যদি আমার হতে পর্ব-৩১

0
755

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৩১ (পার্ট ওয়ান)
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

বেশ কয়েকবার মুগ্ধর ফোন বাজছে। আদ্রিশা ব্যাগ গুছাতে এসে রিংটোনের আওয়াজ শুনে। মুগ্ধকে ডেকে বললো, “মুগ্ধ! আপনার ফোন বাজছে তো!” মুগ্ধ শাওয়ার নিচ্ছিলো। বিধায় চিৎকার করে বললো, “আপনি রিসিভ করে বলে দিন আমি শাওয়ারে!” আদ্রিশা ফোনে হাত ছুয়ানোর আগেই ফোনটা কেটে যায়। আদ্রিশা মাথা ঝাড়া দিয়ে ব্যালকনি থেকে টাওয়াল আনতে গেলো। আবার‌ও বেজে উঠলো ফোন! এতে খুব বিরক্ত হচ্ছে আদ্রিশা। কার এতো দরকার যে বারবার ফোন করে চলেছে। ঘরে এসে শুকনো টাওয়ালটা সোফায় ভাজ করে রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই থমকে যায় আদ্রিশা। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ‘তিথি’ নামটা। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন কানে ঠেকাতেই অপাশ থেকে অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো তিথি,

“হ্যালো!? কি ব্যাপার কি তোমার? ফোন ধরছো না কেনো? কতোক্ষন ধরে রিং করে যাচ্ছিলাম!”

আদ্রিশা নিশ্চুপ হয়ে তিথির কথা শুনছে। তিথি আবার‌ও বললো, “মুগ্ধ শুনছো আমি কি বলছি?”

আদ্রিশা ওয়াশরুমের দরজার দিকে একবার দেখলো। মুগ্ধ এখনো বেরোয় নি! উপায় না পেয়ে এবার আদ্রিশা বললো, “মুগ্ধ শাওয়ার নিচ্ছেন!”

তিথি বললো, “ওহহ! আপনি আদ্রিশা?”

—হুমম।
—কেমন আছেন?
—ভালো। আপনি?
—ওসাম!!
—,,,,,,,,,,,,,,,,,,
—আপনি কি হেজিটেট করছেন আমার সাথে কথা বলতে?
— না আসলে,,, আমি বুঝতে পারছি না কি বলবো!
—আরে,,,, এতো ভাবার কি আছে! লিসেন আদ্রিশা, আমি মুগ্ধকে বিশ্বাস করি। আমি জানি ও আমাকে কতোটা ভালোবাসে। তোমাকে না চিনলেও না জানলেও মুগ্ধর থেকে যতটুকু শুনেছি তোমাকে অবিশ্বাস করার প্রশ্ন‌ই উঠে না! আমার কাছে দ্বিধাবোধ করো না। মুগ্ধর বন্ধু হতে পারলে আমার‌ বন্ধু হতে ক্ষতি কিসের?
— আমি মুগ্ধর বন্ধুর থেকে বেশি ওর রেসপন্সিবিলিটি! আমি জানি না আপনি আমায় বিশ্বাস করেন কি না তবে মুগ্ধকে অবিশ্বাস করবেন না কখনো! যে ব্যাক্তি ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য এতোকিছু করতে পারে , আমার মতো আচেনা একজনকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিতে পারে সে কখনো কাউকে ঠকাবে না আপু।

আদ্রিশার কথায় চুপ করে গেলো তিথি। কথা ঘুরিয়ে বললো, “এই দেখো তুমি আমায় আপনি বলছো আর আমি তুমি তুমি করছি!”

