Arranged Marriage part-15+16

0
454

Ayesha Anjum
#ArrangedMarriage

পর্ব-15+16

আমি রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।।

হাত মুখে ডাব সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিলাম।।
রুমে এসে টাওয়াল খুঁজে পাইনা, মা আজ খুব ব্যাস্ত, তাও বাড়ির যে যা বলবো তাই করে দিবে আমিও একটু জ্বালাই

আমি: মাআআআআআ, আম্মাআআআআ, ও মাআআআ
মা: কি মা বাড়িতে মানুষ দেখলে তোমার গলার স্বর বেড়ে যায়?

এই মেহমানদের সাথে আমারও বেশ খাতির যত্ন হবে, কারণ মাকে যা বলবো তাই করবে, না পারবে বলতে না পারবে মারতে, অবশ্য মেহমান যাওয়ার আগের দিন থেকে আবার আগের মত হয়ে যাওয়া লাগবে না হয় আমাকে কাবাব বানিয়ে শুটকি দিয়ে দিবে।।

আমি: টাওয়াল কই?
মা: (ছোট রুম থেকে টাওয়াল এনে আমার হাতে দিল।।) মা চলে যাচ্ছিল আমি আবার ডাক দিলাম
আমি: মাআআ
মা: কি
আমি: আমার খাবার গুলো কই?
মা: আছে মা আছে, আমি সব রেখে দিসি। আপনি এইবার দয়া করে বের হোন

আমার ভালই লাগছে মা যে জ্বালাতে

আমি: কে এসেছে?
মা: বাইরে বের হয়েই দেখেন।।

আমি খাটের উপর থেকে ওড়না টা কোনো রকম দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছি, মা আমার পিছন থেকে হাত ধরে আটকালো, তারপর ওরনা মাথায় দিয়ে বাকিটা কাধের পিছনে ফেলে দিল।।

আমি বের হয়ে বাইরে দাড়াতেই দেখি ফারিয়া।। ও আমাকে দেখেই চিৎকার করে ডেকে উঠলো
ফারিয়া: ভাবীইইইইই (দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো)
আমিও ওর মতই ওকে জড়িয়ে ধরলাম।।

ফারিয়া: এতক্ষণ কোথায় ছিলে ভাবী? আমি আসার পর থেকে তোমাকে খুঁজছি।।
আমি: আমি তো জানিনা তুমি এসেছ।। কার সঙ্গে এসেছ?
ফারিয়া: ভাইয়া
আমি: ফাহাদ?
ফারিয়া: কয়টা ভাই আমার? (আমার গাল টেনে টেনে বললো)
আমি: আমাকে তো কিছু বলেনি
ফারিয়া: ভাইয়া তোমাকে কত গুলো কল করেছে দেখ, ভাইয়া তোমার সাথে রাগ করছে?
আমি: মামুনি আসেনি?
ফারিয়া: বাবাকে একা রেখে আসেনি বিয়ের পর সবাই আসবে।। এখন আমরা 2ভাই বোন এসেছি।। তুমি যাও ভাইয়ার সাথে দেখা করে আসো।। আমি খাদিজা সাথে আছি।।

আমি খুঁজছি কিন্ত ও তো নেই, ফারিয়াকে কি জিজ্ঞেস করবো? তখন বাবা এসে বললো ফাহাদ উপরে দেখা করে আসতে।।
আমার লজ্জা লাগছে সবার সামনে উপরে যেতে, সবাই কি ভাববে ইস।।

বাবা: কি হলো যাও দেখ ওর কি কি লাগবে

আমি আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে উঠছি আমার কেমন অস্থিরতা কাজ করছে, কেন এমন হচ্ছে?

