#অচিত্তাকর্ষক
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|১৭|
বিকেলের দিকে স্মৃতি তৈরি হয়ে নিচে নামল। বাসায় তখন তার শাশুড়ি মা ব্যতিত আর কেউ নেই। জুভানও এখন আসবে না। এই সুযোগেই তাকে বাড়ি থেকে বেরুতে হবে। জিহাদের সাথে দেখা করার এর থেকে উত্তম সুযোগ আর পাবে না সে। স্মৃতি তার শাশুড়ির রুমে গিয়ে দেখল তিনি ঘুমাচ্ছেন। স্মৃতি আর তাঁকে জাগাল না। বাইরের দারোয়ান কে বলে গেল, কেউ জিজ্ঞেস করলে সে যেন বলে স্মৃতি একটু ফার্মেসিতে গিয়েছে।
জিহাদকে একটা জায়গার ঠিকানা দিয়ে স্মৃতিও সেই জায়গার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। প্রায় বিশ মিনিট সময় নেয় তার সেখানটায় পৌঁছাতে। স্মৃতি সেখানে পৌঁছার পর কাকে যেন আবার কল করে সেখানে আসতে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে একটা বড়ো গাড়ি চলে আসে। ভেতর থেকে কিছু ছেলে বের হয়ে বলে,
‘ঐ লোকটা?’
স্মৃতি সতর্ক ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বলে,
‘হ্যাঁ, তোমরা এখানেই আপাতত দাঁড়িয়ে থাকো। আমি আগে গিয়ে কথা বলছি, তারপর ইশারা দিলে তোমরা আসবে, বুঝতে পেরেছ?’
ছেলেগুলো মাথা নাড়াল। স্মৃতি তার নিকাবটা ভালোভাবে ঠিক করে জিহাদের দিকে এগিয়ে গেল। পেছন থেকে “জিহাদ” বলে ডাকতেই সে ঘুরে তাকাল। জিহাদ চিনল না তাকে। স্মৃতি কন্ঠস্বর বদলে বলল,
‘চিনতে পারছো না? আমি ইতি।’
জিহাদ যেন খুব বেশি বিস্মিত হল। সে তার আপাদমস্তক পরখ করে বলল,
‘তুমি ইতি? তুমি আবার কবে থেকে এত নিকাব করছো?’
স্মৃতি বলল,
‘ভার্সিটি থেকে বের হবার পর থেকেই নিকাব করা শুরু করেছি। কেন, আমাকে কি এভাবে ভালো দেখাচ্ছে না?’
জিহাদ হেসে বলল,
‘না না, খুব ভালো দেখাচ্ছে। তবে একটু অন্যরকম লাগছে, চিনতে পারছি না।’
‘সমস্যা নেই, আস্তে আস্তে চিনে ফেলবে।’
জিহাদ ইতস্তত কন্ঠে বলল,
‘আচ্ছা, আমরা তো একটা রেস্টুরেন্টে ও বসতে পারতাম। এই নদীর পাড়ে কেন এলে?’
‘জায়গাটা সুন্দর। আমার পছন্দের জায়গা, তাই তোমাকে এখানে আসতে বলেছি। দেখো, চারদিক কত নিরব নিস্তব্ধ; তার মাঝে তুমি আর আমি বসে আমাদের সুখ দুঃখের কথা বলবো। এই পরিবেশটা তোমার পছন্দ হচ্ছে না বুঝি?’
জিহাদ হাসার চেষ্টা করে বলল,
‘হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে পরিবেশটা সুন্দর। আর তাছাড়া পাশে যদি সুন্দর একজন মানুষ থাকে তখন সবকিছুই সুন্দর লাগে।’
স্মৃতি হেসে হেসে বলল,
‘তাই?’
