তুমি আমার প্রেয়সী ২ পর্ব-২৬+২৭

0
676

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২৬

আদ্রিয়ান নিজের ওপরই নিজের হাসি পাচ্ছে। সে হিরে রেখে কাঁচের পিছনে ছুটেছে এতোদিন। ভালোবাসা পেয়েও সে হারিয়ে ফেলেছে। যে কণাকে সে ঠকিয়ে ছিল। সেই কণাও সত্যিকারের ভালোবাসা পেয়ে গেছে। সে যাদেরকে ঠকিয়েছে সবাই সুখে আছে। শুধু সেই দুঃখের সাগরে ভাসছে।

আদ্রিয়ান আজকে খুব করে বুঝতে পারছে কাউকে ঠকিয়ে কেউ কোনোদিন সুখী হতে পারে না। যেমন সে হতে পারলো না। প্রতারকদের প্রকৃতি এমনি এমনি ছেড়ে দেয় না। সে যদি হাজার মেয়েতে আসক্ত না হয়ে একজনে আসক্ত থাকতো। তাহলে হয়তো আজকে সেও সুখী থাকতো। বাহ্যিক সৌন্দর্যকে ভালো না বেসে যদি সুন্দর মনটাকে ভালোবাসতো তাহলে হয়তো আজকে তার পাশে তার ভালোবাসার মানুষটা থাকতো।

৫৪

ড্রাইভিং সিটে বসে আদিয়াত ড্রাইভ করছে আর তার পাশে বসে আছে কণা। কণা ঠোঁট জুড়ে প্রশান্তির হাসি। যা আদিয়াত আড় চোখে দেখছে। আরুহি বসে আছে পিছনের সিটে। সে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত। সামনের দুই মানব মানবির কথা সে বেমালুম ভুলে গেছে। আদিয়াত কণাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

তো মেডাম আপনার খুশির কারণটা কী এখনো বলবেন নাহ?

কেনো বলবো না? অবশ্যই বলবো।

চুপ না থেকে ঝটফট বলে ফেলো। তোমার খুশির কারণ শোনার জন্য আমার যে আর তর সইছে না।

আস্তে স্যার। আপনিই তো বলেছিলেন অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। তো একটু অপেক্ষা করুন আমার কথাগুলো শোনার জন্য। ভাইয়ার চাকরি হয়েছে বন্যাদের ভার্সিটিতে।

খুশির খবর তো। তাহলে এবার আমাদের বিয়ের প্রস্তাব তো তোমাদের বাসায় পাঠানোই যায়।

আজ্ঞে না। আমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো না। আগে কিছুদিন আপনার সাথে প্রেম করে নেই তারপর বিয়ে।

আদিয়াত ভাইয়া গাড়ি থামাও।

আরুহির ডাকে আদিয়াত আর কণা দুজনেই পিছনে তাকায়। আদিয়াত অবাক হয়ে আরুহিকে জিঙ্গেস করে,

তুই এই মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামাতে বলছিস কেনো?

আরুহি গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।

তোমাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না তাই ।

আদিয়াত ভ্রু বাঁকা করে বলে, আমাদের জন্য নাকি অন্য কারো জন্য? হুম?

আরুহি লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে, পরে বলবো। এখন সময় নেই। আসছি। ভাবি বাই।

আরুহি চলে যায় আদিয়াত আবার গাড়ি স্টার্ট করে। আদিয়াত কণার দিকে তাকিয়ে বলে,

স্কাফ দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছো কেনো? তোমাকে বলেছি না আমার সামনে একদম স্কাফ দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবে না।

আপনার যাতে খারাপ না লাগে তার জন্য।

আমার খারাপ লাগবে কেনো?

আমার…..

কণা কথাটা বলতে গিয়েও আটকে যায়।

কী হলো থেমে গেলে কেনো? কথাটা সম্পূর্ণ কর।

না মানে কিছু না। কণা কথা ঘুরানোর জন্য বলে, আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

কণা মুখের ওপর থেকে স্কাফটা সরিয়ে ফেলে। আদিয়াত বেশ বুঝতে পারছে কণা কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছে। তাই আদিয়াত আর সেই বিষয়ে কথা বাড়ালো না।

আজকে আমি তোমাকে নিয়ে সারাদিন ঘুরবো। তোমার প্রিয় জায়গাগুলোতে নিয়ে যাব। আর আমার ভীষণ প্রিয় একটা জায়গায় নিয়ে যাব। তুমি সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে যাবে। রাত ১০ টার দিকে বাসা থেকে বের হবে। তোমাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবো।

