পূর্ণিমাতিথি পর্ব-১৭+১৮

0
762

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-১৭

হাতে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেয়ে ধড়ফড়িয়ে ঘুম থেকে ওঠলাম। আমার সামনে রুদ্র বসে আছে। সন্তপণে আমার হাতে বার্ন ক্রিম লাগিয়ে দিচ্ছেন। আমি লাফিয়ে ওঠায় উনি বিরক্ত বোধ করলেন। মুখ থেকে ‘চ’ এর মতো শব্দ উচ্চারণ করলেন। ক্রিম লাগিয়ে উনি ওঠে দাঁড়ালেন। কাঠ কাঠ গলায় বলেন,

আমার ওপর রাগ করছো ভালো কথা। তাহলে সেই রাগ নিজের ওপর কেনো দেখাচ্ছো? নেক্সট টাইম এমন করলে এর ফল ভালো হবে না।

আমি উনার কথার প্রত্যুত্তর করলাম না। আমি নিঃশব্দে শুয়ে পড়লাম। উনিও আমার কাছ থেকে উত্তরের আশা করলেন নাহ। ধুপধাপ পা ফেলে ওয়াশরুম থেকে চলে গেলেন। মিনিট দশেক পরে উনি ওয়াশরুম থেকে এসে আমার পাশে ধপ করে শুয়ে পড়লেন। আমি উনার দিকেও ফিরেও তাকালাম না। উনার দিকে পিঠ দিয়েই শুয়ে রইলাম। উনি তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললেন,

তুমি অনেক ভাগ্যবান। প্রিয়জন হারানোর ব্যথাটা এখনো অনুভব করোনি। প্রিয়জন হারানোর ব্যথাটা কতোটা ভয়ঙ্কর যে হারায় সেই-ই বুঝে। বুকের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে যায়। শুধু দেহটাই অবহেলায় পড়ে থাকে প্রাণটা তো তার সাথেই চলে যায়।

আমি চমকে উনার দিকে তাকালাম। উনি দৃষ্টি উপরের দিকে। উনার কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে উনি অরি আপুকে কতোটা ভালোবাসতেন। বক্ষঃস্থলে চিন চিন ব্যথা হচ্ছে। উনার কথাটা আরেক বার আওড়ে নিলাম। হুট করে উনি প্রিয় জন হারানোর কথা কেনো বললেন? আমাকে হারানোর ভয় পান উনি? আমি কী সত্যিই উনার প্রিয়জন? মন বলে ওঠে, না তুই শুধুই উনার দায়িত্ব।

_________________

আজকে অনেক সকালে ঘুম থেকে ওঠেছি। গতকাল ভালো করে পড়া হয়নি। এখন সব পড়াগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

তুমি কী এখন খাবা না?

না।

গতকাল রাতেও কিছু খাওনি। এখনো খাবে না। আমার আগেই বুঝা উচিত ছিল তোমার মতো ত্যাড়া মেয়ে সোজা ভাবে বললে কথা শুনবে না।

উনি আমাকেসহ চেয়ারটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। আমি উনার দিকে ঘুরতেই উনি আমার মুখে ডিম ঢুকিয়ে দিলেন। আমি চোখ মুখ কুচকে ফেললাম। ডিমের কুসুম আমার বরাবরই অপ্রিয়। ডিমের সাদা অংশ আমার ভীষণ ভালো লাগে, ডিমের কুসুম খেলেই অস্বস্তি হয়। কেউ যদি আমার অপ্রিয় জিনিস আমাকে জোড় করে খাইয়ে দেয়। তাহলে সেগুলো তো পেটে যায়ই না বরং পেটের ভিতর থেকে সবকিছু উগ্রে আসে।

আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। আমি হাত দিয়ে মুখে চেপে ধরে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে এলাম। গড়গড় করে বমি করে দিলাম। উনিও আমার পিছন পিছন আসলেন। উনি এসে আমাকে পিছন থেকে ধরলেন। আমি ক্লান্ত হয়ে নিজের সমস্ত ভার উনার ওপর ছেড়ে দিলাম। হঠাৎই মামুনি রুমে আসে। আমাকে বমি করতে দেখে মামুনি অস্থির হয়ে বলেন,

এই রুদ্র কী হয়েছে রিয়ার? এভাবে বমি কেনো করছে?

