মুখোশের_আড়ালে পর্ব-১২

0
3085

#মুখোশের_আড়ালে
#Writerঃতাসনিম_রাইসা(আরিয়ান)
#Partঃ12

আরিয়ান আর রাই বাসায় পৌঁছে যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে…আরিয়ান মিমির কেশের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছে,এইদিকে রাই রান্না বসিয়ে দেয়…হসপিটালে সবার জন্য খাবার নিয়ে যেতে হবে…রান্না করার সময় রাইয়ের ফোন ওর একটা বান্ধবীর কল আসে…রাইকে কলেজে যাওয়ার জন্য বললে রাই সাফসাফ না করে দেয় ও এই মুহূর্তে কলেজে যেতে পারবে না…এই ব্যপারে পিন্সিপাল স্যারের ও পরে কথা বলে নেবে…

আরিয়ান রাইকে রান্না শেষ করে ওর রুমে যেতে বলে…রাই রান্না শেষ করে সব ঠিকঠাক করে আরিয়ানের কাছে যায়…আরিয়ান রসিকে শুরু থেকে সবটা পুনরায় বলতে বলে…রাই সবটা খুলে বলে…আরিয়ান বেশ বুঝতে পারছে এখানে কোনো একটা রহস্য লুকিয়ে আছে…হঠাৎ আরিয়ানের মাথায় একটা প্রশ্ন জাগে,ও রাইকে জিজ্ঞাসা করে…

আরিয়ানঃআচ্ছা রাই রাজ কি তোমায় পছন্দ করতো??
.
রাইঃহুম উনি আমায় বলেছিল কিন্তু আমি রাজি হই নি…উনাকে সাফসাফ মানা করে দিয়েছি…উনাকে কখনো আমি ওরকম চোখে দেখি নি ভাই হিসেবেই জেনেছি আর উনি আমার সাথে এতো বড় একটা অন্যায় করলো…
.
আরিয়ানঃতোমার পেটের বাচ্চাটা কি ওর??
.
রাইঃতা তো আমি বলতে পারবো না(মাথা নিচু করে)
.
আরিয়ানঃদেখো রাই আমার কথায় তুমি কষ্ট পেও না…এই কেশটার জন্য এগুলো জানাটা খুব দরকার
.
রাইঃনাহ সমস্যা নেই আমি ঠিক আছি
.
আরিয়ানঃকাল ডক্টরের কাছে গিয়ে তোমার টেস্ট করাবো,তাতে জানা যাবে বাচ্চাটা তোমার নাকি এর আগে যে ধর্ষণ করেছে তার

অন্যকারো কথা বলতেই রাইয়ের হঠাৎই একটা কথা মনে পরে গেলো…ওর জানামতে সিয়াম ওকে পছন্দ করতো বাট ওর ক্ষতি করার চেষ্টা কখনো করে নি আর করতোও না…এতটুকু বিশ্বাস ওর আছে…ও আরিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো…

রাইঃআরিয়ান ভাইয়া আমার মাথায় একটা কথা কিছুতেই ঢুকছে না
.
আরিয়ানঃকি??
.
রাইঃসিয়াম ভাইয়ার কখনো রিতু আপুর দিকে খারাপ নজর ছিল না,উনি আপুকে নিজের বড় বোনের মতো ভাবতো সেই উনি কি করে আপুকে ধর্ষণ করবে
.
আরিয়ানঃমানুষের মনে কি চলে তা উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না আর বুঝতেও পারে না…
.
রাইঃতা না হয় বুঝলাম কিন্তু রিতু আপু মরার ৭ ৮ মাস আগেই তো উনি লন্ডন চলে যান…উনি লন্ডন থেকে এখনো আসে নি…আমি সেদিন কাকিমনিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম উনি তো না বললেন…উনি লন্ডন থেকে এখানে আসলে আমরা কেউ না কেউ ঠিকই জানতাম…আর উনি আমায় পছন্দ করতো ঠিকই বাট কখনো খারাপ করে নি আর উনি লন্ডন থেকে আমায় ধর্ষণ করবেই বা কি করে??
.
আরিয়ানঃতা আমি সব জানি
.
রাইঃজানো মানে
.
আরিয়ানঃজানি মানে অফিসারকে যখন তুই ঐ অদ্ভুত প্রশ্ন করেছিলে তখন ওনার ফেশটায় ভয়ের ছাপ দেখতে পেয়েছিলাম আর উনি তো রীতিমতো কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছিলেন…কপাল বেয়ে ঘামও পরছিলো
.
রাইঃতার মানে তুমি ব্যাপারটা খেয়াল করেছো
.
আরিয়ানঃহুম করছি আর উনি সিয়ামের কথা যখন বলেছিলেন তখন কথাটা আমার বিশ্বাস হয় নি…কারণ আমিও জানতাম সিয়াম রিতুর সুইসাইড করার আগেই চলে গিয়েছিল আর ও এখনো লন্ডনেই আছে আমি সব খবর নিয়েছি
.
রাইঃতার মানে রাজ ভাইয়া আমাদের নকল ভিডিও দেখিয়েছে
.
আরিয়ানঃহুম হতেও পারে প্রমাণ ছাড়া আমরা এখন কিছুই বলতে পারবো না…নীরবের সেন্সটা ফেরা খুবই দরকার…কারণ ঘটনা সবটা ও জানবে আর রাজকে আমার বেশি সুবিধার মনে হয় না…
.
রাইঃছিঃ একটা মানুষ এতটা নিকৃষ্ট কি করে হতে পারে(কান্না করতে করতে)
.
আরিয়ানঃরাই প্লিজ কান্না থামাও…আর জলদি তৈরি হয়ে নাও আমাদের হসপিটাল যেতে হবে…আম্মু একটু আগে কল দিয়েছিল বললো নীরবের সেন্স ফিরেছে…আমাদের যেতে হবে

রাই আরিয়ানের রুম থেকে বেড়িয়ে খাবার প্যাক করে নিজে তৈরি হয়ে নিলো…আরিয়ান আর রাই হসপিটালে পৌঁছেই নীরবের কেবিনে যাওয়ার সময় রিমির সাথে ও ধাক্কা খায়…রাই রিমিকে দেখে কিছুটা অবাক হলো,রিমিও রাইকে এখানে দেখে অবাক হয়…

রিমিঃরাই তুমি এখানে
.
রিমির বাবাঃতুই ওকে চিনিস
.
রিমিঃহুম তোমায় সেদিন একটা মেয়ের কথা বলেছিলাম না ও সেই মেয়ে
.
রিমির বাবাঃওহ আচ্ছা
.
রিমিঃতোমার শরীর এখন কেমন
.
রাইঃআলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো
.
রিমিঃএই কেবিনের ছেলেটা তোমার কে হয়??
.
রাইঃআমার বড় ভাই
.
রিমিঃওহ উনার এই অবস্থা কি করে হলো??
.
রাইঃপরে সবটা খুলে বলবো…তুমি এখানে কি করছো??
.
রিমিঃএটা আমার বাবার হসপিটাল আর উনি আমার বাবা(আরাফ চৌধুরীকে দেখিয়ে)আমি মাঝে মাঝেই এখানে এসে রোগীদের দেখে যাই
.
রাইঃওহ আচ্ছা

রাই রিমির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নীরবের কেবিনের ভেতরে ঢুকে দেখে নীরব উপরে তাকিয়ে আছে…নীরবের চোখ দিয়ে পানি পরছে…রাইয়ের বুকটা হঠাৎ মুচড়ে উঠলো…নিজের ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে নিজেকে সামলাতে পারছে না…ওর শুধু একটা কথাই এখন মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে…নীরব যদি মিমিকে দেখতে চায় তখন ওরা সবাই কি জবাব দেবে??যদি সবটা শুনে পাগলামি করে কি করে ওকে সামলাবে??মিমিকে পাগলের মতো ভালবাসতো ও,সেই মিমির এই অবস্থায় নিজেকে কি ঠিক রাখতে পারবে!!

