#প্রেমপ্রদীপ
part–10
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
সকালের মিস্টি আলো চোখে লাগতেই সমুদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। সমুদ্র কখনোই সকালে বেশিক্ষন ধরে ঘুমায় না। সবসময় সকাল সকাল উঠে।
কারন, Early to bed and early to rise, makes a man healthy, weathy and wise .
একথাটা বাবা তার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। সমুদ্র তার বাবাকে তুমি বলে ডাকেনা। আপনি বলে ডাকে। শুধু বাবা না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি শব্দটা ব্যবহৃত করে সে।
সমুদ্রের মনে আছে, প্রথমের দিকে মাকে ছাড়া থাকতে তার কতোটা কষ্ট হতো! স্কুলে ঠিক মতো যেতে পারত না সময় মতো। খাওয়া-দাওয়াও নিয়মমাফিক হত না। যেদিন মা চলে যায়, তার পরেরদিন সমুদ্র অনেক কেদেছিল। কান্না করতে করতে আরো অসুস্থ হয়ে যায় সে। এমনি জ্বরে ভুগছিল তার উপর সে সকাল বেলা উঠে কিছুই খেতে পারছিল না। যা ই খায় বমি করে দেয়। পেটে সহ্য হচ্ছিল না কিছুই। একদিকে বমি করে তো অপর দিকে কান্না। মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে বসেছিল। তখন তো সে বুঝে নি তার মা অনেক দূরে গেছে। চাইলেই সহজে তার কাছে যাওয়া যাবে না। সেদিন দুপুরেই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় তাকে। লুস মোশন, বমি আর প্রচন্ড জ্বর তাকে কাবু করে ফেলে। বারবার মায়ের কথা মনে পড়ত৷ মা থাকলে তার এতো কষ্ট হত না। যদিও বা ইভানা ফুপু সবসময় তার সঙ্গেই ছিল। বাবা যে হাসপাতালে জব করত সেখানেই ভর্তি হয়েছিল জন্য বাবাকেও পাশে পেয়েছিল। বাবা-ফুপু দিয়ে কি মায়ের কমতি পূরণ করা যায়? যায় না!
পৃথিবীতে “মা” হচ্ছে এমন একটি শব্দ যার কোন সমর্থক শব্দ নেই। মায়ের জায়গা কেউ পূরণ করতে পারেনা। বাবাও না! মা না থাকলে সেটা খালি, খালিই রয়ে যায়।
সমুদ্র উঠে ব্রাশ করতে গেল। কিন্তু টুথব্রাশ নেই। কি ঝামেলা। আসার সময় টুথব্রাশ সঙ্গে আনেনি। এখন উপায়? বাথরুমে টুথপেষ্ট আছে। সমুদ্র উপায় না পেয়ে হাতের মধ্য আঙ্গুলে পেষ্ট নিয়ে হাত দিয়েই কোন মতে ব্রাশ করে, কুলি করে বের হলো।
সমুদ্রের হুট করে আয়নার কথা মনে পড়ে গেল। মেয়েটার চোখে পানি ছিল! এজন্য ই বারবার তার খেয়াল মাথায় আসছে। কাউকে কাদতে দেখলে সমুদ্রের ও খুব কষ্ট লাগে।
এখন নয়টা বাজে। বাইরে থেকে খুটখাট শব্দ ভেসে আসছে। সম্ভবত রান্না-বান্না হচ্ছে। সে বের হলো। বের হতেই ডাইনিং রুমে শ্রাবণ আর পিউকে বসে থাকতে দেখল সমুদ্র।
তাদেরকে দেখে বিনয়ী হাসি হাসল। বিনিময়ে শ্রাবণ আর পিউ ও হাসল।
সমুদ্র শ্রাবণ কে উদ্দেশ্য করে বলে, তোদের তো বেশ ভাব জমে গেছে দেখছি।
পিউ মুচকি হেসে বলে, ইয়াহ। শ্রাবণ ভাইয়া ইস সো কুল। বাট ও একটা ভীতু।
সমুদ্র মুচকি হেসে বলে, ভীতু কেন?
পিউ গভীর আগ্রহ নিয়ে বলে, শ্রাবণ ভাইয়ার দাতে ক্যাভিটি। সকাল থেকে বলছি ডেন্টিস্টের কাছে চল। সে যায় না। নিউ ইয়র্ক হলে আমিই ওর ক্যাভিটির একটা ব্যবস্থা করতাম। বাট বাংলাদেশের লাইসেন্স নাই আমার! সো এম হেল্পলেস।
সমুদ্রের মনে পড়ল পিউ ডেন্টিস্ট। মাত্র পড়া কমপ্লিট হয়েছে তার৷
শ্রাবণ দাত বের করে হাসি দিল। পিউ শ্রাবণের দাত পর্যবেক্ষন করতে করতে বলে, তোমার সামনের দাতটা একটু উচা!
