#বিবাহ_অভিযান (১)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
“মা আমার বিয়ের বয়স হয়েছে, এইবার অনন্ত আমার বিয়ে দাও।”
সমুদ্রের চোখেমুখে আকুতি। বন্ধুমহলের সকলের বিয়ে হয়ে বাচ্চা হয়ে গেছে অথচ ওর মা বলে ওহ নাকি এখনো বাচ্চা তাই বিয়ে দেয়নি। আর জীবনে একটা প্রেম করতে পারেনি বলে পালিয়ে বিয়ে করাটাও হয়ে উঠেনি। বন্ধু’দের কাছে হাসির খোরাক হতে হতে জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে সমুদ্র। এইবার অনন্ত বিয়েটা দিয়ে দেওয়াই উচিত!
– “কিরে বাবু কি হয়েছে? তুই বিয়ের কথা বলছিস কেন? আমি বলেছি না তুই এখনো বাচ্চা।”
– “হ্যাঁ ফিডার খাই তো!”
ছেলের কথায় সমুদ্রের মা থতমত খেয়ে গেলেন।ছেলে যে ভীষন রকমের ক্ষেপে গেছে সেইটা বুঝতে অসুবিধা হলো না। ছেলেকে শান্ত করতে বললেন,
– “এত রেগে যাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে বলবি একটু।”
– “আমি কিছু জানি না, তুমি আমার বিয়ের ব্যবস্থা করবে।”
– “আহ্ বিয়ে বললেই কি বিয়ে হয়ে যায় নাকি! মেয়ে দেখতে সময় লাগবে না নাকি?”
– “যত সময় লাগে নাও তবে আমি এই বছরের মধ্যেই বিয়ে করব এইটাই ফাইনাল। আর তুমি যদি আমার বিয়ের ব্যবস্থা না করো তাহলে আমি যাকে পারব তাকেই বিয়ে করে নিয়ে চলে আসব।”
সমুদ্র রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের ঘরে চলে যায়। সমুদ্রের মা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন, একমাত্র ছেলের এইরকম মতিভ্রম দেখে ওনার মাথায় বাজ পড়েছে। এখন উনি কি করবেন? ছেলেকে বিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় দেখতে পাচ্ছেন না।
সমুদ্র। পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বয়স ২৮+। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।
সমুদ্র রাগ কমাতে লম্বা একটা শাওয়ার নিল। আজ অফিসে এক কলিগ সমুদ্র’কে বিয়ে নিয়ে খোঁটা দিয়ে বলল,
– “কি ভাই বিয়ে-টিয়ে কবে করবে? নাকি সারাজীবন অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছ!”
ওনার কথায় বাকিরা সবাই একসাথে হেসে উঠে। সমুদ্র অপমানে চুপ করে থাকে, বিষয়টা নতুন না প্রায় সবাই বিয়ে নিয়ে খোঁটা দিতেই থাকে। সেইদিন অফিসের বস বললেন,
– “কি সমুদ্র বিয়ের নেমন্তন্ন কবে পাচ্ছি!”
মানে সিরিয়াসলি ভাই! সবার একটাই টপিক বিয়ে আর বিয়ে। মনে হয় সমুদ্রের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত ওদের টয়লেট ক্লিয়ার হবে না।
ওইটা তো শুধু অফিসে আর বন্ধুদের কথা না হয় বাদই দিলাম। ওদের প্রত্যেকটা আড্ডার একটাই টপিকে আলোচনা হবে সেইটা হলো সমুদ্রের বিয়ে। একদিন এক বন্ধু সমুদ্র’কে প্রশ্ন করেই ফেলল,
– “কি ভাই তোর সবকিছু ঠিক আছে তো?”
সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
– “কেন? কি হবে আমার!”
পাশ থেকে আরেক বন্ধু বলল,
– “তাহলে বিয়ে করছিস না কেন?”
কেমনডা লাগে! সমুদ্র অপমানে আড্ডা থেকে উঠে চলে আসে, আর বন্ধুদের এড়িয়ে চলতে শুরু করে। কারন ওকে দেখা মাত্রই বিয়ে নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেবে, অসহ্য।
—
সমুদ্রের মা চিন্তিত হয়ে বসে আছে, ছেলের বিয়ে নিয়ে কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। সমুদ্রের বাবা অফিস থেকে ফিরে স্ত্রী’কে চিন্তিত দেখে বললেন,
– “কি হলো এইভাবে গালে হাত দিয়ে বসে আছো কেন?”
– “তোমার ছেলের মাথার খারাপ হয়ে গেছে।”
সমুদ্রের বাবা স্ত্রী’র কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারলেন না।
– “মানে? কি বলছো এইসব!”
সমুদ্রের মা ন্যাকা কেঁদে বললেন,
– “তোমার ছেলে বিয়ে করবে বলে উঠে পড়ে লেগেছে। বলেছে এইবার বিয়ে না দিলে নিজে বিয়ে করে নিয়ে চলে আসবে। আমার ছেলের কি হলো বলো তো!”
