Arrange Marriage part-07+08

0
463

#Ayesha
#ArrangeMarriage
পর্ব-7+8
দেখি কাল কি অপেক্ষা করে আমার জন্য
তারপর তার সাথে আর কথা হয় নি।
সকালে 10টায় প্রাইভেট আমি খুব আলসেমি করেই রেডি হচ্ছি।। চাচী খেতে ডাকছেন
খাবার টেবিলে আমি বুবু, সায়েম, খাদিজা,
বাবা আর মা স্কুলে চলে গিয়েছে।। কাকা সকালে গ্রামে চলে গেল।
আমি টেবিলে বসতে বসতে বললাম কি অবস্থা সবার?
সায়েম: আমাদের খবর নিয়ে আর কি করবি? তুই ব্যাস্ত মানুষ তাই থাক
খাদিজা: ছোটপু কে আমি যখনই দেখি তখনই শুধু ফোন কানে, পরশু রাতে ও অনেক্ষন কথা বলেছে, কাল বিকাল বেলায় আমি স্কুল থেকে এসে দেখি ফোন কানে, রাতে ও তাই, মানে হচ্ছে আমার সাথে ওর দেখা হলেই ওর হাতে নয়ত কানে ফোন।।
(এই মেয়ের জন্মই আমাকে সবার সামনে অপদস্ত করার জন্য)
আমি: খাদিজা তোকে বার বার বলেছি আমার পিছনে লাগবি না, আর আমি উনার সাথে পরশু রাতে আর বিকেলে টুক টাক কথা হয়েছে,, আর রাতে মিলি ফোন দিয়েছিল সকালে প্রাইভেট আছে কি না জানার জন্য, আর আমি মুটেও ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকি না, যখনই ফোন হাতে নেই তখন তুই ডাইনি সামনে পরিস)
বুবু: তাই দেখছি রে খাদিজা আমাদের ছোট আইশি কত বড় হয়ে গেলো, কিছুদিন পর বিয়ে হয়ে যাবে
সায়েম খাওয়া শেষ করে উঠে চলে গেলো, এই ছেলে সব সময় একা একা থাকতে চায়
আমি কথার মাঝখানেই থামিয়ে দিয়ে বললাম তোমাকে কত বার বলেছি আইশি ডাকবে না আমার ফ্রেন্ডরা খুব মজা নেয়। আর খাদিজা শুন তুই বরং আমাকে নাম ধরেই ডাকিস কেমন? কত বার বলেছি শুধু আপু বলবি আপু। তুই ছোট আপু লাগালি মানলাম এখন ছোটপু বানিয়েছিস কিছুদিন পর কি ডাকিস আল্লাহ জানেন।।
খাদিজা আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে বুবু বলছে
খাদিজা: বুবু জানো ছোটপু ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করেছে
বুবু: কেন
আমি অবাক হয়ে গেলাম, ও কি সারাদিন আমার উপর নজরদারি করে নাকি।।
খাদিজা: আমি জানি কাল কি নিয়ে ভাইয়াকে সরি বলেছে
বুবু: এখনই এইসব কেন করছিস আয়শি ছেলেটার তো তোর ব্যাপারে নেগেটিভ ধারণা হয়ে যাবে।।
আমি কিছু বলার আগেই চাচী এসে সবাইকে থামিয়ে দিল।। বুবু চলে যাবে ভার্সিটি তে। খাদিজা স্কুল যাবে না মা ও বাসায় নেই যে ফোন টিপবে, তাই তার কাজ টিভি দেখা।। আমি খেয়ে বের হয়ে গেলাম।। দুপুরে বাসায় এসে গোসল করে খেয়ে একটা হুমায়ূন আহমেদের লেখা মিসির আলী বই হাতে নিয়ে শুয়ে আছি।
মা এসেছে আমার রুমে
আমি: স্কুল শেষ?
মা: ছুটি নিয়ে চলে আসছি
আমি: হটাৎ ছুটি?
মা: এমনি
আমি: কিছু বলবে?
