#এল_এ_ডেইস
পর্ব ২৪
লেখনী মাহীরা ফারহীন
অন্ধকার তবে পরিষ্কার অসীম আকাশ। আবছা অন্ধকার আকাশে ধূয়ো ধূয়ো মেঘ ভাসে। চারিদিকে ঘন বনে ঘুটঘুটে আঁধার। জঙ্গলের দিকে চোখ গেলেই গা শিউরে ওঠে। দূরের পিনাকেল পাহাড়টা এই অন্ধকারেও আবছা আবছা চোখে পরে। যদিও সেটাকে অন্ধকারের ছায়ায় আগ্নেয়গিরি বলে ভুল হয়। প্রায় একশ গজ লম্বা ষাট কিংবা সত্তর গজ চওয়া মাঠে প্রায়
পঁচিশ থেকে ত্রিশটা তাঁবু। নানা রঙের একেকটা তেকোনা তাঁবুগুলোকে হঠাৎ করে দেখে মস্ত দানব বলে মনে হয়। বেশির ভাগ তাঁবুগুলো চারদিক দিয়ে আলো জ্বালানো হয়েছে। একপাশে সারিসারি আটটা টেবিল রাখা যেখানে রান্নাবান্নার পাট চুকানো হয়েছে। তার পাশেই ছয়টা পোর্টেবল স্টোভ রাখা। এখন প্রায় রাত দশটা বাজে। সকলে রাতের খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত। এত দেরিতে রাতের খাবারের আয়োজন করার কারণ সন্ধা নামছে মাত্র সেই সময়ই ওরা লাঞ্চ করেছে। রাতের খাবারে খুব বেশি ভারি কিছুর আয়োজন করা হয়নি। স্যান্ডউইচ, ভেজিটেবল রোল এবং স্যুপ। সকলে মাঠের মধ্যেই খাবার নিয়ে একত্রে ছোট ছোট গোলাকৃতির দল করে বসছে। বড় আটটা টেবিলে খাবার রাখা। সেখান থেকে সকলে নিজে নিজের খাবার নিয়ে এসে মাঠে বসছে। ব্যাপারটা অনেকটা বুফের মতো হয়ে গিয়েছে। মাহীন, সাইলোহ ও ক্যারোট টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সামনে আরোও অনেকেই খাবার বেড়ে নিচ্ছে। এই অন্ধকার জঙ্গলের মাঝে এক বহর ছেলেমেয়ের হইহট্টগোলের মাঝেও গাছগাছালির কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালে ঝিঁঝি পোকার ডাক কানে আসে। এসিসিয়া ওয়ান টাইম প্লেট হাতে নিয়ে মাহীনকে উদ্দেশ্য করে হাসি মুখে বললো, ‘হেই মেহীন!’
নিজের নামের ভুল উচ্চারণ শুনেও মাহীন চমকে উঠে ফিরে চাইল। এসিসিয়াকে ওর পাশে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হলো। তারপর হাসি মুখে বললো, ‘হ্যালো এসিসিয়া।’
‘সিয়া। জাস্ট সিয়া ডাকো আমাকে। সিয়া নামটা অনেক কুল। ইউ নো দ্যা সিঙ্গার সিয়া।’
‘হ্যা চিনি তো। সর্ট ফর্মটা কিন্তু জোস।’
মেয়েটা আরোও আগ্রহের সঙ্গে বলল, ‘হ্যা সেটাই। আর আমার প্যারেন্টস কে দেখো কোথাকার একটা কঠিন গ্রিক গড অর গডেসের নাম এনে আমার নাম রাখসে।’ কথাটা বলার সময় ওর মুখে বিরক্তি ভাব ফুটে উঠলো। সাইলোহ এসিসিয়াকে দেখে বিরক্ত হচ্ছিল। ফলে ও ঠেলাঠেলি করে আগেভাগে খাবার নিয়ে চলে গিয়েছে। মাহীন বলল, ‘না এসিসিয়া নামটা ইউনিক। বাই দ্যা আমার নাম মা..হী..ন।’
সিয়া বলল, ‘ম্যহীন?’
‘না, মাহীন। এক টানে বলবা মাহীন। মাঝে কোনো অক্ষরে লম্বা টান দিবা না।’
‘মাহিন।’
মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘হ্যা যা হোক হয়েছে।’ তারপরই দেখলো ওর সামনে জায়গা বেশ খালি হয়েছে। ও প্লেট নিয়ে টেবিলের কাছে এগিয়ে গেল।
রায়েদ খাবার নিয়ে নিজেদের তাঁবুর কাছে বসতে যাচ্ছিল তবে রাবিত এসে বাঁধা দিলো। রাবিতের হাতে দুটো প্লেট দেখে রায়েদ বলল, ‘কি ব্যাপার এখানে সবার মাপ মতো খাবার বানানো হয়েছে। একে তো বিশাল বহর তার ওপর তুই একাই দুইটা প্লেট কোন আক্কেলে নিয়েছিস। সত্যিই কি আক্কেল জ্ঞান বাসায় ফেলে রেখে এসেছিস?’
রাবিত বলল, ‘আরে থামো থামো। আমাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই দুনিয়ার লেকচার দিয়েই যাচ্ছো তো দিয়েই যাচ্ছো। আমি এত বড়ও খাদক না যে দুইটা প্লেট একাই সাবার করবো। একটা লেক্সির।’
‘ওহ আচ্ছা। তো তুই লেক্সির প্লেট নিয়ে কেন দাঁড়িয়ে আছিস?’
‘ভাই দেখিস না ওখানে অনেক ভির। তো দুইজন গিয়ে ভির বাড়িয়ে কি লাভ? তাই দুইজনের খাবার একজনই আনলাম।’
‘ওহ তো তুই ওর খাবার নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? লেক্সিকে ওর খাবার দিয়ে আয়।’
‘নাহ তোমাকে নিতে এসেছি। তুমি এখানে কেন বসবা? এর কোনো মানে হলো? আমরা সকলে যেখানে গোল হয়ে বসছি তুমিও সেখানেই বসবা। সবার সাথে।’
‘ধ্যাৎ ঝামেলা করিস না তো। তুই তোর মতো যেখানে ইচ্ছা গিয়ে বস না।’ বিরক্ত হয়ে বলল রায়েদ।
রাবিত রায়েদের এক বাহু আঁকড়ে ধরে বলল, ‘তা আর হচ্ছে না ভাই। তুমি আমার সাথে ওখানেই বসবা।’ বলে প্রায় জোড় করে টানতে টানতে নিয়ে গেল।
রায়েদ ঝাজ ভরা কন্ঠে বলছে, ‘ছাড় আমার হাত নাহলে তোর, লেক্সির এবং আমার তিনজনেরই খাবার পরবে।’
রাবিত একটা প্লেট রায়েদের অন্য হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ধরো তো। হাতে দুইটা প্লেট নিয়ে তোমাকে টেনে নিয়ে যাইতে অসুবিধা হচ্ছে।’ রায়েদ অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইল। যেখানে জেনেট,লিম,ক্যারোট,
সাইলোহ নায়েল ও লিও গোল হয়ে বসেছে সেখানে, কাছাকাছি এসে পৌঁছলো ওরা। গোল বৃত্তটা পুরন হতে এখনো পাঁচটা আসন খালি। তখনই মাহীনও আসছিলো। রায়েদকে দেখে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
‘আরেহ রায়েদ তুমি আমাদের সাথে বসবা? গ্রেট! আসো,আসো।’
রাবিত বলল, ‘হ্যা হ্যা ভাই এখানেই বসবে।’ নায়েল ও লিম জু তখনও দাঁড়িয়ে আছে। ওরা বসেনি। নায়েল বলল, ‘ভালোই তো।’
লিম জু হাসি মুখে বললো, ‘হ্যালো রায়েদ! আমাকে মনে আছে?’
