তর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-১৬

0
821

#তর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
১৬তম খন্ড
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

চোখ খুলতে এমন কিছু দেখার জন্য ছায়া মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
আদনান পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে বেশ একটা মুড নিয়ে।
ছায়া এক লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে।
ছায়ার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জন্মেছে।
ভয়ে সারা শরীর কাঁপছে।
–আপনি এখানে কেন নির্ঝর কেথায় (ভয়ে পেছতে পেছতে)
ছায়াকে পেছতে দেখে ছায়ার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে আদনান।
–নির্ঝর নেই মেরে দিয়েছি ওকে।
তোমার আর আমার মাঝে বেশ বড়ো একটা বাঁধা ও।
–ছাড়ুন আমাকে প্লিজ।
–নাহ ছেড়ে দেবার জন্য ত ধরি নি ছায়া।
চলো আমাদের বাসায় চলো।
–নাহ যাবো না আমি কোথাও।
নির্ঝর কোথায়।
–বললাম না মেরে দিয়েছি শুধু নির্ঝর নির্ঝর করো কেন (চিল্লিয়ে)
আদনানের চিল্লানো শুনে ছায়ার বুকের মধ্যে কম্পন শুরু হয়ে যায়।
নির্ঝর এর কথা শুনে অঝরে চোখের পানি পরছে ত পরছেই।
–তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না ত।
আচ্ছা এসো বিশ্বাস করিয়ে দিচ্ছি
কথাটা বলে ছায়াকে টেনে ধরে দাঁড় করায়।
আর টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসে
ছায়া দেখতে পায় কাল নির্ঝর যে সার্ট পরা ছিল সেই সার্ট পরা একটা ছেলে উবু হয়ে পরে আছে মুখটা তার দেখা যাচ্ছে না কিন্তু তার সারা শরীরে রক্ত মাখামাখা হয়ে আছে
ছায়া এক চিৎকার দিয়ে আদনান থেকে হাত ছাড়িয়ে নির্ঝর এর কাছে যেতে যায়।
কিন্তু আদনান তাকে ধরে রাখে শক্ত করে
–কি করেছেন আমার নির্ঝর এর সাথে ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন।
–উফ সেই এক প্রশ্ন এক কথা।
–বলছি না ছারার জন্য ধরি নি আর নির্ঝর কে মেরে দিয়েছি এবার চলো।
–যাবো না।
ছায়া নিজেকে ছাড়বার চেষ্টা করছে তখনি ছায়ার ঘাড়ে একটা ইনজেকশন পুশ করা হয় ফলে ছায়া ধিরে ধিরে নিস্তেজ হয়ে যায়।
আর আদনানের দিকে ঢুলে পরে।
ছায়াকে পাজকোল করে নিয়ে যায় আদনান।
আর নির্ঝর নিস্তেজ হয়ে পরে রয় সেই খানে।
,
,
,
–তমা আদনান জানত না ওরা কোথায় আছে আদনান কে এই খবর তুমি দিয়েছো।
নয়লা বেগম রেগে কথা টা বললো তমাকে।
–হ্যাঁ আমি দিয়েছি নির্ঝর আমার না হলে আর কারোর না।
তমার কথাটা শেষ হতে না হতে
নয়লা বেগম তার গালে জোরে চড় বসিয়ে দেয়।
–আমি ভাবতে পারিনি এতোটা নিচ হয়ে যাবে তুমি।
আমারি ভুল তখনি আমার বোঝা উচিত ছিল আর তখনি আমার স্টেপ নেওয়া উচিত ছিল যদি তখন তোমার মতো এমন সয়তান মেয়ে কে আমার ঘরের বউ করে না আনতাম তবে এসব কিছুই হতো না।
আমার বাড়ি থেকে এক্ষুণি চলে যাও তোমার অস্তিত্ব আমি আমার বাড়িতে কল্পনাও করতে চাই না।
নয়লা বেগমের কথায় তমা বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে।
আর
নয়লা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বসে পরে।
–আমারি ভুল কেন করেছিলাম আমি এমনটা তখন ওই ছেলেটাকে এতো প্রস্রয় না দিলে চজ এমন হতো না।
নয়লা বেগম কাঁদছে আর কথা গুলো বলছে,
তখনি তার ফোনে একটা ফেন আসে।
তিনি ফেনটা তুলে,
–হ্যালো আবির নির্ঝর কই।
–…..(নিশ্চুপ)
আবিরের নিরবতা নয়লা বেগমের ভেতর টাকে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে,
–বাবা এমন চুপচাপ থাকিস না কথা বল আমার যে ভয় হচ্ছে।
–মা ভাইয়া আর নেই।
