তোর নামের রোদ্দুর ২ পর্ব-২৬+২৭

0
830

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ২৬

সারাটা রাত বৃষ্টি ছিলো,ঝড় ছিলো।কিন্তু সকালের উজ্জ্বল রোদের আলোতে সবটা পরিষ্কার।আরো সতেজ।ঘুম ভাঙার পর আগে চোখে পরলো শুদ্ধর ঘুমন্ত নিস্পাপ মুখ।মাথার নিচে একহাত দিয়ে বাচ্চাদের মতো উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন উনি।সিল্কি চুলগুলো কপালে এলোমেলোভাবে পরে আছে।নিচের ঠোটটা কিঞ্চিত উল্টানো।রাতটা যতই অন্ধকারচ্ছন্ন হোক না কেনো,আমার প্রতিটা সকাল এভাবে তাকে দেখেই শুরু হোক।তার নামের উজ্জলতাতেই কেটে যাক সে অন্ধকার।আড়মোড়া ছেড়ে মুচকি হেসে উঠে বসলাম।

কিছুক্ষন শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে রইলাম।ওভাবে থেকেই ছাড়া চুলগুলো হাতে মোড়াতে যাবো,চোখমুখ কুচকে ফেললেন উনি।ব্যালকনির সামনের জানালা দিয়ে আসা ভোরের তীর্যক রোদ্দুর চোখে পরেছে তার।চুল ছেড়ে দিলাম।রোদের আড়াল পেয়ে ওই চোখজোড়া মলিন হয়ে পরলো আবারো।দ্বিতীয়বারের মতো ঘাড় একটু সরাতেই চোখ পিটপিট করতে লাগলেন উনি।রোদটা আরেকবার আড়াল করলাম।নিশব্দে হেসে আবারো একইকাজ করতে যাবো,চোখ খুলে ফেললেন শুদ্ধ।আমিও থমকে গেছি কিছুটা।কোনোদিক না তাকিয়ে উনি তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলেন উনি।মাথাটা চেপে ধরে বিরবির করে বললেন,

-এ কি করেছি আমি?কি করে করলাম আমি এটা?

আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে তারদিক।শুদ্ধ আমার দিক ফিরে ব্যস্ত হয়ে বললেন,

-ত্ তুই এখানেই ছিলি কাল রাতে?সারারাত আমার পাশ্….লেহেঙ্গা কই তোর?এই,এই জামা কেনো তোর গায়ে?কি হয়েছে কাল রাতে?আমি…

-কিছুই হয় নি কাল রাতে!

শুদ্ধ বিস্ময়ে তাকালেন আমার দিকে।গাল ফুলিয়ে বললাম,

-শুধু আমার চেন্জ করা দেখে এতোটা অস্থির না হয়ে নিজের দিকেও তো তাকতে পারতেন একবার!শেরওয়ানিটাই পরে আছেন এখনো!

শুদ্ধ নিজের দিকে তাকালেন এতোক্ষনে।চোখ বন্ধ করে একটা বড় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আস্তে করে বললেন,

-থ্যাংক গড!

পুরোটাই শুনলাম আমি।ঘুরে একদম তার সামনে হাটুতে বসে চেচিয়েই বললাম,

-কিসের থ্যাংক গড হ্যাঁ?কিসের থ্যাংক গড?কাল রাতে কিছু হয়নি বলে থ্যাংক গড বলছেন আপনি?হলে কি হতো?চারবার আংটি পরিয়ে,দুবার রেজিস্ট্রি করে,তিনবার কবুল বলে বিয়ে করা বউ আমি আপনার!কি হতো কিছু হলে কাল রাতে?

শুদ্ধ বড়বড় চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।কড়া গলায় বললাম,

-হাত ছড়ান!

-কি?

-দু হাত ছড়ান!

-ক্…

আমি নিজেই দুহাত মেলে ধরলাম তার।তারপর তার বুকে মাথা ঠেকালাম।তার শেরওয়ানিতে আকিবুকি করতে করতে বললাম,

-এবার থেকে আমার ইচ্ছাকৃত স্পর্শগুলো হজম করতে শিখুন মিস্টার বর!

…..

-বলেছিলেন একটু সময় নিলে সবটা ঠিক হয়ে যাবে।সময়ের হিসাব কষতে জানি না আমি।তবে বিশ্বাস করুন,সবটা ঠিক করে দেবো আমি শুদ্ধ।সবটা!