রায়েদ কখনো কারোর গ্রিটিংয়ের উত্তর দেয় না। তবে এবার লিমের কথার উত্তরে বলল, ‘তুমি কি ভাবসো তোমাকে আমি কখনো দেখতেই পাইনি?’
লিম জু বিচলিত হাসল। এসিসিয়া ওখানে এসে দাঁড়াল। তবে কিছু বললো না। মাহীন রায়েদকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘কি হলো বসো না।’
রাবিত অধৈর্য্য হয়ে বলল, ‘আরেহ ভাই বসো না। আমি আর কতক্ষণ দাঁড়ায় থাকবো তোমাকে ধরে?’
রায়েদ বলল, ‘তোকে কে বলসে আমাকে ধরে দাঁড়ায় থাকতে।’
নায়েল বলল,’ও ভাবছে তুমি বোধহয় চলে যেতে পারো। বসে পরো।’
এসিসিয়া আবার মাঝখান দিয়ে বলল, ‘হ্যা বসো এখানেই।’ লিম, মাহীন, নায়েল, রাবিত ও রায়েদ পাঁচজনই এসিসিয়ার কথায় অবাক হলো। কারণ ও কখনোই ওদের অংশ ছিলোই না। এবং অন্যদের তুলনায় মাহীনের বন্ধুরা রায়েদকে কিছুটা অন্যরকম ভাবেই দেখে ইদানীং কালের ঘটনাগুলোর জন্য। তবে এসিসিয়ার সেসব না জেনেও স্বাভাবিক আচরণ করছে যা অবাক হওয়ার মতো বিষয়। অগত্যা রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে এখানেই বসতে বাধ্য হলো। বাকি যারা ইতোমধ্যে বসে গিয়েছে ওরা রায়েদকে দেখে বিচলিত না হয়ে বরং ওকে হাসি মুখে গ্রিট করলো। লিম জু গিয়ে জেনেটের পাশে থাকা খালি জায়গায় বসে পরলো। মাহীন নায়েলের সঙ্গে কথা বলছিল তখনই বিল সেখানে এসে দাঁড়াল। বিলকে দেখে রাবিত হাসি মুখে বলল, ‘হেই ক্যাপ্টেন!’
বিলও হাসি মুখে বলল, ‘হেই র্যবিট!’ বলে মাহীনের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘হ্যালো সানসাইন।’
‘হ্যালো বিল’। প্রতুত্তরে বলল মাহীন।
বিল আরোও কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তখনই এসিসিয়া বলল, ‘বিল তুমি এখানে কি করে?’
বিল বলল,’ওহ হ্যা ওটাই বলতে এসেছি। তুমি কি আমাদের সাথে বসছো না এখানে?’
এসিসিয়া বলল,’নেভার মাইন্ড আমি এখানেই বসবো।’
মাহীন সহ রাবিত ও নায়েলও অবাক হয়ে চাইলো এসিসিয়ার দিকে। এই মেয়েটা শুধু অবাক করে দিচ্ছে পদে পদে। বিল বলল,’অলরাইট।’
তখনই রাবিত বলল, ‘বাই দ্যা ওয়ে ক্যাপ্টেন আজ তুমিও আমাদের সাথেই বসো।’
বিল ইতস্তত হেসে বলল, ‘না তা কি করে হয়। আমি তো এখানে তোমাদের কাউকে সেভাবে চিনিই না।’
র্যবিট বলল, ‘কোনো কথা বললা এটা? আমাকে চেনো না তুমি? তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড আছে। আর মাহীনকে তো বোধহয় চেনো। আর..বলতে বলতে থেমে গেলো।’
এসিসিয়া বলল,’থাক না। ও বাকি বন্ধুদের সাথে বসুক।’ বিল এসিসিয়ার কথায় সায় দিতেই যাচ্ছিল তখন নায়েল বলল, ‘না যখন আসছোই একদিন বসো আমাদের সাথে।’ মাহীন নায়েলকে বলল, ‘আচ্ছা তো আমি বসছি গিয়ে।’ নায়েল সায় জানিয়ে মাথা নাড়ল। মাহীন ওপাশে ঘুরে দাঁড়াল। একদিকে লেক্সি মাঝে তিনজনের বসার মতো জায়গা খালি এবং এদিকে রায়েদ। যেহেতু লেক্সিকে মাহীন চেনেই না তাই ওর পাশে বসতে চাইল না। কাজেই রায়েদের পাশেই বসে পরল। লেক্সির পাশে রাবিত বসলো তারপর নায়েল। এখনো বিল ও এসিসিয়া দাঁড়িয়ে ছিলো। মাহীন ভাবছে, ওফ দয়া করে এসিসিয়া জেনো আমার পাশে বসে। বিল যেনো আমার পাশে না বসে। আমি কোনো দুই শত্রুর চিপায় পড়তে চাই না। সিয়া যাই হোক যেমন হোক আমার পাশেই বসুক। রায়েদ বলল, ‘কি ব্যাপার তুমি খাবার ফেলে রেখে এত কি চিন্তা ভাবনা করছো?’
মাহীন চমকে উঠল। বলল, ‘ওহ কিছু না।’ তারপর ও স্যান্ডউইচটা হাতে নিয়ে এক কামড় বসালো। তখনই বিল ও এসিসিয়া ঘুরে দাঁড়িয়েছে বসার জন্য। এসিসিয়া অপর পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। বিল মাহীনের পাশেই বসতে যাচ্ছিল। সিয়া কিছুটা মৃদু স্বরে বলল, ‘আমি ওখানে বসছি। তুমি এপাশে বসো। ওখানে যে রায়েদ আছে দেখো না।’
বিল বলল, ‘তো কি হয়েছে ওকে আমি ভয় পাই নাকি।’
সিয়া বিলকে ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে মাহীনের পাশে এসে ধপ করে বসে পরলো। মাহীন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বিল বসতেই সিয়া তীব্রভাবে বলল, ‘তুমি ওকে ভয় পাও আর না পাও এখানে ঝামেলা করে সকলের মন মেজাজ খারাপ করে দিও না।’ বিল কিছুই বললো না। উল্টো দিকে মাহীনের একদম সামনা সামনি বসেছে সাইলোহ। সাইলোহ অত্যন্ত হতাশাজনক দৃষ্টিতে মাহীনের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথমত রায়েদ সাইলোর একজন অপছন্দের মানুষ। তার মধ্যে এসিসিয়া সেই তালিকায় আপাতত যুক্ত হয়েছে। এবং এই দুইজন মানুষের মাঝেই মাহীন বসে আছে। মাহীন আর কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের খাওয়ার দিকে মন দিলো।
.