শ্রাবণ বিরক্ত হয়ে গেল এবং বলল, উফফ!মাফ কর প্লিজ।
পিউ বলে, আচ্ছা। কিন্তু ক্যাভিটির জন্য কিন্তু ডেন্টিস্টের কাছে যাবা। নাহলে পরে প্রবলেম হবে। বেশি দিন ক্যাভিটি থাকলে দাতে সিস্ট হয়। বাই দ্যা ওয়ে, তুমি দিনে কয়বার ব্রাশ করো?
— একবার।
পিউ চিৎকার দিয়ে বলে, ও মাই গড! এসব কি? এইজন্য তোমার দাতের এই বাজে অবস্থা। ছিঃ! মাত্র একবার ব্রাশ করো তুমি?
–ইয়েস।
— আজকে থেকে দুই বার করবে। রাতে খাওয়ার পর আর সকালে খাওয়ার পর। গেট ইট?
সমুদ্র শ্রাবণের পাশে বসতে বসতে বলল, বাঙ্গালী দিনে একবার ই ব্রাশ করে।
পিউ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে, তুমিও ভাইয়া রাতে ব্রাশ করো না?
–না।
পিউ এতোটাই অবাক হলো যে সে আর কোন কথাই বলতে পারলনা। সমুদ্র মৃদ্যু হাসল। নতুন নতুন ডেন্টিস্ট হলে এমন একটু সবাই করেই। সবকিছুতেই বাড়াবাড়ি!
ফাতেমা বেগম রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলেন। হাতে খিচুড়ি। আজকে শীত পড়েছে ভালোই। রোদেলা নিজ হাতে খিচুড়ি বানিয়েছে।সবজি খিচুড়ি আর ডিম ভাজি।
ভাতের চালের সবজি খিচুড়ি আবেগের খুব পছন্দ।বিয়ের পর পর প্রায় দিনই সকাল বেলা উঠে সবজি খিচুড়ি বানানোর জন্য আবদার করত। রোদেলার খিচুড়ি নাকি বিশ্ববিখ্যাত। গ্রিনিজবুকে যদি খিচুড়ি বানানোর প্রতিযোগিতা হত তবে নাকি সেখানে চোখ বন্ধ করে রোদেলাই ফাস্ট হবে। এসব আজগুবি কথা আবেগের। আবেগের কথা শুনে মুচকি হাসত রোদেলা। যেদিন খিচুড়ি বানানো হত সেদিন খুব তৃপ্তি করে আবেগ সকালে খেত। শুধু তাই না টিফিনে করে নিয়েও যেত অফিসে।
রোদেলা রান্নাঘর থেকে আড়ালে সমুদ্র কে দেখছে। আবেগের পছন্দ বলেই যে সমুদ্রের পছন্দ হবে এটা ভাবা বোকামি। এজন্য রোদেলা ব্যাক আপ রেখেছে। পরোটা বেলে রাখা আছে। যদি সমুদ্র খিচুড়ি না খায় তাইলে দ্রুত গরম গরম পরোটা ভেজে দিবে সঙ্গে ডিম পোজ।
কিন্তু এমন কিছুই হলোনা। সমুদ্র সুন্দর মতো খিচুড়ি খেতে লাগলো তবে খুব মজা করে খাচ্ছে না। এক প্রকার অনীহা নিয়েই জোরপূর্বক খাচ্ছে৷
কিন্তু পিউ খুব মজা করে খাচ্ছে। পিউয়ের ও সবজি খিচুড়ি খুব প্রিয়। মা মাঝে মাঝেই খিচুড়ি রান্না করে৷ সেটা বাসমতী চালের খিচুড়ি ।কিন্তু এটা ভাতের চালের খিচুড়ি। স্বাদ অনেক টাই ভিন্ন।
রোদেলা ভাবতে লাগে, সমুদ্রের কি রান্না পছন্দ হয় নি? এভাবে অনীহা নিয়ে খাচ্ছে কেন? খেতে না ইচ্ছা করলে বললেই তো হয় খাবে না। জোর করে খাওয়ার কি দরকার। নিজের বাসায় কেউ জোর করে খায়?
এদিকে সমুদ্র খিচুড়ি নাড়াচাড়া করছে কিন্তু মুখে নিচ্ছে না। নিলেও খুব কম। কেন যেন তার খিচুড়ি একদম পছন্দ না। বাবার খুব পছন্দ ছিল খিচুড়ি। কিন্তু বাবার আদেশেই তাদের চুলায় আর খিচুড়ি রান্না হয় না বহুকাল ধরে। এই খাবারের প্রতি তার কেন যেন অরুচি আছে। খেতে পারেনা। কিন্তু এই কথাটা নানীকে বলা ঠিক হবেনা। উনি কতো আশা করে খিচুড়ি বানিয়ে নিয়ে এসেছেন। তাকে হতাশ করতে চায় না সমুদ্র। তাই তো জোর করে হলে কোনমতে গিলছে।
মাথা নিচু করে খেলেও চোখ জোড়া অন্য কাউকে খুজছে। ও কি সকালের নাস্তা করতে বের হবে না? নাকি আগেই সেরে ফেলেছে কিংবা বাসায় নেই?
সমুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রোদেলা আড়াল থেকে সমুদ্র কে দেখে বুঝে ফেলে ছেলে তার খিচুড়ি পছন্দ করেনা। তাই তো দ্রুত পরোটা ভেজে দিয়ে মায়ের হাতে পাঠিয়ে দিল।
রান্নাঘরের দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ছেলের খাওয়া দেখল রোদেলা। কালকেও এভাবেই পরোটা ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে।
★★★
আবেগ অফিস যাওয়ার জন্য আগেভাগেই রেডি হয়ে গেছে। এখন সকালের রান্না করবে সে। জাবেদা খাতুন প্যারালাইজড প্রায় বেশ কিছু দিন ধরে। হাটতে পারেনা। মাজায় অপারেশন হওয়ার পর থেকে। কিন্তু ইদানিং কথা বলতে পারেন না তিনি। কথা বললেই মুখ বেকে যায়। তাই যথাসম্ভব চুপ থাকেন। বিছানায় শুয়েই দিন কাটে তার।
আবেগ রান্না ঘরে এসে সকালের নাস্তা তৈরি তে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রুটি বেলে রাখাই আছে। সে শুধু ছেকে নিবে আর ডিম ভাজবে।
রুটি তৈরি করার পর মায়ের রুমে গেল সে। মাকে উঠিয়ে ফ্রেস করাতে হবে তারপর খাওয়াতে হবে। সে অফিস যাওয়ার পর পর কাজের মেয়ে আসে। সারা দিনই থাকে। সন্ধ্যার পর পর কাজের মেয়ে চলে যায়। মাকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে ফ্রেস করিয়ে দিয়ে খাবার বেড়ে দিল৷ মায়ের খাওয়া হলে সে অফিসের দিকে রওনা হলো। জীবনের প্রতি বিষন্নতা নেমে এসেছে। একা সব কিছু সামলানো খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে তার জন্য।
আবেগের সম্পূর্ণ জীবন টাই ছন্নছাড়া, আর অগোছালো। সুখের দিন তার জীবনে হাতে গোনা কয়েকটাই আছে! সেই দিন গুলোর কথা তার স্পষ্ট মনে থাকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে রাখবে সে। আবেগ বাসা থেকে বের হয়ে রিকশা নিল৷ এখান থেকে বিশটাকা ভাড়া নিয়ে মেইনরোডে যাবে৷ সেখান থেকে বাসে করে একদম অফিসের সামনে নামবে।
এই একাকিত্ব জীবনে রোদেলার অভাবটা বড্ড ভাবায় তাকে। তারা যদি আজকে একসাথে থাকত তাহলে কি কি হত বা জীবন টা কেমন হত তা মাঝে মাঝে কল্পনা করে আবেগ।
যেমন, আজকের সকালটা কেমন হত যদি সব ঠিক থাকত?
রোদেলা ঘুম থেকে উঠে তাকে আগের মতো জিজ্ঞেস করত সে সকালে কি খাবে? আবেগ সবজি খিচুড়ি খাওয়ার আবদার করত। রোদেলা বিরক্ত হয়ে বলবে, বাসায় সবজি নাই।
তারপর ও চুলে খোপা করে খিচুড়ি রাধতে যাবে। রোদেলা আবার খিচুড়ি পছন্দ করেনা।এজন্য খিচুড়ি সে সবসময়ই বিরক্তি নিয়ে রাধে। আবেগের মনে হত রোদেলা বিরক্তি নিয়েই রান্না করে জন্য এতো সুস্বাদু হয়। যদি খোস মেজাজে রান্না করে তাহলে এতো মজা হবে না।
চুলা থেকে নামানোর আগেই আবেগ অস্থিরতা শুরু করবে। এদিকে রোদেলা রেগে যাবে। রোদেলার হুটহাট রেগে যাওয়ার স্বভাব আছে। সে চিৎকার করে বলে উঠবে, এতোই যদি তাড়াহুড়ো থাকে তাইলে নিজে রান্না করে খেতে পারো না?
মায়ের রাগ দেখে বাচ্চারা ও সাবধান হয়ে যাবে। তারা চুপচাপ বসে পড়বে খাওয়ার টেবিলে। সমুদ্র খিচুড়ি খায় না তাও মায়ের রাগ দেখে চুপচাপ খেতে বসবে। তখন রোদেলা অন্যকিছু বানিয়ে এনে বলবে, বাবু তুই না খিচুড়ি খাস না! আজকে সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছে? খবরদার খিচুড়ি মুখে দিবি না।
সমুদ্র ও বাধ্য বাচ্চার মতো খিচুড়ির প্লেট সরিয়ে রাখবে। তা দেখে রোদেলার।রাগ পড়ে যাবে। সে ফিক করে হেসে দিবে। ইশ কি অসাধারণ একটা মূহুর্ত হতে পারত!
