তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-১২

0
884

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫

লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

পর্বঃ12

ভার্সিটির গেট দিয়ে হাসি মুখে অন্যা আর অহনার সাথে কথা বলতে বলতে প্রবেশ করছে আফরিন। আদিত্য,, আহান আর কৌশাল বাইকে বসে গাছের নিচে আড্ডা দিচ্ছিল। আফরিনকে দেখা মাত্রই আদিত্য বাইকে থেকে নেমে আসে। আফরিনের অপেক্ষায় ছিল। আদিত্য আফরিনের দিকে আগালে আফরিন অন্যদিকে হাঁটতে লাগে। বিষয়টা খুবই স্বাভাবিক ভাবে নেয় আদিত্য। অহনা বলে

—– কিরে কি হলো? আফরিন বলে

—- কিছুনা এমনি। তখনই অন্যা বলে

—- এমনি না আদিত্য ভাইয়াকে দেখে এখানে আসছে। আচ্ছা আমিতো আদিত্য ভাইয়ার কোনো ভুল দেখছি না এখানে। আমরা সবাই জানি আদিত্য ভাইয়া বেপরোয়া,, কারো ধার ধারে না। আর আমরা যদি তখন সত্যিটা বলে দিতাম হয়তো এমনটা হতো না। আফরিন একটা ক্লান্ত মাখা হাসি দিয়ে বলে

—- হ্যারে হয়তো হতো না। আর ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দিব উল্টো আমি সারপ্রাইজ হয়ে গিয়েছি। বাদদে এইসব৷ যা হওয়ার হয়ে গেছে। অহনা বলে

—- তো এখন কি করবি? আফরিন চোখবুঁজে বলে

—- কি আর করব? এইসব নাকট বাদ দিয়ে পড়ায় মনযোগ দিব। আর সেও নিজের মতো থাক। আচ্ছা চল লাইব্রেরীতে যাওয়া যাক। অহনা বলে

—- তুই যা আমি আর অন্যা,, ভাইয়া আর আহানের সাথে দেখা করে আসি কেমন? আফরিন বলে

—- এই বার বিয়ে করেনে। আমি যাচ্ছি তাড়াতাড়ি আসবি কিন্তু। বলেই চলে যায় লাইব্রেরীর দিকে। অহনা ফোন বের করে আহানকে কল দেয়। ২টা রিং হওয়ার পরই কল রিসিভ করে আহান। অহনা বলে

—- আদিত্য ভাইয়াকে বলো আফরিন এখন লাইব্রেরীতে গিয়েছে। জলদি আদিত্য ভাইয়াকে বলো,, আর তোমরা কোথায়। আহান বলে

—- আমরাও লাইব্রেরীর দিকে যাচ্ছি যাতে কেউ ভিতরে না যেতে পারে। তোমারা আসো। অহনা বলে

— আচ্ছা। অন্যা চল যেতে হবে। অন্যাও উঠে দাড়ায়। আফরিন লাইব্রেরীতে যেয়ে দেখে তেমন কেউ নেই খুব কম ছাত্র ছাত্রী হাতে গুনা ৩/৪ জন। আফরিন টেবিলে নিজের ব্যাগটা রেখে বই খুঁজতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর আফরিন তার সেই কাঙ্ক্ষিত বইটা পেয়ে যেই না ঘুরতে যাবে কারো সাথে ধাক্কা লাগে। তার গায়ে থেকে আসা ঘ্রাণ টা আফরিনের চেনা এটা আর কেউ না আদিত্য। আফরিন জানে এতে তার কোনো ভুল নেই। তাও সে বলে

—- সরি দেখতে পায়নি। একটু সাইড দিলে ভালো হতো। আদিত্য আফরিনের আরো কাছে চলে আসে। আফরিনের হার্ট যেভাবে বিট করছে মনে হয় ছিটকে বেরিয়ে আসবে। আফরিন আদিত্যকে হাত দিয়ে সরাতে চাইলে আদিত্য আফরিনের হাতটা ধরে ফেলে। আফরিনকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে স্লো কন্ঠে বলে

—- আমার ধারণার বাইরে ছিল কালকে তুমি পার্টিতে যাবে। বিশ্বাস কর অসম্ভব সুন্দর লাগছিল তোমাকে। কিন্তু সকালের ব্যাপারটা সব মাটি করে দিয়েছে। তোমরা যদি আগেই সত্যিটা বলে দিতে এমনটা কখনোই হতো না। আচ্ছা আফরিন তোমার কাছে একটা প্রশ্ন তুমি তো সাইকোটার জন্য ফিল করতে আবার আদিত্যর জন্য মানে বুঝলাম না। আফরিন নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে

—- মানুষ দুইটা একই ছিল তাই গুলিয়ে ফেলতাম,, অনুভূতি গুলো একজনের জন্যই সুপ্ত ছিল কিন্তু তার কাছে এইসব নাটক। আর কেউ দেখে ফেলবে ছাড়ুন। আদিত্য আফরিনকে আরেকটু নিজের সাথে চেপে ধরে বলে

—- দেখুক,, আমার কিছু যায় আসে না। কালকের জন্য আমি সরি বলবো না যদি সকালে সত্যিটা বলে দিতে এমনটা হতো না। আফরিন মুচড়াতে মুচড়াতে বলে

—- ডেকে ছিলাম সাড়া দেয় নি কেউ আমার ডাকে। এখন এইসব না ভাবাই ভালো। আর আপনার কিছু যায় না আসলেও আমার যায় আসে। ছাড়তে বলেছি। আদিত্যর কোনো হেল দুল নেই,, আদিত্য আগের নেয় দাড়িয়ে বলে