.
খাওয়া দাওয়ার পর শুরু হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাট। খাওয়া দাওয়া হয়েছে ওয়ান টাইম কাপ ও প্লেট ব্যবহার করে। সেসব একটা মস্ত কালো পলিথিনে অর্থাৎ গার্বেজ ব্যাগে ফেলে দিয়ে আসতে লাগল সকলে। বড় টেবিলগুলো পরিষ্কার করতে লেগে গেলো সকলে মিলে। এরপর সকলে শুয়ে পরবে। কাজেই অন্যরা নিজের নিজের তাঁবুতে শোয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত। অনেকেই তাঁবুর আশেপাশে পোকামাকড় প্রতিরোধক স্প্রে করছে। এই জঙ্গলের মাঝে পোকামাকড় থাকাই স্বাভাবিক। বড় টেবিলের ওপর বেশ অনেকগুলো ফ্ল্যাশলাইট রাখা হয়েছে। যতক্ষণ না সকলে নিজ নিজ তাঁবুতে ঢুকে পরছে ততক্ষণ পর্যন্ত টিচাররা কড়া পাহাড়া দিচ্ছেন যেন কোনো দিক দিয়ে কেউ আবার ফ্ল্যাশলাইট নিয়ে বনে টনে ঘুরে বেড়াতে না চলে যায়। এই বয়সের ছেলেমেয়েদের অধিক কৌতূহলের বশে এমন কোনো কাজ করে ফেলা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আরকানসাসে এই মৌসুমে সাধারণত তাপমাত্রা তেইশ থেকে সাতাশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা নামা করে। তবে রাতে আরোও কমে যায়। এই মুহূর্তে তাপমাত্রা উনিশ ডিগ্রির কাছাকাছি অবস্থান করছে। এখনো বেশ কথা বলার শব্দে চারিদিক কলরব মুখর। তবুও ক্রমেই পরিবেশটা বেশ নিরব হয়ে আসছে। পরিষ্কার আকাশে ধূয়ো ধূয়ো মেঘের আড়াল থেকে উকি দেয় টিমটিমে রুপোলী তাঁরা। চারিদিকে জ্বালিয়ে রাখা বেশিরভাগ লাইটগুলো টিচাররা নিভিয়ে দিলেন। শুধু অল্প কয়েকটা জ্বলে রইল। রায়েদ ও রাবিত শুয়ে পরেছে। লেক্সি ইতোমধ্যে ঘুমিয়েও পরেছে। চারিদিকে নিরবতা বলে রাবিত মৃদু কন্ঠে বলল, ‘ভাই।’
রায়েদ চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল। উত্তর দিলো না।
রাবিত আবারও ডাকল। এবার রায়েদ বিরক্ত কন্ঠে বলল,’কি হলো? কি সমস্যা? ডাকছিস কেন?’
র্যবিট একটু নড়েচড়ে শুলো। ইতস্তত করে টার্কিশ ভাষায় বলল, ‘না মানে দেখছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পরেছো নাকি।’ তারপর একটু থেমে বলল, ‘বাই দ্যা ওয়ে তুমিই বলো ওখানে বসে কি তোমার খারাপ লেগেছে? সকলেই তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছিল। আর মাহীন তো তোমার পাশেই ছিলো।’
‘রায়েদ সোজা হয়ে শুয়ে বলল,’ওহ হ্যা সবই ঠিক ছিলো। কিন্তু তোর কি দরকার ছিলো বিলকে ওখানে টেনে আনার?’
‘আরেহ ও আমার ক্যাপ্টেন তাই যখন ওখান পর্যন্ত খাওয়া দাওয়ার সময় এসেছে তখন তো এটুকু বলতেই হয় তাই না।’
‘কাজের সময় তো তোর কখনো মেহমানদারীর কথা মনে থাকে না।’
‘ওহ হ্যা একটা কথা তো তোমাকে বলতেই ভুলে গিয়েছি।’
‘কথা কাটানোর জন্য তোর কত কি মনে পরে।’
‘আরেহ না সত্যি একটা কথা তোমাকে বলা হয়নি যদি আমি নিজেই গত সপ্তাহে জানতে পেরেছি।’ তারপর একটু থেমে আবার বলল, ‘গত সপ্তাহে বিল জানিয়েছিল, আমাদের টিমের কেউ ম্যাচফিক্সিং করেছে।’
রায়েদ চমকে উঠে বলল, ‘কি! ম্যাচফিক্সিং হয়েছে? কে করেছে?’
রাবিত শান্ত কন্ঠে বলল, ‘হ্যা ভাই। তবে কে করেছে এটা জানি না আমরা এখনো।’
‘কি আশ্চর্য একটা ব্যাপার। কিন্তু বিল এটা কিভাবে জানলো?’
‘মাহীনের কাছ থেকে।’
‘হোয়াট? মাহীন? মানে মাহীন সবকিছুর খবরই রাখে। কিন্তু ওই বা এটা কিভাবে জানলো?’
‘ওহ এটা জিজ্ঞেস করতে ভুলে গিয়েছি।’
‘আমি বুঝলাম না মাহীন এইসব খবর পায় কোথা থেকে।’ নিজেকেই যেন প্রশ্নটা করলো রায়েদ।
‘তুমি ওকেই জিজ্ঞেস করো।’
‘নাহ তাহলে ওর মাথায় প্রশ্ন আসবে না যে আমি কিভাবে জানলাম।’
‘আরেহ ভাই। বিলকে ও এটা বলেছে কারণ বিল টিমের ক্যাপ্টেন। এবং বিল আমাকে বলেছে কারণ আমি টিমের বিশ্বাসী সদস্য। এবং আমি তোমাকে এটা বলতেই পারি কারণ তুমি আমার ভাই। সিম্পল।’
‘হুম সে যা হোক মাহীনের সকলের সাথেই দেখি যোগাযোগ আছে।’
তারপর থেমে আবার বলল, ‘আর এটা তো খেয়াল করেছো যে গত দুইমাস ধরে দজ্জাল মনিটর আর কারো সাথে ঝামেলা করেনি।’
‘হ্যা তা তো খেয়াল করেছিই। তবে হঠাৎ করে ওর সুমতি হলো কিভাবে এটা এখনো বুঝলাম না।’
‘মাহীনের কল্যাণে।’
‘মনে তো হচ্ছে পরবর্তী ভোটে জো বাইডেন যদি হেঁড়ে যায় সেটাতেও মাহীনের ভূমিকা থাকবে।’
রাবিত হেসে উঠল। বলল, ‘আসলে হয়েছে কি একদম প্রথন দিন। মানে যেইদিন মাত্র মাহীন এডমিশনের জন্য এসেছিল সেইদিনই মনিটরকে স্মোকিং করতে ধরেছে। আই মিন দূর থেকে। সেইটা আবার মাহীন ওকে না চিনেও ভিডিও করেছে। এবং ওটা দিয়েই ব্ল্যাকমেইল করে মনিটরকে দমায় রাখসে।’
রায়েদ ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে থেকে অবিশ্বাস্যের স্বরে বলল, ‘আর ইউ সিরিয়াস? ও কি ভেবে এইসব করে বেড়ায়।’
‘দেখো ওই যে একটা থিওরি আছে না, সমগ্র ভির যেদিকে যায়, সেদিকে না যেয়ে নিজের পথে চলো। না এমোনি কিছু একটা..রায়েদ মাঝখান দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘তুই ভেড়া ওয়ালা কাহীনির কথা বলছিস? যেখানে এক ভেড়াকে দেখা দেখি গোটা পাল তার পেছন পেছন পাহাড় থেকে লাফ দিয়েছিল?’
