#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 33
🍁🍁🍁
ভার্সিটি ছুটি হওয়ার পর পরই নীর শ্রাবনী বেরিয়ে পড়ে মাঠে আসতেই গাড়িতে হেলান দিয়ে মাহির কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীর মুখ চেপে হেসে বলে
নীরঃ তোর হাব্বি দাঁড়িয়ে আছে যা
শ্রাবনীঃ চুপ যা উনি নিজেই বলছে কেউ যেনো না জানে আমি উনার বউ এবার বুঝুক মজা বউ থাকতেও অবিবাহিত সাজা শখ গুছিয়ে দেবো
নীরঃ উহুমমম পোড়া পোড়া গন্ধ অনেক দূর চলে গেছে
শ্রাবনীঃ আহা চল তো
নীরঃ হুমমম
শ্রাবনী আর নীর মাহির কে ক্রস করে চলে যেতেই মাহির শ্রাবনীর নাম ধরে ডাক দেয় মাহিরের ডাক শুনে শ্রাবণী নীর দুজনই দাঁড়িয়ে যায় মাহির ওদের সামনে গিয়ে শ্রাবনীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়
মাহিরঃ চোখে কম দেখো
শ্রাবনীঃ না তো আমি স্পষ্ট দেখি এই যেমন আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হনুমান কে দেখতে পাচ্ছি
শ্রাবনীর দিকে তাকিয়ে মাহির হাত দিয়ে চুলগুলো পেছনে নিয়ে বিরক্তি ফেস নিয়ে চারদিকে চোখ বুলিয়ে শান্ত গলায় পুনরায় বলে
মাহিরঃ আমি দাঁড়িয়ে আছি দেখেও চলে যাচ্ছো কেনো ভুলে গেছো নাকি তুমি এখন খান বাড়ির বউ
শ্রাবনীঃ কে বউ আমি সরি টু সে আমার তো বিয়ে হয়নি আপনি বোধহয় অন্য কারোর সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন ভাইয়য়য়য়য়া
শ্রাবনী’র মুখে ভাইয়া ডাক শুনে মাহিরের মাথা গরম হয়ে যায় মাহির রুক্ষ কন্ঠে বলে
মাহিরঃ গাড়িতে উঠো চুপচাপ একদম নাটক করবে না আমার কাজ আছে ইম্পর্ট্যান্ট
শ্রাবনীঃ অপরিচিত কারো গাড়ি উঠতে আমি বাধ্য না আমি আসছি
শ্রাবনী চলে যেতে নিলে মাহির শ্রাবনীর হাত চেপে ধরে শ্রাবনী মাহিরের দিকে তাকায় মাহির হাত চেপে ধরে কিছু বলতে যাবে তখনই সেখানে সকালে শ্রাবনীকে প্রপোজ করা ছেলে টা আসে আর বলে
শোভনঃ এ কি মাহির ভাইয়া আপনি ওর হাত এভাবে চেপে ধরেছেন কেনো
শোভনের কথা শুনে মাহির ঝট করে শ্রাবণীর হাত ছেড়ে দেয় শোভন প্রশ্নের উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে মাহির আমতা আমতা করে বলে
মাহিরঃ আ আসলে আমি
মাহির কে থামিয়ে শ্রাবনী বলে উঠে
শ্রাবনীঃ আসলে উনি উনার জিএফ ভেবে আমার হাত ধরেছে জাস্ট এ মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং তাই না ভাইয়া ( মাহিরের দিকে তাকিয়ে টেডি স্মাইল দিয়ে)
মাহির বেচারা ফেঁসে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় শোভ হালকা হেসে বলে
শোভনঃ ওহ আচ্ছা শ্রাবণী চলো তোমাকে ড্রপ করে দেয়
শ্রাবনীঃ না ঠিক আছে ( লাজুক হেসে)
শোভনঃ আরে কি না চলো আমার হবু বউ বলে কথা এভাবে একা ছাড়া যায় না
মাহির নীর একে অপরের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে
_ হবু বউ
ওদের কথায় শোভন লাজুক হেসে বলে
