#এক_আকাশ_অভিমান
#মার্জিয়া_জাহান_চাঁদনী
#পর্ব : ৭
ফ্রেস হয়ে নিচে নামলো তরী!! এমনিতেই অনেক বেলা হয়ে গেছে মেয়েটাকে খাওয়ায় নি।
ড্রয়িং রুমে বসে আছেন তাহেরা বেগম।তরী কে দেখেই মুখ ভেংচি দিলেন।
” কি ব্যাপার নবাব জাদী ? এত বেলা অবধি ঘুমাইছিলা নাকি? বাহ! তাইলে উঠলে কেনো? রান্না বান্না কি বুবু করে ? আর তুমি পায়ের উপর পা তুইল্যা ফরমাইস করো।বুবু সেসব মাইনা নিলেও আমি মানবার পারুম না। কাল সকাল থাইক্কা এইহানে নাস্তা রেডি কইরা ওই বাড়িতেও রান্না করে দিয়া আসবে। আমার বয়স হইছে এহন। ছেলের বউ রাইখা আমি ক্যান খাইট্টা মরমু।।সকালে রান্না কইরা ঘর ঝাড়ু দিবা। আমাগো সমস্ত কাপড় ধুইয়া থালা বাসন মাইজা দুপুরের রান্না করে এই বাড়িতে আসবে।বিকালে যাইয়া রাতের রান্না করে দিবা। আমার বাড়িতে এসব মহারানী সাইজা থাকা আমি পছন্দ করবো না।
তরী কিছু না বলে চুপ করে রইলো। রাবেয়া বেগম তাহেরা বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন
” তরী কেনো ওই বাড়িতে গিয়ে কাজ করে দিবে। সে আমার মেয়ে। আমার মেয়ে তোর বাড়িতে রান্না বান্না করবে না। আমি আমার মেয়েকে এই বাড়িতেও কাজ করতে দেই না। সে কাজের মেয়ে না যে তোর বাড়ির কাজ করবে। তোরা মা মেয়ে মিলে তো সামলে নিচ্ছিস ছোট!!বাচ্চা মেয়ে রেখে তরী ওই বাড়িতে কি করে যাবে?”
” শুনো বুবু! তরী এহন আমার পোলার বউ। তার দায়িত্ব ওই বাড়ির উপর।বিয়ে যহন করছে শ্বশুর বাড়ির প্রতি কর্তব্য তারে পালন করতে অইবো। শাশুড়ি হিসাবে আমি এইটুকু আশা করতেই পারি। ওর তো উচিত ছিল বিয়ার পর ওই বাড়িতেই থাকা। তোমাগো লাইগ্গা এই বাড়িতে আছে আমার পোলা সহ। অন্য মাইয়া রে আমার পোলার বউ কইরা আনলে আমার সংসার টা আগলইয়া রাখতো।তুমি আমাগো শাশুড়ি বৌমার মধ্যে কথা কইতে যাইও না। আমার পোলার বউ আমি বুঝবো। আমি চাইলে আমার পোলা ও বউ রে আমার বাড়ি নিয়া যাইতে
পারি।”
তরীকে নিয়ে যাবে শুনে ধক করে উঠলো রাবেয়া বেগমের বুক। তরী কে তিনি কিছুতেই কাছ ছাড়া করতে চান না। এই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বেচেঁ আছেন তিনি। একমাত্র ছেলের রেখে যাওয়া আমানত এই ভাবে দূরে যেতে দিবেন না।
নিজে একটু কঠোর হয়ে তাহেরা বেগম কে বললেন
” তুই ভুলে যাস না ছোট এই বিয়ের পিছনে কিছু শর্ত ছিল। তরী আর শ্রাবণ এই বাড়িতেই থাকবে। প্রয়োজন হলে তোর ছেলেকে নিয়ে যেতে পারিস কিন্তু আমার মেয়ে এখানেই থাকবে। হ্যা মাঝে মাঝে ওর শশুর বাড়িতে বেড়াতে যাবে। কিন্তু কাজ করার জন্য না। সেরকম হলে আমি তোর বাড়িতে কাজের মেয়ে রেখে দিবো সে তোর সব কাজ করে দিবে।ভুলেই আর এই কথা উচ্চারণ করিস না।নাহলে রমিজ কে বলে “আমাদের অন্য ব্যাবস্থা নিতে হবে।”
তাহেরা বেগম চুপ করে গেলেন রমিজুল সাহেবের কথা শুনে।রাবেয়া বেগম তরী কে জিজ্ঞেস করলেন
” তরী তোমার শরীল এখন কেমন আছে? বৃষ্টিতে কেনো ভিজতে গেলে মা।দেখলে ভোগান্তি টা তোমাকেই পোহাতে হলো! যাও আমি সালমাকে (কাজের মেয়ে) খাবার বেড়ে দিতে তুমি খেয়ে রেডি হয়ে নাও। শ্রাবণ তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।সকালে তোমাকে দেখতে গিয়েছিলাম তুমি তখন ঘুমিয়ে ছিলে। জ্বরের মধ্যে তোমাকে আর ডাকি নি। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও মা । তোমার শরীল খারাপ থাকলে আমার নাতনীটার শরীল খারাপ হবে।”
” আরে মা! তুমি চিন্তা করো না তো। খাবার খেয়ে একটা ওষুধ খেয়ে নিবো,দেখবা সব জর গায়েব হয়ে যাবে। রাতে কি চাঁদ তোমার কাছেই ছিল?”
