তুই তারারে ভিনদেশী পর্ব-১১

0
670

গল্পের নামঃ- #তুই_তারারে_ভিনদেশী❣️💫

লেখিকাঃ- konika islam (sanju)

পর্বঃ11

৮ টার দিকে ভার্সিটি পৌঁছে সে নিজের মতো নোট করতে লাগে আফরিন। এক কাপ কফি হলে মন্দ হয় না। তাই লাইব্রেরি থেকে বেড়িয়ে আসে কেন্টিনে যাবে। কিন্তু আফরিন মাঠের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। পরপর ১২টা বাইক ভার্সিটিতে প্রবেশ করে। কিন্তু আফরিনের নজর মুখে রুমাল বাঁধা ছেলেটার দিকে। সাথে কৌশাল , আহান। এর মানে এটা আহানদের গ্রুপ। রুমাল পরা ছেলেটা নিজের রুমালটা…..খুলে ফেলে,,,, আফরিন নিজ চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না। আদিত্য!!! তাহলে সেই সাইকোটা আদিত্য!? আদিত্যর নজর লাইব্রেরীর দিকে পরতেই আতকে উঠে। আফরিন তাও এত সকালে!!! আর তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আদিত্যর দৃষ্টি অনুসরণ করে সবাই ঐদিকে তাকায়,, দেখে আফরিন ।আদিত্যকে দেখে আফরিন ভরকে লাইব্রেরীতে চলে যায়। কৌশাল আদিত্যর কাঁধে হাত রেখে বলে

—- এখন কি হবে? আদিত্য বলে

—- যেটা হওয়ার সেটাই হবে। আহান বলে

—- ব্যাপারটা,, কেমন হয়েগলো না? আদিত্য বলে

—তোররা থাক আমি আসছি। আদিত্য দৌড়ে লাইব্রেরীর দিকে যেতে লাগে,,, আদিত্য দেখে আফরিন ব্যাগ নিয়ে নিচে নামছে। আদিত্যকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়। আদিত্যও আফরিনের পিছন পিছন যায়। আফরিনের কেনো জানি রাগ হচ্ছে সেটা তার অজানা। আদিত্য বলে

—– আফরিন আমার কথা টাতো শুনো। আফরিন। আফরিন নিজের মতো হাটতে লাগে। আদিত্য বলে

—- আমি থামতে বলেছি।আফরিন বলে

—- আপনি যদি আমার পিছু না ছাড়েন। আমি এই ভার্সিটি ছাড়বো।। এই বলে আফরিন চুপচাপ গিয়ে বসে পরে লেকের পারে। তার একটুপর একজন গিয়ে বসে পরে তার সাথে । কৌশাল আফরিনের দিকে তাকিয়ে বলে

—- আমার দিকে একটু তাকাও। আফরিনের দৃষ্টি পানির দিকে। কৌশাল একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে

—- এই ভয়টার জন্যই তোমার কাছে নিজের আসল রূপে আসেনি আদিত্য । ভার্সিটিতে যেদিন তুমি গুটি পায়ে প্রথম প্রেবশ কর তোমার উপর প্রথম নজর আদিত্যরই যায়। অহনাকে সাথে দেখায় আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল কে এটা? আমি বলেছিলাম অন্যা আর অহানর বেস্ট ফ্রেন্ড তুমি। সেদিন সবার রেগিং করলেও তোমাদের রেগিং নেওয়া হয়নি কারণ আদিত্য সাফ সাফ বলে দিয়েছিল তোমাদের রেগিং হবে না। জানো তোমাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে,, তোমার উপর পানিটা আদি ইচ্ছে করেই ফেলেছিল । যাতে তুমি বাসায় চলে যাও কারণ অনেক ছেলেরাই তোমাকে নিয়ে কথা বলছিল। তুমি তো আদিত্যকে দেখলেই পালাতে। আচ্ছা বলোতো আমরা আমাদের ক্লাস ফেলে তোমাদের ক্লাসের বাইরে কি করি? জাস্ট তোমাকে এক ঝলক দেখার জন্য আমদের নিয়ে যেত। তুমি জানো যেদিন তোমাকে পানিসমেন্ট দিতে গিয়ে নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছিল সেদিন আদিত্যর অবস্থা ছিল একটা পাগলের মতো। সেদিন প্রথম আমি আদিত্যকে এতটা ভয় পেতে দেখেছি। যেখানে ভার্সিটির সব মেয়েরা আদিত্যর কাছে ঘেষতে ভয় পায় সেখানে তুৃমি সাহস দেখিয়ে তাকে প্রপোজ কর তাও ডেয়ার এর জন্য। আদিত্যর এক্সিডেন্টটা কিন্তু এক্সিডেন্ট ছিল না। তা ছিল একটা নিজেকে শাস্তি দেওয়ার কৌশল। তোমার জন্য আদিত্য দুই গেটাবে থাকতো। যাতে তুমি,বুঝতে না পারো। কালকে যে ছাঁদের সারপ্রাইজটা ছিল সেটাও আদিত্যরই ছিল। আমি আদিত্যর চোখে তোমার জন্য দেখেছি এক অবিরাম মধুর মায়া,ভালোবাসা হারানোর ভয়। সেদিন আলফাজকে জানোয়ারের মতো মেরেছে তোমাকে বাসায় দিয়ে আসার পর তুমি যেই ৪দিন ভার্সিটি আসোনি খেয়ে না খেয়ে তোমার বাসার সামনে দাড়িয়ে ছিল । খুব কি ক্ষতি হবে আদিত্য কে নিজের করে নিতে? আফরিন চুপচাপ সব কথা শুনছে। তারপর আফরিন বলে