কী বলবো তোমাকে? এই মেয়েকে নিয়ে পারছি না। না খেয়ে খেয়ে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। দুই দিন আগে বললো মাথা কেমন ঘুরছে। আর আজকে একটু ডিম খেতে না খেতেই বমি করে ওয়াশরুম ভাসিয়ে দিল। কোনদিন না জানি রাস্তা-ঘাটে অঙ্গান হয়ে পড়ে থাকে। এই মেয়েকে নিয়ে টেনশন করতে করতে নিশ্চিত আমি একদিন হার্ট এ্যাটাক করবো।

উনি আমাকে ধরতে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। অদ্ভুত ব্যাপার আমি মামুনির চোখে মুখে চিন্তার চাপের পরিবর্তে খুশির ঝিলিক দেখতে পাচ্ছি। যে ব্যক্তি আমি একটু ব্যথা পেলেই টেনশন করে প্রেসার হাই করে ফেলে। আজকে এতকিছু শোনার পরও খুশি হচ্ছে।

বমি করা মাথা ঘুরানো এসব তো প্রেগনন্সির লক্ষণ। এতো তাড়াতাড়ি তোরা যে বাচ্চা নিয়ে নিবি সেটা আমার কল্পনারও বাইরে ছিল। রুদ্র তুই তো আর অবুঝ না রিয়া বাচ্চা একটা মেয়ে। মেডিকেলে ভর্তি হওয়া, পড়াশোনা সবকিছুই এখনো বাকি। রুদ্র তুই এমন কেয়ারলেসের মতো কাজ করলি। যাই হোক আমি ভীষণ খুশি।

মামুনির কথা শুনে আমি চমকে ওঠলাম। মামুনি এসব কী বলছে? কিছুই মাথায় ঢুকছে না। এর মাঝেই ঘটে ইলান ভাইয়ের আগমন। উনি এসেই সোফায় আয়েশ ভঙ্গিতে সোফায় গা এলিয়ে দিলেন।

তোমার এতো খুশির কারণ কী আন্টি?

দারুণ খুশির খবর ইলান। আমাদের বাসায় নতুন অতিথি আসতে চলেছে।

ইলান ভাইয়া ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে, মানে?

রিয়া প্রেগনেন্ট। রিয়া মা হতে চলেছে। আমি দাদি হতে চলেছি।

মামুনির কথা শেষ হওয়ার আগেই ইলান ভাইয়া এক লাফে সোফা ছেড়ে বিছানায় চলে এলেন। আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। আমি প্রেগনেন্ট আর আমিই জানি না। ইলান ভাইয়া রুদ্র পাশে বসে রুদ্রকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে,

তুই তো আমার থেকেও ফাস্ট। আমি বিয়ে করলাম এতোদিন হয়ে গেলো এখনো বাবা হতে পারলাম না। আর তুই আমার পরে বিয়ে করে আমার আগে বাবা হয়ে যাচ্ছিস। সেদিন তো খুব আমাকে বলছিলি, আর আজ…

স্টপ ইলান।

ইলান কেনো থামবে। কোনো থামা থামি নেই। আজকে এতো বড় একটা খুশির খবর বাড়িতে এসেছে। আজকে আমাদের আনন্দের দিন। আমি তোর বাবাকে, তোর খালামনিকে, রিদিদের সবাইকে জানিয়ে আসি। আমার কতো কাজ। আমি দাদি হতে যাচ্ছি। বেবির জন্য শপিং করতে হবে কাথা শেলাই করতে হবে। তার আগে আজকে বাসায় একটা পার্টির আয়োজন করতে হবে। ইলান আমার সাথে আয়। আজকে তোর ওপর অনেক দায়িত্ব। প্রথম বার চাচ্চু হতে যাচ্ছিস।

উনি অসহায় মুখ করে মামুনির দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার অসহায় মুখটা দেখলেই আমার হাসি পাচ্ছে। মামুনি কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলেই রুদ্র ডাক শুনে থেমে যায়।

স্টপ আম্মু।

কী হয়ছে?

