আবদ্ধ আমি পর্ব-১২

0
576

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#১২তম_পর্ব

“বিদায় উষু”
মেসেজটা পড়ে‌ অর্ধেক কলিজা শুকিয়ে যায় আমার।মেসেজটা এসেছে আহান ভাইয়ের নাম্বার থেকে।কি হয়েছে জানার জন্য উতালা হয়ে পড়ি আমি।একাধারে বারবার ফোন দিতে থাকি আহান ভাইয়ের নাম্বারে।কিন্তু প্রত্যেকবারই একটা মেয়ে সুন্দর করে বলতে থাকে,’নাম্বারটি ওয়েটিং এ আছে অনুগ্রহ করে আবার চেষ্ঠা করুন।’

শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে ফোনটা বিছানায় আছাড় মারি।মনের মধ্যে বাসা বাধতে শুরু করে দুশ্চিন্তা গুলো।উদাহরণ স্বরুপ,আহান ভাইয়ের কিছু হয়ে গেল নাতো।কেন তিনি এই মেসেজ পাঠালেন?

হঠাৎ মাথার মধ্যে একটা ভালো বুদ্ধি চেপে বসে।আমি কিছুটা লাফ‌ দিয়ে উঠে দাঁড়াই বিছানা থেকে।তারপর এলোমেলো পা ফেলে দৌড়াতে শুরু করি বাবার রুমের উদ্দেশ্য।লক্ষ বাবার ফোন দিয়ে কল ‌দিব আহান ভাইকে।

কিছুক্ষন পর আমি পৌঁছে যাই বাবার রুমে।গিয়ে দেখি বাবা বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে‌ন।তার পাশেই পড়ে আছে মোবাইল ফোনটা।আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলি,
–“বাবা,তোমার মোবাইলটা একটু দাও তো!”

বাবা কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকান আমার দিকে।অথঃপর মোবাইল এগিয়ে দিতে দিতে বলেন,
–“কি করবি?”
আমি আসল উদ্দেশ্যটা বাবাকে বলি‌ না।শুধু বলি,একটা ফ্রেন্ডকে কল দিব।কিন্তু আমার মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ।তাই।

তারপর আমি বাবার কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিজের রুমে চলে আসি।রুমে প্রবেশ করতে করতে ফোন দেই আহান ভাইকে।একবার রিং হতে না হতেই ফোন রিসিভ করে সালাম দেয় আহান ভাই।তার কণ্ঠটা শুনে বেশ অবাক হই আমি।মনে হচ্ছে অনেক খুশিতে আছেন তিনি।

আমি কিছু বলছি না এপাশ থেকে।আহান ভাই পুনরায় বলে ওঠে,
–“ফুফা কি বলছি মনে আছে তো?”
আমি এবার অনিশ্চিত স্বরে বলে উঠি,
–“আমি আপনার ফুফা না,বউ‌ হই বউ”

এবার মনে হয় আহান ভাই আমাকে চিনতে পেরেছে।তিনি তার কণ্ঠস্বর ভারী করে ‌বলেন,
–“কেন ফোন দিয়েছিস?তোর সাথে কথা বলতেই মন চাচ্ছে না।বাই”
এই বলে ফোন রাখতে যাবে তার আগেই আমি চিল্লিয়ে বলি,
–“খবরদার ফোন রাখবে না।কি পেয়েছো আমাকে?”

মাথাটা গরম হয়ে গেছে প্রচুর।আমাকে কি খেলার পুতুল‌ পেয়েছে নাকি এরা।একবার নিদ্র চিন্তায় ফেলছে তো আরেকবার এই বজ্জাত আহানটা।সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি‌ আজকে দুকথা শুনিয়ে দেব আহান ভাইকে।সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি পুনরায় বলতে শুরু করি,
–“কি পেয়েছো আমাকে তোমরা?যে যখন যা ইচ্ছা করছো‌ আমার সাথে।ফাজলামির একটা লিমিট থাকা দরকার।ওই‌ দিকে নিদ্র বেশ বড়সড় ভাবে হুমকি দিয়ে বলে গেল,আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাকে তার মায়ের বউমা বানাবে।আর এদিকে তুমি উল্টাপাল্টা মেসেজ দিয়ে আমাকে চিন্তায় ফেলছো।তোমরা কি চাও আমি বেঁচে থাকি?মনে তো‌ হয়না চাও এটা।তোমাদের কারো মরতে হবে না আমিই মরবো।বাই”

কথাগুলো বলে ফোনটা কেটে দেই আমি।ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়ি।মাথা গরমে ফেটে‌ যাওয়ার উপক্রম।বহু কষ্টে ব্যালকনিতে গিয়ে আস্তে করে চেয়ারে বসে পড়ি।তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে।চোখের কোণে পানি জমা হয়।একপর্যায়ে গাল বেয়ে পানি পড়তে থাকে।

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলি,
–“হে‌ আল্লাহ,কোন বিপদে ফেলেছো‌ আমাকে।না পারছি‌ স্বামীর সাথে সংসার করতে না পারছি‌ অন্যকিছু করতে।কি পাপ করেছি‌ যে এতোবড় শাস্তি দিচ্ছো।একটা উপায় বলে দাও।একটা..”

কথাগুলো বলতে বলতে কান্না শুরু করি আমি।নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে দুখী‌ মানুষগুলোর একজন মনে হচ্ছে।কান্না করতে করতে ভাবতে থাকি বিয়ের দিন থেকে আজ অবদি ঘটে যাওয়া কাহিনী গুলো।এই কয়েকদিন আমি কোন জগতে ছিলাম বুঝতে পারছি‌ না।

জীবনটা বেশ ভালোই থাকতো আমার যদি নিদ্র নামের‌ এই বাজে ছেলেটা না আসতো‌ আমার জীবনে।সে না আসলে আহান ভাই আমাকে ভুলও বুঝতো না,ডিবোর্সও দিতে চাইতো‌ না।মোটকথা সবকিছুর জন্য দায়ী এই নিদ্র।

চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রুমে চলে আসি আমি।ড্রেসিন টেবিলের উপর থেকে টিস্যু নিয়ে চোখের পানি মুখে ফেলি।ধপ করে শুয়ে পড়ি বিছানায়।ঘুমানোর শত চেষ্টা করলেও ঘুম আসেনা আমার চোখে।অর্ধেক রাত জুড়ে ভাবতে থাকি এই বিপদ থেকে বেড়োনোর উপায়।

একপর্যায়ে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আস্তানা গাড়ে।আমি খুশিতে প্রায় লাফ‌ দিয়ে উঠে বসি।পরমুহুর্তে যখন মনে হয় নিদ্র তো ভ্যাম্পায়ার,যখন যেখানে ইচ্ছা চলাচল ‌করতে পারে তখন পুনরায় মনটা খারাপ হয়ে যায়।আস্তে করে শুয়ে পড়ি বিছানায়।আমার মাথায় যে বুদ্ধিটা আস্তানা গেড়েছিল সে পুনরায় জেগে ওঠে।আমি উঠে বসে ভাবতে থাকি,
–“কয়েকদিনের জন্য লুকিয়ে ফেলবো‌ নিজেকে।চলে যাব এই‌ শহর থেকে।থাকবো‌ অন্য কোথাও।কোনো কাজ না হোক একটু মনটা ফ্রেস করতে তো পারবো।”

সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি কয়েকদিনের জন্য এই শহর থেকে বিদায় নেব আমি।চলে ‌যাব কো‌নো‌ মন-মুগ্ধকর একটা স্পটে।কিন্তু তার আগে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে।আহান ভাইয়ের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে‌ দিতে হবে আমার সম্পর্কে ভাবা খারাপ‌ কথা গুলো।কিন্তু কিভাবে?এটাই তো বুঝতে পারলাম না নিদ্র কখন এসব ছবি তুললো?

আমি এবার বসে ভাবতে থাকি নিদ্র কখন এসব ছবি তুললো।আমি‌ যতক্ষন স্বজ্ঞানে ছিলাম ততক্ষন সে এসব ছবি তুলতে পারেনি।তবে কখন তুললো?স্বজ্ঞানে তুলতে পারেনি তারমানে যখন অজ্ঞান ছিলাম তখন তুলেছে।আর যদি তুলেই‌ থাকে তাহলে সেটা গাড়িতে।

আমি পুনরায় খাম থেকে ছবি গুলো বের করে দেখতে শুরু করি।খেয়াল করি আসলেই ছবি গুলো‌ গাড়িতে তোলা হইছে।চোখ বন্ধ করে আমি পুনরায় মনে করার‌ চেষ্টা করি গাড়িতে আর কি‌ কি দেখেছি?

একপর্যায়ে হুট করে মনে পড়ে,আরে একটা বুদ্ধি করলে কেমন হয়।কোনো ভালো ফটোগ্রাফারকে ছবিগুলো দেখালে‌ সে বলে দিতে পারবে এগুলো কি দিয়ে তোলা হয়েছে।আমার যতদুর মনে হচ্ছে এগুলো মোবাইল দিয়ে তোলা।তবুও‌ সিউর হওয়ার জন্য কালকে যাব একজন ফটোগ্রাফারের কাছে।

পরেরদিন সকালে উঠতে একটু দেরি হয়।উঠেই‌ আমি রওনা দেই পরিচিত একজন ফটোগ্রাফারের দোকানের উদ্দেশ্য।তার সাথে কথা বলে সিউর হই ছবি গুলো মোবাইল দিয়ে তোলা।আর‌ যে মোবাইলটা দিয়ে তোলা হয়েছে সেটা খুব দামি মোবাইল।এদেশে এরকম দামী মোবাইল এখনো আসেনি।তিনি আরো বলেন,ছবি গুলো ডাইরেক্ট তোলা হয়‌নি।ভিডিও করা হয়েছে আগে সব।তারপর সেখান থেকে স্কিনসর্ট দিয়ে দিয়ে ছবি গুলো নেয়া হয়েছে।তাকে ছবিগুলো দেখাতে একটু লজ্জা লাগছিল আমার।

বেশ ভালো করেই বুঝতে পারি কার ফোন দিয়ে তোলা হয়েছে ছবিগুলো।এখন একটাই মাত্র কাজ।নিধির ফোনটা ছুরি‌ করা।তার ফোনে ‌নিশ্চয় এমন কিছু পাব যা দিয়ে আহান ভাইকে বিশ্বাস করানো যাবে যে আমি নির্দোষ।এখন লক্ষ্য হলো একটা রেষ্টুয়েন্টে প্রবেশ করে নাস্তা করা।

আমি নিকটবর্তী একটা রেষ্টুয়ে‍ন্টে প্রবেশ করি।সেখানে প্রবেশ করে থমকে দাঁড়াই‌ আমি।নিধি আর নিদ্র কোণার একটা টেবিলে বসে নাস্তা করছে।মাথা চেপে বসে একটা বুদ্ধি।এখনি চুরি‌ করতে হবে নিধির মোবাইলটা।নাহলে আর সম্ভব না।

ওরনা দিয়ে মুখ ঢেকে গিয়ে তাদের সামনের টেবিলে বসি।তারা এক নাগাড়ে কথা বলেই চলেছে।একপর্যায়ে জানতে পারি‌ মুল্যবান একটা তথ্য।নিধির মোবাইল গাড়িতেই আছে…

চলবে..ইনশাআল্লাহ