তোর নামের রোদ্দুর ২ পর্ব-৩০+৩১

0
820

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩০

বড় টেবিলটার একপ্রান্তের চেয়ারে কাচুমাচু হয়ে বসে আছি।আরেকপ্রান্তে শুদ্ধ বেশ সুন্দর পায়ের উপর পা তুলে বসে মিটমিটিয়ে হাসছেন।মাহি পাশেই বসে সুন্দরমতো গালে হাত দিয়ে সবাইকে দেখে চলেছে।আর আশেপাশের কয়েকজোড়া চোখ বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে।এক আপু বলে উঠলো,

-শুদ্ধ?এই বাচ্চা মেয়েটা তোর বউ?

পাশের আরেক আপু বললো,

-এই বালিকা বধু কোথথেকে এনেছিস তুই শুদ্ধ?

এক ভাইয়া বললো,

-শুদ্ধ?ভাবির বয়সটা কিন্তু একটু বেশিই কম!

আরেক ভাইয়া তার মাথায় চাটি মেরে বললো,

-ওর বয়স নিয়ে কমেন্ট করার আগে কথা বলা শেখ ডাফার!একটু!বেশিই!কম!

-কথা বুঝিস না তুই,আর ডাফার আমি?এনিওয়েজ,তোর সাথে পরে ডিল করছি।কোথায় ছিলাম আমি?ও হ্যাঁ,ভাবিটা ছোটমানুষ!তোকে সামলানো তার পক্ষে….

একটার পর একটা কথা এভাবে শুনে চলেছি।কিছু বলতে তো পারবোই না।অপেক্ষা করে আছি কখন শুদ্ধ মুখ খুলবেন।উনি একটু নড়েচড়ে বসলেন।মনেমনে খুশি হলাম আমি।ভাবলাম এবার হয়তো উনি কিছু বলবেন।আমার ভাবনার কাথায় বরাবরের মতো আগুন দিয়ে উনিও মাহির মতো টেবিলে হাত রেখে তাতে থুতনি ঠেকিয়ে বসলেন।আগ্রহ নিয়ে শুনতে লাগলেন সবার কথা।মনেমনে নিজের কপালে হাজারটা চড় লাগালাম।কপালটাই এমন আমার।এই লোককে নিয়ে যা ভাববো উনি তো তার উল্টোটাই করবেন।এক ভাইয়া বললেন,

-কিরে শুদ্ধ?এভাবেই শুনবি শুধু?কিছু বল তো!

উনি এতোক্ষনে মুখ খুললেন।বেরস গলায় বললেন,

-আমি কি বলবো?তোরাই বলতে থাক!আমি শুনি!শুদ্ধর বউ বলে কথা!পেটপুরে খাইয়ে তো দেবো,কিন্তু ওকে নিয়ে প্যারাগ্রাফ না রচনা করলে তোদের তো আত্মিক শান্তি মিলবে না!সো ইউ মে কন্টিনিউ!কন্টিনিউ!

ওরা সবাই মিলে হাসাহাসি করতে লাগলো।এদিকে আমি ঠোটে মেকি হাসি ঝুলিয়ে রইলেও হাত পা ঘেমে উঠছে আমার।শুদ্ধকে কয়েকশ কথা শোনাবো আজ বাসায় গিয়ে,সেগুলোই গোচ্ছাছি বসে বসে।সবার সামনে এভাবে বসিয়ে এইসব কথা শোনালেন উনি আমাকে?হাসির পর্ব শেষে শুদ্ধ বললেন,

-ওকে গাইস,লেট মি কনফেস!এই সেই রোদ্রময়ী,শ্যামাপাখি।যার জন্য শুদ্ধ চব্বিশটা বছর,এতোটাআআ কাল সিঙ্গেল ডিগ্রি নিয়ে বেচে আছে।আর ওর বয়সটা?বিয়েটা কিন্তু ওর আঠারো শেষ হওয়ার পরই করেছি।সো ওটা ম্যাটার করে না।দ্যা মেইন থিং ইজ,শি ইজ মাইন!

ভাইয়ারা সবাই তার কাধ চাপড়াতে চাপড়াতে হেসে বললেন,

-ও হো হো ভাইইইই!জিও!জিও!

এক আপু বললো,

-কি দিলি তুই‌ ইয়ার!বিয়েটা শেষমেষ ওকেই করলি?এজন্যই ফোনে তোর বউয়ের নাম হাজারবার জিজ্ঞেস করাতেও বললি না তুই!এই এতোবড় ঝটকাটা একদম সামনে থেকে দিবি বলে?

