💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 30
হৃদয়ঃ এখানে মানুষ কেন আসে,,,,??
অন্তরাঃ জানি এখানে মানুষ কেন আসে,,,?? কিন্তু সেই কারণে আমরা এখানে আসতে পারি না,,,
(অন্তরা ঘুরে চলে আসতে গেলেই হৃদয় নিজের ফোন বের করলো,,,)
হৃদয়ঃ হ্যাঁ ভাইয়া,,,, আরাভ নামের একজন অফিসে জব করে না,,,,,??
,,,,,,
হৃদয়ঃ হ্যাঁ,, সেই,,, আমার মনে হয় আমাদের কোম্পানিতে জব করার যোগ্যতা তার,,,,,
অন্তরাঃ প্লিজ এমন কিছু করবেন না,,,,,
হৃদয়ঃ ভাইয়া আমি একটু পর ব্যাক করছি,,,,, আমি কিছুই করছি না,,,, যা করার তুমি করছো,,,,
অন্তরাঃ আপনি পুরো উন্মাদ হয়ে গেছেন,,,,। নিজের বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছেন,,,,
হৃদয়ঃ হ্যাঁ হ্যাঁ,,, উন্মাদ হয়ে গেছি আমি,,, অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি তোমাকে,,,, কিন্তু যে না বুঝার জেদ ধরে বসে আছে তাকে বুঝাবোই বা কেমন করে,,,, সব কিছুর সীমা থাকে অন্তরা,,,,,
অন্তরাঃ আমি তো আপনার,,,,,
হৃদয়ঃ আমার ভালো সবার থেকে আমি বেশি ভালো বুঝি,,,,, এখন কথা কম বলে ভেতরে চলো,,,,
অন্তরাঃ,,,,,,,,,
(অন্তরা তাও দাঁড়িয়ে আছে দেখে হৃদয় অন্তরার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো,,,,)
হৃদয়ঃ সরি,,,,,
অন্তরাঃ(কলম হাতে বসে আছি,,, কিন্তু সাইন করার সাহস আমার নেই,,,,)
হৃদয়ঃ অন্তরা সাইন করো,,,,,
অন্তরাঃ,,,,,
হৃদয়ঃ আমি কিছু বলছি অন্তরা,,,,,,
কাজিঃ মেয়ে কী বিয়েতে রাজি না,,,,
হৃদয়ঃ সেটা দিয়ে আপনার কী কাজ,,,?? চুপচাপ বসে থাকুন,,,,, (রাগী কন্ঠে) অন্তরা আমি কিছু বলছি,,,,,
অন্তরাঃ,,,,,,,,
হৃদয়ঃ (ওঠে দাঁড়িয়ে অন্তরার হাত ধরে দাঁড় করালাম,,,) চলো,,,
অন্তরাঃ ন,,না,,,, আ,,,আমি করছি,,,, আমার ভাইয়াকে জব থেকে বের করে দেবেন না,,,,
হৃদয়ঃ (ওর কথা না শুনে আবার বাইরে এনে গাড়িতে বসালাম,,,,)
অন্তরাঃ আবার কোথায় যাচ্ছেন,,,,??
হৃদয়ঃ,,,,,,,,,
অন্তরাঃ এতো জোরে কেন গাড়ি চালাচ্ছেন,,,?? ভয় করছে আমার,,,,
হৃদয়ঃ,,,,,
অন্তরাঃ এটাতো ভার্সিটির রাস্তা,,,,, এদিকে কেনো যাচ্ছেন,,,,??
হৃদয়ঃ,,,,,,,,, (ওর কথার উত্তর না দিয়ে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে চলে এলাম,,,, গাড়ি থেকে নেমে ভার্সিটির পেছনে গার্ডেনে মতো একটা জায়গা,,, সেখানে নিয়ে গেলাম অন্তরাকে,,,, সিয়াম খেলছে আর রুপা ফোনে কথা বলছে কারো সাথে,,,)
অন্তরাঃ সিয়াম,,,,,,,
হৃদয়ঃ তাকাও ওর দিকে,,,,, ওর মা নেই,,,, বাবা থেকেও নেই,,,,, মার সাথে সেদিন বাবাকেও হারিয়েছে ও,,,,,, সেদিন থেকে রিয়াদ চৌধুরী নয়,,, ও এই হৃদয় চৌধুরীর ছেলে,,,,। যে এখন আমাকে দেখলে বাবা বলে ঝাপিয়ে পড়বে আমার বুকে,,,, আর তুমি আমার থেকে দূরে যেতে চাইছো কোনদিন বাবা ডাক শুনতে পাবো না বলে,,,,?? নাকি আমার ছেলেকে নিজের ছেলে বলে মেনে নিতে পারবে না বলে,,??