শোভনঃ ভালো যখন বাসি বিয়ে করবো এটা সিম্পল তাই আর কি শ্রাবনী চলো
শ্রাবনীঃ ন নাহ আমি বেস্টুর সাথে চলে যাবো
শোভনঃ কিন্তু
শ্রাবনীঃ এখানে কিন্তুর কি আছে আপনার সাথে না হয় অন্য একদিন যাবো আজ বেস্টুর সাথে ছোড়দা’র অফিসে যাবো একটু
শোভনঃ ওহ আচ্ছা তাহলে বাই কেমন তোমার নাম্বার টা দাও রাতে ফোন দেবো
শোভনের কথা শুনে মাহিরের পায়ের রক্ত চড়চড় করে মাথায় উঠে যায় ওরই সামনে ওরই বউয়ের ফোন নাম্বার চাইছে অন্য একটা ছেলে ইচ্ছে করছে এখানে জ্যান্ত পু/তেঁ ফেলতে মাহির দাঁত কটমট করে শ্রাবণীর দিকে তাকায় শ্রাবণী বিস্ময় পূর্ণ দৃষ্টিতে একবার শোভনের দিয়ে তাকাচ্ছে তো একবার মাহিরের দিকে নীর চট করে বলে
নীরঃ শ্রাবণী অনেক হয়েছে আমার সামনে একটা ছেলের সাথে এভাবে কথা বলছিস লজ্জা ভয় নেই ছোট ভাবী হয় আমি তোর আর এই যে ভাইয়া আপনিই বা কেমন ও কি আপনার প্রপোজের এন্সার দিয়েছে আগ বাড়িয়ে বউ জিএফ সব বানিয়ে ফেলছেন আশ্চর্য যান বলছি নয়তো প্রিন্সিপাল স্যারকে কমপ্লেইন্ট করবো
নীরের কথায় মাহির একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে শোভন কাঁচুমাচু হয়ে গুটি গুটি পায়ে চলে যায়।
নীরঃ আমি আসছি তাহলে এখন
শ্রাবনীঃ আরে চল এক সাথেই যাচ্ছি
মাহিরঃ নীর চলো তোমাকে ড্রপ করে দেবো
নীরঃ তার দরকার নেই ভাইয়া আমি একাই যেতে পারবো
শ্রাবনীঃ আমিও আসছি কেমন ভাইয়য়য়া
মাহিরঃ তোমাকে বললাম তো গাড়িতে উঠতে
শ্রাবনীঃ নো ওয়ে বাই
শ্রাবনী নীরকে নিয়ে চলে যায় মাহির রাগে টগবগ করে শ্রাবণী’র যাওয়া দিয়ে তাকিয়ে থাকে।
সায়াহ্নের সময় আকাশ জুড়ে নীলাভ বজায় রয়েছে সেইটুকুও বিদায় নিচ্ছে ধীরে ধীরে শীতল বাতাস বিচরণ করছে ধরনীর বুকে আকাশের এক কোণে টিমটিম করে অল্প আলোয় জ্বলছে সন্ধ্যাতারা চাঁদের এক ফালি আলো এসে পড়ছে বেলকনিতে শ্রাবনী কাউচে বসে পড়ছিলো আর প্রকৃতি’র সুমিষ্ট রূপ উপভোগ করছিলো হঠাৎ দরজায় খট করে খোলার শব্দ হওয়ায় শ্রাবণী’র পড়ার ধ্যান ভাঙে সঙ্গে সঙ্গে কপালে চিকন বলিরেখা ফুটে ওঠে বিরক্তি তে মুখ থেকে ‘চ’ উচ্চারিত হয়। শ্রাবণী তবুও অলসের ন্যায় বসে বইয়ে মুখ গুজে আছে এখন উঠে দেখার ইচ্ছে ওর নেই এই মুহুর্তে উঠার ইচ্ছে শ্রাবনীর বিন্দুমাত্র নেয়
হঠাৎ বারান্দায় ছায়ার ন্যায় কিছু একটা চোখে পড়তেই শ্রাবনী ভ্রু কুঁচকে ছায়ার দিকে তাকায় তখনই পেছন থেকে পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠে মাহির বলে
মাহিরঃ তোমাকে বলেছিলাম না আমার সাথে আসতে তাহলে এমন করলে কেনো
মাহিরের কথায় শ্রাবণী বই টা পাশে রেখে উঠে দাঁড়ায় মাহিরের দিকে তাকায় মাহির এবার শ্রাবনীর বেশ কাছে আসে শ্রাবনী বুকে দু-হাত ভাজ করে বলে
শ্রাবনীঃ তখন কোন অধিকারে আপনার গাড়িতে উঠতাম
মাহিরঃ মানে আমার গাড়িতে উঠার যথেষ্ট অধিকার তোমার আছে তুমি আমার ওয়াইফ
