#অপরাজিতা_২(অপরাজিতা গল্পের পরের অংশ)
#৯ম_পর্ব_শেষ_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা
কিন্তু আনান ওকে সুবহার সম্পর্কে কিছুই বলেনা। কারণ কোনো স্ত্রীই তার স্বামীর আগের ভালবাসার কথা শুনে খুশি হবে না নিশ্চয়ই! আনান রাজিতাকে বলে,
–“শান্ত হয়ে এইবার ঘুমিয়ে পড়ো৷ আমাদের লাইফে এখন সুবহা নামে কেউ নেই। শুধু তুমি আর আমি! ওকে!”
রাজিতা আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে রাজিতা ক্লাসে চলে যায়। আনানও রাজিতাদের ক্লাসে যাওয়ার জন্য বের হয়। হঠাৎ বারান্দার একপাশে কারো কথার আওয়াজ শুনে সেদিকে এগিয়ে যায়। ও দেখতে পায় যে, সিনান আর নেহা কথা বলছে। ও চলে আসতে যাবে ক্লাসে ঠিক তখনি রাজিতার নাম শুনে থমকে যায়। ও ভাবে যে, রাজিতাকে নিয়ে আবার নতুন কোনো প্ল্যান করছে নাতো! তাই একটু সাবধান হয়ে এগিয়ে যায় ওদের দিকে। সিনান বলছিলো,
–“তোর আমার সাথে রাগ ছিলো তাই না? তুই আমার ক্ষতি করতি! তুই রাজিতার সাথে এমনটা কেন করলি?”
নেহা রাগান্বিত কন্ঠে বলে,
–“তোর পাশে ওকে আমার একদম সহ্য হয়না! ভেবেছিলাম যে, ওর যখন বিয়ে হয়ে গেছে তুই আমার সাথেই বেশি থাকবি! আস্তে-আস্তে আমাকে তুই ভালবেসে ফেলবি! কিন্তু তুই সেটা না করে আমার থেকে আরো দূরে সরে গেলি!”
–“তোকে আমি আগেও বলেছি যে, আমি তোকে ভালবাসি না!”
–“আর রাজিতা? ওরতো বিয়ে হয়ে গেছে! এখনো কি তুই ওকেই ভালবাসিস?”
–“ও এখন শুধুই একটা ভালো বন্ধু! আর আমি সব সময় ওর ভালো চাই!”
–“এখন আর তোকে কিছুই চাইতে হবে না! তোর মুখও দেখতে চায়না রাজিতা!”
বলেই হনহন করে ওখান থেকে চলে যায় নেহা। আনান তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকে পড়ে। তারপর ক্লাস নিতে যায়।
ফেরার পথে আনান রাজিতার জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছিলো। রাজিতা আসতেই ওকে বলল,
–“তোমাকে কিছু কথা বলার আছে।”
রাজিতা মুখে একরাশ হাসি নিয়ে বলল,
–“হুম বলো, কি বলবে!”
আনান জানে যে, ও যেটা বলতে চাইছে সেটা বললে রাজিতার মুখের এই হাসিটা আর থাকবে না। তারপরেও সত্যটাতো জানাতেই হবে! আনান আমতা-আমতা করে বলে,
–“নেহার সাথে তোমার বন্ধুত্ব কেমন?”
রাজিতা হেসে উত্তর দিলো,
–“তুমি এখনো বুঝতে পারোনি আমাদের বন্ধুত্বের গভীরতা? এটা আবার প্রশ্ন করতে হয়!”
–“না, তারপরও একটু জানতে মন চাইলো। বলো না!”
তারপর রাজিতা ওদের বন্ধুত্বের গভীরতা সম্পর্কে আনানকে বলতে থাকে৷ এক পর্যায়ে আনান বলে,
–“ও যদি কখনো তোমার ক্ষতি চায়?”
–“তুমি এসব কেন বলছো? আরে আমার আশেপাশের অনেকেই আমার ক্ষতি করতে চায় এবং অনেকেই করেছে! তারমানে এই নয় যে, সবাই আমার শত্রু!”