শুদ্ধ এবার দুহাতে শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।চোখ বন্ধ করে তার বুকের মাঝে মিশে রইলাম।এবার শান্তি লাগছে।সারারাত ঝড়ো হাওয়া বাইরে তান্ডব চালিয়েছে।আর প্রায়নির্ঘুম রাতটায় মনে বয়ে চলা তুফান আমার ভেতরটাকে শেষ করে দিয়েছে।আমি তো নিজেকে শুদ্ধর কাছে সমর্পনের জন্য প্রস্তুত করেছিলাম।কিন্তু শুদ্ধ শুদ্ধই।তারদিক ফিরিয়ে দুগাল ধরতে যাচ্ছিলেন উনি আমার।আমি নিচদিকেই তাকিয়ে দাড়িয়ে।কাছে টেনে না নিয়ে বরাবরের মতো অবাক করে দিয়ে উনি সরে দাড়ালেন আমার থেকে।বিস্ময় নিয়ে মাথা তুলে বললাম,

-শুদ্ধ…

উনি আমার দিক তাকিয়েই একপা দুপা করে পেছোতে লাগলেন।অদ্ভুতভাবে হেসে আঙুল উচিয়ে বললেন,

-কষ্ট হচ্ছে তোর,তাইনা সিয়া?

-না শুদ্ধ!আমি…

-আমি তোর হৃদস্পন্দন পড়তে পারি সিয়া!

-শুদ্ধ!আজ তো….

-তোকে বলেছিলাম,তোর অনুমতি ছাড়া কিছুই হবে না!ও্ ওয়েট!

উনি কাবার্ডের দিকে এগোলেন।একটা জামা বের করে মাথা ঝারা মেরে আমার সামনে ধরে বললেন,

-চেন্জ করে আয়!

-কেনো?

-আমি বলেছি তাই!

কাদতে লাগলাম আবারো।শুদ্ধ এগিয়ে এসে আমার দুগাল ধরে বললেন,

-কাদিস না শ্যামাপাখি!তুই না বললেও আমি জানি,সবটা মানতে একটু সময় লাগবে তোর।এভাবে বিয়েটা তোর কাম্য ছিলো না।আমারো না।বিশ্বাস কর!কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস।সবটা!

-তারজন্য আগে আপনাকে ঠিক থাকতে হবে শুদ্ধ!

-তুই কাছে আছিস আমার।আর কিছুই হবে না।আই প্রমিস,আর কোনোদিন ড্রিংক করবো না আমি।দুজনে মিলে আস্তেআস্তে আমাদের ছোট্ট দুনিয়াটাকে ঠিক সাজিয়ে নেবো দেখিস!

শুদ্ধ জরিয়ে ধরলেন আমাকে।তার বুকে মাথা রেখে কাদতে কাদতে নিজেকে বোঝালাম,যে আমাকে এভাবে বোঝে,ভালোবাসে,তাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেবো না আমি।যে করেই হোক,সবটা ঠিক করে দেবো।সবটা!শুদ্ধ কপালে ঠোট ছোয়ালেন আমার।তারপর আমাকে ছেড়ে চুপচাপ বিছানায় এসে শুয়ে পরলেন উনি।কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে চেন্জ করে এসে দেখি উনি ঘুমিয়ে গেছেন।তার পাশে শুয়ে তাকে দেখতে দেখতেই রাত পার করে দিয়েছিলাম।

.
-উহুম!উহুম!

আমার গলা ঝারার শব্দ শুনে শুদ্ধ ছেড়ে দিলেন আমাকে।বললাম,

-উহুম উহুম মানে বুঝি ছেড়ে দিন আমাকে?

-তা কখন বললাম?

-ছাড়লেন কেনো তবে?বউকে দুমিনিট জরিয়ে ধরে থেকেই হাত লেগে গেছে?

-এটাই বা কখন বললাম?

-তাহলে ভদ্র বরের মতো আবারো জরিয়ে ধরুন মিস্টার বর!

শুদ্ধ একটু চুপ মেরে গেলেন।চোখ বন্ধ করে একটা ছোট শ্বাস ফেললেন উনি।তারপর চোখ খুলে হুট করেই জাপটে কোমড় জরিয়ে ধরলেন আমার।চমকে উঠে একদম কোলে গিয়ে পরেছি তার।উনি বললেন,

-এতে চলবে?

তার নাকে নাক ঘষে দিয়ে বললাম,

-দৌড়োবে!

শুদ্ধ আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে‌ বললেন,

-এভাবে আমাকে‌ দুর্বল ক্….

-ইনসিয়া ভাবিইইইই!

ধরফরিয়ে একদম খাট থেকেই নেমে গেলাম আমি।শুদ্ধ বিরক্তি নিয়ে বিছানা ছেড়ে নামতে নামতে বললেন,

-মামীকে বলতে ভুলে গেছিলাম এই জন্জালকে না আনার কথা!