আমি একেবারে 2ওর রুমের সামনে চলে আসছি, কি করছে ও? আমাকে দেখে ও কি করবে?
আমি রুমের সামনে যেতেই দেখি ও পিছন ফিরে কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে এক হাত কানে অন্য হাত জানালায় ধরে রেখেছে।।
আজও ও শার্ট পড়া, একটা এস কালার শার্ট, ওকে যতবার দেখেছি ততবারই দেখেছি শার্ট পরা আর সব শার্ট এক কালার।।
আর ফরমাল প্যান্ট পড়া প্যান্ট টা ডিপ এস কালার হবে।।
আমি গুটিসুটি পায়ে তার দিকে হেঁটে যাচ্ছি।। আমি একেবারে তার কাছে চলে আসছি।। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি কিছু বলতে পারছি না।। লজ্জা ভয় কিছুই লাগছে না তাও জানি কেমন লাগছে।।
ওর কথা বলা শেষ হতেই সামনের দিকে ফিরে আমার সাথে ধাক্কা খেল।।
তাও আমাকে না দেখার ভান করে চলে গেল। ও ফোন বিছানায় রেখে ব্যাগ থেকে টি শর্ট বের করলো একটা আর একটা প্যান্ট।। ওয়াশ রুম চলে গেল।।
আমি বোকার মত দাড়িয়ে আছি।। ওর বিছানায় রাখা ফোন টা ওয়ালেট টা বিছানার পাশে রাখলাম। ব্যাগ টা নিয়ে টেবিলের উপর রাখলাম।। এই রুমের এক কর্নারে একটা ছোট বারান্দা আছে, ঐখানে দাড়ালে বাড়ির সব কিছু দেখা যায় বাইরের পুকুর পর্যন্ত।।

নভেম্বর মাসের অর্ধেক হালকা হালকা ঠান্ডা পরছে, বাইরে থেকে ঠান্ডা বাতাস আসছে।।

এর মধ্যে ওয়াশরুমের দরজা খুলার আওয়াজ হলো আমি ভিতরে গেলাম দেখি ওর চুল ভিজা, হাতে ভিজা টাওয়াল, শার্ট ভিজা।। আমি ওর হাত থেকে ভিজা কাপড় গুলো নিতে চাইলাম ও দিল না।।
আমারও দেখার আছে এইগুলো কই শুকাতে দেয়।। ও ঘরে বাইরে তার খুঁজছে এইগুলো শুকা দেবার জন্য কোনো ব্যবস্থা আছে কি না।। আমিও কিছু বলবো না, ভাব নিসো না এইবার দেখ কেমন লাগে।।

শেষে খুঁজে না পেয়ে চেয়ারের উপর রেখে দিল।।
আমি হাসতে হাসতে বললাম কি দম শেষ?
ও কোনো পাত্তা দিল না, আমি ছোট রুমে যেয়ে ওর কাপড় গুলো তারে শুকা দিলাম।
আমি আবার ওর কাছে গেলাম, ও বাম পাশে আসতে চায় আমি ওর সামনে দারাই, ডান পাশে যায় আমি ওর সামনে দাঁড়াই

ফাহাদ: কি সমস্যা?
আমি: আপনার কি সমস্যা? ইগনোর করছেন কেন?
ফাহাদ: তোমার কি আমার ইগনোর এ কিছু আসে যায়? রাতে কথা বলার পর কি একবার ও ফোন করেছ? আমি সারাদিন কত গুলো কল দিলাম তাও ধরলে না।।
ও ওর কথা শেষ করে আবার পাশ কেটে চলে যাচ্ছিল আমি ওর কনুই ধরে আটকালাম।।
ফাহাদ: কি?
আমি: সরি
ফাহাদ: সরি কেন বলছো? আমি তোমাকে জ্বালাই তাই আমি সরি।।