” হ্যা শ্রাবণ দিয়ে গিয়েছিল।”
” খুব জ্বালিয়েছে তোমাদের তাই না? ”
” আরে না আমার নাতনি খুব শান্ত একটা মেয়ে। ঠিক যেনো এক টুকরা চাঁদের ফালি।” এক টুকরা কি আমার নাতনি তো আস্ত একটা চাঁদ।”
।
।
” কি পিচ্ছি কাল টিউশন পড়তে আসো নি কেনো ?”
অতি পরিচত কণ্ঠস্বর শুনে দরজার দিকে তাকালো রিনি।নাজুক দৃষ্টি ফেললো মানুষটার দিকে।এই মানুষটার প্রতি একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে সেটা কি সে বুঝে না।নাকি বুঝতে চায় না ?
চৌকাঠ পেরিয়ে কক্ষে প্রবেশ করতে গিয়েও করলো না শামীম। রিনি একা এই রুমে আছে একটা ছেলের প্রবেশ অনুচিত।পিচ্ছি টা অস্বস্তিতে পড়তে পারে।
” এমনিতেই যাই নি শামীম ভাই।বৃষ্টির জন্য বের হতে মন চায় নি।”
” তোর বান্ধবী তো অপেক্ষা করেছিল। একটা খবর তো দিবি? তোর জন্য কাজ রেখে অনেক্ষেন বসে ছিলাম।”
রিনি কিছু না বলে চুপ করে রইলো। রিনির নিরবতা দেখে শামীম আবার বললো:
” কি রে কথার ঝুড়ি!চুপ করে গেলি যে? এমনিতে তো মুখে খই ফোটে আর এখন তালা দিয়ে বসে আছিস যে। কিছু হয়েছে?
রিনি কিছু না বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। বিষণ্ণ তার মুখশ্রী।
” আচ্ছা শামীম ভাই, তুমি কি কাউকে ভালোবাসো?”
রিনির এহেন প্রশ্নে ভরকে গেল শামীম। নিজেকে সংযত করে বললো
” হুম বাসি তো , কোনো এক চঞ্চলা পরী কে ভালোবাসি। তার কাছে মন হারিয়েছি বহু যুগ আগে।”
বুকে এক তীব্র ব্যাথা অনুভব হলো রিনির। ভিতর টা যেনো মুচড়ে উঠেছে।শামীম কাউকে ভালোবাসে শুনে মনের ভিতর ঝর বইতে শুরু করলো।চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু আফসোস এই মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিতে হবে।
এতো দিন ধরে তিল তিল করে জমানো অনুভূতি আজ মিথ্যে হয়ে গেলো। প্রিয় মানুষটার মুখে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা শোনা হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর বিষাদ।কান্না গুলো গলায় আটকে আছে। কথা গুলোও কেমন আটকে আছে। বাইরে থেকে নিজেকে সাভাবিক রাখলেও ভিতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
আচ্ছা মন টা যে ভেঙে খন্ড বিখণ্ড হয়ে যাচ্ছে তার শব্ধ কি শামীম শুনতে পারছে না??
” ওহ! বুঝেছি। আচ্ছা শামীম ভাই আমি আজকেও পড়তে যাবো না। মাইশা কে বলে দিও আমার অপেক্ষা যেনো না করে।”
” কেনো পিচ্ছি ? হটাৎ কি হলো তোর? শরীল খারাপ নাকি?”
