Arrange Marraige part-11+12

0
406

#Ayesha
#ArrangeMarraige

পর্ব-11-12

আরো কিছু ক্ষন ছাদে থেকে রুমে গেলাম।। আম্মুর ফোন থেকে মামুনিকে ফোন দিলাম।

মামুনি: আসসালামু ওয়ালাইকুম, কেমন আছো?
আমি: ওলাইকুম আসসালাম, জী মামুনি ভালো আছি তুমি কেমন আছো?
মামুনি: হে ভালই, কি করছো?
আমি: এইতো ছাদ থেকে রুমে এসে তোমাকে ফোন দিলাম।।
মামুনি: আসলে মা আমি একটু বিজি তোমার বাবাকে নিয়ে তার বয়স হচ্ছে বার বার বলছে আজাদের বিয়ে টা যেনো তারাতারি হয়ে যায়।। আল্লাহ যেন সে পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখেন উনার নাকি মনে হয় খারাপ কিছু হয়ে যাবে।। বলো তো এইগুলো কেমন কথা?

আমি ভাবছি এই আজাদ কে ফাহাদের কি আবার বড় ভাই আছে নাকি? জিজ্ঞেস করবো মামুনি কে।।

আমি: মামুনি
মামুনি: হে বল
আমি: আজাদ টা কে?
মামুনি: উচ্চ হাসিতে ঢলে পরলো, হাসিতে ঠিক ভাবে কথা বলতে পারছে না, কোনো ভাবে ফারিয়ার কাছে ফোন দিয়ে বলতে বলছে আজাদের কে সে কথা বলতে।

ফারিয়া: হাসতে হাসতে বলবো তোমার হবু জামাই গো ভাবি, এখনও তার নাম জানলে না।।

আমার তো ঐ ফাহাদের উপর রাগ উঠছে ও তো আমাকে একবার বলতে পারতো ওর নাম আরো আছে, তাহলে হবু শাশুড়ি ননদের সামনে এমন অস্বস্তিকর অবস্থায় পরতে হতো না।।

আমি: ফারিয়ার সাথে আরো 5/10মিনিট কথা বলে, আমি ফাহাদ কে ফোন দিলাম আমাকে দিয়া ওর ফোন থেকে।।

কল হচ্ছে।।

ফাহাদ: জ্বী ম্যাম বলেন
আমি: আপনার নাম কি?
ফাহাদ: ওমা ছি আয়শা তুমি আমার নাম এখনও জানো না, লোকে কি বলবে? বলবে জামাই এর নাম জানেনা ছি ছি (আমি খুব বুঝছি সে মজা নিচ্ছে)
আমি: আপনি প্রথম দিন আমাকে আপনার সব টা নাম কেনো জানান নি? আচ্ছা প্রথম দিন বলেন নি পরে তো বলতে পারতেন। আপনার জন্য আমার অপমান হতে হয়।। মামুনি কি ভেবেছে
ফাহাদ: তুমি তো জিজ্ঞেস কর নি?
আমি: আমি ভাবছি শুধু ফাহাদ
ফাহাদ: তুমি ভেবো কেন?
আমি: কেউকে নাম বললে সব টা বলতে হয়, এইবার নাম টা বলেন।।
ফাহাদ: নুর মোহাম্মদ ফাহাদ।
আমি: তাহলে আজাদ কে?
ফাহাদ: বাবা মা এই নামে ডাকে।।
আমি: আরো কিছু জানিনা এমন কিছু থাকলে বলেন।।
ফাহাদ: তুমি আমার ব্যাপারে এখনও কিছুই জানো না, জানার জন্য কথা বলতে হয়, তুমি কি আমাকে টাইম দাও?
আমি: ঠিক আছে রাখছি
ফাহাদ: আবার কেউ কিছু বললে আমাকে এইসব বইলো না কিন্ত। আমি কিন্তু জানাতে চাই তুমি জানতে চাও না।।