শুদ্ধ হেসে ঘাড় নাড়লেন।এই আপুটার কথায় কিছুটা হা হয়ে আছি আমি।তারমানে শুদ্ধ ওনাদের সবাইকে আগেই বলেছেন আমার কথা।তার রোদ্রময়ী,শ্যামাপাখির কথা।এবার লজ্জা লাগতে লাগলো আমার।শুদ্ধ একেএকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাকে।এরমধ্যে পিযূশ নামের এক ভাইয়া উঠে গেলেন।আর শুদ্ধ তার ফোনটা বের করে কাউকে কল লাগালেন।আসার পর থেকেই কথার ফাকে ফাকে অনবরত ফোন করে যাচ্ছেন উনি কাউকে।এক আপু বললো,

-এতো কাকে ফোন করছিস শুদ্ধ?

-আরে আ্…..

-এন্ড হেয়ার হি কামস্!গিভ ইট আপ ফর মিস্টার আয়ান চৌধুরী!

পিযূশ ভাইয়া রেস্ট্রুরেন্টের গেইটের কাছে দাড়িয়ে আরেকজন ভাইয়ার কাধে হাত রেখে বললেন কথাটা।আপাদমস্তক দেখলাম‌ লোকটাকে।পরনে ইন করা নীল‌ শার্ট,কালো প্যান্ট,কালো সু,স্পাইক করা চুল,ক্লিন শেইভড্ চেহারা,বেশ ফর্সা।লম্বাও।সবকিছুর উর্ধ্বে যা ছিলো,সেটা তার গম্ভীরতা।বাকি সবার মতো হাসিখুশি নন উনি।শুদ্ধ উঠে দাড়িয়ে একছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরলেন তাকে।সে মানুষটা মৃদ্যু হাসি রেখে হাত রাখলেন শুদ্ধর পিঠের উপর।অদ্ভুতভাবে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন উনি।অস্বস্তিতে চোখ নামিয়ে নিলাম।শুদ্ধ ওনাকে ছেড়ে আনন্দের সাথে বললেন,

-এতোক্ষনে আসার সময় হলো তোর?তখন কল করে তো বললি সবার সাথেই আছিস!কোথায় ছিলি তুই এ কয়দিন?অফিসেও নেই,ফোনও রিসিভ করিস নি।আন্টিকে ফোন করেছিলাম,সে বললো বোনকে নিয়ে নাকি বাইরে গেছিস।তোর বোন….

-রিল্যাক্স!একসাথে এতোগুলো প্রশ্ন করলে কিভাবে উত্তর দেবো?আর এসেছি যখন,প্রশ্নগুলোই আগে কাটানোর চেষ্টা করবো!

-হ্যাঁ,কিন্তু তুই….

-ভাবিকে তো দেখা ইয়ার!

ওনারা এগোলেন আমার দিকে।শুদ্ধ বললেন,

-সিয়া?ও আয়ান।আয়ান চৌধুরী।আমার একদম ছোটবেলার ফ্রেন্ড!বলতে পারিস সবচেয়ে পুরোনো!আর আয়ান?এইতো!এই সে!

আমি সালাম দিলাম ওনাকে।উনি উত্তর নিয়ে বললেন,

-কেমন আছো ইনসিয়া?

-জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?

-ভালো।

শুদ্ধ বললেন,

-আয়ান?তুই জানিস ওর পুরোনাম ইনসিয়া?

আয়ান ভাইয়া হালকা‌ হেসে বললেন,

-ভুলে যাচ্ছিস কেনো?তোর বিয়ের দিন আজাদ‌ ম্যানশন সাজানোর দায়িত্বে আমি ছিলাম।তাছাড়া আজাদ গ্রুপের সিইও হিসেবে সেই গ্রুপের একমাত্র উত্তরসুরীর বউয়ের নাম জানা,ইজ ইট আ বিগ ডিল?

শুদ্ধ নিচদিক তাকিয়ে অদ্ভুতভাবে হেসে বললেন,

-এর থেকেও আরেকটা‌‌ বড়‌ কারন আছে আয়ান!

আয়ান ভাইয়া খানিকটা থমকে গেছেন।শুদ্ধ নিজেকে আবারো স্বাভাবিক করে নিলেন।আয়ান ভাইয়ার কাধে হাত রেখে বললেন,

-তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড।সো অ্যাম আই।তাই এটুকো বাড়তি খোজ নিতেই হতো তোকে।অ্যাম আই রাইট?

আয়ান ভাইয়া মাথা উপরেনিচে নাড়ালেন।এক আপু বললো,

-এ তুই কাকে নিয়ে আসলি পিযূশ? শুদ্ধর বেস্টফ্রেন্ড এসে গেছে।এবার আমাদের সবার পাত্তা তো কেটে‌ গেলো!

-ঠিক বলেছিস প্রত্যাশা!আয়ান এসেছে না?শুদ্ধ এবার পারলে ওকে কোলে করে নিয়ে ঘোরে!

