যদি তুমি চাও পর্ব-১৪+১৫

0
361

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

১৪.
রুবি বসে আছেন নিজের কেবিনে নিজের সীটে আর তারই সামনে বসে আছে বখতিয়ারুজ্জামান খান নামের লোকটি। রুবি তাকে বললেন,
-যা চেয়েছিলে পেয়েছ এবার তোমার কথা রাখো।
-কিছু বললেন? ঠিক শুনতে পায়নি।
কানে আঙুল দিয়ে তারপর একটু ঘুরিয়ে আবার বের করে ফুঁ দিয়ে বললো বখতিয়ার। রুবি রেগে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন। রেগে গেলে হবে না, বিষয়টা নেগেটিভিটি সৃষ্টি করতে পারে। রুবি বললেন,
-তোমার কথা মতো আমি অন্তির বিয়ে দিয়েছি এরপর তোমার পালা। নিজের কথা রাখবে আশা করি।
এমন সময়ই রাফিদ হঠাৎ করে কেবিনে প্রবেশ করে। রুবি ছেলেকে এইভাবে আসতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন কারণ তিনি এমন সময়ে রাফিদকে এইখানে আশা করেননি। ও যে আসবে সেটাও জানায়নি আবার নক না করেই প্রবেশ করাতে রুবি কিছুটা ভড়কে যান।
-এ কেমন আচরণ রাফিদ।
রাফিদ মায়ের প্রশ্নে ধ্যান না দিয়ে মা’কে প্রশ্ন করলো,
-উনি তোমায় কী কথা দিয়েছিলেন মা?
বখতিয়ার বাঁকা হেসে যখনই উঠে দাঁড়িয়ে রাফিদের সামনে এগিয়ে আসে তারপর তার কাঁধে শক্ত করে হাত রেখে রুবির দিকে তাকিয়ে বলে,
-ছেলেকে এখনো জানাননি আমাদের ডিলের কথা! আমি এমনটা আশা করিনি আপনার কাছে। সে যাই হোক আপনি ওর প্রশ্নের উত্তর দিন এখন। আমি আসি। আমার মনে হয় না এর পরে আপনি আর কোনো কথা বলতে পারবেন।
সে এগিয়ে গিয়ে গেট হালকা ঢেলে আবারও থেমে গিয়ে রুবির পানে চেয়ে বলে,
-আর একটা কথা মিসেস খান। আমি কোনো কথা দিলে সেটা পূরণ করি তবে আপনি আপনার কথা এখনো পুরোপুরি ভাবে রাখতে পারেননি। আশা করি দ্রুতই সফল হবেন আর আমিও আমার দেওয়া কথা রাখবো। ভালো থাকবেন।

রাফিদ ওর মা’কে তখন থেকে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে যে কোন কথা রাখার কথা বলে গেলেন উনি কিন্তু রুবি উত্তর দিতেই চাইছেন না। এক পর্যায়ে আর না পেরে রুবি বললেন,
-ইট’স এবাউট নিহাল। নিহালকে ছাড়ার শর্ত রেখেছিল অন্তির বিয়ে করানোর সেটা আমি করিয়েছি। যার সাথে বলেছে আমি করিয়েছি। ভেবেছিলাম এরপরে নিহাল ছাড়া পেয়ে গেলে অন্তিকেও ফিরিয়ে আনবো কিন্তু এই লোক অনেক চালাক আমার থেকেও এগিয়ে। আমি বুঝে উঠতে পারছি না অন্তিকে ওই ছেলেটার কাছে থেকে কী করে মুক্ত করে আনবো তার উপর তুই এসে জুটেছিস।
রাফিদ এই মুহুর্তে গভীর চিন্তায় পড়ে গেল। আসলে কে সত্য বলছে কে মিথ্যে বলছে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না। আবার ভাবছে রুবি তার মা, মা কেনো তার কাছে মিথ্যে বলবেন? মিথ্যে বলার হলে ওই লোকটাই বলছে। হ্যা, একটা অচেনা লোককে বিশ্বাস করে নিজের মা’কে অবিশ্বাস করতে পারে না সে। হয়তো লোকটা তার মায়ের ক্ষতি করতেই অন্তিকে তার কাছ থেকে সরিয়েছে আর এখন রাফিদকে সরাতে চাইছে। কিন্তু রাফিদ এমনটা হতে দেবে না। কখনোই না। সে তার মাকে অবিশ্বাস করে দূরে সরে যাবে না। মায়ের ঢাল হয়ে ওই লোকটার মোকাবেলা করবে সে। এতে যার যা করার করে নিক। আর ভয় পেয়ে থাকবে না ও।