রিকশা থেমে গেল। আবেগের ও অসম্ভব কল্পনার অবসান ঘটে। সে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
মেয়েটা তার মতোই হয়েছে। পিউয়ের জন্য মনটা ছটফট করে। মেয়েটা তার এতো কাছে আছে তাও একবারো দেখার সুযোগ হচ্ছে না। রোদেলা কেও দেখতে মন চাচ্ছে খুব। কিন্তু মনের ইচ্ছাকে চাপা দিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালো। বাস চলে এসেছে তাকে এখন অফিস যেতে হবে। আবেগের খুব ক্লান্ত লাগছে।শরীর টা তার আজ-কাল ভালো যাচ্ছেনা। মাথা ঘুরাচ্ছে। কয়েকদিন ধরেই তার প্রেসার হাই। ঠিক মতো খেতে পারেনা বাসে উঠে বসতেই আবেগ হড়বড় করে বমি করে দেয়।
বাসের মেঝেটা রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে। আবেগ চমকে উঠে। হাতে-মুখে, জামায় রক্তের ছিটেফোঁটা। আবেগকে প্রচুন্ড বিধ্বস্ত লাগছে।
★★★
দুপুরের দিকে সমুদ্র ছাদে উঠল। মূলত সিগারেট খাওয়ার জন্যই ছাদে যাচ্ছে সে। ছয়তলা বিল্ডিং। সাততলায় ছাদ। চাবি সঙ্গে নিয়েছে। দারোয়ানের কাছ থেকে চাবি নিয়েছে এবং একটা ব্রাশ কিনে আনতে বলেছে। দারোয়ানকে দিয়ে সিগারেট কিনানো যাবে না। আর মাত্র এক প্যাকেট আছে।
সমুদ্র ছাদে উঠে দেখল, তালা খোলা। সে আমলে নিল না ব্যাপার টা। ছাদের এক সাইডে গিয়ে সিগারেট ধরিয়ে আপন মনে সিগারেট টানছে আর গুনগুন করে গান খাচ্ছে। সমুদ্র সিগারেট খাওয়ার সময় গুনগুন করে যেকোন গানের দুই-চার লাইন গায়। তার সিগারেট খাওয়ার সময় গান ধরানো একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
আপাতত সে সিগারেটে টান দিচ্ছে আর গুনগুন করে গাচ্ছে,
বন্দে মায়া লাগাইছে, পিরিতি শিখাইছে,
বন্দে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে,
দেওয়ানা বানাইছে।
কি যাদু করিয়া বন্দে মায়া লাগাইছে
কি যাদু করিয়া বন্দে মায়া লাগাইছে।
হুট করে ক্যাচ ক্যাচ শব্দে তার ঘোড় ভাঙ্গে। সমুদ্র সিগারেট হাতে নিয়েই সামনের দিকে পা বাড়ালো।
দোলনার শব্দ। কেউ একজন দোলনায় বসে আছে এবং চুল শুকাচ্ছে। আজকে প্রচুন্ড রোদ উঠেছে। অথচ সকালেই কুয়াশা ছিল কিন্তু দুপুর হতেই অনেক রোদ উঠেছে৷
মেয়েটাকে পেছন থেকে দেখেই সমুদ্র চিনে ফেলে। এটা আয়ু। নিশ্চয়ই এটা আয়ু।
ভর দুপুরে এখানে কি করছে সে৷
সমুদ্র আয়ুর দিকে এগিয়ে এসে গলা খাকিয়ে বলে উঠে, এমন ভরদুপুরে চুল ছেড়ে দিয়ে ছাদে বসে থাকলে ত্যানারা ভর করবে তো!
আয়না সমুদ্রের কথায় কেপে উঠে। ভয় পেয়ে যায় সে। এতোক্ষণ ধরে সে মনোযোগ দিয়ে গান শুনছিল।খুব আকর্ষনীয় গলায় কে যেন তার প্রিয় গানের সুরের সাথে তাল মেলাচ্ছিল। অনেক দিন পর গান শুনল সে। এজন্য কিছুটা অন্যরকম লাগছিল। গানের সুরের সাথে সে বিভোর হয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছে অন্য কোথায় চলে যাচ্ছে আয়না। সমুদ্রের বলা কথাটায় ঘোর কাটলো আয়নার। তারপর মনে মনে বিড়বিড় করে বলে, ত্যানারাও অপয়ার দিকে নজর দেয় না।
সমুদ্র এগিয়ে আসল আয়নার দিকে। আয়নার চোখের দিকে তাকাতেই সে আতকে উঠে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল আর টলমল করছে। হাতের আঙুলের ভাজগুলো সাদা হয়ে গেছে মরা মানুষের মতো। আয়ু কি অনেকক্ষণ ধরে পানিতে ভিজেছে?
এখনো চুল ভেজা। মেয়েটা এতোবার গোসল কেন করে?