আমি ফিক করে হেসে দিলাম।শুদ্ধ বিছানা থেকে নেমে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিলেন।ডাক লাগালাম,

-শুদ্ধ?

উনি হাত মুঠো করে দাড়িয়ে গেলেন।পিছন না ফিরে বললেন,

-হুম?

এগিয়ে তার সামনে গিয়ে আঙুল দিয়ে কপাল দেখালাম আমার।উনি কপাল কুচকে তাকালেন।তারপর কপালে হাত দিয়ে গায়ের তাপমাত্রা মাপার ভঙিমা করে বললেন,

-কি হয়েছে?জ্বর তো নেই!

দাতে দাত চেপে বললাম,

-চিরকুটের কথাগুলো কি কাল ওই ড্রিংক এর সাথেই গুলে খেয়েছেন?

ঠোট কামড়ে দু সেকেন্ড ভাবলেন উনি।তার পরপরই কোমড় জরিয়ে কাছে টেনে নিলেন আমাকে।কপালে আলতোভাবে ঠোট ছুইয়ে শান্ত গলায় বললেন,

-গুড মর্নিং শ্যামাপাখি!

লাজুক হেসে চোখ নামিয়ে নিলাম।আমারো চোখ তুলে তাকিয়ে শক্তভাবে বললাম,

-মনে থাকে যেনো!

-ইনসিয়া ভাবিইইই!দরজা খোলো!

আলতো ধাক্কায় সরিয়ে দিলাম শুদ্ধকে।উনি বিরক্তির মুখ করেই তোয়ালেটা কাধে ঝুলিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।একটু হেসে তাড়াতাড়ি দরজাটা খুললাম।মুখ হা হয়ে গেলো আমার।কাজিনদের পুরো সেনাবাহিনী দাড়িয়ে দরজায়।আমার হা হওয়া মুখসমেত আমাকও পাশ কাটিয়ে গটগট করে ভেতরে ঢুকে পরলো সবগুলো।মাহী দরজায় দাড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

-কি ব্যাপার বলোতো ইনসিয়া ভাবি?এতোবার ডাকলাম।লেইট করলে যে দরজা খুলতে?

হচকিয়ে গিয়ে রুমের ভেতরে এগোলাম।বাকিরা সবাই এটা ওটা হাত দিয়ে দেখছে।যেনো একেকটা সিআইডি অফিসার।তামিম ভাইয়া বিছানায় আধশোয়া হয়ে বললো,

-কি সাজিয়েছিলাম ইয়ার!তামিমের হাতে জাদু আছে মাইরি!

ইমরোজ ভাইয়া ফুলের ঝোলনাটা হাতে ধরে দেখতে দেখতে বললো,

-হুহ্!এসেছে নিজের গুন গাইতে!মুল দায়িত্বে তো আমি ছিলাম।শুদ্ধ আমাকে আগে কল করেছিলো তামিম ভাইয়া!

এবার তাপসী আপু বললো,

-এই তোরা থাম তো!প্রসংশা যা করার ইনসু আর শুদ্ধ করবে।এই ইনসু?শুদ্ধ কই?

-উ্ উনি তো ওয়াশর্….

-ওওওওও!!!

ওদের এই এই সুর তোলা আওয়াজ!আমি চোখ বন্ধ করে এককোনে দাড়িয়ে রইলাম।আবারো নিজেদের মতো এটা ওটায় হাত দিয়ে দেখতে লাগলো সবাই।এতোক্ষন চুপ থেকে যীনাত আপু এসে কাধে হাত রাখলো আমার।ওকে খেয়ালই করিনি।আপুর চোখমুখ দেখে ভালো লাগছে না।আমার সিচুয়েশন কিছুটা হলেও জানে ও,বোঝে।আমি মৃদ্যু হেসে ওকে আশ্বাস দিলাম,সবটা ঠিক আছে।ও জরিয়ে ধরলো আমাকে।এরমধ্যে শুদ্ধ ট্রাউজার আর কালো টিশার্ট পরে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন।ভ্রু নাচিয়ে বললেন,

-এসব কি?সবাই এখানে কেনো?

ইশান ভাইয়া বললো,

-তোমাকে দেখতে আসলাম শালাবাবু।বেশ লাগছে দেখতে!

ইমরোজ ভাইয়া বললো,

-কেমন ছিলো শুদ্ধ?বাসর?আ্ আই মিন বাসরঘর সাজানো?

এবার তামিম ভাইয়া বললো,

-তা শুদ্ধ?সকাল সকাল একদম গ্…

যীনাত আপু ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

-থামো তামিম ভাইয়া!ওদের পার্সোনাল বলে কিছু তো অবশিষ্ট ছাড়ো?আর ইমরোজ?রিফাত?লজ্জা করে না তোদের গাইস?সদ্য বিবাহিত একজোড়া কপোত কপোতির ঘরে এভাবে ঢুকে পরে এইসব…শেইম অন ইউ!