শ্রাবনীঃ সেটা শুধুই এই চারদেয়ালে বন্দি বাইরে আমরা আজো অপরিচিত মানুষ আর আপনিই বলছেন কেউ যেনো জানতে না পারে আমি আপনার বউ তাই তো আসলাম
মাহিরঃ শ্রাবণী আমি নিজে থেকে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে অপমান করলে
শ্রাবনীঃ শোন টুকলুস সবাই খালি তোকে অপমান ই করে বুঝি
মাহিরঃ ওয়াট টুকলুস
শ্রাবনীঃ তুই বুঝবি না রে এটা ভালোবাসার ডাক আমার স্পেশাল শুধুমাত্র তোর জন্য
মাহিরঃ ইডিয়ট
শ্রাবনীঃ তোরই তো
মাহিরঃ রুমের এই হাল করেছো কেনো পরশু গুছিয়েছি তুমি আজ আবার ও রুম এলোমেলো করেছো
শ্রাবনীঃ গুছানো রুম দেখলে আমার হাত চুলকায় তাই আর সরি আমি এতোটা গুছগাছ না আমি যেমন তেমনই বুঝলেন
মাহিরঃ আমার জানা মতে মেয়েরা সবসময় ফিটফাট হয় কিন্তু তুমি তো পুরোই ভিন্ন বাই দ্যা ওয়ে আমার এখন মাইকেল মধুসূদন দত্তের এই লাইন টা মনে পড়ছে
শ্রাবনীঃ কোন লাইন
মাহিরঃ “আমার জন্ম গ্রহের উল্টো পিঠে তাই আমার সব কিছুই উল্টো ” যেমন তুমি একজন মেয়ে হয়েও অন্যদের গুন নেয়
শ্রাবনীঃ এই শুনুন কারো সাথে আমার তুলনা করবেন না তাহলে আমার আতা মাজি সাতা সা হয়ে যায় বুঝলেন
মাহিরঃ তুমি ওই ছেলের প্রপোজ এক্সেপ্ট করলে কখন
শ্রাবনীঃ কার প্রপোজ
মাহিরঃ শোভনের
শ্রাবনীঃ আপনার কি আমি একটা কেনো একশটা প্রেম করবো ওয়াট’স ইউ’র প্রবলেম
মাহিরঃ আপাতত আমার কোনো প্রবলেম নেয় বাট আমার ফ্যামিলিী নাম টা তোমার নামের সাথে জড়িয়ে আছে তাই বলছি এমন কিছু করো না যেনো আমার ফ্যামিলি’র রেপুটেশন নষ্ট হয় আন্ডারস্ট্যান্ড
মাহিরের কথায় শ্রাবণী ভেংচি কাটে।
_________________________
শুভ্র প্রভাতের আগমন ঘটেছে কিছুক্ষণ হলো মেদিনী তে ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ মান রাতের শেষ দিকে প্রবলধারে বর্ষণ হওয়ায় চারপাশে উষ্ণ আবহাওয়া শীতলে চাপা পড়ে আছে শুভ্র নীলচে আকাশে ধূসররঙের পুঞ্জ পুঞ্জ মেষরাশি দিক-বেদিক ছুটে চলছে সূর্যের প্রখর তাপে ও আজ মেদিনী শীতল আবহাওয়ার কবাজায়।
ঘড়ির কাটায় নয় টা ছুঁই ছুঁই মাহির রেডি হয়ে নিচে বসে আছে অফিসে আজ ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে তার মধ্যে আজ শ্রাবণীর ফাইনাল এয়ারের এক্সাম দশটা হতে পরীক্ষা শুরু কিন্তু শ্রাবনীর এখনো নিচে আসার নাম নেই বিয়ের সাত মাস চলছে মাহির শ্রাবনীর কিন্তু এতোদিনে শ্রাবনী সময়ের সম্পর্কে এতোটুকু জাগ্রত করতে মাহির ব্যর্থ। মাহির এবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে উপরে উঠতে নিলে শ্রাবনী রেডি হয়ে নিচে নামছে দেখে থেমে যায় মাহির বিনা শব্দে গিয়ে খাবার টেবিলে বসে মাহিরের বাবা আগেই খেয়ে চলে গেছে মাহির আর শ্রাবনী বসতেই মাহিরের মা ওদের খাবার দেয় ওরা চুপচাপ খেয়ে বেরিয়ে পড়ে।