” উহু! কিছু হয় নি আমার।”
বলেই মুখের ওপর দরজা টা বন্ধ করে দিলো রিনি। মুখে হাত দিয়ে নিরবে অশ্রু ফেলতে লাগলো। বুক ফেটে কান্না আসছে।কিন্তু পরিস্তিতি বলে দিচ্ছে শব্দ করা বারন। ভালোবাসলে চিরকাল চাপা কান্না নিয়েই থাকতে হয়।আজ থেকেই বুঝি অভিনয়ের দিন শুরু।বুকে কষ্ট নিয়ে প্রিয় মানুষ গুলোর সামনে হাসি মুখে অভিনয় করতে হবে। নিজের অনুভূতি গুলো লুকিয়ে ভালোবাসার মানুষটার পাশে অন্য কাউকে দেখতে হবে।
দরজার ওপরে শামীম হতভম্ব হয়ে রইলো। কি হলো এটা বুঝার চেষ্টা করলো।
।
।
রান্না ঘরে মেয়ের জন্য ফিডার রেডি করছে তরী। সেই সময় হন্তদন্ত হয়ে শ্রাবণ প্রবেশ করলো রান্না ঘরে।
” তরী একটি রুমে আসো কথা আছে । ”
” আপনি যান আমি চাঁদ কে এটা খাইয়ে আসছি ।”
” তোমাকে এই মুহূর্তে আসতে হবে তরী ।”
” আমি তো বললাম এটা খাইয়ে আসবো। আপনি কি কথা বুঝেন না? ”
মাথায় আগুন ধরে গেল শ্রাবণের। তরীর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল রুমে।রাগে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে ধাক্কা দিয়ে হাত ছেড়ে দিলো। তাল সামলাতে না পেরে দেয়ালের সাথে বারি খেলো তরী। কপাল কেটে রক্ত বের হতে লাগলো কিন্তু শ্রাবণের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই….!
#চলবে ইনশা আল্লাহ…..!
#এক_আকাশ_অভিমান
#মার্জিয়া_জাহান_চাঁদনী
#পর্ব : ৮
কাটা স্থানে উড়না চেপে ধরে আছে তরী। কিন্তু শ্রাবণের সে দিকে কোনো খেয়াল নেই।রাগ তার সপ্তম আকাশে পৌঁছেছে। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছে। তরী কে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল
” একটা মানুষ আর কত নিচে নামতে পারে তোমাকে না দেখলে বুঝা যেত না। এত স্বার্থপর তুমি?
আর কি চাই আমার কাছে তোমার?
প্রথমত আমার সাথে প্রতারনা করলে আবার আমাকে ছেড়ে আমারই ভাইয়ের হাত ধরলে শুধু মাত্র আমার ভাইয়ের টাকা ছিল বলে। এখন আমার ভাই নেই তাই সবার কাছে ইনোসেন্ট সেজে নিজেকে অসহায় প্রমাণ করে আমাকে বিয়ে করলে।আমার ভালোবাসার মানুষটা কে আমার থেকে দূরে করে দিলে। মেয়ের ভবিষ্যতের দোহাই দিলে। এই দেশে অনেক মেয়ে আছে যারা একাই সন্তান কে মানুষ করে । তুমি কি পারতে না?এখন তুমি বলছো নদী নাকি তোমার থেকে আমাকে কেড়ে নিয়েছে।তুমি তো মাঝ পথে ছেড়ে দিয়েছিলে। নদী কুড়িয়ে নিয়েছিল,নিজের ব্যাক্তিত্বের জন্য আমার মনেও জায়গা করে নিয়েছে। এই অগুছালো আমিটাকে গুছিয়ে নিয়েছে। যেটা তোমার করার কথা ছিল। কিন্তু তুমি করো নি।বেইমানি করলে আমার ভালবাসার সাথে। কেনো করলে এমনটা ?
তোমার অনেক লোভ তাই না?
অবশ্য হবেই তো , তোমার মতো নোং*রা মানসিকতার মানুষের কাছে ভালো কিছু আশা করা বৃথা।তোমার মত মেয়েরা নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে যা খুশি তাই করতে পারে।তোমরা তো শুধু মানুষের মন নিয়ে খেলা করতে পারো।
নদী কে কল করে অপমান করার সাহস কোথায় পেলে তুমি?
আনসার মী!!”
রাগে শ্রাবণের চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। তরী এত সময় নিরব শ্রোতা হয়ে শ্রাবণের কথা শুনলো।একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো
” মিস্টার শ্রাবণ, আমি চাইলেই আপনার প্রতিটা কথার উত্তর দিতে পারতাম ,কিন্তু আমি এখনই কিছু বলতে চাই না। আমার নিরবতাকে আমার দুর্বলতা ভাববেন না। নিরবতাই হলো শ্রেষ্ট প্রতিশোধ।একদিন সত্যি টা আপনার সামনে আসবে , সেই দিন আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। ক্ষমা টুকু চাওয়ার সুযোগ আপনি পাবেন না।কেউ একজন হারিয়ে যাবে #এক_আকাশ_অভিমান নিয়ে। সেদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন তো?