তামিম ভাইয়া খিচে উঠে বললো,

-তো তুইই বা কি করিস এখানে?একদম নেকামো দেখিয়ে ভালোমানুষ সাজার চেষ্টা করবি না আমাদের সামনে।একমাত্র ফুপির একমাত্র মেয়ে বলে কিছু বলি না।এই সাদামাটার মুখোশ পরে ঘুরিস,যেনো তোর চেয়ে নিস্পাপ কেউ নেই।এজন্য কেউ কিছু বলতেও পারে না।কিন্তু আমরা জানি,ভেতরে ভেতরে তুই ঠিকই….

যীনাত আপু ছোটছোট চোখ করে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো গিলে খাবে ‌ভাইয়াকে।তামিম ভাইয়াও তার ডোন্ট কেয়ার মুডেই আছে।তাপসী আপু ‌বললো,

-কি জানিস তামিম?কই?আমি তো কিছু জানি না!ইশান তুমি কিছু জানো?ইমরোজ?রিফাত?তোরা?

রোবটের মতো মাথা ডানেবামে দুলালো ভাইয়ারা।শুদ্ধ বললেন,

-আমি কিন্তু সবার সবটাই জানি।ভালোয় ভালোয় ঘর থেকে ‌বিদেয় হও।নইলে একেকজনের ঝুলি এমনভাবে খুলবো যে,যে কারনে এসেছিলে সেই কারনটাই উল্টো বিধবে তোমাদের।

তব্দা মেরে গেলো সবাই।টের পেলাম তামিম ভাইয়া,রিফাত ভাইয়া,মাহি গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।ইমরোজ ভাইয়া বললো,

-কেসটা কি হলো?

শুদ্ধ বললেন,

-কেসটা কমপ্লিকেটেড‌।ও পরে বুঝিয়ে দেবো।এবার আসুন আপনারাও!

ইশান ভাইয়া হতাশার নিশ্বাস ফেলে বললো,

-হাহ!কি সুন্দর সবাইকে সরিয়ে দিলে শালাবাবু!বিরবির করে চলেও গেলো সব!আর আমাদের সময়?কাজিনরা যা বলতো তাই হতো।বিয়ের পরও তাপসীর সাথে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে হতো আমার।মনে পরলে এখনো চোখে জল আসে আমার।ও দিন ভি কেয়া দিন থে শালাবাবু!কেয়া‌দিন থে!চলো তাপসী,চলো!আমরা যাই!

ওরা একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বেরিয়ে গেলো এবার।যীনাত আপু আমার গালে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো,

-নিচে আয়।একসাথে ব্রেকফাস্ট করবো।

আমিও হেসে মাথা নেড়ে সায় দিলাম।ও বেরিয়ে গেলো।শুদ্ধ আয়নার সামনে গিয়ে মাথা মুছছেন।একহাতে আরেকহাতের কনুই ধরে মুগ্ধ হয়ে দেখে চলেছি তাকে।সেদিকে কোনো খেয়াল নেই তার।বরং নিজের কাজে পুরোপুরি মনোযোগ।বেরিয়ে যাচ্ছিলেন উনিও রুম থেকে।কি মনে করে পিছন ফিরে বললেন,

-ফ্রেশ হয় নিচে চলে আয় তাড়াতাড়ি।ওয়েট করছে সবাই।

একটু হেসে সম্মতি বোঝালাম।উনি বেরিয়ে গেলেন।কিন্তু আমার মাথায় সবটা ঘুরপাক খাচ্ছে।এমন অদ্ভুত ব্যবহার কেনো করছেন উনি?কেনো নিজেকে যতোদুর সম্ভব দুরে রাখছেন আমার থেকে?এভোয়েড কেনো করছেন আমাকে?শুধুমাত্র বিয়েটা এভাবে হয়েছে এই কারনে?আব্বু মানেননি বিয়েটা,তার গিল্টি ফিল হচ্ছে,এই কারনে?বিয়ের জন্য আমাকে জোর করেছেন সেই কষ্টে?নাকি আরো বড় কোনো কারন???

