#মনের_আড়ালে
Part_23
লেখনীতে – #Nusrat_Hossain
বাড়িতে এসে আফিয়া রহমানের সাথে অভিকের একদফা কথা কাটাকাটি হয়েছে ।আফিয়া রহমান চায় রিশা তাদের অফিসে চাকরি করুক আর অভিক চায় না রিশা তাদের অফিসে চাকরি করুক ।
আর আজকে যা করল রিশা তারপর সে রিশা মেয়েটার চেহারাটা পর্যন্ত দেখতে চায়না আর চাকরি তো দূরের কথা ।একদফা কথা কাটাকাটির পর মা আর ছেলে ঘরে ডোর দিয়ে বসে আছে ।বাড়িতে একটা থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে ।সাদাত চৌধুরিসহ পরিবারের সবাই ড্রয়িংরুমে থম মেরে বসে আছে ।
রিশা এইমাত্র অভিকদের বাড়িতে পা রাখল । মূলত আফিয়া রহমান-ই তাকে ফোন দিয়ে আসতে বলেছে তাছাড়া আরেকটা কারনেও তার এই বাড়িতে আসা তা হলো যেভাবেই হোক অভিক কে মানাতে হবে তাকে , তার প্রতি অভিকের মনটাকে যেভাবেই হোক নরম করতে হবে ।সে ড্রইংরুমে সবার দিকে একপলক তাকিয়ে সোজা আফিয়া রহমানের রুমে চলে গেল ।আফরিন মাইশার কানে ফিসফিস করে বলল “দেখো ডাইনিটা এসেও গেছে ।” মাইশা ফিসফিস করে বলল “মনে হয় কাকিমা আসতে বলেছে ।” রিশাকে দেখে বাড়ির কেউ অবাক হলনা ।সবাই জানে রিশা আফিয়ার কাছে মেয়ের সমতুল্য ।আফিয়া পারেনা তো রিশাকে নিজের মাথায় তুলে রাখে ।তবে মনে মনে সবাই খুব রাগ হল রিশাকে দেখে ।একমাত্র আফিয়া রহমান ছাড়া কেউ রিশাকে তেমন পছন্দ করেনা রিশার উগ্র ব্যবহারের জন্য ।
-আন্টি আমি কি করতাম মাথায় খুব রাগ চেঁপে গিয়েছিল ঐ দুটাকার মেয়েটাকে দেখে তাই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি রিশা ক্ষিপ্ত চেহারায় দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল ।
-আফিয়া রহমান রিশাকে কিছুটা মৃদু ধমকে বলল বিয়ে করে ফেলেনি আমার ছেলে একেবারে যে তুমি এমন পাগলামি করবে ।এই কাজটা করে তুমি ওর থেকে কতটা দূরে চলে গেলে তা কি বুজতে পারছো তুমি? এখন ও তোমায় চাকরি তো দূরের কথা তোমার চেহারাটা পর্যন্ত দেখতে চাইবেনা ।
রিশা আফিয়া রহমানের ধমক খেয়ে মুখটা মলিন করে কিছুটা কান্নামিশ্রিত গলায় বলল এখন কি করবো আন্টি ।আমি অভিক কে ছাড়া কিন্তু বাঁচবো না ।
আফিয়া রহমান রিশার কান্নামিশ্রিত চেহারা দেখে মন খারাপ করে ফেললেন তিনি রিশার হাতটা ধরে বলতে লাগলেন
আমি কথা দিয়েছিনা তোমায় অভিক তোমার ? আমি যেহেতু তোমায় কথা দিয়েছি অভিক তোমার তো অভিক তোমার-ই ।আফিয়া রহমান রিশার হাতটা কিছুটা শক্ত করে ধরে বললেন এই নাও আমি তোমায় আবার কথা দিচ্ছি অভিক শুধু তোমার এবার খুশি তো ?শুধু শুধু নিজের মাথায় চাঁপ নিও না ।বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি দেখে নিব তোমায় আগবাড়িয়ে কিছু করতে হবে না।
আফিয়া রহমান মুচকি হেঁসে বলল তুমি এখন অভিকের রুমে যাও ।অভিক কে মানাও গিয়ে ।
রিশা খুশি হয়ে আফিয়া রহমানকে জড়িয়ে ধরল আর বলল থ্যাংক ইউ সো মাচ আন্টি ।
রিশা আফিয়া রহমানের রুম থেকে বের হয়ে অভিকের রুমে চলে গেল ।
