যদি তুমি চাও পর্ব-২২+২৩

0
330

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

২২.
ফুল স্পিডে ছুঁটে এসে গাড়িটা ব্রেক করে একটা পর্যায়ে। বেরিয়ে আসে মেঘ। সে দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে যায় লিফট এর দিকে আর তারপরেই বাটন প্রেস করে কিন্তু না লিফট আসতে এখনো অনেকটা সময় লাগবে এতক্ষণ অপেক্ষা করার মতো সময় তার হাতে নেই। সে উল্টো দিকে ফিরে সিঁড়ির দিকে যায় তারপর দ্রুত গতিতে পেরোতে থাকে একেকটা ধাপ। একটা ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে আগে কলিং বেল সুইচে হাত দেয়। প্রেস করে সেটা। বাইরে থেকে বোঝা যায় যে ভেতরে আওয়াজ হচ্ছে কিন্তু কেউ এসে দরজা খোলে না। মেঘের মেজাজ এমনিতেই বিগড়ে রয়েছে তার উপর এই ছেলেটাও দরজা খুলতে চাইছে না যার ফলে মাথাটা আরও গরম হয়ে যায় তার। দরজায় একটা ঘুষি মারে রাগের বশে আর তাতেই একটুখানি ফাঁক হয়ে যায় সেটা। ও বুঝতে পারে আগে থেকেই খোলা ছিল দরজাটা। ভেতরে প্রবেশ করে সোজা চলে যায় বেডরুমে।

আবির তখন একেবারে ফুল পাওয়ারে এসি অন রেখে কম্বল জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে। সে ঘুমের মাঝেই চোখ খুলে কম্বলটা গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে কারণ তার ঠান্ডা লাগছিল। মেঘ তাকে এইভাবে বেঘোরে ঘুমোতে দেখে দাঁতে দাঁত পিষে তারপর চিল্লিয়ে ডাকে,
-আবিইইইর।
আবিরের কানে কথাটা গেল না সেটা বোঝা গেল তখন যখন তার মাঝে কোনো পরিবর্তন নজরে আসলো না। মেঘ আবারও ডাকলো তখন আবিরের কানে ডাকটা পৌঁছোলো ঠিকই তবে সে উঠলো না বরং কম্বলটা টেনে ভালোভাবেই মুখটা ঢেকে ফেললো। মেঘ এবার না পেরে খাটের কাছে গিয়ে একটা পা উপরে তুলে হাঁটুর উপর ভর করে আবিরের দিকে ঝুঁকে তারপর ডাকে।
-আবির ওঠ।
আবির এবার এতোটাই বিরক্ত হয় যে সে দুই পাশ থেকে দু’টো বালিশ টেনে নিজের কান ঢেকে তারপর আবারও চোখ বুঁজে। ওর কাজে মেঘের মেজাজ তো চরম বিগড়ে গেল আর সে বিছানা থেকে পা নামিয়ে নিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে আবিরকে কিক মারলো। আবির গড়িয়ে পড়লো নিচে। তার ঘুমটা তো কাটলো এতে তবে ব্যথাও পেলো প্রচুর। রেগে গিয়ে প্রশ্ন করে,
-কে বে?
এরপর যেই সামনে তাকিয়ে মেঘের মুখটা দেখতে পায় সেই সাথে সাথেই উঠে দাঁড়িয়ে যায়। মেঘকে দেখে ব্যথা অনুভূতি পালিয়ে গেছে তার আর সেই অনুভূতির জায়গাটা দখল করেছে ভয়। ঢোক গেলে আবির।
-স্যার আপনি!
মেঘ বলে,
-অন্তরা কোথায়?
-কোথায় মানে এখানেই কোথাও আছে।
মেঘ এগিয়ে গিয়ে আবিরের টিশার্টের দুই সাইড মুঠো বন্দি করে ধরে দাঁতে পিষে বলে,
-তোকে আমি একটা দ্বায়িত্ব দিয়েছিলাম আর তুই সেটাও ঠিক করে পালন করতে পারলি না।
-ক..ক..কী হয়েছে স্যার?
মেঘের এমন রূপ দেখে আবিরের হাওয়া বেরিয়ে গেছে একেবারে। কথাটাও ঠিকমতো বলতে পারছে না সে।
-কী হয়েছে না! শালা তোর উপস্থিতি অন্তরাকে কেউ টেনে নিয়ে গেল আর তুই আমায় জিজ্ঞেস করিস কী হয়েছে!
-অন্তরাকে নিয়ে গেছে মানে! কে নিয়ে গেছে আর কোথায় নিয়ে গেছে?
মেঘ নিজেকে শান্ত করে বললো,
-কথা বাড়িও না যাও গিয়ে চেঞ্জ করে এসো। হারি আপ।
আবির কিছু একটা বলতে চাইলে মেঘ ওয়াশরুমের দিকে হাত দেখিয়ে চেঁচিয়ে বলে,
-আই সেইড গো।
আবির আর কথা না বাড়িয়ে চলে যায় শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে। কোনোরকমে ব্রাশ করে লুঙ্গি টিশার্ট ছেড়ে সেগুলো পরে বেরিয়ে আসে।