মা: তোর শাশুড়ির সাথে কথা হলো, খুব ভালো মানুষ উনারা।।
আমি এইবার শুয়া থেকে উঠে বসলাম
আমি: মা বিয়েটা এখনও হয় নি।
মা: হবে তো। ওরা সবাই তোকে খুব পছন্দ করেছে
আমি: করবেই তো তোমার মেয়ে তো হেলা ফেলার জিনিষ না (বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে)
মা: শুন ওদের সাথে ভালো ব্যবহার করবি। কারোর সাথে খারাপ ব্যাবহার করবি না, আর ফাহাদের কথা আর কি বলবো এক কথায় খাটি হিরা। আব্বাজী ডেইলি ফোন করে তোর বাবার কাকার সাথে কথা বলছে, আমার সাথেও বলে তবে ছেলে মানুষ তো কিছুটা লজ্জা পায় ও না বললেও তো আমি বুঝতে পারি।। তোর বাবা তো সারাদিনই ফাহাদ এই ফাহাদ সেই বলে, আর কিছুক্ষণ পর পর বলছে আমাদের মেয়ে খুব সুখী হবে দেখ।। আব্বাজী তোকে সত্যি খুব ভালো রাখবে দেখিস..
আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম মা তুমি দিন দিন এমন গেয় কেন হচ্ছো? কি সব কথা বলছো? ভালো ব্যাবহার করবি মানে কি? আমি জেনে শুনে নিজের বদনাম করবো? আর আব্বাজী কি ধরনের ডাক? আমার আব্বার শাশুড়িও মনে হয় না এই নামে আব্বাকে ডেকেছে, তুমি এই নাম কোথা থেকে পেলে?
মা: এইসব তোর জানা লাগবেনা আমার কথা টা শুন…
আমি: মা আমি সত্যি আর কিছু জানতে চাইনা। তবে প্লিজ তুমি তোমার ফোন আব্বাজী নামটা রিমুভ করে ওর নাম দাও, আর দয়া করে আমার সামনে আব্বাজী আব্বাজী করবে না, আর তুমি না পারলে আমায় বলো আমি তোমার ফোন থেকে নামটা চেঞ্জ করে দিচ্ছি।।
মা: সাবধান এই নাম রিমুভ হলে তোর ফোন হাতে নেয়া চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিব, তুই নিজে ফোন কিনে তোর ইচ্ছা মত নামে সেভ করিস কিন্ত আমার এখান থেকে নর চর করবি না।।
আমি: বেকুব হয়ে গেলাম।। কি মন্ত্র জানে ছেলেটা, 2দিনের সবাইকে হাতের মুঠোয় নিয়ে গেল।।
3টা বাজে মা নিয়ে এসেছে বলছে ফাহাদ কথা বলবে
আমি: হ্যালো
ফাহাদ: কোথায় তুমি?
আমি: বাসার নাম্বারে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করছেন কই আমি? মাথা ঠিক আছে?
ফাহাদ: আসলেই মাথাটা আমার গিয়েছে, আচ্ছা তুমি কি এখন বের হতে পারবে?
আমি: কোথায়?
ফাহাদ: তুমি রেডি হয়ে আপাদত রাস্তায় আসো
আমি: রাস্তায় কি করবো? আর কি জন্য রেডি হবো?
ফাহাদ: এত প্রশ্ন কেন কর?
আমি: আসছি 5মিনিট
ফাহাদ: এই না না তুমি ধীরে সুস্থ্য রেডি হতে থাকো আমি রাস্তায়, নেত্রকোনা আসছি।।
আমি: কিইই? কিন্ত কেন?