৫৫

সাফাত জ্যামে আটকে আছে প্রায় বিশ মিনিট হয়ে গেলো। জ্যাম কমার বদলে বেড়েই চলেছে। সে প্রচন্ড বিরক্ত। গাড়ির শব্দে তার মাথা ব্যথা করছে। আজকে ভার্সিটিতে ফাস্ট ডে আর আজকেই তাকে লেইট করে যেতে হবে। সাফাত বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ছ এর মতো শব্দ করে। সাফাত সিটে মাথা হেলিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে আছে যদি মাথা ব্যথা একটু কমে সেই আশায়। পরিচিত গলা শুনে সাফাত চোখ খুলে তাকাই।

সাফাত পাশে তাকাতেই দেখতে পায় পরিচিত একটা মুখ। সাফাতের বুকের ভিতর ধক করে ওঠে। যার কাছ থেকে দূরে থাকতে চায় নিয়তি তার কাছেই নিয়ে আসে। দুজনের চোখাচোখি হতেই সাফাত তৎক্ষণাৎ চোখ সরিয়ে নেয়। যেখানে মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই সেখানে মায়া কাটাতে শিখতে হয়। বন্যা এক ধ্যানে সাফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। জ্যাম ছেড়ে দেওয়ায় সাফাত চলে যায়। সাফাত আনমনে বলে,

আমরা একই শহরে কতো কাছাকাছি থাকি। কিন্তু আমাদের মাঝে কত দুরত্ব। দেখা হয় তবু কথা হয় না।

বন্যা মনে মনে ভাবছে, সাফাত কতো চেইঞ্জ হয়ে গেছে। তার সাথে কারণে অকারণে ঝগড়া করা ছেলেটা আজকে তার সাথে কথা বলে না। যে ছেলেটা তার চোখের দিকে তাকিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারতো সেই ছেলে আজকে তার চোখে চোখ পড়তেই সরিয়ে নিচ্ছে। আর সেও চেয়েছিল সাফাতের পরিবর্তন। তাকে আঁকড়ে ধরে তো আর সাফাত সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে না। তার তো বিয়ে হয়ে গেছে। সেই চাইলেও আর সাফাতের কাছে ফিরে যেতে পারবে না।

______________

সাফাত ভার্সিটি চলে আসে। আজকে তার প্রথম দিন হলেও তার কোনো রকম নার্ভাস লাগছে না। সে ভীষণ স্বাভাবিক। সাফাত ভার্সিটিতে ঢুকতেই কেউ তার শরীরের ওপর পড়ে গেলো। সাফাত চোখ মুখ কুঁচকে তার শরীরের ওপর পড়ে যাওয়া ব্যক্তিটার দিকে তাকাই। সেই ব্যক্তিটাকে দেখেই সাফাতের মুখটা আরো কুঁচকে যায়। যাদের কাছ থেকে সে দূরে থাকতে চায় তারাই তার সামনে চলে আসে। সাফাত বুঝতে পারে না তার সাথেই কেনো এমনটা হয়?

সাফাতের ওপর আর কেউ না অহিই পড়ে গেছে। সাফাত দ্রুত অহিকে নিজের ওপর থেকে সরিয়ে ফেলে। অহি ক্যাবলা কান্ত মার্কা হাসি দিয়ে বলে,

সরি সরি। আমি ইচ্ছে করে আপনার ওপর পড়ি নাই। হুট করে আমার এক ফ্রেন্ড ধাক্কা মারে আর আমি টাল সামলাতে না পেরে আপনার ওপর পড়ে যাই। আবারও সরি।

সাফাত অহির দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে সাবলীল ভাবে উত্তর দেয়, ইট’স ওকে। নেক্সট টাইম এ ধরনের ভুল করবেন নাহ আশা করি। আমি ছেড়ে দিয়েছি বলে অন্য কেউ ছেড়ে দিবে সেটা ভাববেন নাহ।

কথাগুলো বলে সাফাত চলে যায়। অহি সাফাতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধা আঙ্গুলে কামড় দিয়ে মুচকি হাসে।

৫৬

এখন রাত ৯ টা বেজে ৫৫ মিনিট। আদিয়াতের গাড়ি এসে থামে কণাদের বাসার সামনে। আদিয়াত কণাকে ফোন দেয়। একবার রিং হতেই কণা ফোন রিসিভ করে ফেলে। যেনো সে আদিয়াতের ফোনের অপেক্ষাতেই ছিল।

তাড়াতাড়ি নিচে আসো। আমি তোমাদের বাসার নিচে অপেক্ষা করছি।

আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন? আমি এতো রাতে বাসা থেকে বের হবো কী করে? আমি তো আপনাকে তখনি বললাম আমি রাতের বেলা আপনার সাথে লং ড্রাইভে যাব না।

তুমি তাড়াতাড়ি নিচে আসবা নাকি আমি আসবো তোমার কাছে?

আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন? আপনি বুঝতে পারছেন নাহ কেনো? রাতের বেলা আমার বাসা থেকে বের হওয়া সম্ভব না। বাবা বা ভাইয়া দেখলে সমস্যা হবে।

চুপিচুপি চলে আসো।

বাবা বা ভাইয়া যদি আমার রুমে আসে তখন কী হবে? আমাকে রুমে না পেয়ে তো উনারা টেনশন করবেন।

করবে না। সবকিছু তোমার ভাইয়া সামলে নিবে। তুমি আসো তাড়াতাড়ি।

ভাইয়া সামলাবে মানেটা কী?

আদিয়াত কণার কথা না শুনেই কল কেটে দেয়। কণা নিজেকে আয়নায় আরেকবার দেখে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়। ড্রয়িংরুমে এসে কাউকে দেখতে পায় না। সে দ্রুত ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যায়। কণা চলে যেতেই সাফাত এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। কণা নিচে এসে দেখে আদিয়াত গাড়ি সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

কণা আদিয়াতের সামনে গিয়ে আদিয়াতের এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়। আদিয়াত মুচকি হাসে। দুজনেই গাড়িতে ওঠে বসে। কণা বলে,

আপনার তখনকার কথাটা আমি বুঝতে পারিনি। ভাইয়া সামলে নিবে মানেটা কী?

তোমার ভাইয়া আমাদের ব্যাপারে সব জানে।

কীভাবে?

আমি সব বলেছি। তোমার ভাইয়া কোনো আপত্তি করেনি। উনি চান তুমি যাতে সুখী থাকো। হাসি খুশি থাকো। সেটা যার সাথে থেকেই হও না কেনো?

আমিও তো চাই ভাইয়া সুখী হোক। সব সময় হাসি খুশি থাকুক।

তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।

আমি বুঝি না আপনি এই কুৎসিত চেহারাতে সৌন্দর্য কী করে খোঁজে পান?

আদিয়াত কণার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। কণা জিহ্বা কামড় দেয়। সে আবার ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। কণা কানে ধরে সরি বলে। আদিয়াত মুখ ফিরিয়ে নেয়। আদিয়াত সামনে তাকাতেই ভয় পেয়ে যায়। এক ট্রাক তাদের দিকেই আসছে। আর ট্রাকটাও তাদের গাড়ির অনেকটাই নিকটে। আদিয়াত কী করবে বুঝতে পারছে না?

চলবে…….

#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_২৭

আদিয়াত কণার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। কণা জিহ্বা কামড় দেয়। সে আবার ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। কণা কানে ধরে সরি বলে। আদিয়াত মুখ ফিরিয়ে নেয়। কণা বুঝতে পারছে আদিয়াত ভীষণ রেগে গেছে তার ওপর। আদিয়াত সামনে তাকাতেই ভয় পেয়ে যায়। এক ট্রাক তাদের দিকেই আসছে। আর ট্রাকটাও তাদের গাড়ির অনেকটাই নিকটে। আদিয়াত কী করবে বুঝতে পারছে না? মাথা কাজ করছে না। মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে গেছে।

তার কিছু হয়ে গেলে তার কোনো আফসোস থাকবে না। কিন্তু কণা? কণার কিছু হলে সে কোনোদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। সে এক ভাইকে কথা দিয়ে এসেছে তার বোনকে যেভাবে নিয়ে এসেছিল সেভাবেই তার কাছে ফিরিয়ে দিবে।

আদিয়াত কী তাহলে তার কথা রাখতে পারবে না। এতো দ্রুত ব্রেক করাও সম্ভব না। ট্রাকটা আরো কাছে চলে আসে। কণা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আদিয়াতকে জড়িয়ে ধরে আছে। কণা আদিয়াতের শার্টটা খামছে ধরে আছে। হুট করেই ট্রাকটা তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যায়। একটু সামনে গিয়ে আদিয়াত গাড়িটা থামায়। কণা ভয়ে এখনো কাঁপছে।