দোয়া করি আল্লাহ যেনো আপনাকে সত্যি মিথ্যা যাচাই করার তৌফিক দান করেন।
একদিন পস্তাবেন! খুব বাজে ভাবে পস্তাবেন।
শ্রাবণ কিছু বলতে যাবে তখনই চোখ পড়লো তরীর উড়নার দিকে। একটা কোণ র*ক্তে লাল হয়ে আছে। মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো কপাল কেটে র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
কেপে উঠলো শ্রাবণের বুক। নিজ হাতে প্রহার করে র*ক্তা*ক্ত করে ফেলেছে মানুষটা কে।
নিমিষেই অনুতপ্ত টা ঘিরে ধরলো। ইসস ! এই ভাবে না মারলেও হতো। হাত বাড়িয়ে কপালের ক্ষত স্থান ছুঁতে চাইলে বাঁধ সাধে তরী।।
” দয়া করে আমাকে ছোঁবেন না।”
” পাগলামি করো না তরী। অনেক রক্ত বের হচ্ছে, এক্ষনি ড্রেসিং করে দিতে হবে।”
” আপনার থেকে কোনো সহানুভূতি চাই না আমার।”
” এই মেয়ে!! এত জেদ কেনো দেখাচ্ছো তুমি? নাকি এটা সবাইকে দেখিয়ে বেড়াবে? চার দেয়ালের মধ্যে তোমার উপর অ*ত্যা*চা*র করি সেটাই প্রমাণ করতে চাও তাই না? আমাকে খারাপ প্রমাণিত করে নিজে সাধু সাজতে চাও ?”
” আমি নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে চাই না ,আর চেষ্টা ও করি নি কখনো! যার ইচ্চা আমাকে ভালো মনে করবে আর যার মন মানসিকতা খারাপ সে খারাপই মনে করবে। ভালো প্রমাণ করার প্রয়োজন তো শুধু আপনার আর আপনার প্রেমিকার। নিজে সৎ থাকলে কারো কাছে প্রমাণ করা লাগে না। প্রকৃতি ঠিকই বুঝিয়ে দেয় কে ভালো আর কে খারাপ।”
কথা গুলো বলেই ওয়াশরুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিল।দরজার সাথে হেলান দিয়ে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পর চোখে মুখে পানি দিলো। পানির স্পর্শ পেয়ে কাটা স্থান জ্বলতে লাগলো।
ওয়াশরুমের দরজা খুলেই দেখলো শ্রাবণ দাড়িয়ে আছে, হাতে ফার্স্ট এইড বক্স।তরী পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইলে শ্রাবণ আটকে নেয়।
” কোথায় যাচ্ছো? ওখানে বসো। ”
“কেনো?”
” কেনো মানে ? দেখতে পারছো না হাতে কি ?”
” কেনো, আপনি কি না দেখেই নিয়ে এসেছেন নাকি?”
” আমি দেখেই এনেছি। বসো ওখানে। অনেকখানি কেটে গেছে, ক্লিন করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিতে হবে।”
” তাতে কি হবে ?”
” ক্ষত তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।”
” শরীরের ক্ষত তো সারিয়ে দিবেন, মনের ক্ষত কি ভাবে সারাবেন?
যদি মনের ক্ষত সারাতে পারেন তাহলে শরীরের ক্ষত সারাতে আসবেন। না হলে এতো ভালোমানুষ হবার প্রয়োজন নেই আপনার।”
শ্রাবণ কে উপেক্ষা করে নিচে চলে গেলো তরী। শ্রাবণ ও তরীর পিছু পিছু নিচে গেলো।
ড্রয়িং রুমে বসে ছিলেন রাবেয়া বেগম। তরীর দিকে নজর দিতেই চোখে পড়লো কপালের কাটা দাগ।র*ক্ত লেগে লাল হয়ে আছে। বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি।
” একি তরী! কপাল কাটলো কিভাবে?”
শ্রাবণ মনে মনে ভাবলো :
” এইতো এখনই ড্রামা শুরু করবে। আমাকে খারাপ প্রমাণ করবে। সবার সামনে নিজে ইনোসেন্ট সেজে আমাকে অত্যাচারী বানিয়ে শান্তি পাবে। সার্থপর একটা।”
শ্রাবণের ভাবনা ভুল প্রমাণিত করে তরী বললো
” ওয়াশরুমে পরে গেছিলাম মা।বেসিনের সাথে লেগে সামান্য কেটে গেছে। ”
” এটা সামান্য মনে হচ্ছে তোমার?
