#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Ahmed_Priya
#পর্বঃ১৭
_______________________
ফাতেমার এভাবে চলে যাওয়ার কারণ চারুর বোধগম্য হলোনা। সে কি কোনো কারণে চারুকে পছন্দ করছেনা? কিন্তু অপছন্দ করার কি আছে? ফাতেমা নামক এই মেয়েটির সাথে তো আগে কখনো দেখাই হয়নি তার। হামিদ অবশ্য সেসব পাত্তা দিলোনা। সে নিজেই চারুকে ঘরে নিয়ে আসলো। ফাতেমার আচরণে মনে হচ্ছে সে চারুর উপর চরম বিরক্ত কিন্তু চারু কিছুতেই বুঝতে পারছেনা এমন করার কারণ কি।
– তোমার কি জ্ঞান বুদ্ধি কিছু নাই? চারুরে কিছু খাইতে দাও। এত দূর থেইকা আসছে ও।
ফাতেমা কিছু না বলে কিছু খাবার এগিয়ে দিলো চারুর দিকে। চারু কেনো যেনো খেতে পারছেনা। অস্বস্তি হচ্ছে, এভাবে কারো বাসায় আসার পর সে যদি আন্তরিক আচরণ না করে তবে নিজেকে বেশ অসহায় লাগে এবং ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে অপমানজনক। চারু কিছুই খাচ্ছেনা বলে হামিদ নিজের হাতে খায়িয়ে দিলো চারুকে। ফাতেমার চাহুনিতে চারুর মনে হলো হামিদ যে ওকে খায়িয়ে দিচ্ছে সেটা তার পছন্দ হচ্ছেনা। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চারু নিজের হাতেই খেতে চাইলো কিন্তু হামিদ ওকে নিজের হাতে খেতে দিলো না। এতে যেনো ফাতেমা আরো কিছুটা রেগে গেলো তবে কিছুই বললো না। খুব জোরে দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো সে। হামিদ অবশ্য ফাতেমার রাগ বুঝলোনা। সে চিৎকার করে বললো,
– এত জোরে দরজা লাগাও ক্যান? দরজা কি তোমার বাপের? ভাঙলে জরিমানা কে দিবো?
হামিদের চিৎকারে কিছুটা ভয় পেলো চারু। ছোটবেলা থেকেই হামিদ কিছুটা রগচটা স্বভাবের ছেলে। হামিদ আবার বিরবির করে উচ্চারণ করলো, “বেআক্কেল মহিলা!” চারু আর কিছু বললো না। চুপচাপ থাকাই ভালো মনে করলো সে। কিছুক্ষণ পরেই হামিদ ফাতেমাকে ডাকলো। ফাতেমা আসার পরেই হামিদ বলতে শুরু করলো,
– শোনো কাউরে বলবানা আমি চারুকে পেয়ে গেছি।
– ক্যান?
– আমি মানা করছি তাই। সবাইরে বলবা তোমার দাদি গ্রামের থেইকা আসছে।
– কিন্তু আমার দাদি তো মইরা গেছে বছর কুড়ি হইবে। আমার দাদি কোথা থেকে আসবো?
হামিদের মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলো। ফাতেমার বোকামি গুলো সহ্য হচ্ছেনা তার। একমাসেই ভীষণ রকম বিরক্ত হয়ে গেছে সে।
– তোমার দাদি নাই সেইটা তুমি জানো। প্রতিবেশিরা কি জানে?
– কি বলেন প্রতিবেশীরা জানে? তারা ক্যামনে জানলো?
– দেখো আজ আমার মেজাজটা ভালো আছে। একদম বিগড়ে দিবা না। যা বলবো যতটুকু বলবো শুধুমাত্র সেটাই করবা। সবাইকে বলবা গ্রাম থেইকা তোমার দাদি আসছে। মনে থাকবো?
ফাতেমা নিজের আহাম্মকের মতো হাসি দিয়ে বললো ঠিক আছে। হামিদের মুখ দেখেই চারু স্পষ্ট বুঝতে পারলো ফাতেমার উপর হামিদ ভীষণ রকম বিরক্ত। নতুন বউয়ের সাথে তো সম্পর্ক ভালো হওয়ার কথা। একমাসেই বিরক্ত কেনো?
★
হামিদ দ্রুত একটা ঘর খোজার চেষ্টা করছে। চারুর ভাষ্যমতে কেউ একজন ওর উপর নজর রাখছে। হামিদ বুঝতে পারছেনা কে সেই অজ্ঞাত লোক কিন্তু চারুকে বাঁচাতে হলে এখান থেকে তাকে নিয়ে যেতে হবে। কেউ হামিদের উপর নজর রাখে জানার পরেও চারু তার সাথে এসেছে। কতটা বিশ্বাস করলে এভাবে কিছু না বলে চারু চলে আসলো? নাহ, যেভাবে হোক চারুকে বাঁচাতে হবে। এখানে এক রাতও থাকা যাবেনা। আজ রাতেই সবাইকে নিয়ে এই বাড়ি ছাড়বে হামিদ। এখানের কেউই কিছু জানতে পারবেনা। তবে সমস্যা হলো ফাতেমা। পেটের মধ্যে কিছুই রাখতে পারেনা সে। ফাতেমার কথা মনে হতেই আবার মেজাজ বিগড়ে গেলো তার। হামিদ কোনোমতে বেশ কিছুটা জনশূন্য জায়গায় ঘরটা নিলো। মানুষ যত বেশি তত ঝামেলা। ভালোই হয়েছে তাড়াতাড়ি এমন একটা জায়গা পেয়ে গেছে। হামিদের ভাগ্য সবসময় সুপ্রসন্ন। হামিদ যেখানে ওঠার চিন্তাভাবনা করছে সেখানে আশেপাশে সব মিলিয়ে মাত্র সাতটা বাড়ি। কাজের জায়গা কিছুটা দূরে হয়ে যায় কিন্তু এখন সেসব দেখলে চলবেনা। হামিদ ফাতেমাকে তাড়াতাড়ি জামাকাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে নিতে বললো। রাতের অন্ধকার থাকতে থাকতেই এখান থেকে বেড়িয়ে পড়বে। তবে ফাতেমা বারবার প্রশ্ন করতে করতে বিরক্ত করে ফেলছে হামিদকে।
– আমরা কই যামু?
– বললাম না নতুন বাড়িতে যামু। এত চিল্লাও ক্যান?
– নতুন বাড়ি যামু ক্যান? এই বাড়িটা তো আমার খুব পছন্দ।
– তাইলে তুমি এইহানেই থাকো। আমি চারুরে নিয়া যাই। তোমার যেভাবে মন চায় ওইভাবে চলো তুমি।
ফাতেমা চুপ করে গেলো। সে বুঝতে পারছে হামিদের মেজাজ ভালো না। বিয়ের পর থেকেই খেয়াল করে আসছে হামিদ বেশ রগচটা স্বভাবের ছেলে। তাকে জোর গলায় একটা কথা কখনো বলা যায়না। হামিদ ওর ভাইয়ের আন্ডারে কাজ করে। বাসার সবাই ভেবেছিলো, অন্তত এই কারণে হলেও হামিদ ফাতেমার সাথে ভালো আচরণ করবে কিন্তু হামিদ সেসবের ধারের কাছেও যাচ্ছেনা। ফাতেমাও বাসার কাউকে কিছু বলতে পারেনা। সংসার ভেঙে যাওয়ার ভয় সব মেয়েরই থাকে আর মেয়েটা যদি হয় কালো তাহলে তার জীবন একেবারে নষ্ট। ফাতেমার বয়স উনিশ। বারবার ছেলেপক্ষ ওকে এসে দেখলেও কেউ পছন্দ করতো না কারণ তার গায়ের রঙ কিছুটা ময়লা। বাবা এবং ভাই দুজনেই ফাতেমাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলো। অবশেষে হামিদের সাথে দেখা হয় ফাতেমার ভাইয়ের। হামিদের আচার আচরণে মুগ্ধ হয় সে কিন্তু হামিদ ছিলো খুবই সুদর্শন। ফাতেমা কোনোদিক থেকেই হামিদের যোগ্য ছিলো না। হামিদ এস এস সি পাস করেছিলো আর ফাতেমা সপ্তম শ্রেনী অবধি পড়েই পড়াশুনার সমাপ্তি টেনেছিলো। ফাতেমার ভাই খুব করে চাইতেন হামিদের সাথেই ফাতেমার বিয়ে হোক কিন্তু ফাতেমার গায়ের রঙ শ্যামলা বিধায় বলা হয়নি। এদেশে একজন কালো ছেলে এবং একজন ফর্সা মেয়ের বিয়ে যতটা স্বাভাবিক তেমনি একটা কালো মেয়ে আরেকটা ফর্সা ছেলের বিয়ে ততটাই অস্বাভাবিক। হঠাৎই হামিদের এক্সিডেন্ট ঘটলো। ফাতেমার ভাই সব খরচ দিলো। হামিদের সামর্থ্য ছিলোনা এতগুলো টাকা শোধ দেওয়ার। সুযোগ বুঝে ফাতেমার সাথে বিয়ের কথা তোলেন ফাতেমার ভাই। ম্যানেজারের বোনকে বিয়ে করলে অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে ভেবে হামিদ ফাতেমাকে না দেখেই বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। ফাতেমা যেদিন হামিদের ছবি দেখেছিলো তখন সে অবাক হয়েই তাকিয়ে ছিলো। এত সুন্দর একটা ছেলের সাথে তার বিয়ে হবে? ঘরোয়া আয়োজনের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়। হামিদ তখনও ফাতেমাকে দেখেনি। প্রথমবারের মতো দেখা হয় বাসর ঘরে। হামিদের নিশ্চয়ই