#এক_বরষায় [৪২]
লেখনীতে- জেরিন আক্তার নিপা
__________
ধারাকে ছাতা দিয়ে মুনতাসীর বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফিরে। ঘরে ফিরেই হাঁচি দিতে শুরু করে দিল। মাতিম ভাইয়ের অপেক্ষায় বসে ছিল। মুনতাসীরকে এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে দেখে বলল,
-ধারা আপুদের বাড়িতে যাওনি? কথা হয়নি ধারা আপুর সাথে? আমি জানতাম, ভাই তুমি এত ভীতু কেন? এটুকু সাহস নেই তোমার? ফিরে এলে কেন? আবার যাও।”
মাতিম ভাইয়ের উপর সত্যিই হতাশ। মুনতাসীর চোখ পাকিয়ে মাতিমের দিকে তাকাল। এতে মাতিম ভয় পেল না। সে বলেই যাচ্ছে,
-বুক ভরা সাহস দিয়ে তোমাকে পাঠালাম। তুমি কী করলে? না ভাই, আমি সত্যিই আর তোমাকে ভাই পরি…
মুনতাসীর ধমক দিয়ে মাতিমকে থামিয়ে দিল।
-চুপ কর।”
ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে থেকে ফ্লোর ভিজে যাচ্ছিল। মুনতাসীর ওয়াশরুম থেকে চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলো। মাথা মুছতে মুছতেও কয়েকবার হাঁচি দিল।
-রাতে ওই বাড়ি যাব। ধারার সাথে যেটুকু কথা বলার ছিল বলে এসেছি। এবার চাচাকে গিয়ে বলব, চাচা আমার বউকে আমি নিতে এসেছি। আপনি আমাকে জামাই হিসেবে গ্রহণ করে নিন।”
মাতিম বিশ্বাস করতে পারল না। অবিশ্বাস্য গলায় বলল,
-সত্যি যাবে?”
-তোর মনে হচ্ছে আমি তোর সাথে মজা করছি?”
মাতিম দাঁত বের করে হেসে বলল,
-না।”
মুনতাসীর মনে মনে ভাবছে, জেসমিন একটা কথা ঠিকই বলে। দুনিয়ায় ভালো মানুষের ভাত নেই। জোর করে ভালোবাসা হয়না ভেবে বসে থাকলে ধারা কোনোদিনও তার হবে না। শরিফুল চাচা সব জেনেও অন্য ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে চাচ্ছে। চাচাকে ভালো করে বলবে। তারপরও না মানলে অন্য পথ ধরবে। কোনোভাবেই যদি বিয়ে আটকানো না যায় তাহলে মাতিমের বুদ্ধিই কাজে লাগাবে। দরকার পড়লে ধারাকে তুলে এনে বিয়ে করবে।
****
জেসমিন বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছে। বলা যায় বৃষ্টিতে ভেজার অনুমতি না পেয়ে বসে বসে বৃষ্টি গিলছে। আতিফ তার সাথেই বসে আছে। জেসমিন লক্ষ করেছে কোন কারণে আতিফের মন খারাপ। কিন্তু অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরও আতিফ তাকে কিছু বলেনি।
-আতিইফা শোন।”
-হুম।”
-কয়টা ঘুমের ঔষধ খেলে মানুষ মরে যাবে?”
এমন প্রশ্ন শুনে আতিফ নড়েচড়ে বসল। জেসমিন তা লক্ষ করেও আতিফকে আরও কনফিউশনে ফেলে দিতে ইচ্ছে করল।
-এসব কথা কেন জানতে চাচ্ছ?”
-বল না তুই। কয়টা খেলে মরে যাবে?”
-আমি জানি না। খাইনি কখনও।”
-দূর গাধা! তোকে খেতে বলেছে কে৷ কয়টা ঔষধ খেলে টানা দুই দিন ঘুমিয়ে কাটাবে। কিন্তু মরবে না।”
-আমি জানি না বলেছি তো।”
-দূর তুই কিছুই জানিস না।”
-তোমারও এসব জানতে হবে না।”
-হবে। দরকার আছে। আচ্ছা তুই আমাকে পাঁচটা ঘুমের ঔষধ জোগাড় করে এনে দিতে পারবি?”
আতিফ আর শান্ত থাকতে পারছে না। জেসমিন আপুর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কোন দুঃখে ঘুমের ঔষধ খেতে যাবে সে?