ফাহাদ: পরে সব বলব আর তুমি প্লিজ আন্টিকে আমার আসার কথা বল না, উনি জানলে আম্মুকে বলবে আম্মু জানে না আমি ঢাকা যাচ্ছি,
আমি: কিন্ত
ফাহাদ: প্লিজ লক্ষ্মীটি একটু ম্যানেজ করে বের হও। আমি এসে তোমাকে সবটা বলবো। ও ফোন রেখে দিলো।।
আমার হাত পায়ের লোম দাড়িয়ে গেছে এই কথা শুনে ফার্স্ট টাইম কারোর কাছ থেকে এমন কথা শুনে অনুভূতিটা আমি বলে বুঝাতে পারবো না।।
আমি মাকে বলেছি সাথী অর্ণীর সাথে বাইরে যাবো অনেকদিন বের হইনা কোথাও।। মা না করে নি শুধু বলেছে তাড়াতাড়ি ফিরতে,
আমি একটা লাল গাউন পরে গোল্ডেন কালার হিজাব পরেছি, মুখে পন্ডস ক্রিম আর ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক এইটুক আমার সাজ এছাড়া আর কিছু পারিনা।। সাথে হ্যান্ডব্যাগ টা আর আমার কাছে 500টাকা ছিল তাই নিয়েছি
আমি রাস্তায় দাড়িয়ে আছি মার ফোন টাও আনিনি, প্রায় 15মিনিট দাড়িয়ে আছি কারোর খুঁজ নেই।। জীবনে কারোর জন্য অপেক্ষা করিনি আর আজ প্রথমদিনেই সে আমাকে অপেক্ষা করাচ্ছে।।
হটাৎ একটা কালো বাইক এসে আমার সামনে দাড়ালো একটা হ্যান্ডসাম ছেলে স্কাই কালার শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পরা, আমি কখনো দেখিনি মুখ ও বুঝা যাচ্ছেনা হেলমেট পরা তাই চোখ ছাড়া কিছু বুঝা যাচ্ছেনা।।
আমাকে দেখে হাই দিল।। আমি কিছু না বলে একটু দূরে সরে দাড়ালাম।।
গাড়ি নিয়ে আমার পাশে এসেছে
+কারোর জন্য অপেক্ষা করছেন?
আমি কিছু বললাম না
+বয় ফ্রেন্ড আসবে?
আপনি কে?
+তোমার চেনা কেউ না
আমার সাথে কথা কেন বলছেন?
+ তুমি দেখতে বেশ সুন্দর
এই ছেলের ভাব লক্ষণ মুটেও ঠিক না আমি এবার বেশ অনেক টা দূরে সরে দাড়ালাম
ছেলেটা আবার আমার কাছে আসছে
আমি: দেখেন একদম আমার কাছাকাছি আসবেন না আমি কিন্ত চিৎকার করবো।
ছেলেটা এইবার আমার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে
আমি: আমি কিন্ত সত্যি লোক জন ডাকবো (আমি অনেক টা ভয় পেয়েছি কেদে দিব এমন অবস্থা)
আরে আরে এই কেদো না আমি ফাহাদ
আমি: কিইই?
ফাহাদ: সত্যি
আমি: আমি বিশ্বাস করিনা
ফাহাদ: হেলমেট খুলে বললো চিনেছ? একটা মায়াবী মুখ উজ্জ্বল শ্যামলা দেখতে চুল কিছু কপালে ছড়িয়ে আছে একদম বাচ্চা বাচ্চা একটা ভাব।।
আমি: না
ফাহাদ: মজা কর না
আমি: আমি সত্যি আপনাকে চিনি না
ফাহাদ: মানে কি? তুমি আমাকে দেখো নি? ওয়েট।।
সে পকেট থেকে ফোন বের করে কাকে জানি ফোন, ফোনটা স্পিকারে দিলো, কল হচ্ছে
ফাহাদ: হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম আন্টি
আমার মায়ের গলা শুনা যাচ্ছে
মা: ওলাইকুম আসসালাম, কেমন আছো আব্বাজী
ফাহাদ: জী আন্টি ভালো আয়েশা আছে?
মা: না বাবা ও একটু বের হয়েছে
ফাহাদ: কোথায় গিয়েছে কিছু বলেছে?