আশা ছিলো তার বউ সুন্দরী হবে কিন্তু ফাতেমাকে দেখার পর তার মুখ মলিন হয়ে গিয়েছিলো। বোকা হলেও ফাতেমা বুঝেছিলো সেটা। হামিদ নিশ্চয়ই নিজের উপরেই রেগে গিয়েছিল মেয়ে না দেখে বিয়ে করার জন্য। ফাতেমাকে দেখেই হামিদ বাইরে চলে গিয়েছিলো। সারারাতও আসেনি। হামিদ ফিরে ভোরের কিছুক্ষণ আগে। পরে ফাতেমা তার ভাইয়ের কাছে শুনেছিলো হামিদ নাকি ফ্যাক্টরিতে এক্সটা কাজ করছিলো। এইটাকে ওভারটাইম বলে। ম্যানেজার জিজ্ঞেস করেছিলো বিয়ের রাতে কাজ করার কি অর্থ? হামিদ উত্তর দেয়নি। এখন ফাতেমার সাথে তার সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হলেও হামিদ যে এখনো তাকে পছন্দ করেনা সেটা বোঝে ফাতেমা। এর কারণ কি শুধুই গায়ের রঙ? গায়ের রঙই কি সব? ফাতেমা বেশ কয়েকবার হামিদের জন্য সাজার চেষ্টাও করেছিলো কিন্তু হামিদ সেদিকে ফিরেও দেখেনি। এরপর থেকে আর সে চেষ্টা করেনা। হামিদ যে তাকে স্ত্রী রূপে স্বীকার করেছে সেটাই এখন ফাতেমার কাছে অনেক। কিন্তু ফাতেমা খেয়াল করতো প্রতি সপ্তাহে রাতে একদিন হামিদ বাসায় থাকেনা। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে হামিদ জানিয়েছিলো চারুর কথা। ফাতেমা ব্যাপারটা পছন্দ করেনি। করবেই বা কিভাবে? মাত্র সাত হাজার টাকায় দুজনের চলাই মুশকিল আবার আরেকজন বাড়তি মানুষের খরচ কিভাবে চালানো যায়? তবে হামিদকে সরাসরি একথা বলার সাহস পায়নি ফাতেমা। সে ভেবেছিলো হামিদ বোধহয় চারুকে পাবেনা কিন্তু পাওয়ার পরেই যে এখানে নিয়ে চলে আসবে সেটা সে ভাবেনি। চারু মেয়েটা অনেক বেশি ফর্সা। ফাতেমার রাগের অন্যতম কারণও এইটা। সে হাজার চেষ্টা করেও যেখানে ফর্সা হতে পারেনা সেখানে চারুর এই দুধে আলতা গায়ের রঙ ভালো লাগছেনা ফাতেমার। নিজের ভিতর কেমন এক হিংসা অনুভূত হচ্ছে। ফাতেমা রান্নাঘরে এসে রান্না করতে শুরু করলো। হামিদ বাইরে কোথাও গিয়েছে। চারু ভাবলো ফাতেমার সাথে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলা যাক। সে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। চারুকে দেখেও না দেখার ভান করলো ফাতেমা।
– কেমন আছো ভাবি?
– আপনের ভাইয়ে যেমন রাখছে তেমনই আছি।
– কেনো আমার ভাই কি তোমাকে ভালো রাখেনি?
– হ রাখছে কোনোমতন। আপনের কি কিছু লাগবো?
চারু বুঝতে পারছে ফাতেমা ওর উপস্থিতি পছন্দ করছেনা তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো আরো কিছুক্ষণ কথা বলবে। ফাতেমা এগোতে না চাইলে পরে আর সে ফাতেমার বিরক্তির কারণ হবেনা কিন্তু চারু এখনও বুঝতে পারছেনা ফাতেমা কেনো তার উপর বিরক্ত।
– না এমনি কথা বলতে এসেছিলাম। আর আমি সম্ভবত তোমার ছোট। আমাকে আপনি সম্মোধন করতে হবেনা।
– আপনি কইরা না কইলে আবার আপনের ভাই আমারে বকবো। কি দরকার যেচে বকা খাওনের?
– বকা দেবে কেনো? বলবে আমি বলতে বলেছি। আমিও তো তোমাকে তুমি ডাকছি।
– তুমি কইরাই কইলাম তাইলে। তোমার লাইগ্যা তো তোমার ভাইয়ের সাত খুন মাফ। এই কয়েকদিনে যা বুঝছি তোমার ভাই তোমারে অনেক আদর করে। তোমার হাজার দোষ সে চোখে চাইয়াও দেখবোনা।
চারু আর কিছু বললোনা। ফাতেমার খোচা মারা কথা ধরতে পারছে সে।
– কি রান্না করছো ভাবি?
– আলু দিয়া শিং মাছের নিরামিষ রান্না করছি?
– মাছের নিরামিষ?
– হ।
চারু অবাক নেত্রে ফাতেমার দিকে তাকালো। এই মহিলা কি পরিমাণ বেআক্কেল তা আন্দাজ করতে পারছে সে। উনি নাকি শিং মাছের নিরামিষ রান্না করছে। কি অদ্ভুত কথাবার্তা! কে জানে তার রান্না কেমন?
– আমি একটু খাই ভাবি?
ফাতেমা কিছু না বলে কিছুটা তরকারি এগিয়ে দিলো চারুর দিকে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে বিরক্ত হচ্ছে। চারু তরকারি খেতেই বুঝতে পারলো লবণ বেশি হয়েছে। সামান্য বেশি না, অনেকটাই বেশি। চারু কিছু না বলে ফাতেমার প্রসংশা করলো। স্বভাবতই মেয়েরা প্রসংশা পছন্দ করে আর যে প্রসংশা করে তার সাথে খুব সহজেই সখ্যতা গড়ে ওঠে তাদের।
– ভাবি তোমার রান্নাটা কিন্তু খুব ভালো হয়েছে।
প্রসংশা শুনে ফাতেমার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো কিন্তু পরক্ষণেই আবার বিরসমুখে বললো,
– তোমার ভাই তো আমার রান্না পছন্দ করেনা। আমার রান্না নাকি মজা হয়না।
– ছেলেরা রান্নার কি জানে বলো তো? আমার কাছে শোনো। তোমার রান্না খুবই ভালো।
এতক্ষণে ফাতেমার মুখ থেকে বিরক্তভাবটা কেটে গেছে। সে এবার অতিরিক্ত উৎসাহ নিয়ে চারুকে জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি এত সুন্দর ক্যামনে হইলা? মুখে কি দাও?
ফাতেমার এমন কথায় অবাক হলো চারু। মুখে আবার কি দিবে? ফাতেমা হাত দিয়ে ডলে ডলে চারুর মুখ পরীক্ষা করছে আসলেই সে মুখে কিছু দিয়েছে কি না। দিলেও বা কি দিয়েছে। চারু এই ব্যাপারটা সহ্য করতে না পেরে যথেষ্ট ভদ্রতা সহিত ফাতেমার হাত নীচে নামিয়ে দিলো।
– আমি কোনো কিছুই ব্যাবহার করিনা। আমি যেমনই আছি আলহামদুলিল্লাহ। তুমিও যেমন আছো আলহামদুলিল্লাহ। অতিরিক্ত রঙচঙ মাখার কোনো প্রয়োজন নেই।
চারুর উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারলোনা ফাতেমা। সে বিরস মুখ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। সে যেমন আছে তেমনই যদি সুন্দর হয় তবে হামিদ কেনো তার দিকে তাকায় না?
★
বিকেল হতেই হামিদ বাড়ি ফিরে এলো। চারুর এখানে কোনো জামাকাপড় নেই। হামিদ ঠিক করলো প্রথমে ওকে কিছু জামাকাপড় কিনে দেবে। হামিদের এইসব অতিরিক্ত আদিক্ষেতা পছন্দ করছেনা ফাতেমা। চারু খুব ভালোই বুঝতে পারছে তবে হামিদ ফাতেমাকে তেমন পাত্তা দিচ্ছেনা। চারু শুনেছিলো বিয়ের পরপর নাকি ছেলেরা বউয়ের কথা খুব মানে। জামাল হোসেনও মানতো তাই ওকে এস এস সি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিলো তবে হামিদ কেনো এখনো ফাতেমাকে সহ্যই করতে পারেনা? আর ফাতেমাকে দেখেই চারু বুঝতে পেরেছে সে কিছুটা হিংসুটে ধরনের বোকা মেয়ে। ফাতেমার আচার আচরণের তোয়াক্কা না করে হামিদ চারুকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো। ঘুরে ঘুরে বেশ অনেক জামাকাপড়ই কিনলো। চারু বারবার এত খরচ করতে মানা করছিলো কিন্তু হামিদ মানলো না। চারু তো পর কেউ না। ও না দিলে কে দিবে? কেনাকাটা করতে করতে রাত হয়ে গেলো। হামিদ একটি রিকশা ডেকে নিলো বাসায় যাওয়ার জন্য। রিকশায় উঠেই ব্যাগগুলো সব ঠিকঠাক করতে করতে বললো,
– ম্যাট্রিক পরীক্ষাটা তো মনে হয় দেস নাই।
– না। ম্যাট্রিক পরীক্ষার চল এখন নেই। এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছি।
– মানে? ম্যাট্রিক আর এস এস সি কি আলাদা নাকি?
– হ্যাঁ।
– যাই হোক, পরীক্ষা কেমনে দিলি? এর আগেই তো ওই জানোয়ার দুইটা তোর বিয়া দিয়া দিলো।
– যার সাথে বিয়ে হয়েছিলো সে তার বসের অনুমতি নিয়েই মনে হয় আমাকে পড়িয়েছিলো।
– বস? নিজের বউরে পড়াইতে অন্যের অনুমতি লাগবো ক্যান?
চারু উত্তর না দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাকে চুপ থাকতে দেখে হামিদ বললো,
– যাই হোক, পরীক্ষা দিছস ভালো কথা। এহন কি কলেজে ভর্তি হবি? এইহানে অনেক ভালো ভালো আর বড় কলেজ আছে।
চারু উত্তর দেয়না। এমনিতেই হামিদের আয় তেমন বেশি না। তারউপর এক্সটা করে লেখাপড়ার খরচ করার কি দরকার? ফাতেমার কাছে হয়তো আরো বেশি অসহ্য হয়ে যাবে সে। চারু কোনোভাবেই চাইছেনা ফাতেমা কিংবা হামিদ কারোর সাথে ওর সম্পর্ক খারাপ হোক কারণ এই পৃথিবীতে মাত্র দুজনই এখন চারুর আপন। ফাতেমা হয়তো ততটা না কিন্তু হামিদ তো আপন। একই রক্ত বয়ে চলেছে দুজনার শরীরে।
– কি রে কথা কস না ক্যান?
– অনেক তো পড়লাম। আর পড়বোনা।
হামিদের ভ্রু কুচকে গেলো। যেই চারুকে পড়াশোনায় কেউ কখনো হারাতে পারেনি। চারুর পড়াশোনা দেখে মনোরমা হামিদকে বকা দিতো না পরার জন্য, যেই চারু পড়াশোনা জন্য জীবন অবধি দিয়ে দিতে পারতো সে কিনা এখন লেখাপড়া করতে চাইছেনা। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে অদ্ভুত।
– ক্যান পড়াশুনা করবিনা ক্যান?
– অনেক তো করলাম। আর কত?
– এই শহরে ম্যাট্রিক পাশের দাম নাই। এইটা গ্রাম না তোরে সেইটা বুঝতে হইবো। ম্যাট্রিক পাশ কইরা তুই জীবনে কিছুই করতে পারবিনা।
– তুমি করছোনা কিছু?
– আমার আর তোর জোড়া? আমি যা করতে পারমু তুই তা পারবি?
– কেনো পারবোনা? একই রক্ত বইছে আমাদের শরীরে।
– এমন পরিশ্রমের কাম আমি জীবনেও তোরে করতে দিমু না। তুই নিজের পায়ে দাঁড়াবি। বড় বড় অফিসে যেমন সবাই সুন্দর সাজগোজ কইরা কাজ করতে যায় তুই ওমন কাজ করবি। আর কাজ না করলেও সমস্যা নাই কিন্তু লেখাপড়া করতেই হইবো।
– কি হবে লেখাপড়া করে? বাদ দাও না।
– কিসের বাদ দিমু? কিছুদিনের মধ্যেই তোরে কলেজে ভর্তি করায়া দিমু। এমনিতেই অনেক পিছায়া গেছস।
চারু আর কিছু বললোনা। পড়তে তো সেও চায়। কে জানে ফাতেমা জানলে তার ব্যাবহার কেমন হবে? রিকশা থামিয়ে দিলো গলির কাছেই। ভিতরে আর যাবেনা। এখান থেকে হেটেই যেতে হবে বাসায়। দশ মিনিটের রাস্তা। হামিদ ভাড়া মিটিয়ে রওয়ানা হলো বাড়ির পথে। কিছুদূর যেতেই দেখা গেলো কালো রঙের একটি কার। আর তার পেছনে সাদা রঙের একটা কার। কালো রঙের কার থেকে বেড়িয়ে এলো মুখোশে আবৃত মুখের এক ব্যক্তি। চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছেনা তার। আর পেছনের গাড়ি থেকে ছয়জন মানুষ। হ্যাংলা পাতলা ধরনের এই লোকটাকে একবার দেখেছিলো চারু। এই লোকটাই জামাল হোসেনের তথাকথিত সেই বস। তাকে দেখেই চারু হামিদের পেছনে চলে গেলো।
– কি রে পেছনে গেলি ক্যান?
– স স সামনে দেখো।
– কি হইছে সামনে?
– মুখোশ পড়া সেই লোকটাই বস। সে আমাকে ধরতে এসেছে। আমাকে বাঁচাও। তার জন্যই আজ আমার জীবনটা এমন হয়েছে।
শেষ বাক্যটা শুনে হামিদের চোখের সামনে কাল রাতের চারুর মলিন ও আঘাতপ্রাপ্ত মুখটা ভেসে উঠলো। চারুর সাথে যে এমন জঘন্য আচরণ করতে পারে তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। হামিদের চোখ থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো রাগ ছড়িয়ে পড়ছে। হামিদকে নিরস্ত্র দেখে চারজন লোক এগিয়ে গেলো তার দিকে। হামিদের ক্ষতি করা তাদের উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য চারুকে নিয়ে যাওয়া কিন্তু হামিদ যদি বাধা দেয় তবে তাকেও মেরে ফেলার অর্ডার আছে তাদের কাছে। লোকগুলো কিছুটা সামনাসামনি আসলেই হামিদ নীচের থেকে একটি কাঠের টুকরো তুলে নেয়। সেই কাঠে ছিলো ধারালো পেরেকঠোকা। পেরেকের সেই ধারালো অংশ দিয়ে চারজনকেই এলোপাথাড়ি আঘাত করলো হামিদ। হামিদকে নিরস্ত্র দেখে তারা সবাই নিরস্ত্র অবস্থাতেই এসেছিলো। হামিদের এমন আঘাতে প্রত্যেকটা শরীরই রক্তাক্ত হলো। বাকি যে দুইজন ছিলো তারা বন্দুক হাতে এগিয়ে এলো হামিদের দিকে। হামিদকে কাঠের টুকরোটা নীচে ফেলে দিতে বললো। হামিদ সেটা তো ফেললোই না উল্টো লোক দুইটার মাথা বরাবর ছুড়ে মারলো সেটাকে। ছয়জনকে মোটামুটি আহত করে দিয়ে হামিদ দৌড়ে গেলো বসের দিকে। সজোরে একটা গাড়ির সাথে তার মাথাটাকে ঠুকে দিলো হামিদ। আচমকা এমন আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলোনা বস নামক সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি। কাল রাতের চারুর ইটের আঘাত আর আজ হামিদের দেওয়া আঘাত একই জায়গায় পড়ায় মাথা থেকে গলগল করে র*ক্ত বের হচ্ছে তার। সুযোগ বুঝে হামিদ আরো কিছুটা আঘাত করে ফেললো বস নামক সেই লোকটাকে। অতঃপর বসও হামিদের উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করলো কিন্তু হামিদের সাথে পেরে উঠলো না সে। অজ্ঞাত এই ব্যক্তিটি সম্ভবত হামিদের চেয়ে বয়সে অনেকই বড় কিন্তু হামিদের স্বাস্থ্য ভালো আর হ্যাংলা পাতলা এই তথাকথিত বসের স্বাস্থ্য হামিদের তুলনায় বেশ কম তাই সে হামিদের সাথে খুব একটা পেরে উঠছেনা। ছয়জন লোক তৎক্ষনাৎ এসে ঘিরে ফেললো হামিদকে। এইবার তথাকথিত সেই বস হামিদের বুকে একটা লাথি মারলো। হামিদও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। লোকগুলো তার হাত ধরে ছিলো হামিদ পা দিয়ে বসের তলপেটে প্রচন্ড জোরে এক লাথি মারে। এতে সে আরো বেশি রেগে গিয়ে হামিদকে আঘাত করতে চায় কিন্তু তার আগেই পূর্ববর্তী সেই কাঠ দিয়ে আবারও বসের মাথায় আঘাত করে চারু। সাথেসাথেই নীচে পড়া থাকা এক বন্দু*ক তুলে বসের দিকে তাক করে সে। অবস্থা বেগতিক দেখে অজ্ঞাত সেই বস দ্রুত নিজের গাড়িতে উঠে বসে সেই জায়গাটি পরিত্যাগ করে। তারসাথে, যে ছয়জন ছিলো তারাও একটা গাড়িতে উঠে পড়লো। চারুর চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিলো না। সে গুলি করতে জানেনা। বেশ কয়েকবার ট্রিগার চাপার শর্তেও গু*লি বের হয়নি। সেই লোকগুলো হয়তো জানতো না। জানলে এখান থেকে নিশ্চয়ই চলে যেতোনা। তারা চলে যেতেই হামিদের দিকে দৌড়ে গেলো চারু। শরীরের বেশ কয়েকটা অংশে আঘাতের চিহ্ন হামিদের তবে খুব একটা ক্ষতি হয়নি। চারু হামিদের কাছে যেতেই হামিদ একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে,
– মন চাইতাছিলো খু*ন কইরা ফেলি কিন্তু ওই শালার ভাগ্য ভালা। তুই গু*লি করলিনা ক্যান?