অন্তরাঃ এটা কী বলছেন আপনি,,,??
হৃদয়ঃ হ্যাঁ এটাই ঠিক,,, পারবে না তুমি ওকে নিজের ছেলে বলে মানতে তাই দূরে সরে যেতে চাইছো,,,,
(হৃদয় আর অন্তরা একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে সিয়ামের থেকে,,,, রুপা কথা বলতে বলতে দূরে চলে গেছে,,, খেলতে খেলতে সিয়াম হঠাৎ পড়ে গেলো,,,,,)
অন্তরাঃ সিয়াম,,,,,,(ওর কাছে যেতে চাইলাম কিন্তু হাতে টান অনুভব করলাম,,,, তাকিয়ে দেখি হৃদয় আমার হাত ধরে রেখেছে,,,,) ও ব্যাথা পেয়েছে,,,
হৃদয়ঃ পেতে দাও,,,, মা না থাকলে তাদের জীবনে অনেক ব্যাথা পেতে হয়,,,, দেখছো না ব্যাথা পেয়েও কান্না করছে না বরং একাই ওঠার চেষ্টা করছে কারণ এতোদিনে ও বুঝে গেছে,,,,, ব্যাথা পেয়ে কান্না করলে ওর মা দৌঁড়ে এসে ওকে বুকে নেবে না,,,, ওর একাই ওঠতে হবে,,,, আমি ওর বাবার অভাব পূরণ করতে পারবো কিন্তু মায়ের অভাব নয়,,,, ওকে মায়ের ভালোবাসা ছাড়াই বড় হতে হবে,,,, কারণ তুমি পারবে না আমার ছেলের মা হতে,,,
অন্তরাঃ (সিয়ামের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওঠে দাঁড়িয়েছে,,,,, হাটুতে ছিলে গেছে,,, দেখার চেষ্টা করছে,,,,)
হৃদয়ঃ যাও তুমি,,,,, তোমাকে আর জোর করবো না আমি,,,, আমার ছেলেকে আমি একাই বড় করবো,,,, আজ থেকে তোমার সামনে আর এই হৃদয় বা তার ছেলে কেউ আসবে না,,,,
(হৃদয় অন্তরাকে ছেড়ে সিয়ামের কাছে যাওয়ার জন্য যেতে লাগলে অন্তরা হাত টেনে ধরলো,,,,)
অন্তরাঃ আমি র,,,র,,রাজি,,, আপনার ছেলের মুখে মা ডাক শুনেই আমি মাতৃত্বের স্বাদ নিতে চাই,,,, আপনার সাহায্যেই নাহয় একটা মা হারা শিশু তার মাকে ফিরে পাক,,, আর সন্তান হারা মা তার সন্তানকে,,,,,। ভাঙা মানুষগুলো জোরে হোক একটা পরিবার,,,,,,
হৃদয়ঃ(চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে,,, এটা আমার আনন্দের পানি,,, আমার ভালোবাসা জিতে গেছে,,,,) সত্যি বলছো তুমি,,,??
অন্তরাঃ হুম,,,,, এবার যেতে পারি আমার ছেলের কাছে,,,,,??
হৃদয়ঃ হুম,,,,
অন্তরাঃ(দৌড়ে গিয়ে সিয়ামকে কোলে নিলাম,,,) বাবা,,,,,,
সিয়ামঃ মা,,,,,,(চোখের কোণে পানি আর ঠোঁটের কোণে হাসি,,,, জোরে কান্না না করলেও ব্যাথা পেয়ে চোখে পানি ঠিকই এসেছে,,,,,)
অন্তরাঃ কোথায় ব্যাথা পেয়েছো দেখি,,,,???
