মনের আড়ালে পর্ব-২০

0
1244

#মনের_আড়ালে
Part_20
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain

অভিক থামল না আবারো বলে উঠল তাছাড়া আজকে সকালের চুমুর পাল্টা শোধ-ও তো নেওয়া হয়নি ।

ইশমি অভিকের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে বসল

কিসের কথা বলছেন ?

অভিক দুষ্টু হাঁসি দিয়ে বলল আজকে সকালে গাড়ি থেকে নেমে আবার ফিরে এসে যে আমার গালে ধুম করে চুমু খেয়ে যে আমার ঘুম টুম সব হারাম করে নিলে সেটার কথা বলছি ।

ইশমি চোখ বড়বড় করে অবাক হয়ে বলে উঠল অফিসে না খেলেন আবার কিসের শোধ ?

অভিক ঠোটদুটো চেঁপে না বোঝার ভান করে জিজ্ঞেস করল

কি খেয়েছি ?

ইশমি অভিকের প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল সে বলল ঐ যে চ্ চ্ চুমু খেলেন !

অভিক হাঁসিটা চেঁপে রেখে নির্লিপ্তভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল

কবে ? কখন ? তোমার কাছে কোনো প্রমান আছে যে আমি তোমায় চুমু খেয়েছি হুম ? থাকলে প্রমান দাও ।

ইশমি রেগে অভিকের বাহুতে খামচি মেরে বলল মিথ্যুক আপনি একটা তখনি তো খেলেন কোনো শোধ হবে না ।

অভিকও সাথে সাথে ইশমির কমোর খামচি মেরে ধরল ।আর বলে উঠল

আমি তো চুমুর পাল্টা শোধ নিবোই ।

।ইশমি অভিকের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকাল ।অভিক বলল

এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই এখন থেকে যা হবে সব সুদে আসলে আদায় করা হবে ।

ইশমি অভিকের সাথে না পেরে মিনমিনে গলায় বলল মারবো আমি আপনাকে ।

অভিকও কৌতুকের স্বরে বলে উঠল আমিও তোমায় ধরে মারবো ।গাড়িটা একপাশে থামিয়ে দিয়ে তারপর দুজন মারামারি করি চল ।ভালো হবে না ?

ইশমি নাক ফুলিয়ে বিরবির করে বলল খারাপ লোক একটা ।অভিক আলতো করে ইশমির ফুলানো নাকটা টেনে দিল ।
ইশমি চুপটি করে জানালার বাহিরে তাকিয়ে রইল অভিকের সাথে কথায় পারবেনা সে কোনোদিন । উল্টো তাকেই লজ্জায় মেরে ফেলবে ।আকাশ থেকে বৃষ্টির ফোটা পরতে শুরু করে দিয়েছে ।কখন যেন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামতে শুরু করে দেয় !