আমি ফোন কেটে দিলাম, এইভাবে আরো কিছুদিন কেটে গেল, আমরা অনেক আরো ফ্রী হয়ে গিয়েছি। ও সারাদিন ফোন দিয়ে খুঁজ খবর নিচ্ছে, আমি পরছি ও ইয়ার ফোন কানে দিয়ে আমার পড়া শুনছে আর সে কাজ করছে, আমি রুমে এসে দরজা বন্ধ করে খাটের মাথায় টেবিলে উপর দাড়িয়ে কত ভাবে যে তার সাথে কথা বলি শুধু আমি জানি, ওর সাথে আমার এক বারেই দেখা হয়েছে এর পর ওর সময় সুযোগ মিলেনি আমিও বলিনি।। মামুনি ফারিয়া বাবার সাথে 2/3দিন পর পর কথা হয়, ওরা সবাই অনেক ভালো

সকাল 9টা বাজে আমি প্রাইভেট পরে বের হয়েছি এমন সময় ফাহাদের কল, আমি রিসিভ করলাম
ফাহাদ: হ্যালো আয়েশা
আমি: হ্যাঁ
ফাহাদ: কোথায় তুমি
আমি: এইতো বাসায় যাচ্ছি।।
ফাহাদ: তুমি কি আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে।।
আমি: আপনি কোথায়?
ফাহাদ: আমি বাওয়াল পর্যন্ত এসেছি, বাসে আছি তুমি প্লিজ ময়মনসিংহ পর্যন্ত আসো
আমি: কিইই আপনি পাগল হয়েছেন? আমি যে একা একা কোথাও যাইনা আপনি জানেন না? আপনি কিভাবে বললেন ময়মনসিংহ আমি একা আসার জন্য? আপনার কমন সেন্স আছে?
ফাহাদ: আয়েশা প্লিজ একটু চুপ হয়ে আমার কথা টা শুন, আমি যেইভাবে বলছি তুমি সেইভাবেই আসো কারোর থেকে টাকা ধার নিয়ে আসো ইমার্জেন্সী।। ও আমাকে সব বুঝিয়ে বলেছে।।
আমি: আমার খুব ভয় করছে
ফাহাদ: কিচ্ছু হবেনা লক্ষ্মীটি, তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে নিজে ক্ষমা করতে পারবো না।। তুমি মনে সাহস নিয়ে আসো আমি ব্রিজে থাকবো, তুমি বাস থেকে নেমেই আমাকে পাবে।।

ওর প্রতি আমার এতদিনে অনেক গভীর একটা বিশ্বাস জমে গেছে, আমি জানি আমি ওর কাছে নিরাপদ, আমি ওর কথা মত টিকেট কেটে বাসে বসে আছি।।
আমার মনে হলো বুবুকে জানিয়ে যাই।।

আমি: বুবু
বুবু: হে কই তুই এখনও বাসায় আসলি না?
আমি: বুবু আমি ময়মনসিংহ যাচ্ছি
বুবু: কিইই কিন্ত কেনো?
আমি: ফাহাদ আসছে
বুবু: তাই বলে একা যাবি?
আমি: ও বলেছে ময়মনসিংহ ব্রিজে থাকবে
বুবু: ঠিক আছে সাবধানে যা, আর ওকে পেলে আমাকে জানাবি না হয় টেনশনে থাকবো।।
আমি: ঠিক আছে।। রাখছি
বুবু: বাই।।

আমার পাশে একজন মুটামুটি বয়স্ক লোক বসা বয়স 60 এর মত হবে হয়ত।
ফাহাদ ফোন করেছে
আমি: হ্যালো
ফাহাদ: কোন পর্যন্ত?
আমি: আমি তো চিনি না,
ফাহাদ: ঠিক আছে তুমি আসো আমি ও প্রায় এসে পড়েছি।। ও ফোন কেটে দিল।।

আমার পাশে বসা লোকটা কে আমার মুটেও ভালো লাগছে না, কিভাবে জানি তাকাচ্ছে, আরো কিছু দূর যাওয়ার পরে তার অসভ্যতা গুলো আরো বেড়ে গেছে, এইবার সে বার বার আমার হাতে হাত, পায়ে পা লাগাচ্ছে, আমার খুব অসস্তি হচ্ছে।। আমি উনাকে বললাম আঙ্কেল আপনি একটু দূরে সরে বসেন।। উনি একটু সরে বসেছেন আবার কিছুক্ষণ পর চলে আসছে, এইবার আমি সহ্য করতে না পেরে দাড়িয়ে পরলাম উচ্চ সরেই বললাম

