#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা
১০.
অন্তি ওয়াশরুম থেকে ফিরে এলে আবিরকে ঘরের মাঝে কোথাও দেখতে পায় না এতে একটু অবাকই হলো সে তার পরেই আবার ভাবলো সে যেখানে যাবে যাকগে এতে তো অন্তির দেখার বিষয় নেই। অন্তি থাকবে অন্তির মতো। সে দরজার পানে চেয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড তারপর এগিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে এসে শুয়ে পড়ে। এই লোকটা তাকে লোভে পড়ে বিয়ে করেছে এরপর না তার উপর অধিকার খাটাতে আসে! আচ্ছা সে যদি কাছে আসতেও চায় অন্তির তো এতে কিছু করার থাকে না। সে তো এখন তার স্ত্রী। যদি সে কাছে আসতে চায় অন্তি কী তাকে বাধা দেবে নাকি এই বিয়ের মতোই সবকিছু মুখ বুঁজে সহ্য করবে? অন্তি চিন্তায় পড়ে যায়, অনেক অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার মস্তিষ্কে যেই প্রশ্নগুলোর একটারও উত্তর নেই অন্তির। সে এখন ইচ্ছা, অনিচ্ছা, দ্বায়িত্ব, অধিকার এইসবের জালে বন্দি রয়েছে। যতোই জট খুলতে চাচ্ছে ততোই সেটা পেঁচিয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে ভালো সে ঘুমিয়ে যাক।
অন্তি পঁয়ত্রিশ মিনিট যাবত বিছানার এপাশ ওপাশ করেই চলেছে তবুও তার চোখে কোনো ঘুম নেই। তার ভয় হয় কোথাও আবির না এসে যায়। ঘুমিয়ে পড়লে একটা পথ থাকবে বাঁচার কিন্তু ঘুম না এলে তাকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতে হবে তারপর ওই অচেনা স্বামী নামক লোকটা তার পাশে এসে শোবে। অন্তি এসব কখনো কল্পনাও করেনি। সে সবসময় নিহালকে চেয়ে এসেছে, সবসময় চেয়েছে নিহালের নামে বউ সাজতে। আর আজ সে বউ সাজল ঠিকই, নিহালের জন্যই সাজল তবে তার সেই সাজ ছিল অন্য কারো নামে। তার বউ সাজার কারণ নিহাল ছিল ঠিকই তবে সে হয়ে গেল অন্যকারো। অন্তির কাঁদতে ইচ্ছে করছে না এখন, কান্নাটাও যেনো পর বলে মনে হচ্ছে। আচ্ছা নিজের চোখের অশ্রু কী কখনো পর হয়! হয়তো বা হয়, নইলে তারা অন্যের দেওয়া কষ্টের বিনিময়ে কেনো বেরিয়ে আসবে?
অন্ধকারের মাঝে এক সুনসান সড়কে দাঁড়িয়ে আছে আবির। তার বার বার মোবাইলের পাওয়ার বাটন প্রেস করে সময় দেখাটা বলে দিচ্ছে সে কারো অপেক্ষায় আছে। মুহুর্তের মাঝেই তার চোখে আলো এসে পড়ে। সামনে থেকে একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে। গাড়িটি তার সামনে এসে থামতেই আলোটা হালকা হয়ে এলো। সে এগিয়ে গেল, গ্লাসটা নামলো সেই ফাঁকা দিয়ে বেরিয়ে এলো একটা প্যাকেট। আবির সেটা হাতে নিলো আর তারপর আবারও গ্লাসটা উঠে গেল। চলে গেল গাড়িটা নিজ গন্তব্যে শুধু দাঁড়িয়ে রইলো আবির। খানিক বাদেই মোবাইলের টর্চ জ্বেলে একহাতে ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে প্যাকেটটা একখানি ফাঁকা করলো। তিনটে হাজার টাকা নোটের বান্ডিল দেখে তার চেহারায় হাসি ফুঁটে উঠলো। আবারও প্যাকেটটা আগের অবস্থায় নিয়ে পকেটে রেখে দিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করলো সে।
অন্তির ঘুম ভেঙে যায় খুব ভোরেই। সূর্য তখন কেবলই দেখা দিয়েছে। অন্তি বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয় তারপর দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে। ড্রইং রুমে গিয়ে অবাক হয়, ভেবেছিল রাতে হয়তো আবির এখানটাতেই ছিল কিন্তু না সে এখানে নেই। অন্তি কৌতুহল বশত সারা বাড়ি খুঁজে ফেলে কিন্তু আবিরকে কোথাও পায় না সে। চিন্তায় তার কপাল কুঁচকে আসে, সাথে সাথে নিজেকে ধমক দিয়ে বলে,
-তুই কী পাগল হলি অন্তি? বিয়েটা তোর জোর করে হয়েছে আর সেই বিয়েতে যেই বর হোক সেও জোর করে তোর উপর চাপিয়ে দেওয়া একটা বস্তু মাত্র। পার্থক্য শুধু এইটুকুই যে তার মাঝে প্রাণ আছে। আর কিছুই নয়। তাকে নিয়ে ভাবা বন্ধ কর। তোর এই মুহুর্তে নিহালকে নিয়ে ভাবা উচিত। কাল রাতে একবার খবর পাওয়ার পরে তো আর পাসনি কোনো খবর। আচ্ছা মা’কি আমায় ফোন করতে ভুলে গেল? আমার ফোনটাই বা কোথায়?