সবাই হাসতে লাগলো আবারো।আমি আড়চোখে মাহীর দিকে তাকালাম।হা করে আয়ান ভাইয়ার ‌দিকে তাকিয়ে আছে ও।অস্থির লাগতে শুরু করলো আমারই।এভাবে সবার সামনে একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে কিভাবে ও?ওর হাতে টান মেরে নিচু আওয়াজে বললাম,

-মাহি?চোখ‌ সরাও!

ও ওভাবে তাকিয়ে থেকেই বললো,

-আমার চোখ আমার কথা শুনছে না ইনসিয়া ভাবি!

-কি করছো টা কি তুমি?

-ভাইয়াটা কি ড্যাশিং!তাইনা ইনসিয়া ভাবি?সবগুলোর মধ্যে এ্….

-মাহি তুমি….

-সিয়া?

শুদ্ধ ডাক লাগালেন।এখানে‌ কথা বলার সুযোগ নেই ওর সাথে।চিন্তা একটাই!এখন সবার সামনে কোনো সিনক্রিয়েট না করলেই হয়!
খাওয়া শেষে আপুগুলোর সাথে কথা বলছিলাম।প্রত্যাশা,ইতি,সামিহা।শুদ্ধ আয়ান ভাইয়ার সাথে একসাথে‌ দাড়িয়ে বাকি সবার সাথে কথা‌ বলছেন।ইতি আপু বললো,

-জানো ইনসিয়া,তোমার কথা অনেক শুনেছি শুদ্ধর কাছে।ও‌ ঠিক যা যা,যেভাবে যেভাবে বলেছিলো তোমার বিষয়ে,সবটাই একদম আয়নার মতো প্রতিফলিত হচ্ছে তোমার মাঝে।আসলে অনেক ভালোবাসে ও তোমাকে।এতোটা ভালো না বাসলে এভাবে কারো বর্ননা দেওয়া যায় না।

প্রত্যাশা আপু বললো,

-ঠিক বলেছে ও।একসাথে পড়েছি চারবছর।বরাবরই ও এটিচিউড বয়।ভার্সিটির হাজারটা মেয়ের ক্রাশ।কাউকেই পাত্তা‌ দিতো না।হুট করে একদিন বলে উঠলো এক শ্যামাপাখির প্রেমে পরেছে।তারপর থেকে ওর মুখে এই‌ শ্যামাপাখি ছাড়া অন্যকিছু শুনিনি।ডিটেইলস্ জানতে চাইলে এককথা বলতো,যেদিন অধিকারবোধটা করে নিতে পারবে,সেদিন বলবে।আজ দেখো,ওর ঘরের বউ তুমি।সে পরিচয়েই আমাদের সবার সামনে তুমি।

সামিহা আপু বললো,

-ওকে বুঝতে শিখো ইনসিয়া।আমরা ওর ব্যাচমেট ঠিকই,কিন্তু কোনোভাবেই বুঝে উঠিনি ওকে।হয়তো শুধু ব্যাচমেট বলেই বুঝে উঠি নি ওকে।আমাদের কাছে শুদ্ধ মানে বরাবরই রহস্য।দুবছর আগে থেকে সেটা আরো গভীর।সবটাই নিজের মাঝে গুটিয়ে রেখেছে ও।কাউকেই বলেনি।ইনফ্যাক্ট আয়ানকেও না।আয়ান আর শুদ্ধ কিন্তু দো জিসম এক জান টাইপ।তবুও আয়ানও নাকি বুঝতো না কি হয়ে যেতো ওর হুটহাট।নাকি বোঝার চেষ্টাই করতো না কে জানে!

সবটা চুপচাপ শুনলাম।শুদ্ধরা এগিয়ে আসলেন আমাদের দিকে।এক ভাইয়া বললেন,

-তাহলে ইনসিয়া?সব কথার শেষ কথা,তুমি বোন আমাদের অনেক জুনিয়র।তোমায় নাম ধরেই ডাকবো আমরা।তখন এমনি জাস্ট লেগপুল করতে ওসব বলেছি।কিছু মনে করো নি তাইনা?

মুচকি হেসে মাথা নেড়ে না বললাম।ভাইয়াটা আমার হাতে একটা গিফটবক্স ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

-এটা আমার তরফ থেকে।

-এসব….

-কোনো বাহানা নয়।নিতেই হবে!

শুদ্ধ বললেন,

-এসব আবার কেনো নাফি?তোকে কি…

-শুধু নাফি নয়,আমরা সবাই ছোটখাটো কিছু গিফটস্ এনেছি ইনসিয়ার জন্য।আর তুই!একটা কথা বলবি না।স্টে আউট অফ ইট!

