#রঙতুলির_ক্যানভাস
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
#পর্ব_১০(অন্তিম)
“তোরা দুইটা এমন কাদা মেখে বসে আছিস কেনো?”
ঝগড়া শেষে বাড়িতে পা রাখতেই নিশাত আর তুষার নোভার প্রশ্নের সম্মুখীন!
“এই অ’ভদ্র লোকটা আমায় কাদায় ফেলে দিয়েছে আপু!”
“তুমি আমাকে ফকির বলেছো!”
“ফকিরকে ফকির ই তো বলবো!”
“আপু কিছু বলো!”
নোভা অবাক হয়ে বললো,”তোরা দেখি রোদেলা রোদ্দুর পার্ট টু!”
নিশাত তুষার একে অপরকে ভেং’চি কাটলো!
______
কেঁটে গেলো বহু দিন!আজ রোদেলা আর রোদ্দুরের বিয়ে!হুমম….আবারও!ধুম ধাম করে। চারপাশে সুন্দর করে সাজানো!লাল লেহেঙ্গা পরিহিত বউ বেশে বসে আছে রোদেলা।ওকে সাজিয়েছে নিশাত আর তুলি!
“তোকে কি মিষ্টি লাগছে রে রোদ!”
“আমি কিউট!মিষ্টি তো লাগতেই হবে!”
নিশাত ভেংচি কেটে বললো,”তুই পে’ত্নী”
রোদেলা দাত কটমট করে তাকালেও আবার নিজেকে সামলে নিজেকে নিজেই বললো,”কুল রোদ কুল!আজ তোর বিয়ে!”
নিশাত আর তুলি হেসে উঠলো।অবশেষে ওকে স্টেজে নেয়া হলো। ফটো সুটের জন্য ক্যামেরা ম্যান ছবি তুলছেন।
পাশ থেকে নিশাত বাঁকা হেসে বললো,”রোদ একটু লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমা কর তো!”
রোদেলা স্টেজের পাশে থেকে একটা ফুল নিয়ে ছুড়ে মারলো l
“ফা’জিল মাইয়া তোর বিয়ের সময় ও আমি এগুলো বলমু।”
তুষার মাঝ থেকে বলে উঠলো,”ঠিক, এ সবচেয়ে বেশি নির্লজ্জ!”
“ওই আপনি লেডিস দের মাঝে কি করেন?”
কোমরে হাত গুজে বললো নিশাত!
“আমার হবু ভাবির সাথে দেখা করতে!”
“ভাবি টাবি পড়ে!আগে আপনার বন্ধু কে নিয়ে আসুন!”
“আনা লাগবে না!ওইতো এসে গেছে!”
রোদ্দুর শেরওয়ানি পরে স্টেজের কাছে এসে বললো ,”বাহ বর আসার আগে বউ হাজির!!”
রোদেলা মুচকি হেসে এগিয়ে এসে বললো,”এবার নাহয় ভিন্ন কিছু হোক!আয়!”
বলেই হাত এগিয়ে দিল।রোদ্দুর ওর হাত ধরে উঠে এলো।
অবশেষে তিন অক্ষরের কবুলে আবারও ওরা বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো।
নির্জন রাত! রোদ্দুরের রুমে বসে আছে রোদেলা!প্রথমবার ছিল উদাসীনতা,ক্ষোভ আর রাগ।কিন্তু এখন আছে একরাশ ভয় আর লজ্জা!রোদ্দুর আসছে বুঝতে পেরে নড়ে চড়ে বসলো ও!এটাও বুঝতে পারলো বাইরে নিশাত তুলি গেট আটকে বসে আছে।
“এটা ঠিক না ভাইয়া!আমরা না জুতা চু’রি করতে পেরেছি ,না গেট ধরতে।এবার বাসর ঘরে ঢুকতে অন্তত এই শালিকাদের উপর দয়া করুন!”
নিশাত বললো।
তুলি তাল মিলিয়ে বললো,”হ্যাঁ ভাইয়া,দেন না!বেশি না মাত্র ছয় হাজার!”
ঋদ্ধ রোদ্দুর কে খোঁচা মে’রে বললো,”দিয়ে দে না,দেখ কত কিউট করে বলছে!”
তুষার ভ্রু কুঁচকে বললো,”পাঁচ হাজার হলে মানবে ও!”
“ওমা ৫ হাজার হলে তিন ভাগ করবো কেমনে?”
আহত হয়ে জিজ্ঞেস করলো নিশাত।
রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,”তিনভাগ কেনো?”
তুলি দাত কেলিয়ে বললো,”আমি দুই হাজার,নিশু দুই হাজার আর নোভা আপু দুই হাজার!”
“নোভা আপুও আছে!”
“জি ভাইয়া!”
রোদ্দুর কথা না বাড়িয়ে দিয়ে দিল।অতঃপর সে ঢুকলো নিজের রুমে!রোদ্দুর রুমে আসতেই রোদেলা মুখে সালাম দিলো।রোদ্দুর সালামের উত্তর নিয়ে বললো,”বাহ মহারানী এত ভদ্র!”
“মহারানী এখন মন থেকে স্বামী মেনেছে তো,তাই একটু ভদ্র হচ্ছে!বুঝলি?”
“জামাইকে তুই করে বলস লজ্জা করে না?”
“তুই ও তো বউকে তুই করে বলছিস!”
“আমি বললে কিছু হবে না!আমরা তুই বলতেই পারি কিন্তু তুই আমাকে তুই বললে লোকে হাসবে!”
রোদেলা গাল ফুলিয়ে বললো,”আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে!”
রোদ্দুর কিছু বললো না!
“শাড়ি পাল্টে ফ্রেশ হয়ে অজু করে আয়!”
রোদেলা হাসলো।প্রত্যেক মেয়েরই লাইফের কিছু স্বপ্ন থাকে নিজের জীবন সঙ্গী নিয়ে!প্রথমে ভেবেছিল রোদ্দুর ওর স্বপ্নের মত হবে না ।কিন্তু এই কথা শুনে একটু হলেও বুঝেছে ওর স্বপ্নের থেকেও সুন্দর এই ব্যাক্তির ব্যাক্তিত্ব!দুইজনে একসাথে নামাজ পরে নিলো।
“আজকে থেকে এভাবে চলা বাদ দিবি!বাইরে বের হলে বোরকা পরে বের হবি!বিয়ের আগে থেকে বয়ে অব্দি যা করছিস ওগুলো ভুলে যা।নতুন ভাবে গড়ে নিতে চাই তোকে।যাতে পরকালেও তোর সাথে বাস হয় আমার!”
“যথা আজ্ঞা জনাব!”
বারান্দায় বসে আকাশের চাঁদ দেখছে ওরা মাঝে মাঝে টুকটাক কথা বলছে।
“জীবনে কল্পনাও করি নি এই উদ্ভট মহারাজ আমার জীবন সঙ্গী হবে!”
“আমি করেছিলাম নাকি?”
“কি অদ্ভুত না?সারাদিন ঝগড়া হয়,অথচ এর মাঝে দুইজন দুইজনকে কিভাবে মন টুকু দিয়ে দিলাম!”
রোদ্দুর রোদেলার হাত মুঠোয় নিয়ে বললো,”জানি না কিভাবে কি,কিন্তু হাত ছাড়ার সাহস আমার হবে না!প্রতি টি মুহূর্তে তোকে আমার চাই রোদ!আমার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে!শুধু পারফেক্ট না ,পার্মানেন্ট মানুষ হিসেবেও!তুই আমার হয়ে থাক!আমার ক্যানভাসের রঙ তুলি হিসেবে!যেই রঙ তুলি ক্যানভাসে এক অপরূপ সৌন্দর্য উপহার দিতে পারে!”
“কত টুকু কি পারবো জানি না,তবে নিজের মত চেষ্টা করে যাবো!”
রোদ্দুর ওকে জড়িয়ে ধরলো।দুজনে মিলিয়ে গেলো ভালোবাসার সমুদ্রে!
_______
রোদ্দুরের রুমে গাল ফুলিয়ে বসে আছে তুলি,পাশে নিশাত ভ্রু কুচকে ওকে দেখছে।সামনে গালে হাত দিয়ে ওদের কাহিনী দেখছে রোদেলা!
“তোরা দুইটা এমনে কেনো দেখছিস আমায়?”
বিরক্ত নিয়ে প্রশ্ন করলো তুলি!
“এভাবে সং সেজে বসে আছেন কেনো মেডাম?”
দ্বিগুণ বিরক্ত নিয়ে বললো নিশাত!
তুলি মুখ ভেংচি কেঁটে বললো,”বাসায় বিয়ের কথা শুরু হচ্ছে!”
“তো?”
“দেখ নিশাত সব জেনে অবুঝের মত প্রশ্ন করবি না!ওই কাকলি ফার্নিচার তো জীবনেও আমাকে ঋদ্ধর বউ কি!বোন হিসেবেও মানবে না!”
“মেনে গেছে অলরেডী!”
বলতে বলতে ঋদ্ধ রুমে এলো।
তুলি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো ,”কিভাবে?”
নোভা পিছন থেকে উত্তর দিল,”আমি করেছি সব!”
রোদেলা ,নিশাত আর তুলি জিজ্ঞাসাশুচক দৃষ্টিতে তাকালো।
“ঋদ্ধ আমাকে সবটা বলার পর আমি ফুপির কাছে যাই!তারপর!…”
ফ্ল্যাশব্যাক
“ফুপি আসবো!”
কাকলি মুখ বাঁকিয়ে উত্তর দিলো আয়!
“ফুপি তোমার জন্য একটা অফার নিয়ে এসেছি!”
“কি অফার?”
“দেখো ঋদ্ধর তো বিয়ের বয়স হয়েছে!তো আমি একটা মেয়ের খোঁজ দিতাম আরকি, বেশ বড়লোক!”
বড়লোক শুনে ফুপি নড়েচড়ে বসলো!
“তো মেয়ের কোনো ছবি আছে?”
“আরে তুলিকে তো চিনোই!”
“অসম্ভব!”
“আরে দেখো তুলি এসিপির মেয়ে,বাবার কত গুলো বাংল আছে!আবার তুমি যদি একবার বলো তোমার বউ মা এসপির মেয়ে তোমার রেপুটেশন কই যাবে বুঝতেছো?”
“তাহলে তো নিশাত কে নিতে পারি!”
বর্তমান
এই কথা শুনে নিশাতের কাশি উঠে গেলো।রোদেলা তড়িঘড়ি ওকে পানি দিলো!
“আস্তাফিরুল্লাহ,কখনোই না!”
নোভা বললো,”আরে পুরোটা শুন!”
এগেইন ফ্ল্যাশব্যাক
“আরে নিশাত যা চালাক আর চঞ্চল, ও তো ঋদ্ধ কে হাতের মুঠোয় রাখবে।আর তুলি শান্ত শিষ্ট!তোমার সব কথা শুনবে! বুঝো কিছু?”
“ঠিক ঠিক!”
“এখন তুলির বাবা পাত্র খুঁজছে! যত জলদি পারো হাতিয়ে নেও!”
“হ্যাঁ দাড়া!এই রুবি,ঋদ্ধ তৈরি হ!বাড়ি যাবো!নোভা মা তোরে ধন্যবাদ!”
বলেই খুশিতে গদ গদ হয়ে রেডী হতে লাগলো!
নোভা রুম থেকে বেরিয়ে ঋদ্ধর সাথে হাই ফাইভ করলো!
“প্ল্যান সাকসেস ফুল!”
ফ্ল্যাশ ব্যাক এন্ড!
নিশাত সস্তির নি:শ্বাস নিয়ে বললো,”বাঁচলাম!”
তুলি নোভাকে জড়িয়ে ধরে বলল,”আই লাভ ইউ আপু!”
ঋদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বললো,”আমাকে তো কখনো এভাবে বলো নাই!”
মুহূর্তেই গাল লাল হয়ে গেল তুলির।তাই দেখে সবাই হেসে দিল।ঋদ্ধরা চলে গেছে!
নিশাত রোদেলার বিছানায় শুয়ে শুয়ে বলছে,”তুই আর ভাইয়া আগে কি ঝগড়া করতি!আর এখন দুইজন কেমন দুইজনের পাগল!”
“আসলেই,এত ঝগড়ার মাঝে তোদের মাঝে কেমনে কি হলো?”
নিশাত তুলির মাথায় টোকা দিয়ে বললো,”যাদের মাঝে ঝগড়া বেশি,ভালোবাসাটাও বেশি হয়!”
তুলি ভ্রু কুঁচকে বললো,”তাইলে তুষার ভাইয়া আর তোর মাঝেও কুচ কুচ?”
নিশাত হালকা হেসে বললো,”হয়তো!”
রোদেলা আর তুলি একসাথে টেনে বললো,”ওয় হোয়!”
নিশাত মাথা চুলকে হাসলো!
আড়ালে তাই দেখে মিষ্টি হাসলো নোভা।রুমে গিয়ে আরিফিনকে কল করলো ।
“বলিয়ে মেডাম!”
“কবে আসবেন!”
“আর তো মাত্র কয়টাদিন ,খুব জলদি আসবো আমি!”
“হুমম!”
“ভালোবাসি!”
নোভা উত্তর দিলো না!আরিফিন হাসলো,মেয়েটা লজ্জাবতী!দুই প্রান্তেই নিরবতা!তবে এর মাঝেও রয়েছে শান্তি!
_____
“ওই রোদ শোন!”
“বউকে সম্মান দিয়ে ডাকতে পারিস না?”
“চুপ করে এদিকে বস!”
টেনে ছাদের মেঝেতে বসালো রোদ্দুর ওকে। রাতে ছাদ তালা থাকলেও রোদেলা রোদ্দুর আজ এসেছে!পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে!
“ভয় করছে তোর?”
“তুই থাকতে কিসের ভয়!”
রোদ্দুর হাসলো।নিরবতা!মৃদু বাতাস বইছে!রোদ্দুরের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে পরিবেশ উপভোগ করছে রোদেলা!
“রোদ!”
“হুমম!?”
“ভালোবাসি!”
কেঁপে উঠলো রোদেলা!রোদ্দুরের বলা প্রথম ভালোবাসি কথাটা সর্বাঙ্গে শিহরণ তৈরি করলো। আস্তে করে বলল,”আমিও?”
রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে বললো,”কি?”
রোদেলা হেসে বললো,”ভালোবাসি!”
রোদ্দুর পরম আবেশে ওকে জড়িয়ে ধরলো।নির্জন রাতের চাঁদ সাক্ষী রইলো ওদের এই সুন্দর মুহূর্তে!আসলেই ভালোবাসা অদ্ভুত!অনেক অদ্ভুত!
সমাপ্ত