‘অনেকটা সেরকমই তবে এটা অন্য ভির। ভেড়া ওয়ালা না। তো বলছিলাম যে মেজোরিটি অফ পিপল যেই ভাবে চিন্তা ভাবনা করে মাহীনের ব্রেন একটা হোল এনাদার লেভেলেই চলে।’
রায়েদ মুচকি হেসে বলল, ‘এটা একদম ঠিক বলেছিস।’
দূরে কোথাও থেকে শিয়ালের ডাক শোনা গেল। রাবিত লাফ দিয়ে উঠে বসল। রায়েদ বলল, ‘কিরে বাবা তুই শিয়ালকে ভয় পাস? এখানে আলো জ্বলছে, এখানে আসবে না। শুয়ে পর।’
রাবিত দ্বিধান্বিত কন্ঠে বলল, ‘কিন্তু…রায়েদ মাঝখান দিয়ে বলল, ‘কিন্তু কিছু না। শুয়ে পর। এমনিতেই কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।’
রাবিত আর কিছু না বলে আবার শুয়ে পরল। তবে আবার কোনো ডাক শোনার অপেক্ষায় কান খারা করে রইল।
চলবে ইনশাআল্লাহ।
#এল_এ_ডেইস
পর্ব ২৫
লেখনী মাহীরা ফারহীন
পরিষ্কার নীল আকাশের পর্দায় গুচ্ছ গুচ্ছ রসগোল্লার মতো মেঘগুলোকে ঠেলে ঠেলে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে বাতাস। কাছেপিঠেই মাউমেল নদীর পানিও আপন গতীতে বয়ে চলেছে। চারিদিকের
বন-বনালি সবুজ সতেজ ও ঝলমলে। নরম, মোলায়েম টিয়ে রঙের ঘাসের চাদর ঢাকা মাঠ রোদের পরশে হালকা হলদে হলদে দেখাচ্ছে। চারিদিকে অচেনা গাছের ভিরে একদিকে সারি সারি তেকোনা টুপির মতো লম্বা লম্বা পাইন গাছ। আড়াল থেকে ইচ্ছেমতো গান গাইছে নাইটিংগেল। সে আবার সুরেলা গানের মাঝে ক্রক্রক্র কর্কশ শব্দ করছে, আবার সুরেলা গান ধরছে। বেশ কয়েক ডজন ছেলে মেয়েরা সবুজ ঘাস মারিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে, বসছে, কথা বলছে, হৈ-হুল্লোড় করছে। অনেকেই বড় ভিডিও ক্যামেরা দিয়ে চারিপাশের প্রকৃতি, পরিবেশ ও নিজেদের হইচইয়ের ভিডিও করছে। অল্প কিছুক্ষণ পূর্বেই একদল ছেলেমেয়ে বাসে করে নিকটস্থ ছোট শহর ‘লিটল রকে’ গিয়েছে মাছ ধরার জিনিস পত্র কিনে আনতে। সাইলোহ, জেনেট, র্যবিট, লেক্সি ও লিও গিয়েছে সাথে আরোও অনেকেই গিয়েছে। মাহীন একবার ‘লিটল রকে’ যেতে চায়। তবে এই সময় ঘুম থেকে উঠেই ওর কোথাও যেতে ইচ্ছে করেনি। মাহীন, নায়েল, ক্যারোট ও লিম জু একসাথে বসে কথা বলছে ও ওয়ালনাট খাচ্ছে। মাহীন ওয়ালনাটের খোসা ছাড়াতেই হিমশিম খাচ্ছে। পারছে না। পারবে কিভাবে কখনো করেনি যে। নায়েল খুব সহজেই খোসাটা ছাড়িয়ে ফেলছে। লিম জু প্রসন্ন কন্ঠে বলল, ‘আমরা একটা মজার পদ্ধতিতে ওয়ালনাটের খোসা ছাড়াতাম।’
‘কিভাবে?’ আগ্রহী চিত্তে বলল মাহীন।
‘আমার দাদি সবসময় এক ঝুড়ি ওয়ালনাট নিয়ে কোনো একটা দরজার সামনে বসতেন। এবং দরজার চিপায় ওয়ালনাট রেখে দরজা একটু চাপালেই মট করে খোসাটা ভেঙ্গে যেত।’
ক্যারোট উৎসাহের সঙ্গে বলল,’ওয়াও ইন্টারেস্টিং তো। আমার দাদি ছোট বেলা থেকে আমাকে চাবি দিয়ে ওয়ালনাট খোলা শিখিয়েছেন। দুই খোসার মধ্যস্থ স্থানে চাবি গেঁথে কোনো একদিকে চাপ দিলেই মট করে খোসা ভেঙে যায়।’
মাহীন হতাশ কন্ঠে বলল, ‘বাংলাদেশে তো সেভাবে ওয়ালনাট পাওয়াই যায় না। তাই আমার খাওয়ারই অভিজ্ঞতা নেই আর এত ধরনের খোসা ছাড়ানোর পদ্ধতিও জানা তো দূরের কথা।’
নায়েল হালকা হেসে বলল, ‘স্কুলের একেকজন শিক্ষার্থী একেকটা পদ্ধতিতে ওয়ালনাটের খোসা ছাড়ায়। এসব একত্রিত করে ‘এক হাজার একটা ওয়ালনাটের খোসা ছাড়ানোর পদ্ধতি’ নামে বই লেখা যাবে। মানুষের অনেক উপকারে আসবে।’ বাকি তিনজন হেসে উঠল।
লিম জু বলল, ‘আমার দাদি ওয়ালনাট দিয়ে একটা ট্রেডিশনাল চাইনিজ স্যুপ বানাতেন। এটার নাম ‘হুপ টুল উও।আমার অসম্ভব পছন্দ ছিলো সেটা।’
‘নায়েল জিজ্ঞেস করল, ‘এখন বানান না?’