-কেন? কী হয়েছে তোমার? তুমি ঘুমের ঔষধ খাবে কেন? কে তোমাকে কী বলেছে আমাকে বলো। আমি মুখ ফাটিয়ে দিয়ে আসব।”
জেসমিন খিলখিল করে হাসতে লাগল। গাধাটা ভয় পেয়েছে দেখা যাচ্ছে।
-দূর আমি খাব না। একজনকে খাওয়াবো। তবে মারার উদ্দেশ্যে না। ওর ভালো করার উদ্দেশ্যে। অন্তত দুই দিন ঘুমিয়ে কাটাতে হবে। নইলে তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”
-আমি পারব না। প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেউ তোমার কাছে ঘুমের ঔষধ বেচবে না। এভাবে কিনতে গেলে উল্টো ঝাড়ি দিয়ে বাড়ি পাঠাবে।”
-হুম। সেটাই তো সমস্যা। কিন্তু যেভাবেই হোক, যেখান থেকেই হোক। আমার দশটা ঘুমের ঔষধ লাগবেই লাগবে।”
******
রাতে ধারাদের বাড়িতে আসার আগেই মুনতাসীর জ্বরে পড়ে গেল। গা কাঁপানো জ্বর। মাতিম ভাইয়ের মাথার পাশে বসে ওর সেবা করছে। ঘরে যত গরম কাপড় ছিল সব মুনতাসীরের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। তবুও দাঁতে দাঁতে বাড়ি খাচ্ছে। মাতিম ভেবে পাচ্ছে না সে কী করবে। বৃষ্টি থামছে না। নইলে ডাক্তার আনতে যেত। মাতিম মুনতাসীরকে ডাকছে,
-ভাই, ভাই তোমার কি খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে? এখনও শীত লাগছে?”
মাতিমের নিজেকে অসহায় লাগছে। কান্না পাচ্ছে। বাবা মারা যাওয়ার সময়ও তার সাথে কেউ ছিল না। বাবার এই কষ্টের সময় সে বাবার পাশে একাই ছিল। আজও তার পাশে কেউ নেই। ভাইয়ের জন্য সে কী করতে পারবে?
রাত দশটার পরও বৃষ্টি থামার নাম নিচ্ছে না। মাতিম মুনতাসীরের কপালে জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। মুনতাসীরের হুঁশ নেই। এভাবে সারারাত ভাইয়ের পাশে বসে কাটিয়ে দিল মাতিম। ভোর হবার পর তার চোখ লেগে এসেছিল। তখন মুনতাসীরের নড়াচড়ার শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে যায়।
-ভাই তুমি ঠিক আছো? এখন কেমন লাগছে? জ্বর কমেছে?”
মাতিম মুনতাসীরের কপালে হাত দিয়ে দেখল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মুনতাসীরের পাশে বসে পড়ল।
-রাতে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি। ঘরে একটা থার্মোমিটারও নেই। বৃষ্টির জন্য ডাক্তার আনতে যেতে পারিনি।”
মুনতাসীর মাতিমের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝল সারারাত ঘুমায়নি পাগলটা। দুর্বল হেসে সে বলল,
-এত ঘাবড়ে যাবার কী আছে? আমি তোকে একা ফেলে কোথাও যাব না। সামান্য জ্বরই তো হয়েছে।”
মাতিম অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। তার গলার কাছে কোনোকিছু দলা পাকাচ্ছে। এক ভাই ছাড়া পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই। ভাইকে সে কতটা ভালোবাসে তা হয়তো কোনোদিনও বলতে পারবে না।
*****
জেসমিন ধারাকে ধরে বেঁধে দর্জির দোকানে নিয়ে যাবার জন্য বাড়ি থেকে বের করে এনেছে। হলুদের শাড়ির সাথে পরার জন্য ব্লাউজ নেই। বানাতে দিয়েছিল। এখন আনতে যাচ্ছে। আসলে দর্জির দোকানে যাওয়াটা উছিলা মাত্র। ওই দিকেই তো মুনতাসীর ভাইয়ের বাসা। যাবার পথে যেভাবেই হোক আপুকে নিয়ে মুনতাসীর ভাইয়ের ওখানে উঠতে। পরিকল্পনা মতোই জেসমিন মুনতাসীরের বাসার সামনের রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। ধারা কপাল কুঁচকে বলল,
-এখানে দাঁড়ালি কেন?”