আবির রোজ দেরি করেই বাড়ি ফেরে। অফিস টাইমের পরে কোথায় যায় জানে না অন্তি আর জানার ইচ্ছেটাও হয় না তার কিন্তু আজ ভাবছে জানতে চাইবে। সে যদি স্বামীর অধিকার নিয়ে অন্তিকে কন্ট্রোল করতে চায় তবে অন্তিও ছেড়ে দেবে না। এতে একটা দিক দিয়ে অন্তিরই লাভ আছে। আবির যদি বিরক্ত হয়ে অন্তিকে ছেড়ে দেয় তবে অন্তি বরাবরের জন্য মুক্ত হয়ে যাবে। হ্যা, এই এক পথ আর অন্তি এই পথেই হাঁটবে।

আবির বাড়ি ফিরলো তখন রাত এগারোটা পয়তাল্লিশ বাজে। অন্তি ঘড়ি দেখে আবিরের সামনে এসে দাঁড়ায় আর আবির, সে অন্তিকে তোয়াক্কা না করে লুঙ্গি আর গেঞ্জি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। অন্তি ভাবে, এটা কী হলো! অন্তি কী ভূত নাকি যে তাকে চোখে দেখতে পায়নি লোকটা। এইভাবে চললে অন্তি নিজের পরিকল্পনায় সফল হবে কী করে?

অন্তি একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাবনায় এতোটা ডুবে রইলো যে সে আবিরকে বেরিয়ে যেতে দেখলো না। পরে খেয়াল হতেই ওয়াশরুমের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে একবার চেক করে নিলো ও তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আবিরকে খুঁজলো। দেখলো আবির বসে রাতের খাবার খাচ্ছে। অন্তি মনে মনে ভাবলো,
-এ আবার কেমন লোক। নিজেকে আমার স্বামী দাবি করে আর একটা বারের জন্যও জানতে চাইলো না আমি খেয়েছি কি-না! আবার খাওয়ার সময় কীসের এতো চ্যাটিং তার!
অন্তি রেগে এগিয়ে গিয়ে আবিরের সামনে থেকে খাবারের প্লেটটা নিয়ে নিলো তারপর বললো,
-আপনার অফিস টাইম কতক্ষণ?
আবির অবাক চেয়ে আছে তার দিকে, মুখে আধখাওয়া খাবার এখনও রয়েছে। কথা বলা বা খাবার গেলা কোনো অবস্থাতেই নেই ও এখন কারণ অন্তি ওরই এঁটো প্লেট থেকে খেতে শুরু করেছে। বিষম খেয়ে যায় আবির। সেটা খেয়াল করে অন্তি তাকে পানি এগিয়ে দেয়। পানি একেবারে গেলার পরে বলে,
-অন্তরা তুমি ঠিক আছো?
অন্তি ভ্রু-কুঁচকে উত্তর দিলো,
-আমার কী হবে! আপনি আমার কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করবেন না বলে দিচ্ছি। আগে বলুন কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?
-অফিসের কাজেই একটু ব্যস্ত থাকতে হয় আমাকে।
-রাত এগারোটার পরে কোন অফিস খোলা থাকে?
-তুমি কি বউ গিরি শুরু করলে নাকি?
-কেনো আপনি যদি আমার উপর অধিকার ফলাতে পারেন তবে আমি কেনো পারবো না? সে যাই হোক, এ কেমন ভাষা? বউ গিরি আবার কী?
আবির কিছুটা দমে যায়, ভাবতে থাকে কী হচ্ছে। তারপর বলে,
-কোনো অফিস খোলা না থাকলেও আমার কাজ থাকে, বসের বাড়ি গিয়ে তার সামনে বসে কাজ করতে হয় আমায়।
-বসটা মহিলা না পুরুষ?
অন্তির এমন প্রশ্নে আবির আবারও ধাক্কা খায়। কী বলে এই মেয়ে!
-তোমায় জোর করে আমার সাথে বেঁধে দেওয়া হয়েছে না, তবে এতো প্রশ্ন করছো কেনো? যে বিয়ে মানো না, সেই বিয়ে করা বরকে এমন প্রশ্ন করা তোমার সাজে না।
-লেট মি ক্লিয়ার, আমি বিয়ে মানি না এমনটা বলিনি। আমাকে জোর করে আপনার সাথে বেঁধে দেওয়া হয়েছে এটা যেমন সত্যি তেমনই বিয়েটাও সত্যি। সেই অনুযায়ী আমার আপনার উপর পূর্ণ অধিকার রয়েছে আর সেই অধিকার থেকেই জানতে চাইছি।
-বিয়ে মানো তুমি!
আবির উঠে দাঁড়িয়ে অন্তির হাত থেকে প্লেট রেখে ওকে নিয়ে গিয়ে বেসিনে হাত ধুইয়ে নিজের হাত ধুয়ে নেয়। তারপর ঘরে চলে যায়। অন্তি বোঝার চেষ্টা করে কী হচ্ছে আর যখন দেখে আবির ওর পরনের গেঞ্জিটা খুলে ফেলছে তখন ও চোখদুটো বড়বড় করে তাকায়। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে পেছনে সরতে থাকে। আবির এগিয়ে আসে আর বলে,
-বউ এর অধিকার ফলানো হচ্ছে না তবে এক দিকেই কেনো ফলাবে সবদিক দিয়েই তো….
এইটুকু বলার পরে আর কিছু বলতে পারে না আবির। অন্তি তাকে ধাক্কা দেয়।
আবির পড়ে যায় না ঠিক তবে এইটুকু বলে,
-আর কখনো আমার সাথে চালাকি করার চেষ্টা করো না নইলে খুব খারাপ হবে তোমার সাথে। কী ভেবেছ এসব করলে আমার কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে তুমি? পাবে না, পালিয়ে তুমি যেতেই পারো কিন্তু আমি জানি তুমি নিজের কথা ভাববে না। ভাববে তো তোমার সেই বয়ফ্রেন্ড এর কথা আর তাই এসব করছো তাই না। খুব ভালোবাসো ওকে?
অন্তি চুপ করে থাকে। আবির বলে,
-জানতাম উত্তর পাবো না। তুমি বোঝো আসলে ভালোবাসা কী? বুঝলে হয়তো এই অবস্থায় থাকতে হতো না তোমায়।