গাড়ি চলছে সর্বোচ্চ গতিতে এই সময় আবার জ্যামে আটকা না পড়লেই হয়। মেঘ এখন শান্ত তবে তার মাঝে রাগটা এখনও বিরাজ করছে। সে গাড়ির সাইডে ঘুষি মেরে আবারও স্টেয়ারিং সামলে বলে,
-এতো ঘুম আসে কোনখান থেকে তোমার?
-আসলে গতকাল রাতে মায়ের…..
-আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না আবির। অন্তরাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য তোমায় পে করা হয় এমনি এমনি আমি কোনো জায়গায় ইনভেস্ট করি না। সেই আমার লোক উপস্থিত থাকা অবস্থায় আমারই শত্রু আমারই এরিয়ায় ঢুকে মেয়েটিকে নিয়ে বেরিয়ে গেল আর আমার লোক পড়ে পড়ে ঘুমোলো। ওয়াও! এর জন্যই বুঝি তোমায় রাখা হয়েছে?
-আমি দুঃখিত স্যার।
-এখন যদি অন্তরার বিয়ে হয়ে যায় তখন করো দুঃখ প্রকাশ।
-বাট স্যার, স্টিল সী ইজ মাই ওয়াইফ।
-যাক এইটুকু অন্তত মাথায় আছে তোমার জেনে ভালো লাগলো। আমি জাস্ট তোমায় নামিয়ে দেব তারপর পাশেই অপেক্ষা করব কাজ সেরে বেরিয়ে আসবে ওকে নিয়ে।
-ইয়েস স্যার।
-আর হ্যা, অন্তরা যেনো আমায় দেখতে না পায়।
-বুঝেছি স্যার।

মেঘের গাড়ি থামে রুবি খানের বাড়ির সামনে তারপর সে সেইখানেই আবিরকে নামিয়ে দেয়। আবির ভেতরের দিকে চলে যেতেই মেঘ সেখান থেকে সরে যায়। কাজি সাহেব পাত্র পাত্রীর নাম লিপিবদ্ধ করছেন ঠিক সেই সময় আবির গিয়ে বলে,
-আরে কাজী সাহেব কাবিন নামায় পাত্রীর স্বামীর নামটা যুক্ত করতে ভুল করবেন না যেনো।
কাজি সাহেব তাকান সেইদিকে আবিরকে দেখে প্রশ্ন করেন,
-এইসব কী বলছেন আপনি?
-ঠিকই…..
আবিরের কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই সেখানে রুবি বলেন,
-তোমায় ভেতরে ঢুকতে কে দিলো? তোমার সাহস তো কম নয় তুমি আমার বাড়িতে আমার অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করো!
রুবির কথা শোনার পরেই আবির আরও একটি কথা শুনতে পায় যা তার কানে লাগিয়ে রাখা ব্লুতুথ ইয়ারপিস থেকে আসছিল। আর সেটা শুনেই আবির বলে,
-আমার শ্বশুর বাড়ি আর আমি আসতে পারবো না! কী যে বলেন না শাশুড়ী মা।
ওদিকে গাড়িতে বসে থাকে হাসে মেঘ। এই বাড়িতে আজ আবারও রুবি বাধ্য হবেন মেয়েকে আবিরের সাথে পাঠাতে। কারণ এই ছাড়া তার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।

