বৃষ্টিবিলাস পর্ব-২৫

0
667

#বৃষ্টিবিলাস
২৫.
#writer_Mousumi_Akter

এ.এ.এস (আয়ান আহমেদ শুভ)কোম্পানীর একমাত্র উত্তরাধীকারী যার জীবনে কোন কিছুর অভাব নেই।মা বাবার একমাত্র আদরের ছেলে। শহরের যেকোনো ফ্যামিলির সুন্দরী মেয়ে তার সাথে বিয়ে দিতে এক বাক্য রাজী হবে।আজকাল সুন্দর চেহারা আর টাকা থাকলে সব ই সম্ভব।শুভর জীবনে সব কিছু থাকলেও ছিলো শুধু রোজার অভাব।সেই ছোট বেলা রোজাকে দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছিলো।রোজার জন্য কেটে যাওয়া ভ্রুর দাগ রোজ আয়নায় দেখে শুভ।নিয়মিত খোজ খবর রেখেছে রোজার।কিন্তু রোজার সামনে গিয়ে কখনো বিরক্ত করেনি।ভেবেছিলো একবারে বিয়ের পর চুটিয়ে প্রেম করবে।মা বাবা কে বলে বিয়ে ও ঠিক ঠাক করেছিলো।কিন্তু সব কিছু কিভাবে এলোমেলো হয়ে গেলো শুভ বুঝতে পারলো না।

মধ্যরাতে বাসায় এসে চিৎকার করে ডাকছে আম্মু-বাবা।ছেলের চিৎকারে শুভর মা -বাবা এগিয়ে এসে বললেন, কি হয়েছে বাবা।

ছেলের চোখে মুখে চিন্তা ভর করেছে।চোখ মুখে ভীষণ বিষন্নতা।

“শুভর মা -বাবা ভীষণ চিন্তা নিয়ে বলছে বাবা তোমার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো?আমাদের খুলে বলো।”

“এক্ষুণি রোজাদের বাসায় চলো বাবা।জাস্ট এক্ষুণি।”

শুভর বাবা আর মা দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে বারবার।তাদের চোখে মুখে হঠাত রোজা নাম টা শুনে যেনো চমকে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো।

“শুভ বললো,কি হলো কি দেখছো তোমরা চলো।”

“শুভর মা মিসেস অন্তরা বললো,বাবা মাত্র তুমি আসলে একটু রেস্ট নাও।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখো কয়টা বাজে।এত রাতে কারো বাসায় যাওয়া কি ঠিক হবে।মানুষ কি এটা ভালো ভাবে নিবে।তুমি একটু শান্ত হও বাবা।”

“বিয়ের দিন তারিখ ঠিক আছে তো?..”

শুভর বাবা আতিকুল আহমেদ নিজের ওয়াইফ এর দিকে তাকিয়ে এবার শুভর দিকে তাকিয়ে বললেন,

“তোমার বিয়ে ওই বাড়িতেই হবে শুভ।আর আমার পছন্দের মেয়ের সাথেই হবে।”

শুভ বেশ স্বস্তি পেলো।যাক বিয়ে এখনো ভাঙেনি।কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো শুভ।

“শুভর বাবা বললেন,নড়াইল কেমন ঘুরলে।”

“ভীষণ ভালো বাবা।আসলেই শহর টা ভীষণ সুন্দর। তুমি গেলেই বুঝতে কতটা সুন্দর। জাস্ট দেখার মতো।”

“তো আমাদের না জানিয়ে এইভাবে হুট করে চলে এলে যে।আর কিছুদিন থাকার কথা ছিলোনা।আর আসবে বললে গাড়ি পাঠাতাম।যাওয়ার সময় ও জিদ ধরলে বাসে চড়বে।আর রাজ কোথায় সে ফেরেনি।”

“ওহো বাবা একটু জরুরী প্রয়োজনে আসতে হলো।আর রাজ আসবে কাল বা পরশু।আমি হুট করে আসাতে রাজ রেডি হতে পারেনি বাবা।”

“শুভর মা মিসেস অন্তরা বললো,বাবা আমি খাবার গরম করছি তুমি যাও ফ্রেশ হও।অনেক রাত কাল গল্প হবে।”

“নো আম্মু।আমি কিছুই খাবো না।ক্ষুদা নেই।”

“না খেয়ে রাতে ঘুমোনো যাবে না বাবা।”

“আম্মু তোমার ছেলে এক রাত না খেলে মর*বে না বুঝলে।আমি শাওয়ারে যাচ্ছি তোমরা ঘুমিয়ে যাও মাই ডিয়ার সুইট আম্মু।”

“এসব কি কথা বাবা।ছিঃএসব আর বলবে না।”

“আম্মু ভয় পেলে দারুন লাগে তোমায় রিয়েলি।”

“মার হবে যা সাওয়ারে।বেশী ভিজবি না কিন্তু।”

“ওকে মম।”

আতিকুল আহমেদ ভীষণ দুঃচিন্তা নিয়ে বিছানায় কপালে হাত দিয়ে বসে আছে।

মিসেস অন্তরা স্বামির পাশে বসে বলছে,

“কপালে হাত দিয়ে বসে আছো কি জন্য শুনি।”

“তুমি বুঝতে পারছো না কেনো?খানিক টা চিল্লিয়ে বললো।”

“কেনো আমার বোঝার কথা কি?আর আমার সাথে চিল্লাচ্ছো ক্যানো?তখন বারবার বলেছিলাম তোমার ছেলে জেদী ছেলে।তার কাছে না শুনে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিও না।ছেলে ঝামেলা করবে।আমার কথা শুনলে না।এখন আমার সাথে চিল্লাচ্ছো।নিজের জেদ ধরে রাখলে।”

“আমি ওর বাবা নাকি ও আমার বাবা।ওকে আমার কথা শুনতে হবে।”

“দেখো শোনে কিনা।শুনলে ভালো।”

“শোনো তুমি ওর মা।তুমি ওকে বুঝিয়ে বলবা।তুমি একটু অনুনয় বিনয় করে বললে ও নিশ্চয়ই শুনবে।”

“কি বলবো আমি যে তোমার বাবা রোজা নয় রোজার বোন অহনার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে।নিজে নিজে গিয়ে গলায় চেইন পরিয়ে এসছে।এসব বলতে বলছো তাইতো।তোমার ছেলের রিয়্যাক্ট কেমন হবে বুঝতে পারছো।তুমি জানোনা তোমার ছেলে রোজাকে ছেলেবেলা থেকে ভালবাসে।অহনা কেনো পৃথিবীর কোনো মেয়েকেই তোমার ছেলে বিয়ে করবে না।প্রয়োজনে চির কুমার থাকবে বুঝেছো।”

“তো কি করতাম আমি।আমিতো রোজার সাথেই বিয়ে ঠিক করেছিলাম।আমি কি ছেলের পছন্দ মেনে নেয় নি।জেনে শুনে অমন চরিত্রহীন মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবোনা আমি।কত বড় নির্লজ্জ হলে আমাকে কল দিয়ে বলে আপনার ছেলেকে জানিয়ে দিবো আপনাকেও জানিয়ে দিচ্ছি আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে পারবোনা।আমার বয় ফ্রেন্ড আছে তার সাথে পালিয়ে যাচ্ছি আমি।আপনাদের লজ্জা করেনা বয়স্ক ছেলের সাথে আমার মতো মেয়ের বিয়ে দিতে চান।আমার ছেলের কি এমন বয়স।৬-৭ বছরের ছোট বড় হয় কিনা সন্দেহ।আমার ছেলেকে যা তা অপমান করেছে আমার কাছে।ইকবল এর মেয়েটাকে ভালো ভাবতাম ছিঃছি এমন বেয়াদব মেয়ে আগে দেখিনি।তাছাড়া অহনার মা আমাকে আরো অনেক কিছু বলেছে।ছেলের কপাল ভালো বিয়েটা ভেঙে গিয়েছে।সত্যি পালিয়ে গেলো ওই মেয়ে।বিয়ের পর পালালে কি করতাম ভেবেছো।আমার মান সম্মান আজ অহনার মায়ের জন্য বেঁচে আছে।প্রেস মিডিয়া এক হয়ে গেছিলো আয়ানের হবু বউ পালিয়েছে শুনে।ভাজ্ঞিস অহনার মা তখন বলেছিলো অহনার সাথে বিয়ে ঠিক করে আমার ইজ্জত বাঁচাতে।আমি সারাজীবন উনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।অহনা দেখতে ভারী মিষ্টি।আমাকে বাবা বলে ডাকে।আমাদের ছেলে ভীষণ সুখি হবে।”

“মিডিয়াতে নিউজ টা কে দিলো।”

“সেটা কিভাবে জানবো।মিডিয়ার লোকের প্রশ্নের চাপে বলেছি ওই বাড়িতেই আমার ছেলের বিয়ে হচ্ছে।”

“দেখো তুমিও কিন্তু ইকবল ভাইকে কম কথা শোনাও নি।”

“সেটা ওর মেয়ের জন্য ই শুনিয়েছি।”

শুভ এক ভাবে সাওয়ার নিচ্ছে।শরীরের তাপ কমছে না।পানি লাগিয়ে কি আর মনের তাপ কমে।মন ছটফট করছে শুভর।কখন রোজার সাথে দেখা হবে।প্রায় সারারাত সাওয়ার নিয়েছে শুভ।গায়ে প্রায় জ্বর চলে এসছে।

পরের দিন খুব ভোরে অহনা ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করছে।ইকবল আহমেদ অহনা কে দেখেই বললো,

“মা অহনা ঘরে যাও দেখে এসো কে এসছে।”

“কে এসছে কাকু।”

“যাও নিজেই দেখো রোজার রুমে।”

অহনা রোজার রুমে প্রবেশ করে দেখে রোজা ফ্লোরে বসে খাটে মাথা দিয়ে আছে।চোখ ভরা পানি।অহনা রোজা কে দেখেই জোরে বলে উঠলো আরে রোজায়ায়ায়ায়া তুই।হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ ইয়ার।কিন্তু রোজার মাঝে কোনো উৎসাহ নেই।অহনার খেয়াল করলো রোজার চোখে পানি।অহনার হাসি বিলীন হয়ে গেলো। রোজাকে জড়িয়ে ধরে বললো,এই রোজা কি হয়েছে বলনা ইয়ার।এই রোজা চুপ চাপ কেনো আছিস। এইভাবে কাঁদছিস কেনো?রোজা অহনাকে জড়িয়ে ধরে ভীষণ জোরে কেঁদে দিয়ে বললো, আমি ঠকে গেছি অহনা।ভীষণ ভাবে ঠকেছি।ভালবাসার মানুষ চিনতে ভুল করেছি আমি।

“ওই কি হয়েছে বলনা প্লিজ।”

“আমার স্বপ্নের মতো বৃষ্টিবিলাস হয়েছিলো একজনের সাথে।রাজপুত্রর মতো এসেছিলো আমার কাছে।ভীষণ ভালবেসেছিলো।আমিও তাকে ভীষণ ভালবেসেছিলাম।কিন্তু সব মিথ্যা ছিলো।সে আমাকে ভালবাসেনি অহনা। আমাকে ঠকিয়েছে।”

“কুল ইয়ার!মে হো না তেরে সাথ।সব কিছু ঠিক করে দিবো।কোথায় রাস্তায় দেখা এক ছেলে তোকে ঠকালো।ওই বেটারে পাই আমি জীবনের মতো শিক্ষা দিয়ে দিবো তুই একদম ই ভাবিস না কিন্তু।”

“আমি তাকে ভুলতে চাই,কিন্তু ভুলতে পারছি না।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে অহনা।”

“কি নাম ওই ছেলের রাজ।”

“না।”

“তাহলে?”

“শুভ।”

নামটা শুনেই অহনা একটু চমকে গেলো।এটা কোন শুভ।ধুর এক নামে তো কত মানুষ ই আছে।এটা তার হবু বর কেনো হতে যাবে।

অহনা রোজাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“তোর মতো কিউটি কে কেউ ঠকাতে পারে।কি বলেছে তোকে ভালবাসে না।লাস্ট কথা কি হয়েছে।”

“আমার সাথে আর তার লাস্ট কথা হয়নি।শুনেছি তার বিয়ে ঠিক এটুক শুনেই চলে এসছি।”

“আরে ইয়ার এটাকে ঠকানো বলেনা।বিয়ে ঠিক হয়েছে বিয়ে তো হয়নি।হয়তো ঠিক হওয়া বিয়ে ভেঙে তোকে বিয়ে করবে।”

“নো অহনা,আমি এমন কিছুই চাইনা।তার সাথে আমার আর দেখা হবেনা।”

“যদি রিয়েল লাভ হয়না,খুজতে খুজতে চলে আসবে এখানে।আর তোর অভিমান ভাঙাতে মরিয়ে হবে বুঝলে ডারলিং।”

“আমার ভাগ্য এতটাও ভালো নয় অহনা।বাবা একজন বয়স্ক মানুষের সাথে বিয়ে ঠিক করলো।সেখান থেকে বাঁচতে পালালাম।গিয়ে দেখা গেলাম আমার স্বপ্নের পুরুষের। মাত্র কয়েক দিনে আমার মন প্রাণ সব কেড়ে আমাকে সারাজীবন এর মতো কাঁদিয়ে দিলো।”

“সব ভালো তার শেষ ভালো যার ইয়ার।দেখিস এত ভালবাসা পাবি জীবনে জাস্ট অবাক হয়ে যাবি।”

এমন সময় দরজায় কড়া নাড়লো কেউ।রোজা আর অহনা দুজনেই ফিরে তাকালো।

চলবে….?