অভিক মাত্রই শাওয়ার নিয়ে এসে টাউজার পরে খালি গাঁ-য়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসল ।নিজের মুঠোফোনটা হাতে নিল ইশমিকে ভিডিও কল দেওয়ার উদ্দেশ্য ।মেয়েটার পায়ের অবস্থা কেমন জানতে হবে ।অভিক যে-ই না ইশমিকে ভিডিও কল করতে যাবে অমনি দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেল সে ।অভিক ভাবল হয়ত বাবা এসেছে তাই সে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল ।দরজা খুলে রিশাকে দেখতে পেয়ে অভিকের মাথায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলে গেল ।অভিক কিছু বলার আগেই রিশা হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে গেল ।অভিক যথাসাধ্য নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে ।সে রিশাকে অগ্রাহ করে বিছানায় গিয়ে আবার আধশোয়া হয়ে চোখবুজল আর দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল
আমি আমার আপন আর কাছের মানুষদের সাথেই নিজের ক্ষোভ ঝাড়তে পারি ।তাদের যেমন ভালোবাসতেও পারি তেমনি তাদের উপর রাগ হলে তাদের গালে দুইএকটা থাপ্পড়ও দিতে পারি ।
অভিক কথা থামিয়ে দিয়ে নিজেকে শান্ত করে নিল তারপর ঠোটদুটো চেঁপে আবার বলতে শুরু করল , না তুমি আমার কোন আপনজন , না তুমি আমার কোনো কাছের মানুষ , আর না তুমি আমার কোনো ফ্রেন্ড ।কে তুমি ,কেউ না আমার ।আমার কাছে তোমার দুইটাকার দামও নেই ।
বের হও আমার রুম থেকে ।তোমার চেহারা যেন আমি দ্বিতীয় বার না দেখি নাহলে একদম তোমায় গাড়ির নিচে চাঁপা মেরে দিব । জানে বাঁচতে পারবেনা তুমি ।
অভিকের কথাগুলো মনে হয় রিশা শুনতে পেলনা । তার চোখ অভিকের ফর্সা ভেজা খালি গাঁ এর দিকে ।লোভী দৃষ্ট তে তাকিয়ে আছে সে ।রিশার খুব ছুঁতে ইচ্ছে করল অভিকের আদুরে রোমশ বুকের দিকটা ।সে নিজেকে সামলে নিয়ে চোখেমুখে কান্নাভাব নিয়ে অভিকের বিছানার আরো কাছে এসে বলল
অভিক সর্যি আমি খুব অনুতপ্ত ।আর হবেনা এমন ভুল ।
অভিক ক্ষীপ্ত হয়ে বলল
তুই কয়টা চাস বল আমি তোর জন্য বাড়া কর্ অভিক আর বলতে পারলনা দাঁতে দাঁত চেঁপে নিজেকে শান্ত করে নিল তারপর টি টেবিলে একটা লাথি মেরে
চিৎকার করে বলল গেট আউট ।
রিশা ভয়ে রুম থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে গেল ।
রিশা বের হয়ে যাবার পর অভিক বিরবির করে বলল খাটাইশটা মেয়েলোক কোথাকার ।সে বিছানা থেকে ফোনটা হাতে তুলে ইশমিকে ভিডিও কল দিল ।
ইশমি পড়ছিল এই সময় তার ফোনটা বেজে উঠল ।সে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল অভিক ভিডিও কল করেছে ।সে ধরবে কি , ধরবেনা ভাবছে ।ভিডিও কলটা রিসিভ করতে তার কেমন যেন লাগছে ।তার এই সমস্যাটা পুরোনো ভিডিও কলে কারো সাথে কথা বলতে তার খুব লজ্জা হয় । কথা বলতে পারেনা সে ।আর অভিকের কাছ থেকে এই প্রথম ভিডিও কল আসল তার ফোনে ।কিভাবে কথা বলবে সে ? এদিকে একাধারে অভিক ভিডিওকল করেই যাচ্ছে ।সে কিছুক্ষণ গড়িমসি করে ভিডিও কলটা রিসিভ করল ।ভিডিও কলটা ধরতেই অভিক তাকে মৃদু ধমকে বলল
কোথায় ছিলা ?কল রিসিভ করতে এতক্ষণ লাগে ?