কাজী সাহেব যখন বুঝলেন আসলে আবির বলে এই ছেলেটি আজকের বিয়ের কনের বর্তমান স্বামী যার সাথে মেয়েটির তালাক এখনোও সম্পন্ন হয়নি তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আর এক মুহুর্তও এই বাড়িতে দাঁড়াবেন না। রুবি বললেন,
-দাঁড়ান কাজী সাহেব, আমি মানছি এই ছেলেটি সত্য কথা বলছে। তার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল এই কথাটিও আমি সত্য বলে স্বীকার করছি তবে আমার মেয়েকে জোর করে বিয়ে করেছিল এই ছেলেটি। এই যে দেখছেন একে, এর নাম নিহাল। আমার মেয়ে একে ভালোবেসে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে চায় কিন্তু এই আবির বলে ছেলেটি একে আটকে রেখে জোর করে আমার মেয়েকে বিয়ে করে। যেই বিয়েতে আমার মেয়ের মত ছিল না সেই বিয়েকি আদৌও জায়েজ বলে গণ্য হবে, আপনিই বলুন?
কাজী সাহেব দাঁড়িয়ে যান রুবির কথাগুলো শুনে। আর তখনই আবির বলে,
-আমার উপর মিথ্যে দোষারোপ করা হচ্ছে বিশ্বাস করুন আমায়, আমি উনার মেয়ে মানে আমার স্ত্রীকে খুব ভালোবাসি। আমার একটা মাত্রই দোষ যে আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আর তাই উনি আমার বাড়িতে ঢুকে আমার স্ত্রীকে তুলে এনেছেন।
কাজি সাহেব আবিরের চোখের দিকে তাকান তার চোখে কোনো মিথ্যের ছাপই নেই উল্টো সে একেবারে নিজের শব্দে অটল রয়েছে তবে ভয় পাচ্ছেন রুবি। হতে পারে মেয়েকে আবারও এমন একজনের সাথে যেতে হবে সেই ভাবনা থেকেই তিনি ভয় পাচ্ছেন কিন্তু এখানে যে কেউ তাকে দেখে ভাববে যে তিনি মিথ্যে বলছেন। এবং ঘটলোও সেটাই। রুবি মিথ্যেবাদী প্রমাণিত হলেন কারণ তার মেয়ে উপর থেকে ছুঁটে এসে সোজা আবিরের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। এই একটা কারণেই সত্য মিথ্যা সব ওলট-পালট হয়ে গেল। কাজী সাহেব চলে গেলেন সেখান থেকে। আবির অন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো আর রুবির হেরে যাওয়া মুখটার দিকে চেয়ে বাঁকা হাসি হাসলো সে। সেই হাসি দেখে রুবি ধপ করে বসে পড়লেন সোফায়। নিহাল তো তার শব্দই হারিয়ে ফেলেছে, অন্তির এমন কান্ডে সে যেনো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এই অন্তি এতোটা পাল্টে গেল কী করে! ছায়া সবটা দেখে তার ঠিক জানা নেই এই পরিস্থিতিতে তার খুশি হওয়া উচিৎ নাকি দুঃখ পাওয়া উচিৎ।

চলবে…….