—– নিজের আসল রূপে আমার সামনে আসেনি। দুনিয়ার সামনে সে আমাকে চিনে না আড়ালে একেমন ভালোবাসা? কৌশাল হাহাহ করে হেসে দেয় আফরিন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে কৌশাল বলে

—– সে তো কত আগেই সবার সামনে বলে দিয়েছে। আলফাজের ঐ ঘটনার পর কোনো ছেলে তোমার আশেপাশে অব্দি আসেনি। আর ভাবী বলেছে নিশ্চয়ই? আফরিন আরেক দফা অবাক। কৌশাল বলে

—– সেদিন ভার্সিটির সবার সামনে বলেছিল আফরিন আমার হবু বউ,, ওর দিকে যে চোখ তোলে তাকাবে চোখ তুলে নিব। সবাই ভাবীর চোখে দেখবি। সেটাই যেন আদিত্যার শেষ কথা ছিল। আজকে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ ছিল তাই সব বন্ধুরা সকাল সকাল আসি কিন্তু পরে আমরা নিজেরাই অবাক তোমাকে দেখে। আফরিন এখনো চুপ। কৌশাল বলে

—- চলো। অনেক কথা তো হলো আফরিনও উঠে দাড়ায় সামনে তাকাতেই দেখে আদিত্য অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আফরিনের দিকে। আফরিন সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে চলে যায়।

_________________
এক মাস পর

এক মাস হয়ে গেছে না আদিত্য আফরিনকে আর জ্বালিয়েছে না কোনো রকম ফোন দিয়ে কথা বলেছে। আফরিন কথা বলতে চাইলেও এড়িয়ে চলেছে। এই এক মাসে আফরিন বুঝতে পেরেছে সে আদিত্য নেশায় কতটা নেশাগ্রস্ত,,, অহনা আর অন্যাও এখন কেমন যেন হয়েগিয়েছে। আজ আদিত্যর বার্থডে। সবাই যার যার মতো শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। তখনই কৌশাল বলে।

—- আদিত্য তোর জন্য ছাঁদে কিছু অপেক্ষা করছে।

অহনা, আফরিন আর অন্য মিলে একটা ছোট সারপ্রাইজ প্লান করছে। সাথে আছে শাওয়ান ও । শাওয়ানের সাথে আফরিনের যত ঝগড়া লাগুক না কেন বোনের খুশিতেই সে খুশি। আফরিন বলছে

—- ভাইয়া আমি প্রপোজ করব কি ভাবে? তুই তো ছেলে আর ইকরা ভাবীকে তো তুই প্রপোজ করেছিলি। একটু দেখা না!!! অহনা বলে

—- হ্যা ভাইয়া সমস্যা নেই তুমি দেখাও কারণ তোমাদের ছেলেদের এই সবে দক্ষতা বেশি। শাওয়ান বলে

—- নিজের বোন কেমন দেখায় না? আফরিন বলে

—- নাটক কম কর,আর তোর বোনকে করবি না তো অন্য কোনো মেয়েকে করবি দিব এক চড় । শাওয়ান৷ বলে

—আচ্ছা ঠিক আছে বলেই হাটু গেড়ে বসে বলে

—-এইভাবে বসে বলবি আই লাভ ইউ। আফরিন খুশি হয়ে ফুলটা হাতে নেয় আর দরজার দিকে তাকাতেই থমকে যায় দেখে আদিত্য দাড়িয়ে চোখমুখ লাল হয়ে। আছে আফরিন কিছু বলার আগেই আদিত্য চলে যায়। আফরিন ডাকে বলে