কথাটা শোনা মাত্র নয়লা বেগমের পৃথিবীর শব্দ কেমন একটা বিশ্রি শব্দে পরিনত হতে লাগলো।
আশে পাশের কিছুই তার কানে আসছে না।
শুধু মনে হচ্ছে একটা সুক্ষ্ম শব্দ তার কানের ভেতর হয়ে চলেছে।
,,
,
,
নয়লা বেগম কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়েছেন।
আবির মাত্র লাশ টাকে করব দিয়ে এসে বসে পরলো।
আপতত শুধু তারা বাদে আর কেউ জানে না নির্ঝর আর নেই।
আবির মায়ের কোলের পাশে বসে আছে
আবির মানতে পারছে না নির্ঝর আর নেই।
নয়লা বেগম হালকা মাথা ঝুকিয়ে বলে,
–আমার ছেলেটার জীবনের এক মাত্র সম্পদ আমার ছায়া।
ওকে উদ্ধার করে নিয়ে আয় আবির।
আমার ছেলেটা হয়ত আমার উপর ভিশন রাগ করেছে।
ওর খেয়াল ত কখনোই রাখতে পারলাম না।
ও চলে গেলে ওর জীবনের সব থেকে প্রিয় মানুষ টার খেয়াল ও কি রাখতে পারব না আমরা।
–কিন্তু মা আদনানের থেকে ভাবিকে আনবো কি করে,
–পুলিশ কে ফেন কর।
মায়ের কথায় তার দিকে তকায় আবির।
–হ্যাঁ আমি ঠিকি বলছি পুলিশ কে ফেন কর।
হয়ত এতো দিন এই কাজটা করলে আজ এই দিন দেখা লাগত না।
আমার ছেলেটা আমার কাছে থাকতো।
আজ ও নেই তাই ওর শূন্যতা আমায় বুঝিয়ে দিচ্ছে আমি কতো বড়ো পাপি।
কতো বড়ো ভুল করেছি।
আবির মায়রে কথা শুনে কেঁদে দেয়
–যা বাবা দেরি করিস না।
আমার ওকে নিয়ে বিশ্বাস নেই ও ছায়ার সাথে খারাপ কিছু করে দিবে।
আবির উঠে চলে যায়।
–কাল রাতেও তুই বলে ছিলি আদনান তুই শুধরে গেছিস।
কোন ক্ষতি করবি না তুই নির্ঝর এর।
মাকে কথা দিয়ে কথা রাখলি না বাবা।
তুই নির্ঝর এর খুনি হয়ে গেলি।
নয়লা বেগম কাঁদছে আজ তিনি ভিশন কষ্টে কাঁদছে
সত্যি এটাই মানুষ যখন থাকে না তখন তার গুরুত্ব বুঝতে পারে মানুষ।
নয়লা বেগম ও বুঝতে পারছে নির্ঝর এর গুরুত্ব।
ছেলেটা ছোট থেকেই সব সময় নয়লা বেগমের ভিশন কাছে কাছে থাকত৷
কখনো তাদের বাবার সাথে ঝামেলা হলে নির্ঝর এসে নয়লা বেগম এর চোখের পানি মুছিয়ে দিতো আর বলত,
–মা আমি বড়ো হই কখনো তোমায় কাঁদতে দিবো না।
নিজের পেটে না ধরে যে কখনো নির্ঝর থেকে এতো ভালোবাসা পাবে কখনোই ভাবে নি নয়লা বেগম।
সত্যি বড্ড ভুল করে ফেলেছে তিনি।
এক মাত্র নয়লা বেগমের জন্য আদনানের গায়ে কখনো হাত তুলে নি নির্ঝর।
নির্ঝর এর বাচ্চা রুপটাকে নিজের পাশে ফিল করছে নয়লা বেগম।
মনে হচ্ছে গুটি পায়ে বাচ্চা টা এগিয়ে এসে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলবে,
–মা আমি বড়ো হই তোমায় কাঁদতে দিবো না আর।
আজ বুঝতে পারছে কতোটা ভালোবাসে নয়লা বেগম নির্ঝর কে,
–আজ না বাবা একটা বার আমায় মা বলে ডাক।
আমায় ক্ষমা কে দে বাবা।
দয়া কর বাবা ফিরে আয়।
আয় বাবা আমার কাছে। একটা বার মা বলে ডাক।
তোর সাথে করা সব অন্যায়ের শাস্তি দে বাবা আমায়।
আমি যে এভাবে বেঁচে থাতে পারবো না।
আমি যে ভেতরে ভেতরে মারা যাবো।
আমি সত্যি মারা যাবো বাবা।
একটা বার এসে মা বলে ডাক দে।
আমার কোলে মাথা রাখ।
পুরো বাড়িতে আজ কিছু কাজের লোক আর নয়লা বেগম।

আপন বলতে কেউই নাই পাশে আজ।
নির্ঝর ছাড়া যে তার কেউ নেই তা সে বুঝতে পারছে।
আজ নিজের পেটের ছেলে ধোঁকা দিলো।
সত্যি ধোঁকা দিলো।
,
,
,
ছায়াকে ড্রাগ দেওয়া হয়েছে একটু নয় এতোটা বেশি যে ছায়াকে যে যেভাবে নাড়াবে ছায়া সেভাবে নড়বে নিজের কোন বোধ নাই ছায়ার।
নিস্তেজ অবস্থায় একটা রুমে বাঁধা পরে আছে
আদনান ছায়াকে পুড়িয়ে দবার বুদ্ধি এটেছে।
–ছায়া তোমায় মরতে হতো না কিন্তু কি করব বলো আমার আগে যে তোমায় ওই নির্ঝর ছুঁয়েছে তাই ত আগুনে পুড়িয়ে তোমায় বিশুদ্ধ করবো।
তুমি চিন্তা করো না হ্যাঁ।
তুমি বিশুদ্ধ হলে তোমায় আমি বিয়ে করে ঘরে তুলবো।
কথাটা বলে বিকট এক হাসি দিলো আদনান।
চলবে,