চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা পর্ব-১৪+১৫

0
656

#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋

#পর্ব_১৪

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

একটা ছেলে এসে ফুচকা দিয়ে গেলো।আরশ মৌয়ের সাথে গল্প করছে আর ফুচকা খাচ্ছে।হঠাৎ তার লোক পড়লো উল্টো পাশের বেঞ্চটার দিকে।সেই বেঞ্চে বসে তুর আর দিশা ফুচকা খাচ্ছে।

“মৌ সামনে তাকিয়ে দেখো সুন্দর প্রেমিক-প্রেমিকা কিভাবে প্রেম করছে!”

মৌ আরশের কথায় সামনে তাকিয়ে দেখলো তুর আর দিশা বসে আছে।মৌ হাসি দিয়ে বললো,

“এই বান্দরনীর আজকে খবর আছে।”

মৌ উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করলো।আরশও তার পিছুপিছু হাঁটছে।মৌ আর আরশ গিয়ে ওদের সামনে দাঁড়ালো।তুর আর দিশা তো মৌ আর আরশকে দেখে চমকে গেছে।

তুর অবাক হয়ে বললো,

“তোরা এখানে?”

আরশ বললো,

“আমরা এখানে না আসলে তো আসল ঘটনা জানতেই পারতাম নাহ্।”

মৌ দিশার কান টেনে ধরে বললো,

“এই তোর ব্যস্ততা তাই-না!লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করিস আর আমাকেই জানালি নাহ্।”

দিশা কানে হাত দিয়ে বললো,
“আউ মৌ কানে লাগছে তো।কানটা ছাড়।”

“লাগুক।তোর কান ছিঁড়ে পড়ে যাক।”

আর হাসি দিয়ে বললো,

“আরে মৌ ওর কানটা ছেড়ে দেও।কাল হলুদের অনুষ্ঠান।বেচারি এক কান ছিঁড়া নিয়ে কিভাবে যাবে!”

আরশের কথায় মৌ মুচকি হেসে দিশার কান ছেড়ে দিলো।দিশা মৌকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“তুই তোর বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলি তাই বলতে পারিনি।তবে বিয়ের পরে আমি ঠিকই জানাতাম।”

“হয়েছে এতো ঢং করতে হবে।”

মৌ কথাটা বলে দিশার মাথায় একটা চুমু দিলো।

/💚/

ঘোরাঘুরি শেষ হলে আরশ মৌকে নিয়ে মৌয়ের বাড়িতে আসলো।মৌ বাইক থেকে নেমে বললো,

“আরশ ভিতরে চলো।”

” কালকে হলুদের অনুষ্ঠান আছে মৌ।বাড়িতে অনেক কাজ আছে।”

মৌ আরশের গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,

“ওকে আল্লাহ হাফেজ।”

আরশ হাসি দিয়ে বললো,

“আল্লাহ হাফেজ।”

—🌼—

সকালবেলা,

বাড়িতে হৈ-হুল্লোড়ের কারণে মৌয়ের ঘুম ভেঙে গেলো।সে বিছানায় বসে হাই তুলছে।আর বিরক্তি মাখা মুুখ নিয়ে চোখ বন্ধ করে চশমা খুঁজছে।চশমাটা হাতে পেয়েও গেলো কিন্তু চশমাটা তুলতে পাচ্ছে নাহ্।মনে হয় অপর পাশ থেকে কেউ ধরে আছে।মৌ চোখ খুলে দেখলো এক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।তবে চশমা না থাকার কারণে মুখটা মৌ দেখতে পাচ্ছে নাহ্।তবে সে এটা ভালো করে বুঝতে পেরেছে যে এটা আরশ নাহ্।

মৌ চোখ রাঙিয়ে বললো,

“আপনি কি পাগল নাকি?একজন মানুষ চোখে দেখে না তার চশমা টেনে ধরে রেখেছেন!”