সায়ন নীরকে নামিয়ে শ্রাবনীর জন্য ওয়েট করতে থাকে নীর ও গেটে সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিছুক্ষণের মধ্যেই মাহির আর শ্রাবনী এসে উপস্থিত হয় শ্রাবণী দৌড়ে এসে সায়নকে জড়িয়ে ধরে সায়ন ও শ্রাবনী কে জড়িয়ে ধরে
শ্রাবনীঃ কেমন আছিস ছোড়দা
সায়নঃ ভালো তুই
শ্রাবনীঃ ভালো
সায়নঃ ঠান্ডা মাথায় এক্সাম দিবি কেমন আর একদম দুষ্টামি করবি না ওকে
শ্রাবনীঃ হুহহ আমিই হুদা দুষ্টামি করি তোর বউ সাধু তাই না
নীরঃ তোদের মাঝে আমাকে টানিস কেনো হারামি
শ্রাবনীঃ তোর চৌদ্দ গুষ্টি হারামি
নীরঃ আমার চৌদ্দ গুষ্টির মধ্যে তুইও আছিস
মাহিরঃ ব্যস থামো দুজনই আর চুপচাপ হলরুমে যাও
শ্রাবনী সায়নের অগোচরে মাহির কে ভেংচি কেটে চলে যায় নীর আলতো হেসে শ্রাবণী’র পেছন পেছন চলে যায়।
মাহির সায়ন কিছুক্ষণ কথা বলে দুজনই অফিসে চলে যায়
চলবে,,,,
#LoVe_Effect
#writer : Sintiha Eva
#part : 34
🍁🍁🍁
বিয়ের তো বছর পেরিয়ে আরেক বছর হতে চললো কই এখনো তোমার ছোট ছেলের বউ তো একটা বাচ্চা দিতে পারলো না তোমার ছোট বউ বন্ধ্যা নাকি না দেখেশুনে হুট করে ছেলেটার ঘাড়ে এমন একটা মেয়ে চাপিয়ে দিলে যার মা হওয়ারই ক্ষমতা নেই বলি কি আপা আমাদের সায়নের আরেকটা বিয়ে দাও ছেলেটার ও তো বাবা ডাক শুনতে ইচ্ছে হয় কিন্তু আমাদের সায়ন তো অনেক চাপা স্বভাবের তাই মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না
সায়নের ফুফির মুখে এমন খারাপ কথা শুনে নীরের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে বাড়িতে এখন কোনো ছেলে মানুষই নেই সবাই অফিসে সায়নের ফুফি সকালেই এসেছিলো এখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পনে আটটা বাজে সবাই বসার রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো তখনই সায়নের ফুফি এমন বিশ্রি কথা বলে উঠে। এশা রিহি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে অসহায় দৃষ্টিতে নীরের দিকে তাকায় নীর মাথা নিচু চুপচাপ বসে আছে সায়নের মা রেগে বলে
সায়নের মাঃ এ বিষয়ে তোমার না ভাবলে ও হবে আর নীরের বয়সই বা কত এইটুকু মেয়ে যার মধ্যে থেকে এখনো বাচ্চা স্বভাবই যায়নি সে বাচ্চা সামলাবে কিভাবে আর সায়ন নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করেছে ওকে কেউ চাপিয়ে দেয়নি
সায়নের ফুফিঃ কি জানি বাপু আমাদের বাড়ির পাশে একটা মেয়ে ইন্টারে পড়ে ওই তো সাত মাস হলো বিয়ে হয়েছে এখন সে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা আর এই মেয়ে তো দুই বছর হতে চললো এখনো কোনো কিছুই হচ্ছে না আমার তো মনে হয় ওর বাপ-মা চালাকি করে আমাদের সায়নের ঘাড়ে উনাকে বন্ধা মেয়ে কে চাপিয়ে দিয়েছে
নীর ফুপিয়ে কেঁদে উঠে ধরা গলায় বলে
নীরঃ আমাকে যা বলার বলুন আমার মা-বাবা কে খারাপ কিছু বলবেন না দয়া করে
নীরের কথায় সায়নের ফুফি ব্যঙ্গ করে বলে
