তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-১৫

0
556

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া
১৫তম খন্ড (রহস্য সমাধান)
#লেখিকা-লামিয়া রহমন মেঘলা
ছোট থেকেই মা এমন ছিল আমার থেকে আবির কে বেশি ভালোবাসত।
আমার সাথেই একটা ছেলে আমার স্কুলে পড়ত তাকে বেশি কেয়ার করত। আমার দিকে তেমন খেয়াল তার কখনোই ছিল না। একটু বড়ো তখন আমি।
আমার কোন জামা পছন্দ হলে তা ওই ছেলেটালে দিত।
আমার যে খেলনা পছন্দ হতো সেটা আমার না হয়ে ওই ছেলেটার হতো।
মোট কথা আমার পছন্দ কিছু আমার ছিল না সব ওই ছেলেটার ছিল।
তোমার সাথে আমার তখন কথা হতো ছায়া তখনের কথা।
এক দিন বিকাল বেলা
অতীত,
নির্ঝর হাতে এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ছায়ার জন্য আজ ছায়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে।
তমা আর আবিরের সাথে নির্ঝর আর ছায়ার বিয়েটাও হয়ে যাবে।
বাসার সবাই রাজি। এখন শুধু নির্ঝর এর ছায়াকে সারপ্রাইজ দেবার পালা।
নির্ঝর এর মুখে ছিল মাস্ক।।
ছায়া কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তার ওপারে নির্ঝর কে দেখতে পায়।
নির্ঝর কে চিনতে ছায়ার ভুল হয় না।
নির্ঝর ছায়ার দিকে এগিয়ে যাবে ঠিক তখনি ছায়ার কাছে একটা ছেলে এসে ছায়ার সামনে হাঁটু ভাজ করে বসে ছায়াকে তার মনের কথা জানায়।
–ভালোবাসি ছায়া তোমায় ভিশন৷
লোকটার পুরোটা মুখের মাত্র কিছু অংশ বাদে সব কালো রঙের কাপড়ে আবৃত।
ছায়া তাকে দেখে কিছুঠা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।
এভবে ভরা লোকজনের সামনে ছায়াকে এমন একটা পরিস্থিতি তে ফেলেছে লোকটা।
ছায়া কিছু না বলে সামনের দিকে তাকাতে দেখে নির্ঝর নেই।
ছায়া ছেলের টিকে প্রতাক্ষান করে বাসায় চলে আসে।
এদিকে,
নির্ঝর বাসায় এসে সোজা তার মায়ের রুমে চলে যায়,
–আদনান কে মা?
নির্ঝর এর মুখে আদনানের নামটা শুনে নয়লা বেগম চমকে ওঠে।
—ক কে হবে কেউ না।
–মা প্লিজ বলো আমি আর পারছি না মা।
ছোট থেকে তোমায় মা বলে জেনে এসেছি।
মা কি এমন হয়।
আমার দিকে ছোট থেকেই তোমার কোন খেয়াল নেই।
তুমি সব সময় ওই ছেলেটাকে ভালোবেসেছো।
সব সময় আমার পছন্দের জিনিস টাকে ওই ছেলেটাকে দিয়েছো।
ছোট থেকে সহ্য করতে করতে আজ ও আমার ছায়ার দিকেও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়েছে।
কেন মা কেন?আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
বলো প্লিজ ছেলেটা কে।
নয়লা বেগম অঝরে কাঁদছে।
আজ তাকে নির্ঝর কে সব বলতে হবে।
আর লুকালে চলবে না।
–আদনান চৌধুরী।
আমার ছেলে।
–তোমার ছেলে!
–আমার প্রথম স্বামী র ছেলে।
তোমার মা তোমার মৃত্যুর পর মারা যায়।
তোমার ছোট ভাই আবিরের যেদিন জন্ম সেদিন তোমার মা মারা যায়।
তুমি তখন ছোট।
তোমার বয়সি আমার আদনান।
আদনানের বাবাও বেঁচে নেই তখন তোমার বাব আমাকে তোমার ঘরে তুলে সর্ত ছিল,
তোমাদের কে ছেলের মতো মানুষ করতে হবে।
আর আদনান কে একা অন্য বাড়িতে রেখে ওর জাবতিয় সমস্ত খরচ দিতে।
তখন রাজি না হয়েও উপায় ছিল না।
আমার কাছে কোন চাকরি ছিল না আদনান কে মানুষ করার কোন উপায় ও ছিল না।
ধিরে ধিরে আমি তোমাদের মা হওয়া শুরু করলাম।
আর আমার আদনান একা বড়ো হতে লাগলো।
ছোট থেকে ওর ধারনা হতে লাগলো তুই ওর সব শান্তি কেড়ে নিচ্ছিস।
আমাকে তুই কেড়ে নিয়েছিস।
কারন তুই সব সময় আমার সাথে সাথে থাকতি।
ওর সব সময় এমন ধারনা ছিল।
একা একা থাকতে থাকতে ও মেন্টালি ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে।
আমি যখন বুঝতে পেরেছি ওর মস্তিষ্ক ঠিক নেই তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
ডক্টর বলে ওকে এভাবে বাঁচতে হবে।
আমার আদনান এমন ছিল না।
ওকে যদি আমি একা না রাখতাম।
কিন্তু কি করতাম আমার কাছে আর কোন উপায় ছিল না।
ওর ছোট থেকে এই ধারনা তুই ওর সব কেড়ে নিচ্ছিস।
তাই সব সময় তোর পছন্দের খেলনা ওকে দিতাম।
তোর পছন্দের সার্ট ওকে দিতাম।
ওর সব জিদ পুরোন করতাম।
কিন্তু তাও ও তোর ভালোবাসার জিনিস গুলো কেড়ে নিতে চেয়েছে।
ও যদি ছায়াকে না পায় তবে ও ছায়াকে মেরে ফেলবে।
আর ওর এই ক্ষমা ও ছোট থেকে তৈরি করেছে।
আমার দেওয়া অজস্র টাকা আর নিজের বুদ্ধি। দুই মিলে ও আজ বিগড়ে গেছে।
ছোট থেকে ওর যিদ টাকে যদি প্রস্রয় না দিতাম তবে আজ এ দিন দেখতে হতো না৷
আমাকে তুই ক্ষমা কর বাবা।
নয়লা বেগম কাঁদছে।
তার পরিস্থিতির কথা কল্পনা করে নির্ঝর ও কষ্ট পাচ্ছে।
কিন্তু কি করবে সে।
এই মুহুর্তে ছায়ার জীবন মরণ সংকট।
নির্ঝর তাই চাইছে না ছায়ার সাথে ওর বিয়েটা এই মুহুর্তে হোক।
নির্ঝর আদনান কে মেরে ও দিতে পারছে না।
পরের দিন সকালে,
সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে নির্ঝর।
চোখের সামনে শুধু ছায়ার প্রতিবিম্ব।
সত্যি চজ নিজেকে বড়ো অসহায় বলে মনে হচ্ছে নির্ঝর এর।
কি করবে সে।
আজ তমা আর আবিরের বিয়ের দিন পাকা হবে।
আবির আর নির্ঝর ও যাবে।
নির্ঝর নিজেকে গুছিয়ে নেয়।
রওনা দেয় ওরা ছায়াদের বাসার উদ্দেশ্য।
ওদের যাবার পর খাওয়া দওয়া শেষে।
তমার আবির কে আর নির্ঝর ছায়াকে একটা আলাদা ঘরে পাঠানো হয়।
সেখানে ছায়াকে কড়া ভাবে নির্দেশ দেয় নির্ঝর যাতে বিয়েটা না করে ছায়া।
কিন্তু তর কিছু সময় পর নয়লা বেগম রুমে আসে,
–দেখো ছায়া কথা গুলো একান্ত তোমার আমার।।
–জি বলুন আন্টি।
–তুমি নির্ঝর কে বিয়ে না করলে তমা আর আবিরের বিয়েটাও হবে ন।
–কি বলছেন আন্টি নির্ঝর আমাকে চায় না।
–ও তোমায় চায় কি না চায় তা আমি দেখতে চাইছি না।
বিয়েটা তুমি করবে এটাই হবে।
নির্ঝর এর মায়ের এই কথা নির্ঝর জানত না।
নয়লা বেগম চেয়েছিল ছায়ার বিয়েটা হোক যাতে আদনান কে সে সামলাতে পারে।
কিন্তু ইতে বিপরীত হলো,
আদনান আগে থেকে আরও ভয়ানক হয়ে গেল।
এখন তার ছায়া ছাড়া কোন কথাই নেই মুখে।
শুধু একটাই যিদ ছায়াকে হাসিল করা।
,
বর্তামান,
নির্ঝের বুকের মাঝে শুয়ে শুয়ে ছায়া সব কথা শুনছিল।
নিজের অজান্তেই ভয়ে বুকের মধ্যে ধকধক করছে।
নির্ঝর কে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ছায়া।
–কখন দুরে যাবে নাতো
–বেঁচে থাকতে না।
ছায়া নির্ঝর এর বুকে মাথা গুজে চোখ বন্ধ করে।
নির্ঝর মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে ছায়ার।
কিছুক্ষণের মধ্যে ছায়া ঘুমের দেশে চলে যায়।
ছায়ার অস্তিত্ব বুকের মাঝে পেয়ে নির্ঝর ও ঘুমিয়ে যায়।
সকালে সূর্য চোখের উপর পরতে ছায়ার মনে হচ্ছে নির্ঝর ওর পাশে নেই।
চোখ দুটো খুলতে সামনের দৃশ্য টা দেখার জন্য ছায়া মোটেও প্রস্তুত ছিল না,
চলবে,