আমার কান্না চলে আসছে আমি প্রায় কেদে কেদেই বলছি। আর এমন হবেনা, এখন থেকে সব সময় আপনার কথা শুনবো, আপনাকে না বলে কোথাও যাবো না, সব আপনার কথা মত করবে, আপনি যখন চাইবেন তখনি কথা বলবো।। আপনি শুধু বাবাকে বললেন আপনি আমার জন্য ফোন এনেছেন, আমার লুকিয়ে লুকিয়ে ফোন ব্যাবহার করতে একদম ভালো লাগেনা।।

ফাহাদ: (আমার সামনে এসে দাড়ালো আমি মাথা নিচু করে আছি, ও আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল) ঠিক আছে আমি আঙ্কেলকে বলে যাবো, আমি চাই তুমি শুধু আমার কথা একটু ভেবো, আমার সাথে একটু কথা বল, আমি আর কিচ্ছু চাইনা।।

আমার চোখের পানি তাও পরছে।।

ফাহাদ: আবার কাঁদে? সবাই ভাববে আমি না জানি তাদের মেয়ে দের উপর কত নির্যাতন করি।। কান্না থামাও।
আমি: সরি
ফাহাদ: ঠিক আছে ভেবে দেখবো
আমি: সরি তো, মাফ করে দেন
ফাহাদ: করতে পারি এক শর্তে
আমি: কি
ফাহাদ: ফারিয়ার মত জড়িয়ে ধরলে।।

আমি ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকালাম,

ফাহাদ: জানতাম পারবে না, থাক আমার রাগ নিয়ে কার কি আসে যায়? তুমি নীচে যাও ফারিয়া একা আছে, ভালো না লাগলে সকালে আবার বাসায় যাওয়ার জন্য পাগল করে দিবে।।

ও কথা গুলো বলে আমাকে পাশ কেটে চলে যাচ্ছিলো, আমি এইবার তার সামনে যেয়ে দাড়ালাম।।

ফাহাদ: কি কিছু বলবে?
আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি।। ও ওর 2হাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।। কিছু সেকেন্ড পর আয়নায় তাকালাম দেখি ও আয়নায় আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। আমি লজ্জা পেয়ে তাকে ছেড়ে দিলাম।।

আমি দৌড়ে চলে আসছিলাম ও আমার হাত ধরতে যেয়ে হাত ধরতে পারিনি, তবে ওরনা ধরে ফেলেছে।।
ওরনায় জোরে টান দিতেই আমি আবার ওর সামনে চলে আসলাম, ও আমার দিকে এগোচ্ছে আমি পিছিয়ে যাচ্ছি, 2পা পিছনে যেতেই আমি ওয়ালের সাথে মিশে গেলাম, ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে, হাত টা আমার মাথার পাশে ওয়ালে রাখলো, আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিয়েছি,
ফাহাদ: ভালোবাসি
আমি: আপনার না সকালে ঢাকা যাবার কথা ছিল
ফাহাদ: ভালোবাসি
আমি: আপনি সব জানতেন তাই না?
ফাহাদ: ভালোবাসি
আমি: ফারিয়াকে নিয়ে আসবেন মার ফোন দিয়েও তো আমাকে জানাতে পারতেন
ফাহাদ: ভালোবাসি
আমি কিছু বলতে পারছি না ও আমার মুখের সামনে চলে আসছে, আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেলাম আমার হার্ট বিট বেড়ে গেছে।। এই ছেলে তো অনেক খুন করার জন্য এখানে এসেছে।।

চলবে

Ayesha Anjum
#ArrangedMarraige

পর্ব: 16

আমি কিছু বলতে পারছি না ও আমার মুখের সামনে চলে আসছে, আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেলাম আমার হার্ট বিট বেড়ে গেছে।। এই ছেলে তো অনেক খুন করার জন্য এখানে এসেছে।।