ছেলেটা কোনো কথা না বলে চশমাটা টান দিয়ে নিয়ে মৌয়ের চোখে পড়িয়ে দিলো।মৌ তাকিয়ে দেখলো নিহান দাঁড়িয়ে আছে।মানে ওর কাজিন।নিহান হলো মৌয়ের মামাতো ভাই।তবে মৌ একদমই নিহানকে পছন্দ করে নাহ কারণ এই ছেলেটা সবসময় ওর পিছনে লেগে থাকে।

নিহান মাথা ঝুকিয়ে বললো,

আমাকে রেখে আরেকজন বিয়ে করে ফেলতেছিস তুই!”

মৌ বিছানা থেকে নেমে বললো,

“দেখুন নিহান ভাই আমার বিয়ে হয়ে গেছে।এটা জাস্ট একটা অনুষ্ঠান করা করছে।সো আপনার ক্রেজি টাইপের কথাবার্তা বাদ দিন।”

“মৌ আমি তোকে ভালোবাসি।”

“এমন ভালো তো আপনি অনেক-কেই বাসেন।”

মৌ কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।মৌ ব্রাশ করছে আর বলছে,

“উফ!আরেক আপদ এসে জুটলো।এ-কে না ডাকলেও পারতো আম্মু-আব্বু।”

মৌ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিহান সোফায় বসে আছে।মৌ তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“আপনি এখানে এখনো বসে আছেন?দেখুন একজন পরপুরুষ আমার রুমে এভাবে বসে থাকবে তা আমি পছন্দ করি নাহ্।আর একটা কথা শুনে রাখুন।হুটহাট আমার রুমে চলে আসবেন নাহ্।”

নিহান উঠে দাঁড়িয়ে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।মৌ চশমা ঠিক করে বললো,

“আপনাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে বলিনি।এই রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত করেছি।”

“আমি সেটা ভালো করেই বুঝেছি।আর তুই যে এতো কথা বলছিস।তুই কাকে বিয়ে করছিস?যেই ছেলের বউ চলে যায়।আরে ওর চেয়ে তো আমি ভালো ছিলাম।”

“ও আপনার চেয়ে হাজার গুণ ভালো।আপনার মতো চরিত্রে দোষ নেই।আর শুনুন আরশের আগে ওয়াইফ ওর জন্য চলে যায়নি।সে তার নিজের কারণেই গিয়েছে।কাউকে নিয়ে কথা বলার আগে ভেবে বলবেন।আর আরশের বিষয় আসলে সেটা বলার আগে দশবার ভাববেন।”

হঠাৎ করে মৌয়ের মোবাইলে কল আসলো।সে নিহানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে মোবাইলের কাছে গেলো।মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো আরশের কল।মৌয়ের মুখে নিমিষেই হাসি ফুটলো।সে নিহানের দিকে তাকিয়ে দেখলো নিহান এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

“কি হলো!আপনাকে কি লোক ডেকে বের করতে হবে নাকি!”

মৌয়ের কথার পাল্টা কোনো জবাব না দিয়ে নিহান মৌয়ের রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।নিহান চলে যেতেই মৌ কলটা রিসিভ করলো।

“হ্যালো হাবিজি।গুড মর্নিং।”

“বাহ্!আমার শিশপ্রিয়ার সকাল দশটায় ঘুম ভাঙলো তাহলে।”

“কেনো তুমি তো এর আগেও কল দিছো?”

“জ্বি হ্যাঁ।একবার না চার থেকে পাঁচ বার।তারপরে ভাবলাম হয়তো মহারাণী এখনো ঘুমাচ্ছে কিছুক্ষণ পরেই কল করি।”

“জানো একটা ঝামেলা হয়েছে।”

“কেনো তোমার শরীর কি আবার খারাপ হলো নাকি মৌ?”

“আরে নাহ্।নিহান ভাই এসেছে।”

“নিহান ভাই কে?”

“আরে আমার মামাতো ভাই।অনেক বাজে ছেলে।উনি আমাকে পছন্দ করেন।তবে আমার উনাকে দেখলেই রাগ উঠে।চরিত্রহীন লোক একটা।আমার না খুব ভয় করছে।আমাদের বিয়েতে যদি কোনো ঝামেলা করে!”