#চলবে…

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ২৭

হাত পিছনে দিয়ে টেবিলে ঠেস‌ দিয়ে কোনোমতে দাড়িয়ে আছি।শুদ্ধ আরেকটু এগোলেই উপরে উঠে বসার মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া শেষ‌ আমার।গোসল‌ শেষে তোয়ালে মাথায় পেচিয়ে বেরিয়ে আগে ব্যালকনিতে ভিজে জামাটা মেলে দিয়ে আসছিলাম।শুদ্ধ বেডে সুন্দরমতো বসে কিছু ফাইলস্ নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলেন।আমি মানুষটার কোনো খেয়ালই নেই তার।

সকাল থেকে কথাও বলেননি তেমন।ব্রেকফাস্ট শেষে বাকিটা সময় কেটেছে আমার আপু,ভাইয়াদের রঙ বেরঙের কথা শুনতে শুনতে।আর উনি?রিল্যাক্সে অফিসের কাজে ব্যস্ত!রাগ হলো।ধুপধাপ করে হেটে শব্দ করে চেয়ার টেনে বসলাম।শুদ্ধ একপলক আমার দিকে তাকিয়ে আবারো নিজের কাজে মনোযোগ দিতে যাচ্ছিলেন।কি মনে করে আবারো তাকালেন আমার দিকে।

বিরক্তি,রাগ নিয়ে দাতে নখ কাটতে লাগলাম আমি।চোখ তুলে দেখি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে,বেড থেকে নেমে শুদ্ধ এগোচ্ছেন আমার দিকে।গভীর চাওনি তার।এবার আমার চাওনিরও বদল ঘটলো।রাগটা কিঞ্চিত ভয়ে পরিনত হলো।কাচুমাচু হয়ে উঠে দাড়ালাম।ততোক্ষনে শুদ্ধ এগিয়েছেন অনেকটাই।উনি একহাতে চেয়ারটা টেনে সরিয়ে দিলেন একপাশে।একটা শুকনো ঢোক গিলে টেবিলের সাথে লেপ্টে‌ গিয়ে বললাম,

-ক্ কি?

শুদ্ধ‌ আমার একপাশ দিয়ে হাত রাখলেন টেবিলে।চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।গোড়ালি উচিয়ে টেবিলে উঠে বসতে যাবো,গলায় স্পর্শ!নুইয়ে‌ গেলাম পুরোপুরি।যদিও তার স্পর্শ নতুন নয় আমার কাছে,কিন্তু প্রতিবারই নিজেকে এলোমেলো লাগে।তোয়ালে দিয়ে পেচিয়ে রেখেছি সব চুল।খানিকটা ভেজা চুল ছাড়া পেয়ে গলায় লেগে আছে।সেটাই সরিয়ে‌ দিয়েছেন শুদ্ধ।কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ মেললাম।শুদ্ধ আরো কাছে চলে আসছিলেন।এবার লাফিয়ে টেবিলেই উঠে বসলাম আমি।শুদ্ধ পাশ দিয়ে হাত দিয়ে কলম নিয়ে সরে গেলেন।বেডে বসে বিরক্তি নিয়ে বললেন,

-বাদরের মতো লাফালাফি না করলে চলে না?

ফু দিয়ে নিশ্বাস ছাড়লাম।টেবিলে থেকে নেমে তার সামনে দাড়িয়ে‌ কোমড়ে‌ হাত গুজে বললাম,

-আমি‌ বাদর?

-কোনো‌ সন্দেহ?

-আপনি….

-একচুয়ালি না।তুই বাদর না!

ভাব নিয়ে বলতে যাচ্ছিলাম,

-রাইট ই্….

-আস্ত বাদরনি একটা!

রাগে পায়ের তলার মাটিও গরম হয়ে গেলো আমার।উনি ভাবলেশহীন।হাতের কলমটা ছিনিয়ে নিয়ে তারদিকে তাক করে বললাম,

-কি বললেন?আরেকবার বলুন?

বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে কলমটা হাত থেকে নিয়ে ফাইলে কিছু লিখতে যাচ্ছিলেন উনি।আমি ফাইলটাও সরিয়ে নিলাম।শুদ্ধ হাত ধরে টান লাগালেন।একটানে কোলে বসিয়ে নিলেন আমাকে।একহাতে কোমড় জরিয়ে রেখে আরেকহাতে ফাইল নেওয়ার চেষ্টায় উনি।কিন্তু আমার মুল চিন্তা ফাইল দেবো না তাকে আজ!অপমান করেছেন উনি আমাকে!আপাতত গায়ের জোর খাটিয়ে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টায় আছি।

হুট করে আমার মাথার তোয়ালে খুলে দিলেন শুদ্ধ।কি হলো?ফাইল ছেড়ে তোয়ালে কেনো?ঘাড় ঘুরিয়ে আড়চোখে তাকালাম তার দিক।উনি আমার থুতনি ধরে ঘাড় ঘুরিয়ে দিলেন।তারপর কাধে নাক ডুবালেন।দুহাতে পেট জরিয়ে রেখে ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,

-এটাই চাচ্ছিলি তুই,তাইনা?

শিহরন শুরু সারা শরীরজুড়ে আমার।শ্বাস আটকে যাওয়ার সে মুহুর্তেই নিরবে হাত থেকে ফাইলটা পরে গেলো।কাপতে কাপতে দুহাতে তার হাত সরাতে যাবো,উনি নিজেই আমাকে কোল থেকে নামিয়ে পাশে বসিয়ে দিলেন।গা ছাড়া ভাব নিয়ে ফাইলটা হাতে আবারো বেডে লেখতে বসলেন শুদ্ধ।আমি তো আটকেই আছি।উনি লেখালেখি করতে করতে বললেন,

-মাথা ঠিকমতো মুছে ফেল!জ্বর হবে!

….

-আর শোন!আমার কাজে ডিস্টার্ব করবি না একদম।একটু ছুয়ে দিলেই যার শরীর অবশ হয়ে আসে,এইভাবে কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়,তার এটলিস্ট আমাকে গায়ের জোর দেখানো মানায় না!

সবটা বুঝে তোয়ালেটা নিয়ে চুপচাপ‌ সরে এলাম বিছানা থেকে।মাথা‌ মুছে নিলাম।নিউরনগুলো আচমকাই একটু বেশি কর্মক্ষম হয়ে উঠে জানান দিলো,
” লোকটা কাছে আসলে সত্যিই আমরা কাজ করা অফ দেই মনু।শুধু ওই বেটা হৃদপিন্ডটার কাজের গতি বাড়ে।যেটা শরীরের কাপাকাপি বাড়াতে আর তোকে অবশ করে দেওয়ার জন্য এনাফ।তাই তাকে ওসব গায়ের জোরটোর দেখাতে যাস না!কান খুলে শুনে নিয়ে মেমোরি সেলে সিল মেরে বসিয়ে নে ইনসু,ওই স্পর্শে সর্বনাশ আকা তোর!সর্বনাশ!”

-ইনসিয়া ভাবিইইইই!

মাহির ডাক।আগে দরজায়,তারপর শুদ্ধর দিকে তাকালাম।উনি সামনে থেকে‌ ফাইলগুলো সরিয়ে বললেন,

-আমি খুলছি দরজা!

-দরজা তো খোলাই আছে,ওকে….

-ও?দরজা খোলাই রেখেছেন আপনি?হ্যাটস্ অফ!

আমি গলা উচিয়ে বললাম,

-মাহি?ভেতরে আসো।দরজা খোলাই আছে।

দাত কেলিয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে‌ ঢুকলো মাহি।একহাতে আরেকহাতের আঙুল মোচড়াতে মোচড়াতে বললো,

-ইয়ে,ফুপি লান্চের জন্য ডাকছে তোমাদের।

-মাহি?এদিকে আয় তো!

উঠে যাচ্ছিলাম আমি।কিন্তু শুদ্ধের ডাকটা কেমন যেনো সুবিধার মনে হলো না।মাহি হাসিমুখে এগিয়ে‌ গেলো তার দিকে।চেয়ার‌ ধরে আগ্রহ নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম।শুদ্ধ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-তুই মুর্তির মতো দাড়িয়ে রইলি কেনো?যা!

-আমি….

-যা!

মাহি যতোটা মাসুমভাবে হাসছিলো,ততোটাই খটকা লেগেছে শুদ্ধর ওমন ডাকে।হুট করেই আলিফের কথা মনে পরে গেলো।মাহির হাত ধরে বললাম,

-এ্ একসাথে যাবো আমরা।

শুদ্ধ আর কিছু বললেন না।আমি মাহিকে নিয়েই বেরোলাম।ডাইনিংয়ে সবাই খেতে বসে গেছে।দু‌মিনিটে শুদ্ধও চলে আসলেন।কিন্তু কেনো জানি না চিন্তা হচ্ছে আমার।খাওয়া বাদ দিয়ে নাড়ছি শুধু।শুদ্ধ ধীর গলায় বললেন,

-খাওয়া ছেড়ে ওমন করছিস কেনো তুই?

-হুম?ক্ কিছু না।

-তাহলে খাচ্ছিস না কেনো?সবার সামনে তখনকার মতো কোলে বসিয়ে খাইয়ে দেবো?

বড়বড় করে তাকালাম।উনি আবারো বললেন,

-কি বলিস?আমি কিন্তু সে সাহস…

বলতে বলতেই উনি হাত বাড়াতে যাচ্ছিলেন।আমি দাড়িয়ে গিয়ে কিছুটা জোরেসোরেই বললাম,

-না!

উপস্থিত সবাই তাকিয়ে আমার দিকে।তাপসী আপু বললো,

-কিরে ইনসু?কি হলো তোর?

শুদ্ধ আমাকেই বিরক্তি দেখিয়ে বললেন,

-হোয়াটস্ রং উইথ ইউ?শুধুশুধু এভাবে লাফালাফি করার কোনো মানে হয়?

শুধুশুধু?শব্দটা বেরোলো মুখ দিয়ে,তবে ধীরে।যীনাত আপু বললো,

-খাবি তো!নাকি?হয়েছে কি?

-ক্ কিছু না তো।কিছুইনাহ্!

মেকি হেসে বসে পরলাম।পাশে বসা ইশান ভাইয়া ঝুকে তাপসী আপুকে বিরবির করে বললো,

-আরে বোঝো না?ডাইনিং টেবিলের নিচে বিড়াল এসেছে হয়তোবা।

ওরা হাসতে লাগলো।চোখ বন্ধ করে জিভ কাটলাম।কিছু না ঘটলেও,আমার বোকামির জন্যই এইসব কথা শুনতে হয় আমাকে।তায়্যিব খাওয়া শেষ করে আমার পাশে এসে বললো,

-ইনসু মাম্মাম,শুদ্ধ মামু চুপিচুপি তোমার প্লেটের মাংস আগে ওর ভাতে মাখিয়ে এটো করে আবার তোমার প্লেটে ফেরত দিয়েছে।আমি দেখেছি!

সবাই একটু আটকে থেকে জোরে হাসতে লাগলো।বড়রাও ঠোট টিপে হাসছে।ব্যস!হয়ে গেলো!এটাই দেখার বাকি ছিলো।তীক্ষ্মচোখে তাকালাম শুদ্ধর দিকে।উনি কোনোদিক না তাকিয়ে খেতে খেতেই বললেন,

-চিকেনটা ঝাল হয়েছে।

চোখ সরিয়ে নিলাম।আই উইশ,যদি ভ্যানিশিং গ্যাজেট থাকতো আমার!কখনো কখনো গায়েব হয়ে যাওয়ার সুপারপাওয়ার বড্ড দরকার পরে যায়।গলা ঝেড়ে সেজোকাকু বললো,

-শুদ্ধ?তোমাদের বৌভাত রিসেপশন…

শুদ্ধ খাবার নাড়তে নাড়তে বললেন,

-ওটা থাক আব্বু।

বিস্ময়ে সবাই তাকালো তারদিক।সেজোমা বললো,

-থাকবে মানে?

-মানে আ‌মি চাইছি না এখন বৌভাতের অনুষ্ঠানটা হোক।ইনফ্যাক্ট আমি চাই অনুষ্ঠানটা ততোদিন পর্যন্ত হবে না যতোদিন অবদি ছোটকাকু সবটা মেনে নিচ্ছে!

এবার আরো বিস্ময় সবার চেহারায়।সেজোকাকু,যীনাত আপু বাদে বাকি সব একজন আরেকজনের দিকে তাকালো।তাপসী আপু বললো,

-মেনে না নিচ্ছে মানে কি শুদ্ধ?ছোটকাকু তো…

যীনাত আপু বললো,

-আ্ আসলে হুট করে বিয়েটা হয়ে গেলো তো কাল।ছোটমামা চায়নি এতো তাড়াতাড়ি এসব হয়ে যাক।তাই আর কি…কাল ওনার চেহারাটা বলে‌ দিচ্ছিলো,যথেষ্ট রেগে আছেন উনি শুদ্ধর উপর।শুদ্ধ ত্ তাই বলছে মেনে নেওয়ার কথা।

মামী বললেন,

-এই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এমন রাগ করেছে যে….

সেজোমা বললো,

-ছোটখাটো বিষয় কেনো ভাবি?সব বাবাই চায় মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানটা ধুমধাম করে হোক।আর ইনসু তো ইয়াদ ভাইয়ের প্রান!এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।

-না মানে শুধু এই কারনেই রিসেপশনটা….

-আমি বলে দিয়েছি রিসেপশন এখন হবে না,হবে না।দ্যাটস্ ইট!আর কথা বাড়িও না তোমরা!

খাবার শেষ করে এটুকো বলে শুদ্ধ হাত মুছে উঠে গেলেন।মুগ্ধ হয়ে তার চলে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলাম।আমিও এমনটাই চেয়েছিলাম।আব্বুকে ছাড়া সবটাই মানতে কষ্ট হচ্ছে আমার।আর এই মানুষটা আমার ভালো লাগা,খারাপ লাগা সবটাই এভাবেই বুঝে যায়।না বললেও!