আমি সিড়ি দিয়ে মা বললো ফাহাদকে ডাক দিতে খাবার রেডি।।
আমি আবার যাবো নাকি ওর কাছে, মাত্র যা হলো ও কি এখন গেলে আর ছাড়বে,
আমি ঘরে এসে খাদিজাকে বললাম তোর ভাইয়াকে বল খাবার জন্য ডাকছে।। খাদিজা ডাকতে চলে গেল।
আমি বুবু আর ফারিয়া গল্প করছি সামনে ঘরে।। এই ঘর থেকে বাইরের সব কিছুই মুটামুটি দেখা যায়, জামাই রাজা আসছেন তাও দেখা যাচ্ছে।।

ডাইনিং এ বাবা, ফাহাদ, ফারিয়া, খাদিজা বসেছে।। আমাকে মা বলেছিল আমি বসিনি, মার কাছে রাখা আমার রাখা খাবার গুলো নিয়ে টিভির সামনে বসলাম।। চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গান কোথায় আছে খুঁজছি।। আমি একটা হিন্দি গানে রেখে বাম হাতে মার ফোন নিয়ে ফেইসবুকে ঢুকলাম অনেক দিন পর, 4টা মেসেজ ঝুলে আছে। 3টা request, আমার মেসেজ, রেকোয়েস্ট ঝুলে থাকতে দেখলে ভালই লাগে।।

ফারিয়া আর খাদিজার খাবার শেষ মা বললো ওকে নিয়ে 2 তলার ছোট রুমে শুতে আমাদের পাশের রুমে ফাহাদ থাকবে ভয়য়ের কোনো কারণ নেই।।
কিন্ত ফারিয়া খাদিজা কে রেখে যাবেনা ওদের 2জনের খুব ভাব হয়ে গেছে বুঝাই যাচ্ছে।।

আমি: মা তাহলে ওরা 2জন উপরে থাক আমি বুবুর সাথে থাকবো
মা: ওরা 2জন বাচ্চা মানুষ কি বুঝবে তুই ওদের নিয়ে উপরে সো গিয়ে
আমি: কিন্ত মা ওই বিছানা তো সিঙ্গেল একজনের জন্য, তুমি বরং উনাকে বল ছোট রুমে থাকতে আমরা বড় টায় শুয়ে পড়ব
মা: তোর কি মাথা খারাপ ও জামাই বেটা ওকে কি করে এইসব বলবো?
আমি: তুমি না পারলে আমি বলবো
মা: সাবধান এই কাজ করলে তোর কপালে দুঃখ আছে।।

আমরা উপরে চলে গেলাম আমি ছোট রুমের বিছানা চাদর ঠিক করে একটা হালকা কম্বল নিয়ে নিলাম, ঐদিকে ফাহাদ ফারিয়াকে ডাকছে।।
ফারিয়া ফাহাদের রুম থেকে এসে আমাকে বলছে

ফারিয়া: ভাবী ভাইয়ার বিছানাটা গুছিয়ে দিতে বলছে তুমি আমাকে একটা কম্বল আর একটা সাউইপ দাও
আমি: সাউইপ দিয়ে কি করবে?
ফারিয়া: ভাইয়ার বিছানা টা ক্লিন করে দিতে বলছে
আমি: তোমাকে এইসব করতে হবেনা তুমি শুয়ে পর আমি ঠিক করে দিয়ে আসছি।

আমি ওর রুমে গেলাম। ও বিছানায় আধ শুয়ে পিছনে বালিশ রেখে ফোন চাপছে, আমি কোমর হাত দিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালাম

আমি: কি সমস্যা আপনার? আপনি তো আমাকে বা খাদিজাকে ডাক দিলেই পারতেন ফারিয়া কে কেন বলা লাগল?
ফাহাদ: wow
আমি: কি?
ফাহাদ: কি লাগছে মেডাম, কোমরে ওরনা বেঁধে কোমরে হাত দিয়ে ঝাড়ু নিয়ে দাড়িয়ে আছো।। পুরা যাসিকা রানী।।
আমি: কিইই? আমি যাসিকা রানী?
ফাহাদ: না না তুমি তো সুন্দরী কমলা।। কিছু বলবে?
আমি: উঠুন বিছানা ঝাড়ু দিব
ফাহাদ: উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলছে তোমার কি আমার দিকে খেয়াল আছে? সারাক্ষণ দূরে দূরে থাকো
আমি: আমি ওর কথা পাত্তা না দিয়ে বিছানা রেডি করে চলে আসলাম।।