–“যদি হয়?”
–“আচ্ছা তুমি কি আমার কাছ থেকে কিছু লুকোচ্ছো?”
তখন আনান নেহার সত্যটা ফাঁস করে দিয়ে ওকে কষ্ট দিতে চায়না। কিন্তু এরপর নেহা যদি আবার ওর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে! তাই ভেবে সবটা রাজিতাকে বলে দিতেই ও একদম নিরব হয়ে যায়। তারপর আস্তে-আস্তে আনানকে বলে,
–“তারমানে কেউ আমাকে আপন ভাবে না? কেন? আমি সবার কি ক্ষতি করেছি? বারবার আমি নিজের কাছেই হেরে যাই! নিজেকেই দোষী মনে হয়! আমার জন্মটাই কি সবার জন্য সমস্যা! আমি না থাকলেই কি সবার সব সমস্যা সমাধান হয়ে যেত?”
আনান ওকে সান্ত্বনা দিতে থাকে৷ আর বলে,
–“সমস্যা তুমি নও। যার যার লাইফের সমস্যা সে নিজেই! সবাই তোমাকে যেমন ধোঁকা দিচ্ছে! কষ্ট দিচ্ছে, তারাও একসময় এই কষ্টগুলো পাবে! দেখো। তখন সবাই ঠিক-ই তোমার কষ্টটা বুঝতে পারবে। আর তোমাকে যে নিজের খেয়াল রাখতে হবে। তুমি ভালো না থাকলে তোমার এতগুলো বাচ্চার দেখাশোনা কে করবে বলো!”
রাজিতা তখন খুশি হয়ে বলে,
–“ওদের স্কুলে ভর্তির ব্যাবস্থা হয়ে গেছে?”
আনান হেসে বলে,
–“হয়ে গেছে মানে! ওরাতো স্কুলে যেতে শুরু করেছে! এতক্ষণে হয়তো ফেরার সময় হয়েছে।”
রাজিতা খুশি হয়ে আনানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–“আজ যাবে না তুলি আন্টির ওখানে?”
–“তুমি চাইলে প্রতিদিন যেতে পারো! কে বাধা দেবে!”
তারপর আনান রাজিতাকে তুলি আন্টির ওখানে নিয়ে গিয়ে বাচ্চাগুলোকে দেখিয়ে বলে যে,
–“তোমার বাচ্চাগুলোকে আমি এ শহরের নামকরা একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি। কি তুমি খুশি হওনি?”
রাজিতা হাসিমুখে উত্তর দেয়,
–“ভীষণ খুশি হয়েছি! ওদের জন্য তুমি এতকিছু করছো! আর আমি খুশি হবো না? তাই কখনো হয়!”
বাচ্চাগুলো হাসিমুখে ওদের দিকে এগিয়ে আসে। প্রতিবারের মতো রাজিতা ওদের হাতে চকলেট তুলে দেয়৷ আর বাচ্চাগুলো হাসিমুখে ওকে আর আনানকে জড়িয়ে ধরে।
বাচ্চাগুলোর নতুন স্কুল ড্রেস আর বই দেখে রাজিতা অনেক খুশি হয়। ওর জীবনটা যেভাবেই কাটুক ওর জন্য হলেও এই বাচ্চাগুলোর জীবনতো ভালো কাটবে! আনানের প্রতি ওর বিশ্বাস আর ভালবাসা আরো বেড়ে যায়। বাচ্চাগুলোর মুখের হাসি ওর সব দুঃখ মুছে দেয়।
আজ নিয়ন আর তুবার বিয়ে। রিমি আর তুহিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে। রিমি পেরেছে তুহিনকে ক্ষমা করতে। তুহিনও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। আসলেই কাউকে কখনো মিথ্যে বলতে হয়না! তার পরিণতি যে অনেক খারাপ হয়! নিয়ন আর তুবার বিয়েটা সম্পন্ন হলেই রিমি আর তুহিনের বিয়েটাও তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে। তবে রিমি জানিয়েছে যে, ওর অনার্স কমপ্লিট করেই বিয়ে করবে!