‘লিম ম্লান কন্ঠে বলল, ‘উনি এখন বেঁচে নেই।’
‘আই এম সরি।’ বলল নায়েল। মাহীন ও ক্যারোটও একই কথা বললো।
সকলে চুপ হয়ে গিয়েছে দেখে লিম ক্যারোটকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আচ্ছা ক্যারোট তুমি কখনো পেরু গিয়েছো?’
‘না। পেরু এবং আমার প্রাচীন বংশ সম্বন্ধে যত যা কিছু জানি সবই আমার দাদির মুখে শোনা।’
এবার লিম মাহীনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ব্যংলাডেশেই তো পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত আছে। তুমি গিয়েছো?’
‘অবশ্যই। অনেক বার গিয়েছি।’ প্রসন্ন মুখে বলল মাহীন।
নায়েল বলল, ‘তোমাদের কার কি সবচেয়ে বড় স্বপ্ন?’
লিম সবার আগে বলল, ‘আমার পুরনো এবং প্রাচীন জিনিসপত্র খুব ভালো লাগে ছোট বেলা থেকে। তাই আপাতত আর্কিওলজিস্ট হতে চাই।’
মাহীন বলল, ‘আমার তো সাইকোলজি ভালো লাগে। মানুষের ব্রেইন খুবই জটিল একটা জিনিস সেসব নিয়ে জানতেই ভালো লাগে। তাই আমি সাইকোলজি নিয়ে পড়ব। আর তুমি?’ নায়েলকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল।
নায়েল বলল, ‘আমি হিইউম্যান রিসোর্স নিয়ে পড়তে পারি। তবে আমার ইচ্ছা মিউজিশিয়ানস হওয়া।’
ক্যারোট উদ্ভাসিতমুখে বললো, ‘ওহ ওয়াও। কখনো তো গান শোনালেনা আমাদের।’
নায়েল মুচকি হাসল বলল, ‘তুমি আগে তোমারটা বলো।’
ক্যারোট বলল, ‘এমনি তো আমি ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চাই। বাট আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন এটা বললে ভুল হবে। আমার দাদির খুব ইচ্ছা, বেঁচে থাকতে আর একবার নিজের জন্মভূমি পেরুতে যাবে। এবং এটাই করবো। তাকে পেরু নিয়ে যাবে।’
মাহীন বলল, ‘আশা করি তোমার ইচ্ছা পুরণ হোক।’ আশেপাশে প্রায় অনেকেই বসে বসে নিজেদের মধ্যে গল্প করছে বা কথা বলছিল। তাই আশেপাশে খুব বেশি হইচই হচ্ছিল না। কিন্তু এখন সেই বড় গেটের ওপাশ থেকে মনে হলো এক হইচইপূর্ণ দল এদিকে ধেয়ে আসছে।
মাহীন উৎকন্ঠিত গলায় বলল, ‘ওরা বোধহয় আসছে!’
ক্যারোট উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, ‘হ্যা চলো উঠি।’ ওরা সকলে উঠে দাঁড়াল। সকলের কানেই হইচইয়ের শব্দ এসেছে। কাজেই এখানেও সকলের মাঝে হইচই পরে গেল। সকলে ব্যস্ত হয়ে উঠিল। অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যে মাছ ধরার জিনিস পত্র নিয়ে একদল ছেলে মেয়ে গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। ওদের সাথে একজন টিচার ও একজন এসিসট্যান্ট গিয়েছিল। ওদের বাসের ড্রাইভারই ওদের টিচারদের এসিস্ট্যান্ট।
বাকি চারজন টিচার এখানেই ছিলেন বাকিদের খেয়াল রাখার জন্য। সাইলোহ,জেনেট,লিও ভেতরে ঢুকেই নিজেদের তাঁবুর দিকে এগিয়ে গেল। এসিসিয়া এতক্ষণ কাছেপিঠে ছিলো না। বোধহয় নিজের বান্ধবীদের সাথে বসে ছিলো। সকলে যখন একজায়গায় এসেছে তখন আবার এখানে এসে উপস্থিত হলো। রাবিত ও লেক্সি প্রথমে নিজেদের ক্যাম্পে নিজেদের বাকি জিনিসপত্র গুলো রেছে আসে। শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো নিয়ে মাহীনদের ক্যাম্পে এসে যোগ দিল। ওরা বাকিদের সাথেই মাছ ধরতে যাবে। টিচাররাও সকলে জিনিসপত্র ঠিক করে প্রস্তুত হচ্ছেন। মাহীন হাঁটতে হাঁটতে রায়েদের ক্যাম্পের দিকে এগিয়ে গেল।মাহীন কয়েকটা তাঁবু পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল। রায়েদ একটা টুলে বসে ওর বরশীর সুতা ঠিক করছিল। মাহীন ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই মুখ তুলে চাইল। মাহীনই প্রথমে বলল,’গুনায়দান!’
রায়েদ মুচকি হাসল। বলল, ‘সানা দে গুনায়দান।’
মাহীন প্রসন্ন হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি আমাদের সাথে ফিশিং করতে আসছো না?’
রায়েদ বলল, ‘আসছি। তুমি মনে হয় ভেবেছিলা আমি আসবো না।’
মাহীন শ্রাগ করে বলল, ‘তাও অস্বাভাবিক কিছু না।’
রায়েদ নিজে বরশীটা ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়েছে। ওখানে একটা বাক্স মাটিতে রাখা ছিলো যার মধ্যে শখানেক কেঁচো। মাহীন বলল, ‘তুমি মাছ ধরতে পারো নিশ্চয়ই?’