মুনতাসীর ভাইয়ের বাসায় যাবার আগে কোন পরিকল্পনাই ছিল না। হঠাৎ মনে পড়ল এমন ভাবে জেসমিন বলল,
-মুনতাসীর ভাই তো এদিকেই থাকে। ওর..
জেসমিন কথা শেষ করার আগেই ধারা তীক্ষ্ণ গলায় বলল,
-একদম না। আমি তাহলে বাড়ি চলে যাব।”
-আরে বেশি দেরি করব না। ভেতরেও যাব। কসম। তোমাকে উপরে উঠতে হবে না। তুমি নিচে দাঁড়িয়ে থাকবে। আমি শুধু মুনতাসীর ভাইয়ের সাথে দরকারী একটা কথা বলেই চলে আসব।”
-তোর দরকারী কথা পরে এসে বলবি। এখন যে কাজে এসেছিস সেটা কর।”
-আবার আসব নাকি আজব! বলেছি তো তোমাকে যেতে হবে না। এমন করো কেন তুমি উনার সাথে? দুই দিন পরে তো বিয়েই হয়ে যাবে।”
জেসমিন ধারার হাত ধরে টানতে টানতে ওকে নিয়ে এলো। ধারার রাগকে পাত্তা দিল না। ধারা বেশি রেগে গিয়ে জেসমিনের পিঠে দুইটা চড় দিল। তবুও জেসমিন হাত ছাড়ল না। সিঁড়ির কয়েক ধাপ পেরুতেই মাতিম সামনে পড়ল। জেসমিন অপ্রস্তুত হলেও আজ তার কিছু করার নেই। মাতিম ওদের দেখে দাঁড়াল। ধারাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-কেমন আছো ধারা আপু?”
ধারা এতক্ষণ ছুটাছুটির চেষ্টা করলেও এবার শান্ত হয়ে দাঁড়াল। মুখে মৃদু হাসি টেনে বলল,
-ভালো। কোথাও যাচ্ছ নাকি?”
-হ্যাঁ। ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছি। রাত থেকে ভাইয়ার ভীষণ জ্বর।”
ধারার কোন প্রতিক্রিয়া হবার আগেই জেসমিন উত্তেজিত গলায় বলল,
-এ মা! সেকি, কাল না আমরা একসাথে কলেজ থেকে ফিরলাম।”
মাতিম আড়চোখে ধারাকে দেখে বলল,
-বিকালে বাইরে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ফিরেছিল।”
এবার ধারার অনুশোচনা হলো। ঠিক অনুশোচনা না, রাগ হলো। জোর করে তাকে ছাতাটা কেন দিতে গেল? বাহাদুরি করে নিজে ভিজে এসে এখন জ্বরে পড়েছে। এজন্য মোটেও ধারা দায়ী না। তবুও তার মনটা কেমন করতে লাগল। মাতিম ওদের ঘরে গিয়ে বসতে বলল। ভাইয়ের জ্বর এখনও ছাড়েনি। দ্রুত ডাক্তার ডাকা দরকার।
-তোমরা ঘরে গিয়ে বসো। আমি ফেরা পর্যন্ত যেও না। ভাইকে একা রেখে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না। এখনও ভীষণ জ্বর।”
ধারা না করে ফেলার আগেই জেসমিন বলে উঠল,
-ঠিক আছে।”
মাতিম দুই সিঁড়ি নামলে কী মনে করে জেসমিন পেছন থেকে ডেকে উঠল,
-দাঁড়ান।” দ্রুত পায়ে দুই সিঁড়ি নেমে দাঁড়াল জেসমিন। বলল,
-আপনি একা তো ডাক্তারের ঘর চিনবেন না। এলাকায় নতুন এসেছেন। আমিও যাচ্ছি আপনার সাথে।”
মাতিম ভ্রু কুঁচকে ফেলল। সে কি ছোট বাচ্চা? একা চিনবে না মানে কী? মাতিম কঠিন মুখে বলল,
-আপনার যেতে হবে না।”
জেসমিন চলে গেলে ধারাকে একা মুনতাসীরের কাছে থাকতে হবে। ওরা না ফেরা পর্যন্ত একেকটা সেকেন্ড এক যুগ হয়ে দাঁড়াবে। জেসমিন থাকলেও পরিস্থিতি ততটা অস্বস্তিকর রূপ নিবে না। তাই ধারাও বলল,
-তোর যেতে হবে না। মাতিম চিনবে।”
ছেলেটা কি গাধা? নাকি বোকা? বোকা গাধার কম্বিনেশন। সামান্য একটা চালাকি বুঝতে পারছে না কেন? সে থাকলে মুনতাসীর ভাই ধারা আপুকে কীভাবে মনের কথাগুলো বলবে? বেচারা মনে মনে আপুকে পছন্দ করে। মনের কথা বলার শেষ সুযোগটা করে দিতে চাচ্ছে সে। কিন্তু এই গাধা ছেলে তার সব চাল ভেস্তে দিতে চাচ্ছে। জেসমিন চোখ পাকিয়ে মাতিমের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-একা চিনবেন না আপনি।” জেসমিনের চোখ টিপা দেখে মাতিম হয়তো আন্দাজ করে নিয়েছে। জেসমিন চোখে ইশারা করে বারবার বোঝাতে চাচ্ছে গাধাটা যেন বুঝে। মাতিমও হঠাৎ বলতে লাগল,
-হ্-হ্যাঁ সত্যিই একা চিনব না।”
জেসমিন ধারার দিকে চেয়ে দাঁত বের করে বলল,
-দেখলে তো, বলেছি না চিনবে না। আমরা যাব আর আসব। তুমি একটু ভেতরে গিয়ে বসো।”
তার বোন বেঁকে বসার আগে জেসমিন তাড়াহুড়োয় মাতিমের হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল। মাতিম হতবুদ্ধি হলেও জেসমিন ব্যাপারটা খেয়ালই করল না। তাড়া দিতে দিতে বলতে লাগল,
-চলুন চলুন। তাড়াতাড়ি আসুন।”
ধারা হতভম্ব হয়ে সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে রইল। জেসমিনের চাল সে খুব ভালো করেই বুঝেছে। ইচ্ছে করে ওকে ফেলে রেখে গেছে। এক আকাশ সমান বিরক্তি এসে ধারার মাঝে ভীড় করল। এখান থেকে বাড়ি ফিরে যেতে পারবে সে। কিন্তু অসুস্থ একটা মানুষকে একা ফেলে যাবার মতো নির্দয় হতে পারবে সে? বিবেক বলেও তো একটা জিনিস আছে।
******
রাস্তায় নেমে জেসমিন খুশিতে স্বস্তির একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিল। মাতিম আলগোছে তার হাত ছাড়িয়ে নিল। জেসমিনের তখনও হেলদোল হলো না। যুদ্ধ জয় করে ফেরার মতো খুশি তার চোখে মুখে। মাতিম ওকে দেখেও কিছু বলল না। জেসমিন নিজেই বলল,
-আহ! এদের মেলাতে কতকিছু করতে হচ্ছে।”
মাতিম প্রশ্নবিদ্ধ চোখে ওর দিকে দেখল। তার মানে মাতিম যা ভেবেছিল তা-ই। জেসমিনও চায় ভাইয়ের সাথে ধারা আপুর কিছু হোক। জেসমিন এগিয়ে গিয়ে লক্ষ করল। মাতিম পিছিয়ে পড়েছে। এদিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে জেসমিন বলল,
-আপনার মাথায় কি ঘিলু-টিলু নেই। তখন অবুঝ বাচ্চাদের মতো করছিলেন কেন? এইযে আমি এত চোখে ইশারা করছি তাও বুঝে না।”
মাতিম হাঁটার গতি বাড়িয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-মানুষের শয়তানি বুদ্ধি বোঝার মতো ঘিলু মনে হয় নেই।”
জেসমিন মুখ বাঁকিয়ে বলল,
-শয়তানি বুদ্ধির কী দেখলেন হ্যাঁ? মানুষের উপকার করা সোওয়াবের কাজ। আমি সেই সোওয়াবটা করছি। নিজের আপন ভাইয়ের প্রতি তো দেখছি কোনো মায়া দয়া নেই। কেমন ভাই কে জানে!”