কয়েক বছর পর….
রিমি আর তুহিন ওদের পাঁচ বছরের মেয়ে নিতুকে নিয়ে রাজিতাদের বাসায় ঘুরতে এসেছে। আজ ছুটির দিন বলে আনান বাসাতেই ছিলো। রাজিতা ওদের জন্য নাস্তা আনতে চলে গেলো।
রাজিতা নাস্তা নিয়ে ফিরে আসতেই ওর ছেলে রায়ান কান্না করতে-করতে ওকে বলল,
–“মামনি! দেখো নিতু আমার খেলনাগুলোর কি অবস্থা করেছে!”
এসময় নিতু ভাঙা একটা খেলনা গাড়ি হাতে নিয়ে হাজির হলো। তারপর রাজিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“ছোট খালামনি! আমি এটা ভাঙিনি! এটা রায়ান ভাইয়ার গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করেছে!”
রাজিতা নাস্তার ট্রেটা নামিয়ে নিতুকে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
–“আমি জানিতো! আমার নিতু মামনি এটা করতেই পারেনা!”
নিতু সবাইকে উদ্দেশ্য করে আধো গলায় বলল,
–“আমি কিন্তু বড় হয়ে রায়ান ভাইয়াকেই বিয়ে করব!”
ওর কথা শুনে রুমের সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। এ দেখে সাত বছরের রায়ানের কান্না আরো বেড়ে গেলো। ও নিতুর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
–“তুই আমার মামনির কোল থেকে নাম বলছি! আমি তোকে বিয়ে করলেতো! ”
কেউ কিছু বলার আগেই নিতু রাজিতার কোল থেকে বলতে লাগলো,
–“করবেনা মানে! করতেই হবে! তোমাকে বিয়ে করলে তোমার সব খেলনা তখন আমার হয়ে যাবে!”
বলেই হেসে দেয় ছোট্ট নিতু। তখন রিমি রায়ানকে নিজের পাশে বসিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,
–“ওই মেয়েকে কিছুতেই আমাদের রায়ানের বউ করবো না! আমাদের রায়ানের জন্য টুকটুকে একটা বউ নিয়ে আসবো।”
ওই ছোট্ট রায়ান কি বুঝে কি জানি! লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে যায়। তখন নিতু রাজিতার কোল থেকে নেমে রায়ানের চুল ধরে বলে,
–“আমার মায়ের কাছে কেন এসেছো? এটা শুধু আমার মা!”
সবাই মিলে রায়ানকে নিতুর থেকে ছাড়িয়ে নিতেই রায়ানের কান্না আরো বেড়ে যায়। তখন নিতু হেসে বলে,
–“রায়ান ভাইয়া একটা ক্রাই বেবি!”
ওর কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। আর রায়ান রেগে সাপের মতো ফুসতে থাকে।
এমন সময় আনান রাজিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
–“তোমার ছেলে তোমার মতোই ছিচকাঁদুনে হয়েছে!”
রাজিতাও আস্তে করে বলে,
–“আমি মোটেও ছিচকাঁদুনে না! ”
তখন রায়ান ওদের দুজনের মাঝে বসে বলে,
–“আমি কোনোদিনও নিতুকে বিয়ে করবো না কিন্তু!”
একথা শুনে পুরো রুমে হাসির রোল পড়ে যায়। যেই হাসির খুশিগুলো ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে! এ যে এক অনাবিল আনন্দ! অনাবিল শান্তি! একসাথে পথচলার প্রশান্তি!
সমাপ্ত…
(অপরাজিতার সিজন ২ লেখাটা আমার নিজের কাছেই ভালো লাগেনি৷ দুঃখিত আমি এটা আগের মতো লিখতে পারিনি৷ তাই এটা এখানেই সমাপ্তি করে দিলাম! পুরোটা পরে কেউ আমাকে গালি দিবেন না! ধৈর্য্য নিয়ে আমার লেখা গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ!)
অপরাজিতা সিজন-১ গল্পটি পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন।