চাঁদ উজাড় পূর্ণিমা পর্ব-১১

0
494

#চাঁদ_উজাড়_পূর্ণিমা💚🦋

#পর্ব_১১

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

আরশের কথা শুনে মৌ মুচকি হাসলো।

“একটা জিনিস জানো হাবিজি?”

“কি?”

“তুমি অনেক ভালো।একদম আমার মনের মতো।”

মৌয়ের কথা শুনে আরশ মুচকি হেসে বললো,

“পাম দিচ্ছো নাকি আমাকে?”

“নিজের বরকে কি পাম দেওয়া লাগে?”

আরশ আর কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলো।মৌ হঠাৎ উঠে দাঁড়ালো।আরশ অবাক হয়ে বললো,

“কি হয়েছে মৌ?”

“ওয়েট।”

মৌ একটা চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়ালো।মৌয়ের কান্ড দেখে আরশ উঠে দাঁড়িয়েছে।মৌ একটা শিটি মারলো।রেস্টুরেন্টে যে কয়জন মানুষ ছিলো সবাই মৌয়ের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।মৌ তখন চিৎকার করে বললো,

“আই লাভ ইউ আরশ।আমি আমার হাবিজিকে অনেক ভালোবাসি।আই রেলি লাভ ইউ।ইউ আর মাই পারফেক্ট লাইফ পার্টনার।”

মৌয়ের কথাগুলো শুনে আরশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।চারিপাশের সবাই হাত তালি দিচ্ছে।মৌ হাসি দিয়ে চেয়ার থেকে নামতে গিয়ে পা পিছলে পড়তে গেলে আরশ তাকে ধরে ফেললো।মৌ মুচকি হাসি দিলো।আরশ মৌকে নিচে দাঁড়া করালো।

“হাবিজি তুমি কতটা লাকি দেখছো!তোমাকে একটা মেয়ে এতোগুলো মানুষের সামনে ‘ভালোবাসার কথা’ বললো।”

আরশ মুচকি হেসে মৌয়ের হাত দুটো শক্ত করে ধরলো।

“মৌ আমার মুখ থেকে কিছু শোনার ইচ্ছে নেই তোমার?”

“অবিয়াসলি আছে।বলো না হাবিজি।”

আরশ কিছুক্ষণ মৌয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

“আই লাভ ইউ টু।আমিও আমার শিশপ্রিয়াকে অনেক ভালোবাসি।”

আরশের কথা শুনে মৌ খুশিতে লাফ দিয়ে বললো,

“ইয়াহু।”

আরশ মৌকে জড়িয়ে ধরলো।মৌ-ও আরশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

/🦋/

আরশ মৌকে নিয়ে মৌদের বাড়িতে গেলো।

“মৌ রাত দুটো বাজে।এখন ঘরে গিয়ে নাচানাচি না করে ঘুমিয়ে পড়বে।”

“এই তোমাকে কে বলছে আমি নাচানাচি করি?”

“মিতা আন্টি বলেছে।তুমি রাতে না ঘুমিয়ে নাচো।”

“নাচলে কি হয়েছে?”

আরশ মৌয়ের মুখ থেকে চুলগুলো সরিয়ে বললো,

“রাতে না ঘুমালে শরীর খারাপ করবে।আগে যা করেছো কিন্তু এখন এইসব করবে নাহ্ একদম।”

“ওয়াও!আমার হাবিজি আমার এতো টেককেয়ার করছে।ও-কে জি তুমি যখন বলেছো তখন আমি একদম রাত জেগে নাচবো নাহ্।”

আরশ মৌয়ের কপালে একটা চুমু দিলো।মৌ আরশের গালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো।আরশ বাইক নিয়ে বাড়িতে আসলো।আরশ চুপিচুপি বাড়িতে ঢুকে তার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লো।

—/|🌻|/—

রাইতা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে রাজ রুমে নেই।রাইতা সেইদিকে গুরুত্ব না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রাজ সোফায় বসে আছে।রাজ রাইতাকে দেখে বললো,

“রাইতা একটা গুড নিউজ আছে তোমার জন্য।”

“কি গুড নিউজ রাজ?”

“আরশ মৌকে বিয়ে করছে।তাও আবার অনেক ধুমধাম করে।এটা শুনে তো তোমার খুশি হওয়ার কথাই।”

কথাটা শুনে রাইতার কিছুটা খারাপ লাগলো।সে মলিন হাসি দিয়ে বললো,

“আসলেই এটা একটা ভালো খবর।”

রাইতা আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

“কষ্ট পাওয়ার কথা আরশের।এখন দেখছি উল্টা এই মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে।নাহ্ আমাকে কিছু করতে হবে।জানি আরশও শাস্তি পায় আর এই মেয়েও আমার ঘাড় থেকে নেমে যায়।”

/✨/

মিতা বেগমের ডাকে মৌয়ের ঘুম ভাঙলো।মৌ বিছানায় বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসে বললো,

“আম্মু এতো ডাকাডাকির কি আছে?”

“আরশ আর আয়াত এসে নিচে বসে আছে।তোদের বিয়ের শপিং করতে যাবি নাহ্!”

“হোয়াট আরশ এসেছে?ওর বাবা-মা রাজি?”

“হ্যাঁ কাল রাতেই তো কথা হয়ে গেছে সব।তিনদিন পরে তোদের বিয়ে।”

মিতা বেগমের কথা শুনে মৌ বিছানা থেকে নেমে লাফাচ্ছে।

“ওফ আম্মু আমি যে কি খুশি!”

মৌ কথাটা বলে মিতা বেগমকে জড়িয়ে ধরলো।মিতা বেগম মৌয়ের কান্ড দেখে হাসছেন।

“হয়েছে এখন যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।”

“ওকে আম্মু।আমি পাঁচ মিনিটে যাবো আর দুই মিনিটে আসবো।”

মৌ কথাটা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।মিতা বেগম হাসি দিয়ে মৌয়ের রুম থেকে চলে গেলো।মিতা বেগম নিচে যেতে আরশ জিজ্ঞেস করলো,

“আন্টি মৌ ঘুম থেকে উঠেছে?”

“হ্যাঁ উঠেছে।ফ্রেশ হয়ে আসছে।”

আরশ বসে বসে অয়ন সাহেবের সাথে কথা বলছে।আর আয়াত মিতা বেগমের সাথে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে গল্প করছে।

আরশের চোখে সিঁড়িতে আটকে গেলো।মৌ একটা কালো আর লাল রঙের থ্রি-পিস পড়েছে।চুলগুলো খোলা,চোখে কালো ফ্রেমের চশমা,হালকা সাজে মৌকে অসাধারণ লাগছে।আরশ একভাবে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।আরশের সাথে মৌয়ের চোখাচোখি হতেই আরশ মাথা নামিয়ে ফেললো।আরশকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মৌ মুচকি হাসলো।

মৌ নিচে নেমে রান্নাঘরের দিকে গেলো।

“কেমন আছো মাই ডিয়ার ননদিনী?”

“এইতো ভালো আছি।তুমি কেমন আছো ভাবিজি।”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।বাই দ্যা ওয়ে তোমার লাভারের কি খবর?”

মৌয়ের কথা শুনে আয়াত কিছুটা লজ্জা পেলো।মিতা বেগম মৃদু হেসে কাজ করছেন।আয়াত আমতা আমতা করে বললো,

“তুমি কি সব বলছো ভাবি?”

মৌ আয়াতের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“আমি সবটা জানি।রাত বাবাজীবন যে তোমাকে প্রপোজ করেছে তাও দেখেছি।”

আয়াত এইবার লজ্জায় একদম চুপ হয়ে গেলো।মৌ আবার বলতে শুরু করলো,

“তবে তুমি একটা জিনিস ঠিক করোনি।বেচারা কে রিজেক্ট করে দিলে!”

“উফ ভাবি এইসব বাদ দেও।আর শোনো দিথি আপুকে কল করে আসতে বলো।আমাদের তুর ভাইয়াও কিন্তু আসবে!”

“বাহ্ তাহলে তো জমে ক্ষীর হয়ে যাবে।”

মৌয়ের কথায় আয়াত আর মিতা বেগম হেসে দিলো।মৌ কফি নিয়ে অয়ন সাহেব আর আরশকে দিলো।আরশ কফি হাতে নিয়ে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।মৌ আরশের পাশে বসে আস্তে করে বললো,

“আমার দিকে না তাকিয়ে কফিটা খাও।ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।”

“তুমি এতো সুন্দর না হলেও পারতে!”

আরশের কথায় মৌ মুচকি হাসলো।আরশ,মৌ আর আয়াত মিলে শপিংমলে গেলো।শপিংমলের সামনে গিয়ে দেখলো তুর আর দিথি দাঁড়িয়ে।আরশ তুরকে আস্তে করে বললো,

“ভালোই তো প্রেম করছো।”

“আরশ চুপ কর।”

তুরের কথায় আরশ মুচকি হাসলো।কেনাকাটা শেষ করে তারা একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকলো।আরশ আর মৌ পাশাপাশি বসে আছে।মৌ আরশের হাত শক্ত করে ধরে কাঁধে মাথা দিয়ে রেখেছে।

দিথি হাসি দিয়ে বললো,

“মৌ আমাদের দিকেও একটু তাকা।”

মৌ মাথা তুলে বললো,
“তোদের দিকেই তো তাকিয়ে আছি।ভালো লাগছে না তাই আরশের কাঁধে মাথা রেখে বসে ছিলাম।

“পাব্লিক প্লেসে এইসব না করাই ভালো মৌ।”

মৌ সামনে তাকিয়ে দেখলো রাইতা দাঁড়িয়ে আছে।

“আরে আমার সতীন যে!”

রাইতা চোখ রাঙিয়ে বললো,

“কি বলছো এইসব তুমি?”

“জাস্ট একটু মজা করলাম আপু।আপনি বসুন না আমাদের সাথে!”

“আমি তোমাদের সাথে বসতে আসিনি।আমি এসেছি আমার কাজে।”

রাইতা কথাগুলো বলে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে চলে গেলো।রাইতা যেতে মৌ আরশের দিকে ঘুরে তাকালো।সে দেখলো আরশ স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে।

“হাবিজি আর ইউ ওকে?”

“হ্যাঁ।আমার আবার কি হবে!”

“না মানে রাইতা আপু………”

মৌকে থামিয়ে আরশ বললো,

“মৌ রাইতা নামের চ্যাপ্টার আমি আমার জীবন থেকে ক্লোজ করে দিয়েছি।সো ও-কে দেখলে আমার কোনো সমস্যা হয় নাহ্।”

আরশের কথা শুনে মৌ মুচকি হাসলো।

|💛|

আরশ তার বাড়িতে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।চারিদিক থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে।আরশ পকেট থেকে টুপিটা বের করে মাথায় পড়ে নিলো।তারপরে রুম থেকে বের হয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।মাগরিবের নামাজ পড়ে ফিরার পথে হঠাৎ তার রাজের সাথে দেখা হলো।

“আরশ তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।কেনো এমনটা করলি তুই!আজকে তা আমাকে বলতেই হবে।”

আরশ কিছু বুঝে উঠার আগেই রাজ আরশের হাত ধরে টেনে গাড়িতে এনে বসালো।

“রাজ তুই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?”

“যেখানে আমাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিলো।”

“রাজ তুই যা করেছিস তারপরে তোকে আমার বন্ধু বলতেও ঘৃণা হয়।”

“আমার বুকেও ঠিক তেমনিই তীব্র যন্ত্রণা আছে।আমি তোকে কষ্ট দিতেই রাইতাকে বিয়ে করেছিলাম।কিন্তু এখন সব উল্টোদিকে মোড় নিয়েছে।তুই তো কষ্টই পাচ্ছিস নাহ্।উল্টো রাইতা কষ্ট পাচ্ছে।

রাজ গাড়ি ড্রাইভ করে তাদের কলেজের সামনে গেলো।যেখান থেকে তাদের বন্ধুত্ব শুরু।আরশ ক্যাম্পাসের একটা বেঞ্চে বসে আছে।

“কি বলবি তুই রাজ?”

“সবুর কর বলছি সবটা।”

“আমার কাজ আছে বাড়িতে।”

“হ্যাঁ জানি তো।তিনদিন পরে বিয়ে।তোর আর মৌ ভাবির।”

“সবটা জানার পরেও আমাকে এখানে বসিয়ে রাখার মানে কি?”

“এতো উতলা হচ্ছিস কেনো?চা টা দিয়ে যাক।চা খেতে খেতে সবটা বলবো।”

#চলবে……………….

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।!]