শেষের কথাগুলো মাতিম শুনলেও। জেসমিন তাকে সরাসরি না বলে নিচু গলায় নিজেকেই বলছে। তাই মাতিম প্রতিবাদ করতে পারল না। কিন্তু মেয়েটার কথাবার্তায় সে ভীষণ বিরক্ত হলো। মেয়ে মানুষ এত চঞ্চল থাকবে কেন? মেয়েমানুষ হবে নরম সরম কোমল প্রকৃতির। কিন্তু এই মেয়ে তার সম্পূর্ণ ভিন্ন। একদম উড়নচণ্ডী।
চলবে_
#এক_বরষায় [৪৩]
জেরিন আক্তার নিপা
_________
ধারা দোটানায় পড়ে সিঁড়িতেই কতক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। বাকি সিঁড়ি উঠে যাওয়ার মতো শক্তি পায়ে পাচ্ছে না। সেই মানুষটার সামনে গিয়ে দাঁড়ানো তার কাছে সেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করে নেওয়ার মতোই। কারণ যতক্ষণ সে মানুষটার সামনে থাকে তার দম আটকে থাকে। নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে যায়। অনেকটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ধারা কাঁপা পায়ে বাকি সিঁড়ি গুলো উঠে এলো। দরজার সামনে এসেও অনেকক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। শেষে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে বড় বড় করে কয়েকবার দম নিল।
মুনতাসীরের গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। সে পানি খাওয়ার জন্য বিছানা থেকে উঠে টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালছিল। দরজায় কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মনে করল মাতিম হয়তো ফিরে এসেছে। একটু আগেই না গেল। এত তাড়াতাড়ি চলে এসেছে? মুনতাসীর পেছন ফিরে না দেখেই মাতিমের উদ্দেশ্যে বলল,
-এসেছিস? এত জলদি আসবি ভাবিনি।”
ধারার পা ওখানেই আটকে গেল। পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে তার। প্রতি বারের মতো এবারও ধারা দম টানতে ভুলে গেল। তার আসার অপেক্ষায় ছিল মানুষটা? সে আসবে এটা কীভাবে জানতো! সে তো এখানে জেসমিনের জোড়াজুড়িতে এসেছে। নইলে কখনোই আসত না। মুনতাসীর পানি খেল। মাতিমের সাড়াশব্দ না পেয়ে পেছনে তাকাল। ধারাকে দেখে মুনতাসীর নিজেও বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। পরক্ষণে চোখের ভুল মনে কয়েক চোখ কচলালো। ধারাকে এখানে আশা করেনি সে। সত্যিই কি ধারা এসেছে? নাকি পুরোটাই তার কল্পনা মাত্র। মুনতাসীর ঘাড় কাত করে একটু উঁকি দিয়ে ধারার সাথে জেসমিন আছে কিনা দেখল। জেসমিন থাকলে এটা তার কল্পনা না। বাস্তবেই এসেছে ওরা। কিন্তু জেসমিন না এলে এটা তার কল্পনাই। কারণ ধারা একা জীবনের শেষে মুহূর্তেও তার কাছে আসবে না। জেসমিনকে না দেখে মুনতাসীর হাসল। এক দিনের জ্বর তার মাথা খারাপ করে ফেলেছে ভাবল। নইলে জেগে জেগে দিবাস্বপ্ন দেখছে কেন?
ধারা মাঝে মধ্যেই এমনভাবে তার কল্পনায় আসে। কখনও লাল শাড়িতে বধূর সাজে। কখনও খোলা চুলে বেলীফুলের মাথা গেঁথে তার হৃদয় পোড়াতে আসে। আজও এসেছে। মুনতাসীর একপা একপা করে ধারার দিকে এগিয়ে আসছে। মুনতাসীর যতই তার দিকে এগোচ্ছে ততই ধারার মনে হচ্ছে সে বুঝি এবার জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবে। মুনতাসীর ধারার সামনে এসে এক হাত দূরত্ব রেখে দাঁড়াল। ধারার মায়াভরা মুখটা দেখে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। এটা তো তার কল্পনাই। কল্পনায় সে ধারাকে ছুতে পারে। ভালোবাসার কথা বলতে পারে। ধারা বাধা দেয় না। রাগও করে না। মুনতাসীর ওদের মাঝের এক হাত দূরত্বও ঘুচিয়ে দিল। ধারার পা দু’টো মেঝের সাথে আটকে গেছে। সে পিছিয়েও যেতে পারল না। মুনতাসীর তার ডান হাতটা ধারার গালে রাখলে ধারা বুঝতে পারল মানুষটার গায়ে কতটা জ্বর নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জ্বরে পোড়া তপ্ত হাতের ছোঁয়ায় ধারার গাল পুড়ে যেতে লাগল।
-তুই আমাকে বড্ড জ্বালাস। কেন এত জ্বালাস বল তো?”
মুনতাসীরের উষ্ণ নিঃশ্বাস ধারার মুখের উপর এসে পড়তে ধারা ভেতর থেকে কেঁপে উঠল। তিরতির করে তার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। গলা দিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করতে পারছে না। মুনতাসীর ধারাকে এখনও তার কল্পনাই ভেবে যাচ্ছে। ভীষণ অভিমান মাখানো আদুরে গলায় বলতে লাগল,
-ভালোবাসি কেন বুঝিস না? কেন কষ্ট দিস? একটু ভালোবাসলে কী হয়?”
ধারা চোখ বুজে নিলে টুপ করে এক ফোঁটা গরম জল মুনতাসীরের হাতের উপর পড়ল। মুনতাসীর খুব মনোযোগ দিয়ে হাতে লেগে থাকা জলকণাটা দেখল। তারপর বলল,
-কাঁদছিস কেন তুই? তোকে কি আমি মেরেছি? বকেছি তোকে? ভালোবাসার কথা শুনেও তুই কাঁদিস। তুই এমন কেন ধারা?”
*****
পুরোটা পথ জেসমিন একটা কথাও বলেনি। মাতিমও চুপ ছিল। জেসমিন মনে মনে অনেক ভেবেছে। শেষে মাতিমের থেকে সাহায্য নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপুর বিয়ের আর দুই দিন বাকি। এখনও একটা ঘুমের ঔষধও জোগাড় হয়নি। ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর ভীড়। ওরা কয়েকজনের পেছনে পড়ল। মাতিম জেসমিনকে চেয়ারে বসতে ইশারা করল। কিন্তু জেসমিনের সেদিকে খেয়াল নেই। দাঁত দিয়ে নখ কাটতে ব্যস্ত সে। মাতিম ওকে মৃদু ঠেলা দিয়ে বলল,
-ওখানে চেয়ারে গিয়ে বসো।”
জেসমিন মাতিমের শার্টের হাতা টেনে ধরে ফিসফিস করে বলল,
-আপনার সাথে আমার কথা আছে।”
মাতিম কপালে ভাঁজ ফেলে তীক্ষ্ণ চোখে জেসমিনকে দেখল। তার সাথে কী কথা থাকতে পারে ভেবে পেল না।
-কী কথা?”
-এখানে বলা যাবে না। একটু ওদিকে আসুন।”
মাতিম এবার সত্যি সত্যিই ঘাবড়ে গেল। ওই কোণায় নিয়ে গিয়ে তার সাথে কী কথা বলতে চায় মেয়েটা।
-না। এখানেই বলো।”
জেসমিন মুখ বাঁকিয়ে বিরক্ত হয়ে মাতিমের দিকে চাইল।
-আপনি আমাকে কয়েকটা ঘুমের ঔষধ নিয়ে দিতে পারবেন?”
-মানে? ”
-টিউব লাইট নাকি আপনি? সব কথার এত মানে খুঁজেন কেন? বলেছি ডাক্তারের কাছে বলে আমাকে কয়েকটা ঘুমের ঔষধ নিয়ে দিন।”
মাতিম তার বিস্ময় লোকাতে পারল না। অবাক হওয়া গলায় বলল,
-কেন?”
-কী কেন?”
-ঘুমের ঔষধ দিয়ে তুমি কী করবে?’
-আমি খাব না। কাউকে খাইয়ে মারবোও না। ধরুন এই কাজটা আমি কারো উপকার করার জন্যই করতে চাচ্ছি। ”
-ঘুমের ঔষধ খাইয়ে কার কী উপকার করবে তুমি শুনি?”
-আমার বোনকে খাইয়ে আপনার ভাইয়ের উপকার করব।”
-মানে?”