অন্তি ঘরে ড্রইংরুমে সব জায়গায় তন্নতন্ন করে নিজের মোবাইলটা খোঁজে কিন্তু সেটা খুঁজে পায় না। তার সন্দেহ হয় হয়তো আবিরই তার ফোন সরিয়ে দিয়েছে। সে ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে একটা গ্লাসে পানি ঢেলে এক চুমুক দিয়েই রেখে দেয়। পানিটা খাওয়া যাচ্ছে না, কাল থেকে রাখা আছে এই পানি। নতুন করে রাখা হয়নি আর। অন্তি জানেও না কোথায় থেকে পানি নিয়ে খাবে তাই ওখানেই একটা চেয়ার টেনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে সে। সামনে কী করবে তাই ভাবছে অন্তি।
রুবির চোখে ঘুম নেই গতকাল রাত থেকেই। অন্তি’কে বিদায় জানানোর পরেই রাফিদ বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছে, তার কথা ছিল এমন যে তার মা চাইলেই তার বোনকে এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে পারতেন কিন্তু তিনি অন্তি’কে ওই লোকটার পাতা ফাঁদে পা দিতে দিলেন। এখন হয়তো প্রত্যেকটা দিন অন্তির জীবনে কষ্ট বয়ে আনবে আর সে ভাই হয়ে কিছু করতে পারবে না। কেনো পারবে না? কারণ সে খুব ছোট তাই পারবে না। সে যখনই বোনের হয়ে সেই লোক মানে বখতিয়ারুজ্জামান খানের সাথে লড়তে চেয়েছে তার মা ততবার তাকে বাঁধা দিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছে যে সে এখনও অনেক ছোট। আর এইভাবে মায়ের কথা শুনতে শুনতে নিজেকে দমিয়ে রাখতে রাখতে আজ এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে তার বোন ইচ্ছের বিরুদ্ধে একজনকে বিয়ে করে চলে গেছে। যেখানে ইচ্ছেটাই নেই সেখানে সুখী হবে কী করে তার বোনটা!
রুবি ছেলের কথায় চুপ ছিলেন দেখে সে আরও ভড়কে যায় তারপরই বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় নিজের বাইকটাও নিয়ে যায়নি সে। কে জানে কোথায় আছে সে এই মুহুর্তে!