মা: ওর ফ্রেন্ডস দের সাথে বের হয়েছে তুমি চিন্তা কর না সন্ধ্যার আগেই ফিরবে
ফাহাদ: জ্বী আন্টি ও আসলে ফোন দিয়ে বলবেন
মা: ঠিক আছে
ফাহাদ কল কেটে আমাকে বলছে বিশ্বাস হয়েছে?
আমি: হুম
চলবে

#Ayesha
#ArrangeMarriage
পর্ব: 8
আমি:হুম
ফাহাদ: চল তাহলে
আমি: কোথায়?
ফাহাদ: বাইকে উঠ
আমি: আমার অভ্যাস নেই পরে যাই যদি?
ফাহাদ: আমি আছিনা?
আমি: সাধারণত মেয়েরা গাড়িতে উঠলে যেইভাবে বসে আমিও সেইভাবে বসেছি।। গাড়িতে উঠেছি কিন্ত তাকে ধরিনি
ফাহাদ: এইভাবে তো যেতে পারবে না, ধরে বস না হয় পরে যাবে।
আমি: না ঠিক আছে আমি পারবো
ফাহাদ কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিল ও যেই রাস্তায় যাচ্ছে সেটা আমার চেনা, তাও জিজ্ঞেস করছি কোথায় যাচ্ছি?
ফাহাদ: দেখি কোথায় যাওয়া যায়
আমি কিছু বললাম না ও আসতেই গাড়ি চালাচ্ছে সামনে জ্যাম থাকি হটাৎ ব্রেক খসায় আমি বেসামাল হয়ে তার উপর হেলে পরেছি, হাত টাও আপনি আপনি তার কাঁধের উপর চলে গেল
আমি হাত সরিয়ে নিচ্ছিলাম ও আমার হাত টা ওর কাঁধেই চেপে ধরল।
(হটাৎ ব্রেক নেয়ার আমার ডান হাতে ব্যাথা অনুভব করলাম, আমি জানি এই টুকে আমি ব্যাথা পাইনি, নিশ্চই আগে কোথাও কিছু হয়েছিল কিন্ত আমি টের পাইনি)
ফাহাদ: ভাবিনি প্রথম বার হাত টা এইভাবে ধরতে হবে, হাত টা সরিয়ে নিও না প্লিজ
কথাটা এত মায়া মুখ নিয়ে বলেছে আমি আর না করতে পারিনি
এইভাবেই যাচ্ছি।।
,(যেহেতু আমার বাইকে চড়ে অভ্যাস নেই সেই হিসেবে আমি শুধু নড়া চড়া করছি, বার বার তার দিকে ঝুঁকে পরছি, একটু উচু উচু জায়গা থাকেনা এইগুলা কে ঠিক কি বলে আমার জানা নাই। আমি ওই উচু জায়গা একটু ঝাকুনি খেলে আবার নিজের অবস্থানে ফিরে যাই, গেলে কি কিছুক্ষন পর আবার এক কাহিনী, এই রাস্তা আজ আমার সাথে বেইমানি শুরু করছে, অন্যদিন ত চোখের পাতি পড়ার আগেই পৌঁছে যাই আজ কি হলো)
ফাহাদ:কোনো অসুবিধা হচ্ছে?
আমি: না ( হচ্ছেনা আবার জীবন টা বের করে দিলি ভাই, এর থেকে হেঁটে যেতাম শান্তিতে যেতাম। আর জিবনে বাইকে উঠবো না, না পারছি নড়তে না পারছি বলতে, কি সংকট ময় জীবন লীলায় পরলাম)
ও সালতি র সামনে গাড়ি থামলো (নেত্রকোনার মধ্যে সালতি, সরঋতু 2টা রেস্টুরেন্ট মুটামুটি বড়)
আমি নেমে পরলাম ও গাড়িটা সাইড করে রেখে বললো চলো
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি।।
ফাহাদ: কি হলো?
আমি: আপনি এত খাটো হয়ে গেলেন কি করে?
ফাহাদ: মানে?