জিহাদও হেসে জবাব দেয়,
‘হ্যাঁ।’
স্মৃতি আরো কিছুক্ষণ হেসে হেসে আহ্লাদ ভরা কন্ঠে জিহাদের সাথে কথা বলে। এর মাঝে আশে পাশে তেমন কাউকেই দেখতে পায় না সে। জায়গাটা ভীষণ নিরব। এখনই তার কাজটা সেরে ফেলতে হবে। আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলোকে সে লুকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা দেয়। আর তখনই জিহাদ কিছু বুঝে উঠার আগেই ছেলেগুলো তার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তার মাঝেই স্মৃতির ভাই এসে হুট করেই তার মুখের উপর ক্লোরোফর্ম স্প্রে করে দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই জিহাদ চেতনা হারিয়ে নদীর পাড়েই ঢলে পড়ে। ছেলেগুলো তাকে তখন ধরাধরি করে গাড়িতে তুলে।
কাজ শেষে স্মৃতি তাড়াহুড়ো করে সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার মাগরিবের আযান দিয়ে দেয়। সে তড়িঘড়ি করে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ড্রয়িং রুমে শাশুড়ি মা’কে দেখতে পায়। স্মৃতি তখন হালকা হেসে বলে,
‘মা, আপনি ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন?’
মারিয়াম আহমেদ তার জবাব না দিয়ে গম্ভীর সুরে জিজ্ঞেস করেন,
‘কোথায় গিয়েছিলি?’
স্মৃতি আমতা আমতা করে বলে,
‘মা, একটু ফার্মেসিতে।’
মারিয়াম আহমেদ গর্জে উঠে বললেন,
‘মিথ্যে বলছিস কোন সাহসে?’
স্মৃতি করুন কন্ঠে বলল,
‘না মা, আমি সত্যি বলছি। এই দেখুন, স্যানিটারি ন্যাপকিন।’
তাও যেন মারিয়াম আহমেদের ঠিক বিশ্বাস হলো না। তিনি নাক মুখ ফুলিয়ে বললেন,
‘তোকে আমি বিশ্বাস করিনা। তোর জন্য আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। তোকে আমি কখনও ক্ষমা করব না, কখনও না।’
এই বলে তিনি নিজের রুমে চলে যান। স্মৃতি একপলক তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
আট’টার দিকে জুভান বাড়ি ফিরে। জুভান রুমে গিয়ে দেখে স্মৃতি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছে। জুভান গিয়ে তার পেছনে দাঁড়ায়। আয়নার উপর স্মৃতির চোখ বরাবর সোজা দৃষ্টি ফেলে বলে,
‘জারা কোথা থেকে কিডন্যাপ হয়েছিল, স্মৃতি?’
স্মৃতি কিছুটা ভ্যাবাচেকা খায়। হঠাৎ জুভান এই প্রশ্ন কেন করছে? স্মৃতি তার দিকে ঘুরে তাকিয়ে অস্ফুট সুরে বলল,
‘ঐ তো নিউমার্কেটের পেছন থেকে।’
‘মিথ্যে কেন বলছো?’
জুভানের কঠিন স্বরে স্মৃতি যেন বিহ্বল হয়ে পড়ে। তবে কি জুভান সবটা বুঝে ফেলেছে? জুভান পুনরায় বলে,
‘জারা তো কিডন্যাপ হয়েছে উত্তরের ঐ নদীর পাড় থেকে। ওর ফোনের লাস্ট লোকেশন তো তাই বলছে। কিন্তু তুমি বলছো অন্য কথা, ব্যাপার কী বলতো? আমি কেন সবটা মেলাতে পারছি না? তুমি মিথ্যে বলছো নাকি আমার বন্ধু মিথ্যে বলছে? এখন আমি কাকে বিশ্বাস করবো, বলতো?’
স্মৃতি ঢোক গিলল। জুভানকে জিজ্ঞেস করল,
‘আপনার বন্ধু কে?’
‘আমার বন্ধু একজন পুলিশ অফিসার। ওই জারার বিষয়টা দেখছে। আর ও তদন্ত করে বের করেছে যে জারা নিউ মার্কেটের পেছন থেকে কিডন্যাপ হয়নি, ও কিডন্যাপ হয়েছে নদীর পাড় থেকে। এখন বলো, তুমি মিথ্যে কেন বললে?’
‘আমি মিথ্যে বলিনি। আমার চোখের সামনে ওরা জারাকে নিয়ে গিয়েছিল। আমার মাথায় আঘাত করেছিল আর তারপর আমার আর কিছু মনে নেই। জারার ফোনের শেষ লোকেশন কেন ঐ নদীর পাড়কে ইঙ্গিত করছে সেটা আমি জানি না। বিশ্বাস করুন, আমি কোনো মিথ্যে বলছি না জুভান।’
‘ঠিক আছে, করলাম বিশ্বাস। তবে কোনোদিন যদি সেই বিশ্বাস ভাঙ্গে তবে তার ফল কিন্তু ভয়াবহ হবে, কথাটা মনে রেখো।’
জুভান ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্মৃতির ফোনে একটা কল আসে। কলটা ভালোভাবে বেজে উঠার আগেই সে জলদি গিয়ে সেটা রিসিভ করে। আর কলটা রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গেই তার ভাই বলে উঠে,
‘আপু, তোমার সন্দেহই ঠিক। এই সবকিছুর পেছনে ভাইয়ারই হাত ছিল। ভাইয়াই আমাদের জমিটা কেড়ে নিয়েছে আর ভাইয়াই আমাদের বাবাকে মেরেছে। জিহাদ সবকিছু স্বীকার করেছে আপু। ওকে আমরা অনেক মেরেছি, মরার ভয়ে শেষ পর্যন্ত ও স্বীকার করেছে সবটা।’
সবকিছু শুনে স্মৃতি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এতকিছুর পরও সে চাইছিল তার সন্দেহ যেন ভুল হয়। জুভান যেন এসবের মাঝে না থাকে। কিন্তু তা হলো না। তার চোখে সবথেকে ঘৃণ্য মানুষটা অবশেষে জুভানকেই হতে হলো। এত নির্মম কেন ভাগ্য? স্মৃতির গাল বেয়ে উষ্ণ জল গড়িয়ে পড়ে। সে ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে। এক মুহুর্তের জন্য এখন মনে হচ্ছে সব সত্য যেন আবার মিথ্যে হয়ে যায়। কিংবা মস্তিষ্ক থেকে মুছে যাক এই ভয়ানক নিত্যতা। স্মৃতি চোখ বুজে ঘনঘন নিশ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। হয়তো এবার সময় এসেছে রণাঙ্গনের।
চলবে..
#অচিত্তাকর্ষক
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
|১৮|
স্মৃতি রাতে খেল না। বাড়ির সবাই খেলেও সে আজ খাবার রুমেই পা দিল না। জুভান তাকে এই নিয়ে কোনো প্রশ্নও শুধাইনি। নিজের খাবার শেষ করে সে যথারীতি রুমে ফিরে আসে। স্মৃতি তখন বারান্দায় ছিল। আকাশে কালো মেঘ। দূরে ঢিপ ঢিপ করে কিছু তারা জ্বলজ্বল করছে। রুমে জুভানের উপস্থিতি স্মৃতি টের পেলেও সে রুমে যায় না। জুভান ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তার ফোনটা হাতে নেয়। সে একটা নাম্বারে কল লাগায়। কিন্তু নাম্বারটা বন্ধ দেখাচ্ছে। জুভান লাগাতার অনেকগুলো কল দেয় সেই নাম্বারে। কিন্তু কল রিসিভ হয়না। এই নাম্বার তো সচরাচর বন্ধ থাকে না। জুভানের কাছে সেই ব্যক্তির আরো একটা নাম্বার ছিল। সে এবার ঐ নাম্বারেই কল লাগায়। কলটা রিসিভও হয়। ওপাশ থেকে একজন মধ্যবয়সী নারীর স্বর সে শুনতে পায়। জুভান মহিলাটি কে জিহাদের কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু মহিলা তাকে বলে, জিহাদের ফোন বিকেল থেকেই বন্ধ বলছে। ওর সাথে কেউই কোনরূপ যোগাযোগ করতে পারছে না। এমনি কী সে এই মুহুর্তে কোথায় আছে সেটাও কেউ জানে না। মহিলাটি হয়তো জিহাদের মা। তার কন্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে তিনি খুব চিন্তিত। ব্যাপারটা এবার জুভানের কাছেও ভীষণ খটকা লাগে। জিহাদের আবার কী হলো। এমন আচরণ তো ও এর আগে কখনো করেনি। তার এত ভাবনার রেশ কাটে স্মৃতি কে দেখে। স্মৃতি রুমে আসে। জুভান ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে ফুলে আছে। জুভান কিছু বুঝতে পারে না। সে ফোন রেখে উঠে দাঁড়ায়। স্মৃতির কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে। স্মৃতি উত্তর দেয় না। জুভান আবারও বিরক্ত হয়ে একই প্রশ্ন করে। স্মৃতি তাকে আগের মতোই অবজ্ঞা করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। জুভানের ও আগে থেকেই মন মেজাজ খারাপ। এখন আবার স্মৃতির এমন ব্যবহারে ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে সে, কিছুটা রাগও হচ্ছে হয়তো। সে লাইট অফ করে এসে স্মৃতির পাশে শুয়ে পড়ল। মিনিট পাঁচেক অপেক্ষা করল স্মৃতির প্রত্যুত্তরের জন্য। কিন্তু স্মৃতির কাছ থেকে কোনরূপ সাড়া শব্দ না পেয়ে সে নিজেই তার কাছে এগিয়ে গিয়ে তার গলায় মুখ ডুবাল। স্মৃতির এবার আর সহ্য হলো না। জুভানের নিশ্বাসে যেন বিষ ঝরছে। এক ঝটকায় জুভানকে সরিয়ে দিল সে। ব্যাপারটা জুভান হজম করতে পারল না। সে উঠে বসে স্মৃতিকেও টেনে উঠাল। শক্ত গলায় জিজ্ঞেস করল,
‘কী হয়েছে তোমার?’
স্মৃতি বরাবরের মতোই মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। জুভান তার ডান হাতটা এবার চেপে ধরে বলল,
‘সমস্যা কী তোমার? বলবে তো কী হয়েছে, এমন ব্যাবহার কেন করছো?’
স্মৃতি তার দিকে তাকাল। তার দৃষ্টি এতটা দুরূহ ছিল যে যার কঠিনতা দেখে জুভানও চমকে যায়। স্মৃতির চাহনী তো কখনো এত কঠিন ছিল না। তার চাহনী তো ছিল সর্বদা নরম কোমল। তাহলে আজ কী এমন হলো যে সে এমন কঠিন চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে?
জুভান নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে বলল,
‘পিরিয়ড হয়েছে? পেটে ব্যাথা করছে খুব? হট ব্যাগে করে গরম পানি এনে দিব? পেটে গরম পানির সেঁক দিলে দেখবে ব্যাথাটা কিছুটা কমবে।’
‘মনে ব্যাথা করছে আমার। অনেক বেশি ব্যাথা করছে। এই ব্যাথা কী করে কমাবো বলুন? এই ব্যাথা কি গরম পানির সেঁকে কমবে? কমলে নিয়ে আসুন। আমি আর এই ব্যাথা সহ্য করতে পারছি না। প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে, বুকের ভেতরেটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। এই ব্যাথা আপনি বুঝবেন না। কী করে বুঝবেনই বা বলুন, বোঝার জন্য তো একটা মন থাকা দরকার। আর সেই মনটাই তো আপনার নেই। মনহীন পাষাণ একটা মানুষ আপনি। আপনার মতো এত পাষাণ মানুষ আমি আগে কখনো দেখিনি, কখনো না।’
এই বলে স্মৃতি আবারও পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। জুভান কিছুক্ষণ আহাম্মকের মতো চেয়ে রইল তার দিকে। স্মৃতি এইসব কথা কেন বলল তাকে। তাকে সে পাষাণ বলল? কেন বলল? সে কি তবে সব সত্যি জেনে গিয়েছে? বুঝে গিয়েছে তার বাবার জমির আসল রহস্য? তবে যদি তাই হয়, তবে জুভান ও আর লুকিয়ে কিছু করবে না এবার যা হবে খোলাখুলি হবে, সামনা সামনি হবে। সেও দেখে নিবে স্মৃতি তার সাথে কীভাবে টক্কর নিয়ে টিকে থাকে। এবার স্মৃতি জুভান আহমেদের আসল আর ভয়ানক কুৎসিত রূপটা দেখবে। সেই রূপটাই দেখবে যেটা সে দীর্ঘ পাঁচ বছর সে স্মৃতির কাছ থেকে আড়াল করে রেখেছিল…
.