আদ্রিশা খানিক হেসে বললো, “আপনি আমাকে তুমি করেই বলুন! আপনার থেকে ছোট আমি।”

ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো মুগ্ধ। আদ্রিশা মুগ্ধর দিকে ফোনটা এগিয়ে ধরলো। মুগ্ধ আদ্রিশার দিকে তাকাতেই আদ্রিশা বললো, “তিথি আপুর ফোন!” মুগ্ধ হাতের টাওয়াল বিছানায় ফেলে ফোন উঠিয়ে ব্যালকনিতে গেলো। আদ্রিশা টাওয়াল তুলে মুগ্ধর পিছু পিছু গেলো। ব্যালকনির রেলিংএ টাওয়াল ঝুলিয়ে রাখলো। মুগ্ধর এদিকে কোনো হুশ নেই। ফোনেই মগ্ন সে। আদ্রিশা ঘরে ঢুকে ব্যাগ নিয়ে বাইরে এলো। রান্নাঘর থেকে মুগ্ধর জন্য তৈরি করা টিফিন ডাইনিং টেবিলে রেখে শাশুড়ির থেকে বিদায় নিলো। ভার্সিটি যেতে হবে তার। কথা ছিলো আজ মুগ্ধ নিয়ে যাবে তাকে। কিন্তু মুগ্ধ ব্যাস্ত। তাই আদ্রিশা একাই বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

_________________

ভার্সিটি চত্বরে নীলা আর তুহিন বসে বাদাম খাচ্ছে। আদ্রিশাকে আসতে দেখে নীলা লাফিয়ে উঠে তুহিনের পায়ে পারা দিয়ে দেয়। তুহিন “ওহহহ মাগো”- বলে চিৎকার করে উঠে‌ । তুহিনের চিৎকারে নীলা হতচকিত হয়ে পরে। আদ্রিশাও দৌড়ে আসে।

—-কি রে এভাবে চেচাচ্ছিস কেনো?(আদ্রিশা)
—- কেনো আবার এই ডাফার পায়ে এত্তোজুড়ে পারা দিলো!(তুহিন)
—-আজব, এখানে আমার কি দোষ! তুই আমার পায়ের কাছে নিজের পা কেনো রাখবি?(নীলি)
—-তা আমার পা কোথায় রাখা উচিত ছিলো?(তুহিন)
—-ঐ তো ঐদিকে রাখতি! ( তুহিনের ডান পায়ের পাশে ইশারা করে বললো নীলা) তুহিন নিচের ঠোঁট কামরে প্রচন্ড রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,”মানে বলতে চাইছিস তোর থেকে উল্টো ঘুরে দাড়াতে?” নীলা হ্যা সূচক মাথা নাড়লো। তুহিন ধৈর্য্যহারার মতো তাকালো আদ্রিশার দিকে। আদ্রিশা চোখে মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বললো, “তোরা চুপ করবি!?কতোদিন পর আজ দেখা হলো আর এখন‌ই লেগে গেছিস!”

তুহিন মুখ ভার করে বললো, “আচ্ছা যা আর কিছু বলছি না।”

নীলা আদ্রিশার কাধে হাত রেখে বললো, “একা এলি?”

আদ্রিলা ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে বললো, “না তো, দেখিস না শশুড় বাড়ি থেকে পল্টন নিয়ে এসেছি!”

তুহিন ফিক করে হেসে ফেললেও আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে মুখটা ছোট করে ফেললো। হাসিও বন্ধ হয়ে গেছে তার। নীলা ঠোঁট উল্টিয়ে বললো, “এটা কোনো উত্তর হলো?”

আদ্রিশা চোখ পাকিয়ে বললো, “তোর প্রশ্নটা কেমন ছিলো!? দেখছিস‌ই যখন একা এসেছি তাহলে আবার জিগ্যেস কেনো করছিস?”