ইসস কত খানি কেটে গেছে। কত বার বলেছি একটু দেখে চলা ফেরা করো। কে শুনে আমার কথা! ছেলে মেয়ে গুলো শান্তিতে থাকতে দিবে না। চলো ওষুধ লাগিয়ে দিতে হবে।”
টেনে সোফায় বসিয়ে তরীকে ওষুধ লাগিয়ে দিলেন। শ্রাবণ পাশে বসে ফিস ফিস করে বললো
” সেই তো ব্যান্ডেজ করলে।আগে করে নিলে তো বড়মা কিছু জানতে পারতো না।”
” কেনো ব্যান্ডেজ টা কি দেখা যাচ্ছে না ? গায়েবী ব্যান্ডেজ করে দিতেন নাকি আপনি ? নাকি ব্যান্ডেজ ক্ষত দুইটাই ম্যাজিক করে গায়েব করে দিতেন ?
ক্ষত টা না দেখলেও ব্যান্ডেজ টা তো ঠিকই দেখতো। সেম প্রশ্ন করতো আর আমিও এই উত্তর টা দিতাম।”
শ্রাবণ আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো।এই মেয়ের সাথে কথা বলাই বেকার ।।
।
।
স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে রিনি। ঘাসের ওপর পড়ে আছে একটা আইসক্রিম। ছল ছল করছে আঁখি পল্লব।নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে সামনের দুই মানব মানবীর দিকে। একটা মেয়ের সাথে হাসি মুখে কথা বলছে শামীম। মেয়েটা মাঝে মধ্যে শামীমের গায়ে হাত ও দিচ্ছে। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হলো রিনির।
প্রিয় মানুষটার পাশে আজ অন্য কেউ। এই দৃশ্য দেখার থেকে মৃত্যুযন্ত্রণা অনেক সহজ।
মেয়েটা খুব সুন্দরী। এই কলেজের বলে মনে হচ্ছে না।
তাহলে কি এই সেই মেয়ে যার কাছে মন হারিয়েছে শামীম। সত্যিই তো মেয়েটা পরীর মতো সুন্দর। দুধে আলতা গায়ের রং। শামীমের সাথে বেশ মানিয়েছে। একবার নিজের দিকে তাকালো রিনি। শ্যামলা গায়ের রং, চুল গুলো কোমর পর্যন্ত না। ওই মেয়েটার মতো এত মায়াবতী ও না। তাহলে শামীম কেনো ভালোবাসতে যাবে? ভুলেই তো গেছিলাম মানুষ শুধু সৌন্দর্দের প্রেমে পড়ে। শ্যামবতী তো শুধু উপন্যাসের পাতায় মানায়।
এই দিকে এসেছিলো বান্ধবীদের সাথে আইসক্রিম খেতে। ফেরার পথে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে ভাবতে পারে নি রিনি।
কথা বলতে বলতে শামীমের চোখ পড়লো রিনির দিকে। চোখ ভর্তি জল নিয়ে মেয়েটা দাড়িয়ে আছে।
ধক করে উঠলো শামীমের বুক।
মেয়েটা কি ভুল বোঝলো তাকে?
এগিয়ে গেলো রিনির দিকে। শামীম কে নিজের দিকে আসতে দেখে দৌড়ে স্থান ত্যাগ করলো। এক মুহুর্ত ব্যয় না করে ব্যাগ নিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসলো। নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।
” ইয়া আল্লাহ! এই কোন পরীক্ষায় ফেললে আমায়। আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। ভালোবাসার মানুষটাকে অন্যের সাথে আমি দেখতে পারছি না। বুকটা যে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দাও আমায়। না পারছি নিজের মনকে বুঝাতে,না পারছি তাকে কিছু বুঝাতে। সঠিক সময়ের অপেক্ষা করে আজ কিছুই বলতে পারি নি।কিন্তু সঠিক সময় আর আসলো কই।তার সাথে একটু ভালো থাকতে চেয়েছিলাম। আমার ভাগ্যে হয়তো সেটাও নেই। প্রতিনিয়ত তাকে ভেবে বিষণ্ণ সময় কাটাতে হবে। অথচ তার কথা ভেবে মুচকি হাসার সপ্ন দেখেছিলাম। বুকের ভিতর এক অজানা ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। সারাক্ষণ মনে হয় নিঃশ্বাসের সাথে বুকের ভিতরটা চিরে বেরিয়ে যাচ্ছে।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
আমি মুক্তি চাই। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই ,,
এই অন্ধকার প্রহর থেকে মুক্তি চাই………!
#চলবে ইনশা আল্লাহ……!