মাফিয়া ক্রাশ বর পর্ব-১৩

0
2831

#মাফিয়া_ক্রাশ_বর
#লেখিকা : মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্ব : ১৩

অভিদ আরও কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলো। রুহির সাথে দেখা করতে মন চাইলেও সবাই কি বলবে ভেবে আর দেখা করতে পারলো না। অভিদ রায়হানকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে।

রুহি ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেলো। মিশু, নিলা, রাইমা বসে বসে গল্প করছে আর রুহির বিয়ের ড্রেস, মেকাপ ঠিক করে রাখছে। রুহি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১১:১০ বাজে। রুহি গায়ের উপর থেকে ব্ল্যাংকেট সরিয়ে বিছানা ছেড়ে দাঁড়ায়। রুহিকে উঠতে দেখে রাইমা বলে
” আপু উঠে গিয়েছো ?? তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আমি খাবার নিয়ে আসছি। ” রুহি মাথা নেড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। রাইমা ওর আম্মুর কাছে চলে যায়।

রুহি শাওয়ার নেওয়ার আগে মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ফেলে।শাওয়ার শেষে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এসে দেখে ওর আম্মু খাবার নিয়ে বসে আছে। চাচা, বাবা, মামা, মামি, সবাই দেখতে এসেছে রুহিকে। সবার দিকে তাকিয়ে বলে
” আপনারা সবাই এখানে??”

রুহির আব্বু এসে রুহির কপালে হাত রেখে চেক করে জ্বর আছে কিনা। কপাল থেকে হাত সরিয়ে বলে
” এখনও হালকা জ্বর আছে। এখন তোর কেমন লাগছে, মা। ”

রুহি হালকা হেসে বলে
” ভালো। আমি ঠিক আছি তোমরা চিন্তা করো না। ” সবাই রুহির সাথে কথা বলে একে একে চলে গেলো।
শুধু রুহির আম্মু বসে আছে।

রুহি ওর আম্মুকে বসে থাকতে দেখে বলে
” আম্মু কিছু বলবে ??”

রুহির আম্মু মলিন হাসি দিয়ে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” অনেক কিছুই তো বলার আছে। আজকে আমার মেয়ের বিয়ে, কবে যে বড় হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। আজকে আমি তোকে খাইয়ে দেবো। ”

রুহির আম্মু প্লেট হাতে নিয়ে রুহির মুখের সামনে খাবার ধরতেই রুহির চোখ ছলছল করে উঠে। রুহি ছলছল চোখে, হাসি মুখে খাবারটা মুখে নেয়। রুহির গলা দিয়ে খাবার নামছেই না। আজকে সে তার মা – বাবা, বোন পরিবার ছেড়ে অন্য একটা নতুন পরিবারের মাঝে চলে যাবে। সেখানের প্রত্যেকটা মানুষের সাথে একেকটা সম্পর্ক তৈরি হবে। এতো আনন্দের মাঝে শুধু একটাই কষ্ট, পরিবারকে ছেড়ে চলে যাওয়া।

রুহি খাবারটা কোনরকমে গিলে মার গলা জড়িয়ে কেঁদে দেয়। রুহির আম্মুও কেঁদে দিলো। রুহু কাঁদতে কাঁদতে বলে
” আম্মু আমি তোমাদের ছেড়ে কি করে থাকবো। আমি বিয়ে করবো না। ”

রুহির আম্মু রুহির মাথা উঠিয়ে বলে
” ধুর, পাগলি মেয়ে এসব বলতে হয় নাকি। আজকে থেকে তোর দুটো বাড়ি হয়ে গেলো। আর আমাদের কথা মনে পারলে চলে আসবি এখানে। সব মেয়েকেই বড় হলে মা – বাবাকে ছাড়া থাকতে হয়। ” রুহির আম্মু চোখ মুছে রুহিকে যত্ন করে খাইয়ে দেয়। খাবার খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে চলে যায়।

তারপর জিহান এসে ফার্স্টএইড বক্স নিয়ে। রুহি জিহানের হাতে ফার্স্টকএইড বক্স দেখে অবাক হয়ে বলে
” কি হলো এটা নিয়ে এসেছো কেনো ভাইয়া ”

জিহান ভ্রু কুচকে বলে
” তো আর কি নিয়ে আসার কথা ছিলো ?? তুই যে ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছিস মনে আছে ?? এখন আরেকটা ব্যান্ডেজ করতে হবে তো নাকি। ”
রুহি জিভে কামড় দিয়ে বলে
” সরি, ভুলে গিয়েছিলাম। আচ্ছা করে দাও। ”

জিহান রুহির সামনে বসে রুহির মাথায় ঔষধ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিতে দিতে মুখ বাকিয়ে বলে
” একটা জামাই পাচ্ছিস বটে। একটু আগে আমাকে ফোন করে কতো গুলো কাজ দিলো। বড় ভাই হই একটু সুন্দর করে কথা বললে কি হয় ?? তা না করে গম্ভীর গলায় কথা বলে, হুহ ” জিহানের কথা শুনে রুহির হাসতে থাকে।