.
না মানে বলছিলাম জিজু দিয়ে যায় নি?(নীলা)
.
কেনো এটা ওনার কাজ নাকি?(আদ্রিশা)
.
উফফ,,, উল্টা বুঝিস কেনো সব কথা। বিয়ের পর প্রথম এলি আর জিজু তোকে একা ছেড়ে দিলো?(নীলা)
.
ঐ এমন ভাবে বলছিস যেনো আমি ছোট বাচ্চা! হারিয়ে যাবো নাকি একা এলে?বিয়ের আগে যখন একা আসতে পেরেছি তাহলে এখন কেনো পারবো না? (‌আদ্রিশা)
.
না না, তুই কি আর বাচ্চা র‌ইলি! আজ বাদে কাল বাচ্চার মা হয়ে যাবি!(তুহিন)
.
এই কি বললি তুই?(আদ্রিশা)
.
কি আবার বলবে, বললো বাচ্চার মা হয়ে যাবি! এতে রাগার কি আছে? বিয়ে তো করেছিস‌ই না। এখন‌ বাচ্চা হলে কিসের সমস্যা?(নীলা)
.
ফালতু কথা রাখতো।(আদ্রিশা)
.
এটা তোর কাছে ফালতু কথা? এখন নিশ্চয় বলবি জিজু আর তুই বেবি প্ল্যানিং করছিস না!(নীলা)
.
হুম করছি না। তো?(আদ্রিশা)
.
কিহ! ‌ঐ এখন এসব প্ল্যানিং না করলে কেমনে হবে? দোস্ত তোদের বয়সটাও তো দেখ!(তুহিন)
.
ঐ হারামি! বয়স দেখবো মানে? তুই কি মিন করছিস আমরা বুড়ো বুড়ি হয়ে গেছি!(আদ্রিশা)
.
আস্তাগফিরুল্লাহ,,, আমি কখন এ কথা বললাম? তুই নিজেই আজগুবি কথা বার্তা বলছিস!(তুহিন)
.
আদু থাম তো। এটা বল তোরা হানিমুন কবে যাচ্ছিস?(নীলা)
আদ্রিশার বিরক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। একে তো সকালে তিথির সাথে ফোনালাপ আর এখন বন্ধুদের কথার চাপ! না সত্যিটা বলতে পারছে আর না মিথ্যে বলে কথা কাটাতে পারছে! কথা ঘুরিয়ে বললো, “রুহি ক‌ই?”

—- কি জানি! ওর তো দেখাই পাওয়া যায় না।(তুহিন)
—- কেনো ? ও ক্লাস করে না?(আদ্রিশা)
—- তুই আছিস ক্লাস নিয়া! ওর সাথে কথা হয় নি কি আমাদের!(নীলা)
—- তোর সাথে কথা হ‌ইছে?(তুহিন)
—- না দোস্ত। জন্মদিনে মেসেজে উইশ করলো শুধু। গতকাল ফোন দিলাম রিসিভ‌ই করে নি!(আদ্রিশা)
—- শুনেছিলাম ওর বাবা বিয়ের জন্য পাত্র দেখছে!(নীলা)
—- সেসব ঠিক আছে তবে আমার মনে হয় এখানে অন্য ব্যাপার আছে!(তুহিন)

আদ্রিশা আর নীলা একসাথে বলে উঠলো , “কি ব্যাপার?”

তুহিন থুতনিতে হাত বুলিয়ে বললো, “আই থিংক সি ইজ ইন লাভ!”

“হোয়াট!” সমস্বরে বললো আদ্রিশা নীলা। তুহিন বুকে হাত রেখে বললো, “আস্তে দোস্ত। এক্ষুনি ছোটখাটো এট্যাক হয়ে যেতো আমার!”

আদ্রিশা মাছি তাড়ানোর মতো হাত নেড়ে বললো, “না না। ওসব কিছু হলে ও আমাদের ঠিক‌ই জানাতো।”

নীলা অসম্মতি দিয়ে বললো, “তুই বলেছিলি ঐ লুচ্চাটার সাথে প্রেম করার সময়!?”

আদ্রিশা চোখ নামিয়ে মাটির দিকে তাকালো‌ । তুহিন কথা সামলানোর চেষ্টা করে নীলার মাথায় চাটি মেরে বললো, ” ছি ছি,,,, কি ভাষা! লজ্জা করে না এসব উচ্চারণ করতে?”