আবির বেরিয়ে যায়। আবিরের বলে যাওয়া শেষ কথাটির মানে অন্তির বুঝে আসে না। তবে সে এটা ভেবে অবাক হয় যে আবির ওর বিষয়টা কী সুন্দর সহজেই বুঝে গেল। ও তো বুঝতে দেয়নি তারপরেও।

চলবে……

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

১৫.
নিহাল উঠে বসে আছে হাসপাতালের বেডেই। ওর চোখ মুখে ব্যথা স্পষ্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে। একজন নার্স ওকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। ও ঠিকমতো খেতেও পারছে না। নার্স ওকে জোর করেই খাওয়ালো তারপর ওষুধ দিয়ে শুইয়ে দিলো। ব্যস অন্ধকার হয়ে গেল ফোনের স্ক্রিণে। অন্তি সেখান থেকে চোখ তুলে আবিরের দিকে তাকায়। আবির বলে,
-ধীরে ধীরে ঠিক হচ্ছে, পুরোপুরি ঠিক হলে ওর বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। ওর চিন্তা ছেড়ে নিজের সংসারে মন দেও। তোমার বা আমার জন্য বলছি না, তোমার আপনজনদের জন্যই বলছি।
অন্তি কিছু বললো না উঠে চলে গেল সেখান থেকে। কী বলবে ও! ওর জানা নেই আসলে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে ওর কী বলা উচিত বা কী করা উচিত। ও রান্নাঘরে গিয়ে সবজি কাটা শুরু করলো। কিছুক্ষণ বাদেই আওয়াজ এলো,
-আজকের সবজি রান্না করা হয়েছে ওগুলো কেটে নষ্ট করার মানে কী, অন্তরা?
অন্তির খেয়াল হয় ঠিকই তো, ওর মাথাটা মনে হচ্ছে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ও সবজি গুলো ভালো করে প্যাকেট করে ফ্রীজে রেখে দিলো আর বললো,
-নষ্ট হবে না। চিন্তা করবেন না।
আবির আর এই কথা এগোতে চাইলো না তাই বললো,
-তুমি যাবে আজ?
অন্তি চুপ, আবির আবারও বলে,
-ইচ্ছে না থাকলে আজ থাক। যেতে হবে না। আমি বেরোবো একটু পরেই।
বলে চলে গিয়েও ফিরে আসে আবির। সে বলে,
-অন্তরা।
-হুম, কিছু বলবেন?
-এক কাপ কড়া লিকারের চা বানিয়ে খাওয়াবে? মাথাটা ধরেছে।
অন্তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তারপর আবিরের কথা মতো চা বানাতে মন দেয়। অন্তির ইচ্ছে করে এই মানুষটার একটাও কথা না শুনতে কিন্তু পরেই ক্ষণেই আর পারে না। হয়তো এটা স্বামী-স্ত্রী নামক সম্পর্কের বন্ধনের প্রভাব যা তার উপর একটু একটু করে পড়ছে। এটাকে বাড়তে দেওয়া যাবে না। এমন একজন মানুষ যে অন্যের কাছে টাকার জন্য বিক্রি হতে পারে সে কোনো দিন ওকেও বিক্রি করতে পিছ পা হবে না। আচ্ছা মা কী আমায় একবারের জন্যও মনে করে না! তার আদরের অন্তি আজ এমন একটা জায়গায় বন্দি তার কী মনে হয় না একবার আমার খোঁজ নেওয়া প্রয়োজন তার। ফোন হাতে পেয়ে প্রথম তো তাকেই করল করেছিল অন্তি। নম্বরটা তো তার মায়ের কাছে থাকার কথা। উল্টো অন্তি ভেবেছিল মায়ের নম্বরটা হয়তো আবির ব্লক লিস্টেড করে দিয়েছে কিন্তু না আজ সকালেই একবার চেক করেছে অন্তি। এমন কিছুই করা হয়নি।