ফারিয়া আমি গল্প করতে করতে 1টা বেজে গেছে। আমরা ঘুমিয়ে গেলাম।।

সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।। 10টা নাকি বাজে, এমনি আমার ঘুম বেশি আর একটু রাত করে ঘুমালে তো উপায় নেই।

আমার সাথে সাথে খাদিজা, ফারিয়া ও উঠে পরেছে। মা বললো ফাহাদকে ডাক দিয়ে দিতে আমি: তুমি যাও
মা: হে আমি যাই ছেলে আমাকে দেখে প্রথম দিনেই লজ্জা পেয়ে যাবে
আমি: লজ্জা পাওয়ার কি আছে? মার কথা আমার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল।।

আমি ফাহাদকে ডাকতে গেলাম, পুরা ঘর অন্ধকার, জানালার মাঝ খান থেকে হালকা হালকা আলো আসছে।। আমি কোনো রকম ওকে খুঁজে পেয়েছি

আমি: শুনছেন? উঠেন 10টা বাজে মা খাবার জন্য ডাকছে,

কোনো সাড়া শব্দ নেই

আমি: মা বলেছে তাড়াতাড়ি উঠতে
আমি: উঠবেন কি না?
আমি: মামুনি ফোন করেছিল বললো তারাতারি ফোন দিতে দরকারি কথা আছে।
আমি: এইবার কিন্ত আর ডাকবো না চলে গেলাম, আমি মাকে বলবো কেমন ছেলের কাছে মেয়ে দিচ্ছ দেখ, যে তোমার মেয়ের কথাই শুনে না, 10টা পর্যন্ত ঘুমায়, সে নাকি জীবনে উন্নতি করবে।।

এইবার আমি রেগে দরজার পাশে চলে গেলাম। এখন যদি মাকে বলি ও উঠেনি, উল্টা মা আমাকেই কথা শুনাবে, অন্তত ওদের সামনে কথা শুনার ইচ্ছা নেই, তাই বেহায়ার মত আবার গেলাম।।

আমি: দেখেন এইবার কিন্ত আমি রেগে যাচ্ছি, আপনি উঠবেন না পানি আনব?

না এইবারও কোনো রেসপন্স নেই আমি ওর কাঁধে হাত দিয়ে জোরে ধাক্কা দিয়ে বললাম,

উঠবেন না ময়মনসিংহ পাঠানোর ব্যবস্থা করবো?

ও আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ওর উপর নিয়ে আসলো, আমার মুখ ওর কপালের কাছ কাছি আর ওর মুখ আমার গলার কাছে।। ওর হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে।। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু ও এত শক্ত করে ধরেছে যেন ও না চাইলে আমি ছুটতেই পারবো না

আমি: কি হচ্ছে কি ছাড়েন।।
ফাহাদ: এতক্ষণ এত ডাকাডাকি না করে জড়িয়ে ধরলে ও তো পারতে।।
আমি: দেখেন দরজা খুলো কেউ চলে আসবে
ফাহাদ: কেউ আসবেনা, আসলে নক করে আসবে।
আমি: বলছে আপনাকে।।

আমি আবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি, কিন্ত উল্টা ও আমাকে ঘুরিয়ে বিছানায় শুয়ে দিল, আর ও আমার মুখের উপর।। 3/4ইঞ্চি দূরে ওর থেকে আমার দূরত্ব। ও কনুই এ ভর দিয়ে হাতের তালুতে গাল রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। আমিও ওর দিকে তাকিয়ে বললাম

