#ভালোবাসি
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana (Writer)
আজ তুলির শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। স্কুল থেকে আসার পরেই নিজের রুমে শুয়ে ছিলো। আজ আর রান্না করতে যায় নি। ওভাবেই ঘুমিয়ে পরে।
সায়ান অফিস থেকে ফিরে রান্না করে। তারপর গোছল করে ডিনার করে নিজের রুমে গিয়ে কাজ করতে থাকে।
রাত দশটায় তুলির ঘুম ভাঙে কিন্তু খুব খারাপ লাগছে। শরীর গরম। তুলি বিছানা থেকে নেমে সায়ানের রুমে যায়। দাঁড়ানোর শক্তি নেই। তুলির উপস্থিতি টের পেয়ে সায়ান পেছনে না তাকিয়ে বলে
“তুই আমার রুমে কেনো এসেছিস? যা এখান থেকে।
” আমার খুব খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দেন না
অসুস্থ কন্ঠে বলে তুলি। সায়ান তুলির দিকে তাকায়। তুলি ঢুলে পরছে
“কি হয়েছে তোর?
তুলি কিছু বলতে পারে না। পরে যেতে নেয় সায়ান ধরে ফেলে
” এর তো প্রচন্ড জ্বর।
সায়ান তুলিকে সায়ানের বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। তুলির মাথায় জলপট্টি দেয়। জ্বরটা একটু কমলে খাবার নিয়ে আসে। তুলিকে খায়িয়ে ঔষুধ খাইয়ে দেয়।
সায়ান তুলির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অপুর্ব সুন্দর মেয়েটা। এর চোখে মুখে প্রচন্ড মায়া। তখন সায়ানের ফোন বেজে ওঠে
“হেলো
” কি করো
“কিছু না
” আমাকে জিজ্ঞেস করবে না
“জানার প্রয়োজন মনে করি না
” সায়ান তুমি
“মায়া আমার লাইফ থেকে চলে যাও প্লিজ। একটু ভালো থাকতে দাও না আমায়। একটু শান্তিতে থাকতে চাই আমি
সায়ান ফোন কেটে দেয়। ফোনটা আছার মেরে ভেঙে ফেলে। তারপর আবার তুলির মুখের দিকে তাকায়।
সকালে তুলির ঘুম ভাঙতে নিজের ওপর ভারি কি অনুভব করে তুলি। চট করে চোখ খুলে দেখে সায়ান তুলিকে ধরে শুয়ে আছে। সায়ানের মুখটা তুলির মুখের খুব কাছে। তুলি তারাহুরো করে সরে যায়। সায়ানের ও ঘুম ভেঙে যায়।
” আপনি আমাকে কেনো টাচ করলেন?
সায়ান বসে বলে
“তোকে বলতে হবে
” হ্যাঁ হবে
“তোর জ্বর হয়েছিলো
” তো
“তো মানে
” আমার জ্বর হোক বা আমি মরে যায় তাতে আপনার কি? আপনাকে সিনপেথি দেখাতে কে বলছে
এটুকু কথা বলে তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে ভয় পায়। কারণ সায়ান অসম্ভব রেগে গেছে
“কি বললি তুই আমার কি
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান। তুলি ঢোক গিলে সাহস জুগিয়ে বলে
” ঠিক ই তো বললাম আপনার কি
সায়ান বিছানা থেকে নেমে তুলির দিকে এগিয়ে যায়। তুলি দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। সায়ান দরজা ধাক্কিয়ে বলে
“খোল বলছি
” আমারে কি পাগল পাইছেন না কি? স্বেচ্ছায় সিংহের সামনে দাঁড়াবো
সায়ান দরজার আড়ালে একটু দাঁড়িয়ে চলে যায়। একঘন্টা পরে তুলি বের হয়। ততোখনে সায়ান অফিসে চলে যায়।
আজ আর তুলি স্কুলে যায় না। বাড়িতে বসে আছে। একা একা ভালো লাগছে না। পুরো বাড়ি ঘুরে দেখছে। পরে সায়ানের রুমে যায়। সায়ান আজকে ভুলে আলমারি খুলে রেখে গেছে। তুলি সায়ানের আলমারির সামনে একটা ওড়না দেখে এগিয়ে যায়। ওড়নায় মুরানো অনেক অনেক ছবি একটা খাতা অনেক গুলো চিঠি। তুলি ওগুলো বিছানায় রাখে।
সায়ান আর মায়ার ছবি সব। দুজনের মুখেই হাসি। সায়ানের হাসি মুখ দেখে তুলির ভালো লাগে। তারপর চিঠি গুলো দেখে। সব গুলো চিঠি মায়ার লেখা। আর খাতাটা দশ বছর আগের। সায়ানের লেখা মায়াকে নিয়ে কত কথা।
“সায়ান ভাইয়া মায়া আপুকে এতো ভালোবাসে। তাহলে মায়া ওনাকে ঠকালো কেনো? এরকম একটা মানুষের সাথে কেনো এমন করলেন?
তুলি সব কিছু সুন্দর করে গুছিয়ে রাখলো। তারপর নিজের রুমে চলে গেলো
” সায়ান আসবো
“হুম আয়
আকাশ সায়ানের পাশে চেয়ার টেনে বসে। সায়ান ফাইল দেখায় বিজি
” সায়ান মায়াকে কিছু বলছিস না কেনো?