কলিং বেলের আওয়াজে অন্তি নড়েচড়ে বসে। ভাবে গিয়ে খুলবে কি-না। যদি কোনো অচেনা ব্যক্তি হয় তখন! সে তো এই মুহুর্তে এই বিশাল ফ্ল্যাটে একাই রয়েছে কেউ যে সেই সুযোগটা কাজে লাগাবে না তার কী গ্যারান্টি। ভাবনার মাঝেই আবারও কলিং বেল বাজে। অন্তি উঠে দাঁড়ায়। ডান হাতটা মুখে নিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে ভাবে খুলবে না খুলবে না? আরও কয়েকবার কলিং বেলের শব্দ শোনা যায়। অন্তি বুকে ফুঁ দিয়ে নিজের মাঝে সাহস যোগিয়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খোলে। একটা লোক দাঁড়িয়ে। দেখে মনে হচ্ছে ডেলিভারি বয়। লোকটা তার দিকে বড় একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে তারপর সাইন করিয়ে নিয়ে চলে যায়। অন্তি দরজা লাগিয়ে ভেতরে এসে ডাইনিং টেবিলের ওপর ব্যাগটা রাখে। একে একে সবকিছু বের করে সে। বড়ো সেই ব্যাগের মাঝে আরও তিনটি ব্যাগ রয়েছে। একটাতে ব্রেড, বাটার, রুটি আর সবজি ছিল। রুটি সবজিটা গরম মনে হচ্ছে। সেটা হয়তো ব্রেকফাস্টের জন্য দেওয়া হয়েছে। অন্য আরেকটা ব্যাগ থেকে কয়েকটা বোতল বেরিয়ে এলো। একটা ম্যাংগো জুস, একটা অরেঞ্জ জুস, একটা কোকাকোলা আর শেষ বোতলটা ছিল সেভেন আপের। এরপর আরেকটা প্যাকেট থেকে কিছু ফল বেরিয়ে এলো আর তার নিজে কাঁচা সবজি। অন্তি একে একে সবকিছু রান্নাঘরে গুছিয়ে রেখে এলো। সেখানে আটা, চাল, ডাল এসব আগে থেকেই ছিল। ফ্রীজেও কিছু কিছু জিনিসপত্র রাখা ছিল তবে যেগুলো ছিলো না সেগুলো এখন এলো। হয়তো আবির পাঠিয়েছে। অন্তি বেশি ভাবলো না, সে একটা প্লেট আর একটা বাটি নিয়ে সেটাকে ভালো করে পরিষ্কার করে নিয়ে গিয়ে রুটি সবজিটা বের করলো। তারপর খেয়ে উঠলো পুরোপুরি। খিদে পেয়েছিল খুব তাই হয়তো সবটুকু খেয়ে ফেলেছে। তার নিজের পেট শান্ত হলেই হলো অন্য কাউকে নিয়ে ভাবার সময় নেই তার।
এর ঠিক আধ ঘণ্টা পরে পরপর আরও দু’টো পার্সেল এলো। একটা অনেক বড় সাইজের কার্টুন আর একটা গিফট র্যাপ করা ছোট্ট বক্স। অন্তি ছোট বক্সটা খুললো সেখানে একটা নতুন মোবাইল। অন্তি মোবাইলটা পেয়ে সাথে সাথে মা’কে ফোন করে বসলো। এখন কে পাঠালো না পাঠালো ওসব ভাবার সময় নেই তাকে এখন নিহালের খবর জানতে হবে এরপর সুযোগ বুঝে বেরিয়ে একবার তার সাথে দেখা করতে হবে।
রুবির সাথে কথা বলে জানতে পারলো নিহালের কন্ডিশন খুব একটা ভালো নয় আবার ওইদিকে রাফিদকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুটো খবই অন্তির কাছে চিন্তার বিষয়। সে চিন্তায় পড়ে তৃতীয় বক্সটা আর খুলে দেখলো না। তাকে বেরোতে হবে। আবারও মা’কে ফোন দেয় সে। জানতে চায় নিহাল কোন হাসপাতালে আছে? রুবি বলেন সেটা তিনি কেনো নিহালের বাবা-মাও জানেন না। নিহালের চিকিৎসা চলছে ঠিকই তবে কেউ জানে না তাকে কোথায় রাখা হয়েছে। রুবি অন্তির অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে বলেন যে যদি কোনো খোঁজ পান তবে সবার আগে অন্তিকেই জানাবেন তিনি। অন্তি মোবাইলটা রেখে সোফায় বসে পড়ে। উপরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-কেনো এমনটা হচ্ছে আমার সাথে? ভালোই তো ছিলাম কারো কোনো ক্ষতিও করিনি তবে আমার সাথেই কেনো?
রাফিদ এই মুহুর্তে বখতিয়ারুজ্জামান খানের মুখোমুখি বসে আছে। তাকে এতোটা আঘাত করা হয়েছে যে সে ঠিকমতো তাকাতেও পারছে না। বখতিয়ার উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে আর তারপর…….
চলবে…..
#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা
১১.
