যদি তুমি চাও পর্ব-০৩

0
534

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

৩.
নিহাল এসে দাঁড়িয়েছিল তখনও অন্তির খেয়াল হয়নি এটা সে হতে পারে। নিহাল অন্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই তার নাম নেয়।
-অন্তরা।
অন্তি ভ্রু কুঁচকে ফেলে। বোঝার চেষ্টা করে আসলে কে এই ব্যক্তি। নিহাল বুঝতে পেরে হেলমেট খুলে সামনে রাখে। অন্তি নিহালের মুখটা দেখেই চিনতে পারে তাকে কিন্তু তার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছেই নেই তার। অন্তি বুঝতে পারে নিহাল তাকে দেখেই থেমেছে কিন্তু এর সাথে যদি চেনা জানা কেউ কথা বলতে দেখে ফেলে তবে তার মায়ের কাছে খবর পৌঁছুতে বেশি সময় লাগবে না। বাতাসের বেগে খবর পৌঁছে যাবে। মা তাকে বিশ্বাস করে বলেই সবকিছুতে ছাড় দিয়েছে কিন্তু এই ছেলেটার চোখে দেখলেই অন্তি বুঝতে পারে কথা বলা শুরু করলে পরে আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। ওর সেই কথাটা, কেনো ভয় হয় বুঝি যদি প্রেমে পড়ে যান! বারবার কানের কাছে বাজতে থাকলো। একটাও রিক্সা বা অটো, সিএনজি কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না কেনো? উফফ! বিরক্ত লাগছে নিজেকেই।

অন্তি বিরক্ত হচ্ছে দেখে নিহাল বলে,
-বিরক্ত হচ্ছো? হওয়ারই কথা, আমার মনে হচ্ছে তুমি এখানে অপেক্ষা করছো বাড়ি ফিরবে বলে।
নিহাল ঘড়ি দেখে তারপর আবার বলে,
-হ্যা, এই সময়টা তো বাড়ি ফেরারই সময়। তোমার ড্রাইভার নেই সাথে?
চারিপাশে দেখে আবারও বলে,
-গাড়িও নেই দেখছি।
অন্তির কাছে আর সহ্য হলো না। একে যতো ইগনোর করছে ততোই যেনো যেচে পড়ে কথা বলার চেষ্টা করছে। সেদিন রাতেও বাড়িতে ফেরার সময় ড্রপ করতে চাইলো। রিধির বাবা-মাও তার কথা শুনে তাল মেলাতে থাকেন কিন্তু অন্তি নিজের কাছে গাড়ি আছে বলে বেরিয়ে এসেছিল। আজও কিছু একটা বলে ম্যানেজ করতে হবে ভেবে অন্তি বলে,
-আসলে ড্রাইভারের কিছু কাজ ছিল তাই….
-মানে তোমাকে এই জায়গায় একা অপেক্ষারত রেখে ড্রাইভার নিজের পার্সোনাল কাজে ব্যস্ত। বাহ! বেশ গুণী ড্রাইভার দেখছি তোমার।
-কারো বিষয়ে না জেনে তাকে জাজ্ করা উচিত নয়, সেটা সম্ভবত আপনার জানা নেই। যাই হোক শুনুন, আমার ড্রাইভার নিজের কাজ ভালো মতোই করতে জানে আর খুব ডেডিকেশনের সাথেই করে। বাড়িতে তার অসুস্থ মা জেনেও শত চিন্তার মাঝে আমায় আগে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল সে কিন্তু আমি নিজেই যাইনি।
-ক্ষমা করবেন আমার এইভাবে বলা উচিত হয়নি।
-একটা প্রশ্ন করবো?
-করো।
-আপনি অন্য শহরে থাকেন না তবে আজ এইখানে, বিষয়টা ক্লিয়ার করলে ভালো হতো।
-রুহান বলেছিল আমার বাবার ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ায় আমি অন্য শহরে চলে যাই তারপর কিছুদিন আগেই ফিরেছি। ওর কথাটা ভালো করে মনে করো, ফিরেছি আমি তবে ঘুরতে আসিনি। পার্মানেন্ট কি-না জানি না তবে বাবা আবারও এই শহরে সিফট করেছেন।
-ওহ।
-এখন আমি একটা প্রশ্ন করি?
-প্লিজ।
-কোনো কিছু না পেলে এইভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবে, বাড়ি ফেরার প্ল্যান নেই না-কি?
-তেমন কিছু নয়। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই পেয়ে যাবো।
-আমি কী ড্রপ করে দেবো?
-না, আই মিন আপনি কেনো নিজের কাজ ফেলে আমার পেছনে সময় নষ্ট করবেন?
-সময় নষ্ট কোথায়? আসলে সময় তো এখন নষ্ট হচ্ছে এইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে। আমার কোনো কাজ নেই অন্তরা, তুমি চাইলে তোমায় পৌঁছে দিতে পারি। আমার সমস্যা হবে না, ট্রাস্ট মি।
অন্তি ইতঃস্তত করছে দেখে নিহাল এবার বিষয়টা ধরতে পারে এবং সে বলে,
-ইফ আই এম নট রং এখানেও কী মা’য়ের বিশ্বাসের সেই কেইস আছে?
অন্তি অবাক হয়ে নিহালের দিকে দেখে। তার এইভাবে দেখাটাই নিহালকে তার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়। নিহাল বলে,
-কুল অন্তরা। আমি তোমায় ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি না। আমি তো শুধু তোমায় বাড়িতে পৌঁছে দিব তারপর আমি আমার পথে তুমি তোমার বাড়িতে; দ্যাট’স ইট।