“মৌ টেনশন করো নাহ্।আল্লাহ রহমতে আমাদের বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হয়ে যাবে।”

“তাই জেনো হয়।”

“আচ্ছা আগে শোনো আমি কি বলতে কল করেছি!”

“হ্যাঁ কি বলবে বলো।”

“তোমার হলুদের শাড়ি গুছিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি তত্ত্বের সাথে।তবে ব্লাউজটা পাঠানো হয়নি।সেটা তুরকে দিয়ে পাঠিয়েছি।”

আরশের কথা শুনে মৌ হেসে দিলো।”

“তত্ত্ব কি তুমি গুছিয়েছো হাবিজি?”

“আমাদের বাড়িতে বেশিভাগ ছেলে।মেয়ে মাত্র দুইজন।আয়াত আর ইভা।ইভা তো পিচ্চি।আর আয়াতও গুছিয়েছে তবে আমারও হাত লাগাতে হয়েছে।আর ভুলটা আমারই শাড়ির সাথে ব্লাউজটা ঢুকাতে ভুলে গেছি।”

মৌ মুচকি হেসে বললো,

“বাহ্ তুমি তো অনেক কাজের ছেলে।”

“হয়েছে।তুমি তুরের থেকে নিয়ে নিও।আল্লাহ হাফেজ।”

আরশ কলটা কেটে দিলো।মৌ মোবাইল রেখে মুচকি হাসি দিয়ে নিচে গেলো।

#চলবে…………………

#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋

#পর্ব_১৫

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

রাজ বিছানায় বসে চোখের জল ফেলছে।রাইতা এসে রাজের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“রাজ কি হয়েছে তোমার?”

“আমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি রাইতা।”

“কি হয়েছে রাজ?”

“আমি আরশের সাথে অন্যায় করেছি।সবটা না জেনে।আরশের সাথে কখনো রিমির প্রেমই ছিল না।রিমির প্রেম ছিলো নিহাদের সাথে।এই কথা আমি জানতে পেরেছি নিহাদের থেকেই।নিহাদের অবস্থা ভালো ছিল নাহ্।ক্যান্সারের রুগী।সে আজকে সকালে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে।কালকে সকালে হঠাৎ আমাকে কল করে বললো ‘রাজ আমার সাথে একটু দেখা কর।তোকে কিছু সত্য কথা জানাতে হবে।’তারপরে আমি ওর সাথে দেখা করতে গেলাম।ওর চেহারা দেখেই আমার খটকা লাগলো।ও তখন আমাকে বললো যে ওর ক্যান্সার হয়েছে।তারপরে বললো রিমির মৃত্যুর জন্য নিহাদই দায়।কারণ নিহাদ নাকি রিমির সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছিলো।সেটা একবার না একাধিক বার।তারপরে রিমি যখন তাকে বিয়ে করার কথা বললো তখন সে বিয়ে করতে চাইলো নাহ্।রিমিকে ছেড়ে বিদেশে চলে গেলো।তখন রিমি সবটা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করলো।আর নিহাদ চেয়েছিলো জানি তার উপরে কোনো দোষ না পড়ে।তাই সে আরশের কাঁধে সব দোষটা দিয়ে দিলো।আর আমার সাথে আরশের বন্ধুত্বটা নষ্ট করে দিলো।আর আমি কতটা স্বার্থপর।আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে অবিশ্বাস করে ওই নিহাদকে বিশ্বাস করলাম।আরশ কতটা কষ্ট পেয়েছে যে আমি তোমাকে বিয়ে করেছি বলে!”

রাইতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

“দেখো রাজ এতে কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই।নিহাদ তো তার শাস্তি পেয়েই গেছে।আর আমি স্বইচ্ছায় তোমাকে বিয়ে করেছি।এতে তোমার তো দোষ নেই।”

“তুমি যাকে ছেড়ে এসেছো তার জন্য একদিন আফসোস করবে রাই।একটা গল্প বলি শোনো।”

রাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শরু করলো,

“আমি আর আরশ যখন কলেজে পড়তাম তখন আমার কাছে টাকা থাকতো নাহ্।কারণ তুমি তো জানোই আমার বাবা-মা ছিলো নাহ্।চাচার বাড়িতে থাকতাম।তারা অনেক আদর করলেও তাদের তেমন সামর্থ্য ছিলো না।সেই সময়টায় সবসময় আরশ আমার পাশে ছিলো।তখন রেস্টুরেন্টে খেতে যেতাম কয়েকজন বন্ধু মিলে।এমন প্রায়ই যেতাম।আরশ আমার সব খরচ দিতো।তখন আমাদের নিয়ম ছিলো যে যেমন পারে তেমন টাকা দিয়ে সবাই মিলে খাবে।কিন্তু আমার কাছে কখনোই টাকা থাকতো না।আমার পক্ষ থেকে আরশই টাকা দিতো।একদিন বন্ধুরা মিলে বললো, আরশ জানি আমার খরচ না দেয়।আমি যদি কোনো টাকা নাই দিতে পারি তাহলে আমি জেনো ওদের দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেই।তখন আরশ পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছিলো ‘আমি যদি দলে না থাকি তবে ও থাকবে না’।আরশ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে আসে।সঙ্গে তুর ও উঠে চলে আসে।তারপরে থেকে আমাদের তিন বন্ধুর গ্যাং তৈরি হয়।তবে আরশ আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিলো।সেই আমি কিনা আরশকেই এভাবে কষ্ট দিলাম!”

রাজ কথাগুলো বলে কেঁদে দিলো।রাইতা রাজের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“দেখো রাজ…..আরশ তো এখন একটা নতুন জীবনে প্রবেশ করেছে।আমাদের উচিত হবে নাহ্ ওদের মাঝে যাওয়া।তবে আমি আরশের কাছে হাত জোর করে মাফ চাবো।আমিই সবচেয়ে বেশি অন্যায় করেছি ওর সাথে।”

রাইতা কথাগুলো বলে কেঁদে দিলো।রাজ রাইতাকে জড়িয়ে ধরলো।

|🦋|

মৌয়ের কাজিনরা মিলে মৌয়ের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।তবে মৌয়ের কিছুটা অসস্তি লাগছে নিহানের কারণে।কারণ নিহান উল্টো দিকের সোফায় বসে একভাবে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।মৌ রাগের কারণে চোখ থেকে চশমা খুলে রাখলো।জানি নিহানের মুখটা না দেখা লাগে।নিহান বিষয়টা বুঝতে পেরে বাঁকা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।উঠে দাঁড়াতেই নিহানের চোখে পড়লো তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে।নিহান মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“হেই লেডিস্……..”

নিহানের কন্ঠ কানে যেতেই মিতু পিছনে ঘুরে তাকালো।মিতু হলো মৌয়ের চাচাতো বোন।

মিতু নিহানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“কিছু বলবেন ভাইয়া?”

“হোয়াট?ভাইয়া বলো কিসের জন্য?আমি কি তোমার ভাই নাকি?”

“ওমাহ্!আমার ভাই না তো কি হয়েছে মৌয়ের ভাই তো।”

নিহান আর কিছু না বলে চোখ পাকিয়ে চলে গেলো।

—🌸—

তুর আরশের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“আরশ আজকে হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে তোকে যা লাগছে নাহ্!মৌ তো জ্ঞান হারাবে।”

“আরে কি যে বলিস!”

আয়াত এসে আরশের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

“তুর ভাইয়া একদম ঠিক বলেছে।ভাবি তো পাগলই হয়ে যাবে।”

আরশ মুচকি হেসে বললো,

“আগে দেখ তোর ভাবিকে দেখে আমি জ্ঞান হারাই নাকি!”