নীলা চুল ঠিক করে বললো, ” হু এখন তো আমার মুখের ভাষাই খারাপ। ঐ দিন যে তুই মুগ্ধ ভাইয়াকে কিসব বলছিলি ঐসব ভালো না! চমৎকার ভাষার প্রয়োগ করেছিস!”

আদ্রিশা কোমরে হাত রেখে বললো, “ঐ কি বলেছিলি তুই?”

তুহিন জোরপূর্বক হেসে বললো, “ক‌ই কি বলছি আমি? ও মিথ্যে বলতেছে! বিশ্বাস করিস না।”

ওমনি নীলা তুহিনের চুল ধরে টানতে লেগে গেলো। আর তুহিন নীলার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে নীলার চুলের মুঠি ধরেছে। ওদের মারামারি দেখে আদ্রিশা ক্লাসের দিকে চলে যায়। এই মুহুর্তে এদের শান্ত করা অসম্ভব। আদ্রিশা জানে হাঁপিয়ে উঠে একে অপরকে ছেড়ে দেবে তারা। কিছুটা সময় থাকুক এরকম। কেনো যেনো আদ্রিশার মনে হয় তুহিন নীলাকে পছন্দ করে। নীলার জন্য শুধু বন্ধুত্ব নয় তার থেকেও বেশি কিছু আছে তুহিনের মনে । যা নীলার অজানা। তবে আদ্রিশা সহ অনেকের চোখে পরেছে ব্যাপারটা। কিন্তু এখন আদ্রিশা তুহিন নীলা কে নিয়ে নয় বরং ভাবছে রুহিকে নিয়ে! সত্যিই কি রুহি কাওকে ভালোবাসে? স্নিগ্ধ নয় তো? জানতে হবে আদ্রিশাকে।

চলবে,,,,,,,,,

যদি আমার হতে🌹
পর্ব – ৩১(পার্ট টু)
লেখিকা : সৈয়দা প্রীতি নাহার

ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে ঘুরছে নীলা তুহিন। কোনো এক এসাইনমেন্ট জমা দিতেই ২ টো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে নীলাকে‌। তুহিন‌ও তাই তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য রয়েগেছে। আদ্রিশা ভার্সিটি গেইটে আসতেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো‌। গেইট থেকে একটু দূরেই রাস্তার পাশে গাড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ। একদম ফর্মাল গেটাপে আছে সে।হোয়াইট শার্ট, ব্ল্যাক টাই, ব্ল্যাক প্যান্ট,চোখে সান গ্লাস! শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো।হাত দুটো পকেটে গুজে রেখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে শুধু। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সামনের চুল গুলো উড়ে এসে কপালে ঠেকছে। ফর্সা গালটা রোদে পুরে লাল বর্ণ ধারন করেছে। আদ্রিশা মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছে। মুগ্ধ চশমা খুলে ভ্রু উচিয়ে আদ্রিশার দিকে তাকাতেই আদ্রিশার ধ্যান ভাঙে! আশেপাশে তাকিয়ে অনেক মেয়েকেই মুগ্ধর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখলো। মুহুর্তেই মুখটা অগ্নিমূর্তি ধারন করলো আদ্রিশার। হ্যাংলার মতো অন্য ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকায় মেয়েদের হাজারটা গালি দিচ্ছে ও। আবার মুগ্ধর উপর‌ও বেজায় রেগেছে। এতো সাজার কি আছে? মেয়েদের সামনে চকোলেট বয় হয়ে আসতে বেশ লাগে না তার! ভার্সিটিতে নিশ্চয় আদ্রিশাকে নিতে এসেছে, তাহলে এতো স্টাইল করে দাঁড়িতে থাকার মানে কি? নিজের কিউটন্যাসের প্রদর্শন করছে না কি? মুগ্ধর হাত নাড়ানোতে আবার‌ও আদ্রিশার ভাবনার সমাপ্তি হয়। মুখ গোমরা করে গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মুগ্ধ চশমাটা আবার‌ও পড়ে নিলো। গাড়ির দরজা খুলে আদ্রিশাকে বসতে বললো। তারপর ড্রাভিং সিটে এসে নিজেও বসে পড়লো। আদ্রিশা ধপ করে সিটে বসে ঠাস করে দরজা লাগালো। মুগ্ধ আড়চোখে আদ্রিশাকে দেখে বললো, “সিট বেল্ট পড়ুন। গাড়ি ছাড়বো।”
আদ্রিশা সিট বেল্ট পড়ে নিলো‌। কিন্তু এখনো রাগে ফুসছে সে। মুগ্ধ এক দু বার আদ্রিশার দিকে দৃষ্টি দিলো‌। একসময় বাধ্য হয়েই বললো, “কি হয়েছে আদ্রিশা?”