আরো আধঘন্টা পর অভিক একটা জায়গায় গাড়ি থামাল ।জায়গাটা সম্পূর্ন অচেনা ইশমির কাছে ।অভিক গাড়িটা থামিয়ে দিয়ে ইশমিকে হাত ধরে গাড়ি থেকে নামাল ।কিছুক্ষণ আগেই ঝমঝমিয়ে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামতে শুরু করে দিয়েছে ।অভিক গায়ের ব্লেজারটা খুলে ইশমি মাথায় দিয়ে দিল তারপর ইশমিকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করল ।ইশমি কিছু বলল না সে স্নিগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে অভিকের মুখপানে তাকিয়ে আছে ।বৃষ্টির ফোটাগুলো অভিকের সারামুখে ছুয়ে দিচ্ছে। ফোটাগুলো অভিকের খোঁচা খোঁচা দাড়ি বেয়ে চুয়ে চুয়ে পড়ছে।ইশমির ঘোর লেগে যাচ্ছে অভিক কে দেখে ।অভিক দেখতে এমনিতেই খুব সুন্দর আর এই মুহূর্তে অভিক কে আরো স্নিগ্ধ লাগছে ইশমির কাছে । সে নিজের ওড়নাটা হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতটা অভিকের মাথায় ছাতার মত করে ধরে রাখল ।অভিক কিছু বলল না শুধু মুচকি হাঁসল ।
অভিক একটা বাড়ির সামনে এসে থামল ।ইশমি চারদিকে চোখ বুলিয়ে আশ্চর্য হয়ে গেল তার মুখ দিয়ে আপনা আপনি বের হয়ে গেল খুব সুন্দর ।বিশাল জায়গায় একটা ছোট একতলা বাড়ি তার চারপাশে সব রকমের ফুলের গাছ ।বড় কাঠগোলাপ গাছটা বাড়িটাকে ঘিরে রেখেছে ।এ যেন চারদিকে ফুলের সোমারোহ ।অভিক ইশমিকে নামিয়ে দিল ।ইশমি চারদিকে চোখ বুলাতে লাগল ।এত অপরুপ সৌন্দর্য সে আগে কোনোদিন দেখেনি ।বাড়িটার কিছুটা দূরে একটা ছোট সুইমিংপুল ।ইশমির ভাবনার মাঝেই আচমকা অভিক তাকে পেছন থেকে তার কমোর ঝাপটে ধরে তাকে উপরে তুলে ঘুরাতে লাগল ।ইশমি খিলখিল করে হেঁসে উঠল ।অভিক ইশমিকে কাঠগোলাপ গাছটার নিচে নিয়ে গেল ।সে ইশমিকে একটানে গাছটায় চেঁপে ধরে তার মুখের উপর ঝুকে বলল

কেমন লাগল সারপ্রাইজ টা ?

ইশমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল

খুব খুব খুব সুন্দর ।

অভিক ইশমির শরীরের সাথে আরো ঘেষে তার মুখের উপর আরো ঝুকে ফিসফস করে বলল এবার আমার শোধ নেবার পালা ।অভিক আর একমুহূর্তও দেরি না করে ইশমির আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের আঙ্গুলগুলো গুঁজে নিয়ে অভিক নিজের ঠোটজোড়া ইশমির ঠোটজোড়ায় চেঁপে ধরল ।সে অস্থির হয়ে ইশমির ঠোটজোড়ায় চুমু খেতে লাগল ।ইশমির শীরা দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল ।সে নিজের মনের অজান্তেই অভিকের বাহুদ্বয় আকড়ে ধরল ।তাদের দুজনের মধ্যেই ভয়ংকর দমবন্ধ করা অনুভূতি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আর ঐদিকে আকাশটাও খানিক বাদে বাদে গর্জে উঠছে আর তার অনুভূতির স্পর্শগুলোও তীব্র হচ্ছে ।অভিক একপর্যায় ইশমির কমোর উপরে তুলে তার ঠোটদুটোর নেশায় মত্ত হতে লাগল ।ইশমির চোখে পানি জমে গেছে কিসের জন্য তার জানা নেই ? সে নিজের মুখটা জোড় করে অভিকের থেকে সরিয়ে নিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল

ম্ মা যদি রাজি না হয় ? ইশমি বলতে না বলতেই তার ঠোটে তীক্ষ্ণ মধুর ব্যথা অনুভব করল ।

অভিক ইশমির ঠোটদুটো ছেড়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে বলল

উনাকে রাজি হতেই হবে ।আর উনি রাজি না হলেও আমি কি উনার আশায় বসে থাকবো নাকি ? বলেই ইশমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ইশমিও কাঁপা কাঁপা হাতে অভিক কে জড়িয়ে ধরল ।এভাবে তারা কতক্ষণ দুজন দুজনকে জড়িয়ে ছিল তাদের জানা নেই ।

অভিক ইশমিকে নিয়ে সিড়িবেয়ে উপরে উঠল তারপর পকেট থেকে চাবিটা বের করে তালাখুলে ভেতরে ঢুকল ।
অভিক ইশমিকে নিয়ে সোজা রুমের ভেতরে ঢুকল ।সে ড্রয়ার থেকে তোয়ালে বের করে ইশমির মাথার চুলগুলো মুছে দিল আর নিজের মাথাটাও মুছে নিল ।ইশমি অতোটাও বৃষ্টিতে ভিজে যায়নি কিন্তু অভিক পুরোপুরিভাবে ভিজে গেছে তার পরনে শার্ট আর প্যান্টটা বৃষ্টিতে ভিজে চুবচুবে হয়ে গেছে ।সে ড্রয়ার থেকে তার টিশার্ট আর টাউজারটা বের করে ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আসল ।ইশমি বাড়ির ভেতরে চারপাশটা চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগল ।সে রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দাটায় গেল ।বারান্দাটায় দাঁড়িয়ে বাইরের ভিউটা দেখতে আরো সুন্দর লাগছে ।অভিক পেছন থেকে তাকে ঝাপটে ধরল ।আচমকা এভাবে পেছন থেকে ধরাতে ইশমি একটু চমকে উঠল । অভিক বলে উঠল

এটা আমাদের বাড়ি ।আমরা বিয়ের কদিন পর পর এখানে এসে থাকব ।অভিক মুখটা আরো কাছে নিয়ে ইশমির কানের লতিতে ঠোট ঠেকিয়ে ফিসফিস করে বলল এমনকি আমাদের বাসরটাও এখানেই্ অভিক আর বলতে পারল না ইশমি হাত দিয়ে অভিকের ঠোট চেঁপে ধরল ।অভিক ঠোট কামড়ে হেঁসে ইশমির হাতের তালুতে টুপ করে কতগুলো চুমু খেয়ে নিল আর বলল

এখন আমরা রান্না করবো দুজনে মিলে অভিক ইশমিকে টেনে কিচেনে নিয়ে গেল ।রান্নাবান্নার সবকিছুই আছে এখানে ইশমি চোখবুলিয়ে দেখল তারমানে অভিক আগে থেকেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছিল ।অভিক কিচেনের নিচের তাক থেকে তাকে নুডুলসের প্যাকেট বের করে দিল ।ইশমি ফ্রিজ থেকে সবজি বের করে সবজিগুলো কেঁটে নুডুলস রান্না করছে আর অভিক তাকে সাহায্য করার নামে তাকে উল্টো জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে মারছে আর ইশমিও বিরক্ত হয়ে অভিকের দিকে চোখ গরম করে তাকাচ্ছে একটু পর পর।ইশমি নুডুলস রান্না শেষে দুজনের প্লেটে সার্ভ করে টেবিলে নিয়ে রাখল ।
অভিক ইশমিকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নুডুলস খায়িয়ে দিল আর ইশমিও অভিক কে খায়িয়ে দিল ।খাওয়া শেষ হলে অভিক দুজনের জন্য কফি বানাল ।ইশমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ।অভিক কফির কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে দোলনায় হেলান দিয়ে বসে পরল আর ইশমিকেও টেনে তার কোলে বসিয়ে দিল ।অভিকের এহেন কান্ডে ইশমি একটুও অবাক হল না ।দুজন একই কাপের একই স্থান থেকে কফি চুমুক দিচ্ছে ।
কফি শেষ হলে ইশমি গুটিসুটি মেরে অভিকের বুকে মুখ গুঁজে বসে রইল ।তারা দুজনে একে অপরের গায়ের সাথে লেপ্টে বৃষ্টিবিলাস করছে ।মুষলধারায় এখনো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হচ্ছে ।দু এক ফোটা বৃষ্টির পানি তাদেরকেও ভিজিয়ে দিচ্ছে । ইশমি অভিকের বুকে মুখ গুজে থাকা অবস্থাতেই কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল

মানুষের কপালে নাকি বেশি সুখ সয় না আমার কপালে এত সুখ সইবে তো ?

অভিক বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে বলল

এসব ফালতু কথা । সুখ না সয়ে যাবে কোথায় ?