—- আদিত্য কিন্তু না আদিত্য শুনে না। অহনা বলে

—- ভুল বুঝলোনা তো আবার? অন্যা বলে

—- ভুলই বুঝেছে। তখনই কৌশাল আর আহান আসে বলে

—- আদিত্য এভাবে চলে গেলো কেন। পরে আহান বলে

—- আফরিন তুমিতো আগেই একবার প্রপোজ করেছিলে ডেয়ারের জন্য আজকে আবার এটার কি দরকার ছিল। আফরিন বলে

—– বাদ দাও রাতে তো আদিত্যর বার্থডে পার্টি সেখানে সবার সামনে না হয় বলে দিব। এখন লাড সাহেব রেগে থাকুক। সবাই একসাথে হেসে দেয়।

___________

আফরিন একটা কালো গাউন পরেছে সাথে হিজাব আর হালকা সাজ। হাতে একগুচ্ছ কালো গোলাপ। পার্টিতে গিয়ে দেখে একরকম সবাই এসেছে আদিত্য ড্রিংকস হাতে দাড়িয়ে আছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে আদিত্য কে সম্পূর্ণ ফরলাম লুক।আদিত্যর নজর আফরিনের উপর পরতেই থমকে যায় । কিন্তু তখনই সকালের কথা মনে পরে যায়। এটা ফেন্ডদের পার্টি হওয়ায় বাসার কেউ এখানে উপস্থিত নেই। আফরিনের সাথে শাওয়ানও এসেছে কিন্তু সে বাইরে দাড়িয়ে ইকরার সাথে কথা বলছে। আফরিন একটা হাসি দিয়ে আদিত্যর দিকে এগিয়ে আসে আর নিচে বসে ফুলগুলো এগিয়ে দেয় আর বলে

—- সবাইতো লালগোলাপ দিয়ে নিজের অনুভূতি গুলোকে জানায় আমি না হয় কালো গোলাপ দিয়ে জানাই। কারণ কালোতে অন্য রঙ মিশালেও সেটা বদলায় না। সবাই তো হাত তালি দিচ্ছে। আদিত্য বাঁকা হাসি দিয়ে ফুলের তোড়াটা তুলে নিল আফরিন হাসি মুখে উঠে দাড়ায় আর সাথে সাথে আদিত্য ফুলগুলো ছুড়ে মারে নিচে। মুহূর্তেই পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়। আদিত্যর হাতে থাকা ড্রিংকসটা ছুড়ে মারলো আফরিনের মুখে। উপস্থিত সবাই অবাক। কৌশাল বলে

—- আদিত্য কি হচ্ছে টাকি? আদিত্য রেগে চিৎকার করে বলে

—– সবাই চুপ। আমি বলছি। আজ সকালে যখন তুই আমাকে ছাঁদে যেতে বলিস তখন গিয়ে দেখি আরেকটা ছেলে ওকে প্রপোজ করছ আর সে হাসে মুখে সেটা নিয়ে নেয়। আমিও মেনে নিয়ে চলে আসি। তাহলে, এখন এই নাটকের মানে কি? এখানে কে আসতে বলেছে? আমার অনুভূতিগুলোকে বুঝতে চায়নি ওকে ফাইন। কিন্তু এখন এইসব নাটকের মানে কি? আর তোমাকে কে ইনভাইটেশন দিয়েছে এখানে আসতে? আমি বলেছি? আফরিন আর পারে না এত অপমান সে লাইফে হয়নি। কান্না করতে করতে শুধু এইটুকু বলেছিল

—– আই এম সরি। আর দৌড়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল সেখান থেকে। অহনা আর অন্যাও তার পিছু নিয়ে ছিল। কৌশাল গিয়ে আদিত্যকে একটা চড় লাগায় আর বলে

—- এতো না বলিস ভালেবাসি তাহলে বিশ্বাস নেই কেন? সেটা কি ছিল তুই জানিস? আদিত্য কৌশালকে ধাক্কা দিয়ে বলে

—- জানার প্রয়োজন নেই। আহান কৌশালকে তুলতে তুলতে বললো

—- সেটা আফরিনের ভাই ছিল। তোদের হেল্প করতে এসেছিল। আর তুই আজ কি করলি আদিত্য। আদিত্যর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছিল। আদিত্য বলে

—- মানে? কৌশাল গিয়ে বলে

—- হ্যা সেটা আফরিনের ভাই ছিল। পরে সব ঘটনা খুলে বলে। আদিত্য

—-ডেম ইট বলে গ্লাসটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে আর বেড়িয়ে আসে ততক্ষণে আফরিন চলে গিয়েছিল।

চলবে

গল্প নতুন মোর নিয়েছে দেখা যাক কি হয়!! এখান কেউ আদিত্য আদিত্য করবা তো খবর আছে।