সিয়ামঃ (হাসি মুখ আবার মলিন হয়ে গেলো,,,) না,,, দেকাবো না,,,, তুমি পতা মা,,,, একতু পলই আমাকে একা পেলে তলে যাবে আমি দানি,,,তোমাল থাতে আমাল কতা নেই,,,,
হৃদয়ঃ তোমার মা আর যাবে না তোমাকে ছেড়ে,,,, রাতে গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে,,, খাবার খাইয়ে দেবে,,, তোমার সাথে খেলবে,,,যা যা তুমি বলতে সব করবে,,,। সব সময় তুমি না বলতে মা আসলে এটা করবো ওটা করবো,,, এবার থেকে সব করবে,,,,
সিয়ামঃ সত্তি,,,,(খুশিতে মুখ চকচক করছে ছোট্ট সিয়ামের,,,)
অন্তরাঃ হ্যাঁ বাবা,,, সত্যি,,,, অনেক মজা করবো আমরা,,,,(বুকের সাথে জড়িয়ে,, এর মতো শান্তি হয়তো পৃথিবীতে আর কোন কিছুতেই আল্লাহ দেয়নি,,,,, যখন প্রথম নিজের সন্তানকে অনুভব করেছিলাম ঠিক সেই অনুভূতি,,,)
হৃদয়ঃ(এই দিনটার জন্যই এতোকিছু করেছি আমি,,, এতগুলো দিন অপেক্ষা করেছি,,, আজ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি মনে হচ্ছে,,, আমার জীবন সম্পূর্ণ হতে চলেছে খুব তাড়াতাড়ি,,,।)
(অন্তরার বিয়ের আয়োজন চলছে,,,, কেউ দেখে বলবে না দ্বিতীয় বিয়ে,,,, আরাভ কিছুর কমতি রাখেনি,,,, এবার যে সবাই খুশি এই বিয়েতে,,, সবচেয়ে বেশি খুশি সিয়াম,,,, বাবা-মার বিয়ে দেখবে বলে কথা,,,, হৃদয় আর সিয়ামের সাজ সবসময় একরকম,,,,)
,,,,,,,,,বর এসেছে,,,বর এসেছে,,,,
(সবাই অন্তরাকে রেখে বর দেখতে চলে গেলো,,, শুধু জ্যোতি বসে রইলো অন্তরার পাশে,,,)
জ্যোতিঃ সেই তো মানলি এতো কাহিনি কেন করলি,,??
অন্তরাঃ আমার জায়গায় থাকলে বুঝতে পারতি,,,,
জ্যোতিঃ হুম,,, যার সমস্যা সেই ভালো বুঝে,,,
অন্তরাঃ তুই আন্টিকে কী বলেছিস,,,??
জ্যোতিঃ কই,,,,,,
অন্তরাঃ বিয়ে করবি নাকি,,,,??
জ্যোতিঃ হ্যাঁ,,,,, বয়সতো কম হলো না,,,, বিয়েটা করেই নেই,,,
অন্তরাঃ রিয়াদ ভাইয়া,,,,,,,??
জ্যোতিঃ মরিচীকার পিছনে তো অনেক ছুটলাম,,,, বাবা-মাকে ও অনেক কষ্ট দিয়েছি,,,,আর নিজেও,,,
অন্তরাঃ তোকে আগেই বলেছিলাম জ্যোতি,,,,,,,
জ্যোতিঃ হুম,,,, ভুলটা বুঝতে একটু সময় লেগেছে কিন্তু বুঝতে পেরেছি,,,, তাই শুধরানোর চেষ্টা করছি,,, যাই তোর বর দেখে আছি,,,,
অন্তরাঃ,,,,,,,,,,
জ্যোতিঃ ও মা লজ্জা পাচ্ছে আমার লজ্জাবতী লতিকা,,,,, তুই লজ্জা পেতে থাক আমি আসছি এখনই,,,
অন্তরাঃ( সত্যি তো আমার এতো লজ্জা কেন করছে,,,?? এটা তো আর আমার প্রথম বিয়ে ন,,,,,,,,,,না,,,, হ্যাঁ প্রথম বিয়ে না,,,,। সেটা সত্যি বিয়ে ছিলো তো,,?? বিয়ের মানেই বুঝতে শিখিনি আর তখন বিয়ে নামের পুতুল খেলার শিকার হয়েছি,,,,, ভালোবাসতে শেখার আগে ঘৃণা করতে শিখিয়েছেন আপনারা,,,, বড্ড জানতে ইচ্ছে করে এখন ভালো আছেন তো মনের মতো বউ আর বৌমা পেয়ে,,,?? চোখদুটো আবার টলটল করছে পানিতে,,,,??)
,,,,
জ্যোতিঃ হৃদয় ভাইয়াকে আজ একদম রাজপুত্র লাগছে,,,কোলে সিয়াম,,,, ইস এটাকে তো বাপের থেকেও কিউট লাগছে,,,, (নিচে নামতে গিয়ে থেমে গেলাম,,,, রিয়াদ ভাইয়া বের হলো হৃদয় ভাইয়ার পেছন থেকে,,, উনি তো বলেছেন যেন উনাকে আর কখনো আমার মুখ না দেখাই,,,, পেছনে ঘুরে ওপরে উঠে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পা পিছলে গেলো,,,, আজ আমি শেষ,,,)
,,,,আমি যতদিন আছি তোমার কিছু হতে দেবো বুঝি,,,??
চলবে,,
💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part: 31
,,,,আমি যতদিন আছি তোমার কিছু হতে দেবো বুঝি,,,??
জ্যোতিঃ ( পড়িনি,,, কেউ ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো আবার,,, বুকে হাত দিয়ে একটা শ্বাস নিলাম,,, কিন্তু ধরলো কে,,,?? তাড়াতাড়ি পিছনে ফিরে তাকালাম,,, কেউ নেই সিড়িতে,,,,, তাহলে ভূতে ধরলো নাকি আমায়,,, কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হচ্ছে,,,, দুতলায় কনে সাজানো রুম,,, আর নিচে বিয়ের আয়োজন হচ্ছে,,,, আমি তাড়াতাড়ি আবার অন্তরার রুমের দিকে গেলাম,,,, রিয়াদ ভাইয়ার চোখে পড়ার আগে,,,, কিন্তু আমায় ধরলো কে,,,,,??)
অন্তরাঃ(কারো আসার শব্দে চোখ মুছে নিলাম,,) জ্যোতি,,,, ফিরে এলি যে,,,,
জ্যোতিঃ,,,,,,,,,,,,,
অন্তরাঃ কী ভাবছিস তুই,,,,??
জ্যোতিঃ না এই সিঁড়িতে,,,,,,,,
অন্তরাঃ সিঁড়িতে কী,,,,,,??
জ্যোতিঃ না কিছু না,,,,, অনেক ভীড়,,, আমি নাহয় পরে কথা বলে নেবো হৃদয় ভাইয়ার সাথে,,,,, কিন্তু হৃদয় ভাইয়াকে দেখতে না পুরো কোরিয়ান হিরো লাগছে,,,,,,
অন্তরাঃ তো,,,,,,,,,??
জ্যোতিঃ এ্যা,,,,, একটু আগে না হৃদয় ভাইয়ার কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলি এখন বলছিস তো,,,??
অন্তরাঃ বাজে বকা বন্ধ কর,,,,,,,
জ্যোতিঃ ওকে,,,, আয় তো কয়েকটা সেলফি তুলি,,,,, শুধু আমার আর তোর তুলতে পারবো এখন,,,,,,
অন্তরাঃ হুম,,,,,,,,
(কয়েকটা সেলফি তুলতেই হৃদয়ের কল এলো জ্যোতির ফোনে,,,,,)
জ্যোতিঃ কী রে,,, তোর ফোন কই,,,?? তোর বর আমাকে ফোন করছে,,,??
অন্তরাঃ ফোনের খবর আমি জানি না,,, ইমন (মামাতো ভাই) নিয়েছে মনে হয়,,, এতো ছোট বয়সে ফোনের এতো নেশা ওর,,,,
জ্যোতিঃ যা বকবক করতে করতে কেটে গেলো,,,৷ দাড়া ব্যাক করি,,,, এই আবার দিছে,,,,, জী জিজু বলেন,,
হৃদয়ঃ জিজু,,,,,,???
জ্যোতিঃ হ্যাঁ আজ থেকে তো জিজুই,,,, দুলাভাই টা কেমন যেনো লাগে,,,,
হৃদয়ঃ তোমার ফাজলামি রাখো আর বলো অন্তরা কই আর ওর ফোন কই,,,,
জ্যোতিঃ তাই তো বলি,,,, আজ বউ রেখে আমাকে কেন সরণ হলো,,,, আপনার বউয়ের ফোন কে নিছে খবর নেই,,,, আর বউ এখন আমার সাথেই আছে,,,, কেন কী হয়েছে??
হৃদয়ঃ ধূর আর বলো না,,, ভাবছিলাম আমার বউ আমি আগে দেখবো,,,,,, বাট সেটা আর হলো না,,, বিয়ে করতে এসেছি কিন্তু এখনো বউয়ের চেহারা কেমন তাই জানি না,,,,,,,
অন্তরাঃ(জ্যোতি ফোন লাউডস্পিকার দিয়েছিলো তাই সব শুনতে পাচ্ছি,,, জ্যোতির হাত থেকে ফোন নিয়ে লাউডস্পিকার অফ করে কানে দিলাম,,, জ্যোতি তা দেখে মুচকি হাসলো,,,)
জ্যোতিঃ তোরা কথা বল আমি আসছি,,,,
(জ্যোতি বের হওয়ার সময় দরজা আটকে গেলো,,,,)
জ্যোতিঃ(তনয়,,,,,,??? উনি এখানে কী করছে,,,?? আজ যেন একটু বেশি হান্ডসাম লাগছে,,, অন্যদিকে চলে যেতে নিলাম)
তনয়ঃ জ্যোতি,,,,,,,,
জ্যোতিঃ জী স্যার,,,, কিছু বলবেন,,,??