কণা এখনো চোখ বন্ধ করে আদিয়াতের বুকে মুখ লুকিয়ে আছে। ট্রাকটা এতো কাছে দেখে কণার কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল। আদিয়াত কণাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই কণা আদিয়াতকে আরো আঁকড়ে ধরে। আদিয়াত বুঝতে পারছে কণা ভীষণ ভয়ে পেয়ে গেছে। সে নিজেও তো ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আদিয়াত বেশ বুঝতে পারছে এটা কারো পূর্ব পরিকল্পিত প্লেন। কেউ নিশ্চয়ই কণাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। আদিয়াত কণার ফোনটা নিজের কাছে রেখে দেয়।

আদিয়াত কণার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে কণা এখনো চোখ বন্ধ করেই আছে। আদিয়াত কণার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে স্লো বয়েজে বলে,

ধূলিকণা এই ধূলিকণা চোখ খুলো। দেখো আর ভয় পেয়ো না। আমাদের কিছু হয়নি আমরা একদম ঠিক আছি। একটু চোখটা খোল নারে বাবা।

হঠাৎই কণা ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে। কণার কান্নার শব্দ শুনে আদিয়াত অস্থির হয়ে ওঠে,

কণা কী হয়েছে? তুমি এভাবে কাঁদছো কেনো? কোথাও ব্যথা পেয়েছো? বলো না আমাকে? আচ্ছা আমি দেখি তুমি কোথায় ব্যথা পেয়েছো?

আদিয়াত কণাকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে। কণা কোথাও ব্যথা পায়নি এটা দেখে আদিয়াত সস্থির নিশ্বাস ফেলে। কণা কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,

আজকে যদি আপনার কিছু হয়ে যেতো? তখন আমি কী করতাম? আমি কাকে নিয়ে থাকতাম?

এটার জন্য কান্না করতে হয়। দেখো আমি একদম ঠিক আছি। আমি তোমার চোখের সামনেই আছি। আমার কিছু হয়নি। আমি কোথাও ব্যথাও পায়নি। প্লিজ তুমি এভাবে কেঁদো না। তোমার কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না। বুকের বা পাশে চিন চিন ব্যথা করছে।

যদি কিছু হয়ে যেতো? এক্সিডেন্ট করলে যারা ড্রাইভ করে তারাই তো বেশি আঘাত পায়। আপনার কিছু হলে আমি কী নিয়ে বাঁচতাম? পারবো না আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে। আপনিহীন আমার জীবন অন্ধকার।

কণা আদিয়াতকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আদিয়াত কণার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। অনেক কথা বলছে। বিভিন্ন জোক্স বলছে। কিন্তু কণার কান্না থামার নাম গন্ধ নেই। হঠাৎই আদিয়াতের ছোটবেলার কথা শুনে কণা ফিক করে হেসে দেয়। আদিয়াত মাথা চুলকে কোনো মতে মুচকি হাসে। কণা আদিয়াতের শার্টে চোখের পানিটা মুছে নাক ঘষে। আদিয়াত কণার নাক টেনে মুচকি হেসে দেয়। কণা আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলে,

আজকে থেকে আপনি যেখানেই যাবেন সাথে করে ড্রাইভার নিয়ে যাবেন। আপনি নিজে ড্রাইভ করবেন নাহ।

তোমার সাথে ঘুরতে গেলোও?

হ্যাঁ।

একদমই না।

কণা আদিয়াতের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। আদিয়াত কণার দিকে অসহায় চোখে তাকায়।

৫৬

সাফাত বসে আছে ডিভানে ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট। একটু পর পর সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া আকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে। আজকের দিনটা তার একদম অদ্ভুত কেটেছে। প্রথমে অপ্রত্যাশিতভাবে বন্যার সাথে দেখা। এক্সিডেন্টলি অহির তার ওপর পড়ে যাওয়া। আজকে সারাদিন অহির তার সাথে কেমন অদ্ভুত বিহেইভ করছে। যেমন করতো আগে। সে হিসেব মিলাতে পারছে না। সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে।

অহির এমন ব্যবহার কারণ সে খোঁজে পাচ্ছে না। সে অহির ব্যপারটা সম্পূর্ণ ভাবে তার মাথা থেকে মুছে ফেলতে চায়। তার এখন এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। তার এখনো অনেক দায়িত্ব পালন করা বাকি। বোনকে একটা ভালো ছেলের কাছে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। ভালো ছেলে তো তার হাতের কাছেই আছে শুধু কণাকে তার হাতে তুলে দেওয়ার পালা।

তার বাবার জন্য একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর সে নিশ্চিন্ত। সাফাত সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সিগারেটের অবশিষ্ট অংশটুকু বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। সাফাত চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে। চোখ জোড়া বন্ধ করতেই বন্যার সেই মলিন মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সাফাত ধপ করে চোখ খুলে ফেলে। সাফাত আপন মন বিড়বিড়িয়ে বলে,