জেসমিন নাক ফুলিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
-আরেকবার মানে মানে করলে সবার আগে আপনার মাথা ফাটাব। সহজ কথা বুঝতে পারেন না টিউব লাইট? আমি চাই না আপুর বিয়ে অন্য কারো সাথে হোক। আপুকে বলেও কোন লাভ নেই। মুনতাসীর ভাইও কিছু করতে পারবে না। তাই আমাকেই কিছু করতে হবে। আপুর হলুদের রাতে কম করে হলেও ওকে তিনটা ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিব। বিয়ের দিন সারাদিন ঘুমোবে। আর বিয়ের কনে ঘুমোলে বর এলেও লাভ নেই। তাকে বউ ছাড়াই ফিরে যেতে হবে। এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমি ঘুমের ঔষধ কিনতে গেলেই প্যাচে পড়ব। তাই আপনার সাহায্য চাচ্ছি। নিজের ভাইয়ের জন্য এটুকু করতে পারবেন নিশ্চয়।”
মাতিম হাঁ করা মুখে হতবুদ্ধি হয়ে জেসমিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মুখ দিয়ে নিঃসন্দেহে মাঝারি সাইজের একটা ইঁদুর ঢুকে যেতে পারবে। এই মেয়ের পেটে পেটে এসব চলছে! মাথা ভর্তি শয়তানী বুদ্ধি। কী সাঙ্ঘাতিক মেয়েরে বাবা! নিজের বোনের বিয়ে আটকাতে এমন একটা আইডিয়াই খুঁজে পেল! মাতিম কেশে গলা পরিষ্কার করে নিল। বলল,
-এসব কিছুই করতে হবে না।”
জেসমিন তেত উঠে বলল,
-অবশ্যই করতে হবে। আপনি আপনার ভাইকে সুখী দেখতে চান না?”
-অবশ্যই চাই। কিন্তু তা উল্টাপাল্টা কোন মাধ্যমে না।”
জেসমিন মাতিমের কথা নকল করে ভেঙিয়ে বলল,
-তাহলে সঠিক মাধ্যমটা আপনিই বলে দিন।”
-যা করার ভাই-ই করবে। তোমাকে কিছু করতে হবে না।’
-হাহ্, সে তো দেখতেই পাচ্ছি আপনার ভাই কী কী করতে পারে।”
*****
মুনতাসীর এখনও ধারাকে তার কল্পনা ভেবেই মনের সব চাপা কষ্টের কথা বলে দিচ্ছে। ধারা মুনতাসীরের জড়িয়ে আসা কথাগুলো শুনতে শুনতে নিজেও কোন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। হঠাৎ মুনতাসীর ধারাকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল। ঘটনার আকস্মিকতায় ধারা হতবিহ্বল। ধারা এটাও খেয়াল করল জ্বরে মুনতাসীরের গা পুড়ে যাচ্ছে। বেশিক্ষণ ওভাবে থাকলে সে নিজেও হয়তো পুড়ে যাবে। মানুষটা গায়ে এতটা জ্বর নিয়েও দাঁড়িয়ে আছে কীভাবে? এসব কথাগুলো বলছেই বা কীভাবে? ধারা নিজের হুঁশে ফিরে এসে মুনতাসীরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ধারার ছটফটানিতেও মুনতাসীরের বাঁধন একটুও আলগা হচ্ছে না। সে বরং আরও শক্ত করে ধারাকে পিষে ফেলতে চাচ্ছে। এদিকে ধারার দম বন্ধ হয়ে আসছে।
-তুই আমার স্বপ্নে আসিস, কল্পনায় আসিস বাস্তবে কেন আসিস না? কেন আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিস? কেন আমার ভালোবাসা, আমার অনুভূতি গুলোকে অবহেলা করিস? তোকে ভালোবাসি এটা কেন বুঝিস না ধারা? আমার এতগুলো কেন-র উত্তর কি তুই দিতে পারবি?”