#যদি_তুমি_চাও
লেখনীতেঃ অনামিকা

২৩.
আবির অন্তির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তার কান্না থামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে এমন সময় রুবি এগিয়ে এসে মেয়ের হাত ধরে আবিরের কাছে থেকে সরিয়ে এনে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে তার গালে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে দেয়। নিহাল এগিয়ে এসে বাধা দিতে চাইলে তাকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়। রাফিদ এসে মা’কে নিজের দিকে ফিরিয়ে তারপর বলে,
-মা প্লিজ ওকে কেনো মারছো তুমি! এমনটা করো না। ওর এখানে কী দোষ বলো? যখন আটকানোর কথা ছিল তখন আমরাই ওকে ওই ছেলের হাতে তুলে দিয়েছি আর এখন ওকে পুরোপুরি দূর্বল করে দিয়েছে ছেলেটা। এই লোক অনেক বড়ো গেইম খেলেছে মা যা এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে অন্তি বুঝতে পারবে না তার উপর যদি তুমি ওর গায়ে হাত তোলো তবে এখন ও যতটা তোমার বিপক্ষে আছে এরপরে আরও বেশী চলে যাবে। এইভাবে আটকে রাখা সম্ভব নয় মা। যেতে দাও ওকে, গিয়ে বুঝুক কে ওর আপন আর কে পর।
-এইভাবে ওকে আমি এমন মানুষের সাথে পাঠিয়ে দিতে পারি না রাফিদ। কোনো বড় ক্ষতি হলে ও আমার কাছে ফিরে না এসে উল্টো নিজের ক্ষতি করে ফেলবে। এতোটাই চাপা স্বভাবের আমার মেয়েটা।
রুবি হঠাৎ কাঁদতে শুরু করেন। নিহাল এগিয়ে এসে বলে,
-আন্টি রিল্যাক্স। এই ছেলেটাকে আমি দেখছি আপনি শুধু অন্তু’কে এইখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান বাকিটা আমার হাতে ছেড়ে দিন।
-খবরদার…
নিহালের কথা শুনে অন্তি এগিয়ে এসে বলে,
-খবরদার, ওর গায়ে হাত দেওয়ার সাহস করবে না তুমি। কোথায় ছিলে এতোদিন হ্যা?
-অন্তু।
অন্তির গালে হাত দেয় নিহাল। ঠিক এই মুহুর্তে অন্তির গা গুলিয়ে আসে। যেই ছোঁয়া ওর খুব ভালো লাগতো আজ সেই ছোঁয়া ওর কাছে অনেক বাজে বলে মনে হচ্ছে। কেনো মনে হচ্ছে? এখন ওর মনে আবির আছে বলেই কী! হ্যা তাই তো। অন্তি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো নিহালের কাছ থেকে তারপর বললো,
-যা বলবে দূরে দাঁড়িয়ে থেকে বলার চেষ্টা করো।
-এতোটা বদলে গেলে কী করে অন্তু?
-আমি বদলাইনি তো, তুমি আমার কাছে এই মুহুর্তে এক পর পুরুষ যার সাথে কথা বলাও পাপ সেখানে তার ছোঁয়া….. যাই হোক যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।
-ওহ, এইসব মানো বুঝি তবে আমার সাথে সম্পর্কে ছিলে সেটা কোন দিক দিয়ে ঠিক ছিল?
-ভুল করেছিলাম আমি।
-অন্তু দেখো এখন তুমি রাগের মাথায় আছো বলে এসব বলছো। একবার ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শোনো। আই লাভ ইউ অন্তু এন্ড….
-ওয়েট আ মিনিট।
অন্তি হাত দেখিয়ে থামায় নিহালকে তারপর আবার বলে,
-ভালোবাসো! সত্যিই ভালোবাসো?
-হ্যা, সত্যিই…
-তাহলে এতোদিন কোথায় ছিলে?
চেঁচিয়ে বলে অন্তি। নিহাল ওর চিৎকার শুনে চমকে যায়। অন্তি কখনো ওর সাথে এইভাবে কথা বলেনি উল্টো সবসময় লজ্জা ভাব থাকতো ওর সারা মুখে।
-তুমি জানো এই যে এই মানুষটা আমার জীবনে একমাত্র তোমার কারণেই আসতে পেরেছে কারণ আমি চেয়েছিলাম তুমি বাঁচো। বিশ্বাস ছিল তুমি একটা সুস্থ হলেই তারপর আমি ছাড়া পেয়ে যাব, ওরা না মুক্ত করলেও তুমি ঠিক আমায় বের করে আনবে সেখানে তুমি কী করলে নিহাল! তুমি পালিয়ে গেলে ঠিকই তবে একবারও আমার সামনে এলে না। আমি কেমন আছি জানতেও চাইলে না। এই তুমি আমায় ভালোবাসো!
-বুঝেছি, অভিমান জমেছে আমার উপর। আচ্ছা আমরা বসে কথা বলে সব শর্ট আউট করে নিই তারপরও প্লিজ আমার প্রতি অভিমানটাকে এই ছেলের প্রতি ভালোবাসা বলে মনে করে নিও না অন্তু।
অন্তি শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। ছায়াকে বলে,
-তুই এইখানে দাঁড়িয়ে থেকে কী দেখছিস? যা গিয়ে নিজের ব্যাগ নিয়ে আয় আমরা বেরোবো।
-শোন অন্তি, এইভাবে রাগের বশে কোনো সিদ্ধান্তে যাস না। আন্টির কথাটা একবার শোন, তুই কার জন্য কাকে ছেড়ে যাচ্ছিস একবার ভেবে দেখ। আন্টি তোর মা অন্তি, তুই নিহালকে বিয়ে করবি না আমি এই বিষয়ে সমর্থন করতে পারি বাট এইটাতে নয়। একবার ভেবে দেখ যেই লোক টাকার লোভে পড়ে তোকে বিয়ে করতে রাজি হতে পারে সে কাল অন্যকাউকেও বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে যদি টাকা দেখতে পায় তো।
-ছায়া অন্তত তুই এদের সাইড নিস না।
-আমি কারো সাইড নিচ্ছি না অন্তি। আমি জাস্ট তোর কথাটা ভাবছি। হয়তো বা নিহাল ঠিক বলছে তুই ওর প্রতি অভিমানটাকে অন্যকারো প্রতি ভালোবাসা ভাবছিস। এটা ন্যাচারাল হতেই পারে তবে এসব বিষয়ে এতো দ্রুত ডিসিশন না নিয়ে প্র‍্যাক্টিকালি ভাব একবার, দেখ এখন তুই যাস না। একবার গেলে আর যদি ফিরে আসার পথ না পাস তখন কী হবে ভেবে দেখ!
-আমার যা ভাবার ভেবে নিয়েছি।