ইশমি কিছুক্ষণ অভিকের দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুখটা গুড়িয়ে নিল ।একেতো ভিডিও কলে তার কথা বলতে লজ্জা লাগে তারমধ্যে আবার লোকটা খালি গাঁ য়ে আছে ।
অভিক কিছুক্ষণ ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে বলল
এভাবে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছো কেন ? আমার দিকে তাকাও ।
ইশমি তাকাল না ।ঠোট টিপে ঐ অবস্থাতেই বসে আছে ।অভিক মনে হয় বুজতে পারল ইশমি কেন তার দিকে তাকাচ্ছে না ।সে মোবাইলটা রেখে টি-শার্ট টা পরে নিল দ্রুত তারপর মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইশমিকে বলল
এবার তাকাও আমার দিকে ।
ইশমি আড়চোখে তাকাল অভিকের দিকে ।
পাজামা টা একটু উপরে উঠাও তো দেখি পায়ের কাটা জায়গাটা অভিক বলল ।
ইশমি অভিকের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকাল ।সে সাথে সাথে ভিডিও কল কেঁটে দিল ।পরোক্ষনেই আবার ফোনটা বেজে উঠল ।ইশমি ফোন ধরল না ।সাথে সাথেই অভিকের কাছ থেকে একটা মেসেজ এল এক্ষুণি তাকে ভিডিও কল রিসিভ করতে বলেছে নাহলে বাকিটা আর পরতে পারল না ইশমি ।সে ভিডিও কলটা রিসিভ করল ।কল রিসিভ করতেই অভিক ধমকে বলে উঠল তাকে
ফোন কাটলে কেন ?আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয় না তোর ? আসবই না আর তোর সামনে ।রাগ হচ্ছে অভিকের খুব ।একে তো বাড়িতে এসে মায়ের সাথে কথা কাটাকাটি হল তারমধ্যে এই মেয়েটা নকশামি করছে ।
ইশমি মুখটা নিঁচু করে থমথমে গলায় বলল ভিডিও কলে আমি কারো সাথে কথা বলতে পারিনা ।আমার সমস্যা হয় খুব।
অভিকের রাগ নিভে গেল ।সে নরম গলায় বলল কথা বলতে বলতে অভ্যাস হয়ে যাবে ।তাকাও আমার দিকে ।
ইশমি অভিকের দিকে তাকাল ।অভিক বলল কাঁটা জায়গাটা দেখি তো ।
ইশমি ইতস্ততবোধ নিয়ে পাজামা টা একটু উপরে তুলল ।অভিক কাঁটা জায়গাটা দেখে ব্যথারিত গলায় বলল
অনেকখানি কেঁটে গেছে ।জ্বলছে তাই না ? নিয়মিত মলম লাগালে ঠিক হয়ে যাবে ।
অভিক আর ইশমি আরো কিছুক্ষণ কথা বলল তারপর অভিক ফোন রেখে দিল ।
ইশমি ফোনটা রেখে যে-ই না বই পড়তে শুরু করল অমনি আহিবা আসলো তার রুমে ।
ইশমি আহিবাকে দেখে অনেকটা অবাক ।তিথিও বাথরুম থেকে ফিরে এসে আহিবাকে রুমে দেখে অবাক হল খুব।ঐ ঘটনার পর আহিবা বেশি একটা রুম থেকে বের হয়নি ।সারাদিন মনমরা হয়ে রুমের এককোণাতেই পড়ে থাকে ।কথাও বলেনা কারো সাথে ।ঐ ঘটনার পর ইশমি আর আহিবাকে হাঁসতে দেখেনি ।ইশমিরও খুব আফসোস হয় তখন সে নিজে এতোটা ডিপ্রেশনে ছিল যে আহিবার কথাটা সে ভুলেই গিয়েছিল ।পারল না বোনকে রক্ষা করতে ।সব-ই ভাগ্য ইশমি ভাবে ।
ইশমি নিজেকে সামলে নিয়ে মুচকি হেঁসে আহিবাকে বলল
দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? ইশমি বিছানায় ইশারা করে বলল এসে বস এখানে ।
আহিবা গুটিগুটি পায়ে হেঁটে ইশমির পাশে বসল ।সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
আপু তোর সাথে খুব অন্যায় করেছি ।আ্ আমায় মাফ করে দিস তুই ।আহিবার গলা কাঁপছে ।সে ইশমির সামনে আর বেশিক্ষণ থাকতে পারবেনা ।হয়ত কেঁদেই দিবে এবার ।অপেক্ষা করছে সে ইশমির উত্তর শোনার জন্য ।
ইশমি আহিবার গালে হাত রেখে বলল
তুই আমার বোন না ? তোর উপর কিভাবে আমি রাগ করতে পারি ?
আহিবা মুচকি হেঁসে বলল ধন্যবাদ আপু ।সে বিছানা ছেড়ে উঠতে নিলেই ইশমি বলে উঠল
আজকে নাহয় আমার আর তিথি আপুর সাথে ঘুমা ।
আহিবা মুচকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে ইশমিকে না বুঝিয়ে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে চলে গেল ।
ইশমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শুয়ে পড়ল বিছানায় ঘুমানোর জন্য ।
সকালের আলো ফুটতে শুরু করেছে ।ইশমি নামাজ পড়ে আবারো ঘুমিয়ে পড়েছিল ।ঘুমের মধ্যে তার মনে হল কেউ চিৎকার করছে ।আবার খুব জোড়ে কান্নার শব্দও তার কানে এল ।সে চোখটা মেলে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল ।কি হয়েছে তা দেখার জন্য রুমের বাইরে গেল সে।রুম থেকে বের হয়ে যা দেখতে পেল ,তা দেখে তার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল ।পুরো পৃথিবীটা ঘুরছে তার ।পাথরের ন্যয় হয়ে গেল সে ।জ্ঞান হারাবার উপক্রম হল তার ।ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল সে ।পরোক্ষনেই নিজের মুখ দুহাতে ঝাপটে ধরে চোখমুখ খিঁচে চিৎকার করে কেঁদে উঠল সে ।
চলবে,
@Nusrat Hossain