আবির বেরিয়েই যাচ্ছিলো তখনই খেয়াল করে অন্তি বেরিয়ে আসছে ওদের শোবার ঘর থেকে। জামাটা পাল্টে এসেছে কাঁধে তার ব্যাগ। মানে ও যাবে আজ। যাক ভালোই হলো। বিল্ডিং বাইরে এসে অন্তি অপেক্ষা করতে থাকলো আর এইদিকে আবির বাইক নিয়ে হাজির হলো। তারপর দুজনেই রওনা হলো।

ছায়ার হাতে একটা বাটন ফোন সেটার দিকে দেখেই সে হেঁটে চলেছে। তার সীমকার্ডটা ওইদিনই হয়তো রাস্তাতে পড়ে গিয়েছিল আজ একটা নতুন সীম কার্ড নিতে হবে তার ভাবনা জুড়ে এখন এই কথাটাই ঘুরছে। একে তো তার জমানো টাকাগুলো মায়ের নজরে পড়লো আর সেগুলো বের করে বড়ো বোনের হাতে ধরিয়ে দিলো। ক’দিন আগেই তার বড় বোনের শাশুড়ী এসেছেন তাদের বাড়িতে এরপর ফিরে গিয়ে যা তা করে কথা শুনিয়েছিলেন। তাকে অন্তত একটা কাপড় দিতে পারতো এই কথাই জপে যাচ্ছেন তিনি। বোনের সাধ্য নেই বাবার সামনে মুখ খোলার তার ওই একটাই জায়গা মায়ের কানের কাছে প্যান প্যান করেই সব হাশিল করে এসেছে সে। এখনও করে। আর ছায়ার মা! তিনি তো স্বামীর সামনে কথা বলতে গেলে মিয়িয়ে যান কিন্তু ছায়ার জমানোর উপর নজর পড়লে আর ছাড় নেই। ছায়ার মনে আছে ওই টাকা গুলো দু-আড়াই বছর নিজের হাত খরচ থেকে বাঁচিয়ে জমিয়েছিল সে। এমন নয় যতটা প্রয়োজন ততটাই নিয়ে যাক, সবটাই নিয়ে গেছেন। ছায়ার কিছু বলার বা করার ছিল না সেখানে।