রাফিদ এই মুহুর্তে বখতিয়ারুজ্জামান খানের মুখোমুখি বসে আছে। তাকে এতোটা আঘাত করা হয়েছে যে সে ঠিকমতো তাকাতেও পারছে না। বখতিয়ার উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে আর তারপর রাফিদের মাথাটা সোজা করে ধরে তাকে পান করায়। গলাটা শুকিয়ে ছিল রাফিদের এতক্ষণে যেনো প্রাণ ফিরে পেলো সে। রাফিদ মাথা তুলে একবার তার দিকে দেখে তারপর তাকে বলে,
-আপনি আমায় সাহায্য করতে চাইছেন কেনো?
-আমি কোথায় সাহায্য করছি তোমায়!
রাফিদ দাঁত বের করে হাসে। দেখা যায় দাঁতে তার রক্ত। বখতিয়ার বলে,
-এতো মার খাওয়ার পরেও হাসছিস তোর ভয় করছে না?
-আমাকে মারার হলে আর যাই হোক পানিটা এগিয়ে দিতেন না। কী খান সাহেব ঠিক বললাম তো?
-তুই ব্যাডা তোর বাপের মতোই হয়েছিস। তোর বাপও এমনই ছিল, ভেঙে যেতো তবুও মচকাতো না।
-খুব চেনেন আমার বাবা কে?
-হুম চিনি।
-বাবা তো নেই এখন বলুন আপনি আমার কাছে কী চান? আমার বোনের জীবন নষ্ট করে শান্তি হয়নি।
সরল স্বীকারোক্তি,
-না হয়নি তাই তোকে নিতে এসেছি।
-আমি যাবো না আপনার সাথে।
-দেখ, তুই আমার সাথে না গেলে কেউই তোকে বাঁচাতে আসবে না।
-আমার মায়ের কানে একবার খবর গেলেই আমি এখান থেকে বেরিয়ে যাবো।
-তোর মায়ের কানে কখনোই খবর যাবে না, কী বলেন এসপি সাহেব?
রাফিদ তার দৃষ্টি অনুসরণ করে ডান দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে, এসপি হাসান দাঁড়িয়ে আছেন। এ তো তার মায়ের সব কাজ করে তবে আজ এই লোকের সাথে তাল মিলিয়েছে কেনো? এই দুনিয়াতে কাউকেই বিশ্বাস করতে নেই।
এসপি হাসান এগিয়ে এসে বলেন,
-দেখো রাফিদ, উনি যা বলছেন শোনো নইলে কখনো বেঁচে ফিরতে পারবে না তুমি। রাতের অন্ধকারে মদ খেয়ে মাতলামি করছিলে আবার ওনার ড্রাইভারকে নিজের গাড়ি দিয়ে উড়িয়েছো তুমি। এখন উনি তোমার উপর কোনো কেইস না করেই তোমাকে ছেড়ে দিতে চাইছেন এতেও তোমার আপত্তি!
-আপনি কী সবাইকে নিজের মতো ভেবেছেন?
রাফিদের এই কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে এসপি হাসান এগিয়ে এসে তার চুল ধরে টেনে লাঠি দিয়ে গলা চেপে ধরেন। মিস্টার খান সেই সময় বলে,
-কাম ডাউন এসপি সাহেব। বাচ্চা ছেলে রক্তের তেজ বেশি বুঝতে চেষ্টা করুন। আপনি আমিও অমনিই ছিলাম ওই বয়সে।
এসপি রাফিদ কে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গেলে সে আবারও বলে,
-দেখ রাজি হয়ে যা, এই একটাই পথ খোলা আছে তোর সামনে নয়তো আমি এমন ব্যবস্থা করবো যে তুই আর কখনো বাইরের আলো দেখতে পারবি না।
-ভুলে যাবেন না আপনার ড্রাইভার এখনো বেঁচে আছে। আমায় ফাঁকা হুমকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
-এখন বেঁচে আছে তবে আমার একটা ফোন কল আর…. বুঝতে পেরেছিস নিশ্চয়ই। এবার ডিসিশন নে। ভেবে দেখ মাতাল অবস্থায় বন্ধুকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তারই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে তুই একজনকে উড়িয়ে দিয়েছিস। এখন শোন কাহিনীর টুইস্ট তোর সেই বন্ধু যদি সাক্ষী দেয় তুই তার গাড়ি ছিনতাই করতে পালাচ্ছিলি তখন তো আরো একটা কেস অ্যাড হয়ে যাবে।