নিহালের কথায় অন্তি তার বাইকের পেছনে উঠে বসে। বাইক চলছে নিহাল প্রশ্ন করে,
-আগে কখনো বাইকে বসেছ?
-না, আসলে মা আমার জন্য গাড়ি একটা সবসময় তৈরি রাখে তাই বাইকে ওঠার তেমন প্রয়োজন হয়নি।
-ইচ্ছে হয়নি কখনো?
-হয়েছে কিন্তু…
-আর বলতে হবে না। আজ তোমার ইচ্ছে পূর্ণ করলাম তবে। বিনিময়ে কী দেবে বলো?
অন্তি নিজের ব্যাগ থেকে একটা চকলেট নিহালের ঘাড়ের পাশ দিয়ে সামনে নিয়ে গিয়ে বললো,
-এই নিন এছাড়া আমার কাছে আর কিছু নেই।
নিহাল হেলমেটের ভেতর থেকে প্যাকেটের কিছু অংশ দেখতে পেল শুধু তারপর হাসলো। সেই হাসির শব্দ ছিল না। সে বললো,
-বাহ, বলতে না বলতেই চকলেট রেডি! মানতে হবে তোমায়। কিন্তু এখন তো আমি চকলেট ধরতে পারবো না। তুমি আরেকটু কষ্ট করে চকলেটটা আমার পকেটে ঢুকিয়ে দাও।
অন্তি চেষ্টা করলো কিন্তু চকলেট পকেটে দিতে পারলো না তারপর বললো,
-হচ্ছে না তো।
-আচ্ছা সে কোনো বিষয় না তুমি যখন বাড়ির সামনে বাইক থেকে নামবে তখন দিও।
-আচ্ছা।
-বাই দা ওয়ে, থ্যাংকস ফর দা চকলেট মিস অন্তরা।
-আমি তো এখনও আপনাকে চকলেটটা দিতেই পারিনি।
-পরে তো দেবেই।
-হু।