আমি: কি?
ফাহাদ: রাতে যে আমাকে একা রেখে চলে গেলে এটা কি ঠিক হলো?
আমি: তো কি করবো?
ফাহাদ: আমার সাথে থাকতে
আমি: গলার স্বর আস্তে করে দাঁত চেপে বললাম মাথা টা ঠিক আছে? আমি আপনার সাথে থাকবো?
ফাহাদ: (ও হাসতে হাসতে আমার পাশে শুয়ে পড়লো। আমার দিকে মুখ করে বলল) কেনো কোনো অসুবিধা?
আমি: আবার বলছেন অসুবিধে?
ফাহাদ: এতে খারাপ কি?
আমি: অনেক খারাপ
ফাহাদ: বুঝাও তো আমায়
আমি: 2জন অবিবাহিত ছেলে মেয়ে এক সাথে থাকবে, এটা কি ভালো দেখায়
ফাহাদ: আরে বোকা মেয়ে আমি থাকতে বলতে আমার সাথে কিছুখন গল্প করতে এটা বুঝিয়েছি।।

আমি উঠার চেষ্টা করছি তখন ও আবার আগের মত কনুইয়ে ভর দিয়ে আমার উপর দিয়ে ওর হাত টা আমার পাশে রাখল।।

ফাহাদ: এত ছটফট করে কেন?
আমি: মা কিন্ত ডাকছে
ফাহাদ: তো?
আমি: তো টো কিছুনা উঠে ফ্রেশ হোন।। তারপর নিচে আসেন ব্রেকফাস্ট রেডি।।
ফাহাদ: তুমি করাবে না?
আমি: কি?
ফাহাদ: ব্রেকফাস্ট (ও আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে হাসছে, আমি বুঝতে পেরে ওর বুকের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললাম)
আমি: ছি ফাহাদ আপনি এমন

ফাহাদ আমার মাথা টা ধরে ওর বুকে সাথে মিশিয়ে দিল,,

ফাহাদ: শুনতে পারছ কিছু
আমি: কি?
ফাহাদ: তোমাকে বার বার চিৎকার দিয়ে বলছে, ভালোবাসি আয়েশা ভালোবাসি
আমি: হুমম

ফাহাদ: যেদিন দেখতে গিয়েছিলাম ওইদিন বাবা যদি বিয়ে টা করিয়ে দিত ভালো ছিল। কবে পারবো তোমার ডাকে ঘুম থেকে উঠতে, তোমার মুখ দেখে ঘুমাতে, এত অপেক্ষা কেন?
আমি: সময় হোক সব হবে
ফাহাদ: এই সময়েরই তো যত দোষ, কবে হবে এদের সময়, আমি এখান থেকে জেয়েই বাবাকে বলব তারাতারি সব বেবস্থা করতে
আমি: এই মাসেই তো আকদ
ফাহাদ: তুমি আর একটু বড় হলে কি খুব ক্ষতি হতো?
আমি: এখন এই প্রশ্ন আপনি আমার বাবা মাকে করতে পারেন, কেন তারা তাড়াতাড়ি বিয়ে করেনি।।
ফাহাদ: এটা ঠিক বলেছ
আমি: বাড়ির সবাই জানতো আপনি আসছেন?
ফাহাদ: হুমম
আমি: সন্ধ্যায় বুবু আপনার সাথে কথা বলছিল?
ফাহাদ: হুমম
আমি: আপনার না অনেক কাজ তাহলে কাজ রেখে এখানে কি?
ফাহাদ: আসলেই কাজ ছিল। কিন্ত আঙ্কেল ফোন করে বললো সবাই গ্রামে এসেছি মা বাবাকে নিয়ে যেন যাই, আমি তোমার পাশা পাশি থাকার সুযোগ পাবো ওই জন্য সব রেখে চলে এসেছি।।
আমি এইভাবে ওর বুকে আরো কিছুক্ষন ছিলাম,