– করতে পারিনা। শুধু হাতে নিয়েছিলাম ভয় দেখানোর জন্য।
– বাদ দে। ওরা আবার আসতে পারে। তোরে আগে সেইফ একটা জায়গায় নিয়া যাইতে হইবো। বাড়ি ঠিক হইয়া গেছ। কিছু চিন্তা করিস না।
বাসায় গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে দিলো ফাতেমা। তার মুখে ঘুমোঘুমো ভাব। সদ্য ঘুম থেকে উঠল নিশ্চয়ই। হামিদের আঘাতগুলো দেখে যেনো মূহুর্তেই ঘুম পালালো তার।
– কি হইলো আপনার এই অবস্থা ক্যান?
– কিছু হয় নাই। তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে নাও। দশ মিনিটের মধ্যে গাড়ি আসবো। আমরা এইহান থেইকা চইলা যামু।
– ক্যান? রাইতের আন্ধারে চুপিচুপি পালামু ক্যান? আমাগো ভাড়া তো সব শোধ করাই আছে।
– এত কথা কও ক্যান তুমি? যাইতে মন চাইলে আসো নাইলে এইহানেই থাকো। তোমার গুষ্টি সহ থাকো।
ফাতেমা কিছু বললোনা। সে ঘরের ভিতর থেকে গিয়ে স্যাভলন নিয়ে এলো। ঘরে প্রায়ই সময়ই হামিদ স্যাভলন আর তুলো রেখে দেয়। মাঝেমাঝে আঘাত লাগলে দ্রুত সেরে উঠে। ফাতেমা চেষ্টা করলো লাগিয়ে দিতে কিন্তু তার অনভিজ্ঞতার জন্য সে খুব একটা পেরে উঠছেনা যেমন যন্ত্রণা হচ্ছে হামিদের। সে ধমকে উঠলো ফাতেমাকে। হামিদের বকা শুনে আবারও চোখ জলে ভিজে উঠলো তার। হামিদ চারুকে বললো লাগিয়ে দিতে। এইটাও ভালো লাগলোনা ফাতেমার। মেয়েটার মধ্যে কি এমন আছে হামিদ ওর উপর এত নির্ভরশীল? বিয়ের পর থেকেই হামিদের মুখে শুধুই চারুর প্রসংশা আর নিজের দুর্নাম শুনে আসছে সে। এইটুকু একটা মেয়েকে হামিদ ওর চেয়ে বেশি ভালোবাসে এইটা ফাতেমা কিছুতেই মানতে পারছেনা। বোনকে এত ভালোবাসার কি আছে। কই ফাতেমার ভাই তো ফাতেমার চেয়ে তার বউকে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু এই বোকা ফাতেমাকে কি আদেও বোঝানো সম্ভব বউ আর বোনের ভালোবাসা সম্পূর্ণই ভিন্ন। এই দুই ভালোবাসাকে কখনোই তুলনা করা যায়না।
★★★
– মা, মা বের হও তো। দেখো তো আমাকে চোরের মতো লাগে কি না?
শিহাবের চিৎকারে শুধু জমিদার গিন্নিই নয় বেড়িয়ে এলো জমিদার পরিবারের অনেকেই। বাচ্চারা অবশ্য এখনো ঘুমে মগ্ন। শিহাবের চেহারায় দেখা যাচ্ছে অতিশয় রাগ। তার কিছুটা দূরেই ভয়মিশ্রিত চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে জাবিন।
– মা আমি কি দেখতে চোরের মতো?
– কি কস বাপ? চোরের মতো হবি ক্যান?
– তাহলে জাবিন আমাকে চোর ভেবে মাথায় আঘাত করলো কেনো? এই ছেলের কি বিন্দুমাত্র জ্ঞান হবেনা? এইসবের কি মানে?
জাবিনের মুখটা ছোট হয়ে গেলো। সে আমতা আমতা করে বললো,
– রাতে জল খেতে এসেছিলাম দেখি কেউ দরজা দিয়ে ভেতরে ডুকছে। ভাবলাম চোর এসেছে বোধহয় তাই আমার খেলতে যাওয়ার ব্যাটটা দিয়ে মেরে দিয়েছিলাম কিন্তু আঘাতটা তো লাগেনি।
– আঘাত লাগেনি তো আমার মাথা কিভাবে ফাটলো?
শিহাবের চিৎকারে ভড়কে যায় জাবিন। সে আসলেই অনুভব করেছে আঘাতটা কারো বাহুতে লেগেছে। মাথায় লাগেনি কিন্তু এমনই যদি হয় তো শিহাবের মাথা কিভাবে ফাটলো?
– মা তোমাকে ভালোয় ভালোয় বলে দিচ্ছি এদের একটু শাসন করো। কোনদিন যেনো খু”ন টুন করে বসে এরা।
কথাটা বলেই শিহাব ঘরের দিকে চলে গেলো। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আবার তৈরি হয়ে নীচে নামলো সে। এরই মধ্যে মাথায় ব্যান্ডেজও করে ফেলেছে।
– আবার কই যাস?
– শাওনের কাছে যাই।
– এত রাইতে? সকালে যাইস।
– না এখনই যেতে হবে।
জমিদার গিন্নি আর আটকালো না শিহাবকে। আজকাল ছেলেটা যেনো কেমন হয়ে গেছে। বিশেষ করে শাওনের অসুস্থতার পরে। শাওনকে খুবই ভালোবাসে ছেলেটা। আজকাল আর ভাইয়ে ভাইয়ে এত ভালোবাসা কোথায় পাওয়া যায়?
★
সকাল বেলা নিজের হাতে নাস্তা তৈরি করলো জমিদার গিন্নি। প্রতিদিনই এমন হয়। বাসার সবার জন্য নিজের হাতেই রান্না করা হয়। এমন সময়েই সদর দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পাওয়া গেলো। জমিদার গিন্নিই খুলে দিলো। ছোট জমিদার সাহেব।
– আপনে রাইতে বাসায় ছিলেন না?
– না আমি তো কাইল শাওনের লগে আছিলাম।
– ওহ। আসলে শরীর টা ভালো নাই তাই খেয়াল করি নাই। বহেন। শিহাব ভালো মতো পৌছাইছিলো তো রাইতে?
– শিহাব? শিহাব কই পৌছাইবো?
– ও তো কাইল রাইতে শাওনের লগে দেহা করতে গেছিলো।
– কই না তো। আমি তো কাইল সারারাতই শাওনের সাথে ছিলাম। কই শিহাব তো আসে নাই।
– কি বলেন? তাইলে আমার পোলাটা কই গেলো?
– আমি কেমনে বলমু ভাবি? পোলাটা কেমন জানি হইয়া গেছে। যেই পোলা রান্নাঘরে যাওয়া পছন্দ করতো না ও এহন রান্না করে। কাইল ও যাইয়া দেখলাম রানতাছে। কেমন যেনো হইয়া গেছে।
– ক্যান? ও রান্দে ক্যান? কামের মাইয়াডায় কি করে?
– কি জানি? আপনেও তো শিহাবের লগে তাল মিলায়া ওর হাতের রান্না খাইতে রাজি হইলন। পোলাডার হাতটাও কাইটা গেলো।
– কি কন এইগুলা? আমি ক্যান ওর হাতের রান্না খাইতে রাজি হমু?
– শিহাবই তো কইছিলো আপনারা ওর ওইখানে গেছিলেন পরে ও নিজের হাতে রান্না করতে গেলো তারপর ওর হাত কাইটা গেছে।
– আমি যদি যাই তাইলে আমার পোলারে রানতে দিমু ক্যান? আর আমি তো চার মাস হইলো শিহাবের বাড়িতে যাই নাই।
– এইটা কেমনে হয় ভাবি? শিহাব তো কাইল আমারে কইলো।
– শিহাব আপনেরে মিথ্যা কইলো? কিন্তু ক্যান? মিথ্যা কইয়া ওর কি লাভ?
বিঃদ্রঃ কি মনে হয়? আচ্ছা কতজন গল্পটা পড়ছেন আপনারা? সবাইকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
#শুভ্রা_আহমেদ_প্রিয়া
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)
To Be Continued….
#আমি_সেই_চারুলতা
#Shuvra_Ahmed_Priya
#পর্বঃ১৮
_______________________
– শিহাব তুই কাল রাইতে কই ছিলি?
– শাওনের কাছে ছিলাম মা।
– মিথ্যা কস ক্যান? তোর ছোট চাচায় সারা রাইত শাওনের লগে ছিলো। কই তুই তো যাস নাই।
শিহাব অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। এইমাত্রই বাড়ি ফিরেছে সে আর এখনই জমিদার গিন্নি তার উপর প্রশ্নবাণ নিক্ষেপ করছে।
– তোর হাত কেমনে কাটলো শিহাব? আর আমি বুঝতাছি মাথায় আঘাতও জাবিনের জন্য হয় নাই। আমি তহন খেয়াল করি নাই কিন্তু আমি দেখছি তোর মাথার র*ক্ত কিছুটা জমাট বাধা ছিলো। জাবিনের আঘাতে র*ক্ত বের হইলে তো তাজা র*ক্ত থাকতো না?
শিহাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এখন আর কিছু লুকিয়ে লাভ নেই। জমিদার গিন্নি বোকা হলেও সব বুঝতে পেরেছেন।
– হ্যাঁ মা ঠিকই ধরেছো। আমি তোমাদের মিথ্যে বলেছি কিন্তু বিশ্বাস করো, এই মিথ্যেটা বলার প্রয়োজন ছিলো। আমি এখন তোমাকে কিছুই বলতে পারছিনা কিন্তু দেখো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
– কি হইছে শিহাব?
– বলবো মা। এখন দয়া করে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করো না। আমি যা করছি যতটুকু করছি সব আমাদের পরিবারের জন্য। কিন্তু, আমি তোমার কসম কেটে বলছি আমার জন্য কখনো কারোর কোনো ক্ষতি হয়নি আর হবেনা। তোমার ছেলের উপর বিশ্বাস রাখো মা। আমি জানি আমি তোমার নিজের ছেলে না কিন্তু তোমার আদর্শে বড় হয়েছি আমি। কখনো সে আদর্শের অপমান করবোনা। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মা।
জমিদার গিন্নি শিহাবের মুখ চেপে ধরলো। তার চোখে দেখা যাচ্ছে এক সমুদ্রসম ভয়।
– চুপ এই কথা আর কহোনো বলবি না। তুই আমার পোলা। বুঝতে পারছস তুই? কেউ যেনো এইসব আজেবাজে কথা না জানে।
শিহাব কিছু বললো না। এই মমতাময়ী মহিলা তার নিজের মা নয় ভাবতেই কষ্টে বুকের ভিতরটা ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে তার।
– শিহাব তুই কি তোর আসল বাপ মা খুজতে চাইতাছস? আমারে ছাইড়া চইলা যাবি তুই?
– না মা। তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাওয়ার আগে আমার মৃত্যু হোক। আমি আমার মন প্রাণ আত্মা সবকিছু দিয়েই তোমাকে নিজের মা মানি।
– তুই আমারে কথা দে আমারে রাইখা কহোনো যাবি না। কথা দে।
– কথা দিলাম মা। কখনো যাবো না।
– সত্যিই কইরা বল তুই কাইল রাইতে কই ছিলি। তোর মাথায় আঘাত লাগলো কেমনে।
শিহাব চুপ করে রইলো। সে চায়না তার মা তার জন্যই কষ্ট পাক।
– বল না শিহাব। কই গেছিলি তুই?
– আমি তাদের কাছে ফিরে যাবোনা মা কিন্তু একবারের জন্য হলেও আমার জন্মদাতাকে দেখতে চাই। যে হাসপাতালের বেডে আমাকে ফেলে চলে গিয়েছিলো। তুমি চিন্তা করোনা মা। সে শুধুই আমার জন্মদাতা। আমার মা শুধু আর শুধুমাত্র তুমি।
★★★
নতুন বাড়িতে এসেছে আজ এক সপ্তাহ হলো। চারু বারবার ফাতেমার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করলেও ফাতেমার কোনো আগ্রহ না দেখে বারবার তাকে পিছিয়ে আসতে হয়েছে। নাহ! ফাতেমার সাথে তার সখ্যতা বোধহয় সম্ভব না। এই তো দুদিন আগের কথা। চারু চেয়েছিলো ফাতেমাকে কাজে সাহায্য করতে। ফাতেমা বললো হামিদ পছন্দ করবেনা সেটা। হামিদ নাকি ফাতেমা ছাড়া অন্য কারোর কাজ পছন্দ করেনা। চারু অবাক হয়েই তাকিয়ে ছিলো ফাতেমার দিকে। সারাজীবন হামিদের জামাকাপড় ধোয়া, বিছানা গোছানো, সকালের রান্না করা সব চারুই করেছে আর হামিদ নাকি চারুর হাতের করা কাজ পছন্দ করবেনা। সেই অবধি নাহয় ঠিকই ছিলো কিন্তু পরে আবার বিরবির করে বলছে কেউ তার কাজে সাহায্য করেনা। সব কাজ তার একাই করতে হয়। তারপর চারু একপ্রকার জোর করেই রান্নার দায়িত্ব নিলো। রান্না খেয়েই খেপে উঠলো হামিদ,
– তুমি চারুরে দিয়া রান্না করাইছো ক্যান? ওরে কি আমি কামের মানুষ হিসাবে আনছি? ও শুধু পায়ের উপর পা তুইলা খাইবো। তুমি ক্যান ওরে দিয়া রান্না করাইলা।
হামিদের রাগ ছিলো নিতান্তই অবাস্তব। চারুকে কাজের জন্য আনেনি তবে কি ফাতেমা কাজের মেয়ে? কিন্তু এই কথাটা বলার সাহস চারু কিংবা ফাতেমার হলোনা। চারু মনস্থির করলো হামিদের রাগ কমলে এই বিষয় নিয়ে কথা বলবে। ফাতেমা কোনোমতে ভয়ে ভয়ে বললো,
– ও না আমিই রান্না করছি।
ফাতেমার বোকাবোকা কথাবার্তায় সে নিজেই ফেসে গেলো।
– তুমি আমারে শিখাইবা কোনটা চারুর হাতের রান্না আর কোনটা তোমার? সাত বছর বয়স থেইকা চারু প্রতিদিন সকালের খাবার রান্না করতো আর মা মারা যাওয়ার পর থেইকা তিনবেলাই চারু রানতো। আট বছরের বেশি সময় আমি চারুর রান্না চিনি। একদম উল্টাপাল্টা কথা বইলা আমার মেজাজ বিগড়ে দিবানা।
– আমার রান্না কি ভালো হয়নি?
– তোর রান্নার ধারের কাছেও যাইতে পারবোনি ওর রান্না? কিন্তু তুই আমার কাছে আছস তোরে আমি আর কোনো কষ্ট পাইতে দিমুনা।
সেদিন রগচটা হামিদের রাগের সময়ে বলা কথার প্রতিউত্তর করতে পারেনি দুজনের কেউই। ফাতেমার সাথে সখ্যতা গড়ে না ওঠার আরো একটা বড় কারণ হামিদ নিজেই। অবশ্য হামিদকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রান্নার কাজটা চারু করার অনুমতি পেয়েছে। ফাতেমার রান্না তেমন ভালো না বিধায়ই হয়তো পেয়েছে। হামিদ ছোটবেলা থেকেই সবার হাতের রান্না খেতে পারেনা। অবশ্য ফাতেমার রান্না খুব একটা খারাপও না। অন্তত শেফালীর চেয়ে শতগুণে ভালো।
★
নতুন বাড়িটির ছাদের উপর বসে ছিলো চারু। তার পাশেই এসে বসলো হামিদ,
– কাল তোরে কলেজে ভর্তি করায়া দিমু। ভালো একটা কলেজের সন্ধান পাইছি। কিন্তু,
– কিন্তু?
– কিন্তু কলেজে ভর্তি হইতে শুনলাম সার্টিফিকেট লাগে। তোর তো সার্টিফিকেট নাই। তাছাড়া চার মাস পার হইয়া গেছে এরজন্য একটু সমস্যা হইবো। তাও আমি কলেজে কথা বলছি। ভর্তি হওয়া যাইবো কিন্তু সার্টিফিকেট লাগবোই।
– এখন কি হবে?
– শুনছি কিছু টাকা দিয়া নাকি বোর্ড থেইকা সার্টিফিকেট উঠানো যায়। কালকে উঠায়া তারপর ভর্তি করাইতে হইবো।
– একদিনে উঠানো যাবে?
চারুর প্রশ্নে হামিদ একটু দ্বিধায় পড়ে গেলো। আসলেই তো, একদিনে কি উঠানো যাবে?
– সেসব বাদ দাও, তোমার কাজ কেমন চলছে বলো।
– আগের মতোই। এহন ভাবতাছি আরেকটু বাড়াইতে হইবো কাজ নইলে এত কম টাকা দিয়া সংসার চলবো না।
– আমি তোমাকে খুব ঝামেলায় ফেলে দিলাম না?
– আমি তোরে এমন কিছু কইছি?
– না তারপরও মনে হচ্ছে। আমার জন্যই তো এত এক্সটা খরচ।
– ওইসব তোর ভাবতে হইবো না। তোর যা লাগবো সেইটা বলবি। পূরণ করার দায়িত্ব আমার।
– আমাদের ভাগ্যটা এমন না হলেও পারতো তাই না বলো?
– মায়ের মৃত্যুই আজ আমাদের এ অবস্থার জন্য দায়ী। আচ্ছা মা নাহয় নাই কিন্তু নানাজান কি আমাদের সাথে একটু দেহা করতে পারতো না?
– মা বেঁচে থাকতেই তো সে কোনো যোগাযোগ রাখেনি। মৃত্যুর পর কিভাবে রাখবে বলো।
– তোর নানার চেহারা মনে আছে চারু? তোর যহন আট বছর তহন আমরা শেষবার নানা জানের বাড়ি গেছিলাম। তোর মনে আছে কি না জানিনা কিন্তু আমার মনে আছে, ওইদিন বাপজান আর নানার মধ্যে কিছু একটা নিয়া ঝামেলা হইয়া যায় তারপর বাসায় আসার পর বাপজান মায়েরে অনেক মারধর কইরা কয় যেনো নানা জানের সাথে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। মাও তার কথা মাইনা নিছিলো। ওইদিনের পর থেইকা আর ওই বাড়ির সাথে মায়ের কোনো যোগাযোগ নাই। আমার কি মনে হয় জানস?
– কি?
– আমার মনে হয় নানা জান এহোনো জানেনা আমার মা আর নাই। আমার মায়েরে অনেক আদর করতো নানাজান। তোর হয়তো মনে নাই কিন্তু আমি দেখছিলাম। নানাজান বেশ কয়েকবার আসছিলো মায়েরে দেখতে কিন্তু বাপজান দেহা করতে দেয় নাই। তারে আমার বাপ ডাকতেও ঘেন্না হয়।
– একটা কথা বলি?
– বল।
– না থাক, বাদ দাও। এইসব এখন মূল্যহীন। বলে কোনো লাভ নেই।
– বল না।
– আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। তুমি ভাবিকে নিজের ইচ্ছে তেই বিয়ে করেছিলে তো?
– হুম কিন্তু বিয়ার আগে তারে দেহি নাই। ম্যানেজাররে দেইখা ধারণা করছিলাম তার বইন তার মতোই হইবো কিন্তু পরে দেহি ম্যানেজার হইছে তার মায়ের মতো সাদা। আর ফাতেমা তার বাপের মতো কালা। যাই হোক, যা হইছে সেটা তো আর বদলান যায়না। তাছাড়া ফাতেমারে বিয়া করায় কিছু সুযোগ সুবিধা পাইছি। ঘরের কাজকাম করার জন্য তো একজন লাগতো। কামের মানুষ রাখতে গেলে শহরে মোটা অংকের টাকা গুনতে হয়। ফাতেমারে শুধু খাওন পরন দিলেই চলে। আমার চাকরিটাও ফিক্সড হইয়া গেছে।
– তোমার তাকে পছন্দ হয়নি? এর কারণ কি শুধুই গায়ের রঙ?
– না। একে তো এই মহিলা বোকা তার উপর হিংসুটে। মাঝেমধ্যে অসহ্য লাগে তারে আমার। আবার বয়সও মনে হয় আমার সমান। তারে বিয়া না করলে আরো অনেক ভালা মাইয়া পাইতাম আমি।
চারু হামিদকে তার কথাটি আর বলতে চাইলোনা। শুধু শুধু এখন এইসব হামিদকে বলে তার সংসারে আগুন লাগানোর কোনো মানেই হয়না। বিন্দিয়া অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো হামিদকে। হামিদ অবশ্য তাকে চিনতো না কিন্তু বিন্দিয়ার ভাষ্যমতে এখন হামিদ তাকে চেনে। তাদের কথাও হয়েছে। বিন্দিয়া দেখতে সুন্দরী, বয়স কম বিন্দিয়াকে যেকেউই পছন্দ করতে বাধ্য। এখন এই কথা হামিদকে জানানো মানে শুধুই তার আফসোস বাড়িয়ে দেওয়া। গল্পের আসল লেখিকা স্নেহা ইসলাম প্রিয়া।
★
মধ্যরাতে হঠাৎই ঘুম ভেঙে গেলো চারুর। সে অনুভব করলো তার ভীষণ পানির তেষ্টা পাচ্ছে। জগে পানি নেই। পানি নেওয়ার জন্য উঠে বসলো চারু। নতুন এই বাড়িতে দুটো বেডরুম। একটায় চারু থাকে অন্যটায় হামিদ আর ফাতেমা। একটা রান্নাঘর আরেকটা বাতরুম। পানি আনার জন্য রান্নাঘরে যেতে হবে। পানি নিয়ে আসার সময় কিছুটা চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনলো চারু। সম্ভবত, হামিদ আর ফাতেমার মাঝে কিছু একটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। চারু সেদিকে যেতে চাইলো না। এইটা সম্পূর্ণই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার, এখানে তার ঢোকার কোনো অধিকার নেই কিন্তু চিৎকার চেচামেচি ক্রমশই বেড়ে চলেছে। চারু বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলো না। এগিয়ে গেলো ওঘরের দিকে। ফাতেমা চিৎকার করে বলছে,
– এমনিই আপনের বেতন মাত্র সাত হাজার টাকা। এই টাকা দিয়া দুইজন মানুষ ক্যামনে চলে? আপনে আবার আপনের বইনেরে নিয়া আসেন কোন আক্কেলে? সংসার কেমনে চলবো? এহন আবার তারে লেহাপড়াও করাইতে চান।
– আমার বইনেরে আমি লেখাপড়া করামু তোর বাপের কি? তোর বাপের টাকায় লেখাপড়া করামু আমি ওরে? সাত হাজার টাকা বেতনে যদি তুই চলতে না পারস তাইলে তোর বাপের বাড়ি যাইয়া লক্ষ লক্ষ টাকায় রাজরানি হইয়া থাক গিয়া।
– খবরদার বাপ তুইলা কথা কইবেননা। এতদিন অনেক চুপ থাকছি আর পারমুনা। আপনে আজই আপনের বইনেরে বিদায় করবেন। তার লগে এক বাড়িতে আমি থাকমুনা।
– না থাকলে বিদায় হ। আমার ঘাড়ের উপর বইসা রইছস ক্যান? তুই না থাকলেও তো আমরা দুইজন একটু শান্তিতে থাকতে পারি। পরের মাইয়ার এক পেট বেশি চালাইতে হয়না আমার। আমি আমার বইনেরে খাওয়ামু। পরের বাড়ির মাইয়ারে খাওয়ামু ক্যান আমি?
ফাতেমা স্তব্ধ হয়ে গেলো। হামিদের এমন উত্তর আশা করেনি সে। তার ভাবি যতবার তার ভাইকে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে তার ভাই ততবারই তার হাতে পায়ে ধরে মাফ চেয়েছে আর হামিদ কিনা তাকে চলে যেতে বলছে? এত ভালোবাসা তার বোনের প্রতি।
– আপনে আমারে চইলা যাইতে কইলেন?
– হ কইলাম। তোর ভাই আমারে ঠকায়া তোর মতো একটা কালা মাইয়ার লগে আমার বিয়া দিছে। বিয়ার আগে একটা ছবিও দেয় নাই। আবার তোর বয়সও আমার চেয়ে বেশি। এমন বুড়ি লইয়া আমি সংসার করমু ক্যান?
– হায় খোদা, কি কন আপনে এইগুলা? আমি আপনের বড় ক্যান হমু? আমি আপনের এক বছরের ছোট।
– কি যে ছোট ওইটা দেহাই যায়। একটা কথা ভালো কইরা শুইনা রাখ, আমার বইন এইহানেই থাকবো। তোর থাকতে মন চাইলে থাকবি নইলে বাসা থেইকা বাইর হইয়া যাবি। আমার বাসায় থাকবি, আমারটা খাবি আর আমার বইনেরে সহ্য করতে পারবিনা এইটা তো হইবো না।
– আপনের বইনের মূল্য আপনের কাছে আমার থেইকা বেশি?
– খবরদার আমার বইনের লগে নিজের তুলনা করবিনা। তার দাসী বান্দি হওয়ার যোগ্যতাও তোর নাই। তোর মতো মাইয়ারে যে আমি মাইনা নিছি হেইডাই অনেক। তুই আবার আমারে ছাইড়া দেওয়ার ভয় দেখাস। তুই আমার জীবন থেইকা গেলে আমি আরো অনেক সুন্দর মাইয়া পামু। এই কালা ভূত লইয়া আমার বইসা থাকতে হইবোনা।
চারুর আর ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছে হলোনা। দরজার বাইরে থেকেই ফিরে এলো সে। ফাতেমা তাকে পছন্দ করেনা সেটা হয়তো স্বাভাবিক। সে তো ঠিকই বলেছে, মাত্র সাত হাজার টাকায় কিভাবে তিনজন মানুষের চলে? আর তাছাড়া কোনো মেয়েই চায়না তার প্রিয় মানুষ তার চেয়ে বেশি প্রায়োরিটি অন্য কাউকে দিক কিন্তু হামিদ? সে কেনো ফাতেমার সাথে এমন আচরণ করছে? হামিদ কবে থেকে এমন হয়ে গেলো? হামিদ তো এমন ছিলোনা। ফাতেমার প্রতি তার অবহেলার কারণ শুধুই কি তার গায়ের রঙ? নাজিমুদ্দিন ও মনোরমাকে সহ্য করতে পারতোনা তার গায়ের রঙের কারণে। নাজিমুদ্দিনের র*ক্তই বইছে হামিদের শরীরে। তবে কি আবারও অতীতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে?
চারু স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো। নাহ, কখনোই এমনটা হতে পারেনা। হামিদ কখনোই নাজিমুদ্দিনের মতো হবেনা। এই হামিদকে ছোট থেকেই চিনে আসছে সে। আর যাই হোক, হামিদ কখনোই এমনটা হতে দেবেনা। চারুর ঘরের বাতি জ্বালানোই ছিলো। ঘরের বাতি জ্বালানো দেখে ঘরে প্রবেশ করলো হামিদ,
– কি রে তুই এহোনো ঘুমাস নাই? রাইত জাগস ক্যান? শরীরের জন্য ভালা না। ঘুমা চুপচাপ।
– ঘুম আসছেনা। আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলবে?
– কি কথা?
– এমনিই কথা। আচ্ছা তুমি ভাবিকে পছন্দ করো না কেনো?
– আগেই তো কইছি। ওই মাইয়া কালো, বোকা, হিংসুটে। এমন মাইয়ারে পছন্দ করন যায়না।
হামিদের কপালের রগগুলো ফুলে উঠেছে। চেহারায় দেখা যাচ্ছে ভীষণ রাগের আভাস।
– আমাদের মাও তো শ্যামলা ছিলেন তার জন্যই বাবা আমাদের মা কে পছন্দ করতেন না। তবে কি আবারও অতীতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে?
কথাটা বলার সময় চারুর গলা ধরে এলো। হামিদ চমকে উঠে চারুর দিকে তাকালো। মিথ্যা বলেনি চারু। আসলেই এমন হয়েছিলো। এ কি করতে যাচ্ছিলো সে? নাজিমুদ্দিনের ওই বিশ্রী ঘটনার পুনরাবৃত্তি কি না ঘটাতে চলেছিলো সে?
– তবে কি আরো একবার অসহায় চারু আর হামিদের জন্ম হবে? এমনটা হতে দিও না প্লিজ। চারু আর হামিদের জীবন যে খুবই কষ্টের। আরো দুজন চারু আর হামিদকে জন্মাতে দিও না।
হামিদ মেঝেতে বসে পড়লো। আসলেই সে এইটা কি করতে যাচ্ছিলো? মনোরমা শ্যামলা ছিলো বলেই আজ তাদের এই দুর্ভোগ। সে নিজেও কি না এমন ঘটনা ঘটাতে চলেছিলো? তবে কি বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সেও নাজিমুদ্দিনের মতো হয়ে যাবে? নাহ অসম্ভব! প্রয়োজন হলে শরীরের সব রক্ত সে ফেলে দেবে তাও নাজিমুদ্দিনের মতো হবেনা। কখনোই হবেনা।
★★★
মাথা থেকে ব্যান্ডেজের কাপড় খুলছে শিহাব। আঘাতটা বেশ জোরেসোরেই লেগেছে। ভাগ্যিস জাবিন চোর ভেবে আঘাত করেছিলো নইলে কে জানে আবার এই মাথা ফাটা নিয়ে কিসের অযুহাত দেখাতে হতো। ওর অবস্থা তো খুব একটা ভালো না। শাওনের সাথে সাথে তাকে সামলানো এখন দুষ্কর কিন্তু কিছুই করার নেই। মেয়েটা ভীষণ রকম পাগলামি করছে। আরে বাবা প্রেমে কি মানুষ ব্যর্থ হয়না? কয়জন এমন পাগলামি করে? এভাবে কেউ কাচের গ্লাস মাথায় ছুড়ে মারে? একটু এদিক সেদিক হলেই শিহাব সোজা উপরে চলে যেতো। ভাগ্যিস পরিবারের সাথে সে নেই নইলে তার বাবা মা তাদের আদরের মেয়ের এ অবস্থা দেখেই পটল তুলতো। মেয়েরা এত ইমোশনাল কেনো হয় কে জানে? কই শিহাবও হারিয়ে ফেলেছে তার স্বর্ণলতাকে কিন্তু সে তো দিব্যি বেঁচে আছে।
চারুর কথা মনে হতেই ভেতর থেকে এক দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। কে জানে পনেরো বছরের সেই কিশোরী টার মায়া সে কেনো ছাড়তে পারেনা। কি আছে তার মধ্যে? সে তো এখন অন্য কারোর। চারু নিশ্চয়ই এখন আরো বড় হয়েছে। সে কি এখনো আগের মতো মিষ্টি করে ভয় পায়? শিহাবের আঁখি দ্বয় জলে ভরে উঠলো আর ঠোঁটে দেখা গেলো হাসি। কি মিষ্টি ছিলো পুরোনো দিনগুলো। সেদিনগুলো না গেলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? চারু এখন অন্যকারো, ভাবতেই বুকের ভিতরটা ভেঙে গুড়িয়ে যায় তার। কে জানে শাওন যদি চারুকে বিয়ে করতো তবে সর্বক্ষণ চারুকে দেখার পর কি অবস্থা হতো ওর? নিশ্চয়ই একেবারে পাগল হয়ে যেতো সে। তবে শাওন চারুকে নিঃসন্দেহে খুবই ভালোবাসতো নইলে এত বড় একটা স্টেপ সে নিতে পারতো না। আচ্ছা আবার যদি চারুকে পাওয়ার একটা সুযোগ শিহাব পায় তাহলে কি সে চারুকে নিজের করে নেবে? সম্ভবত না। শাওন কখনোই সেটা মানতে পারবেনা। আচ্ছা চারুর বিয়ের তো প্রায় দেড় বছর হয়ে এলো। গ্রামে তো বিয়ের বছর না ঘুরতেই বাচ্চা হয়ে যায়। চারুরও কি বাচ্চা আছে? শিহাবের মনটা হঠাৎই বিষিয়ে উঠলো। চারুর শরীরে অন্যকারো স্পর্শ যেখানে সে মানতে নারাজ সেখানে অন্য কারোর ভালোবাসার চিহ্ন থাকবে এইটা সে কিছুতেই মানতে পারছেনা। বারবার শুধু মনে হয় চারু শুধুই তার। আর কারোর হতে পারেনা সে। তার শরীরে অন্যকারো স্পর্শ থাকতে পারেনা। সেবার যখন মজিদ সামান্য চারুর হাতটা ধরেছিলো তখনই মেরে তার হাত পা অবধি ভেঙে দিয়েছিলো শিহাব আর এখন চারু অন্যকারো। তাকে ছোয়ার অধিকারও অন্য কারোর। শিহাব চাইলেও সেখানে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেনা। পৃথিবীর বিষাক্ততম অনুভূতিই বোধহয় নিজের প্রেয়সী অন্যের বিছানায় আছে সেটা জানতে পারা। আচ্ছা, আল্লাহ যদি চারুকে ওর জন্য, ওর ভাগ্যে লিখে রাখতো তবে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? শাওন যদি চারুকে ভালো না বাসতো তাহলেও কি খুব বেশি ক্ষতি হতো? জামাল হোসেন নামক লোকটা যদি চারুর জীবনে না আসতো তাহলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? কেনো এমন হলো? এইটা হওয়া কি খুব প্রয়োজন ছিলো? চারু কি তাকে একটু ভালোবাসতে পারতো না? এই জীবনে আর কাউকেই আপন মনে হয়না শিহাবের। বারবার মনে হয় জমিদার গিন্নি শুধুই তাকে করুনা করে। বাসার অন্য সকলের ভালোবাসা পেলে মনে হয় এই ভালোবাসার উত্তরাধিকার সে নয়। এত কিছুর মাঝেও প্রথম কাউকে ভালোলাগা আর তাকে ভালোবাসা ছিলো চারু কিন্তু এই চারুও তার রইলো না। এ জীবনে ভালোবাসার বড্ড অভাব তার। সে সবসময় চায় কেউ তাকে ভালোবাসুক। তার অস্তিত্ব জুড়ে শুধু আর শুধুমাত্রই শিহাব থাকবে কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। কিছু মানুষের জন্মই হয় ভালোবাসা বিহীন। শিহাবও বোধহয় তেমনি এক মানুষ। আজও শিহাবের মনে আছে সেই দিনটির কথা। তার জীবনের সবচেয়ে বিভীষিকা ময় দিন ছিলো সেটা। অনিচ্ছায় বাবা মায়ের কিছু কথা শুনে নেয় সে। কথাগুলোর সারমর্ম এইরূপ যে,
যেদিন জমিদার গিন্নি প্রথম সন্তান জন্ম দেন তার বয়স তখন সবেমাত্র পনেরো। বাচ্চা ও মায়ের উভয়ের জীবন ঝুঁকিতে ছিলো। জমিদার গিন্নিকে বাঁচানো গেলেও বাচ্চাটাকে বাঁচানো যায়নি। জমিদার গিন্নি পাগলের মতো নিজের বাচ্চাকে চাইছিলো। সেদিনই হাসপাতালে জন্ম হয় আরেকটি শিশুপুত্রের। তাকে জন্ম দিয়েই মৃত্যু বরণ করলেন মা। বাচ্চাটার বাবাও এরপর আর কোনো খোঁজ নেয়নি তার। সেই শিশুপুত্রকেই জমিদার সাহেব তুলে দিলেন জমিদার গিন্নির হাতে আর সেদিনের সেই শিশুপুত্রই আজকের এই শিহাব। এই ঘটনা কেবল জমিদার গিন্নি আর জমিদার সাহেবই জানেন আর বছর চারেক আগেই সেটা জানতে পারে শিহাব। সেদিন থেকেই তার জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সে যাই অর্জন করে, মনে হয় এইটা তার নিজের না। জমিদার গিন্নির সেদিনের করুনার জন্য আজ সে এখানে। গল্পের আসল লেখিকা স্নেহা ইসলাম প্রিয়া। জমিদার গিন্নি কখনো শাওনের সাথে শিহাবের ভেদাভেদ করেনি তাও শিহাবের মনে হয় এসবই শুধুই করুনা। ভাগ্যিস শাওন এইসব জানেনা। জানলে তার ভালোবাসাও শিহাবের শুধুই করুনা বলে মনে হতো। শাওনকে খুবই ভালোবাসে শিহাব। তার করুণা মানতে পারবেনা সে। জীবন আসলেই খুবই জটিল। মাঝেমাঝে এমন অনাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে যায় মনে হয় যেনো জীবনের মোড়টাই ঘুরে গেলো।
★
সকাল হতেই শিহাব আবার বেড়িয়ে গেলো। জমিদার বাড়ির সকলেই এখন শহরে আছে কিছুদিনের জন্য। শিহাব সবার থেকে কিছুটা দূরে আলাদা একটা বাড়িতে থাকে। তাদের কাছাকাছি গেলেই মনে পড়ে যায় এরা কেউ তার নিজের নয়, শুধুই করুনা করে চলেছে তার উপর। আরো একজন বাড়ি থেকে দূরে আছে আর সেটা হলো মিলি। ছোট চাচার বড় মেয়ে মিলি। ও এখন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তারই সামনে একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে সে আর তার দুই বান্ধবী। মিলির দুই বান্ধবী এখন ছুটিতে তাদের গ্রামের গেছে। সে বাসায় মিলি একা। অনেক বলার পরেও মিলি এ বাড়িতে আসতে রাজি হয়নি। এর কারণ অবশ্য শিহাব জানে। সপ্তাহ দুয়েক আগেই তার সাবেক প্রেমিকের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে তার। মেয়েটা অনেক ভেঙে পড়েছে। ভালোবাসার কোনো কমতিই ছিলোনা তাদের মাঝে কিন্তু তাও কেনো বিচ্ছেদ হলো সে এক রহস্য। মিলির ভাষ্যমতে, আরো একজন মেয়ের সাথে সম্পর্ক রয়েছে তার। তাই মিলি নিজেই বিচ্ছেদের রাস্তা বেছে নেয় কিন্তু বিচ্ছেদ করেও সেটা মানতে পারছেনা মিলি। বারবার পাগলের মতো আচরণ করে চলেছে আর তাকে সামলাতে গিয়েই শিহাবের এই বেহাল। সেদিনও কাচের গ্লাস মাথায় ছুড়ে মেরেছিলো। ভাগ্যিস সঠিক সময়ে শিহাব সরে গিয়েছিলো নইলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতো। পরে আবার বারবার এসে সরি বলেছে কিন্তু কি লাভ? কিছু একটা হয়ে গেলে তো শিহাব সোজা উপরে চলে যেতো। সেদিন থেকেই মিলি রান্নাবান্না একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে। বাইরের খাবারও খেতে পারেনা সে। বাধ্য হয়েই বোনের জন্য রান্না করছে শহরের খুব বড় একজন ব্যাবসায়ী শিহাব। বাহ কি ভাগ্য তার! আবার রান্না করতে গিয়ে হাতও কেটে ফেলছে। ছোট থেকেই মিলিকে নিজের বোনের মতো ভালোবেসে এসেছে শিহাব। এমনি এমনি ছেড়েও দিতে পারছেনা। আচ্ছা, মিলি যদি জানতে পারে শিহাব তাদের বংশের কেউই না তবে কি মিলি শিহাবকে ভাই মানবে? মানতেও পারে আবার নাও পারে। না মানলেও বা কি? এই মানুষেরাই এখন শিহাবের আপনজন। তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা শিহাব কল্পনাও করতে পারেনা।
ঘরে ঢুকতেই মিলিকে দেখা গেলো সে সাজগোছ করছে বসে বসে। শিহাব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মিলির দিকে। এই দুই সপ্তাহে মিলিকে কখনো হাসতেও দেখা যায়নি। তবে কি মিলি এসব কিছুর থেকে মুভ অন করলো? শিহাবের ভিতর থেকে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো। ভালোই হয়েছে এই মেয়ের পাগলামি আর দেখতে হবেনা। কোনদিন যেনো শিহাবকে আল্লাহর কাছেই পাঠিয়ে ছাড়তো সে।
– মাথা থেকে ওই ছেলেটার ভূত নেমে গেছে?
– ও ভূত কেনো হবে? আমাদের মধ্যে সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে।
শিহাব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এসি অন করে দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো,
– দুই সপ্তাহের পরিশ্রম বৃথা গেলো। আরে বোন যদি সব ঠিকঠাকই করে নিবি তাইলে এই দুই সপ্তাহ এত কষ্ট কেনো করালি?
– ছোট বোনের জন্য এইটুকু করতে পারবা না? কেমন ভাই তুমি?
– হ্যাঁ পারবোনা কেনো? তার জন্য মাথা ফাটিয়েছি, হাত কেটেছি, রান্না করেছি। আর কি করা বাকি আছে?
– সরি বলেছি না আমি।
– যাই হোক, ভালোই হয়েছে সব ঠিক হয়েছে। এই পাগলামি আর সহ্য হচ্ছিলো না। এইবার বল সব ঠিক কিভাবে হলো।
– আমিই ভুল ছিলাম। ওর কারোর সাথে কোনো সম্পর্কে ছিলো না। ও প্রমাণ দিয়েছে আমাকে।
– এখন কি দেখা করতে যাচ্ছিস?
– হুম। আচ্ছা ভাইয়া তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?
– কর।
– তুমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো? যদি বাসো তাহলে সে যদি তোমার না হয় তাহলে তুমি কিভাবে থাকবে?
– হঠাৎ এ প্রশ্ন?
– কেনো যেনো মনে হয় আমি যাকে ভালোবাসি তাকে আমি পাবোনা।
– আরে আমি আছি না? এত চিন্তা করিস কেনো? তুই যাকে চাইবি সেই তোর হবে।
– প্রশ্নের উত্তর কিন্তু দিলেনা। তুমি কাউকে ভালোবাসো? সত্যি বলবে কিন্তু।
– বাসি তো।
– কে সে? কোথায় থাকে? কবে বিয়ে করছো?
– তার নাম স্বর্ণলতা। বিয়ে হয়ে গেছে তার। সে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি। কই তাতে কি হয়েছে? বেঁচে আছি না আমি?
নরম কণ্ঠে কথাটা বললো শিহাব। মিলি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো,
– বিয়ে হয়ে গেছে মানে? তুমি কিছু করলেনা?
– কি করতাম? সে যে অন্য কাউকে ভালোবাসতো। কিন্তু দুভার্গ্য, সে যাকে ভালোবাসতো তাকে সে পায়নি। সেই ছেলেটা আমার ভীষণ কাছের।
– একেবারে ভালো হয়েছে। কাউকে কষ্ট দিয়ে কখনো সুখে থাকা যায়না। এই তার প্রমান।
– আমি চাইনা সে কষ্টে থাকুক। ভালোবাসা আর সুখের চাদর সবসময় তাকে মুড়িয়ে রাখুক। সেই চাদর ভেদ করে কখনো যেনো তাকে কোনো কষ্ট ঘ্রাস না করতে পারে। জীবনে অনেক কষ্ট পেয়ে এসেছে সে। এইবার তার সুখ প্রাপ্য। আমার না হোক, কিন্তু যার কাছে আছে তার হয়েই খুশি থাকুক আমার স্বর্ণলতা।
বিঃদ্রঃ আর মাত্র তিন থেকে চারটি পর্ব বাকি রয়েছে প্রথম পরিচ্ছেদের। খুব শীঘ্রই শেষ করে দেবো প্রথম পরিচ্ছেদ। যারা যারা পড়ছেন, এই শেষ সময়ে প্রত্যেকের রেসপন্স আশা করছি। আপনাদের রেসপন্স যতটা ভালো হয় আমার লেখাও ঠিক ততটাই উন্নতমানের হয়। ধন্যবাদ সবাইকে। হ্যাপি রিডিং।
#স্নেহা_ইসলাম_প্রিয়া
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)
To Be Continued….