———-

রুহি আর অভিদের বিয়ের জন্য ঢাকার সবচেয়ে বড় কমিউনিটি সেন্টার বুক করেছে। রুহিকে পার্লার থেকে সাজিয়ে একেবারে সেন্টার নিয়ে আসা হয়েছে। মেয়ে বাড়ির সবাই এসে পরেছে। রুহিকে একটা রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই এখন অভিদ দের অপেক্ষা করছে।

আধ ঘন্টা পরে বাইরে থেকে অনেক গুলো গাড়ির শব্দ আসতেই সবাই বাইরে চলে যায়।
মিশু এসে যখন বললো ভাইয়া এসেছে তখন রুহির বুক ধুকপুকানি যেন আগের থেকে দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। রুহিকে রেখে সবাই বাইরে চলে গেলো। রুহি বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। বারান্দা থেকে সব দেখা যাচ্ছে নিচে কি হচ্ছে।

নিচে অভিদরা বাদে অনেক বডিগার্ড এসেছে। সবসময় কালো পোশাক পড়া থাকলেও আজকে বিয়ের জন্য আলাদা পোশাক।
অভিদকে একদম রাজপুত্রের মতো লাগছে। কোনোদিক দিয়ে কোনো কমতি নেই। আজকের পর থেকে এই রাজপুত্রের সাথেউ রুহিকে সারাজীবন কাটাতে হবে ভেবে মুচকি হাসলো রুহি।

মিশুরা সবাই গেট ধরেছে। অভিদ দের ভেতরে ঢুকতেই দিচ্ছে না। রাইমা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে
” ভাইয়া আজকে টাকা না পেলে আমরা আপনাকে যেতে দেবো না। পুরো ৬০ হাজার টাকা চাই। টাকা না দিলে একপাও যেতে দেবো না”

রায়হান ক্ষেপে গিয়ে বলে
” মানে কি টাকা কি গাছে ধরে নাকি যে যাকে তাকে দিয়ে দেবো। তাও আবার ৬০ হাজার টাকা না দিলে নাকি ভেতরে যেতে দেবে না। আমরাও দেখবো ভেতরে যাওয়া থেকে কি করে আটকাও।”

মিশু হাতের নকে ফু দিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলে
” এখানে কতো জন মানুষ আছে দেখেছেন ?? সবাই যদি আপনাকে ধরে গনধোলাই দেয় তখন কেমন লাগবে বলুন তো। আজকের নিউজফিডের সেরা হেডলাইন হবে যে। অভিদ রায়জাদার বন্ধু ৬০ হাজার টাকার জন্য কিপটামো করে বন্ধুর বিয়ে হতে দিলো না সাথে গণধোলাই খেলো। নাইস হবে না ??” মিশুর কথায় সবাই হা হা করে হেসে উঠলো।

রায়হান রাগ দেখিয়ে বলে
” তুমি আমাকে কি বললে আমি কিপটামো করছি। ঠিকাছে যাও এবার তো এক টাকা পয়সাও পাবে না। ”
নিলা তার চুল গুলো ঝাড়া মেরে পেছনে নিয়ে বলে
” ঠিকাছে লাগবে না টাকা। আমরাও আমাদের বোনকে দেবো না। ”

অভিদ সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলে
” ঠিকাছে,ঠিকাছে তোমরা থামো। তোমাদের ঝগড়ার কারণে আমি আমার বউকে হারাতে পারবো না। আমি টাকা দিচ্ছি।”

তুষার কপালে চাপড় মেরে বলে
” হাইরে বউ পাগল। ” সবাই হেসে উঠে তুষারের কথায়। অভিদ ফুপির কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিশুর হাতে দেয়। মিশু একটা কেঁচি এনে অভিদের হাতে দেয় ফিতা কাটার জন্য। অভিদ ফিতা কেটে ভেতরে আসে। রুহিও বারান্দা থেকে এসে রুমে বসে পরে।

অভিদ লাল কারপেটের উপর দিয়ে আসতে থাকলে উপর থেকে গোলাপ ফুলের বর্ষণ হতে থাকে। অভিদ এসে সোফায় বসে।

অভিদ আর রুহির বসে আছে। দুজনের মাঝে একটা ফুলের তৈরি পর্দা রয়েছে। অভিদের রুহিকে দেখার জন্য মন্টা খচখচ করছে কিমতু চাইলেই তো আর পারবে না। বড় কিছু পাওয়ার জন্য একোটু ধৈর্যবান হতেই হয়। সবাই বিয়ে পড়ানোর অপেক্ষায় আছে। হুজুর প্রথমে রুহিকে কবুল বলতে বলে। কিন্তু রুহি কবুল বলছে না। রুহির মনে হচ্ছে ওর গলায় কেউ ধরে রেখেছে। গলা দিয়ে আওয়াজই বের করতে পারছে না।
রুহির আব্বু এসে রুহির মাথায় হাতে হাত রাখে। রুহি বাবার দিকে তাকিয়ে চোখে পানি নিয়ে একবার কবুল বলে। পরে নিচের দিকে তাকিয়ে পরপর দুইবার কবুল বলে। সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। এবার অভিদকে কবুল বলতে বললেই অভিদ দেড়ি না করে কবুল বলে দেয়।