ফাহাদ: (ও হটাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠে বসে পরলো) ও মায় গড

(উঠে ওর পাশে বসলাম আমার এইবার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, ও কি মাত্রর ঘটনার জন্য এমন করছে, আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছিলাম না, মাথা নিচু করে বসে আছি)

ফাহাদ: আয়েশা
আমি: হুমম
ফাহাদ: তুমি কি একটা জিনিস খেয়াল করেছ?
আমি: (ওর দিকে তাকিয়ে) কি?
ফাহাদ: তুমি আমাকে নাম ধরে ডেকেছো

আসলেই তো কখন কি বলে ফেললাম বুঝতেই পারিনি।।

আমি: সরি
ফাহাদ: (অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে) কেন?
আমি: খেয়াল করিনি কখন ডেকে ফেলেছি
ফাহাদ: এইযে তোমার এই ফর্মালিটি গুলো আমার ভালো লাগেনা, নেষ্ট ফর্মালিটি করলে কান ধরে উঠ বস করবো।।

আমি উঠে চলে যাচ্ছিলাম ও আমার হাত ধরে আটকালো, আসতে করে ওর সামনে দাড় করলো।। ও আমার গলা সমান আছে, আমি দাড়িয়ে আছি আর সে বসে।। আমার 2টা হাত ওর মুখের সামনে ধরলো আমার 2 হাতে চুমু খেল, আমার শরীরে কারেন্ট দিয়ে উঠেছে।।

ফাহাদ: আয়েশা
আমি: হুমম
ফাহাদ: তুমি ডাকতে পারবে?

আমি ওর দিকে তাকালাম, ও মায়া মুখ নিয়ে বললো

ফাহাদ: প্লিজ
আমি: না
ফাহাদ: আমার জন্য?
আমি: হটাৎ করে কি করে সম্ভব?
ফাহাদ: সবই সম্ভব যদি তুমি চাও
আমি: আমার ইউনেজি লাগছে
ফাহাদ: একবার ডাক পরের বার থেকে আর লাগবেনা।।
আমি: অনেক্ষন হয়েছে এইবার কিন্ত যাওয়া দরকার
ফাহাদ: আমি কি বলছি?
আমি: হুমম
ফাহাদ: বল
আমি: পারবো না
ফাহাদ: তাহলে ছাড়বো না
আমি: আল্লাহ বাঁচাও আমায়
ফাহাদ: প্লিজ একবার
আমি: (আমি চেষ্টা করছি কিন্ত বলতে চেয়েও পারছি না ঠোঁট পর্যন্ত এসে আটকে গেছে আমি মুখ থেকে বের করতে পারছিনা)
ফাহাদ: চোখ বন্ধ করে বলে দাও
আমি: (চোখ বন্ধ করে মনে মনে প্রেকটিস করে অনেক কষ্ট শুধু বললাম) তুমি
ফাহাদ: শুধু তুমি? বল ফাহাদ উঠ যাও ফ্রেশ হয়ে নাও
আমি: (চোখ বন্ধ করে এক দমে বলে ফেললাম) যাও তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও, (আমি 2হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললাম)

ফাহাদ আমার সামনে দাড়িয়ে বলছে ঠিক আছে ফাহাদ টা বাদ পরেছে, আজ অ আ শিখলাম নিক্ট শব্দ তৈরি শিখাবো। ও আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে আমার 2 গালে তার 2হাত রেখে আমার কপালে চুমু দিয়ে ওয়াশরুম চলে গেল।।

আমি এইসব ভাবতে ভাবতে বারান্দার দরজা টা খুলে দিলাম, জানালা খুললাম, গায়ে দিয়ে যেই চাদর দিয়ে ঘুমিয়েছিল আমি ওইটা ভাজ করে বিছানার পায়ের সাইডে রাখলাম।। বিছানার চাদর বালিশ টা ঠিক করলাম।।
আমি এইসব করতে করতে ও ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এসেছে।।