আমি: প্রথমদিন তো আপনাকে অনেক লম্বা লাগলো আজ…. আচ্ছা আপনি ফাহাদ তো?
ফাহাদ: এইবার আমার মনে হচ্ছে তোমার মাথা টা গেছে
আমি: না আসলে আমার হাইট 5.5 আপনাকে তো ওইদিন তো 6 ফিটের মত লেগেছে আজ তো..
ফাহাদ: ওয়েট ম্যাম ওয়েট, একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে বললো ফরমাল ড্রেসে সবাইকেই মুটামুটি এমন একটু লাগে, তবে তোমার মনে হয় একটু বেশি লেগেছে, আমি 6ফুট না।।
আমি: তাহলে?
ফাহাদ: 5:9
আমি: ও
ও সিড়ি দিয়ে উঠছে আমি তার পিছনে, যেমন করে প্রথমদিন আমি সামনে ও পিছনে ছিল।।
আমরা ভিতরে ডুকলাম, ও আমাকে নিয়ে পিছন ওই কাপল টেবিলে গেল, এটা মূলত কাপলদের জন্য।। আমি ভিতরে ঢুকতেই উপর থেকে গোলাপ আমার আর তার গায়ে পরছে আমি অবাকের থেকেও বেশি অবাক হলাম।। কারণ আমার সাথে এমন টা ঘটবে আমার কল্পনার বাইরে, সারাজীবন আমি ফেইসবুকে এইসব দেখে অভ্যস্ত আজ নিজের সাথে হচ্ছে এক মুহূর্তে কি করে বিশ্বাস করি।। আমি আসে পাশে তাকিয়ে দেখছি কেউ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে কি না, কিন্ত না আজ এখানে তেমন কেউ নেই, যারা আছে তারা নিজেদের কাজে ব্যাস্ত।।
আমি নিজেকে নিয়ে এতই ব্যাস্ত ছিলাম যে তার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম,
আমি তার দিকে তাকাতেই দেখি সে পকেটে হাত দিয়ে আমার দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে।।
(এই কাপল টেবিলের কর্নার টা একটা ছোট রুমের মত, সামনে একটা বড় গেট চারদিকে ফুল দিয়ে সাজনো।। গেটের 2দিকে 2টা বড় ফুলের টব। 2টা মুখোমুখি সোফা, একটু বড় সাইজের 2জন বসা যায় এমন।। আর মাঝখানে একটা লাভ সেফের টেবিল, সব ডেকোরেট এখন করা হয়েছে, কারণ এর আগেও আমি এখানে এসেছি কিন্ত এইভাবে কখনো দেখিনি)
ফাহাদ: খুশি?
আমি: খুব
ফাহাদ: ধন্য হলাম
আমি: আপনি করেছেন এইসব?
ফাহাদ: জী আমি করেছি
আমি: আমার জন্য?
ফাহাদ: জী শুধু আপনার জন্য ম্যাম
আমি এইবার চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে মুখ ডেকে ফেললাম (আমার সাথে এইসব হচ্ছে ভাবতে পারছিনা)
আমি অনেকক্ষন এইভাবেই ছিলাম তার সারা শব্দ না পেয়ে মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেখি সে হাঁটু গড়ে ফ্লোরে বসে আছে ঠিক যেইভাবে প্রপোজ করে।। ওর হাতে একটা কাগজ
আমি: এটা কি?
ফাহাদ: পড়ে দেখ।
আমি হাতে নিলাম খুলে যা দেখলাম আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেল ,
ফাহাদের চিঠিতে যা লিখা ছিল
26.10.2019
11.35pm
হ্যালো ম্যাম
কি দিয়ে শুরু করবো বুঝতেসি না। আমার লাইফের ফার্স্ট টাইম আমি কেউকে চিঠি লিখছি।।
এইবার বলি তোমাকে, কিভাবে আমি এই পর্যন্ত এসেছি।।
তোমাকে আমি ফার্স্ট দেখেছি নেত্রকোনা ছোট বাজার আগস্টের 27তারিখ।। সেইদিনের পর এমন দিন নেই আমি তোমাকে নিয়ে ভাবিনি তোমাকে খুঁজিনি, আমার চোখের সামনে তোমার সুন্দর মুখটা তোমার কথা বলাটা তোমার থুথায় তিল টা বার বার ভেসে উঠেছে। অনেক খুঁজেছি, যদি জিজ্ঞেস কর কেন খুঁজেছি শুধু বলবো জানিনা, অনেক খুঁজেছি একই জায়গায় টানা 3দিন গিয়েছি ভেবেছি আবার যদি আসো কিন্ত আসো নি, কিছুতেই তোমাকে খুঁজছি পাচ্ছি না,
একদিন রাস্তায় রনির সাথে তোমাকে দেখি হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে, যতক্ষণ তোমাকে দেখা গিয়েছে ততক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম, কি অপরূপ সুন্দরী লাগছিল তোমাকে, ঠোঁট বেঁকিয়ে কি সুন্দর কথা বলছিলে, সেদিন বুঝেছি তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে নিজের অজান্তেই কখন ভালোবেসে ফেলেছি টেরেই পেলাম না, ওইদিনই তোমাকে ভালোবাসি কতটা চাই বুঝতে পারি, ওইদিন রনির সাথে তোমাকে দেখে ভেবেই নিয়েছি তোমরা 2জন রিলেশন শিপে আছ, এত হেসে হেসে কথা বলছে যে আমার ইচ্ছা হচ্ছিল ওর থেকে তোমাকে টেনে নিয়ে আসি, খুব হিংসা হচ্ছিল।
তুমার হয়ত এখন প্রশ্ন আমি রনিকে কিভাবে চিনি?
বাবা চাকরির জন্যই এইখানে ছিল সাথে আমরাও, আমি আঞ্জুমান স্কুলে পড়তাম, তখনই রনির সাথে আমার পরিচয়। স্কুল জিবনে বেস্ট ফ্রেন্ড ও ছিল। তারপর আমি ময়মনসিংহ নটর ডেম কলেজে hsc শেষ করি।।
তারপর কপাল গুনে চবিতে পড়ার সুযোগ হয়।।
বাসায় আসলে প্রায়ই আসতাম নেত্রকোনা, যেকোনো প্রোগ্রামে আমি হাজির থাকতাম।।
রনির সাথে তোমাকে দেখার পর থেকে আমি ওর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছি ফেসবুক, টুইটার থেকে ওকে ব্লক করে দেই। তোমাকে ভুলার চেষ্টা করতে থাকি কিন্ত কিভাবে জানি মনের এক কোণে থেকেই যাও।
প্রায় 1মাস পর নেত্রকোনা আসলে রনির সাথে আমার সামনা সামনি দেখা, আমি ওকে মুখ গুড়িয়ে চলে গেলে ও আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করে সমস্যা কি কেন ওর সাথে এমন করেছি।। আমি প্রথমে না বললেও ওর জোরাজোরিতে সবটাই ওকে জানাই, তারপর ও সবটা আমাকে ক্লিয়ার করে বুঝিয়ে বলে তুমি যে ওর খালাতো বোন সেই ব্যাপারে বলে, আমি তখন কিছু না ভেবেই ওকে বলি আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই, তারপর রনি তোমার কাকা কে জানান, উনারা সব খুঁজ খবর নিয়ে বলেছে আমাদের নিয়ে যেতে, কিন্ত ওইদিনই ওর আর এক ফ্রেন্ডের মা অসুস্থ থাকায় ও রক্ত দিতে যায়।। তারপর কাহিনী তো তোমার জানাই,
তোমাকে দেখা আসার পরেও তোমার বাবা রাজি ছিলেন না উনি উনার মেয়েকে এত অল্প বয়সে বিয়ে দিবেন না এটাই উনার শেষ কথা।। অনেক কষ্টে রনি আমার বাবা তোমার বাবার সাথে কথা বলে এইগুলো জানায়।। তারপর আমাদের আকন্দের ডেট ফিক্সট হয়।।
অনেক কিছুই বলে ফেললাম, আজ তোমাকে ফোন না দিয়ে আমি এই কাজ করেছি, কাল আবার সকালে উঠে নেত্রকোনা আসতে হবে যতই হোক তোমার সাথে আমার ফার্স্ট মিট একটি স্পেশাল তো হওয়া উচিত তাই এই অল্প আয়োজন, আর লিখতে পারছি না হাত ব্যাথা করছে, অন্য কোনোদিন আবার লিখবো।। কাল তোমাকে চিঠি দেয়ার পর থেকে তুমি যতক্ষণ পড়া শেষ করে আমার কথা রাজি না হও আমি এইভাবেই তোমার সামনে বসে থাকবো।।।
ফাহাদ
12.25am
আমি এইবার তার দিকে তাকালাম, সে একই ভাবে বসে আছে।
আমি: উঠোন
ফাহাদ: will you marry me?