আমি: কি সমস্যা আপনার? বাড়িতে মেয়ে বউ নাই? আমি তো আপনার মেয়ের বয়সি বললেও ভুল হবে? এই বয়সে এইসব করতে লজ্জা লাগছে না,

বাসের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আর আমার ভয়ে,রাগে হাত পা কাপছে

লোকটা ভালো মানুষের ভাব নিয়ে বলছে এইসব কি বলছ মা? আমি একজন মধ্য বয়স্ক লোক, তুমি এমন অপবাদ আমায় কেন দিচ্ছ।। কি প্রমাণ আছে তোমার আমি তোমার সাথে এমন করেছি?

এইবার আমার সত্যি সত্যি কান্না পাচ্ছে, ভাবছি আসলে তো আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই সবাই তো এখন আমাকে খারাপ বলবে, কত কি ভাববে, তবু সাহস নিয়ে বললাম

আমি: আমি তো শুধু শুধু বলছি না তাইনা?
লোকটা: এত ভালো মানুষ তাহলে একা একা কোন ছেলের সাথে দেখা করতে যাও, কোন ছেলের সাথে মান ইজ্জত ডুবতে যাচ্ছ? এইগুলা কি বাবা মা জানে? কলেজ ফাঁকি দিয়ে এইসব কর আবার আমাদের মত সহজ সরল দের উপর এইসব বাজে অপবাদ দাও

আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে, এত বড় অপমান আমি কখনো পাইনি, বাসের সবার সামনে লোকটা আমাকে এইভাবে বললো, এখন মনে হচ্ছে ইস যদি চুপ করে সহ্য করে যেতাম তাহলেই তো হতো, ফাহাদের উপর রাগ হচ্ছে ওর জন্য সব,, আমি এই রকম অবস্থায় আর পড়িনি, ও কিভাবে আমাকে একা একা এত দূরে যেতে বলবো।।

তখন আমার পাশের সিটে বসা থাকা একজন মহিলা বলছে
মহিলা: আমি 2বার তাকিয়েছি দেখি কাকা ওই বাচ্চা মেয়ের দিকে কিভাবে তাকাচ্ছে পায়ে পায়ে লাগাতে চাচ্ছেন।।
বাসের লোকেরা এইবার উনার কথায় বিশ্বাস পেলেন।।
আমি: আমি আমার হাসব্যান্ড এর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি কোনো ছেলের সাথে না
লোকটা: হে হে এখন তো হাসব্যান্ড হয়ে যাবে, আসতে বল দেখি তোমার হাসব্যান্ড কে, কেমন মেয়ে বিয়ে করেছে দেখুক।।
বাকি লোকগুলো বলছে তাকে যেন আসতে বলি, তাহলে ঝামেলা টা শেষ করা যাবে।।

আমি ফোন করে ফাহাদকে ফোন দিলাম কল হচ্ছে কিন্ত তুলছে না প্রায় 4/5বার ফোন দিয়েছি কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই, আমি বললাম সে ব্রিজে থাকবে, ঐখানে দেখা যাবে কি হয়, ওই মহিলা আমাকে তার কাছে নিয়ে বসালো।। আমি কেদেই যাচ্ছি।।
30মিনিট পরে বাস ব্রিজে থামলো আমি চারপাশে তাকে খুঁজছি কিন্ত কোথাও পাচ্ছি না, জানিনা আজ আমার কপালে কি আছে, আমাকে যদি ও এই অপমান থেকে রক্ষা না করতে পারে আমি আর ওর জীবনে থাকবো না, ওর সাথে সব শেষ করে দিব।।
সবাই বাস থেকে নামছে আমি আল্লাহ আল্লাহ করছি।।
সবাই যার যার মত চলে গেলো ওই মহিলা আমি আরো 2/3জন জন বাসের 3জন আর ওই বাজে লোকটা দাড়িয়ে আছি, ওরা বলছে ফোন দিতে আমি দেখি আমার ফোন এইখানে নেটওয়ার্ক পাচ্ছেনা, 5মিনিট ধরে দাড়িয়ে আছি সবাই আমার প্রতি বিরক্ত হচ্ছে, আমি আমার বাম পাশে তাকাতেই দেখি সে রাস্তায় প্রত্যেক টা বাসের জানালা ভালো করে দেখছে দরজার সামনে খুঁজছে,
আমি দৌড়ে যেয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।।