রাফিদ’কে বিকেল অবধি সময় দিয়ে এসপি হাসানকে বলে বেরিয়ে যায় সে। রাফিদ ভাবতে থাকে, তার বেঁচে ফেরার একটাই পথ এখন আর সেটা হলো ওই লোকটার কথা মেনে নেওয়া। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে তারপর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কন্সটেবলকে বলে,
-শুনুন, এসপি হাসানকে একটু ডেকে দিন।
ডাকা মাত্রই হাজির হয় এসপি হাসান। রাফিদ তাকে বলে,
-আমি রাজি।
খবর সঠিক জায়গায় পৌঁছুতে এক মিনিটের বেশি সময় লাগলো না। অর্ডার আসলো আর সেই অনুযায়ী রাফিদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হলো। রাফিস অনেকটা সময় ওই অবস্থায় থাকার পরে বুঝলো গন্তব্য এসে গেছে কারণ গাড়িটা থেমে গেছে। তাকে নামানো হলো তারপর কিছুটা হেঁটে যাওয়ার পরে একটা দরজা খোলার আওয়াজ কানে ভেসে আসলো। আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার পরে তার চোখদুটো খুলে দেওয়া হলো। রাফিদকে সামনের চেয়ারে বসতে বলা হলে সে চুপচাপ গিয়ে বসে পড়ে আসলে সে বুঝে উঠতে পারছে না কী হচ্ছে তার সাথে। ভাবনার মাঝেই তার সামনে দুজন লোক মিলে একটা টেবিল এনে রাখে। এরপর যা ঘটে তা দেখে রাফিদ অবাক না হয়ে পারে না।
একের পর এক ভিন্ন ভিন্ন পদের খাবারের বাটি রাফিদের সামনে সাজিয়ে রাখা হয়। রাফিদ শুধু চেয়ে রয় তার কিছু বলার ভাষা হারিয়ে গেছে। এমন সময় বখতিয়ার সেই ঘরে প্রবেশ করে আর বলে,
-এসে বসে গেছিস অন্তত হাতটা পরিষ্কার করতে হয় সেই জ্ঞানটুকুও নেই?
রাফিদ কিছু বলে না, একজন সার্ভেন্ট এসে তাকে সাথে নিয়ে গিয়ে ওয়াশরুম দেখিয়ে দেয় তারপর সে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আবার ফিরে আসে। ওর যাওয়া মাত্র সব সার্ভেন্টদের সরিয়ে দিয়ে এসপি হাসনকেও বিদায় জানানো হয়। এরপর দু’জনে খেতে শুরু করে। রাফিদের বেশ খিদে পেয়েছিল ও নিজের মতো খেতে থাকে এমনকি এটাও খেয়াল করে না যে সামনের চেয়ারে বসে কেউ তাকে অপলক দেখছে।
-আস্তে খা, গলায় আটকে মরলে তখন লোকে আমায় মার্ডারার বলবে।
রাফিদ একবার সামনে তাকিয়ে তারপর খেতে শুরু করে।
-তোকে জেল থেকে বের করে এনে এখানে তো সুন্দর আপ্যায়ন করা হচ্ছে কেনো জানিস?
-জানি।
-তাই? গ্রেইট! বল শুনি কেনো আনা হয়েছে তোকে?
-আমায় ভালো করে খাইয়ে তারপর মেরে লাশটা আমার মায়ের কাছে পার্সেল করবেন সেই জন্য।
-ইউ ইডিয়ট, খাওয়া বন্ধ কর।
ধমক শুনে রাফিদের খাবার গলায় আটকে যায়। বখতিয়ার উঠে গিয়ে তাকে পানি খাওয়ায় তারপর আবার এসে নিজের জায়গায় বসে বলে,
-তোর বোন অন্তরা তার সমস্ত ইনফরমেশন আমার চাই।
-কেনো তাকে বিয়ে দিয়ে আপনার শান্তি হয়নি? যার সাথে বিয়ে দিয়েছেন সে তো আপনার চামচা তার কাছ থেকেই খবর নিলেই পারেন।
-তোর কী মনে হয় অন্তরার বিয়ে আমি করিয়েছি?
-মানে!
-তোর মা করিয়েছে আমার কাছে থেকে বাঁচাতে কিন্তু মহিলা এটা জানে না যে আমি যা চাই তা করেই ছাড়ি।
-কীহ! মা…
-হ্যা তোর মা। এখন আমায় এটা বল অন্তরার কাছে যাওয়ার শর্টকাট কোথায় গেলে পাবো?