আয়না সরাসরি সমুদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিল। তার কেমন যেন লাগছে। সকাল থেকেই প্রচুর জ্বর তার। কোন ঔষধ ও খায় নি। এখন কেমন যেন লাগছে। তার উপর সমুদ্র কে দেখে তার নিশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে।
সমুদ্র তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আয়নাকে অবলোকন করছে। আয়না সাদা রংয়ের একটা কামিজ পড়েছে। সাদা সুতির ওড়না।চোখে চিকন করে কাজল দেওয়া। চুল ছেড়ে রাখায় আরো বেশি রূপবতী লাগছে তাকে।
সমুদ্রের পিপাসা লাগছে। এই মূহুর্তে সে এক বালতি পানি খেতে পারলে খুব আরাম পেত।
সমুদ্র আয়নার দিকে অনেক টা এগিয়ে আসল। এবং দোলনার দুই হাতলে তার দুই হাত রেখে আয়নাকে আটকে নেয়৷
আয়না নড়েচড়ে উঠে জুবুথুবু হয়ে বসে পড়ে।
সমুদ্র আরো একটু নিকটে আসলে, আয়না অনেক কষ্টে করে হাপিয়ে উঠে বলে,
“আপনি দূরে সরেন প্লিজ।”
এই প্রথম আয়নার কন্ঠস্বর শুনল সমুদ্র। কন্ঠস্বরের তীক্ষ্ণতা এতো জোড়ালো ছিল যে সমুদ্রের মনের কম্পাংক বাড়িয়ে দিল। এই সঙ্গে আয়নার উপর একটা চাপা রাগ কাজ করছে। আয়না কেন তাকে আপনি বলে সম্বোধন করছে?
তুই এর সম্পর্ক যখন তুই থেকে আপনি তে গড়ায় বুঝে নিতে হবে সম্পর্কটায় অবশেষে কিছুই রয়ে নেই। আয়না কি তাকে ভুলে গেছে?
সমুদ্র আরো নিকটে আসল। আয়না সমুদ্রকে সরানোর জন্য তার হাত সামনে বাড়ালো। সমুদ্রের হাতে থাকা সিগারেটের ছ্যাকা লাগলো আয়নার হাতের কোনায়।
আয়না চেচিয়ে উঠে বলে, আউহ!।
সমুদ্রের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল এবং সে আস্তে করে বলে, ভালো হইসে।
আয়না উঠে দাড়ালো। সমুদ্র ঝুকে থাকা থেকে দাড়িয়ে সোজা হলো।
দুজন ই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়নার ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুচকানো।
সমুদ্র খেয়াল করে, আয়না ভ্রু কুচকে তাকালে আয়নার কপালের রগ ফুলে উঠে।
সমুদ্র আয়নার হাত ধরে। সে আরেকদফা চমকে উঠে। এতো গরম কেন হাত? জ্বর এসেছে কি?
আয়না সমুদ্রের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বলে, এসব কোন ধরনের অসভ্যতা? আপনি আমার হাত ধরেছেন কেন?
সমুদ্রের রাগ লাগছে। আশ্চর্য মেয়েটা কেন তাকে আপনি বলবে?
সমুদ্র খেয়াল করল, আয়নার টলমলে চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে গালে লেগে আছে। সূর্যের ধারালো উত্তাপে সেই অশ্রুমালা চিকচিক করছে৷
।
সমুদ্র বিড়বিড় করে বলে, কাউকে কাদলে ও এতো রূপবতী কিভাবে লাগে স্ট্রেঞ্জ!
চলবে।
#প্রেমপ্রদীপ
part–11(বোনাস)
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
ভর সন্ধ্যা। বাসায় কেউ নেই। আয়না একা রুমে হাটু গেড়ে বসে আছে বিছানায়। বাবা দাদা-দাদি কে নিয়ে হাসপাতালে গেছে সেই সঙ্গে মেহমান রাও বাইরে আছে। এমনটাই শুনেছে তাদের বাসার কাজের খালার কাছে। আয়না রুম থেকে খুব একটা বের হয় না। আজকে বের হয় নি। খালা এসে বলে গেছেন যে বাসায় কেউ নেই, আমি বাসায় যাচ্ছি। আপনি গেট লাগিয়ে দেন৷
বাসায় একা শুনে আয়নার ভয় লাগছে। মেইন গেট খোলা। যদি কেউ ঢুকে পড়ে? মা আর তার ছোট বোন বাসায় নেই। আয়না উপায় না পেয়ে রুম ছেড়ে বের হলো। মেইন গেট লাগিয়ে এক কাপ চা বানিয়ে রুমে ঢুকবে। খিদাও লেগেছে। দুপুরে সে কিছুই খেতে পারেনি। খাবার এখনো তার রুমেই পড়ে আছে।
আয়না রুম থেকে বের হয়ে গেট লাগিয়ে রান্নাঘরে ঢুকবে এমন সময় কেউ বলে উঠে, আয়ু আমার জন্য ও এক কাপ চা বানাও।
আয়না ভুত দেখার মতো চমকে উঠে। বাসায় তো কেউ নেই? তবে কে কথা বলছে? আয়ু বলে তো তাকে একজনই ডাকত। সে হলো সমুদ্র!
আয়না ভীত গলায় বলে, ক,,কে?
— আমি সমুদ্র।
সমুদ্র নামটা শুনতেই তার গা বেয়ে মৃদ্যু শিহরণ বয়ে গেল।
আয়না সমুদ্রের দিকে ঘুরে তাকালো। সমুদ্র নীল রঙের একটা টিশার্ট পড়ে আছে আর কালো টাওজার পড়ে আছে।
আয়না অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে। সমুদ্র এক গাল হেসে বলে, আমাকে কি ভুলে গেছিস আয়ু?
আয়না মাথা নিচু করে ফেলে। উত্তর কি দিবে জানে না। আসলেই কি সে সমুদ্র কে ভুলে গেছে? নাহ! আজো মনে আছে সমুদ্রের কথা। স্কুলে পড়া না পারলে ভ্যা করে কেদে দিত। এতো সুর্দশন হয়েছে সমুদ্র! কি সুন্দর দেখতে হয়েছে! লম্বা-চওড়াও। চোখ গুলো অদ্ভুত সুন্দর!
আয়না কোন কথা না বলে, রান্নাঘরে ঢুকে গেল।
সমুদ্র মুচকি হেসে বলে, দুই চামচ চিনি দিবে। আমি ড্রয়িং রুমে টিভি দেখতে যাচ্ছি।
সমুদ্র ড্রয়িং রুমে গিয়ে টিভি ছাড়ল। ভালো কিছুই হচ্ছেনা। স্পোর্টস এ হাইলাইট চলছে। সেটাই দেখতে লাগলো সমুদ্র। অনেক দিন ধরে টিভি দেখেনা। বাসায় টাইম ই পায় না টিভি দেখার। যেটুকু টাইম পায় ফোন চালাতেই ব্যস্ত থাকে।
ফোন থেকে মনে পড়ল আয়ুর কি ফেসবুক নেই? সে দ্রুত ফোন বের করে ফেসবুকে আয়নার নাম সার্চ দিল। আয়নার পুরা নাম হলো আয়না নূর জাহান। নূর জাহান আয়নার নানীর নাম। এই নামেও ফেসবুকে কেউ নেই। যারা আছে তারা আয়ু না! এই যুগে এসেও তার বেস্টফ্রেন্ড ফেসবুক চালায় না!
হাইলাইটে পরপর দুইটা উইকেট দেখালো। ঠিক সেই সময় আয়না রান্নাঘর থেকে বের হলো।
সমুদ্রের চোখ এড়ালো না।আয়নাকে দেখতেই সে একটা ধাক্কার মতো খেল। সে বিড়বিড় করে বলে, আমার ও উইকেট পড়ে গেল নাকি!!
আয়না চা হাতে দিল। সমুদ্র চা হাতে নিয়ে বলে, থ্যাঙ্কিউ।
আয়না উত্তর দিলনা। সে জিজ্ঞেস করল, আরো কিছু খাবে?
— কি খাওয়াতে চাও?
আয়না কিছু বললো না। সমুদ্র বলে উঠে, আমি গেস্ট। ভালো কিছু রান্না করেই খাওয়াও আমাকে।
আয়না সমুদ্রের দিকে তাকালো। সমুদ্রের চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে খুব খোস মেজাজে আছে।
আয়না আস্তে করে বলে, আমি রান্না করিনা।
— চা বানাও আর রান্না করোনা?
–হুম।
–কেন?
আয়না সমুদ্রের কথার উত্তর না দিয়ে পাশ ফিরলো। যেই না হাটা ধরবে হুট করে কারেন্ট চলে গেল। আয়না আবারো ভয় পেয়ে গেল। অন্ধকার কে সে খুব ভয় পায়। আয়না অস্ফুটস্বরে চেচিয়ে উঠে
সমুদ্র আয়নার শব্দ শুনে দাঁড়িয়ে যায় এবং বলল, কি হয়েছে? ভয় পেয়েছো নাকি?
–নাহ।
–তাহলে চিৎকার দিয়ে উঠলে কেন?
আয়না ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। না আগাচ্ছে আর না পেছাচ্ছে।
সমুদ্র আয়নার সামনে গিয়ে দাড়াতেই কারেন্ট চলে আসল। যার ফলে আয়নার চেহারাটা দেখতে পেল সে। মলিন হয়ে আছে। মেয়েটার জ্বর। সমুদ্রের খুব ইচ্ছা করছে আয়নার কপালে হাত রাখতে৷ কিন্তু নিজেকে দমিয়ে রাখল সে। ছাদে আয়নার হাত স্পর্শ করায় সে কিছুটা রেগে গিয়েছিল।
আয়না পাশ কেটে যেতে ধরলে পুনরায় কারেন্ট চলে যায়৷ এবারে বিকট শব্দ হয়। শব্দটা এতো জোড়ে হয়েছিল যে সমুদ্র নিজেও কেপে উঠে আয়না ভয় পেয়ে সমুদ্রের সামনে দাড়িয়ে পড়ে।সমুদ্র ভেবেছিল আয়না ভয় পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরবে কিন্তু এমন কিছুই হলো জন্য সে হতাশ হলো। আচ্ছা কি হত ভয় পেয়ে একটু জড়িয়ে ধরলে? তাহলে মন্দ হত না!