বাস্তবতা এতটাই কঠিন যে, কখনও কখনও বুকের ভিতর গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু ভালবাসাও অসহায় হয়ে পড়ে।

৫৭

কণা ফুরফুরে মন নিয়ে ভার্সিটি যাচ্ছে। তার মনটা ভীষণ ফুরফুরে। আজকে অকারণেই ভীষণ খুশি। ঠোঁটে বিরাজ করছে এক চিরল হাসি। কারণে অকারণে হাসি পাচ্ছে। ভার্সিটি এসেই সে সোজা লাইব্রেরীতে চলে যায়। সামনে পরীক্ষা প্রচুর পড়তে হবে আর ফাঁকি বাজি করলে চলবে না।

কণা লাইব্রেরীতে বসে একের পর এক বইয়ের পাতা উল্টাছে। কণা বুঝতে পারছে তার সামনে কেউ একজন বসেছে। কারণ লোকটা বসার সময় বেশ শব্দ করেই বসেছে। কণা বুঝতে পারছে লোকটা তার এটেনশন পাওয়ার জন্য এমন করছে। কিছু ফাতরা লোকই আছে এমন। কিন্তু কণা লোকটার দিকে তাকানোর প্রয়োজন মনে করলো না। একের পর এক বইয়ে পাতা উল্টাচ্ছে আর নোট করছে।

কণা।

পুরুষালি কন্ঠে নিজের নাম শুনে কণা বইয়ের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে বসে থাকা লোকটার দিকে তাকায়। কণার সামনে বসে থাকা লোকটা হচ্ছে ফাহিম। কণা কয়েক সেকেন্ড ফাহিমের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। তার দৃষ্টি স্থির করে বইয়ের পাতায়।

কণা বুঝতে পারছে ফাহিম কিছু বলতে চাইছে আর তার জন্য আমতা আমতা করছে। কণা বুঝতে পারে না ফাহিম তার সাথে কথা বলতে আসলেই এমন হেজিটেড কেনো করো। সবার সামনে যেভাবেই থাকুক না কেনো তার সামনে আসলেই মাথা নত করে ফেলে। কণার সাথে ফাহিম প্রয়োজন ব্যতীত একটা টু শব্দও করে না। যেটুকু করে সেটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে।

কণা।

ফাহিমের দিকে পুর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। ফাহিম আবার আমতা আমতা করছে। কণা এবার নিজে থেকেই বলে,

কিছু বলবেন।

হহ্যাঁ না। না মানে। একটু কথা ছিল।

আমতা আমতা না করে যা বলার বলে ফেলুন।

আদ্রিয়ান অসুস্থ।

আদ্রিয়ান অসুস্থ তো আমি কী করবো?

তোমাকেই তো দরকার।

আদ্রিয়ান অসুস্থ আপনি ডক্টরের কাছে না গিয়ে বলছেন আমাকে দরকার। আজব তো। আমি কী ডক্টর? যে আপনি আমার কাছে এসেছেন?

আদ্রিয়ান তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে চাইছে? ও ভীষণ অসুস্থ নিজে আসতে পারেনি তাই আমাকে পাঠিয়েছে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

উনি কেনো আমার কাছে ক্ষমা চাইতে যাবেন?

ও তোমার সাথে যা অন্যায় করেছে তার জন্য ক্ষমা চাইতে চাচ্ছে। দিনের পর দিন তোমাকে যে মানসিকভাবে টর্চার করেছে তার জন্য।

ওহ রিয়েলি। এতোদিন পর উনার মনে হলো উনি আমার সাথে অন্যায় করেছেন। দিনের পর দিন আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করেছেন? মতলবটা কী বলুনতো।

কণার ফোন বেজে ওঠে। কণা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে আদিয়াত কল দিয়েছে। সে জানে আদিয়াত কেনো কল দিয়েছে। কণা কলটা রিসিভ করে। দুই মিনিট কথা বলে রেখে দেয়।

কণা আদ্রিয়ান সত্যিই অনুতপ্ত। তোমার কাছে ক্ষমা না চাইতে পারলে ও শান্তি পাবে না। প্লিজ একটি বার আমার সাথে চলো না।

কণা দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে, আপনি উনাকে বলে দিবেন আমি উনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি বেঈমানদের মনে রাখি না। আর উনাকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে দিবেন। একটা বিষয়ে আমি উনার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। উনি আমাকে এভাবে ছেড়ে না গেলে আমি আমার সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষকে পেতাম নাহ।

চলবে…….