সায়নের ফুফিঃ নিজের মা-বাপের দোষ ঢেকে লাভ নেই আমি ওদের মতো এতো বোকা নয় যে তোমাদের চাল বুঝবো না রূপ দেখিয়ে আমার ভাইয়ের ছেলেকে পাগল করে বিয়ে করে এখন একটা বাচ্চা দিতে পারছো না আবার আসো বড় বড় কথা বলতে
সায়নের ফুফির এমন তিক্ত কথা নীর সইতে না পেরে কোনোরকমে শাড়ি সামলে দৌড়ে উপরে চলে যায় পেছন থেকে রিহি এশা ডাকলেও নীর জবাব দেয় না সায়নের মা নীরকে বাজে কথা বলায় সায়নের ফুফির সাথে অনেক রাগারাগি করে কিন্তু তাতে সায়নের ফুফির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রিহি আর এশা ও যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে মন খারাপ করে যে যার রুমে যায়।
মাহিরঃ ওয়াক থু এগুলো কে বানিয়েছে
মাহিরের কথায় শ্রাবণী মুখ টা কাঁচুমাচু করে বলে
শ্রাবনীঃ আ আমি
মাহিরঃ এটা কি আইটেম ডিয়ার বউ
শ্রাবনীঃ ডিম পোলাও
মাহিরঃ ওহ কিভাবে রান্না করেছো আর তুমি রান্না করতে আসলে কেনো
শ্রাবনীঃ তো কি হয়েছে আমার তো এক্সাম শেষ আর মা-বাবা ও তো গ্রামে গিয়েছে খালামণির বাড়িতে তাই ভাবলাম আমি রান্না করি জানেন আমি যখন বেস্টু কে ছোড়দা কে কিছু রান্না করে খাওয়াতাম ওরা তৃপ্তি করে খেয়ে খুব প্রশংসা করতো কিন্তু আপনি এমন করলেন কেনো
মাহিরঃ ওরা তোমাকে অত্যাধিক ভালোবাসে তাই এই হাল বাই দ্যা ওয়ে কিভাবে রান্না করেছো
শ্রাবনীঃ ওই আগে সয়াবিন তেল দিয়েছি তারপর এই আস্তো পেয়াজ গুলো দিয়েছি কাঁচা মরিচ লবণ হলুদ সব সাত চামচ করে দিয়েছে পরে পোলাওর চাল দিয়ে ঢেকে দিয়েছি তারপর আধঘন্টা পর পোলাও হতেই ডিম ভেঙে পোলাওর মধ্যে দিয়ে নামিয়ে ফেলেছি
মাহিরঃ ওহ গড
মাহির মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে ভাগ্য ভালো এই রেসিপি অন্য কেউ খায়নি তাহলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করতো যেমন লবণ হয়ছে তেমনি ঝাল হলুদ আর কাঁচা ডিমের বিশ্রি গন্ধ মাহির দ্রুত পানি নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে শ্রাবণীর সামনে হাত জোর করে বলে
মাহিরঃ তুমি আর দয়া করিয়া তোমার এই স্পেশাল রেসিপি করো না বিশেষ করে অন্য কাউকে খাওয়াবে তো নাই তাহলে ওরা দুই মিনিটে হার্ট অ্যাটাক করবে
শ্রাবনীঃ কেনো ভালো হয়নি ( মন খারাপ করে)
মাহিরঃ নাহ খুউবববববব ভালো হয়েছে তাই তো বললাম কাউকে করে খাইয়ো না তাহলে ওরা জানতে চাইবে কিভাবে বানিয়েছো আর তারা বানিয়ে নিজের মানুষদের খাইয়ে নিজের নাম কিনে নেবে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তো তারা এটা নিজেরা বানায় নি তোমার কাছ থেকে রেসিপি নিয়েছে তাই না তাই বলছি কাউকে বলো না বুঝলে
শ্রাবনীঃ ঠিক বলেছেন আজ কাল কাউকে বিশ্বাস করায় দায় আমি কাউকে বলবো না ওকে তাহলে আমি একটু টেস্ট করে দেখি
মাহিরঃ এই নাহহহ ( চেঁচিয়ে)
আচমকা মাহিরের চেচানো তে শ্রাবণী হতভম্ব হয়ে মাহিরের দিকে তাকায় মাহিরের চোখে মুখে আতংক স্পষ্ট শ্রাবনী কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাহির বোকা হাসে হাসতে হাসতে বলে