সে আমার দিকে ঘুরে বললো
ফাহাদ:কই ছিলে তুমি? আমি কখন থেকে তোমাকে খুঁজছি, তোমার ফোন কেন অফ?
আমি: কেদে দিয়েছি
ফাহাদ: আয়েশা কি হয়েছে? ভয় পেয়েছ? ছাড়ো সবাই তো দেখছে।।
আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে ওর হাত ধরে ওদের সামনে নিয়ে বললাম, এইযে আমার হাসব্যান্ড।।

বাসের কন্ট্রাক্টর সব টা ফাহাদকে খুলে বলেছে, ফাহাদ যখন ওর পরিচয় দেয় ওই লোক ওর কাছে ক্ষমা চায়।।
ও একটা রিকশা নিয়েছে, আমি ওর বাম পাশে বসা, ও ওর বাম হাত টা দিয়ে আমার বাম হাতের বাহু শক্ত করে ধরেছে।। আমি এখনও ভয় পেয়ে ওর হাত যে তখন থেকে খামচে ধরেছি আর ছাড়িনি, ও কিছু বলছেনা, একটা ছোট হোটেলের মধ্যে নিয়ে গেলো।।

ও একটা বাচ্চাকে বললো রুটি আর ডিম ভেজে আনতে।।
ও আমার সাথে একটা কথাও বলছে না, আমি বুঝতেসি না ও কি সব দোষ আমার ভাবছে, ভাবছে আমি এইসবের জন্য দায়ী।। কিন্ত আমার কি দোষ।।

বাচ্চাটা 2টা প্লেট 2জনের জন্য খাবার এনেছে।

ফাহাদ রেগে গেছে বাচ্চা টাকে ধমক দিয়ে বলছে আমি কি তোকে 2জনের জন্য খাবার আনতে বলেছি? তাহলে 2জনের জন্য কেন আনলি?

আমি ওর এমন ব্যাবহার চমকে যাচ্ছি ওর ঐ ছেলেকে দিয়া প্রত্যেক টা ধমক মনে হচ্ছে আমাকে দিচ্ছে, আমি বাচ্চা টাকে ডেকে বললাম কত হয়েছে এখানে?
বাচ্চা: 50
আমি: আমি আমার ব্যাগ থেকে 100টাকা ওকে দিয়ে বললাম এইগুলো তুমি রেখে দাও আর খাবার গুলো নিয়ে যাও।।

ফাহাদ: বাচ্চা টার থেকে একটা প্লেট রেখে বললো খাও
আমি: এটা কেনো রেখেছেন?
ফাহাদ: দেখ কোনো কথা বলবা না চুপ চাপ এইগুলা খেয়ে নাও
আমি: আমার খিদে নেই
ফাহাদ: আয়েশা আমার কথা শুন বলছি, আমি তোমার উপর রাগ দেখাতে চাচ্ছি না।।
আমি ওর কথা পাত্তা না দিয়ে উঠে বাইরে রাস্তায় চলে গেলাম।।

ফাহাদ পিছন থেকে আমার ডান হাত এমন ভাবে ধরেছে যেন হাত টা কেউ খুলে নিয়ে যাচ্ছে, এমনি এই হাতে আমার ব্যাথা, ওই ছেলে ধাক্কা দেয়ার পর থেকেই মাঝে মাঝে খুব ব্যাথা হয়।।
আমি ব্যাথায় কেদে দিসি, ও আমাকে টেনে নিয়ে চেয়ারে বসালো, ও ওর চেয়ার টা টেনে আমার কাছে বসে রুটির মধ্যে ডিম নিয়ে আমার মুখে দিচ্ছে, আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম সে আমার 2 গাল ওর বাম হাত দিয়ে ধরে রুটি টা মুখে দিল।।

চলবে..

#Ayesha
#ArrangedMarraige

পর্ব-12

আমি ব্যাথায় কেদে দিসি, ও আমাকে টেনে নিয়ে চেয়ারে বসালো, ও ওর চেয়ার টা টেনে আমার কাছে বসে রুটির মধ্যে ডিম নিয়ে আমার মুখে দিচ্ছে, আমি মুখ ঘুরিয়ে নিলাম সে আমার 2 গাল ওর বাম হাত দিয়ে ধরে রুটি টা মুখে দিল।।

ও নিজেই আমাকে খাইয়ে দিল, আমার খাওয়া শেষ রাস্তায় আসছি।।

ও এইটা রিকশা নিল চরপাড়া হসপিটালে যেতে বলছে।। আমরা রিকশায় উঠছি

আমি: হসপিটালে কেন
ফাহাদ: আয়েশা
আমি: হুমম
ফাহাদ: আমি খুব সরি
আমি: ঠিক আছে
ফাহাদ: এই সব কিছুর জন্য আমি দায়ী, আমার কারণে তোমায় এইসব ঝামেলা পুহাতে হচ্ছে, আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আজকের জন্য। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও পারলে। আমি তোমাকে নিজে দিয়ে আসবো নেত্রকোনা। আমি আর কখনও তোমাকে কোথাও একা যেতে দিব না প্রমিজ।।
আমি: আমরা হসপিটাল কেন যাচ্ছি?
ফাহাদ: ওইদিন যাওয়ার পথে রাস্তায় একজন মহিলা আমার গাড়িতে অ্যাকসিডেন্ট করেছে
আমি: কিইই? আপনি এখন আমাকে এইগুলো বলছেন? এতদিন কেন বলেন নি? আপনি ঠিক আছেন?
ফাহাদ: হাঁটুতে হালকা লেগেছে, তুমি প্লিজ কেউকে বল না, আমি তোমাকে ছাড়া কেউকে বলার সাহস পাইনি, তোমাকে ছোট একটা কাজ করতে হবে আমার জন্য
আমি: কি?
ফাহাদ: উনার 3 ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন আমি 2 ব্যাগ ম্যানেজ করেছি আর 1ব্যাগ দরকার। আমার ব্লাড মিল পরে নি আমার ফ্রেন্ড দের কারোর সাথে মিল পড়লেও তাদের কিছুদিন আগে দিয়া হয়েছে বলে ডক্টর নিতে চাচ্ছে না।। তো….
আমি: তো?
ফাহাদ: আমি তোমাকে দিয়ার জন্য বলছি না তুমি শুধু দেখবে যদি তোমার মনে হয় দিবে তাহলে দিও।।
আমি: কিন্ত আমার 18 হয় নি
ফাহাদ: তুমি চিন্তা কর না আমি আমার এক বন্ধুর সাথে কথা বলেছি এই নিয়ে বলেছে তেমন কোনো সমস্যা হবেনা।
আমি: আপনি কি চান?
ফাহাদ: আমি চাই তুমি রক্ত দাও
আমি: কিন্ত আমার ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করবে?
ফাহাদ: আমি জানি তোমার ব্লাড গ্রুপ বি পজিটিভ।। তোমার পেপার গুলোতে দেখেছিলাম।
আমি: ঠিক আছে দিব
ফাহাদ: হুম আমি তোমাকে এইভাবে কষ্ট দিতে চাইনি আয়শা। (আর কিছু বললো না, আমার কপালে চুমু দিয়ে আমার হাত শক্ত করে ধরে আছে )

আমি: আচ্ছা শুনেন
ফাহাদ: হুমম বল
আমি: বুবুকে ফোন দিয়া হয় নি, ফোন করে বলে দিলে টেনশন করত না।।
ফাহাদ ওর ফোন বের করে বুবুকে ফোন দিল

বুবু: হ্যালো
ফাহাদ: বনু আয়েশা আমার সাথে আছে টেনশন নিও না
বুবু: ঠিক আছে

আমি: আপনি বুবুকে বনু ডাকলেন?
ফাহাদ: কি করবো? তোমার থেকে বড় আমার থেকে ছোট তাই বনু ডাকবো বলেছি
আমি: আর কার কি নাম দিয়েছেন?
ফাহাদ: পরে বলবো, এসে গিয়েছি নামো।।

ও রিকশার ভাড়া দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি চিন্তা করতে করতে মুখে একটা কালো ভাব চলে আসছে।