আদ্রিশার পাল্টা প্রশ্ন, “কি হয়েছে?”

মুগ্ধ আবার বললো, “মুখ ফুলিয়ে রেখেছেন যে? সেই কখন থেকে দেখছি। কিছু কি হয়েছে? আমায় বলতে পারেন।”

আদ্রিশা মুগ্ধর দিকে ঘুরে বললো, “আগে বলুন আপনি কেনো এসেছেন? আমি তো বলিনি আমাকে ভার্সিটি থেকে পিক করতে!”

মুগ্ধ ড্রাইভ করতে করতে বললো, “হুম তা ঠিক। কিন্তু আপনাকে ভার্সিটিতে দিয়ে যাওয়ার কথা তো ছিলো! অথচ আপনি আমায় না বলেই চলে এলেন। তাই এখন আসতে হলো আরকি!”

আদ্রিশা বললো, “সে যাই হোক,অফিস টাইমে আসতে গেলেন কেনো? আমি কি একা যেতে পারতাম না? শুধু শুধু আমার জন্য নিজের কাজের ক্ষতি করছেন আপনি!”

মুগ্ধ আদ্রিশার দিকে একপলক দেখলো। বা হাত দিয়ে কপালের চুল গুলো পেছনে ঠেলে বললো, “দেখুন, আপনি আমার রেসপন্সিবিলিটি , আর তাই আপনাকে আমি একা একা ট্রাভ্যাল করতে দিতে পারি না। আপনাকে রোজ আমিই ভার্সিটি ড্রপ করবো‌। এতে আপনার আপত্তি থাকলেও কিছু করার নেই। আর আপনি যদি এভাবে আমায় না বলে একা বেরিয়ে পড়েন তবে আমিও অফিস টাইমে কাজ ফেলে আপনাকে নিতে আসবো। আমার কাজের ক্ষতি হলে তার দায় আপনি নিবেন!”

আদ্রিশা ভ্রু কুঁচকে বললো, “আশ্চর্য, আমি কেনো এর দায় নিতে যাবো? আমি কি বলেছি, আমাকে পিক করতে?বলি নি তো! আপনি কেনো আসতে যাবেন হা? আর একটা কথা আমি আপনার রেসপন্সিবিলিটি হলেও, আপনি আমার গার্ড নন! আমি কোথায় যাবো, কিভাবে যাবো সেটা আপনি ডিসাইড করতে পারেন না।”

“আলবাদ পারি! শরিয়ত এবং আইন মোতাবেক আমি আপনার স্বামী! ব্যাক্তিগত ভাবে আমরা না মানলেও তা কিন্তু বদলাবে না। আর তাছাড়া, আমি চাই না আমার জন্য আপনার কোনো ক্ষতি হোক! না মানে,যা দিনকাল পরেছে, তাতে কখন কি হয় কে জানে! আপনি যা ভাবার ভাবতে পারেন, তবে আমি আপনাকে একা ছাড়ছি না!” আদ্রিশা আর বলার কিছু পেলো না, তাই চুপ করে গেলো‌। খানিক পর মুগ্ধ আবার বললো, “এনিওয়ে, আমায় না বলে চলে এলেন যে! বলেছিলাম যখন আমি অফিস যাওয়ার সময় ড্রপ করে দেবো আপনাকে তখন কথা না উল্টালে শান্তি হচ্ছিলো না!? আমি নিজেই কতটা টেন্সড হয়ে পরেছিলাম জানেন?”