____________

বিকেলে ভাইয়া আপুরা ছাদে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলো।ওদের সাথেই গেলাম আমিও।শুদ্ধ রুমে ছিলেন না।সবার সামনে ডাকিও নি তাই।অবশ্য ভাইয়ারা খোজ করছিলো।সেজোমা বললো কাকুর সাথে তার রুমে সে।তাই আর কেউ ডাকে নি।আধাঘন্টার মতো পেরিয়ে গেছে।এরমধ্যেই,

-সিয়া!

শুদ্ধের ডাক!এই ডাকে কেমন কেমন যেনো লাগে।মনের মাঝে ঝংকার দিয়ে ওঠে একরকম।কখনো মনে হবে সব সুখ হৃদয়ের দরজায় কড়া নাড়ছে,কখনো মনে হবে সমস্ত লাজুকতা চারপাশ থেকে ধেয়ে আসছে,কখনো মনে হবে হারিয়ে গেলাম ওই ডাকের অতলে,কখনো বা মনে হবে পূর্নতায় নিঃশেষ হয়ে যাই আমি।আনমনে হাসি ফুটলো ঠোটের কোনে।তাপসী আপু বললো,

-গাইস?ওই দেখ!বউকে চোখে হারাচ্ছে শুদ্ধ!

ওরা হাসাহাসি শুরু করলো।আরো অনেক কথা হবে এখানে এখন।নিজেকে সামলানো খুব জরুরি।কাচুমাচু করতে লাগলাম।

-সিয়া!

-ওরে বাপরে!শুদ্ধ আসলেই তোকে চোখে হারাচ্ছে ইনসু!যা জলদি!নইলে আবার আমাদের আজাদ ম্যানশন থেকে বের না করে দেয়!তোমাদের জন্যই আমার বউ থাকে না আমার কাছে!

তামিম ভাইয়ার কথায় কান গরম হয়ে গেলো আমার।একছুটে চলে এলাম ওখান থেকে।যেমন এই লোক,ডাক লাগানোর সময় হুশ থাকে না!তেমন এই পরিবার,একবার শুরু করলে পর রক্ষে নেই!
রুমে এসে দেখি শুদ্ধ কফি হাতে ব্যালকনিতে বাইরে তাকিয়ে।কোনো আওয়াজ করিনি আমি।উনি আমার দিক না ফিরেই বললেন,

-কোথায় ছিলি?

-ভ্ ভাইয়া আপুদের সাথে ছাদে।

-ও।

উনি চুপচাপ কফি মগে চুমুক দিলেন।আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললাম,

-ওভাবে ডাকলেন যে?কিছু বলবেন?

….

-কিছু বলছেন না যে!

-তোর একাডেমিক কাগজপত্র এ বাসায় এনেছিস?

একটু অবাক হলাম।প্রকাশ না করে বললাম,

-না।ওগুলো শেহনাজ মন্জিলেই।

-ওহ্।

-হঠাৎ ওগুলো….

-নিয়ে আসতে হবে কাউকে দিয়ে।পড়াশোনাটাও তো করতে হবে তাইনা?সামনেই ভর্তি পরীক্ষা!আর তোর যা পড়াশোনা দেখছি!

পড়াশোনার কথা মনে পরতেই মন খারাপ হয়ে গেলো আমার।এই সবটাই সবটা এলোমেলো করে দিয়েছে।পরিকল্পনা তো অন্যটাই ছিলো।যাই থাক!আমার সব পরিকল্পনাই এখন শুদ্ধকে ঘিরে।নিচদিক তাকিয়ে ছিলাম।শুদ্ধ কফির মগ রেখে শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।বললেন,

-বিশ্বাস কর সিয়া,তুই আছিস বলেই আমি আছি।এই জীবনে তোর অস্তিত্ব না থাকলে শুদ্ধরও কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।শেষ হয়ে যাবে শুদ্ধ।তুই ছাড়া কেউ,কোথাও খুজে পাবে না শুদ্ধকে!কেউ না!

আলতোভাবে হাত রাখলাম তার পিঠে।এভাবে তার বলা কথাগুলো যেনো নিশব্দে ভেঙেচুরে দিয়ে যাচ্ছিলো ভেতরটা,কোনো রিয়্যাক্ট করতে পারছি না।কিন্তু তার অনুপস্থিতির কথাটা মস্তিষ্কে আঘাত করতেই খামচে ধরলাম তার টিশার্ট।চোখ বন্ধ করে যেনো শুনতে পেলাম,দুজনের ভেতরটা একই কথা বলছে।আর যাই হোক,বিচ্ছেদ নয়!কোনোভাবেই,বিচ্ছেদ নয়!

#চলবে….