নিপা বেগম এসে আরশের গালে হাত দিয়ে মৃদু হেসে বললো,

“সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আমাদের এখন যাওয়া উচিত।নাহলে দেরি হয়ে যাবে।”

আমেনা বেগম গুটি গুটি পায়ে হেঁটে হেসে বললেন,

“হয় আমগো এহন যাওন উচিত।তোগো নিয়মডা ভালা হইছে।একলগেই দুইজনের হলুদ।আর এক জায়গাতেই।আনন্দ ডা বেশি হইবো আর দুজনের হলুদই দেহন যাইবো।”

/🍁/

হলুদ শাড়ি পড়ে বসে আছে মৌ।গায়ে ফুলের গহনা,হালকা সাজে অনেক সুন্দর লাগছে মৌকে।তবে তার চোখে কালো ফ্রেমের চশমাটা ঠিকই আছে।মৌয়ের চোখ বাড়ির সদর দরজার দিকে।কখন যে আরশ আসবে আর তার মুখে হাসি ফুটবে।তবে তার মধ্যে একটা আনন্দ কাজ করছে।কারণ হলো নিহান তার পিছু ছেড়ে মিতুর পিছনে ঘুরছে।

আরশ গাড়ি থেকে নেমে মৌদের বাড়িতে প্রবেশ করলো।আয়াত আরশের হাত ধরে নিয়ে মৌয়ের পাশে বসিয়ে দিলো।আরশকে দেখে মৌয়ের মুখে হাসি ফুটলো।আরশও মৌয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।মৌ তার হাত আরশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো তার হাতের দিকে তাকাতে।আরশ মৌয়ের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহেদির ডিজাইনের মাঝখানে ছোট্ট করে ‘হাবিজি’ লেখা।যা দেখে আরশ উজ্জ্বল হাসি দিলো।তারপরে মৌয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে একটা চুমু দিলো।

দিথি আরশ আর মৌয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“অনেক হয়েছে রোমান্টিকতা।এখন তো হলুদ ছোঁয়া শুরু করতে হবে!”

একে একে এসে সবাই আরশ আর মৌকে হলুদ ছুঁইয়ে গেলো।নিহান মৌকে হলুদ ছোঁয়াতে এসে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“মিতুর সাথে সেটিং হয়ে গেছে।তুই মুক্তি পেয়ে গেলি।”

কথাটা বলে নিহান চলে গেলো।মৌ আনন্দে হেসে দিলো।

~🥀~

সবাই খাওয়া-দাওয়া করছে।আরশ আর মৌ খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ছাদে এসে বসে আছে।মৌ আরশের কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে।আরশ চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,

“জানো মৌ তোমাকে দেখলে চাঁদও লজ্জা পায়।”

মৌ ভ্রু কুচকে আরশের দিকে তাকিয়ে বললো,

“কেনো?”

আরশ মুচকি হেসে বললো,

“এই যে তুমি চাঁদের চেয়ে বেশি সুন্দর তাই।”

আরশের কথায় মৌ লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।আরশ মৌকে রাগাতে বললো,

“তুমি আবার লজ্জাও পাও!যেই মেয়ে বিয়ে হওয়ার দ্বিতীয় দিন লিপকিস করে সে আবার লজ্জা পায়?আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি।”

“তা তোমার মতো মেউ মেউ করবো নাকি?আমার কিস করার ইচ্ছা হয়েছে করে দিয়েছি।তবে ওটা তো ছোট্ট একটা চুমু ছিলো।তুমি চাইলে এখন দীর্ঘ কিসটা করতে পারি!”

“নাহ্ দরকার নেই।বিয়ের আগে এইসব করা উচিত নাহ্।”

মৌ আরশের গাল টেনে বললো,

“ওরে আমার লক্ষী হাবিজি তাহ্।”

“আচ্ছা মৌ একটা কথা বলি?”

“হ্যাঁ বলো।”

“আমার আর তোমার প্রথম থেকে ঝগড়াই হচ্ছিলো।বাট বিয়ে হওয়ার পরে তুমি এমন চেঞ্জ হয়ে গেলে কেনো!”