তনয়ঃ এখন না তুমি ঐ অফিসে জব করো,,, না আমি করি,,, তাহলে স্যার কেন বলছো,,,??
জ্যোতিঃ অভ্যাস,,,, আপনি কেন করেন না,,,,??
তনয়ঃ জব করতাম সময় কাটাতে,,,,প্রয়োজনের জন্য না,,,, যার জবটার প্রয়োজন তাকে দিয়ে দিয়েছি,,,,,
জ্যোতিঃ মানে,,,,??
তনয়ঃ কিছু না,,,,
জ্যোতিঃ আপনি এখানে,,,??
তনয়ঃ রিয়াদ আমার ছোটবেলা বন্ধু,,,,
জ্যোতিঃ ওহ্
তনয়ঃ you are looking so beautiful,,,
জ্যোতিঃ (উনার কথায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম,,,) thanks,,,,, আমি আসছি,,,(চলে এলাম উনার সামনে থেকে)
তনয়ঃ কারো না কারো তো তুমি হবেই,,,, সে আমি কেন নই,,,,???
,,,,,,
হৃদয়ঃ একেই বলে কপাল,,,,,
অন্তরাঃ এখন দেখে যদি মনে হয়,,,, বিয়ে করতে চেয়ে ভুল করেছেন,,,, যদি আফসোস করেন,,??
হৃদয়ঃ হৃদয় চৌধুরী আফসোস করার মতো কিছু করে না,,,, এবার তো বাসর ঘরেই নিজের বউ দেখবো,,,, তবে আটা ময়দায় ঢাকা নয়,,, সদ্য গোসল করে ভেজা চুলে আমার সামনে আসবে,,,, (ফিসফিস করে,,)
অন্তরাঃ(উনার এমন কথা শুনে গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেছে,,,)
হৃদয়ঃ তবে আমার বউ যেন আর কেউ না দেখে,,, এতোদিন যেমন প্যাকেট করা পেয়েছি আজও যেনো তেমনই পাই,,,,
অন্তরাঃ আমি সুন্নতি পর্দা করি না মশাই,,,, আপনার কপাল খারাপ তাই পর্দা অবস্থায় পেয়েছেন সবসময়,,,,,,,
হৃদয়ঃ উহুম,,,খারাপ নয় ভালো,,, তাই পর্দায় পেয়েছি,,, আর পর্দা করো না,,,,?? ওকে,,,আজ থেকে করবে,,,, কবুল বলার পর থেকে করবে,,,,, আমি চাই না আমার বউ অন্যকেউ দেখুক,,,,
অন্তরাঃ(কতো তফাত হয় মানুষের মাঝে,,,, বিয়ের পর কোথাও গেলে বোরখা পরতে চাইতাম,,, আরিয়ান বলতো যতসব গাইয়ার দল,,,, আর উনি,,??)
হৃদয়ঃ কী হলো করবে তো,,,??
অন্তরাঃ হুম করবো,,,?? কিন্তু আজ বোরখা পরলে মানুষ কী বলবে,,??
হৃদয়ঃ সেটা আমি বুঝে নিবো,,,, এত তাড়াতাড়ি সব হওয়ায় বোরখার কথা মনেই আসেনি,,, আমি এখনই ব্যবস্থা করছি,,,,
অন্তরাঃ কিন্তু আপনি এতো মানুষের সামনে কথা বলছেন কীভাবে,,,,?? আর কারো কথার আওয়াজও আসছে না কেন,,,??
হৃদয়ঃ আমিতো ওয়াশরুমে,,,, নিজের বউয়ের সাথে কথা বলার জন্য কী কী করা লাগে,,,??
অন্তরাঃ ছি,,,, আপনি ওয়াশরুমে বসে আমার সাথে কথা বলছেন,,,,??