বিয়ে শেষে অভিদ আর রুহি দুজনের মাঝে থাকা পর্দাটা সরিয়ে ফেলা হয়। রুহি আর অভিদকে একসাথে বসানো হয়।
অভিদ মুগ্ধা নয়নে রুহির দিকে তাকিয়ে আছে। রুহিকে লাল লেহেঙ্গায় বউয়ের সাজে অপুরুপ লাগছে। তবে গালে এখনও আঙুলের দাগ গুলো রয়েছে। মেকাপের কারণে বাইরের মানুষ বুঝতে না পারলেও অভিদ স্পষ্ট বুঝতে পারছে। কিন্তু অভিদের কাছে রুহিকে এমনি অপ্সরী লাগছে।

বিয়ের সাজে সবাইকেই অপুরুপ লাগে। বিয়ের সাজটা এমনি একটা জিনিস। যে যেমনি হোক না কেনো, যেমনি সাজুক না কেনো প্রত্যেকটা মেয়েকেই বিয়ের সাজে অপরুপ লাগে আর বিয়েটা যদি আসল ভালোবাসার মানুষের সাথে হয় তাহলে তো মুখের হাসিটা তাকে আরো সুন্দর করে তোলে।

অভিদ তাকিয়ে থাকলেও রুহি মাথা নিচু করে রেখেছে। সবাই অভিদকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসাহাসি করছে আর রুহি লজ্জা পাচ্ছে। রাইমা,মিশু, নিলা, রায়হান, তুষানল, জিহান, নিলয় এসে দাড়ালো।

রাইমা গলা ঝারে। অভিদ রুহির থেকে চোখ সরিয়ে রাইমার দিকে তাকায়। রাইমা হেসে বলে
” ভাইয়া সারাদিন আপুর দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে নাকি। আমাদের দিকেও একটু তাকান। আমরা আপনার শালি বলে কথা। ”

অভিদ হেসে বলে
” তা তো ঠিক। তো বলো শালিকা রানী তোমার কোনো ছেলেকে পছন্দ হয়েছে কিনা। ”

রাইমা ইনোসেন্ট মুখ করে বলে
” ভাইয়া আমি এখনও ছোট। আমাকে এসব না জিজ্ঞেস করে বাকিদের জিজ্ঞেস করুন ”
অভিদ হালকা হাসে।

মিশু মন খারাপ করে বলে উঠে
” ভাইয়া আমাকে কারো সাথে সেটিং করিয়ে দিন। আমার বান্ধবীটার বিয়ে হয়ে গেলো আর আমি এখনও সিঙ্গেল রয়ে গেলাম। ”

” তো তোমার কেমন ছেলে পছন্দ।”

” আমার এখানের একটা ছেলেকেও পছন্দ হচ্ছে না। আমার আপনার মতো একটা ছেলেকে চাই। আপনার মতো হ্যান্ডসাম হতে হবে ”

অভি রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলে
” তাহলে তো তোমার আর অপেক্ষা করতে হবে না। তোমার পেছনেই রয়েছে সে। রায়হান তো অনেক হ্যান্ডসাম দেখতে। ওর গার্লফ্রেন্ডও নেই তুমি ট্রায় করে দেখতে পারো। ”

মিশু পেছনে ঘুরে রায়হানকে একবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নেয়। পরে অভিদের তাকিয়ে আফসোস সুরে বলে
” ভাইয়া সবই ঠিকাছে তবে উনি যেই কিপটে !! ওনাকে দিয়ে আমার হবে না।”

রায়হান রেগে বলে
” ও হ্যালো ম্যাডাম। আমাকে একদম কিপটে বলবেন না। আমি কিপটে নই বুঝেছেন। ” রায়হানের কথায় মিশু অন্যদিকে তাকিয়ে ভেংচি মারে। রুহি মিটমিট করে হাসছে ওদের কথা শুনে।

রুহি তার মা, বাবা, রাইমা, মিশু, ভাই,চাচা, চাচি সবাইকে ধরে কাঁদছে। পরিবার ছেড়ে চলে যাচ্ছে কষ্ট তো হবেই। রুহির আব্বু রুহির হাতটা অভিদের হাতে দিয়ে বলে
” আজকে থেকে রুহি তোমার। ওকে দেখে রেখো আর কষ্ট দিও না ”

অভিদ রুহির আব্বুর হাতের উপর হাত রেখে বলে
” আমি কোনোদিন ওকে কষ্ট দেবো না। ”

অভিদ রুহিকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি চলতে শুরু করে। রুহি কাঁদতে কাঁদতে একসময় অভিদের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।

চলবে… wait for next part….