একটা কেবিনে ওই মহিলা কে রাখা।। আমি দেখেই কেদে দিসি, মহিলা পুরা সেন্সলেস, নাকে নল দিয়ে খাবার দিচ্ছে, মাথায়, পায়ে, হাতে মানে তার 60ভাগ ব্যান্ডেজ করা।। হাত পায়ের আঙ্গুল গুলো সাদা হয়ে গেছে,, তাকে রক্ত দিয়া হচ্ছে।।

ফাহাদ আমাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেল বললো ও রক্ত দিবে, ডক্টর বললো আমি কিছু চেক আপ করে দেখি।
ডাক্তার 1ঘণ্টা সব ফর্মালিটিস শেষ করে ফাহাদ কে ভিতরে ডাকছে, ডক্টর তাকে বলছে সব ঠিক আছে,

আমাকে একটা বেডে শুয়ানো হয়েছে, জীবনের প্রথম হসপিটালের বেডে শুয়েছি, আমি ফাহাদের হাত ধরে আছি।। ও আমার হাত ওর 2হাত দিয়ে ধরেছে, আমি ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আছি আর ও আমার দিকে, ডক্টর ওকে বাইরে যেতে বলেছিল কিন্তু আমি তার হাত ছাড়িনি বলে সে যায় নি, বেডে র পাশে চেয়ারে সে আমার হাত ধরে বসেছে, ডাক্তার ইনজেকশন নিয়ে আমার হাতে দিয়েছে, আমি চোখ বন্ধ করে ফেলেছি।।।
রক্ত দিচ্ছি, আর ফাহাদ বার বার ডক্টরকে জিজ্ঞেস করছে কি কি করা লাগবে? কি খাওয়া লাগবে? কিভাবে থাকা লাগবে? তার পাগলামি দেখে নার্স গুলো হাসছে, ডক্টর মুচকি হেসে বললো এত টেনশনের কিছু নেই আপনি উনাকে ডালিম খাওয়াবেন দেখবেন 2দিন পর রক্ত টক বক করছে, কেবিনে থাকা সবাই হেসে দিল কিন্ত ফাহাদের মুখে চিন্তার ভাব সরছে না।।

রক্ত দিয়া শেষ আমার নিজেকে অনেক হালকা লাগছে, মনে হচ্ছে আমার শরীর থেকে অর্ধেক অংশ কেউ নিয়ে গেছে। ও আমাকে ঐ মহিলার সাথে দেখা করাতে নিল কিন্তু উনার সেন্স আসেনি, তাই ফাহাদ আমাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল।।

বাজার থেকে ভালো মানের কিছু আঙ্গুর, ডালিম কিনলো আরো কিছু খাবো নাকি জিজ্ঞেস করলো আমি না করেছি তাও একটা রেস্ট্রুরেন্টে নিয়ে গেল, আমরা বসে আছি আমি বললাম

আমি: কিভাবে করেছিলেন অ্যাকসিডেন্ট?
ফাহাদ: আমি শম্ভুগঞ্জ পার হতেই একটা কুকুর সামনে পরলো আমি ব্রেক করতে যেয়ে দেখি ওই মহিলা আসছে বার বার হর্ন বাজাচ্ছি, কিন্ত উনি শুনতে পান নি যার কারণে এই দুর্ঘটনা।।
আমি: উনার ছেলে মেয়ে নেই?
ফাহাদ: জানিনা পাগল মহিলা রাস্তায় ঘুরতো।।
আমি: ও
ফাহাদ: আয়েশা একটা কথা বলি?
আমি: কি?
ফাহাদ: আচ্ছা উনি ভালো হলে কি আমরা আমাদের কাছে উনাকে রাখতে পারিনা? কারণ উনার এই অবস্থার জন্য তো আমি দায়ী, দায় তো আমাকেই নিতে হবে। আর উনার ও একটা আশ্রয় প্রয়োজন যদি আমরা সেই ব্যাবস্থা করে দেই?