পেছন থেকে হর্ন শুনতে পেয়ে ছায়া ঘাবড়ে যায়। দাঁড়িয়ে যায় সে। দেখে নিজেকে রাস্তার মাঝ বরাবর আবিষ্কার করে। সে তো সাইড ধরে হাঁঁটছিল তবে এইখানে কী করে চলে এলো? একলা হাঁটার এই এক ঝামেলা, মন কখন কোনদিকে চলে যায় বলাই মুশকিল। সে দ্রুত সরে আসে রাস্তার সাইডে। কিন্তু অবাক হয় এটা দেখে যে গাড়িটা সামনে এগিয়ে না গিয়ে তার পাশে এসে থামে। মিরর টা নামিয়ে কেউ বলে,
-এই যে মিস ছায়া।
ছায়া অবাক হয়ে বাঁকা হয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করে আর দেখেই অবাক হয়। লোকটির নজর ওর দিকেই তবে ওর উপর নেই দেখে আগ্রহ বশত সেই দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখার চেষ্টা করে আসলে সে কী দেখছে! দেখা মাত্রই ছায়া ঢোক গিলে নিজের হাতের বাটন সেটটা ব্যাগের ভেতরে রেখে দেয়। আর তখনই লোকটি মানে মেঘ বলে ওঠে,
-এখানে লুকোনোর বিষয় বলে তো কিছু দেখছি না। হ্যা, লুকোনোর হতো যদি বস্তুটা নিজের সামর্থের বাইরের হয়ে থাকে।
ছায়ার কাছে কথাটা ভালো লাগলো। মেঘ বললো,
-কোথায় যাচ্ছিলেন?
-ভার্সিটিতে যেতে হবে আর তার আগে একটা কাজ আছে আমার। ইম্পর্ট্যান্ট বলতে পারেন।
-এইভাবে কথা বললে আপনার মাজা ট্যারা হয়ে যাবে আর দেরি হবে সেটা আরেক কথা।
ছায়া সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
-তবে আপনি এগোন আমিও এগোই।
-আমি আপনাকে ড্রপ করে দিতে পারি।
-এতে আপনার সময় নষ্ট হবে না?
-যদি বলি না তবে কি একটা সুযোগ পেতে পারি?
ছায়া হেসে উঠে বসে গাড়িতে। মেঘ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। প্রথম প্রশ্নটা ছায়াই করে,
-আপনি কি এই পথ দিয়েই যাওয়া আসা করেন?
-সব সময় না তবে হ্যা এখন কয়েক মাস আমার পথ এটাই।
-বুঝিনি!
-পেছন সাইড থেকে একশত কিলোমিটার পেরিয়ে গেলে একটা ইন্সট্রাকশন সাইট দেখতে পারবেন। বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে, সেটার কাজ দেখতেই সকাল সকাল যেতে হয় একবার করে। তারপর এই সময় ফিরতে হয় অফিসের জন্য।
-আপনি নিজেই দেখেন এসব! কোনো কর্মচারীকে পাঠালেই পারেন।
মেঘ হেসে ছায়ার দিকে দেখে আবারও সামনে দেখে বলে,
-এই সব বিষয়ে আমি অন্য কাউকে ভরসা করি না। কাজ আমার এবং সেই কাজে আমার মতো গুরুত্ব অন্য কোনো এমপ্লয়ি দিতে পারবে না। কারণ জানেন?
-হয়তো বুঝতে পারছি তবে আপনার কাছেই জানতে চাইবো।
-ওই যে বিল্ডিংটা তৈরী হচ্ছে সেখানে কিন্তু একটা সময় মানুষের বাসস্থান হবে। কোনো ভুল চুক হলে সেটা পুরোপুরি আমার উপর আসবে। এমপ্লয়ি তারা কী! তারা তো আজ আছে মাস শেষে বেতন গুনছে এরপর কোথাও ভালো অফার পেলে উড়ে যাবে।
বলেই হাসলো মেঘ। ছায়া বললো,
-মনে হচ্ছে কোথাও বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন আগেই।
-কেনো মনে হলো?
-জানি না।
সামনে ভিড়ভাড় এলাকা, এখানেই ছায়া নামবে তাই বললো,
-এখানেই থামুন, আমি নামবো।
-কেনো?
-ওই যে বলেছিলাম একটা কাজ আছে।
মেঘ গাড়ি না থামিয়ে নিজের পকেট থেকে কিছু বের করে সামনে ধরলো। ছায়া সেটা হাতে নিয়ে দেখলো। ওর সিমটা। অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকায় সে। মেঘ বলে,
-আপনার অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই। অবাক তো আমি হবো। আজ সকালেও সিমটা চালু করে দেখি চালু হচ্ছে। সিম কার্ড হারিয়ে গেলে যে সেটা বন্ধ করতে হয় জানেন না?
-আসলে আমি খেয়াল করিনি।
-এখনও কী এখানে থামতে হবে নাকি এগোতে পারি? অফকোর্স উইথ ইওর পার্মিশন।
ছায়া হেসে সম্মতি জানায়। মেঘ ছায়াকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় নিজের কাজে।

চলবে…..