মিনিট পাচেক অন্ধকারে দুজন দাঁড়িয়ে থাকলো। কারো মুখে কোন কথা নেই৷ পিনপতন নীরবতা পালন করা হচ্ছে। হুট করে সমুদ্রের কানে ফোপানোর শব্দ ভেসে আসল। সে আতকে উঠে। তার চেয়ে দুই ইঞ্জি দূরে থাকা আয়ু কি কাদছে?
সমুদ্র প্রশ্ন করল, আয়ু?
— হু?
— আর ইউ ক্রায়িং?
আয়না নাক টেনে জবাব দিল, নাহ তো
সমুদ্র হেসে দিয়ে বলে, এই, তুমি কি অন্ধকার ভয় পাও? এজন্য বাচ্চাদের মতো কাদছো? হাউ কিউট!
আয়না সমুদ্রের কথা শুনে শব্দ করে কেদে দেয়। সমুদ্র ঘাবড়ে যায়। এর আগে কোনদিন কোন মেয়েকে এভাবে কাদতে দেখেনি সে। এতো কাছ থেকে কোন মেয়েকে দেখে নি সে। সমুদ্র আয়নার গালে তার দুই হাত রাখল। মেয়েটার গায়ে প্রচুন্ড জ্বর।ইশ! এতো জ্বর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিভাবে?
সমুদ্র আয়নার হাত ধরে ডাইনিং টেবিলে এসে তাকে বসালো। আয়না চুপচাপ বসে পড়ল। সমুদ্র আশপাশ দেখে নিল। তারপর আয়না কে রেখেই পাশের রুমে গিয়ে কিছু একটা খুজতে লাগলো।
খোজা শেষ করে পেছনে ঘুরতেই খানিকটা চমকে উঠে। তার গা ঘেষে বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে আয়না। সমুদ্র বুঝে গেল আয়না ভয় পেয়েই তার পিছু এসেছে৷ মেয়েটার উপর তার বড্ড মায়া কাজ করছে৷
মায়া বড় কঠিন জিনিস! কারো মায়ায় পড়তে নেই একবার মায়ায় আটকে গেলে জীবন তেচপাতা।
সমুদ্র নরম গলায় বলে, খিদা লেগেছে?
— না।
— দুপুরে কি খেয়েছো?
–কিছু না।
— তাহলে তো ঔষধ খাওয়া যাবে না?
আয়না হালকা আওয়াজ করে বলে, আমি ঔষধ খাই না৷
সমুদ্র ভ্রু কুচকে বলে, এটা আবার কেমন কথা? আচ্ছা যাইহোক আমি তোমাকে কিছু বানিয়ে খাওয়াচ্ছি তারপর এন্টিবায়োটিক দিব। ভাগ্যিস সঙ্গে মেডিসিন ছিল। আসো আমার সঙ্গে।
বলে আয়নার হাত পুনরায় ধরলো। সমুদ্রের কেন যেন আয়নার হাত ধরতে খুব ভালো লাগছে। মেয়েটা এতো চুপচাপ কেন? একটা কথা ও বলে না।
সে রান্নাঘরে নিয়ে এলো আয়নাকে। তারপর গ্যাসের চুলা অন করল। সঙ্গে সঙ্গে মোমবাতির আলোর মতো রান্নাঘর আলোকিত হলো।
আয়না চোখ তুলে তাকালো সমুদ্রের দিকে। আলো-আঁধারির মধ্যে সমুদ্রের চেহারাটা দেখতেই তার মনের মধ্যে কিছুটা একটা বয়ে গেল। আয়না শুকনা ঢোক গিললো। সে ঠিক করে নেয়, আর একবার ও সমুদ্রের দিকে তাকাবেনা।
সমুদ্র তার দিকে তাকিয়ে বলে, কি খাবে? নুডুলস?
— না।
— তাহলে?
— রুটি খাব।
সমুদ্র নিজে নিজে বলল, রুটি খাবে?
আয়না মাথা নিচু করে বলে, হু।
— আচ্ছা।
বলে সমুদ্র আটা বের করল। আটা বের করতে বেগ পেতে হল তাকে। এই বাসায় কোথায় কি আছে সে জানে না। তাও খুজে বের করল সে আয়নার জন্য।
কিন্তু কথা হচ্ছে সমুদ্র আটা ছানতে পারেনা। আগে কোন দিন ট্রাই করেনি। কেবল নুডুলস বানাতে পারে। আয়নাকে নুডুলস খাওয়ার অফার দেওয়া হয়েছিল কিন্তু জনাবা তা প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এখন উপায় কি?