আদ্রিশা মুগ্ধর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো, “আপনি কেনো টেন্সড হবেন?”

“বাহ, কি প্রশ্ন!এর জন্য আপনাকে নোবেল দেয়া যেতে পারে!” মুগ্ধর কথায় মুখ ফুলালো আদ্রিশা‌। মুগ্ধ খানিক থেমে বললো, “এই রাস্তায় কখনো ভার্সিটি গেছেন আপনি? হুট করে বেরিয়ে পরলেন! রাস্তা চিনবেন কি না, কোনো সমস্যা হলো কি না তা কিভাবে জানতে পারতাম আমরা? তার উপর ফোনটাও ধরছিলেন না। ইচ্ছে তো করছিলো ঠাটিয়ে চড় দিই! গাড়ি থাকতেও বাহাদুরি দেখাচ্ছেন?”

আদ্রিশা মুখ ফুলিয়ে বললো, “আপনি ব্যাস্ত ছিলেন তাই,,,,,,”

“তো? আমি বলেছিলাম আপনাকে যেতে? ফোনে ছিলাম তখন, কথা শেষ হ‌ওয়া অব্দি অপেক্ষা করতে পারেন নি?”

“স্যরি! আর হবে না।” বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো আদ্রিশা। মুগ্ধ আদ্রিশার দিকে তাকিয়ে বললো, “মনে থাকে যেনো?”

___________________

মালিহা ইয়াসমিন দু দিন ধরেই ভাবছেন কি করে মুগ্ধকে কথাটা বলবেন। ছেলেও হয়েছে এমন, নিজে থেকে কিছুই বুঝবে না। সব বলে দিতে হয়। আদ্রিশার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু পেরে উঠেন নি তিনি! কেমন একটা জড়তা কাজ করছে তার। যে কথা ছেলের বৌ কে বলতে বাধছে সে কথা ছেলেকে কিভাবে বলবেন তা ভেবেই তার রাগ বাড়ছে। স্বামী শ‌ওকত শাহকেও বলেছেন ব্যাপারটা কিন্তু তিনি গা ছাড়া ভাব করছেন। অর্থাৎ তিনি পারবেন না যা বলার মালিহাকেই বলতে হবে। এই প্রথমবার মালিহার আফসোস হচ্ছে। একটা মেয়ে না থাকার আফসোস! নিজের জড়তাকে পাশে রেখে ডিনারের সময় কথা বলার মনস্থির করলেন তিনি।

“বিয়ের একমাস হতে চললো, এখনো কোথাও ঘুরতে গেলি না তোরা!?”

সবাই খাওয়ায় মনোযোগী ছিলো। আচমকা এ কথা বলায় সবার দৃষ্টি মালিহার দিকে গিয়ে ঠেকলো। মুগ্ধ সচেতন কন্ঠে বললো, “একমাস কোথায়? সবে দু সপ্তাহ পেরুলো!”

মালিহা রাগান্বিত স্বরে বললেন, “আমায় গুনা শেখাচ্ছিস? এক মাস হতে আর দেরি নেই। কিছু ঠিক করলি কোথায় যাবি? কবে যাবি?”

মুগ্ধ পানিতে চুমুক দিয়ে বললো, “বিয়ের একমাসের আগে বেড়াতে না গেলে জেল হ‌ওয়ার আশংকা আছে না কি?”