সকাল বেলা স্মৃতির ঘুম ভাঙতেই দেখল তার চারপাশ একেবারে নিরব নিস্তব্ধ। যেন শতশত বছর যাবত এখানে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই। মিটমিট করে চোখ খুলে তাকিয়ে সে জায়গাটা প্রথমে চিনল না। চারদিক তো অন্ধকার। হঠাৎ কেন যেন গায়ে কাটা দিয়ে উঠল তার। এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসল। আশে পাশে অস্থির হয়ে তাকিয়ে সে বোঝার চেষ্টা করল এখন সে ঠিক কোথায় আছে। কিন্তু বুঝতে ব্যর্থ হলো। চারদিক তার নিকষ কালো। ভয়ে শরীর ঝিম ধরে গেল। কিছু বুঝতে না পেরেই সে চেঁচিয়ে উঠল। প্রথমেই মুখ থেকে জুভান নামটাই বেরিয়ে এলো তার। সে জুভান, জুভান বলে চেঁচাতে লাগল। ক্ষানিক বাদেই সেই রুমের দরজা খুলে কেউ একজন প্রবেশ করল। সেই লোকটাকে দেখা মাত্রই স্মৃতি উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগল,
‘জুভান, আমি এখানে কেন? কে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে? এটা কোন জায়গা? আমি এখানে কী করে এলাম?’
স্মৃতির এত অস্থিরতা দেখে জুভান হাসল। তার দিকে এগুতে এগুতে বলল,
‘আহা বউ, এত অস্থির হচ্ছো কেন? শান্ত হয়ে বসো তো। তোমার জন্য নাস্তা এনেছি, চলো একসাথে নাস্তা করি।’
স্মৃতি এতে উল্টো রেগে গিয়ে বলল,
‘আপনি আমাকে এখানে কেন এনেছেন জুভান?’
‘বললাম তো পরে এসব নিয়ে কথা বলবো। আগে নাস্তা করতে বসো।’
‘না, করবো না আমি নাস্তা। কিচ্ছু খাবো না আমি। আপনি আগে আমার প্রশ্নের জবাব দিন, তারপর অন্যকিছু।’
জুভান চোখ মুখ কুঁচকে কঠিন গলায় বলল,
‘রাতেও তুমি কিছু খাওনি। এখন চুপচাপ আগে খাবে তারপর আমি তোমার সব প্রশ্নের জবাব দিব। বুঝতে পেরেছ?’
ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও স্মৃতি জেদ দেখিয়ে এক পিস রুটি খেল। জুভানও খেল তার সাথে। তারপর স্মৃতি কিছু বলে উঠার আগেই সে খাবার নিয়ে আবার বাইরে চলে গেল। স্মৃতি তাকে অনেকবার ডাকল। অনেকবার দরজা ধাক্কাল। কিন্তু জুভানের কান অবধি সেই ডাক পৌঁছাল না। স্মৃতি রুমে অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করল। রুমটা অনেক বেশি অন্ধকার হওয়ায় আর আলাদা কোনো জানলা দরজা না হওয়ায় আরো বেশি কষ্ট হচ্ছিল তার। মনে হচ্ছিল দম আটকে এখনই মারা পড়বে। এখন প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে সে এই মানুষটাকে চিনতে পারছে। বুঝতে পারছে মানুষটা আসলে তেমন না যেমনটা সে প্রথমে ভেবেছিল। মানুষটা খুব খারাপ, খুব বাজে। স্মৃতি আর তার প্রতি কোনো অনুভূতি রাখতে চায় না। সে তার নিষ্প্রাণ ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিয়ে ভাবতে থাকে এবার সে কীভাবে এই মানুষটার সাথে লড়াই করবে।
চলবে…