-কী চাইছেন বলুন তো!
-অন্তরার আশেপাশে থাকতে চাই আমি।
-ও তো এখন বিবাহিত।
-সেসব তোকে চিন্তা করতে হবে না। এখন বল অন্তরার সব খবর কার কাছে পাবো?
-এমন কেউ নেই।
-আছে আছে তুই শুধু নাম বল নাহলে তৈরি হয়ে যা আবারও এসপির সাথে যাওয়ার জন্য।
রাফিদ কথাটা শোনা মাত্রই বলে,
-ছায়া।
-কী?
-ছায়া, অন্তির বেস্ট ফ্রেন্ড। দেখলে মনে হবে না দু’জনে খুব একটা মিল আছে কিন্তু অন্তির সব খবর, সব রহস্য ছায়ার পেটে আছে। এমন কোনো কথা নেই যা ছায়া জানে না।
-চল খেয়ে সোজা বাড়ি যা আর হ্যা একটা কথা মাথায় রাখবি সবসময় এখানে যা ঘটলো তা যেনো ম্যাডাম রুবির কানে না পৌঁছোয়।
রাফিদ মাথা নাড়িয়ে প্রশ্ন করে,
-সে না হয় আমি নিজের মাঝেই রাখলাম কিন্তু আপনি কী করতে চাইছেন বলুন তো?
-খেলবো।
-কিহ!
বখতিয়ার হেসে বলে,
-তোর বোনের বান্ধবীর সাথে একটুখানি খেলব বুঝলি আর সেই খেলা খেলতে খেলতেই পথ বানাবো তোর বোনের কাছাকাছি পৌঁছোনোর।
সপ্তাহ পেরিয়ে আরও দু’টো দিন পেরিয়ে যায়। রুবির চিন্তা বাড়তে থাকে। মেয়েটা তার কেমন আছে কে জানে? আর এইদিকে তার ছেলে কেমন পাল্টে গেছে। মায়ের সাথে কথা বলে না ঠিকমতো। সেইদিনের রাগটা হয়তো এখনও পড়েনি তার তাই এমন করছে সে।
অন্তরা খেয়াল করে আবিরকে, একটু আগে একটা মেসেজ এসেছে আবিরের কাছে আর সেটাকেই সে মনোযোগ সহকারে দেখছে। মেসেজ দেখা হলে আবির এগিয়ে আসে অন্তির কাছাকাছি দাঁড়ায় সে। অন্তি ঘাবড়ে গিয়ে কয়েক কদম পেছনে সরে যায়। আবির সেটা দেখে বলে,
-নিশ্চিন্তে থাকো আমি কিছু করছি না। যতদিন না তুমি আমায় মেনে নিচ্ছো ততদিন আমি নিজে থেকে এগোবো না।
আবির অন্তিকে বিয়ের দিনই যা আপনি করে বলেছিল এরপর থেকে তুমি তুমি শুরু করেছে। অন্তির অসহ্য লাগে এসব তবুও সহ্য করে যেতে হয়। এই আবিরই এর মাঝে দু’দিন তাকে নিহালের দু’টো ভিডিও দেখিয়েছিল। ব্যস অন্তির বোঝা হয়ে গেছে একমাত্র এর কাছেই নিহালের খবর পাওয়া যাবে তাই এর সাথে কোনো রকম খারাপ আচরণ করা যাবে না।
-কী ভাবছো?
আবিরের প্রশ্ন শুনে কেঁপে ওঠে অন্তি। সে বলে,
-কিছু ভাবছি না তো।
-ভাবার কিছু থাকলে তো ভাববে। আচ্ছা একটা কথা..
-কী?
-বিয়ের পরের সকালে একটা বড়ো পার্সেল এসেছিল না?
-হ্যা।
-কোথায় সেটা?
-স্টোর রুমে।
আবির রেগে যায় তারপর নিজে গিয়ে পার্সেলটা নিয়ে আসে। অন্তিকে বলে,
-ছুরি নাও, এটা খোলো।
অন্তি দাঁড়িয়ে থাকে, তার ইচ্ছে হচ্ছে না খুলে দেখার। আবির এবার ধমক দিয়ে বলে,
-কী হলো খোলো!
অন্তি ছুরি নিয়ে পার্সেলটা খোলার জন্য এগিয়ে যায়।
চলবে…..