মেঘ এতোক্ষণ সবশুনছিল তারপর বললো,
-আবির, এখন কিন্তু ডায়লগ বাজি বেশি হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটার হাত ধর আর টেনে নিয়ে বেরিয়ে আয়। বেরোতেই দু’চারটে সিএনজি যাবে তোদের সামনে দিয়ে একটাকে ধরে উঠে পড়বি বুঝলি?
আবির এগিয়ে গিয়ে অন্তির হাত ধরে বলে,
-অন্তরা চলো।
-হুম।
অন্তি যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নিহাল পথ আটকে সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-দেখো অন্তু তোমার আমার প্রতি কোনো প্রকার অভিযোগ থাকলে লেট’স সীট এন্ড টক না। শর্ট আউট হয়ে যাবে সবকিছু বাট তুমি তো কথা বলতেই চাইছো না। গিফ মি আ চান্স অন্তু।
-কী এক্সকিউজ দেবে তুমি? কেনো আসোনি এতদিন?
-তোমার কী মনে হয় অন্তু যারা আমায় আটকে রাখতে পারে তারা আমার পালানোর পরে তোমায় ফলো করতে পারে না! তার উপর আমার বাবা-মা আমার অবস্থা দেখে আমায় আর বিপদে ফেলে দিতে চাননি। সবদিক থেকে বাধা ছিল অন্তু।
-তুমি আসতে পারোনি মানলাম তোমার রিজনগুলো সব ভ্যালিড বাট রুহান ভাইয়া বা রিধি তাদের মাধ্যমে তো খবর একটা পাঠাতে পারতে বলো! সে যাই হোক আমি আর কথা বাড়াতে চাই না। আবির চলুন।
রুবি কিছু বলতে নিবেন তার আগেই রাফিদ বলে,
-হ্যা হ্যা যা। পরে আবার পস্তাবি না যেনো। মায়ের কাছে ফিরে আসারও চেষ্টা করবি না।
এদিকে ছায়া আটকানোর জন্য এগোবে তার আগেই তার ফোনে একটা টেক্সট আসে যাতে লিখা আছে,
“ছায়া, ফ্রী আছো? আই নীড ইউ প্লিজ কাম।”
মেসেজটা দেখার পরে ছায়ার মাথায় অন্তি বাদ দিয়ে মেঘের চিন্তা ঢুকে পড়লো। সেও বেরিয়ে গেল। যে কটা সিএনজি ছিল তার একটাতে সে বসে পড়ায় সবগুলো বেরিয়ে পড়লো কারণ সব ড্রাইভারদের বলা ছিল ও বাড়ি থেকে কেউ এসে বসলেই যেনো সবাই চলে যায়। ঠিক এই সময় মেঘের মাথা খারাপ হয়ে গেল। নিজেকে নিজেই বকতে শুরু করলো সে।

আবির বেরিয়ে এসে দেখে কোথাও কোনো সিএনজি কেনো একটা রিক্সাও নেই সে বিরক্ত হয় এমটা দেখে। এখন কী করা যায় ভাবতে ভাবতেই একটা গাড়ি এসে থামে তাদের সামনে। আবির শুনতে পায়,
-উঠে বোস।
আবিরের মনে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মেঘ যদি নিজের গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে থাকে তবে সে কোথায়? এই জায়গায় তো কোনো গাড়িও পাবে না সে। ওইদিক থেকে রুবে, নিহাল ও রাফিদ বেরিয়ে আসে। আবির বুঝতে পারে ভাবার সময় এখন নয়, এই সময়টা পালানোর। পালাতে হবে তাদের। তই আর না ভেবে বললো,
-উঠে বসো।
অন্তি দাঁড়িয়ে রইলো ওর মাথায় এখন কিছু চলছে। অনেক বড়ো কিছু। আবির সেইদিকে খেয়াল না করে ওকে টেনে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়লো। গাড়ি মুহুর্তেই রুবির নজরের বাইরে চলে গেল।

চলবে…..