রায়েদ বলল, ‘উম অনেক আগে ফিসিং করতাম। এখন অনেকদিন আর করা হয়নি।’
মাহীন বলল,’ওয়েল তোমার সবকিছুই অনেক দিন ধরে করা হয়নি। বাট এখন শুরু করতে হবে।’
‘এটা কোনো লাইফের নিউ বিগিনিং টাইপের ‘এরা’ বুঝি?’ ভ্রু উঁচুিয়ে বলল রায়েদ।
‘চাইলেই হতে পারে।’
রায়েদ এক হাতে বরশী নিয়েছে এবং আরেক হাতে সেই কেঁচো ভরা বাক্সটা নিয়েছে। ওরা দুজন তাবুগুলো পাশ কাটিয়ে হেঁটে আসছিলো। টিচারদের পেছন পেছন একে একে সকলে বনের ভেতর একটা মেঠোপথ ধরে যাওয়া শুরু করেছে। মাহীনের তাঁবুর সামনে ওর বরশী রাখা ছিল। মাহীন সেগুলো তুলে নেওয়ার সময় সেখানে লিম জু ও নায়েলও দাঁড়িয়ে ছিলো। নায়েল জিজ্ঞেস করল,’তুমি কি রায়েদের সাথেই যাচ্ছো।’
মাহীন তাড়াহুড়ে করে নিজের বরশী ‘স্ন্যাপ, সুইভেল এবং লুর’ গুলো তুলে নিতে নিতে বলল, ‘হ্যা।’
তারপর দ্রুত গতিতে রায়েদের দিকে এগিয়ে গেল। মাহীন একটু পেছনে পরে গিয়েছিলো। আবারও দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে রায়েদের পাশাপাশি হাঁটতে লাগল। রায়েদ বলল, ‘ওহ তো তুমি আমার সাথেই যাচ্ছো।’
মাহীন বলল, ‘অবশ্যই। আমি শুধু আমার বরশীটা আনতে ভুলে গিয়েছিলাম।’ কথাটা শুনে মনটা আপনাআপনি আনন্দিত হয়ে উঠল। যেন মাহীনের সাথে যেতে পারাটা খুবই ভাগ্যের বিষয়। ওরা বনের মধ্যে প্রবেশ করেছে। ওদের থেকে কয়েক গজ সামনে থেকে ছেলে মেয়েরা এগিয়ে চলেছে। মাউমেল নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছে সকলে। রাস্তার দুইপাশে গা ঘেঁষে গাছপালা। আবার সরু পথের দুপাশে গাছের গোঁড়ায় চাপাচাপি করে বেড়ে উঠেছে ঝাঁকড়া ঝোপঝাড়। কোনো কোনো ঝাড়ে বনু হলুদ ফুল ফুটে রয়েছে। বনের মাঝে বেশ কিছু ওক এবং হোয়াইট উড সিডার গাছকে চেনা গেল। নাম হোয়াইট উড সিডার হলেও গাছ সেই অন্যান্য গাছের মতোই দেখতে। এছাড়া বেশির ভাগ গাছই অচেনা। পথের মাঝে কখনো কখনো ডাল পালা এসে পরছে। আশেপাশে গাছের আড়াল থেকে বিভিন্ন পাখি এবং ছোট খাটো প্রাণীদের ডাকার শব্দ আসছে।
হঠাৎ কোনো এক ডাল থেকে অন্য ডালে লাফিয়ে চলে যাচ্ছে দুষ্টু কাঠবিড়ালি। মেঠোপথ ভরা শুকনো পাতা। হাঁটার সাথে সাথে সেগুলো পায়ের তলায় পরে মড়মড় করে উঠছে। রায়েদ বলল,
‘তো তুমি মাছ ধরতে পারো?’
মাহীন ইতস্তত হেসে বলল, ‘না। আমি জীবনে কখনো কাউকে মাছ ধরতেও দেখিনি।’
রায়েদ চোখ ভরা বিস্ময় নিয়ে ওর দিকে তাকাল। অবাক স্বরে বলল, ‘আর ইউ সিরিয়াস? রিয়েলি তুমি কখনোই মাছ ধরা দেখোইনি?’
‘আই মিন। মাছ ধরা দেখেছি বাট সামনাসামনি নয়।’
‘ওহ ওটাই আমি জিজ্ঞেস করছিলাম। তো আজকে দেখো। সকলেই সেখানে মাছ ধরবে।’
মাহীন বলল, ‘ইয়াহ ফিসিং অনেক দক্ষতা এবং শিখার জিনিস। তুমি কার কাছ থেকে মাছ ধরা শিখেছো?’
‘আমার বাবার কাছ থেকে। আমি এবং রাবিত দুইজনই।’
‘তো অনেক আগে যখন তুমি মাছ ধরতে যেতা তখন নিশ্চয়ই তোমার বাবার সাথেই যেতা?’
‘হ্যা। বাবা আমাকে এবং রাবিতকে নিয়ে সম্পূর্ণ দিনের জন্য ছুটি নিয়ে বিশেষভাবে মাছ ধরতেই যেতেন। সেই দিনগুলো পিকনিকের মতোই গিয়েছে।’
এখন আর আগের মতো ওর বাবার সাথে রাবিতকে নিয়ে মাছ ধরতে ওরা যায় না কেন প্রশ্নটা করতে খুব ইচ্ছে করলেও মাহীন এমন কোনো প্রশ্ন করলো না। বলল,’তো আমাকে কোনো ঘটনা বলো?’
‘কিসের?’
‘এই যে মাছ ধরতে যাওয়ার। কারণ আমি যতদূর জানি আমি আজ পর্যন্ত যেখানে যেখানে গিয়েছি সেখানেই কাউকে বলা মতো ঘটনা ঘটেছে। অন্তত আমার সাথে ঘটে।’
রায়েদ ভেবে বলল, ‘উম…আসলে আমার ঘটনা তো আছে বাট এর বদলে তোমাকেও তোমার কোনো স্বরণীয় কাহিনী আমাকে বলতে হবে।’ ওরা এখনো সেই একই রকম মেঠোপথ ধরেই হাঁটছে। বেশ কয়েকবার পথটা বাক নিয়েছে। ওদের পেছনে আরোও অনেকেই সারি বেঁধে আসছে। হঠাৎ আশেপাশে এক ঝাঁক পাখি কিচিরমিচির শব্দ করে উড়ে গেল।
মাহীন বলল, ‘ঘটনা তো আছে শতসহস্র কিন্তু বেশির ভাগই ইমব্যারেসিং। সেইসবের জন্য মা আমাকে বকাই দিয়েছে সুতরাং বুঝে নাও কি ধরনের ঘটনা।’
‘স্কুলে আসার পর থেকে তুমি যা যা করেছো সেগুলো শুনলেও আন্টি তোমাকে বকাই দেবেন। সুতরাং আমি বুঝে নিয়েছি কি ধরনের ঘটনা।’ বলে প্রসন্ন মুখে মাহীনের দিকে চাইল। অবশেষে মাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আগে তোমার ঘটনা তো বলো। তারপর আমারটা আমি বলবো।’
রায়েদ ইতস্তত করে বলল, ‘আচ্ছা তো এটা প্রায় ছয় সাত বছর আগের ঘটনা। তখন সবসময়ের মতোই আমি এবং বাবা এবং রাবিত মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। তখন আমরা জর্জিয়ায় গিয়েছিলাম কিছুূদিনের জন্য। তো মাছটা আমরা দুইভাই ধরছিলাম। বাবা রাবিতকে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন এবং আমি ছিপ পানিতে ফেলে বসে অপেক্ষা করছিলাম।’
মাহীন খুবই আগ্রহের সঙ্গে ওর বলা প্রতিটা শব্দ শুনছে। রায়েদ বলে গেল, ‘তো এমন সময় অবশ্যই হঠাৎ করেই ছিপে টান পরেছে। মনে হয়েছিলো খুবই বড় কোনো মাছ আটকা পরেছে। এখন আমি বোধহয় আধা ঘুমিয়েই পরেছিলাম যে হঠাৎ করে যখন ছিপে টান পরলো আমি চমকে উঠেছিলাম। এবং একদম পাড়ে বসেছিলাম বলে টান না সামলাতে পেরে বরশী নিয়ে পানিতে পরে গিয়েছি। তারপরও সুতা ছাড়ছিলাম না। পরে বাবা পানি তে নেমে আমাকে উদ্ধার করেছিলেন।’
মাহীন শব্দ করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতেই বলল,
‘পরে সেই মাছ আর ধরতে পেরেছিলা?’