সামিহা আপুর চোখ রাঙানিতে শুদ্ধ দু হাত তুলে পিছিয়ে গেলেন।সবাই হেসে দিলো তার কাজে।একে একে সবাই উপহারগুলো দিয়ে শুভকামনা জানিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো।শুদ্ধ পুরোটা সময় আয়ান ভাইয়ার পাশে দাড়িয়ে থেকেই বিদায় জানালেন সবাইকে।মাহির তখনো কোনো হেরফের নেই।সবাই বেরিয়ে গেলে আয়ান ভাইয়া শুদ্ধকে বললেন,

-শুনেছি তোদের এনগেইজমেন্টটা দু বছর আগেই হয়েছিলো?

শুদ্ধ অন্যদিক তাকিয়ে শব্দহীন হাসলেন কিছুটা।তারপর আয়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-অনেকটাই জানিস দেখছি।

-অনেকটাই লুকিয়ে গেছিস দেখছি।

-এটা টোটালিই ফ্যামিলির উপর ডিপেন্ডেন্ট ছিলো।

-কোনটা?এনগেইজমেন্ট?

-না।লুকিয়ে যাওয়াটা।

আয়ান ভাইয়া একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন তার দিকে।তারপর নিজেকে সামলে বললেন,

-ওহ!যাই হোক,ইনসিয়া?তোমার জন্য কোনো গিফট্ আনি নি আমি।তো….

-ইটস্ ওকে।আপনি সময় করে এখানে এসেছেন,এটাই‌ যথেষ্ট।

-বলছো?আমার আসাটা তোমার জন্য এনাফ ছিলো?

কিছু বলার মতো খুজে পেলাম না।এতো গুরুগম্ভীর একটা লোক শুদ্ধর বেস্টফ্রেন্ড কিভাবে হতে পারে‌ সেটাই‌ ভাবছি।অবশ্য ওনার পার্সোনালিটিই বলে দিচ্ছিলো উনি রগচটা টাইপেরই হবেন।আর মাহি এই পার্সোনালিটিতেই আটকে আছে।আমি শুদ্ধর দিকে তাকালাম।উনি পকেটে দুহাত গুজে আয়ান ভাইয়ার মুখের দিকে অতিআগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে।আয়ান ভাইয়া শব্দ করে হেসে বললেন,

-রিল্যাক্স!খুব তাড়াতাড়িই তুমি তোমার গিফট্ পেয়ে যাবে।এন্ড ট্রাস্ট মি,আয়ান চৌধুরী এমন কিছু গিফট্ করবে তোমাকে যা আজীবন মনে থাকবে তোমার।

আজীবন মনে রাখার মতো গিফট্!ভেতরটা অস্বাভাবিকভাবে ধক করে উঠলো আমার।তবুও জোর করে হাসি টানলাম ঠোটে।আয়ান ভাইয়া শুদ্ধর দিকে ফিরে বললেন,

-আজ আসি।ভালো থাকিস।

-অফিস জয়েন করবি কবে থেকে?জানিসই তো,তোকে ছাড়া আজাদ গ্রুপ অচল।

আয়ান ভাইয়া খানিকটা হাসলেন।বললেন,

-অচল?এটা বাড়াবাড়ি বললি না তুই?

-তোকে নিয়ে যাই বলবো কম পরবে।শুদ্ধর কাছে আয়ান কে‌ নিয়ে বলার শেষ নেই।এন্ড ইউ নো দ্যাট!

-হয়েছে হয়েছে!বউকে ফেলে বন্ধুকে নিয়ে পরলি?তোর বউ রাগ না করে ফেলে আবার?এনিওয়েজ!কাল থেকেই চেষ্টা করবো অফিস যাওয়ার।

শুদ্ধ জরিয়ে ধরলেন ওনাকে।আয়ান ভাইয়া আমার দিক তাকিয়ে পিঠে একহাত রাখলেন তার।শুদ্ধকে আরেক ভাইয়া ডাক লাগাতেই উনি চলে গেলেন সেদিকে।আয়ান ভাইয়া যাওয়ার আগে‌ আমার দিকে তাকিয়ে ‌বাকা হেসে বললেন,

-টেক কেয়ার।

মাথা নাড়লাম।উনি বেরিয়েই যাচ্ছিলেন।কিন্তু মাহির সামনে দাড়িয়ে গিয়ে বললেন,

-ইউ টু টেক কেয়ার।

মাহি লাজুক হাসলো।উনি বেরিয়ে গেলেন।সবার সবটাই ঠিক আছে।কিন্তু আয়ান ভাইয়ার ব্যবহার মোটেও সুবিধার লাগছিলো না।ওনার কথাবার্তা,আচরন,গম্ভীরতা কোনোটাই ভালো লাগে নি আমার।শুদ্ধ ওনাকে নিয়ে কতোটা এক্সাইটেড।আর উনি?শুদ্ধকে‌ নিয়ে তার মাঝে আলাদা কোনো উপলব্ধি চোখে পরে নি আমার।তার উপর মাহির বিষয়টাও‌ ভাবাচ্ছে।গাড়িতে শুদ্ধ ড্রাইভ করতে করতে বললেন,

-কি এতো ভাবছিস বলতো তুই সিয়া?