আমি: উঠতে বলছি
ফাহাদ: চিঠিতে লিখা টা নিশ্চই পড়েছ? তো উত্তর টা দিয়ে দাও না
আমি: কি বলেছি?
ফাহাদ: আমার হার্ট খুব দ্রুত বিট হচ্ছে, রেজাল্ট হওয়ার সময় এমন অবস্থা হয় না,
আমি: হোক
ফাহাদ: হটাৎ দেখবা হার্টের সুইচ অফ হয়ে গিয়েছে
আমি: এইবার বেশি হচ্ছে কিন্ত
ফাহাদ: তোমার মায়া দয়া নাই?
আমি: নাই
ফাহাদ: আমি জানি আছে
আমি: ভুল জানেন
ফাহাদ: আমি জানি অান্সার পজিটিভ আসবে,
আমি: তাহলে আমি বলার অপেক্ষায় আছেন কেনো?
ফাহাদ: তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই
আমি: আপনি এটা লাভ লেটার লিখেছেন না জীবন কাহিনী
ফাহাদ: আমি আসলে নিজেও জানিনা কি লিখেছি
আমি: হাত টা বাড়ান,
ফাহাদ: লিখা গুলো খুব খারাপ হয়েছে?
আমি: হাত টা বাড়ান
ফাহাদ: মাথা নিচু করে হাতটা বাড়ালো
আমি ওর হাত টা শক্ত করে ধরলাম। এইযে ধরেছি আর ছাড়বো না এই হাত।।
ও কেপে উঠল ওর শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ওর হাতে লোম দাড়িয়ে আছে।।
আমি ওর হাত ধরে দাড় করালাম।।
ফাহাদ: আয়েশা
আমি: হুমম
ফাহাদ: সত্যি বিয়ে করবে?
আমি: বিয়ে করবো বলিনি, হাত ছাড়বো না বলেছি
ফাহাদ: আমার খুব খুব খুউব খুশি লাগছে, একটা হাগ করবো?
আমি চোখ বড় করে তাকালাম,
ফাহাদ: একবার জাস্ট প্লিজ
আমি কিছু বলিনি ও আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরেছে, আমি হালকা আমার হাত টা ওর কোমর আর পিঠ বরাবর রেখেছি,
আমার হাত পা নিস্তেজ হয়ে গেছে , মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষণ থাকলে পরে যাবো, আমি ওকে হাতে হালকা করে ধরে সরিয়ে দিলাম, (এইভাবে থাকলে আমি হার্ট ফেল করতাম) ও আমার বাহু ধরে আমার কপালে একটা কিস করলো, আমি চোখ বন্ধ করে আছি।।
ফাহাদ আমাকে বসার জন্য ইশারা করছে, আমি ওর সামনেই সোফায় বসলাম ও আমার সামনে, আমি মাথা নিচু করে আছি।।
আমি খুব বুঝতে পরছি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।।
চলবে