তুমি এতো ফাস্ট না দৌড়ে একটু স্লো হাঁটো। তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই না। রিয়া কোনো প্রেগনেন্ট টেগনেন্ট না। আমি ও ভুলে গিয়েছিলাম রিয়া ডিমের কুসুম খেতে পারে না। আমি জোড় করে খাইয়ে দেওয়ায় বমি করে দিয়েছে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করলে তো মাথা ঘুরবেই। আমি বলছি একটা তুমি বুঝছো আরেকটা। এজন্যই মানুষ বলে মেয়েরা ‘ক’ বলতেই কলকাতা বুঝে।

মামুনি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে চলে গেলেন। ইলান ভাইয়া বিছানা থেকে ওঠতে ওঠতে বললেন,

আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তোর মতো নিরামিষকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না রোমান্সও না।

ইলান ভাইয়া একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে চলে গেলেন। ইলান ভাইয়া চলে যেতেই আমি শব্দ করে হেসে ফেললাম। অনেক উনি বিরক্ত হয়ে বলেন,

হাসছো কেনো?

আমার ইচ্ছা আপনার কী?

আমারই তো সবকিছু। তোমার জন্য আমাকে কেমন একটা পরিস্থিতি পড়তে হলো।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি দিই।

____________

আজকে দুই দিন পর কোচিংয়ে আসলাম। আজকে কোচিংয়ে অনেক সকালে আসছি। দুই দিন ধরে কোচিংয়ে আসি না। ত্রয়ীর কাছ থেকে নোট নেওয়ার জন্যই আগে আসা। দুই দিন মামুনির জন্যই কোচিংয়ে আসতে পারিনি। মামুনির ভাষ্যমতে আমি ভীষণ অসুস্থ। তাই এখানে বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না।

ত্রয়ী আর আমি দুজন দুজনেই সাথে কথা বলতে বলতে গেইটের দিকে এগিয়ে আসলাম। কোচিং থেকে বের হতেই ত্রয়ী আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। আমি এসে কোচিংয়ের সামনে দাঁড়াই। উনি সাফ সাফ বলে দিয়েছেন, নেক্সট টাইম একা একা আসার ভুলটা করলে আমার খবর আছে। আমাকে কোচিংয়ের সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছেন।

হুট করেই পিছন থেকে কেউ আমার মাথায় স্বজুড়ে আঘাত করে। আঘাত এতোটাই তীব্র ছিল যে মুহুর্তেই মাঝেই চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসলো। আমি মাথায় হাত দিয়েই ঢলে পড়ে যায়ে নিচে।

চলবে…..

#পূর্ণিমাতিথি
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
#পর্ব-১৮

চোখ খুলতেই উনার মুখটা প্রথম দেখতে পাই। উনার চোখ মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। আমাকে চোখ খুলতে দেখেই উনি গালে হাত গলিয়ে দিয়ে বলে ওঠলেন,

এখন কেমন লাগছে? আগের থেকে একটু বেটার ফিল করছো?

আমি মাথা নাড়িয়ে সাই জানালাম। আমি ওঠার চেষ্টা করতেই উনি আমাকে ধরে বসিয়ে দিলেন। আমি চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটা হসপিটাল। বাম হাত তুলতে নিলেই হাতে সুক্ষ ব্যাথা অনুভব করলাম। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট ভেসে আসলো ‘আহ’

সাবধানে এতো নড়াচড়া করছো কোনো।

আমি এখানে আসলাম কী করে? আমি তো

তুমি এখন অসুস্থ। এসব নিয়ে টেনশন করার দরকার নেই। বাসার কেউ জানে না তোমার এই অবস্থার কথা।

আপনি বলেননি কেনো? তারা আমাকে নিয়ে টেনশন করবে না? আমি কতক্ষণ ধরে এখানে আছি?

তুমি দুই ঘন্টা ধরে এখানে আছো। বাসাই বলেছি তোমাকে নিয়ে আমি ঘুরতে গেছি। তোমার ভাই শুধু জানে। শাওন ভাই ঔষধ আনতে গেছে। বাসার আর কাউকে বলি নাই। তোমার মা আর আমার মা এই দুই মহিলা জানলে কাঁদতে কাঁদতে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়বে। পড়ে তাদের সামলাবো নাকি তোমাকে সামলাবো।

আমি ফিক করে হেসে দিলাম। আমার একটু হাত কেটে গেলেই আম্মু আর মামুনি কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে যায়। মানুষ বলেই মায়ের পর যদি কেউ মায়ের মতো ভালোবাসতে পারে সেটা মায়ের বোন। অনেকের একটা মাও থাকে না সেদিক থেকে আমি অনেক ভাগ্যবান। আমার দুই দুইটা মা।

ভাইয়া হুড়মুড় করে কেবিনে ঢুকলো। কোনো দিকে না তাকিয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,

রিয়ার ঙ্গান ফিরেছে?

তুমি নিজেই দেখো না।

আমার দিকে তাকিয়েই ভাইয়া একটা জুড়ে নিশ্বাস নিলো। যেনো এতক্ষণ দমটা আটকে ছিল।

বনু তুই ঠিক আছিস? তোর কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো? কষ্ট হলে কিন্তু আমাকে বলবি।

আমি একদম ঠিক আছি। তুমি এতো চিন্তা করো না।

তোকে কে আঘাত করলো? কার সাথে তোর এতো শত্রুতা যে তোর ক্ষতি করতে চায়।

রুদ্র ভাইয়াকে থামিয়ে দিয়ে বললো, এখন এসব কথা থাক। এসব নিয়ে পরে কথায় ভালো।

ভাইয়া আর কিছু বললো না। মাথায় হাত দিয়ে বুঝতে পারলায় মাথায় ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। আমি হাসফাস করছি। আমার এখানে একটুও ভালো লাগছে না। ভাইয়া আর উনি কথা বলছেন। আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,

বাসায় যাব কখন? আমার এখানে একটুও ভালো লাগছে না।

একটু পরই আমরা বাসায় চলে যাব। এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো তো।

____________

গাড়ি বাসার সামনে এসে দাঁড়াতেই উনি গাড়ি থেকে নেমেই আমাকে কোলে তুলে নিলেন। বিস্ময়ে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।

কী করছেন কী? নামান আমাকে। আমি মাথায় আঘাত পেয়েছি পায়ে না। আমার পা একদম ঠিক আছে। আমি হেঁটে যেতে পারবো।

একদম চুপ। আরেকটা কথা বললে মুখ সেলাই করে দিব।

আমার প্রচন্ড রকমের অস্বস্তি হচ্ছে। নিজের বড় ভাইয়ের সামনে নিজের স্বামীর কোলে ওঠার থেকে লজ্জাজনক বিষয় আর কিছু হতে পারে। লজ্জায় আমি হাসফাস করছি। ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া ফোন স্ক্রল করতে করতে আমাদের এমন ভাবে ক্রস করে গেলো যেনো আমাদের দেখতেই পাইনি। ভাইয়া আগে চলে গেলো আমরা পিছন পিছন আসছি।

ভাইয়া কলিংবেল বাজাতেই মামুনি এসে দরজা খুলে দেয়। মামুনির পিছনে আম্মুও আসে। হয়তো ভাইয়াই আম্মুকে এখানে রেখে গেছে। আমাকে উনার কোলে দেখে আম্মু আর মামুনি অস্থির হয়ে পড়ে। আমার মাথায় ব্যান্ডেজ করা দেখে আম্মু আর মামুনি কান্না-কাটি শুরু করে দিয়েছে। হাজারটা প্রশ্ন করছে। আমি আঘাত পেলাম কী করে? তাদের আগে জানানো হয়নি কেনো? ব্লা ব্লা।

আমি লজ্জায় এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আমি এখনো উনার কোলেই আছি। ভাইয়ার সামনেও এতোটা লজ্জা লাগেনি আম্মু আর মামুনির সামনে যতটা লাগছে। ভাইয়া আমার অস্বস্তিটা বুঝতে পেরে আম্মু আর মামুনিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

তোমরা কী আমাদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবা? দেখছো মেয়েটা অসুস্থ। তার মাঝে তোমাদের দুই মহিলার হাজারটা প্রশ্ন। আগে ওদের ঢুকতে তো দাও। তারপর প্রশ্ন করো।

আম্মু আর মামুনি দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। উনি আমাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকেন। আমাকে সোফায় বসিয়ে দিলেন। এতক্ষণে উনি মুখ খুললেন,

এজন্যই তোমাদেরকে বলা হয়নি। কিছু না হতেই কান্নাকাটি করে তোমরা দুজন বন্যা বানিয়ে দাও। তোমরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তোমাদের স্বামীরা আমাদের দুজনকে ধরতো।

উনি আর ভাইয়া চলে গেলেন ফ্রেশ হতে। আম্মু আর মামুনি ব্যস্ত হয়ে পড়লো আমাকে নিয়ে।

_______________

রুদ্র সবাইকে বলেছে শরীর দুর্বল থাকায় আমি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করি না বলে সবাই আমাকে হাজারটা কথা শুনালো। আব্বু কিছুক্ষণ আগে চলে গেছে। আমরা বাসায় আসার কিছুক্ষণ পর পরই আব্বু এসেছিল। আব্বুও এসে সেই আমার খাওয়া নিয়ে পড়লো। অবশ্য আব্বু আমাকে বকা দেয়নি। আব্বু জানে আব্বু আমাকে বকা দিলে আমি কান্নাকাটি শুরু করে দিব। সেই কান্না থামানোর সাধ্য কারো নেই।

বিছানায় হেলান দিয়ে বইয়ের পাতা মুখ ডুবিয়ে আছি। উনি ওয়াশরুমে গেছেন। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছি। আমার এই বিরক্তির কারণ হচ্ছে আমার দুই মা। কথায় আছে না অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না। তেমনি উনাদের অতিরিক্ত সেবায় আমার প্রাণ উষ্টাগত। কিছুক্ষণ পরে উনি টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হলেন। উনি টাওয়ালটা বেলকনিতে মেলে দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। তখনি আম্মু আর মামুনির আগমন
ঘটে। উনাদের পিছনে পিছনে আংকেল আর ভাইয়াও আসে। মামুনি আমার পাশে বসতে বসতে উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

রুদ্র তুই আজকে তোর বাবার সাথে ঘুমা। আমি আর তোর খালামনি আজকে রিয়ার সাথে থাকবো।

আংকেল রুদ্রের কাধে হাত রেখে বলে, চল আজকে বাপ বেটা একসাথে ঘুমাবো। তার আগে আড্ডা দিব।

আংকেলের কথা শুনেই উনি লাফিয়ে আংকেলের থেকে দুই হাত দূরে সরে যান।

আম্মু আমি আব্বুর সাথে ঘুমাবো না।

তাহলে শাওনের সাথে ঘুমা।

একদমই না। আমি আব্বু বা শাওন ভাইয়া কারো সাথেই থাকবো না। শাওন ভাই ঘুমের মাঝে শরীরের হাত-পা তুলে দেয়। আর আব্বু….

আংকেলের দিকে তাকিয়ে রুদ্র থেমে যায়। মামুনি কিছুক্ষণ ভেবে বলে,

বাসায় তো রুমের অভাব ছিল না। কিন্তু সব রুমেই তো অপরিষ্কার। থাকা হয় না তো সব সময় খালিই পরে থাকে। শাওন তুই তোর আংকেলের সাথে থাক। রুদ্র একাই থাকুক।

তোমার জামাইয়ের সাথে আমি কিছুতেই থাকবো না। মনে আছে তিন বছর আগে আব্বু আর আম্মুর বিবাহ বার্ষিকীর দিন আমি আর আংকেল একসাথে ছিলাম। জানো না তো ঐদিন আংকেল আমাকে তুমি ভেবে জড়িয়ে ধরে কী কী বলছে। নাউযুবিল্লাহ আমার বলতেও শরম করে।

ভাইয়ার কথা শুনে আংকেল কাঁশতে কাঁশতে রুম থেকে বের হয়ে যান। আমরা সবাই হেসে দেই। রুদ্রও মুচকি মুচকি হাসছে। এই প্রথম আমি উনাকে আসতে দেখলাম। হাসলে উনাকে ভীষণ সুন্দর লাগে। হঠাৎই উনি গম্ভীর হয়ে বলে ওঠলেন,

থাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি আজকে বাসায় থাকবো না আমার নাইট ডিউটি আছে। এখনি হসপিটালে যেতে হবে। আমি আসছি।

এই বলে উনি বেরিয়ে গেলেন। উনার পিছন পিছন ভাইয়াও চলে গেলো।

______________

এখন দুপুর দুটো বাজে। এতক্ষণে ফোনে গেইম খেলছিলাম। চরম বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। গেইম খেলতেও ভালো লাগছে না। আমি রুদ্রের দিকে তাকালাম। কী নিশ্চিন্তে উনি ঘুমাচ্ছেন। আমার নজর বার বার উনার কানের নিচের তিলটার দিকে যাচ্ছে। তিলটা আমাকে খুব টানছে। আচ্ছা এখন তো উনি ঘুমাচ্ছেন। একটু ছুঁয়ে দিলে নিশ্চয়ই খুব বড় ক্ষতি হয়ে যাবে না। আমি টুপ করে একটা চুমু খেয়ে নিলাম তিলটায়। সাথে সাথেই উনি নড়ে ওঠলেন। আমি ছিটকে দূরে সরে গেলাম। ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।

চলবে…..