে।তখন দাভাইকে প্রথম দেখে আর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।দাভাইয়ের অজান্তেই মেহেক তার ছবি তুলে।তারপর থেকে প্রতিদিন মেহেক দাভাইয়ের ছবি দেখত। মেহেক তার রুমে দাভায়ের বড় একটা ছবি টাঙালো।কিন্তু সেই ছবি মেহেক সবার আড়ালে রাখে।এই তিন বছর মেহেক দাভাইয়ের ছবিটা দেখে কাটিয়ে দিয়েছে শুধু এই বিশ্বাসে যে দাভাইকে একবার না একবার সে খুজে পাবে।
তিনবছর পর দাভাইয়ের সাথে হঠাৎ করেই এভাবে শপিংমলে দেখা হয়ে গেল।আর সেদিন ইচ্ছে করেই দাভাইয়ের সাথে এমন ঝগড়া করল।যাতে দাভাই তাকে নিয়ে ভাবে।কিন্তু আমার দাভাই তো নিরামিষ। মেহেককে নিয়ে ভাবার সময় তার হয়ে উঠে নাই।মেহেক ওইদিন দাভাইয়ের নাম্বার কালেক্ট করে তার একবন্ধুর মাধ্যমে। এরপর থেকে শুরু হয় দাভাইকে কল দেওয়া।প্রতি রাতে দাভাইকে কল দিত।
।
।
।
।
বর্তমান
।
।
।
।
এসব মনে করতে করতে মেহেকের চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করলো। কিন্তু হঠাৎ মেহেক কান্না বন্ধ করে শক্ত গলায় বলতে লাগলো।
মেহেকঃতোমাকে আমি ছাড়ছি না মি.ফারদিন।আজ না কাল আমাকে ভালবাসতেই হবে তোমাকে। আর আমি তোমাকে নিজেই বলব যে আমিই তোমাকে প্রতি রাতে কল করতাম।তারপর আমাকে ভালবাসতে আমি তোমাকে বাধ্য করব।মনে রেখ ফারদিন সাহেব আমিও মেহেক চৌধুরি।
এই বলেই বাকা হাসল।
।
।
।
অন্যদিকে
।
।
।
রুশা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসল।ঠিক এমন সময় তার কল আসলো।
সে না দেখেই কল রিসিভ করে বলল
রুশাঃহ্যালো কে বলছেন?
ভাইয়াঃতোমার ময়নার বাপ বলছি গো ময়নার মা।
রুশার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আমার বজ্জাত ভাই কল করেছে
রুশাঃকি চাই?
ভাইয়াঃতোমাকে গো ময়নার মা।
রুশাঃ আপনি কি আমাকে শান্তি দিবেন না?
ভাইয়াঃদেখ বেশি কথা না বলে আমি লোকেশান দিচ্ছি ওখানে তারাতারি চলে এসো।
এই বলেই রুশাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে কল রেখে দিল।
রুশা রাগে মোবাইল বিছানায় ছুড়ে মারল।
রুশাঃশালাকুত্তা,অসভ্য,বজ্জাত,হনুমান,
এনাকন্ডা তোর কথা সবসময় শুনতে হবে নাকি।যাব না কি করবি তুই?
একটু পরেই রুশার মোবাইলে ভাইয়া লোকেশান দিল সাথে একটা মেসেজও পাঠালো।
মেসেজটি দেখে রুশা তারাতারি রেডি হতে লাগলো।
।
।
।
।
চলবে