মৌ মুচকি হেসে বললো,

“আসলে কি জানো!তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিনই ক্রাশ খেয়েছি।তোমার কথা বলার ধরণ,অ্যাটিটিউড এইসব দেখে আমি তোমাকে ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেলি।তবে রেস্তোরাঁয় যখন শুনেছিলাম তোমার ডিভোর্স হয়েছে।তখন একটু কষ্ট পেয়েছি বটে,তবে পরে যখন জানলাম ডিভোর্সের কারণ তুমি না বরং রাইতা আপু ছিলো।তখন আবার তোমার প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি হয়।আমি চেয়েছিলাম তোমাকে প্রপোজ করবো।বাট কেমনে কেমনে জানি আমাদের বিয়েটাই হয়ে গেলো।”

মৌয়ের কথা শুনে আরশ শক্ত করে মৌকে জড়িয়ে ধরলো।

“মৌ তুমিও রাইতার মতো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো?”

“কখনোই নাহ্ আরশ।তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা।আর আমি তোমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রশ্নই আসে নাহ্।”

/✨\

রাতের বেলা,

আরশ তার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।আর মৌয়ের কথা ভাবছে।

“শিশপ্রিয়া তুমি দেখতে যতটা সুন্দর তার চেয়ে সুন্দর হলো তোমার মন।চেহারা চেয়ে একটা মানুষের মন সুন্দর হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।কারণ চেহারা সুন্দর হলেও মন কালো হলে সে কখনোই ভালো মানুষ হতে পারে নাহ্।মানুষকে ধোঁকা দিতে ভালোবাসে।যার প্রমাণ হলো রাইতা।”

কথাগুলো বলে আরশ মৃদু হাসলো।আবার বলতে শুরু করলো,

“জানো রাইতা একসময় আমি তোমাকে পাগলেও মতো ভালোবাসতাম।হয়তো আমার মনের কোথাও তুমি এখনো আছো।তবে ভালোবাসার চেয়ে তোমাকে আমি এখন ঘৃণা করি।তুমি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ।”

আরশ কথাগুলো বলে চোখ বন্ধ করলো।আরশ চোখ বন্ধ করে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ তার মোবাইলে কল আসলো।আরশ রুমে এসে দেখে তুর কল করেছে।

“কি রে তুর কিছু বলবি?”

“আজকে ব্যস্ততার কারণে তোকে একটা জিনিস বলতে ভুলে গেছি।”

“কি বলবি?”

“নিহাদ মারা গেছে।”

আরশ অবাক হয়ে বললো,

“কিভাবে?”

“ওর ক্যান্সার হয়েছিলো দ্যান মারা গিয়েছে আজ সকালে।”

“উফ তুই তো আমাকে আগে বলবি।তাহলে আজকে সকালে আমি যেতাম।কালকে তো যাওয়া সম্ভব হবে না।”

“ও-কে কি দেখতে যেতে চাস তুই?ওর জন্যে তোর আর রাজের মধ্যে এতো দূরত্ব।”

“থাক এইসব বাদ দে।”

!🌻!

মৌ তার কাজিন আর বান্ধবীদের সাথে গল্প করছে।মিতু হঠাৎ করে বললো,

“মৌ রে ওই নিহান যা লুচু ওরে আমি কেমনে সামলামু?”

মৌ চোখ ছোট করে বললো,
“প্রপোজাল একসেপ্ট করার সময় এই কথা মনে ছিলো নাহ্ তোমার?”

“আরে আমি তো পরে জানতে পারছি।আগে জানলে কখনোই রাজি হইতাম নাহ্।”

দিথি হাসি দিয়ে বললো,

“আরে কয়দিন প্রেম করে ছ্যাঁকা দিয়ো।উনি তো একজন প্লেবয়।উনার জন্য এটাই ঠিক হবে।”

মৌ হাসি দিয়ে বললো,
“দিথি একদম ঠিক বলেছে।”

রুমে উপস্থিত সবাই হেসে দিলো।

#চলবে……………………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]