রাই আস্তে আস্তে নীরবের কাছে যায়…রাইয়ের মা বাবা চোখ পানি ফেলে যাচ্ছেন…ছেলের এই অবস্থায় ভেঙ্গে পরেছেন।।আরিয়ানের মা বাবা তাদের সামলাতে ব্যস্ত…রাই নীরবের মাথায় হাত রেখে বললো…

রাইঃভাইয়া এখন কেমন আছিস??
.
নীরবঃনিশ্চুপ………
.
রিমির বাবাঃওকে এখন কিছু জিজ্ঞাসা করে লাভ নেই মা…
.

ডাক্তারের কথায় রাই কিছুটা ভয় পায় হঠাৎ ডাক্তার এই কথা কেনো বলছে??ওর ভেতর ভয় কাজ করে…ও জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে রিমির বাবার দিকে তাকিয়ে আছে…

রিমির বাবাঃভয়ের কিছু নেই মা…ও অনেক বড় ধরনের শকড খেয়েছে যার ফলে কথা বলতে পারছে না আর কিছু মনেও করতে পারছে না…
.
আরিয়ানঃকি বলছেন??
.
রিমির বাবাঃহুম তবে চিন্তার কিছু নেই ওর ভালোমতো সেবা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে…

প্রথমে ডাক্তারের কথায় ভয় পেলেও পরে তা কিছুটা কমে…রিমির বাবা আরও কিছুক্ষণ থেকে কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়…রিমি রাইকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়…রাইয়ের কাছে সবটা জানতে চাইলে রাই শুরু থেকে সবটা খুলে বলে…রাইয়ের কথাগুলো শুনে রিমি ওর চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না

রিমি মনে মনে decide করলো ও রাইকে সব ধরনের সাহায্য করবে আর ওর বাবাকে বলে নীরবের দেখাশোনাটা ও করবে…রাই মিমির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রাজের কেবিনে যায়…ঘেন্না করছে ওর তাও এখন যে ওকে নাটক করতেই হবে…

রাইকে নিজের কেবিনে দেখে রাজ কিছুটা অবাক হয়…রাই চুপচাপ রাজকে খাইয়ে দিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।।রাই ওর মা বাবা আর ফুঁপি ফুফাকে জোরপূর্বক বাসায় পাঠিয়ে দেয়।।রাই আর আরিয়ান হসপিটালে থেকে যায়…

দেখতে দেখতে ১ মাস কেটে যায় রাজ এখন পুরোপুরি সুস্থ,নীরব এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে নি…রিমি ওর বেস্ট চেষ্টা করছে নীরবকে পুরোপুরি সুস্থ করতে।।রিমি রাই আর ওর পরিবারের সাথে অনেকটাই মিলে যায়…রাই মিমির মতই একজন বেস্ট ফ্রেন্ড খুঁজে পায় আর ওর ভাইয়ের জন্য পারফেক্ট লাইফ পার্টনার…

আরিয়ান মিমির কেশটা নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যায়…রাইয়ের টেস্ট করে জানতে পারে রাজ ছাড়া আর কার সাথে রাইয়ের ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছে এতে ও পুরো সিউর ছিলো রাজ ওদের সবাইকে মিথ্যে ভিডিও আর মিথ্যে কথা বলেছে…ও চাইছিলো রাজকে খুব শীঘ্রই ওর পাপের শাস্তি দেবে কিন্তু মিমির পোস্টমরটেম রিপোর্ট কেশটা আবার অন্য দিকে ঘুরে যায়…

রিপোর্টে মিমিকে সেদিন রাতে নীরব জোরপূর্বক ধরশর করেছিল যা আরিয়ানকে একটা ঘোড়ের মধ্যে ফেলে দেয়।।রাইও কিছুতে বিশ্বাস করতে পারছে না ওর ভাই এই কাজটা কি করে করলো

রাই কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইছে না তাই ও রিমিকে নিয়ে রাজের ঘর পুরোটা সার্চ করে …ও সিউর এর পেছনে রাজের হাত আছে কারণ ওর ভাই এরকম কিছু করতেই পারে না…রাজের ঘর সার্চ করতেই অরা কিছু রিপোর্ট আর কিছু ওষুধ পায়…

চলবে……..