ফাহাদ: (রুম গুছানো দেখে বললো) বাহ আমার বউ তো অনেক কাজ পারে
আমি: বউ কথা শুনে লজ্জায় চলে যাচ্ছিলাম।। ও পিছন থেকে ডাক দিল
ফাহাদ: আয়েশা
আমি: হে
ফাহাদ: তুমি আগে আগে যাও ফোন টা বের করে রাখ, আমি ঘরে ঢুকতেই ফোনটা আমার হাতে দিবে তারপর সময় সুযোগ বুঝে আংকেলের সামনে ফোনটা তোমাকে দিয়ে দিব।।
আমি: ঠিক আছে
ফাহাদ: যাও

আমি ফোন বের করে ওর কথা মত ওর হাতে দিয়ে দিলাম ওদের ব্রেকফাস্ট শেষ এমন সময় বাবাকে বলছে

ফাহাদ: আঙ্কেল আপনার যদি আপত্তি না থাকে একটা কথা বলবো
বাবা: আরে বাবা এইসব কি বলছ? নির্দ্বিধায় বলে ফেল কি বলবে?
ফাহাদ: আমি আসলে আসার সময় আয়েশার জন্য একটা ফোন এনেছি, আপনি যদি চান তাহলে..
বাবা: দেখ বাবা ওর সামনে পরীক্ষা এখন ফোন দিলে কি পড়া হবে?
ফাহাদ: আপনি চিন্তা করবেন না এইসব দেখার দায়িত্ব আমার
বাবা: ঠিক আছে।। আয়েশাআআ
আমি: জ্বী
বাবা: দেখ আব্বাজী কি দিতে চাচ্ছে

আমি ওর দিকে তাকালাম ও আমার দিকে তাকিয়ে চোখ শান্ত করে বুঝালো বাবা পটে গেছে

ফাহাদ এসে আমার হাতে ফোন টা দিল।।

বাবা: ফাহাদ তুমি তো শুনেছি লেখাপড়ায় ভালো ছিলে যদি আয়েশাকে একটু টুক টাক দেখিয়ে দিতে যতদিন আছ
ফাহাদ: জ্বী আঙ্কেল দেখিয়ে দিব।।

ও বাইরে বের হচ্ছে
ফাহাদ: (আমার হাতে ও ফোন ওয়ালেট দিয়ে বাইরে জুতা পড়তে পড়তে) রাতে রেডি থেকো তোমার ক্লাস নিব
আমি: যাবনা কিন্ত
ফাহাদ: হেড অফিস থেকে অর্ডার এসেছে, না আসলে বুঝোই তো।।

সে দুপুর পর্যন্ত বাড়িতেই ছিল, বাড়ির বাচ্চাদের সাথে খেলেছে।। বাচ্চারা একটু পর পর এসে তাকে খুঁজে যাচ্ছে, দুপুরের পর থেকে সারাদিন ঘুরাঘুরি করেছে সায়েমের সাথে, আমাকে এর মধ্যে 2 বার ফোন করেছিল ফারিয়ার কথা জিজ্ঞেস করছিল, ফারিয়া তো আমাকে পেয়ে বাকি সব ভুলেই গেছে, কিছুক্ষন আগে মামুনি ফোন করে ফারিয়া আমার সাথে কথা বলেছে।। মাগরিবের আজান পড়ছে এমন সময় দেখি সায়েম আর ফাহাদ আসছে।।

ফাহাদ উপরে চলে গেল।। সায়েম আমার সামনে এসে

সায়েম: ছোটমনি ভাইয়াকে গরম পানি করে দে
আমি: দুপুর বেলা তো গোসল করেই বের হয়ে ছিল।।
সায়েম: বিকালে মাঠে ক্রিকেট খেলেছে শরীরে ধুলা বালি গামে একাকার তুই পানি দিয়ে আয়।।

চলবে