সমুদ্রের বাবা বিরক্ত হলেন। ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে বিয়ে দিতে হবে এতে এতটা নাটক করার কি আছে?
– “ছেলের বিয়ে দিয়ে দাও।”
– “তুমি এইসব কি বলছ? আমার ছেলের কি এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে!”
সমুদ্রের বাবা বিরক্ত হয়ে বললেন,
– “না তোমার ছেলে তো কচি খোকা। ন্যাকামি না করে ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করো।”
সমুদ্রের বাবা নিজের ঘরে চলে গেলেন, সমুদ্রের মা মাথায় হাত দিয়ে আবারো সোফায় বসে পড়লেন। ছেলের চিন্তায় তার মাথা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড়। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারলেন না।
**
রাতে খাবার টেবিলে,
খাবার খেতে সমুদ্র বলল,
– “মা কি ভাবলে?”
সমুদ্রের মা খাওয়া থামিয়ে দিয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকালেন।ছেলে কিসের কথা বলছে সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছেন তবুও জিজ্ঞেস করল,
– “কিসের কথা বলছো?”
সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
– “মা তুমি ভালো করেই জানো আমি কিসের কথা বলছি।”
সমুদ্রের মা কাঁচুমাচু হয়ে বলল,
– “তুমি কি সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছ বিয়ে করেই ছাড়বে?”
– “হ্যাঁ।”
সমুদ্রের মা হতাশার দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকাতে তিনি বললেন,
– ” কাল থেকে পাত্রী দেখা শুরু করে দাও।”
সমুদ্রের মা মাথা নাড়ল। সমুদ্রের মুখে হাসি ফুটে উঠল খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘরে দরজা বন্ধ করে ডান্স দিতে দিতে বলল,
– “কাল থেকে শুরু ‘বিবাহ অভিযান।’ ইয়া হু।”
পরেরদিন,
সমুদ্রের মা একজন ঘটক’কে আসতে বলেছেন। বিকাল বেলা সুট-বুট পড়ে একেবারে বাবু-সাবু হয়ে ঘটক উপস্থিত হয়েছে।
– “আপনার কেমন মেয়ে লাগবে?”
সমুদ্রের মা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
– “আর কেমন মেয়ে! শিক্ষিত, সুন্দরী, ভালো ফ্যামিলির মেয়ে হলেই হবে।”
সমুদ্রের মায়ের কথা শুনে ঘটক নিজের ব্যাগ থেকে কয়েকটা ছবি বার করে সমুদ্রের মায়ের দিকে আগিয়ে দিলেন।
– “দেখুন এর মধ্যে কাউকে পছন্দ হয় নাকি।”
সমুদ্রের মা ছবিগুলো ঘেঁটে একটা ছবি চয়েস করে বলল,
– “এই মেয়েটার সম্পর্কে সবকিছু তথ্য আমার চাই।”
ঘটক ছবি’টাকে দেখে বলল,
– “মেয়ের নাম সহেলী। গ্র্যাজুয়েট কমপ্লিট করেছে, উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে।”
– “ঠিকাছে। আমি তাহলে আমার বাড়ির লোকের সাথে কথা বলি তারপর আপনাকে জানব।”
– “আচ্ছা আমি তাহলে আজ আসি।”
ঘটক চলে যেতে সমুদ্রের মা ছবিটা’র দিকে তাকিয়ে রইল। ওনার তো মেয়েটা’কে ভালোই লেগেছে, ছেলের লাগলে হলো।
রাতে সমুদ্র বাড়ি ফিরলে ওর মা ওকে মেয়েটার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “দ্যাখ মেয়ে’টাকে পছন্দ নাকি।”
সমুদ্র মেয়েটা’র ছবি দেখল, মেয়েটা দেখতে ভালোই। মাকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “তোমার পছন্দ?”
সমুদ্রের মা বিরক্ত হয়ে বলল,
– “পছন্দ না হলে তোকে দেখাচ্ছি কি করতে?”
মায়ের কথায় সমুদ্র মুখটা কাঁচুমাচু করে বসে রইল। এখন মাকে ক্ষ্যাপানো যাবে না, নাহলে শেষে দেখা যাবে মা বিয়ে দেবে না বলে আন্দোলন শুরু করবে।
সমুদ্রকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে ওর মা ধমক দিয়ে বলল,
– “প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে আছিস কেন?”
সমুদ্র আমতা আমতা করে বলল,
– “কি বলবো?”
সমুদ্রের মা বিরক্ত হয়ে বলল,
– “মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে?”
– “হুমম।”
– “তাহলে বিয়ের কথা আগায়!”
– “হ্যাঁ।”
সমুদ্রের মনে মনে লাড্ডু ফুটছে। এতদিনে ওর বিয়ের বাজনা বাজতে চলেছে, একবার বিয়ে হয়ে গেলে কেউ আর ওকে খোঁটা দিতে পারবে না।কারোর কাছে আর বিয়ে না হওয়া নিয়ে অপমান হতে হবে না শান্তি।
আপনাদের কি মনে হয় সমুদ্রে’র বিয়ে কি এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে!
#চলবে….