-হুম?কিছু না।

-এক কাজ কর,আমার কাধে মাথা রাখ।বেটার ফিল করবি।

পেছনে তাকালাম।মাহি কানে হেডফোন গুজে জানালায় হাত রেখে মাথা ঠেকিয়ে চোখ‌ বুজে আছে।শুদ্ধর কথামতো তার কাধে মাথা রাখলাম।সত্যিই শান্তি লাগছে।তবুও কেনো জানি না কোথাও কোনো অজানা আশংকা চারপাশ থেকে ঘিরে ধরতে লাগলো আমাকে।কেমন যেনো ভেতরটা ভারী ভারী লাগছে আমার।ভয় হতে লাগলো হঠাৎ করেই।সবটা এভাবেই থাকবে তো?

#চলবে…

#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩১

-কলটা রিসিভ করবেন না শুদ্ধ!প্লিজ ওই কল আপনি রিসিভ করবেন না!!!

শুদ্ধ কপাল কুচকে আমার দিক একটু তাকিয়ে থেকে কলটা রিসিভ করলেন।চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম আমি।রাতটা শুদ্ধর বাহুডোরে কেটেছে,সেই সাথেই যেনো কেটে গেছে মনের সমস্ত ভয়।সকালটাও প্রতিদিনের মতো কপালে তার ঠোটের ছোয়ায় এসেছে।কিন্তু সকাল থেকেই জুটেছে আরেক চিন্তা। আলিফ মৌনতা মিলে পঞ্চাশবারের মতো কল করেছে।রিসিভ করার সাহস হয়নি।ব্রেকফাস্ট শেষে রুমে ঢুকতেই আবারো ফোনটা বেজে উঠলো।আমি এগোনোর আগেই শুদ্ধ পৌছে গেলেন ফোনের কাছে।নাম্বারটা দেখে বললেন,

-ইটস্ মৌনতা!

বারবার মানা করলাম রিসিভ না করতে।শুনলেন না উনি।হ্যালো বলার আগেই ওপাশের কথায় চুপ মেরে গেছেন উনি।চেহারায় অভুতপুর্ব কথা শোনার রিয়্যাকশন স্পষ্ট।কয়েক মিনিট পর তার মুখ থেকে ধীর গলায় বেরোলো,

-হোয়াট দ্যা….

ওটুক আমিই শুনেছি।মৌনতা কোনোকালেই শুনতে পাবে না এখন।সে তো বলতে ব্যস্ত!এভাবে বিয়েটা করে নিয়েছি বলে আমাকে ভেবে নির্ঘাত লঙ্কাকান্ড বাধিয়ে দিয়েছে ফোনের ভেতরেই।শুদ্ধ চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিয়ে একটু জোরে আকুতির স্বরে বললেন,

-উইল ইউ প্লিইইইজ স্টপ ইট মৌনতা?

ফোন কান থেকে নামিয়ে নিলেন উনি।কল কেটে দিয়েছে হয়তো।শুদ্ধ ফোনটার দিকেই হা করে তাকিয়ে।একটা শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে গেলাম।বললাম,

-ক্ কি কি ব্ বলেছে ও?

উনি ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিলেন আমার।বললেন,

-কল রিসিভ করার পর কি কি বলেছে তা বলার মতো না।তবে কল কাটার আগে সুন্দরমতো বললো,
“ইউর নেটওয়ার্ক কভারেজ এরিয়া ডাজ নট এলাও টু কন্টিনিউ দিস কল রাইট নাও।প্লিজ রিট্রাই আ ফিউ মোমেন্টস্ লেটার।থ্যাংক ইউ।টুট টুট টুট!”

আমি ফিক করে হেসে দিলাম।কোনোভাবে কেস খেলে আমিও ওদের সাথে এমনটাই করতাম।শুদ্ধর কথা মনে পরতেই হাসি থেমে গেলো আমার।তারদিকে তাকিয়ে দেখি সুক্ষ্মচোখে উনি হাসতে দেখছেন আমাকে।মেকি হাসি দিয়ে বললাম,

-ইয়ে,কল রিসিভ করার পর যা যা বলেছে ওগুলো আ্ আমাকে ভেবে বলেছে।সো,আ্ আপনি কিছু মনে….

শুদ্ধ মাথা নাড়তে নাড়তে বেডে রাখা ব্যাগটা হাতে নিলেন।অফিসের জন্য বেরোতে যাবেন,কি মনে করে আবারো সামনে এসে দাড়ালেন আমার।বললেন,

-তোর জন্য মৌনতা এতোগুলো কথা শোনালো আমাকে!

-ওগুলো তো আমাকে বলেছে!

-শুনতে তো আমাকে হয়েছে!

মাথা‌ নিচু করে আস্তে করে বললাম,

-সরি।

-সকালবেলায় রেগুলার মর্নিং কিস আদায় করে নিতে এক্সপার্ট মিসেস ডট ডট ডট?আপনার সরি দিয়ে আমার পোষাবে না!

ভ্রুকুচকে তাকালাম।শুদ্ধ হাতের ব্যাগটা বিছানায় রেখে দুহাতে কোমড় শক্ত করে চেপে ধরলেন আমার।কড়া গলায় বললেন,

-শাস্তি হিসেবে আজকে একটা স্পেশাল কিস হজম করতে হবে আপনাকে!

চোখ‌ বড়বড় হয়ে গেলো আমার।বললাম,

-কি?

শুদ্ধ একটা ডেভিল হাসি দিলেন।আশেপাশে তাকালাম।শুদ্ধ সুন্দরমতো এগোতে লাগলেন তার মুখ।চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।হার্টবিট দ্রুত চলতে লাগলো আমার।হাত পা কাপছে।এরমধ্যেই,

-ইনসিয়া ভাবিইইইইই!

চোখ মেললাম আমি।শুদ্ধ আরো শক্ত করে চেপে ধরলেন আমার কোমড়,যেনো কিছু কানেই যায়নি তার।চোখজোড়া বরং বলছে,আজ এই ডাক কোনোমতে তাকে থামাতে পারবে না।কোনোমতে গলা‌ দিয়ে বেরোলো,

-মাহি….

-দরজা লকড্!আসবে না ও!আর কিছু?

-আ্ আমি….

উনি ওভাবে আমাকে ধরে রেখেই‌ বললেন,

-এক পা নড়লে আজ মাহিকে‌ আজাদ ম্যানশন থেকে‌ বের করে‌ দেবো!

চোখ‌ বন্ধ করে ওভাবেই রইলাম।শুদ্ধ আস্তেধীরে কোমড় ছেড়ে দু গাল ধরলেন আমার।নাক লাগিয়ে আমার গালে ঘষতে লাগলেন উনি।কেপে উঠে জামা খামচে ধরলাম।উনি আলতোভাবে মাথা তুলে ধরে ঠোট ছোয়ালেন আমার থুতনিতে।ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,

-দিস ডট সাইন!

এটুক বলেই উনি ছেড়ে দিলেন আমাকে।চোখ খুলে দম আটকে দু সেকেন্ড দাড়িয়ে রইলাম।শুদ্ধর সেই বাকা হাসি!একছুটে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে।দরজায় মাহিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে‌ দেখলাম।ওর রুমেই এসে খাটে হাটু জরিয়ে বসে পরলাম আমি।কান গরম হয়ে গেছে আমার।মাহি রুমে ঢুকে বললো,

-কি হয়েছে ইনসিয়া ভাবি?এভাবে লাল হয়ে যাচ্ছো কেনো?গরম লাগছে?

কি বলবো ওকে?লজ্জা?লজ্জায় আমি এভাবে…ছিঃএটা মাহির চোখে পরছে?তাহলে তো শুদ্ধও দেখেছেন!দুহাতে মুখ ঢেকে নিতে গিয়েও থেমে গেলাম।কোনোমতে নিজেকে সামলে গলা ঝেড়ে বললাম,

-ক্ কই?কিছু না তো!

-আর ইউ‌ শিওর?অবশ্য তোমার খবর তুমি বলতে পারবে না।ওয়েট!শুদ্ধ ভাইয়াকে জিজ্ঞাসা করি।শুদ্…..

উঠে দাড়িয়ে ওর মুখ চেপে ধরে বললাম,

-আরে আরে করছো টা কি?

-সিয়া?আসছি আমি!

শুদ্ধর গলা।অফিসের জন্য বেরোচ্ছেন।আগে উনি যাক,তারপর এই রুম থেকে বেরোবো আমি।মাহির কথা যদি সত্যি হয় তবে এই লাল মুখ‌চেহারা নিয়ে তার সামনে যাওয়া অসম্ভব আমার।একেবারে ইম্পসিবল যাকে বলে!

__________

বইয়ের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছি।শুদ্ধ বেরিয়েছেন দশ মিনিটও‌ হয়নি।রুমে এসে বেডে চিরকুট পেলাম।তাতে লেখা,
“লক্ষ্মী বউয়ের মতো লিস্টের টপিকগুলো পড়ে কমপ্লিট করে রাখবি।নইলে আমার শাস্তির ডেমো সবেমাত্র পেয়েছিস তুই!”
টেবিলে তাকালাম।মনে হচ্ছে বইগুলো চেচিয়ে বলছে,তোর আমাদের স্পর্শ করার কোনো অধিকার নেই!দুরে থাক!যতই চেষ্টা করিস,কোনোদিনও তুই আমাদের মন পাবি না!একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।এরমধ্যে ফোনটা বেজে উঠলো।মৌনতা!ফোন রিসিভ করতেই,

-সরি,সরি,সরি,সরি…….

কান থেকে নামিয়ে নিলাম ফোনটা।দশ সেকেন্ড পর কানে নিয়েও,ওর সেই সরি।জোরে শ্বাস ফেলে বললাম,

-এবার থাম!

-ইনসু,আমি কিন্তু শুদ্ধ ভাইয়াকে….

-হয়েছে।আর বলতে হবে না।

-ইনসু,আমি….

-ন্যাকামো থামাবি?

-আমি ন্যাকামো করি?

-মনু!প্লিজ ইয়ার।এই টপিক ছাড়!শুদ্ধকে বলেছি আমি।উনি রাগ করেননি তোর উপর।

-রিয়েলি?গ্রেট!তবে তুই এটা কি করলি‌ বলতো?এভাবে বিয়ে….

এইরে!আবার ওই কথা!শক্তভাবে বললাম,

-আলিফের মতো বিয়ের ভোজনের ভজন শুরু‌ করিস না ইয়ার!রাগটা কিন্তু পুরোপুরি কমেনি তোর উপর আমার!

ডাহা মিথ্যে কথা বললাম।মনেমনে এক চিমটি ভালোবাসা।তোর কথার জন্যই শুদ্ধ তখন…..গলা ঝেড়ে বললাম,

-আছিস?

-হুম।আচ্ছা,ইনসু শোন!আমি এমন একটা কথা বলবো না এখন,তোর রাগ উড়ে যাবে একদম!

-কি এমন কথা?

-বলছি।আগে বল তুই বসে?নাকি দাড়িয়ে?

-কেনো?

-দাড়িয়ে থাকলে জলদি কোথাও বসে পর!কারন আমি তোকে এমন নিউজ দেবো না,তুই লাফিয়ে উঠবি একদম!পরে যাবি!

-হেয়ালি না করে বলনা কি?

-ইনসুউউউউ,ইউএসের যে ভার্সিটিতে তুই এপ্লাই করতে চেয়েছিলি,কালই ওটার এডমিশন এপ্লিকেশন শুরু হয়েছে!এন্ড গেইস হোয়াট?ফরেইনারদের জন্য লাস্ট ডেট ফিক্সড্ করেছে আগামী মাসের বারো তারিখ।আর নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু তিনমাস পর থেকেই!

চোখ‌ চকচক করে উঠলো আমার।বসা থেকে দাড়িয়ে গেছি আমি।কিন্তু পরমুহুর্তেই টেবিলে থাকা শুদ্ধর ছবিটায় চোখ পরতে সামলে নিলাম নিজেকে।শুদ্ধকে পেয়ে আমি পরিপুর্ন!এটুক ভেবেই হাসি টানলাম‌ ঠোটে।মৌনতা বললো,

-কিরে?কেমন দিলাম?এবার এটা বলিস না তুই আগেই দেখেছিস এটা।কজ আমি জানি,তুই দেখলে অবশ্যই আমাকে বলতি।আফটার অল তোর লাইফের মটো….

মৃদ্যু হেসে বললাম,

-আমি এপ্লাই করছি না মনু।

-হোয়্…ওয়েট!মজা করিস না ইনসু!আমি সত্যি বলছি!সত্যিই এডমিশন এপ্লাই শুরু হয়েছে!

-আমিও সিরিয়াস!আমার সত্যিই ফরেইন‌ ডিগ্রির কোনো ইচ্ছে নেই আর।

-কি‌ বলছিস টা কি তুই‌ ইনসু?

-ঠিকই বলছি মনু।চাইনা‌ ইউএস যেতে।চাইনা ওখানে পড়তে।আমি সারাটা জীবন শুদ্ধের কাছে,ওনার ছায়া হয়ে থাকতে চাই।পড়াশোনাটা তো এখান থেকেও করতে পারবো!কিন্তু তাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না!ওনাকে ছাড়া নিজেকে‌ কল্পনা করতে পারি না আমি মনু!আমি মর্….

-ওকে ওকে রিল্যাক্স!রিল্যাক্স ইনসু!এটা টোটালি তোর ডিসিশন!কেউ জোর করছে না তোকে।কিন্তু এটা তোর স্বপ্ন রাইট?তুই শুদ্ধ ভাইয়াকে বল যে…

-না না!ওনাকে বলা যাবে না কোনোভাবে!

-কেনো?রাগ করবেন ভাইয়া?মানা…

-কি বলছিস তুই মনু?উনি কখনো মানা করবেন‌ না আমাকে।উল্টো যদি কোনোভাবে জানতে পারলে সবরকমের ব্যবস্থা করে জোর করেই আমাকে ওদেশে পাঠিয়ে দেবেন মনু!কিন্তু আমি ওনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না!ওনাকে….

-তো ভাইয়াও যাবে তোর সাথে!এতে…

-না।আম্মু,মানে শুদ্ধর আম্মু ওনাকে ছাড়া থাকতে পারে না।তেমনটা শুদ্ধও।আমি আমার জন্য তাদের…তাছাড়া আমার আব্বুও শুদ্ধকে নিয়ে…

-আঙ্কেল?

-ও কিছু না।শোন মনু!তুই‌ এ বিষয়ে আর কোনোদিন কারো সাথে কথা বলবি না।কারো সাথেই‌ না!

-বাট….

-এ নিয়ে কথা বললে আমাদের বন্ধুত্ব এখানেই শেষ মনু!আমিও আজই যীনাত আপুসহ বাসার বাকি সবাইকে‌ও বলে দেবো!এই কথাটা কোনোভাবেই যেনো শুদ্ধর কানে না যায়!আমি সবটা হারাতে রাজি,ওনাকে নয়!

মৌনতা কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

-ইনসু?তুই‌ ভালোবাসিস শুদ্ধ‌ ভাইয়াকে!

আমিও একটু থেমে গেলাম।ও‌ আবারো বললো,

-তোর কথায় স্পষ্ট ইনসু!তুই‌ শুদ্ধ ভাইয়াকে ভালোবাসিস!তার জন্য সব ছাড়তে পারিস তুই!

চোখ বন্ধ করে একটা জোরে শ্বাস নিলাম।সত্যিই তাই।তার জন্য সবটা ছাড়তে শুরু করেছি আমি।

-ইনসু?ভালোবাসিস তুই ভাইয়াকে!

-হ্যাঁ।ভালোবাসি তাকে।খুব ভালোবাসি।

-কখনো বলেছিস?

….

-কি হলো?কথা‌ বলছিস না কেনো?কখনো বলেছিস?

-উহুম।

-হোয়াট?তোর মনে হয় না ইনসু এতে ভাইয়া ঠিক কতোটা কষ্ট পাচ্ছেন?এই একটা কথা তোদের রিলেশনটাকে আরো সুন্দর করে তুলতে পারে ইনসু!কেনো শুধুশুধু তাকে অপেক্ষায় রেখেছিস বলতো?

-মনু,সে আমাকে সে সুযোগ্….

-বাহানা‌ দিস না ইনসু!যদি ভালোবাসিস,তবে বাহনাকে কেনো সুযোগ দিচ্ছিস তোদের মাঝে দুরুত্ব এটে দিতে?

-মনু….

-কি?কি বলবি তুই আর?সত্যি করে বল তো!অস্বীকার করতে পারবি,এই ভালোবাসি না বলা কথার ভাজে তোদের মধ্যে দুরুত্ব তৈরী হচ্ছে না?

-জানি না আমি মনু।উনি….

-আর কোনো কথা না ইনসু!ওনাকে কেনো একপক্ষ করে দিচ্ছিস তুই বলতো?বর উনি তোর!তুই বউ ওনার!

….

-লিসেন ইনসু?তুই আজই‌ শুদ্ধ ভাইয়াকে বলবি,তুই তাকে‌ ভালোবাসিস!নইলে…নইলে আমি ভাইয়াকে তোর স্টাডিপ্লান‌ নিয়ে সবটা বলতে বাধ্য হবো!এন্ড ইয়েস!আ’ম সিরিয়াস!

ও‌ ফোনটা কেটে দিলো।চুপচাপ‌ সবটা ভাবতে লাগলাম আমি।ভুলটা কি‌ বলেছে ও?ঠিকই‌ তো!শুদ্ধ আমার বর!আমি বউ‌ হই ওনার!উনি আমাকে‌ ভালোবাসেন!প্রতিমুহুর্তে তার ভালোবাসার উপমায় রাঙাচ্ছেন উনি আমাকে।আর আমি?কেনো বেধে রেখেছি নিজেকে?কেনোই বা নিজের অনুভুতিগুলো প্রকাশ করছি না শুদ্ধর কাছে?কি কারনে?আব্বু?তাকে,তার মেনে নেওয়াকে তো শুদ্ধ পরিস্থিতির উপর বিবেচনায় রেখেছেন।তবে আমাদের ভালোবাসা কেনো সে পরিস্থিতির স্বীকার হবে?আমাদের দুজনের অনুভূতি কেনো আড়ালে রবে?কেনো?

না!কোনো মানে হয় না এর!আর এভাবে থাকতে পারবো না আমি।নাইবা শুদ্ধকে এভাবে আমার অনুভুতির আড়ালে রাখতে পারবো।যা হবার হবে!আজ শুদ্ধকে বলবো,আমিও তাকে ভালোবাসি!তার শ্যামাপাখিও তাকে ভালোবাসে!আজ চিৎকার করে বলবো আপনাকে শুদ্ধ,খুব ভালোবাসি আপনাকে!খুব ভালোবাসি!

#চলবে….