সমুদ্র মিনমিন করে বলে, ইয়ে মানে,,,, আটা ছানতে পারিনা।
তার কথায় মোটেও ভাবান্তর এল না আয়নার মাঝে। আগের সেই ছোট্ট বেলার আয়না হলে হেসে ঘর কাপিয়ে ফেলত।
তবে আয়না সমুদ্রের কাছে আসল। এবং তার হাত থেকে আটার কৌটা নিল এবং একটা পাত্রে আটা ছানতে লাগলো। সমুদ্র মুগ্ধ হয়ে আয়নাকে দেখতে লাগলো।
আয়না মনোযোগ দিয়ে আটা ছানছে, আটার মধ্যে তেল দিল পরিমাণ মতো। আয়নার চুল গুলো এসে সমস্যা করতে লাগলো। ততোক্ষনে আয়না তার দুই হাত মেখে ফেলেছে তাই চুল সরাতে পারছে না।
সমুদ্রের খুব করে ইচ্ছা করছে আয়ুর চুল গুলো সরিয়ে দিতে। সে আয়নার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছে না। আগুনের আলোতে মেয়েটার চেহারার দিকে তাকিয়ে সমুদ্রের বুকের মধ্যে উথাল-পাতাল বয়ে যাচ্ছে।
সমুদ্রের কেন যেন মনে হচ্ছে সে আয়ুর প্রেমে পড়ে গেছে!
ডাক্তার রা প্রেমে পড়ার ব্যাপারটা কি তাড়াতাড়ি আঁচ করতে পারে নাকি?
আয়না রুটি বেলেও দিল তারপরে সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলে, ছেকে দাও৷
— সব কাজ তো তুমিই করলে এটা বাদ যাবে কেন। এটাও তুমি কর।
— আমি রান্না করিনা।
সমুদ্র আর কিছু বললোনা। রুটি ছেকে আয়নাকে দিল। বাসায় মিস্টি ছিল তা বের করে আয়না ডাইনিং রুমে বসে এক ধ্যানে খেতে লাগলো
এদিকে সমুদ্র ও তার ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করে আয়নার বিপরীতে বসে তাকে দেখতে লাগলো। আয়নার খাওয়া শেষ হতেই ঔষধ এগিয়ে দিল।
তখনি কারেন্ট চলে এলো। আয়না ঔষধ খেয়ে উঠে দাড়ালো।
সমুদ্র তড়িঘড়ি করে প্রশ্ন করে, রুমে যাচ্ছো?
আয়না মাথা নাড়ালো।
সমুদ্র বলল, তুমি কি কোন কারনে ডিস্টার্ব আয়ু? কিছু হয়েছে?।
আয়না পেছন ফিরে সমুদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, সিগারেট কম খাবে।
বলে রুমের দিকে হাটা দিল। সমুদ্রের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল।
★★★
আইডি নং টু ফিফটি ফাইভ?
— ইয়েস স্যার?
— আপনার ডিউটি শেষ। বাসায় যেতে পারেন।
— ধন্যবাদ। স্যার।
আলিয়া যেন হাফ ছেড়ে বাচলো।
কালকে থেকে সে ক্লিনিকে ডিউটি করছে। মাত্র সাত ঘন্টা ব্রেক পেয়েছিল। আপাতত একদিনের ছুটি পেল। ভাবতেই শান্তি লাগছে তার। মাঝে মাঝে ভাবে কেন যে ডাক্তারি পড়তে গেল? ইন্টার্ণ করতে গিয়ে তার বারোটা বেজে যাচ্ছে। এতো প্যারা আর ভালো লাগে না। একটানা বারো ঘন্টার বেশি ডিউটি থাকে। কালকে রাতে সে নাইট ডিউটি করে খালার বাসায় গিয়েছিল রেস্ট নিতে। দুদিন ধরে বাসায় যায় না। দাদীর কাছে শুনেছে রোদেলা ফুপু এসেছে। আলিয়া তার ফুপুকে সরাসরি দেখেই নি কোন দিন। সে ছোট থাকতেই ফুপু বিদেশে চলে যায়।
এইবার ফাস্ট টাইম দেখবে ফুপুকে। পিউয়ের সাথে কালকে কথা হয়েছিল। পিউ নাকি তার জন্য দূর্দান্ত একটা গিফট এনেছে। আলিয়া অনেক এক্সাইটেড। কিন্তু সে অনেক ক্লান্ত। কালকে গোসল করেনি। আজকেও করা হয় নি।
আলিয়া তার টেবিল থেকে ব্যাগ নিয়ে দ্রুত হাটা ধরল। নাহলে কোন সিনিয়রদের সাথে দেখা হলে তার ডিউটি তার উপর চাপিয়ে দিলেও দিতে পারে।
রাত আটটা বাজে। এপ্রোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাও খালার বাসায় ছিল। তাকে নিয়ে বাসায় যাবে। আলিয়ার ক্লিনিক বাসা থেকে বেশ দূরে। এজন্য সমস্যা হয়। রাত হলে একা চলাচল করতে ভয় পায়।
আলিয়া ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্লিনিকের সামনে। মায়ের অপেক্ষা করছে সে।
হুট করে তার চোখ গেল রাস্তার অপজিটে। সে চমকে উঠে অঅস্ফুটস্বরে বলে, শ্রা,,,,,
চলবে।