—- এমন সাপের মতো ছটফট করছো কেন? লাইব্রেরীতে তুমি আমি ছাড়া কেউ নেই। তাই প্যারা না নিয়ে চলো গল্প করি। আফরিন রেগে এবার আদিত্যর পায়ে খুব জোড়ে নিজের পা রাখে। আদিত্য আফরিনের এমন আক্রমণে অনেকটা অপ্রস্তুত ছিল,, তাই আফরিনকে ছেড়ে দেয়। আফরিন তাড়াতাড়ি লাইব্রেরীর দরজার দিকে যায় দরজা বাইরে থেকে লক করা। আদিত্য গিয়ে বসে আফরিনের ব্যাগ যেখানে রাখা সেখানে। আফরিন দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে,বলে

—- হেল্প কেউ দরজাটা খুলো। আহান দরজার ঐপাশ থেকে বলে

—- কেন ভাবী? রাগ অভিমান ভাঙ্গেনী? আফরিন রেগে গিয়ে বলে

—- আহান ভাইয়া দরজা খুলো নয়তো দেখো,অহনার কানে তোমার নামে উল্টো পাল্টা বিষ ঢেলে দিব। অহনা বলে

—- ইশশশশশশ,, আমি আমার হবু হাসবেন্ডকে সেই বিশ্বাস করি। কাজ হবে না। আফরিন অবাক হয়ে বলে

—- অহু তুইও? অন্যা কোথায়? অন্যা বলে

—- বাদামের খুশা ছাড়িয়ে তোর কৌশাল ভাইয়াকে খাওয়াচ্ছি! তুই খাবি? আফরিন রেগে বলে

—- দরজা খুলতে বলছি। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। আফরিন সামনে ঘুরতেই দেখে আদিত্য তার ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে। আফরিন বরাবরই ফোনে লক দেয় না। অনুর জন্য অনু প্রায় গেমস কার্টুনস দেখে সাথে আফরিনও তাল মিলায়। আফরিন গিয়ে আদিত্যর হাত থেকে নিজের ফোন নিতে চাইলে আদিত্য আফরিনকে বোকা বানিয়ে আরেক হাতে নিয়ে যায়। আফরিন বলে

—- ভালো হচ্ছে না। আদিত্য বলে দেখ এনার্জি লোস করে কি লাভ। বলেই দাঁড়িয়ে যায়। আফরিনের ফোন এখন তার হাতের নাগালের বাইরে কারণ সে আদিত্যর থেকে অনেক খাটো। আদিত্য বলে

—- চুপচাপ বসো। আর আফরিনের ফোন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে যায়। প্রায় ২০ মিনিট পর আদিত্য বলে

—- এই নাও,,, আইডির পাসওয়ার্ড চেন্ঞ্জ করে দিয়েছি। প্রোপাইল পিকে তোমাদের মেয়েদের এনিমেশন পিক। আর ছেলে আমি কৌশাল, তোমার ভাই আর আহানকে বাদে সব আনফ্রেন্ড। প্রোফাইলে যেন আর তোমার পিক,না দেখি। পাসওয়ার্ড চেন্ঞ্জ করতে চাইলে খবর আছে। রাতে কল দিব,, প্রথম রিংতেই রিসিভ হওয়া চাই। আফরিন বলে

—- মামা বাড়ির আবদার? আদিত্য নিচু হয়ে আফরিনের গাল টেনে বলে

— না বাবু শশুড় বাড়ীর আবদার। আফরিন বলে

—- বললেই হলো পারবো না আমি আমার পড়া আছে৷ আদিত্য ঠোঁট কামড়ে হাসি দিয়ে বলে

—- আসোতা না আমার কমড় অব্দি কিন্তু,, চড়ে বসে থাকো মাথায়। আফরিন বলে

— ফালতু পেচাল বাদ দিয়ে দরজাটা খুলতে বলুন আমার ক্লাস আছে। আদিত্য বলে

—- না চলো আজকে তোমার সাথে আমিও ফালতু পেচাল পারবো। আফরিন বলে

—- ভালো লাগছে না!! কেন এমনটা করছেন? আদিত্য বলে

—- তুমি জানো তাও কেন প্রশ্ন করছ? আফরিন বলে

—- আমি জানি না আর জানতে চাইও না। আদিত্য রেগে পাশে থাকা চেয়ার টায় লাথি মারে আর সেটা সাথে সাথে পরে যায়। আফরিনের এবার ভয় লাগতে শুরু হয়েছে। তখনি সাথে সাথে দরজা খুলে ভিতরে আসে আহান ওরা। আহান অহনা ওরা মজা করছিল তখনই খুব জোড়ে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পায় আর সাথে সাথে লাইব্রেরীতে প্রবেশ করে। অহনা দেখে আফরিন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। আদিত্য বলে

—- তাহলে কালকে এইসবের মানে কি? সেগুলো নাটকই ছিল? আফরিন রেগে বলে

—– হ্যা নাটক ছিল,, সব নাটক ছিল। খুশি। এরপর এই ব্যাপার নিয়ে কোনো প্রশ্ন আর আপনার থাকবে না আশা করি। বলেই ব্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে যায়। সাথে অহনা আর অন্যাও। আহান বলে

—- আদিত্য রাগের মাথায় আবার সব কিছু শেষ করে দিলি। আদিত্য বাঁকা হাসি দিয়ে বলে

—- সবে তো শুরু এখন থেকে শুরু হবে অত্যাচার আফরিন বেইবি রেডি থাকো।

চলবে।