ধারা দু’হাতে ঠেলে মুনতাসীরকে সরানোর চেষ্টা করছে। দরজার দিকে বারবার নজর দিচ্ছে সে। এখন মাতিম, জেসমিন এসে পড়লে কিছুই ঠিক থাকবে না। সব গণ্ডগোল হয়ে যাবে। মুনতাসীর হঠাৎ ছোট বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল,
-তুই কেন বিয়ে করছিস ধারা? তোকে অন্য কারো বউ হতে দেখার আগেই আমি মরে যাব রে। বিয়েটা করিস না তুই। আমার কতটা কষ্ট হয় তুই বুঝিস না। বোঝার চেষ্টাও করিস না। তোর মনে কি আমার জন্য একটুও জায়গা নেই? ওই নয়নেও থেকেও আমি তোর কাছে বেশি পর তাই না? আমাকে কি ভালোবাসা যায় না ধারা? একবার চেষ্টা কর না। চেষ্টা করতে ক্ষতি কি? আমি কি তোর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না? কী করলে তুই আমাকে ভালোবাসবি বল। আমি সব করব। তবুও তুই আমাকে ছেড়ে যাস না।”
বলতে বলতেই মুনতাসীর নিজের শরীরের সমস্ত ভার ধারার উপর ছেড়ে দিয়ে চুপ হয়ে গেল। ধারা টলে উঠে পড়ে যেতে নিয়েও কোনোভাবে সামনে নিল। মুনতাসীর প্রচণ্ড জ্বরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। এতক্ষণ হয়তো সে এই কথাগুলো জ্বরের ঘোরেই বলছিল। ধারা অনেক কষ্টে মুনতাসীরকে বিছানায় এনে শুইয়ে দিল। পানি এনে ওর চোখে মুখে ছিটা দিল। আশেপাশে খুঁজে ছোট একটা কাপড় নিয়ে ওটা ভিজিয়ে মুনতাসীরের মুখ, গলা, হাত মুছে দিতে লাগল।
ওরা এখনও ফিরছে না কেন? ধারা একা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। ধারা মুনতাসীরের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠল। ওর কপালে হাত রেখে অধৈর্য গলায় ডাকতে লাগল,
-মুনতাসীর ভাই, মুনতাসীর ভাই উঠুন প্লিজ। আপনার এত জ্বর তারপরও কেন বিছানা থেকে উঠতে গেলেন? কাল কেন আমাকে ছাতা দিয়ে নিজে ভিজলেন? এসব এমন করেন আপনি? এসব করে মজা পান? আপনি সবসময় আমাকে জ্বালাতে চান। এখন জ্বরে পড়েও আমাকে জ্বালানোর ফন্দি করেছেন। আপনার চিন্তায় আমাকে সবসময় অস্থির হয়ে থাকতে হবে কেন? আপনার কথাই সবসময় ভাবতে হবে কেন?”
******
বাড়ি ফিরে এসে ধারা কোনোভাবেই চোখের জল লোকাতে পারছিল না। মুনতাসীরের বলা কথাগুলো মনে করে বারবার ডুকরে কেঁদে উঠছিল। জেসমিন ফেরার পথেই লক্ষ করেছে আপুর মন খারাপ। কিন্তু কারণ জিজ্ঞেস করেনি। এখন কাঁদতে দেখে কোন হিসাবই মেলাতে পারছে না। মুনতাসীর ভাই কি আপুকে কিছু বলেছে যার জন্য আপু কাঁদছে। জেসমিন ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
-আপু কাঁদছিস কেন তুই?”
ধারা চোখ মুছে কান্না থামানোর চেষ্টা করে বলল,
-মাথাটা ভীষণ ব্যথা করছে।”
জেসমিন মনে মনে ভাবল, ইদানীং আপুর মাথা ব্যথাটা একটু বেশিই দেখা দিয়েছে। ডাক্তারের সাথে বিয়ে হবে মাথা ব্যথাও কি এটা বুঝে গেছে? এজন্যই ফিরে এসেছে আবার। জেসমিন ঠোঁটের কোণে হাসল। বিয়েটা এখন আর হচ্ছে না। ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আপু চাইলেও কবুল বলতে পারবে না।
******
মুনতাসীরের জ্বর কমে গেলে সে পিঠের নিচে বালিশ রেখে সোজা হয়ে বসল। মাতিমকে সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারছে না ধারা কি সত্যিই এসেছিল? নাকি সবই তার কল্পনা ছিল। জ্বরের ঘোরে ধারাকে কী কী বলেছে স্পষ্ট মনে নেই। কিন্তু জড়িয়ে ধারার কথাটা মনে আছে। মুনতাসীর মনে প্রাণে প্রার্থনা করছে এটা যেন তার কল্পনা হয়। নইলে ধারাকে এবার চিরতরেই হারিয়ে ফেলবে সে। ধারা কোনোদিনও তাকে ক্ষমা করবে না।
-মাতিম তুই যখন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলি তখন কি আমি একা ছিলাম?”
মাতিম ভাইয়ের প্রশ্ন বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে বলল,
-না তো। ধারা আপু আর জেসমিন এসেছিল। ধারা আপু তোমার কাছে ছিল। জেসমিনকে নিয়ে আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম।”
মুনতাসীর যা ভয় পাচ্ছিল তা-ই হয়েছে তাহলে। ওসব তার কল্পনা ছিল না। বাস্তবেই ধারাকে জড়িয়ে ধরেছে সে। আরও কী কী বলেছে কে জানে? মুনতাসীর মনে মনে ‘সর্বনাশ’ বলে চোখ বন্ধ করে নিল। পেছনের খাটে মাথা ঠেকিয়ে পড়ে রইল।
চলবে_