“কি বলবো?
” কি বলবি মানে? তুই মেরিড। তুলি তোর বউ। মায়ার পাগলামিতে তুই কেনো সায় দিচ্ছিস
“আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে শুনতে চায় না
” সায়ান
“তুই আসতে পারিস
আকাশ বেরিয়ে যায়। সায়ান কাজে মন দেয়। তখন মায়া ঢোকে
” সায়ান
“তুমি এখন এখানে কেনো?
” আমি একটু শপিং এ যাবো। তাই তোমাকে নিতে এসেছি
“আমি বিজি
” প্লিজ চলো না। আমরা তো বেস্টফ্রেন্ড। চলো না।
মায়া জোর করে সায়ানকে নিয়ে যায়।
প্রভা আসে তুলির কাছে। একসাথে শপিং এ যায়।
শপিং মলে এসে তুলি সায়ান আর মায়াকে দেখে আড়ালে যায়। মায়া হাজারটা ড্রেস দেখছে আর সায়ানকে দেখাচ্ছে
“এই তুলি এদিকে আসলি কেনো?
” প্রভা আমি বাসায় যাবো
“কিন্তু
” প্লিজ ভাল্লাগছে না
ওরা বাসায় চলে যায়।
আজ বিকেলেই সায়ান বাসায় আসে। তিনজন ফ্রেন্ড নিয়ে আসে। বাড়ির সামনে তুলি ওর সমবয়সী কয়েকজন ছেলের সাথে ফুটবল খেলছে। থ্রীকোয়াটার প্যান্ট আর টিশার্ট পরা।সায়ান বাসায় ঢোকার আগে তুলিকে দেখে দাঁড়িয়ে পরে।
“সায়ান কি হলো? (শুভ)
” তোরা ভেতরে যা আমি আসছি।
সায়ান তুলির কাছে যায়।
“ওই
সায়ানের ধমক মারা ডাকে তুলি থেমে যায়।
” বাসায় যা
তুলি দৌড়ে চলে যায়। সায়ান ওর পিছনে যায়। সায়ানের ফ্রেন্ডরা দাঁড়িয়ে দেখছিলো।
সোফায় বসে আছে সায়ান আর ফ্রেন্ডরা
“সায়ান তোর বউ তো বাচ্চা (রনি)
” বউ তো বউ ই। আর সায়ান আমাদের বড় তো ওর বউকে আমাদের সম্মান দিয়ে ভাবি বলা উচিৎ (আকাশ)
ওরা হেসে ওঠে
“এই পিচ্চিকে ভাবি বলবো ইম্পসিবল (শুভ)
তুলি ওদের জন্য কফি নিয়ে আসে। সবাই তুলির দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ানের খুব রাগ হচ্ছে। ওর ফ্রেন্ড দের কিছু বলতে পারছে না। কারণ ওদের কি দোষ। ওড়না ছাড়া টিশার্ট আর থ্রিকোয়াটার প্যান্ড পরে ওদের সামনে এসেছে।
” ওই তোকে কফি বানাতে কে বলেছো
চেচিয়ে বলে সায়ান। তুলি আমতাআমতা করে
“আসলে
সায়ান ঠাস করে তুলির গালে চর বসিয়ে দেয়। তুলি ছিটকে পরে যায়। টেবিলের সাথে লেগে মাথা কেটে যায়। ওর বন্ধুরা নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
” ওকে মারলি কেনো তুই?
আকাশ বলে। আকাশ তুলিকে ধরে ওঠায়। তুলি কান্না করছে। সায়ান মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ ওর রুমাল দিয়ে তুলির কপাল মুছাতে যায়। তুলি বাধা দেয়
“তুলি আমি তোমার ভাইয়ের মতো। সায়ানকে আমি ভাইয়া বলি তো তুমি আমার ভাবি। ভাবির একটু যত্ন তো করতেই পারি।
আকাশ কপালটা পরিষ্কার করে দেয়। তুলি নিজের রুমে চলে যায়। ওভাবেই কান্না করতে থাকে। সায়ান তুলিকে দেখতে আসে না।
পরেরদিন তুলি হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে। একটা গাড়ি তুলির খুব কাছ দিয়ে ঘেসে যায়। তুলি চিৎকার দিয়ে বসে পরে। গাড়িটা থেমে যায়। গাড়ি থেকে একটা লোক নেমে আসে।
লোকটা তুলির সামনে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। লোকটা তুলির কাছে হাটু গেরে বসে তুলির মুখে হাত দিতে গেলে তুলি তারাহুরো করে উঠে ওরে। লোকটাও উঠে দাঁড়ায়।
” কেমন আছো তুলি?
তুলি লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মানুষটাই তুলির বাবা। দশ বছর বয়সে শেষ দেখেছিলো তুলি তুলির বাবাকে। পাঁচ বছর পরে আবার দেখছে। তুলির কান্না পাচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকায় তুলি।
“খুব ভালো আছি।
তুলি চলে যেতে নেয়
” মামনি
“স্টপ। আমি আপনার মামনি না। আমি তুলি। শুধু আমার মায়ের তুলি। আমার বাপি মারা গেছে। আর কখনো আমার সামনে আসবেন না। আই হেট ইউ
চলবে