আমার মনে মনে তার প্রতি শ্রদ্ধা চলে আসলো। একটা মানুষ কতটা ভালো হলে এমন কাজ করতে পারে,

আমি: আমার কোনো সমস্যা নেই
ফাহাদ: ঠিক আছে আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে দেখি কবে ছারে।।

এইবার ওয়েটার এক প্লেট ভাত, মুরগির মাংস, মাছ, মাছ ভাজি, ডাল, একেবারে খানদানি খাবার সামনে টেবিলে রাখছে।

আমি: সবই বুঝলাম এত খাবার কে খাবে? আর একটা কেন প্লেট?
ফাহাদ: সব তুমি খাবে, আর তোমার মনে মায়া দয়া থাকলে আমাকেও একটু দিও।।

ওর ফোন বেজে উঠেছে, স্ক্রীনে নাম দেখে বললো কথা বলো না আম্মু।।

ফাহাদ: হে আম্মু
আম্মু: কি করছ?
ফাহাদ: এইতো খেতে এসেছি, তোমরা কি করছ?
আম্মু: আমি তোমার দাদার বাড়ি যাচ্ছি তোমার যে ফুলকলি ভাবী ছিল, সে নাকি পায়ে ডাল ফেলে দিসে পা পুরে গেছে তাকেই দেখতে যাচ্ছি
ফাহাদ: ফেলার আর জিনিষ পেল না, এত বছর ধরে বাড়িতে আছে এখনও ভাবির বুদ্ধি হলো না কোন কাজ কিভাবে করতে হয় শিখল না, মতি ভাই যে কেমনে ভাবীকে নিয়ে তাকে ভাইয়েই জানে।
আম্মু: তোর সব কিছু নিয়ে মজা করা কি থামবে না? 2দিন পর বিয়ে করবি এখনও বড় হলি না।
ফাহাদ: মা গো এই 2দিন কবে শেষ হবে, আব্বায় তো দেখার দিনই বিয়ে করিয়ে দিতে পারতেন, আব্বার উপর থেকে আমার বিশ্বাস উঠে গেছে, তুমি আমার উপর একটু সদয় হইয়ো মা
আম্মু: তোর বকবকানি শুনার টাইম নাই আমার রাখলাম।।
ফাহাদ: আচ্ছা আমি খাবো তুমি সাবধানে যাও রাখছি।।

আমি তাদের কথা শুনে বোকা বনে চলে গেলাম।।

আমি ভাত সাথে এক পিস মাংস প্লেট নিয়েছি
ফাহাদ: মাছ টা নাও
আমি: কাটা
ফাহাদ: তো কাটা ফেল
আমি: কাটা ফেলতে পারিনা
ফাহাদ: তোমাকে নিয়ে তো আমার ঝামেলার শেষ নেই
আমি: বিয়ে করার দরকার নেই তাহলে
ফাহাদ: এটা তো আমার করতেই হবে, আমার যে তোমাকে চাই।। আমার বাচার জন্য অক্সিজেন তো তুমি হয়ে গেছ।। নাও তারাতারি খাও 2টা বেজে যাচ্ছে,
আমি মাংস দিয়েই লঙ্কা করে তার মুখে দিলাম

ফাহাদ: আমি রুগী না আপনি খান তাহলেই আমার খাওয়া হবে
আমি: আমি দিচ্ছি ফিরিয়ে দিলে কিন্ত অপমান হবে।।
ফাহাদ: বাহ বাহ মেডামজী আমার তীর আমার বুকেই দিচ্ছ
আমি: তার মুখে দিলাম সে গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাচ্ছে,

আমি আবার একটা লঙ্কা নিয়ে তার মুখে দিলাম, সে আমার হাত ঘুরিয়ে আমার মুখে দিল।।

ফাহাদ: এইবার তুমি খাও
আমার লজ্জা লাগছে তার সামনে খেতে তাও কোনো রকম খাচ্ছি।।

আমরা খেয়ে বের হয়ে গেলাম, ও ব্রিজ থেকে একটা বাসে উঠলো আমার হাত ধরে আমাকে তুললো, কোনো সিট খালি নেই, পিছনে আছি, ও আমার পিছনে দাড়িয়েছে আমি তার সামনে,, বাস চলছে।।
হটাৎ বাস থামলে ও আমার দিকে হেলে পরে,
একজন নেমে গেছে ফাহাদ ঐখানে আমায় বসিয়ে দিল
ও আমার পাশেই দাড়ানো আমার সিটের উপর ওর ডান হাত আর বাম হাত টা পকেটে রাখা।।
আমার সিটের উপর রাখা ওর হাত টা আমি আসতে করে ধরলাম, ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে আমার হাত টা ওর হাত থেকে ছাড়িয়ে সে ডান হাত টা আমার গলায় জড়িয়ে ধরলো আর বাম হাত পকেটে থেকে বের করে আমার বাম হাত ধরলো।। আমি ওর হাত গালে লাগিয়ে আছি।।

হটাৎ বাস জোরে ব্রেক করল, আমি হেলে সামনে চলে গেছি আর একটু হলে সামনে সিটে মাথা লাগত, আমার তখন মনে হলে ফাহাদ কই? পাশে তাকিয়ে দেখি সে নেই, আমার বুকে আবার ভয় ভির করলো, আমি আমার ডান পাশে তাকাতেই দেখি সে জানালায় কনুই রেখে ওর হাতের তালুতে গাল রেখে হাসছে, আমি এইবার একটু সস্থির নিঃশ্বাস নিলাম।।

ফাহাদ: ভয় পেয়েছিলে?
আমি: মুটেও না
ফাহাদ: দেখতেই পাচ্ছি
আমি: ভুল দেখছেন, আচ্ছা আপনি এখানে কখন আসলেন? আর আমি কখন ঘুমিয়েছি?
ফাহাদ: ওই মহিলা নামার পরেই আমি বসেছি, এতক্ষণ আমার বুকে মাথা রেখে আরামে ঘুমিয়েছি, লোক জন আড় চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে নেমেছে, আমার তো খুব লজ্জা লাগছে।।
আমি: এত লজ্জা তাহলে ফেলে রাখতেন, এখন কথা শুনাছেন কেন।
ফাহাদ: আরে কথা কই শুনলাম, তোমাকে জানালাম আর কি।।
আমি: থাক বুঝছি।।
ফাহাদ: আচ্ছা তুমি কি জানো তুমি যে নাক ডাকো
আমি: এইবার আমাকে মিথ্যা ক্যাসে ফাসাচ্ছেন আমি খুব ভালো জানি আমি নাক ডাকি না।।
ফাহাদ: আমি মিথ্যা বলছি?
আমি: না মজা নিচ্ছেন

ও হেসে আমার গাল টেনে দিল

ও একটা প্যাকেট থেকে ওষুধ বের আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে কখন কোনটা খাবো, আমিও মনোযোগ দিয়ে দেখছি, ও আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে।।।

ফাহাদ বাইরে তাকিয়ে আছে আমি তার সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি, ও এতই তাড়াহুড়ায় বের হয়েছে নে নরমাল জুতা পরে চলে আসছে, প্যান্ট আর একটা সাদা শার্ট পরা কোনো কিছুই আইরন করা না শার্ট টা মনে হয় ধুয়ে রাখার পর যেইভাবে খুচ হয়ে থাকে ওই অবস্থায় পড়ে চলে আসছে, ওর চুল গুলো এলো মেলো, মুখে খুচা খুচা দাড়ি, ওকে এইভাবে বেশ মানাচ্ছে যদি শার্ট টা আইরন থাকত পারফেক্ট লাগত।।

বাসা চলে আসছে সবাই নামছে আমরা পিছনে থাকায় সবার শেষেই নামলাম।।

5টা 17বাজে আমরা রিকশায় বাসার দিকে যাচ্ছি, ও আমাকে আবার সব বুঝিয়ে দিচ্ছে কোন ওষুধ কখন খাবো কী কী করবো সব।। অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো আজকের জন্য, ওর যা যা বলা দরকার ও সব বলছে কিছু বাদ দেয় নি, পুরা রাস্তা ও এই কথা বলেই গেল।।
বাসার সামনে রাস্তায় রিকশা থামছে, আমি নেমে পরেছি সে বসে আছে

ফাহাদ: ঠিক আছে যাও তাহলে
আমি: আপনি বাসায় আসবেন না?
ফাহাদ: না
আমি: কোথায় থাকবেন?
ফাহাদ: আমার বন্ধুর বাসা আছে ঐখানে থাকবো রাত টা, সকালে উঠে আবার চলে যেতে হবে, অফিসে অনেক কাজ জমে গেছে এই কিছুদিনে

চলবে…