#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:14
#Mishmi_muntaha_moon
রান্নাঘর থেকে ইতি আপুকে লজ্জা পেয়ে নিচু মাথায় এসে আন্টির পাশে এসে বসলো।আজব এভাবে লজ্জা পাচ্ছে যেনো আজই ওকে ধরে বিয়ে না না,,,বাসরে পাঠাচ্ছে উফফ বিরক্তকর।আমি উঠে রুমে চলে যেতে নিতেও গেলাম না দেখি কি কি আলোচনা করে।
আম্মু ইতি আপুকে দেখে গমগম হয়ে বলল।
–লক্ষী মেয়ে। তোমাকে বলেছিলাম না আমি করে নিবো।শুধু শুধু এতোগুলো কাজ করতে গেলে
–না আন্টি কাজ করতে তো ভালো লাগে আমার। আর আপনি তো আমার আপন তাহলে আপনাদের এখানে কাজ করতে কষ্ট কিসের?
ইতি আপুর কথায় আম্মুর মুখের চমক কিছুটা বাড়লো।তারপর আবারো প্রচন্ড উতসাহ নিয়ে বলল
–আর আমার মেয়েটা তো কোনো কাজের ধারে কাছেও আসে না।একদম অকর্মণ্য।
আম্মুর কথা শুনে মেজাজ খারাপ কয়ে গেলো।ইতি আপুর প্রশংসা করছে ভালো কথা কিন্তু আমাকে বেইজ্জত করার কি দরকার ছিলো।
আমি ঠোট উল্টে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম।
–আমার ইন্সাল্ট করার পিছে লেগে থাকো কেনো।
আমার কথা শুনে আন্টি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল।
–তোর আম্মুর কথা বাদ দে।তুই কি কারো থেকে কম নাকি?তুই তো অনেক লক্ষী মেয়ে।মন খারাপ করিস কেন।
আন্টির কথায় মন খারাপ ভাব টা কিছুটা কমলো।কিন্তু পরবর্তী কথা শুনে মুখে একরাশ কালো মেঘ এসে হানা দিলো।
–আরিশ এই মাস পরই অস্ট্রেলিয়া যেতে চাচ্ছে কিসের কোর্স এর জন্য কিন্তু আমি তা একদমই চাচ্ছি না।এইখানে কি ব্যবস্থা নেই কোর্সের ওই সুদূর দেশে যাওয়ার কি দরকার।তাই আমি চাচ্ছি তাড়াতাড়ি বিয়েটা হোক তাহলে তো আর বউ রেখে কোথাও যেতে চাইবে না অবশ্যই।
আরিশ ভাইয়া অস্ট্রেলিয়া যেতে চাচ্ছে এই ব্যাপারে আমাকে কিচ্ছু বলল না আর তাও পরের সপ্তাহে।তাহলে আমাকে কি উনি বলার প্রয়োজন মঅঅনে করছে না।আর আন্টি যে বলল ইতি আপু কে পছন্দ করে তা কি সত্যি নাকি তাহলে কি আরিশ ভাইয়া আমার সাথে টাইমপাস করছে।
কিছুক্ষন পর কোথা থেকে আরিশ ভাইয়া আসলো।কলা পাতা কালারের শার্ট পরা আমি যখন উনার সাথে বাহিরে গিয়েছলাম তখন অন্য শার্ট পরা ছিলো।
আরিশ ভাইয়া আসতেই সবাই চুপ হয়ে গেলো।আরিশ ভাইয়া এইসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে ইতি আপুর পাশে বসলো।
আর কোথাও বসার জায়গা ছিলো না হয়তো তাই ওখানে বসেছে।কিন্তু এই বিষয়টা আমার কিছুতেই ভালো লাগলো না।
আমি কিছুক্ষন খিচ লাগিয়ে বসে থেকে উঠে সোজা ছাদে গেলাম।রাতের সাড়ে ৮টার মতো বাজে।আরিশ ভাইয়া আন্টিকে নিতে এসেছে হয়তো।
ইতি আপু খুব সুন্দর গ্রামে থেকেও উনার সৌন্দর্য্য কোনো অংশে কম হয় নি।গ্রামে গেলে হয়তো বোঝা যেতো কতো ছেলের ক্রাশ।
আমিও সুন্দরের লিস্টে কম যাই না অবশ্য কিন্তু ইতি আপুর মতো ওতটা লম্বা না আমি।
এইসব ভেবে মনখারাপ আরও বাড়তে লাগলো।
কিছুক্ষন পর পিছন থেকে পায়ের শব্দ পেলাম কিন্তু ফিরলাম না।আরিশ ভাইয়া আমার পাশে দাঁড়িয়ে কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল।
–তোর আম্মু আর আমার আম্মু এই ইতি কে নিয়ে এতো কিসের আলোচনা করছে বল তো।আবার আমাকেও জিজ্ঞেস করলো ইতিকে কেমন লাগে।কি বিস্ময়কর ব্যাপার।
ভাইয়ার কথা শুনে একনজর তাকালাম তারপর আবার কিছুটা দূর একটা গাছে একযুগল পাখির দিকে তাকিয়ে বললাম।
–কি বললেন কেমন লাগে??
আরিশ ভাইয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল।
–ভালো লাগবে না কেনো ইতি তো খুব ভালো মেয়ে আর খুব বুদ্ধিমতী সব ব্যাপার খুব ভালো ভাবে হ্যান্ডেল করতে পারে,,,,,,
পরে বলা কথা গুলো আর শুনতে ইচ্ছে হলো না গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পরলাম।
–
এসাইনমেন্ট জমা দিতে যেতে হবে আজ।রেডি হয়ে নিচে যেতে দেখি আন্টি এসেছে।
আমি নাস্তা করে উনাদের কাছে গিয়ে দারালাম।
–ইতি চলে গেছে?
–হ্যা আজ সকালেই ইহান এসে নিয়ে গেলো।
ইতি আপু চলে এছে শুনে স্বস্তির শ্বাস নিলাম।ইতি আপু চলে গেছে এখন হয়তো উনার কথা বলা বন্ধ হবে।
–আমি ওদের সাথে আরিশের বাবাকেও পাঠিয়েছি।বিয়ের কথাবার্তা বলতে।
আন্টির কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।এতো কিসের তাড়া বিয়ের।আমি ফট করেরে বললাম
–কিন্তু আরিশ ভাইয়া কি রাজি নাকি?
–অবশ্যই রাজি হবে না কেনো।
আন্টির কথায় মনে হলো মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।
নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত করে উঠে বাসা থেকে বেড়িয়ে পরলাম।
ওইদিনের কথাগুলো ভুলে গিয়ে আরিশ ভাইয়ার সাথে স্বাভাবিক বিহেভিয়ার করছিলাম।কিন্তু এখন স্বাভাবিক থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। বোধয়।
–
এসাইনমেন্ট জমা দিয়ে ডানে বামে না তাকিয়ে রাস্তার দিকে হাটা দিতেই তুবা সামনে এসে দারালো।
–কিরে কোথায় চললি?
–তোর শশুর বাড়ি।
–জানু,,
–চুপ এই জানু ফানু বলে একদম ডাকবি না আমায়।
–আচ্ছা যা ডাকবো না।কিন্তু আগে বল প্রেম কেমন চলছে।চুটিয়ে তো প্রেম করেই নিচ্ছিস।
তুবার কথা শুনে দাতে দাত চেপে বললাম।
–কিসের প্রেম?থাপ্পড় মেরে দাত ফেলে দিবো।
আমার কথা শুনে তুবা প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে বলল।
–আরিশ ভাইয়ার সাথে তাহলে কি চলছে তোর।
আমি বুকে হাত গুজে বললাম।
–উনি আমার ভাই হয়।খালাতো ভাই দেটস ইট।আর একটাও কথা বাড়াবি না ভাল্লাগছে না।
তুবাও আর কথা বাড়ালো না।কথা শেষ করে রিকশা খুজছি তখন কোথা থেকে অনিক এসে সামনে দারালো।
ছেলেটা খুবই ভালো আর আমাদের কলেজের অধিকাংশ মেয়ের ক্রাশ ও বলা যায়।
আমাকে প্রপোজ করেছিলো কিন্তু আমি না করে দেওয়ায় ফ্রেন্ডশিপের হাত বাড়িয়েছে।আপাতত আমরা ফ্রেন্ড কিন্তু আমি ওতটা কথা বলি না।
–জিনাত,,,কেমন আছো??
–ভালো তুমি কেমন আছো?
–হুম ভালো আছি।ইদানীং তোমাকে দেখাই যায় না।
–না আরকি বাসা থেকে বের হওয়া হয় না।
–ওহ।
টুকটাক কথা বলার মাঝেই আরিশ ভাইয়াকে চোখে পরলো।একদম জেন্টলম্যান হয়ে গাড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে হেটে আমার পাশে এসে স্ট্রেইট হয়ে দারালো।
আমি যেদিনই কলেজে আসি ওইদিনই কোথা থেকে উদোয় হয় কে জানে?
–এখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিস?গাড়িতে বস গিয়ে।
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনেও গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
–এইটা কে জিনাত?
অনিকের কথা শুনে মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললাম।
–আমার ভাই হয় উনি।
অনিক আমার কথা শুনে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
–ভাইয়া কেমন আছেন।
অনিকের কথার জবাব না দয়ে আরিশ ভাইয়া আমার হাত চেপে ধরে উনার গাড়ির সামনে বাড়তে লাগলো।
উনার গাড়ির সামনে নিয়ে হাত ছাড়তেই আমি বললাম
–এমন রুড বিহেভ করছেন কেনো ভাইয়া।আর আমার ফ্রেন্ডেদের সাথে ভালো বিহেভ করবেন।
আমার কথায় আরিশ ভাইয়া গম্ভীরভাবে বলল
–তোর তো দেখছি ছেলে ফ্রেন্ডের অভাব নেই।
ভাইয়ার কথায় নিচের ঠোট দাত দিয়ে চেপে ধরে মুখ ফিরালাম।
আরিশ ভাইয়া আমার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসতে বসতে বলল
–গাড়িতে বস।
আমি কিছুক্ষন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে ব্যাগটা ভাইয়ার গাড়ির ভিতর রেখে বললাম
–আমি রিকশা করে চলে যাবো।আর আপনার জিনিস আপনার কাছেই রাখুন আমার চাই না।
আমি তারাতারি করে একটা রিকশা দার করিয়ে উঠে পরলাম।
পিছে ফিরে একটি বার ও তাকালাম না তাকালে হয়তো দেখতে পারতাম আরিশ ভাইয়ারয়ার অবাক আর রাগের সংমিশ্রণ চেহারা।
কিন্তু আমার তাতে কি!এখন তো উনার থেকে শুধু দূরে থাকাটাই আমার কাম্য।
তাইতো আজ থেকেই শুরু হলো আরিশ ভাইয়া নামক ব্যাক্তিকে কঠিন ইগনোর করা।
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।)