মাহিরঃ এটা তুমি কার জন্য বানিয়েছো
শ্রাবনীঃ আপনার জন্য
মাহিরঃ তাহলে তুমি কেনো খাচ্ছো আমার জিনিস আমি কাউকে ভাগ করি না আর এটা যদি হয় তার হাতের স্পেশাল রান্না তাহলে তো কথায় নেই আমি এই ভাগ কাউকে দিচ্ছি না বুঝলে
শ্রাবনীঃ তাহলে আমি কি খাবো
মাহিরঃ ওয়েট আমি তোমাকে নুডলস করে দিচ্ছি এতো রাতে বাইরের স্টিক ফুড খেতে হবে না
শ্রাবনীঃ আপনি বানাবেন
মাহিরঃ তো কি তোমার শোভন এসে বানিয়ে দিয়ে যাবে চুপ চাপ ওখানে গিয়ে বসো ( গম্ভীর হয়ে)
হঠাৎ মাহিরের গম্ভীরতা দেখে শ্রাবণী ভ্যাবাচ্যকা খেয়ে যায় বিয়ের একবছর হতে চললো এখনো পর্যন্ত শ্রাবণী মাহিরকে বুঝতে পারলো না বাকি জীবনে বুঝবে বলে মনে ও হয় না এই ছেলে হাসতে হাসতে রেগে যায় আবার রাগতে রাগতে হেসে দেয় আজব। শ্রাবণী ও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ মাহিরের পেছন পেছন রান্না ঘরে গিয়ে পাশের দাঁড়িয়ে থাকে মাহির গম্ভীর দৃষ্টিতে একবার শ্রাবণীর দিকে তাকিয়ে পুনরায় নিজের কাজে মনোযোগ দেয় শ্রাবনী বিস্কুটের বৈয়ম খুলে বিস্কুট খেতে শুরু করে।
হঠাৎ ডাইনিং টেবিলে শ্রাবনী ফোন বেজে উঠে শ্রাবনীর হাত বুকিং থাকায় অগত্যা মাহিরকেই বাধ্য হয়ে যেতে হয় কিন্তু ফোনের স্কিনে আননোন নাম্বার দেখে মাহিরের ভ্রু কুঁচকে আসে মাহির ফোন নিয়ে শ্রাবনীর কাছে যায়
শ্রাবনীঃ কে ফোন দিয়েছে
মাহিরঃ জানি না আননোন নাম্বার
শ্রাবনীঃ রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দেন
মাহিরঃ যদি তোমার এক্স বা বর্তমান বয়ফ্রেন্ড হয়ে থাকে
শ্রাবনীঃ আপনার মতে আমি ঘরে স্বামী রেখে বাইরের পুরুষদের সাথে সম্পর্ক রাখবো ইউ মিন টু সে আমি পর/ক্রিয়া করি
মাহিরঃ সব সময় বেশি বোঝা কাজই তোমার এই নাও
বলেই মাহির ফোন টা রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিয়ে পাশে রাখে কিন্তু ফোনের ওপাশ থেকে কথা ভেসে আসতেই দুজন চমকে যায় শ্রাবণী চমকে মাহিরের দিকে তাকায় মাহির রেগে পুরো লাল হয়ে গেছে কপালের শিরা ফুলে উঠেছে চোখ রাগে টগবগ করছে।
শোভনঃ হ্যালো জানপাখি কেমন আছো
শোভনের মুখে শ্রাবনীকে জানপাখি ডাক শুনতে পেয়েই মাহির রাগে মুষ্টিমেয় করে নেই শ্রাবনী ভয়ে ভয়ে মাহিরের দিকে তাকায় শ্রাবণীর উত্তর না পেয়ে শোভন পুনরায় বলে
শোভনঃ ময়না পাখি কথা বলছো না কোনো আমি শোভন তোমার প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছি
মাহির এবার রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে দাতে দাত চেপে বলে
মাহিরঃ আপাতত তোর জানপাখি ময়না পাখি এখানে নেই আমি আছি
শ্রাবনীর ফোনে পুরুষালি কন্ঠে শোভন চমকে যায় শোভন নিজেকে ধাতস্থ করে বলে
শোভনঃ কে আপনি আর ওর ফোন আপনার কাছে কেনো