শ‌ওকত শাহ খাওয়া থামিয়ে বললেন, “মুগ্ধ! তোমার মায়ের কথা তো ঠিক‌ই। পরে সময় পাবে কি পাবে না, এর চেয়ে ভালো এখন‌ই যাও! বিয়ের পর পর বেড়াতে যাওয়া ভালো। পরে তো কাজের চাপ বাড়বে বৈ কমবে না।”

মুগ্ধ হাত গুটিয়ে বললো, “বাবা, আমার এখন‌ও অনেক কাজ। এখনো দুটো প্রজেক্ট হাতে। এখন কোথাও যেতে পারবো না। পড়ে দেখা যাবে।”

“চুপ করতো। পড়ে কখন যাবি? আদ্রিশার পরীক্ষার সময় চলে আসবে তো। আর তুই ও কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরবি। এক কাজ কর, তোর ঐসব প্রজেক্ট ম্যানেজার আর তোর বাবাকে বুঝিয়ে দে। ওরা ঠিক সামলে নিবে। আর তুই বৌমা কে নিয়ে ঘুরে আয়।” বললেন মালিহা।

“উফফ মা বুঝছো না তুমি। বাবা ওসব,,,,,” মুগ্ধকে থামিয়ে দিয়ে শ‌ওকত শাহ বললেন, “বেশ বুঝবো আমি। ভুলে যাস না এই কোম্পানিকে আমি একাই দাঁড় করিয়েছি। ছোটখাটো কাজ ঠিক সামলাতে পারবো‌। আর অমত করিস না।”

“ঠিক আছে বাবা। এতো করে বলছো যখন, তাহলে যাবো নাহয়। তবে এক সপ্তাহের জন্য!” মুগ্ধর কথায় মুখে হাসি ফুটলো আদ্রিশার। কতদিন ঘুরতে যায় নি কোথাও। এবার খুব এনজয় করবে সে। মালিহাও মেনে নিলেন ছেলের মত। এক সপ্তাহ‌ই কম কিসের? শ‌ওকত শাহ বললেন, “তা কোথায় যাবে কিছু ঠিক করেছো? বৌমার পার্সপোর্ট এবাড়িতে আছে তো?”

মুগ্ধ ততক্ষনাত বললো, “আমরা তো দেশের বাইরে যাচ্ছি না‌। দেশেই কাছে পিঠে কোথাও যাবো। আপনার আপত্তি নেই তো আদ্রিশা?”

আদ্রিশা মাথা নাড়ালো‌। মালিহা আদ্রিশাকে বললেন, “কোথায় যেতে চাস বলতো! তোর যেখানে ইচ্ছে সেখানেই নিয়ে যাবে মুগ্ধ!”

আদ্রিশা ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বললো, “পাহাড়! আমার না পাহাড় দেখার খুব শখ। কিন্তু কখনো যাওয়া হয় নি! মুগ্ধ, আমরা পাহাড়ে যাবো। ট্রেকিংও করতে পারবো এই সুযোগে। প্লিজ!”

মালিহা হেসে বললেন, “বেশ তো। তাহলে তোরা পাহাড় ট্রিপেই যা!”

মুগ্ধ মাথা নাড়িয়ে বললো, “আ’ম স্যরি আদ্রিশা। পাহাড়ে যেতে পারছি না।”

আদ্রিশার মুখের হাসিটুকু মিলিয়ে গেলো মুহুর্তেই। মালিহাও অবাক চোখে মুগ্ধকে দেখছেন। শ‌ওকত শাহ‌ও হতভম্ব হয়ে গেছেন। ব‌উয়ের মুখের উপর না করে দিলো। কিন্তু কেনো? আদ্রিশার মনটা খারাপ হয়ে গেছে। পাহাড়েই তো যেতে চেয়েছে। দেশের বাইরে তো নয়! ছোট্টবেলার ইচ্ছে ছিলো, পাহাড় ট্রিপে যাবে, ট্রেকিং করবে। কিন্তু তা হলো ক‌ই? বাবা মা বলতো বিয়ের পর স্বামী নিয়ে যাবে, আর আজ স্বামীই বলছে নিয়ে যাবে না! তার ইচ্ছেটাকি অপূর্ণ‌ই থেকে যাবে?

চলবে,,,,,,,,,,