হৃদয়ঃ আরে বোকা বউয়ের সাথে লজ্জার কী আছে,,,?? আর আমি ওয়াশরুমে এসেছি তোমার সাথে কথা বলতে,,,,,
অন্তরাঃ মানে,,,,,
হৃদয়ঃ মানে হচ্ছে সকাল থেকে তোমার ফোনে ট্রাই করছি কিন্তু রিসিভ করছো না,,, এখন আবার অফ বলছে,,,, জ্যোতির কথা আমার মাথাতেই আসেনি,,, একটু আগে সিঁড়িতে জ্যোতিকে দেখে ওর কথা মাথায় এলো,,, তাই ওয়াশরুমে এলাম,,,
অন্তরাঃ এতোক্ষণ ধরে আপনি ওয়াশরুমে,,,??
হৃদয়ঃ হুম,,, তো কী হয়েছে,,,??
অন্তরাঃ হাহাহা,,, মানুষ বলবে বরের পেট খারাপ হয়েছে,,,,,
হৃদয়ঃ What,,,,,,??
অন্তরাঃ জী,,,,,হাহাহাহা
হৃদয়ঃ O my god,,,,, এটাতো আমার মাথায় আসেনি,,,, তোমার সাথে কথা না বলে,,,মাথায় খারাপ হয়ে গেছিলো আর কিছু চিন্তায় করিনি,,,,
Are you ready to get marriage,,,?? (রোমান্টিক স্বরে)
অন্তরাঃ,,,,,,,,,,,
হৃদয়ঃ Are you ready to get marriage,,,?? (ভ্রু কুচকে,,,)
অন্তরাঃ হুম,,,,(নিচু স্বরে,,,,)
হৃদয়ঃ আমিতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,,,, তোমার আবার মন চেঞ্জ হয়ে গেলো নাকি,,,,
অন্তরাঃ,,,,,,,,
হৃদয়ঃ love you a lot(অন্তরার উত্তরের অপেক্ষা না করে ফোন রেখে দিলাম,,, আমি জানি এখনই এর উত্তর আমি পাবো না,,,
রিয়াদঃ ঐ হৃদয়,,,, ওয়াশরুমে ঘুমিয়ে পড়েছিস নাকি,,,, সবাই অপেক্ষা করছে,,,
হৃদয়ঃ আসছি,,,,,
(হৃদয় গিয়ে নিজের জায়গায় বসে পড়লো,,,,)
কাজিঃ কনে নিয়ে আসুন,,,,
হৃদয়ঃ এখানে আনার দরকার নেই,,,,, আপনারা গিয়ে সাইন নিয়ে আসুন,,,,
কাজিনঃ আরে,,,,আমরা বউ দেখবো না,,,,,??
হৃদয়ঃ(আমার বউ আমি দেখলাম না উনারা দেখার জন্য লাফাচ্ছে,,,,) আমি চাই না আমার বউ আর কেউ দেখুক,,,
(হৃদয়ের কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাঁসছে,,,,)
কাজিনঃ আরে বলে কী,,,?? আমরা ছবি তুলবো না,,,??
রিয়াদঃ হৃদয় যখন না করছে সেখানে এতো কথা কীসের,,,??(গম্ভীর কণ্ঠে)
(রিয়াদের কথা শুনে সবাই চুপ করে গেলো,,, কারণ ওকে সবাই ভয় পায়,,,, হৃদয়কে কবুল বলতে বললে একদমে বলে দিলো আর সাইনও করে দিলো ফট করে,,,,)
কাজিঃ মা কবুল বলুন,,,,,
অন্তরাঃ(গলা মনে হচ্ছে কেউ চেপে ধরেছে,,, বারবার আরিয়ানের করা অত্যাচার চোখে ভাসছে,,, এই কবুল আমাকে একটা নরকে পাঠিয়ে দিয়েছিলো,,,, আবার সেই কবুল কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে আমাকে,,,,?? না না কী ভাবছি আমি,,,?? আরিয়ান আর হৃদয় দুজন দুই মেরুর মানুষ,,,, এবার চোখ বন্ধ করতেই হৃদয়ের করা পাগলামি গুলো ভেসে ওঠলো চোখের সামনে,,, চোখের কোনে পানি নিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে ওঠলো,,,,,)
জ্যোতিঃ কী ভাবছিস,,,,?? কবুল বল,,,,
অন্তরাঃ(হৃদয় আর সিয়ামের মুখটা মনে করলাম,,) ক,,,কবুল,,, কবুল,,,,,, কবুল,,,(বলা শেষে জ্যোতিকে জড়িয়ে ধরলাম)
জ্যোতিঃ ভয় পাস না,,,, হৃদয় ভাইয়া তোকে ভালোবাসে,,,,,
কাজিঃ এবার এখানে সাইন করুন মা,,,,,,
(জ্যোতি কলম নিয়ে অন্তরার হাতে দিলো)
অন্তরাঃ(হাত এতো কাঁপছে কেন,,,, সাইন করার জন্য কলম ধরে আছি,,, হাত কাঁপছে,,,)
জ্যোতিঃ ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক এখন তুই হৃদয় ভাইয়ার স্ত্রী,,,,, এটা শুধু প্রমাণ মাত্র,,,, সাইন করে দে,,,,
অন্তরাঃ(সাইন করে দিলাম,,,, সবাই চলে গেলো,, আর আমার বান্ধবীরা আমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে,,, আমি জ্যোতিকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি,,, এখনো কেন জানি খুব ভয় করছে,,,?? ওরা সবাই হয়তো আমার অবস্থা বুঝতে পারছে তাই আজেবাজে মজা না করে সবাই বাইরে চলে গেলো,,) এখনো এতো ভয় কেন করছে জ্যোতি,,,?? আমি ঠিক করলাম তো,,,??