ইশমি আগের মতই বলল ফালতু কথা না ।আমি শুনেছি মানুষের কপালে নাকি বেশিদিন সুখ সয় না ।আমার ভয় হয় আপনাকে যদি হারিয়ে ফেলি !

অভিক ইশমিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখিয়ে তেজী গলায় বলল

তুমি শুধু আমার ।তোমায় পেতে যদি আমায় পুরো দুনিয়ার মানুষের সাথে যুদ্ধ করতে হয় তবে আমি তাই করব ।যত যাইহোক না কেন দিনশেষে তোমায় আমার ঘরেই পা দিতে হবে মনে রেখো ।

অভিক ভাবল ইশমির হয়ত মন খারাপ ।সে ইশমির মন ভালো করার জন্য বাঁকা হাঁসি দিয়ে বলল

দেখি দেখি তোমার ঠোট টা ?

ইশমি অভিকের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে ভ্রু কুঁচকে অভিকের দিকে তাকাল ।

অভিক দুষ্টু হাঁসি দিল ।তারপর না বোঝার ভান করে ইশমির ঠোটে আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলে উঠল
ইশ ঠোট টা কাঁটল কিভাবে ?

ইশমি নাক ফুলিয়ে মনের অজান্তেই অভিকের আঙ্গুলে কামড় দিয়ে বলল রাক্ষস লোক আমার ঠোট কেঁটে দিয়ে বলে কাঁটল কিভাবে ?

অভিক চোখে মুখে বাঁকা হাঁসি দিয়ে বলল আমায় কামড় দিলে ?এখন আমিও তোমার কামড়ের শোধ সুদে আসলে আদায় করব তোমায় পাল্টা কামড় দিয়ে ।

ইশমি অভিকের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকাল ।অভিক ইশমির হাত ধরতে নিলেই ইশমি ত্বড়িতগতিতে অভিক কে ধাক্কা মেরে সেখান থেকে দৌঁড়ে পালাল ।অভিকও ইশমির পিছু পিছু দৌঁড়াতে শুরু করল ইশমিকে ধরার জন্য ।একসময় অভিক ইশমিকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে তাকে নিয়ে একদম বিছানায় গিয়ে পরল ।ইশমি খিলখিল করে হাঁসছে ।অভিক মুগ্ধ হয়ে সেই হাঁসিটার দিকে তাকিয়ে রইল ।এতক্ষণ এই হাঁসিটার জন্যই সে অপেক্ষা করছিল ।অভিক ইশমির চোখেমুখে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিল ।ইশমি জোড়ে জোড়ে হাপাচ্ছে । সে চোখবুজে ঠোটের কোণে হাসিটা রেখেই বলল

একটু পর মাগরিবের আযান দিয়ে দিবে ।আমাদের বাড়ি ফেরা উচিত ।
অভিক বলল এত তাড়াতাড়ি ?আরেকটু থাকি না ! তুমি আমার সাথে থাকলে আমার প্রতিটা মুহূর্ত খুব ভালো কাঁটে ।

ইশমি অভিকের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল
আমারও খুব আনন্দ অনুভূতি হয় ।কিন্তু আমাদের এখন-ই বের হওয়া প্রয়োজন ।কালকে তো দেখা হবেই ।
অগত্যা অভিক আর কথা বাড়াল না ।

অভিক ইশমিকে মার্কেট থেকে ইশমির পছন্দমত একটা মোবাইল সেট কিনে দিল ।তারপর ইশমিকে ইশমির পাড়ার সামনে পৌঁছে দিল ।

ইশমি বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে মিটমিট করে হাঁসছে আজকে তার আর অভিকের মুহূর্তগুলো ভেবে ।
কালকে কি হবে তার জানা নেই তবে সে চায় আজকের দিনটার মত তার প্রতিটা দিন যেনো ভালো যায় !ইশমি ভাবছিল আর অমনি হাফসা বেগমের কর্কশ আওয়াজ তার কানে বেজে উঠল ।

চলবে,
@Nusrat Hossain