রায়েদ হেসে বলল, ‘না সেটা হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল। এবং তার পরপরই আমরা ফিরে আসি। ভিজে গিয়েছিলাম যে। তারপর একটু থেমে আবার বলল, ‘হ্যা এবার তোমার কাহিনী বলো।’
মাহীন মুচকি হেসে বলতে শুরু করলো, ‘তো আমি একবার পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। শেষ।’
রায়েদ বলল,’মাহীন!’
‘আচ্ছা ঠিক আছে। বলছি ঠিকঠাক। তো এটা তখনকার ঘটনা যখন আমি থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম। প্রায় ছয় বছর আগের কথা। তো হয়েছে কি আমি বিচে ঘুরতে গিয়েছিলাম এবং আমার স্যান্ডেল ঢেউয়ের সাথে ভেসে গিয়েছিল। এখন আমি ভাবছিলাম যে আমার স্যান্ডেলটা নেওয়াই লাগবে। তো ওখানেই একজন স্পিডবোট নিয়ে রওনা দিচ্ছিল দেখে আমি ফট করে উঠে পরেছিলাম। প্রথমে সে খেয়াল করেনি, বোট ছেড়ে দেওয়ার পর খেয়াল করেছে।’
রায়েদ হেসে উঠে বলল, ‘তারপর তুমি ফিরে এসেছিলা কিভাবে?’
মাহীন হাসতে হাসতে বলল, ‘আসলে মা-বাবা তখনই আমাকে খেয়াল করেছিল। এমনকি ভাই বলে যে আমি নাকি চিৎকার করে বলেছিলাম, চিন্তা করো না, আমি স্যন্ডেল নিয়েই আবার চলে আসব। পরে লাইফগার্ড সিগনাল দিয়েছিল এবং যার বোটে উঠেছিলাম সে আবার বোট ঘুরিয়ে ফিরে এসেছিল।’
রায়েদ হাসিহাসি মুখে বলল, ‘ওফ তুমি পারোও বটে।’ মেঠোপথ থেকে প্রায় বেরিয়েই এসেছে ওরা। কাছাকাছি নদীর পানি বয়ে যাওয়ার কলকল ধ্বনি শোনা যায়। বেশ তীব্র ভাবেই শোনা যাচ্ছে শব্দটা।
আরোও কিছুক্ষণ হাঁটার পর ওরা নদীর পারে এসে থামলো। নদীর পার বেশ চওড়া। প্রায় তিন চার গজ পর্যন্ত শুধু ঘাসে ঢাকা সমতল ভূমি। ঘাসের রঙ হলদে টিয়া। সামনে মাউমেল নদীর পানি সবুজের মাঝে মেটে রঙের বা আরোও সহজ ভাবে অনেকটা সিদ্ধ জলপাই রঙা। নদীটা লম্বালম্বিভাবে বয়ে চলেছে। চওড়ায় এপাশ থেকে অপর পাশের দূরত্ব হবে পনেরো গজের মতো। নদীর অপর পারের ঘন বন যেন ধেয়ে আসতে চাইছে এদিকে। সকলে ইতোমধ্যে নিজের বরশী হাতে নিয়ে নিয়েছে।
সাইলোহ, জেনেট, র্যবিট,ক্যারোট এবং এসিসিয়া নদীর ধারে হাটতে হাটতে আরেকটু সামনে এগিয়ে এসেছে। ওরা এখানেই নিজের জিনিস পত্র প্রস্তুত করল। রাবিত প্রথমে নিজের ন্স্যাপের সাথে লুর নিয়ে গিট দিল। ক্যারোট দেখে বলল,’এ্যই তোমার গিট দেওয়া তো ঠিকঠাক হয়নি।’
রাবিত গম্ভীরমুখে ওর দিকে তাকিয়ে ভারি কন্ঠে বলল, ‘ওহ তাই? তো তুমি ঠিকঠাক তোমারটা দাও। এটা আমার বাবা শিখিয়েছিলেন। সুতরাং এটা ভুল হতে পারেনা।’
ক্যারোট মুখ বাঁকা করে বললো, ‘তোমার বাবা ঠিকই শিখিয়েছিলেন। তুমিই একজায়গায় ভুল করছো। পরে তোমার টোপ ছুটে গেলে বুঝো মজা।’
তখনই মাহীন ও রায়েদ হাঁটতে হাঁটতে সেখানে পৌঁছালো। রাবিত উঠে দাঁড়িয়ে রায়েদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘ভাই দেখো তো আমার গিটটা ঠিকঠাক হয়নি?’
রায়েদ দেখেই ভ্রু কুঞ্চিত করল। বলল, ‘তুই সুতা পেঁচায়পুঁচায় কি করেছিস এটা? এটা কোনো গিট হলো?’
ক্যারোট হেসে উঠল। রাবিত গোমড়া মুখে বললো,
‘ধুর, আমি ভুলে গেছি তাহলে। দেখায় দাও না।’ মাহীন বলল,’আমাকেও।’ রায়েদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
সাইলোহ ন্স্যাপের সঙ্গে সুইভেল লাগিয়ে টোপ তৈরি করছে। ন্স্যাপ এবং সুইভেল দুটোই এক ধরনের মাছ ধরার হুক। জেনেট নিজের বরশীটা বারিয়ে দিয়ে বলল,
‘আমাকেও টোপ তৈরি করে দাও না। আমি পারি না।’
সাইলোহ বিরক্ত হয়ে বলল, ‘লিও কে বলো না।’
‘আরেহ লিও এবং নায়েলের সুতা একসাথে প্যাঁচ লেগে গিয়েছে। এখন ওরা ওটা নিয়েই বসে আছে।’ মুখ গোঁজ করে বলল জ্যানেট।
সাইলোহ ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘এরা করে টা কি? দুইনজের সুতা একসাথে কিভাবে প্যাঁচ লাগতে পারে?’ তখনই এসিসিয়া সাইলোর পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল। মিনমিন করে বলল, ‘একচুয়েলি আমিও টোপ তৈরি করতে পারি না।’
সাইলোহ চোখ বড় করে কিছুটা উচ্চস্বরে বলল, ‘ওয়াট দ্যা হেল! আমাকে তোমরা পাইসো টা কি? ফ্রি বেইট মেকিং মেশিন?’
জেনেট অনুনয়ের স্বরে বলল, ‘সাইলোহ রাগ করছো কেন? আমরা তো এখানে ফান করতেই আসছি তাই না?’