জ্যোতিঃ একদম ঠিক করেছিস,,,?? জীবনের একটা দুর্ঘটনা ভেবে অতীত ভুলে যা এবার,,,, নতুন করে বাঁচার চেষ্টা কর,,,, তুই অনেক ভাগ্যবান তাই নতুন করে বাঁচার জন্য হৃদয় ভাইয়ার মতো মানুষকে পাশে পেয়েছিস,,,,, সবার ভাগ্য এমন হয় না,,,, সারাজীবন অতীতের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বাঁচতে হয় অনেক কে,,, আমার বিশ্বাস তুই একদিন তোর অতীত একেবারে ভুলে যাবি হৃদয় ভাইয়ার জন্য,,,,
অন্তরাঃ তাই যেনো হয়,,,, আমি ভুলতে চাই অন্ধকার অতীত,,,,,। ভুলে যেতে চাই এই ডিভোর্সি শব্দ,,,,।
ক্রিংক্রিংক্রিং
জ্যোতিঃ হৃদয় ভাইয়া,,,,, নে কথা বল,,,,
অন্তরাঃ তুই বল,,, আমার ভয় করছে,,,,,
জ্যোতিঃ হ্যালো,,,,,,
হৃদয়ঃ বোরখা পাঠিয়ে দিয়েছি,,,,, অন্তরাকে পড়িয়ে দিয়ো,,,,,
জ্যোতিঃ ঠিক আছে,,,, কিন্তু ভাইয়া আপনার বউ ভয়,,,,,,,প,,পাচ্ছে,,,,, কেটে দিলো,,,,,
অন্তরাঃ কেটে দিয়েছে,,,,???
জ্যোতিঃ হুম,,,,( কী হলো ব্যাপারটা,,,,?? গলা এমন কঠিন কঠিন লাগলো কেন,,,??)
অন্তরাঃ আমার কথা কিছু জিজ্ঞেস করেছে,,,??
জ্যোতিঃ ন,,না,,,,
ঠকঠকঠক
জ্যোতিঃ জী,,,, বলুন,,
,,,,এই প্যাকেটা হৃদয় স্যার পাঠিয়েছে,,,
জ্যোতিঃ ধন্যবাদ,,,,,,,,,,
(দরজা আটকে দেওয়ার আগে কিছু মহিলা ঢুকে গেলো,,,)
,,,আরে দাড়াও দাড়াও,,,, বউ দেখে নেই,,,,,
,,,,,,মেয়ের কপাল আছে বলতে হবে,,,,,,
,,,,,,হুম,, ঠিক বলেছো,,, ডিভোর্সি হয়ে কী সুন্দর আর বড়লোক বর পেয়েছে,,,,
,,,,,,,,হ্যাঁ গো ভাবি ঠিক বলেছো,,,,, আমরা তো অবিবাহিত হয়েও এমন বর চাইনি,,,,
,,,,,,,আবার নাকি জীবনে বাচ্চাও হবে না,,,,,,
,,,,,,,,,, কীভাবে পটালে গো,,, একটু আমাদের বলো শুনি,,,??
,,,,,,,,,,,দেখতে তো কম না,,, রুপ ছাড়া আর কী দেখিয়ে ফাসাবে???
,,,,,,,,,,,রুপের মোহ কতদিন থাকবে,,, যখন বাচ্চা না হবে তখন রুপের মোহ কেটে যাবে,,,,,
অন্তরাঃ(বিষের মতো লাগছে উনাদের কথা,,,,, এই ভয়েই ফিরিয়ে দিয়েছিলাম হৃদয়কে,,,, উনি কী সত্যি এমন করবে আমার সাথে,,,?? টপটপ করে পানি পড়ছে চোখ থেকে,,,)
জ্যোতিঃ রুপের মোহ কাটবে কী,,, কাটবে না,,,?? সেটা নাহয় হৃদয় চৌধুরী বুঝে নিবে,,,, আপনাদের এতো ভাবতে হবে না,,,,। আর কীভাবে ফাসালো জানতে চান,,,?? আমি বলছি,,, এই মেয়ের ভিতরে যে একটা মন আছে তার ভালোবাসায় ফেঁসে গেছে হৃদয় চৌধুরী,,,। আর রুপতো এখনো দেখেইনি,,,, রুপ দেখলে কী হবে সেটা আমিও ভাবছি,,,??? এখন আপনারা আসতে পারেন,,,,
(সবগুলো মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো,,,,)
জ্যোতিঃ ফালতু যতসব,,,,
অন্তরাঃ তুই আর কতদিন এমন ঝগড়া করবি,,,,??
জ্যোতিঃ আজই শেষ,,, কারণ তোর জন্য প্রতিবাদ করার মানুষ এসে গেছে,,,। দেখ বোরখা টা কিন্তু অসম্ভব সুন্দর,,,,। এটাতো খিমার বোরখা,,, নিউ কালেকশন ,,,
অন্তরাঃ হুম,,,,,,
জ্যোতিঃ এতো সুন্দর বোরখা আমি আগে দেখিনি,,,, বিয়ের ড্রেস মনে হচ্ছে,,,, পাথর দিয়ে ডিজাইন করা দেখ,,, কালারটাও সেই,,, গোলাপি,, বিয়েতে পরার জন্য পার্ফেক্ট,,, পরে নে,,,,
,,,,,,,,
অন্তরাঃ বাসরঘর দেখে অবাক হলাম,,,,,,, ফুলের ছিটেফোঁটা নেই,,,, অনেক পরিপাটি করে গোছানো একটা রুম,,,, আমার রুম এর অর্ধেক হবে ,,, রুমের সব সাদা রঙের,,,, দেয়াল,,পর্দা,,বেড,, রুমের আসবাবপত্র সব সাদা,,, বেডের ওপরে দেয়ালে হৃদয়ের একটা বড় ছবি টানানো,,,, বাস্কেটবল হাতে,,,কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে,,, কপালে কিছু চুল লেপ্টে আছে হয়তো খেলার সময় তোলা,,,, অসম্ভব সুন্দর লাগছে ,,,, আজ উনার ব্যবহার দেখে অবাক লাগছে,,,,,, আসার সময় বোরখা নিয়েও অনেকে কানাঘুষা করেছে,, উনি কিছু বলেনি,,, আমার দিকে একবার তাকায়নি,,,, গাড়িতে আমি যখন কান্না করছিলাম তখনও কিছু বলেনি নিজের মতো ফোন টিপছিলো,,, চোখ মোছার জন্য এক বাক্স টিসু এগিয়ে দিয়েছে,,,, চোখ ফোনের দিকে রেখে,,, গাড়ি থেকে আমার আগে নেমে কোথাও চলে গেছে আর দেখিনি তাকে,,,, আর এখন এই বাসরঘর,,,,,। কী হচ্ছে এসব,,,?? আমার ভয় এখন বেড়ে চেলেছে,,,। উনি কী জেদের বসেই বিয়ে করেছে,,,?? ভাবতে পারছি না,,, ওর কাজিন হবে হয়তো,,, সে একা প্যাকেট দিয়ে বলে গেলো গোসল করে নিতে,,, সেটা খোলে খুব সুন্দর একটা নীল শাড়ী পেলাম,,, সাথে প্রয়োজনীয় সবকিছুই,,,, মাথা ভনভন করছে,,,, গোসল করতে চলে গেলাম,,,, রুম পরে দেখবো,,,, ওয়াশরুমটাও অনেক বড়,,, আমার ওয়াশরুম এর তুলনায় একটা কবুতরের বাসা,,,, গয়না,,মেকআপ সব খোলে গোসল করতে লাগলাম,,,,, আমার এমনই গোসল করতে ১ ঘন্টা লাগে,,,, আজ মনে হচ্ছে তিন ঘন্টা লাগবে,,, যে মেকআপ,,,,, অনেক সময় নিয়ে গোসল করে ওয়াশরুমের দরজা খোলে রুমের দিকে তাকাতেই ভয় পেয়ে গেলাম,,,,,
চলবে,,,,