মাহিরঃ আমি ওর হাসবেন্ড হয় তোর লজ্জা করে না রাত-বিরেতে একটা বিবাহিত মেয়ে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করি শা/লা তোকে আমি চৌদ্দ শিখের ভাত খাইয়ে ছাড়বো পরে বুঝবি ইভটিজিং করার মজা এতো শখ থাকলে বিয়ে করে তোর বউকে গিয়ে এসব ডাক কুলা/ঙ্গার একটা ফোন কাট ফোন কাট বলছি আর একদিন এই নাম্বারে ভুলেও যদি কল দিস তোর নামে আমি এমন কেইস কোটে তুলবো আজীবন জেলে থাকতে হবে বদ/মাইশ ( শেষের কথাগুলো মাহির ধমকে বলে)
মাহিরের ধমকে শ্রাবনী ভয়ে পুরো নেতিয়ে যায়এমনি বেচারী কোনো দোষ না করে উঠতে বসতে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা ঝাড় খায় এখন আবার এই শোভন না গোভনের জন্য বকা সহ্য করতে হবে
মাহির ফোন টা সজোরে টেবিলে ছুঁড়ে মারে কড়াইয়ের ভাজা ডিম ডাস্টবিনে ফেলে দেয় নুডলস আবার জায়গা মতো রেখে দিয়ে চলে যেতে নিলে শ্রাবনী আমতা আমতা করে বলে
শ্রাবনীঃ আমার খাবার বানাবেন না
শ্রাবনীর কথা এবার মাহিরের মাথায় রাগ চেপে যায় রাগের বশে মাহির শ্রাবনীকে কিচেনে দেয়ালের সাথে দুহাত চেপে ধরে হাতে কাঁচের চুড়ি ভেঙে হাতের অনেকাংশ কেটে তরল বর্ণের রক্ত গড়িয়ে পড়তে শুরু করে কিন্তু তাতে মাহিরের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই মাহির তো অগ্নিদৃষ্টিতে শ্রাবনীর মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে ব্যথায় শ্রাবণীর চোখের কার্ণিশে পানি এসে জমে মাহির রাগে চেঁচিয়ে বলে
মাহিরঃ ওই ডা/ফার টার কাছে তোর নাম্বার গেলো কি করে কবে জুটিয়েছিস একে একটু আগেই তো কত বড় বড় কথা বলছিলি এই তোর ভালো মানুষের নমুন রাত-বিরেতে প্রেমিক ফোন দিলে আমি না থাকলে বুঝি এসবই করিস
মাহিরের কথা শুনে শ্রাবণী এবার শব্দ করে কেঁদে দেয় কাঁদতে কাঁদতে বলে
শ্রাবনীঃ বিশ্বাস করুন আমি ওকে নাম্বার দেয় নি আর আপনি এসব কি বলছেন ওর সাথে আমার কিছু নেই বিলিভ মি
মাহিরঃ তুই না দিলে নাম্বার কোথায় পেলো তোর নাম্বার কি লোকাল বাসের মতো যার ইচ্ছে সেই উঠতে পারে আবার যার ইচ্ছে সে কল দিয়ে এসব বলতে পারে
শ্রাবনীঃ আমি নাম্বার দেয়নি বিশ্বাস করুন
মাহিরঃ কিভাবে বিশ্বাস জরি বল ওইদিন তো তুই ওর প্রপোজ পেয়ে হেসেছিলি তাই না আর তোর নীরবতায় তো সম্মতির লক্ষণ ছিলো আমি কি বুঝি না
শ্রাবনীঃ আমি তো আপনাকে দেখিয়ে হেসেছিলাম কিন্তু বিশ্বাস করুন ওর প্রতি আমার কোনো ফিলিংস নেই
মাহিরঃ জেলাস তুই আমাকে জেলাস করাতে চাস কেনো তুই কি ভেবেছিস তোকে বিয়ে করেছি বলে ঘরে জায়গা দিয়েছি বলে মনে ও জায়গা দেবো নো নেভার আমি তোকে ভালোবাসি না বুঝলি তাই নেক্সট টাইম এসব করিস না আর তোর শোভন কে বলে দিস এটা ভদ্রলোকের বাড়ি আর তোর সাথে আমাদের বাড়ির রেপুটেশন জড়িয়ে আছে তাই এমন কিছু করিস না যেনো রেপুটেশন নষ্ট হয় মাইন্ড ইট
মাহির শ্রাবনীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গটগট করে চলে যায় শ্রাবণী তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায় হাতের অনেকাংশ ছিলে রক্ত গড়িয়ে পড়ে শ্রাবনী ওখানে বসেই কেঁদে দেয় বার বার কানে একটা কথায় বাজছে মাহির ওকে ভালোবাসে না তাতে ওর কেনো কষ্ট হচ্ছে শ্বাস নিতে কেনো পারছে না তবে কি এখান থেকেই শুরু হবে আরেক টা ভালোবাসার নতুন অধ্যায়।
________________
সায়নঃ কি ব্যাপার মিসেস নীর মুখ টা এমন হয়ে আছে কেনো আপনার কোনো কারণে রেগে আছেন আমার উপর
নীরঃ ________
সায়নঃ এভাবে শুয়ে আছেন কেনো জ্বর টর আসলো নাকি
এবার ও নীর চুপ সাশনের এবার বেশ খটকা লাগে সায়ন ঘড়ি টা টেবিলে রেখে দ্রুত পায়ে নীরের দিকে এগিয়ে যায় নীর চোখে হাত দিয়ে শুয়ে আছে সায়ন নীরের পাশে বসে চেখ থেকে হাত সরায় সঙ্গে সঙ্গে নীর চোখ মেলে তাকায় নীরের রক্তবর্ণ চোখ দেখে সায়নের বুক টা ধক করে উঠে সায়ন নীর কে টেনে উঠিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে
সায়নঃ কি হয়েছে তোমার কান্না করছো কেনো শরীর খারাপ লাগছে মা-বাবার কথা মনে পড়ছে কি হলো চুপ করে আছো কেনো কথা বলো নীর
নীরঃ ভালেবাসেন আমায়
নীরের শান্ত স্বরে এমন একটা কথা শুনে সায়ন দমে যায় হঠাৎ নীরের এমন প্রশ্নে সায়ন বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সায়ন কথা ঘুরিয়ে বলে
সায়নঃ এসব কথা পরে বলো আগে বলো তোমার কি হয়েছে
নীরঃ আপনি আমায় ভালোবাসেন
সায়নঃ নীর আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি
নীরঃ ভালোবাসেন আমায়
সায়নের মেজাজ বিগড়ে যায় সায়ন চট করে উঠে চেঁচিয়ে বলে
সায়নঃ কি তখন থেকে এক কথা বলছো কিসের ভালোবাসা কি আছে এই ওয়ার্ড টায় আর এসব কথা তোমার মাথায় কে ঢুকিয়েছে
সায়নের কথায় নীর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে সায়ন রেগে মেগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নীর সায়নের উত্তর পেয়ে চোখের পানি মুছে কাভার্ডের দিকে এগিয়ে যায়
সায়ন নিজেদের রুম ক্রস করে আসতেই রিহি সায়নকে আটকে দেয় সায়ন রিহির দিকে তাকায় রিহি অসহায় সুরে বলে
রিহিঃ তুমি মেয়ে টা কে এভাবে বকলে মেয়ে টা কি খুব খারাপ বা অসাধ্য কোনো কিছু জিজ্ঞেস করেছিলো প্রতিটা মেয়েই এই উত্তর জানার অধিকার আছে নীরের ও আছে কিন্তু নীর ভুল মানুষ কে করেছে বাট জানো সায়ন আজ তুমি কাজ টা ঠিক করো নি নীরের সাথে তুমি ও এই বিহেভ টা না করলেই পারতে তোমরা এই কষ্ট কিভাবে বুঝবে যখন একটা মেয়ের মাতৃত্ব ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে
রিহির কথায় সায়ন ভ্রু কুঁচকে তাকায় রিহি বুঝতে পেরে নিচের সব ঘটনা সায়নকে খুলে বলে সায়ন রাগে নিজের চুলে হাত চালাতে শুরু করে একপর্যায় দেয়ালে স্বজোরে পাঞ্চ মেরে অস্পষ্ট সুরে বলে উঠে
‘ ওহ শিট ‘
(মুই ফি/নিশ😐)
চলবে,,,,,,,