তীব্রস্রোত পর্ব-০৪

0
229

#ফারহানা_হাওলাদার_প্রকৃতি
#তীব্রস্রোত
#পর্ব ৪
.
.
সেদিন হঠাৎ সুপ্তির তার দুলাভাই এর সাথে দেখা হলো, ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে।

…..কেমন আছো সুপ্তি?

……জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

……হ্যা আমিও ভালো আছি।

…..আপু কেমন আছে?

….. আমি কেনো বলব? তোমার বোন কেমন আছে, তা তুমি তোমার বোনের থেকে জেনে নিবে, আমি কীভাবে তার ভেতরের কথা তোমাকে জানাব? তোমার বোন কোথায় আছে কেমন আছে দেখার ইচ্ছে হয় না বুঝি তোমার?

……আসলে দুলাভাই আমি তো একটু ব্যস্ত থাকি সব কিছু মিলিয়ে এজন্য যাওয়া হয়ে ওঠে না, আর যেহেতু সামনেই পরিক্ষা তাই প্রচুর ব্যস্ত আছি।

……যতই ব্যস্ত থাকো বোনের জন্য মন কাঁদে না বুঝি? তোমার আপু তো সারাদিন তোমার কথাই বলে। চলো আজ না হয় ঘুরে আসবে আপুর কাছ থেকে।

……আজ না দুলাভাই, ক্লাসে যেতে হবে, আম্মু আব্বুর সাথে একদিন যাবো ইন’শা’আল্লাহ।

…….আম্মু আব্বু মনে হয়না আমাদের বাড়ি এ জনমে যাবে আর। তুমি তো চলো, একদিন ক্লাস বন্ধ দিলে কিছু হবে না।

……স্যরি দুলাভাই, বাট ক্লাসে না গেলে স্যার আব্বুকে ফোন দিয়ে বলে দেবে তাই না গেলেই যে নয়। আর আব্বু জানতে পারলে খুব কষ্ট পাবে আমি তাদের না জানিয়েই আপনাদের বাসায় গিয়েছি। আমি আমার আব্বু আম্মুকে আর কোনো রকম কষ্ট দিতে চাইছি না।

…….হুম ঠিক আছে, তবে আসছি হ্যা। ভালো থেকো।

……আপনিও আল্লাহর রহমতে ভালো থাকবেন।

এই বলে দু-জন দুই-দিকে চলে গেল। সুপ্তি হাঁটতে হাঁটতে ভার্সিটির ভেতর চলে গেল।
.
.

প্রায় দুই মাস পড়ে হটাৎ করে ফোন এলো সুপ্তির আব্বুর ফোনে। সে ফোন রেখে এগিয়ে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল।

……সুপ্তির আম্মু জলদি চলো সুপ্রিয়া নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

……কী বলছ? কী হয়েছে?

……বলল হঠাৎ করে নাকি অজ্ঞান হয়ে গেছে, ডাক্তার ডেকেছে ওরা।

……হ্যা হ্যা চলো। সুপ্তি তুই যাবি নাকি থাকবি?

…..নাহ আম্মু থাক। খালি বাসা রেখে সবাই যাবো, তার মধ্যে স্যার ও তো চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে। তোমরা বরং আমাকে ফোনে সব জানিয়ে দেও।

……আচ্ছা ঠিক আছে।

এরপর তারা ২ জন রহনা দিয়ে সুপ্রিয়া দের বাসায় চলে গেল।

সেখানে গিয়ে দেখল সবাই মিলে সুপ্রিয়ার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে, একটু পড়ে সুপ্রিয়ার জ্ঞান ফিরল।

বেশ কিছুক্ষণ পরে ডক্টর এলো। ডক্টর এসে ভালো করে চেক-আপ করল, চেক-আপ করে ডক্টর বলল সুপ্রিয়া মা হতে চলেছে, যা শুনে সবাই খুব খুশি হয়ে গেল। সবাই এতো খুশি হয়ে গেল যে সুপ্রিয়ার সাথে যে সবাই রেগে ছিলো তা ভুলেই গেল একদম। আজাদ রহমান আর শামিম রায়হান দুজন আজ অনেক খুশি, দাদা নানা হতে যাচ্ছে যেহেতু।

রাতে খাওয়া দাওয়া করে তারা বাড়ি ফিরে আসলো সুপ্তির আব্বু আম্মু। তখন সুপ্তি পাইচারি করছিল পুরো ড্রইং রুমে। দরজায় কলিং বেল বাজতেই সুপ্তি ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দেখল তার আব্বু আম্মু দাঁড়িয়ে আছে, যা দেখে সুপ্তি টেনশন মুখি হয়ে জিজ্ঞেস করে উঠল তাদের।

……আপু কেমন আছে? তার কী অবস্থা এখন?

……হুম ভালো আছে সুপ্রিয়া এখন।

……কী বলেছে ডক্টর।

……ডক্টর বলেছে তুই খালামণি হতে চলেছিস।

…..কীহ, আম্মু সত্যি বলছ তুমি?

……হ্যা রে সত্যি বলছি।

……ইশ আম্মু কত আনন্দের কথা তাইনা? আমার আপু মা হবে, ওহ গড এত খুশি আজ আমি, কী বলব যে আম্মু আমি। আজ আমি ভীষণ খুশি।

…..হ্যা তাই, আচ্ছা তুই নিশ্চয়ই কিছু খাস নি? যা খেয়ে নে আমরা ওদের ওখান থেকে খেয়ে আসছি, চাইছিলাম না কিন্তু সুপ্রিয়ার শশুড় এত জোর করল যে না খেয়ে পারলাম না।

…..সমস্যা নেই আম্মু আমি খেয়ে নেবো।

…..এই নে এটা তোর জন্য সুপ্রিয়ার শাশুড়ী দিয়েছে।

সুপ্তির আম্মু সুপ্তির হাতে একটা বক্স দিয়ে কথাটা বলল। সুপ্তি বক্সটা নিয়ে খুলে দেখল, তাতে কিছু খাবার রাখা ছিলো সুপ্তি হেঁসে বলল,

…… বাহ না গিয়েও খাবার খেতে পারব ভালোই হলো।

……হ্যা ওরা খুব ভালো। আচ্ছা তুই তবে খেয়ে নে আমি দেখছি তোর আব্বু কী করছে।

……জ্বি আম্মু।

এরপর সুপ্তির আম্মু চলে গেল, আর সুপ্তি ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে পড়ে খেতে শুরু করে দিলো।

এভাবেই বেশকিছু দিন চলে গেল। সুপ্তির পরিক্ষাও শেষ প্রায়। সুপ্রিয়া কয়েক বার এসেছিল এর মধ্যে, দু-দিন থেকেও গিয়েছিল, যার জন্য সুপ্তির আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি সুপ্রিয়ার শশুড় বাড়িতে।

সেদিন সুপ্তি রান্নাঘরে গিয়ে তার আব্বু আম্মুর জন্য খাবার রান্না করছিল। এমন সময় দরজার কলিং বেল বেজে উঠল। সুপ্তির আম্মু গিয়ে দরজা খুলে দেখল ফারাবী দাঁড়িয়ে আছে।

……আরে ফারাবী তুমি হঠাৎ?

…..কেনো আম্মু আসা যাবে না বুঝি?

…..আরে না না তা নয়। ভেতরে আসো।

…..জ্বি আম্মু।

ফারাবী ভেতরে এসে বসে পড়ল। সুপ্তির আম্মু ফারাবী কে প্রশ্ন করে উঠল।

……তা সুপ্রিয়া কে নিয়ে আসলেই তো পারতে।

……আম্মু আসলে সুপ্রিয়ার এখন হাঁটাচলা করতে একটু কষ্ট হয়। প্রায় সময় তো হয়েই আসছে। আর আম্মুও আজকাল একটু অসুস্থই থাকে, তার উপর সংসারের সব কিছু সামলিয়ে আম্মু সুপ্রিয়ার খেয়াল তেমন একটা রাখতে পারে না। আর আমারও সপ্তাহ খানেকের জন্য বাহিরে যেতে হচ্ছে। খুব জরুরি না হলে যেতাম না এই সময়টায়। বাট কিছু করার নেই যার জন্য এক প্রকার বাধ্য হয়েই আসছি সুপ্তিকে নিয়ে যেতে, কয়েক দিনের জন্য যদি সুপ্তিকে আমাদের বাড়িতে থাকার অনুমতি দিতেন? তবে খুব ভালো হতো আমিও নিশ্চিন্তায় যেতে পারতাম।

……তার থেকে সুপ্রিয়া এখানে এসে থাকলেই তো পাড়ত? আর এই সময়টা মেয়েদের বাবার বাড়িতেই থাকতে হয়। তুমি বরং ওকে গিয়ে নিয়ে এসো এই দিন গুলোতে ও এখানেই থাকুক।

……আম্মু আমি আসলে বলে ছিলাম ওকে, কিন্তু সুপ্রিয়া বলছে, না এত জলদি আসবে না। যখন প্রয়োজন হবে তখন সে নিজেই চলে আসবে।

……আচ্ছা আমি কী একবার বুঝিয়ে বলব সুপ্রিয়াকে?

……হ্যা বলে দেখতে পারেন।

সুপ্রিয়ার আম্মু সুপ্রিয়াকে ফোন দিয়ে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল কিন্তু সুপ্রিয়া কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। সে জেদ ধরে বসেই আছে, তাই সুপ্রিয়ার আম্মু সুপ্রিয়ার আব্বুকে ফোন দিয়ে জানালো। সুপ্রিয়ার আব্বু প্রথমে না বলে দিয়ে ফোন কেটে দিলো। কিছুক্ষণ পড়ে আবার ফোন দিয়ে বলল।

…..ঠিক আছে ফারাবী যখন আসছে তবে যেতে দাও। না গেলেও খারাপ দেখায়। বাট ফারাবী কে বলে দাও যত তারাতাড়ি সম্ভব যাতে চলে আসে। কারণ বেশি দিন সুপ্তি থাকতে পারবে না। এখানে তুমি সারাক্ষণ বাসায় একা থাকো তার মধ্যে সুপ্তি যদি সেখানে থাকে তবে কেমন হবে।

……জ্বি ঠিক আছে।

ফোন রেখে দিয়ে, সুপ্তির আম্মু ফারাবীর সামনে এসে বসে বলে উঠল।

……ঠিক আছে বাবা তুমি আসছ দেখে আমি তোমার সম্মানের খাতিরে ওকে যেতে দিচ্ছি, কিন্তু যত তারাতাড়ি সম্ভব তুমি চলে আসবে। কারণ আমিও বাসায় একা থাকি আর সুপ্রিয়া গেছে থেকে আমরা সুপ্তির উপর ভরসা করেই বেঁচে আছি, ও চোখের আড়াল হলে ভালো লাগে না। তাই এই কয়েক দিন আমাদের জন্য থাকতে খুব কষ্ট হবে। তুমি তারাতাড়ি কিন্তু ওকে দিয়ে যাবে।

……ঠিক আছে আম্মু তাই হবে, তবে আপনি সুপ্তিকে বলেন রেডি হয়ে নিতে। আমি ওকে বাসায় দিয়ে আবার বের হবো। সব গুছিয়েও তো নিতে হবে।

…..ঠিক আছে।

এরপর সুপ্তি তার দুলাভাই এর সাথে সুপ্রিয়াদের বাসায় গেল, সুপ্রিয়া সুপ্তিকে দেখে তো সেই রকমের খুশি হয়ে গেল। সুপ্তিও অনেকটা খুশি হলো এই প্রথম সে বোনের শশুড় বাড়ি এলো। খুব সুন্দর বাড়িটা, সুপ্তিকে পৌঁছে দিয়ে ফারাবী চলে গেল। সুপ্তি তার বোনের শাশুড়ির সাথে দেখা করে বোনের সাথে বোনের রুমে চলে গেল। দু-বোন মিলে গল্প করতে শুরু করে দিলো। যেহেতু ফারাবী আজকেই রহনা দিবে তাই সুপ্তি সুপ্রিয়ার রুমেই থাকবে এই কয়েক দিন।

দুপুর দিকে সুপ্তি, সুপ্রিয়ার রুম থেকে বের হতে নিচ্ছিল, দরজা খুলে বের হতেই হঠাৎ কারো সাথে সজোরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলো। আর যার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলো সে সঙ্গে সঙ্গে ধরে নিলো। সুপ্তি আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখতে পেলো, সুদর্শন এক যুবক, দেখতে খারাপ নয়। সুপ্তি নিজেকে সামলে উঠে দাঁড়াতে চাইছিল, বাট লোকটা এমন ভাবে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে ছিলো জেনো সুপ্তির মাঝেই সে হারিয়ে গেছে। সুপ্তির প্রচুর বিরক্তি লাগছে, তাই সুপ্তি লোকটা কে খুব জোরেই একটা চিমটি কাঁটল যার জন্য লোকটার ধ্যান ভাঙল, সাথে সাথে উফ বলে চেচিয়ে উঠল। সুপ্তি তাকে ধরে উঠে দাঁড়িয়ে সরে গেল।

……কী হলো মেয়ে কখনো চোখে দেখেন নাই নাকি?

……দেখেছি কিন্তু এত কাছের থেকে দেখিনি। কিন্তু আপনি কে?

…..তা জেনে আপনার কোনো লাব নেই।

এই বলে সুপ্তি চলে যেতে নিলো। যা দেখে লোকটা আবার বলে উঠল।

……আচ্ছা সত্যি করে বলেন তো, কে আপনি? এখানে এলেন কোথা থেকে? আমাদের বাড়িতে ঘোরাঘুরি করছেন আর আমিই জানিনা কে আপনি?

…….আচ্ছা আমার থেকে জেনে কী হবে? তার থেকে আপনার বাড়ির কারোর থেকেই না হয় জেনে নিবেন।

এই বলে সুপ্তি সেখান থেকে চলে এলো। আর সেই লোকটা এখনো হা করে তাকিয়ে আছে।



চলবে……..।