নিরবতায় কেটে যায় কিছু সময় নিহাল আবারও একটা প্রশ্ন করে,
-তোমার বাড়িতে কে কে আছেন?
-মা, আমি আর আমার ভাই রাফিদ।
-আর তোমার বাবা?
-বাবা নেই। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি যখন বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
-সরি অন্তরা আমি আসলে…
-ইট’স ওকে আপনি তো আর জানতেন না।
-অন্তরা তোমার ভাই আছে বললে তাই না, সে কী করে?
-ভাই এবার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হলো আমাদেরই কলেজে।
-কলেজে কেনো, ভার্সিটি চান্স হয়নি।
অন্তরা হেসে উত্তর দেয়,
-এইচএসসি এর আগেই বুঝি ভার্সিটি চান্স পাওয়া যায়? আগে জানলে তো আমি কলেজেই পড়তাম না।
-ঠিক বুঝিনাই।
-রাফিদ আমার দেড় বছরের ছোট।
-মানে তুমিই বড়ো!
অন্তরা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ছোট্ট করে উত্তর দিয়ে বলে,
-হুম।

অন্তরা যখন বাড়ি ফেরে রুবি তখন বাড়িতে ছিলেন না। পরে সার্ভেন্ট এর কাছে থেকে জানতে পারে ওর মা আসলে বাড়িতেই আসেননি। একটা জরুরী মিটিং আছে তাই আসতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন বাড়িতে তবে সেই সময় অন্তি বাড়িতে ছিল না। এসে যখন জানলো তখন স্বস্তি অনুভব করলো ও। যাক এই যাত্রায় বাঁচা গেল পরের বার থেকে আর দেরি করবে না। সোফায় বসে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিল সে। ভয়ে এতোক্ষণ চুপসে ছিল সেটারই সাইড ইফেক্ট।

অন্তি চোখ বন্ধ করে সোফার পেছনে মাথার ভার দিয়ে বসে ছিল তখনই একজন সার্ভেন্ট এসে বলে,
-অন্তরা ম্যাম।
-বলুন।
-লাঞ্চ করবেন না?
-রাফিদ খেয়েছে?
-আজ্ঞে না উনি এখনও শুয়ে আছেন।
অন্তি চোখ মেলে সোজা হয়ে বসে। ওর ভাইয়ের মতো অলস প্রাণী আর দু’টো নেই এই পৃথিবীতে। সে নিজের ব্যাগ নিয়ে আগে নিজের ঘরে যায় তারপর ফ্রেশ হয়ে ভাই রাফিদ’কে ডাকতে তার ঘরে যায়। ঘরের অবস্থা দেখেই তার রাগ চড়ে যায় মাথায়। প্রত্যেকটা দিন একজনকে এসে তার ঘর ঠিক করে দিয়ে যেতে হয় আর তার পরের দিনই আবার সেই আগের অবস্থা। অন্তি রাগী কণ্ঠে ডাকে,
-রাফিদ ওঠ।
-যা না বোন, জালাতন করিস না।
-তুই উঠবি নয়তো পুরো এক বালতি পানি এনে তোর উপর ঢেলে দেবো।
-এমন করিস কেন অন্তি?
-আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।
অনেক কষ্টে টেনেটুনে রাফিদকে উঠিয়ে নিয়ে যায় অন্তি। দু’জনে দুপুরের খাবার একসাথেই খায় তারপর যে যার ঘরে চলে যায়।

সবকিছুর মাঝে অন্তি ভুলে যায় আজকে নিহালের কথা। সে পড়াশোনায় ডুবে আছে সামনেই টেস্ট মিডটার্ম এক্সাম তারপর টেস্ট শুরু হবে। অন্তিকে পড়তে হবে ভালো করে।
অন্তি তখন ম্যাথ সলভ করতে ব্যস্ত এমন সময় একটা ফোন কল আসে। নম্বরটা অন্তি চেনে না। তবুও রিসিভ করে কানের কাছে নেয়। ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে,
-চকলেট টা মজা ছিল অন্তরা।
-আপনি?
-হ্যা আমি।
-আমার নম্বর কোথায় পেলেন?
-চুরি করেছি।
-মানে?
-তোমার বান্ধবী আছে না রিধি..
-হ্যা।
-তার কন্ট্যাক্ট লিস্ট থেকে চুরি করে নিয়েছি।

চলবে……