এসিসিয়া দুই হাত তুলে ধরে বলল, ‘দেখো আমি আমার মেনিকিওর করা নখও কেটে ফেলেছি।’ সাইলোহ ও জেনেট অবাক হয়ে তাকাল। আসলেই এসিসিয়া নিজের নখ কেটে ফেলেছে। সাইলোহ বিড়বিড় করে বলল, ‘ওর এত সুমিত কিভাবে হলো?’ আরোও বেশ কিছুক্ষণ পর সকলের টোপ তৈরি করা হলো। লিও ও নায়েলের সুতাও ছাড়ানো সম্ভব হয়নি বলে ওরা সুতা কাটতে বাধ্য হয়েছে। এবং নতুন করে টোপ তৈরি করেছে। সকলে এখন চুপচাপ পানিতে ছিপ ফেলে অপেক্ষা করছে। লিওর পাশে জেনেট,ওর পাশে নায়েল, সাইলোহ, এসিসিয়া, লিম জু, ক্যারোট এরপর মাহীন এবং তারপর রায়েদ। রায়েদের পাশে আবার র্যবিট ও লেক্সি আছে। মাঝে মাঝে কারো টোপে টান পরছে এবং ছোট ছোট মাছ ধরা পরছে। কারোও বেলায় আবার মাঝারি আকারের বা আরেকটু বড় মাছ ধরা পরছে। সকলেই বসে বসে একে অপরের সাথে গল্প করছে। মাহীন কখনো রায়েদের সঙ্গে কথা বলছে তো কখনো ক্যারোটের সাথে। রায়েদ হঠাৎ জিজ্ঞেস করল,
‘আচ্ছা আমাদের বাস্কেটবল টিমের কেউ ম্যাচফিক্সিং করেছে এটা তুমি কিভাবে জানলা?’
মাহীন বিস্মিত দৃষ্টিতে রায়েদের দিকে তাকাল। বলল,
‘তুমি কিভাবে জানলে?’
‘রাবিতের কাছ থেকে। সে যাই হোক, তুমি বলো এটা তুমি জানলা কি করে?’
‘ওহ। আমি যেদিন স্কুলে প্রথম এসেছি সেইদিনই
জানতে পেরেছি।’
‘তুমি প্রথম দিনই এসে এমন কি করেছো?’
‘আসলে ওইযে আমাদের স্কুলের সিক্রেট ট্রি টা। ওখান থেকে একটা চিরকুটে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কনফেশন পেয়েছিলাম। এবং ওটা কিছুদিনের মধ্যেই রাখা হয়েছে এটা মনে হওয়ার কারণ চিরকুটের ভাজগুলো একদম নতুন ছিলো।’
রায়েদ বলল, ‘এবং তুমি কোনো সিক্রেট রাখো নি?’
‘না। আমার তো তেমন রাখার মতো কোনো সিক্রেট নেই।’
‘তাই নাকি।’
‘আর তুমি সিক্রেট ট্রিতে কোনো চিরকুট রাখোনি? বা কখনো নাও নি?’
‘প্রায় সময়েই স্কুল ছুটির পরও আমি থেকে যাই। তখন হাঁটতে হাঁটতে ওদিকে যাওয়া হলে চিরকুট নেই। তবে প্রায় সময়ই রাবিতের কনফেশনই হাতে পরে। এমন সব ঘটনা ঘটায় আর কি বলবো।’
‘হ্যা। আমি যখন চিরকুট নিয়েছিলাম নায়েলও এটাই বলেছিল। র্যবিটকে নাকি কয়েকদিন পরপরই গাছে চিরকুট ঝুলাতে দেখা যায়।’ র্যবিট রায়েদের অপর পাশ থেকে বলল, ‘আমাকে কিছু বলছো?’
‘নাহ তোকে কেউ কিছু বলেনি।’ বলল রায়েদ।
মাহীন বলল,’আর তোমার সিক্রেট? তুমি কখনো কোনো চিরকুট রাখোনি?’
‘রেখেছি একবার। তবে সেটা অনেক আগের কথা। হয়তোবা দেড় দুই বছর আগে।’
মাহীন বলল,’ওহ যদিও গাছটা একটা ইন্টারেস্টিং জিনিস। তবে আর কখনো কোনো চিরকুট নেওয়াই হয়নি।’
‘তাই। মানে তুমি ওই একটাই চিরকুট নিয়েছো এখন পর্যন্ত?’
‘না ওটার সাথেই আরেকটা নিয়েছিলাম। তবে ওটা একটু অদ্ভুত ছিলো। একটা রহস্যময় কনফেশন ছিলো আরকি।’
‘মানে? কি লেখা ছিলো?’ মাহীন চিরকুটটার কথা ভাবতে লাগলো। সেটা গুছিয়ে বলাটাও একটা ব্যাপার। ভাবুক হয়ে বসে আছে তখনই মাহীনের বরশীতে টান পরল। এবং ও চমকে উঠলো। মনে হলো রায়েদের বলা ঘটনার মতো এই বুঝি পানিতে পরে যায় পরে যায়। তবে এমন কিছু হলো না। ওর বরশীর হ্যান্ডেল দ্রুত গতিতে ঘুরেই চলেছে এবং সুতা ছেড়ে যাচ্ছে। রায়েদ উত্তেজিত কন্ঠে বলল, ‘তাড়াতাড়ি ধরো হ্যান্ডেলটা।’
মাহীন হ্যান্ডেল ধরে উল্টো ঘুরাতে লাগল দ্রুত গতিতে।ও উঠে দাঁড়িয়েছে। বরশীটা তিরতির করে কাঁপছে এবং ছিপটা এদিকওদিক ছোটাছুটি করছে। সুতা টানতে টানতে কিছুটা কাছে এনেছে। তারপর ক্যারোট ওকে সাহায্য করলো পুরো ছিপ পর্যন্ত তুলে আনতে। ছিপটা উপরে তুলে আনতেই দেখা গেল একটা নয় দশ ইঞ্চি ব্রুক ট্রাউট মাছ। ওটা কাঁটায় আটকে ছটফট করছিল। মাছটার পেটের অংশটা লালচে এবং সারা শরীর কালচে রঙের। তার ওপর ক্ষুদ্র হোলদে ছোপ ছোপ দাগ। রায়েদ ওটা তাড়াতাড়ি ছাড়িয়ে বাকেটে রাখল। মাহীন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর উৎফুল্ল কন্ঠে বলল, ‘আহ অবশেষে আমি মাছ ধরতে পেরেছি!’ মাহীনকে হাসতে দেখে রায়েদ মনে মনে ভাবলো, মাহীনের হাসিটাও কি সুন্দর। ওকে আরো বেশি করে হাসা উচিৎ।’
আরোও বেশ কিছুক্ষণের মধ্যে অনেকেই কয়েকটা করে মাছ ধরে ফেললো। এসিসিয়ার তিনবার টোপ ছুটে গেল। তারপরও তিন ঘন্টা বসে থাকার পর দুটো মাছ ধরতে পেরেছে যদিও একটা ক্যারোট ওকে সাহায্য করেছে ধরতে। তাতেই ওর শান্তি। মাছ ধরার সমাপ্তি টানলো ওরা সাড়ে বারোটার দিকে। সকলে এখন ছিপ তুলে নিয়ে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ।