Divorce Part-1+2+3

0
7364

💔 #Divorce 💔
Writer : Tahmina Toma
Part : 1

ডিভোর্স নেওয়ার আগে আর একবার ভেবে দেখলে হতো না মিসেস অন্তরা। আপনার বয়স কেবল ২০ বছর । এখনো জীবনের অনেকটা পথ চলা বাকি। আপনি বুঝতে পারছেন না একটা ডিভোর্সি মেয়েকে এই সমাজ কোন চোখে দেখে। আপনার চলার পথ কতটা কঠিন করে তুলবে আপনি ভাবতে পারছেন না। মানুষের কথাগুলো কাটার মতো শরীরে বিঁধবে। আপনি আমার মেয়ের বয়সী তাই কথাগুলো বললাম। একবার ভেবে দেখুন।

অন্তরাঃ (লইয়ার মিসেস রোজের কথা শুনে তার দিকে তাকালাম। ঠোঁটের কোণে ফোঁটে ওঠলো তাচ্ছিল্যের হাসি। হাসিটা আর কারো ওপর নয় বরং নিজের ওপর। সত্যি বড্ড হাসি পায় নিজের দিকে তাকালে। একবার মিসেস রোজের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম)
আমার বয়স তখন ১৬ বছর। কেবল এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি কিছু দিন হয়েছে। লেখাপড়ায় আমি বরাবরই মনোযোগী। ক্লাসে কখনো প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। এদিকে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ওঠে পড়ে লাগে আমার আত্মীয়-স্বজনরা। আমি নাকি দেখতে পরীর চাইতে কম না।গোলগোল মুখ, দুধে আলতা গায়ের রং, টানা টানা গভীর কালো চোখ, সরু চিকন দুটি গোলাপি ঠোঁট সুস্থ সবল দেহ।(আমার কথা শুনে লইয়ার মিসেস রোজ আমার দিকে সরু চোখে তাকালেন)

মিসেস রোজঃ(আমার সামনে বসা ছিপছিপে গড়নের একজন ২০ বছর বয়সী মেয়ে। খুব হলে তার ওজন হবে ৪৫ কেজি। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কত অযত্নে থাকা হলে কেউ এমন হয়। তাই মেয়েটার বলা মেয়ের সাথে এই মেয়ের মিল খোঁজে পাচ্ছি না। সত্যি কী মেয়েটা তেমন ছিলো??)

অন্তরাঃ কী,,, মিল খোঁজে পাচ্ছেন না তো?? পাবেন না তো। আপনি যাকে খুঁজছেন সে বিয়ের বেনারসির মাঝে হারিয়ে গেছে।

রোজঃ(মেয়েটার কথা শুনে চমকে উঠলাম) তেমন কিছু না,,,,, তুমি বলো,,,,, সরি,,, তুমি বলে ফেললাম।

অন্তরাঃ it’s ok,,,, আপনিতো বললেন আমি আপনার মেয়ের বয়সী।

রোজঃ হুম তা ঠিক,,,,,, তারপর বলো,,,,,,

অন্তরাঃ হুম,,, আমি বয়সের তুলনায় বেশি বড় হয়ে ওঠেছিলাম। ১৬ বছরের কিশোরী হলেও ১৮ বছরের যুবতী আমার কাছে হার মানতে বাধ্য। কিন্তু, সবে বুঝতে শিখতে শুরু করেছি বিয়ে, স্বামী, সংসার কী ? বুঝে ওঠা আর হল না। আত্মীয় স্বজনদের চাপে বাবা-মা আর ঠিক থাকতে পারলো না। তাদের মতে দাম থাকতে মেয়ে বিয়ে দাও বয়স হলে ভালো ছেলে পাবে না। শুরু হলো ছেলে দেখা। দিনে দু-তিনটে প্রস্তাব আসা শুরু হয়ে গেলো। সবাই আমাকে পছন্দ করে কিন্তু আমার পরিবারের ছেলে পছন্দ হয়না। তাদের মনে হয় এর থেকেও ভালো ছেলে আসবে। হ্যাঁ ভালো ছেলে এলো। ভালো কোম্পানিতে জব করে ছেলে। বেতনও পায় ভালোই। আমার বয়স তখন ১৬ বছর আর তার ২৯ বছর। দেখতে এলো তারা আমাকে,,,,,,,, ছেলে দেখতে সুন্দর, লম্বা-চওড়া সুঠাম দেহের অধিকারী। ছেলের পাকা বাড়ি, বেতন ভালো, দেখতে ভালো, দুটো বোন আছে বিয়ে হয়ে গেছে,,এখন যা আছে সবকিছুর মালিক ছেলে। আর কী চাই মেয়ে বিয়ে দেওয়ার জন্য?? আমার ফ্যামেলিরও আর কিছু চায় না। তবে ছেলের বাড়ির মানুষের আমাকে পছন্দ হলেও আমাদের মাটির বাড়ি পছন্দ হলো না। আমার বাবা সামান্য একজন মুদি দোকানি। আমার থেকে ১০ বছরের বড় এক ভাই আছে। লেখাপড়া করে বেকার ঘুরছে চাকরি হয় না। সব মিলিয়ে ছেলের ফ্যামেলির আমাকে ছাড়া বাকি কিছুই পছন্দ হলো না। কিন্তু ছেলে নাকি আমাকে ছাড়া বিয়েই করবে না। তাই তার ফ্যামেলি হার মানলো তার কাছে।বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো।

রোজঃ নাম বললে না এখনো তোমার স্বামীর???

অন্তরাঃ আরিয়ান আহমেদ ,,,,,

রোজঃ তারপর কী হলো বলো??

অন্তরাঃ সেদিন বাবার হাত ধরে অনেক কেঁদেছিলাম আজও মনে আছে।

★অতীত★

অন্তরাঃ বাবা আমি এখন বিয়ে করবো না। আমি পড়ালেখা করবো। কলেজে পড়বো তারপর ভার্সিটি পড়ে বড় একটা চাকরি করবো।

মাঃ পড়ালেখা করে কোন দেশের মন্ত্রী হবে শুনি। একজন পড়ালেখা করে ২৬ বছরের দামড়া ছেলে হয়ে বাপের ঘাড়ে বসে বসে খাচ্ছে।

অন্তরাঃ ভাইয়া বসে বসে কোথায় খাচ্ছে?? প্রতিদিন কোথাও না কোথাও চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছে।

মাঃ হ তোমার ভাই চাকরি পেতে পেতে আমরা বেহেশতে চলে যাবো।

অন্তরাঃ তুমি ভাইয়ের জন্য দোয়া না করে এমন কথা বললে চাকরি হবে কেমন করে??

মাঃ আমি এতো কথা শুনতে চাই না,,,,, বিয়ে যখন ঠিক হয়ে তখন সময় মতো বিয়ে হবে।

অন্তরাঃ বাবা তুমি কিছু বলছো না কেন??

বাবাঃ তোর মা ঠিক কথাই বলছে। বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এখন কী করার আছে??

আরাভঃ না করে দাও তাই তো হয়ে যায়। লোকটা অন্তরার থেকে বয়সে অনেক বড়। প্লিজ বাবা না করে দাও।

মাঃ ছেলেদের একটু বয়স হওয়াই ভালো। সংসারের মর্ম বুঝে। ছেলে সব দিক থেকে ভালো।

আরাভঃ তাই বয়সের এতো ডিফারেন্স। বাবা তুমি না করে দাও। ঐ লোক অন্তরাকে বুঝবে না। তুমি না পড়াও অন্তরাকে আমি পড়াবো।

মাঃ নিজে বাপের ঘাড়ে বসে খাচ্ছে আবার বড় বড় কথা।

আরাভঃ মা,,, আমি বাবার ঘাড়ে বসে খাচ্ছি না। টিউশনির টাকা দিয়ে আমার চলে যায়।

মাঃ এত টাকাপয়সা খরচ করে পড়ালেখা করিয়েছি শুধু নিজের খরচ চালানোর জন্য?? এখন কোথায় বাপের পাশে দাঁড়াবে???

আরাভঃ আমি কী চেষ্টা করছি না???

মাঃ এত কথার দরকার নেই। নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে পারছো না আবার বোনের জীবনে বাঁধা দিচ্ছো।

আরাভঃ তার মানে এ বিয়ে হচ্ছে??

মাঃ হ্যাঁ হচ্ছে (কঠিন গলায়)

আরাভঃ আমাকে মাফ করে দিস রে বোন (অন্তরার সামনে দাড়িয়ে) তোর জন্য কিছু করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে এই বিয়েও চোখের সামনে দেখতে পারবো না।

অন্তরাঃ কোথায় যাচ্ছিস ভাইয়া??

আরাভঃ এই বিয়ে শেষ হওয়ার আগে আর বাড়ি আসবো না।

অন্তরাঃ(ভাইয়া বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। মা নিজের কাজে চলে গেলেন আর বাবা চেয়ারে বসে আছেন। তার দিকে তাকালে সে মাথা নিচু করে ফেলে। আমিও দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেই)

★বর্তমান★

রোজঃ তারপর কী হলো??

অন্তরাঃ(হাতে থাকা টিসু দিয়ে চোখ মুছে নিলাম। টেবিলের ওপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে খেয়ে নিলাম) সরি,,,,, জিজ্ঞেস না করেই খেলাম। আসলে গলা শুকিয়ে গেছে।

রোজঃ it’s ok,,,,,, তারপর কী হলো বলো??

অন্তরাঃ ঠিক করা দিনেই বিয়ে হয়ে গেলো। সেদিন আমার কান্না দেখে মনে হয় আকাশ বাতাসও কেঁদে ওঠেছিলো। যাওয়ার সময় বাবা-মাও অনেক কেঁদেছিলেন। ভাইয়া বিয়ের মধ্যে সত্যি ছিলো না। বিদায়ের সময় দূরে ভাইয়ার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে হাও মাও করে কাঁদতে দেখেছিলাম। যতোই হোক আদরের বোন বলে কথা। ভাইয়া আজও মার সাথে কথা বলে না। ভাইয়া আছে বলেই হয়তো বেঁচে আছি নাহলে মরেই যেতাম।

রোজঃ কেন,,,,???

অন্তরাঃ পুরোটা শুনুন বুঝতে পারবেন।

রোজঃ ওকে,,,,,,বলো।

অন্তরাঃ বিয়ে হয়ে ও বাড়িতে পা রাখতেই এমন এমন কথা শুনতে হলো যা বুকে গিয়ে বিঁধছিলো।

রোজঃ কী কথা???

★অতীত★

আরিয়ানের ফুপিঃ ভাবি কোন ফকিরের মেয়ে বউ করে এনেছো?? দেখো মাত্র দু’একটা পাতলা গয়না পড়িয়ে মেয়ে বিদায় করেছে। তাও আসল সোনার কিনা তাও ঠিক নেই। আমার মেয়ের বিয়েতে আমি পা থেকে মাথা পর্যন্ত সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছি।

আরিয়ানের মাঃ ছেলে জেদ ধরে বিয়ে করলো তাই কী আর করবো?? আনতে হলো এমন ফকিরের মেয়ে।

প্রতিবেশীঃ তা ফার্নিচার টাকা পয়সা কত দিলো??

আরিয়ানের মাঃ আর পুড়া কপাল আমার একটা কানা কড়ি ও না।

প্রতিবেশীঃ কী বলো গো??? ঐ বাড়ির গাঁজাখোর ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে। মেয়েতো সোনায় মুড়িয়ে দিয়েছে সাথে টাকা, ফার্নিচার আরো কত কী?? আর তোমার এমন হিরার টুকরো ছেলেকে খালি হাতে মেয়ে দিয়ে দিলো,,, হাহাহা।

আরিয়ানের মাঃ কী আর করবো বলো সব আমার কপালের দোষ?? আমিওতো দুটো মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। কম কিছুতো দেইনি বাপু,,,।

অন্তরাঃ(এ কোন দোযখে পাঠালে মা?? এসব কী বলছে এরা?? তুমিতো বলেছিলে সবার কথা শুনে চলতে। কেউ যাতে খারাপ বলতে না পারে। এদের এসব কথা কী করে সয্য করবো?? চোখের পানি বাঁধ মানছে না। তোমাকে বলেছিলাম মা তেলে জলে মিশে না। আমার কথা শুনলে না। অনেক আশা নিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকালাম সে হয়তো প্রতিবাদ করবে। কিন্তু সে যা বললো আমি ভাবতেও পারিনি।)

চলবে,,,,,

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part:2

অন্তরাঃ (অনেক আশা নিয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি হয়তো প্রতিবাদ করবেন কিন্তু উনি যা বললেন আমি ভাবতেও পারিনি।)

আরিয়ানঃ মা তোমার যা বলার পরে বলতে পারবে না,,,,??এখন তাড়াতাড়ি যা করার করো। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না টায়ার্ড লাগছে।

মাঃ আচ্ছা বাবা তাড়াতাড়ি করছি,,,,,

অন্তরাঃ(অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে। শাশুড়ী মার বরণ করা শেষ হলেই,,, উনি আমাকে ফেলেই হনহনিয়ে ভিতরে চলে গেলো। এ কোথায় আনতে খোদা??)

আরিয়ানের ছোট বোন তিথিঃ ভাবি ভেতরে চলো??

অন্তরাঃ(তিথি আপুর সাথে ভেতরে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলাম। তিথি আপু আমার ছোট ননদ হলেও আমার থেকে ৬-৭ বছরের বড়। আর একজন আরিয়ানের বড় বোন বিথী। সে আরিয়ানের ২ বছরের বড়। আমাদের বাড়িতে যখন দেখতে গিয়েছিলো সবার পরিচয় দিয়েছিলো তাই চিনতে প্রবলেম হয়নি। এখানে বসে আবার সবার কথা শুনতে লাগলাম। কেউ রুপের প্রশংসা করছে আবার কেউ কী দিয়েছে আর না দিয়েছে তার গবেষণা করছে। আমার ঘোমটার নিচে চোখের পানি ফেলা ছাড়া কাজ নেই)

বিথীঃ তিথি ওকে এখানে বসিয়ে রেখেছিস কেন?? আরিয়ানের রুমে দিয়ে আয়।

তিথিঃ আচ্ছা আপু যাচ্ছি,,,,,,

অন্তরাঃ(তিথি আপু আমাকে দোতলায় নিয়ে যেতে লাগলো। আমিও কাঠের পুতুলের মতো তার সাথে যেতে লাগলাম। দোতলার একদম পূর্ব পাশের রুমে নিয়ে এলো তিথি আপু। রুমটা ফুল দিয়ে সাজানো। বেশ বড় আর গুছানো একটা রুম। তিথি আপু আমাকে ঘাটের ওপর বসিয়ে দিলো।)

তিথিঃ জীবনে তো এতবড় রুম,, এতবড় বাড়ি দেখোনি,,,,, মানিয়ে নিতে কষ্ট হবে। প্রবলেম হলে আমাকে বলো আমি হেল্প করবো।

অন্তরাঃ(তিথি আপুও যে আমাকে পছন্দ করে না তার ভদ্র ভাষায় অপমান দেখেই বুঝলাম) আচ্ছা আপু,,,,,

তিথিঃ যাক নতুন বউয়ের মুখে কথা ফুটলো তাহলে। আমিতো ভাবলাম এতবড় বাড়ি দেখে বোবা টোবা হয়ে গেলো নাকি।

অন্তরাঃ নাহ্ বোবা হয়নি এখনো,,,,,,

তিথিঃ হুম(মুখ ভেংচি কেটে) আচ্ছা থাকো আমি আসছি,,,,,,

অন্তরাঃ হুম,,,,,(তিথি আপু চলে গেলেন,,,,,,, এবার চিৎকার করে কান্না করে দিলাম। এই দোযখে আমি থাকবো কেমন করে?? এরা সবাই যে এক রকম।)

আরিয়ানঃ এই মেয়ে মরা কান্না শুরু করেছিস কেন??

অন্তরাঃ(আমার কান্না শুনে পূর্ব পাশের একটা দরজা দিয়ে উনি রুমে এলেন। হয়তো বেলকনি ওদিকে।)

আরিয়ানাঃ কী হলো কথা কানে যাচ্ছে না?? কান্না বন্ধ কর,,,,, গাড়িতে সারাক্ষণ কান্না করে মাথা ব্যাথা করে ফেলেছিস। ড্রাইভার ছিলো কিছু বলতোও পারিনি,,,, এখন আবার শুরু করলে মাথায় তোলে একটা আছাড় দিবো,,,

অন্তরাঃ(উনার কথা শুনে মুখ চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলাম,,, কোন রকমে ওঠে সালাম করলাম উনাকে। সালাম করা শেষে উনি আমার দুবাহু ধরে দাঁড় করালেন। হঠাৎ করেই আমার দুগাল চেপে ধরলেন।)

আরিয়ানঃ তোর রুপের খুব দেমাক তাই না,,??

অন্তরাঃ ক,,,,কী ব,,লছেন এসব??

আরিয়ানঃ আমাকে বিয়ে করবি না বলে ভাইকে পাঠিয়েছিলি বিয়ে ভাঙতে??

অন্তরাঃ ভাইয়াকে,,,,,??

আরিয়ানঃ তোর ভাই এসে কী বললো?? দেখেন ভাইয়া আমার বোন এখন বিয়ে করতে চায় না ও এখনো আরো পড়বে। তোর সৌভাগ্য আমি তোকে বিয়ে করতে চেয়েছি। তোর কোন যোগ্যতা আছে আমার পাশে দাঁড়ানোর??

অন্তরাঃ ত,,তাহলে বিয়ে করেছেন কেন??

আরিয়ানঃ প্রথমে তো তোর রুপ দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু তোর কত বড় সাহস আমাকে রিজেক্ট করতে চেয়েছিলি??? যাকে পাওয়ার জন্য মেয়েরা পাগল।

অন্তরাঃ আমি শুধু,,,,,

আরিয়ানঃ হুস,,,,, আর একটা কথা কান খোলে শুনে রাখ আমার মা বা বোনদের সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। যা এখন,,,,, তাড়াতাড়ি মুখের আটা ময়দা ধুয়ে আয়,,,,

অন্তরাঃ ব,,বলছিলাম কী,,,,?? নামাজ পড়বেন না,,?? আজকের রাতে নাকি নামাজ পড়তে হয়,,

আরিয়ানঃ নামাজ পড়া ছাড়া আজকে রাতে যা যা হয় সবই হবে(অন্তরার কানের কাছে ফিসফিস করে)

অন্তরাঃ (উনার কথা শুনে শিউরে উঠলাম। একটু কী সময় দিবে না মানিয়ে নেওয়ার?? ওয়াশরুমে এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম। বাইরে যেতে ভয় করছে। কী করবো এখন??)

আরিয়ানঃ এতসময় লাগে,,,? বের হ তাড়াতাড়ি,,,,।

অন্তরাঃ (আমি বের হতেই উনি ওয়াশরুমে চলে গেলেন। একটু সাহস হলো হয়তো বুঝতে পরেছে আমার একটু সময় প্রয়োজন। ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গহনা খুলতে লাগলাম,,,,,)

আরিয়ানঃ(ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে,,, বের হয়ে দেখি অন্তরা ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কানের দুল খুলছে আর ওর ধবধবে সাদা পেট বের হয়ে আছে। মুহূর্তে নেশা চরে গেলো মাথায়)

অন্তরাঃ (সব শেষে কানের দুল খোলার চেষ্টা করছি কিন্তু একা খুলতে পারছি না। হঠাৎ পেটে ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেঁপে ওঠলাম। এমন স্পর্শ জীবনের প্রথম পেলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘাড়ে কেউ মুখ গুঁজে দিলো আয়নায় তাকিয়ে দেখি আরিয়ান।) প,,,প্লিজ একটু সময় দিন আমাকে,,,, মানিয়ে নেওয়ার।

আরিয়ানঃ তোমাকে সময় দেওয়ার জন্য এত জেদ ধরে বিয়ে করলাম। তোমাকে প্রথম দেখেই মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো,,,,, সারাদিন যতো পারো সময় নাও কিন্তু,,,,,, রাত আমার,,,,

অন্তরাঃ(উনি আমাকে আর কথা বলতে না দিয়ে কোলে তুলে বিছানায় শুয়ে দিলেন। সে মেতে উঠলো আমাকে নিয়ে আর আমি তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম। সেটা দেখার সময় তার নেই। সে নিজের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত।)

★রাত তিনটে★

অন্তরাঃ(ক্লান্ত হয়ে আমার বুকের উপর বেঘোরে ঘুমাচ্ছে উনি আর আমি নরক যন্ত্রণা ভোগ করছি। সারা শরীর ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে আর মনে হচ্ছে কেউ কাটা গায়ে লবণ ছিটিয়ে দিয়েছে,,,, জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।)

আরিয়ানঃ এই ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদবি না একদম,,, ঘুমাতে দে আর একবার কান্নার শব্দ কানে এলে লাথি দিয়ে বেড থেকে ফেলে দিবো।

অন্তরাঃ(কথাগুলো বলে পাশ ফিরে বালিশে শুয়ে পড়লো উনি। আর আমি হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম যাতে শব্দ না হয়। উনি আবার ঘুমিয়ে পড়লে বেড থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলাম। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি শরীরে অবশিষ্ট নেই। ফ্লোরে বসে পড়লাম,,,,,, নরক যন্ত্রণা কী এর থেকে বেশী হয়??? আবার বেড ধরে উঠে দাড়ালাম,,,, শাড়িটা কোনরকম শরীরে জড়িয়ে বেড আর ওয়াল ধরে ধরে ওয়াশরুমে চলে এলাম। ঝর্ণা ছেড়ে ফ্লোরে বসে হাও মাও করে কাঁদতে লাগলাম। মা গো এ কোথায় পাঠালে আমায়,,,এরা আমাকে বাঁচতে দিবে তো ??? খুব কী বেশী বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম বলো ?? অনেক বেশী কী খেতাম?? পেটের ভাতটা দিতে পারতে না,,,, পড়াশোনার অর্ধেক টাকা টিউশনি করেইতো জোগাড় করতাম,,,, বললে বাকিটাও নাহয় করে নিতাম। এমন দোযখে কেন পাঠালে?? শরীরের চাইতে মনের যন্ত্রণা এখন বেশি হচ্ছে। হে আল্লাহ ধৈর্য্য দাও,,,,, হ্যা একমাত্র আল্লাহ আমাকে এই যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করতে পারবে। গোসল করে ধীরে ধীরে রুমে এসে চেঞ্জ করে জায়নামাজ বিছিয়ে বসে পড়লাম নামাজ পড়তে। দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার শক্তি আমার নেই। নামাজ পড়ে মোনাজাত তোললাম আল্লাহর কাছে,,,,, হে রাহমানির রাহিম,,, পরম করুণাময়,,,, দয়ার সাগর আমাকে ধৈর্য্য দাও,,,,, মানিয়ে নেওয়ার শক্তি দাও,,, জানি না তুমি আমার ভাগ্যে কী লিখে রেখেছো,,, তুমি যা করো ভালো’র জন্যই করো। ধৈর্য্য ধরে সব বাঁধা পেড়িয়ে যাওয়ার তৌফিক দান করো। এদের সবাইকে হেদায়েত দান করো,,,, আর আমাকে ধৈর্য্য,, আমিন। নামাজ পড়ে অনেকটা শান্তি লাগছে। জায়নামাজে বসে থাকতে থাকতেই ফজরের আযান দিয়ে দিলো,,,,ফজরের নামাজও পড়ে নিলাম। নামাজ শেষে আস্তে আস্তে ওঠে জায়নামাজ ভাজ করে রেখে দিলাম। বেডের দিকে একবার তাকালাম,, ইচ্ছে করছে না উনার পাশে শুতে,,, দম বন্ধ হয়ে আসছে এই রুমে। বেলকনির দরজায় দিয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম। বেলকনিতে একটা সোফা সেট পাতানো। সেখানে বসে পড়লাম চুলগুলো এলিয়ে দিলাম। কখন চোখে ঘুম নেমে এলো টেরই পেলাম না।)

★সকালে★

আরিয়ানঃ এই মেয়ে আবার কোথায় গেলো?? অন্তরা,,,,,,(উঠে দাঁড়িয়ে একটা টাওয়েল জড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখি অন্তরা এখনো রুমে আসেনি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় ৯ টা বাজে। রুমের দরজা বন্ধ দেখে বেলকনিতে গেলাম। সোফায় ঘুমিয়ে আছে মহারানী,,,, দাড়াও তোমার ঘুম বের করছি আমি। রুমে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে মুখে ছুড়ে মারলাম।)

অন্তরাঃ মা,,,,, বৃষ্টি,,,,,, (ঘুম ভাঙলে সামনে তাকিয়ে দেখি আরিয়ান)

আরিয়ানঃ আপনি কোন দেশের মহারানী,,,, সকাল ৯ টা পর্যন্ত ঘুমান।

অন্তরাঃ সরি,,,,,,, চোখ লেগে গিয়েছিলো,,,,।

আরিয়ানঃ আমি ফেরার আগে রুম গুছিয়ে পরিষ্কার করে ফেলবে,,,,

অন্তরাঃ ক,,,কোথায় যাবেন,,,??

আরিয়ানঃ (ওর কথা শুনে পেছন ঘুরে গাল চেপে ধরলাম,,,,) স্ত্রীর অধিকার দেখাচ্ছো,,,, সেটা ভুলেও করতে যেও না,,,,, আজ সাবধান করলাম,,, পরের বার একই ভুল করলে,,,,

অন্তরাঃ(উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলে গেলেন। চোখের পানি মুছে রুমের ভেতরে গেলাম। সব গুছিয়ে নিতে শুরু করলাম।)

তিথিঃ আসবো ভাবি,,,,,,,

অন্তরাঃ হ্যা আপু আসুন,,,,,।

তিথিঃ যাক নতুন বউয়ের ঘুম তাহলে ভাঙলো,,,, ভাইয়া রুমে থাকলে এই রুমে আসার সাহস নেই কারো,,,, তাই ডাকতেও পারিনি। ভাবি তোমার গহনা গুলো দাও,,,,

অন্তরাঃ(অবাক হয়ে তাকালাম আপু দিকে) কেন আপু,,,,??

তিথিঃ মা বলেছে দিতে,,,, আজ থেকে সেগুলো মার কাছেই থাকবে,,,, তোমার বাবা আর তো কিছুই দেয়নি,,,,।

অন্তরাঃ আপু ওগুলো আমার মায়ের গহনা,,,,,, মাকে ফেরত দিয়ে দিবো,,,

তিথিঃ ও মা বলে কী,,,,?? মা,,,,, মা,,,,,, শুনছো??

অন্তরাঃ(আপু মাকে ডাকতে ডাকতে চলে গেলো আর আমি আমার কাজে মন দিলাম। একটু পর আরিয়ান কোথা থেকে এসে আমার চুলের মুঠি ধরে গালে থাপ্পর বসিয়ে দিলো। আমি অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে)

চলবে,,,,,,,,,

💔#Divorce💔
Writer: Tahmina Toma
Part:3

অন্তরাঃ(আপু মাকে ডাকতে ডাকতে চলে গেলো আর আমি আমার কাজে মন দিলাম। একটু পর আরিয়ান কোথা থেকে এসে আমার চুলের মুঠি ধরে গালে থাপ্পর বসিয়ে দিলো। আমি অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে)

আরিয়ানঃ তোর সাহস কিভাবে হয় আমার বোনের সাথে খারাপ আচরণ করার??

অন্তরাঃ আ,,আমিতো আপুকে শুধু বলেছি,, গহনা গুলো আমি মাকে দিয়ে দেবো,,,,,

আরিয়ানঃ তুই বলতে চাইছিস আমার বোন মিথ্যে বলছে?? তোকে কালই বলেছিলাম আমার মা বোনের সাথে খারাপ আচরণ করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

অন্তরাঃ( উনি আবার মারতে আসলে তিথি আপু আটকালেন)

তিথিঃ কী করছিস ভাইয়া?? বাড়ি ভর্তি মেহমান,,,, এখন যদি কেউ এসব জানে মান সম্মান ধুলায় মিশে যাবে। তুই চল আমার সাথে,,,,(হাত ধরে টেনে)

আরিয়ানঃ দাঁড়া,,,,, (তিথির হাত ছাড়িয়ে অন্তরার সামনে দাড়ালাম) লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি আমার মা আর বোনদের সাথে ভুলেও খারাপ আচরণ করেছিস তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না,,,,

অন্তরাঃ(কথাটা বলে হনহনিয়ে বের হয়ে গেলেন রুম থেকে। তিথি আপু আমার দিকে তাকিয়ে একবার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বের হয়ে গেলেন। ধুপ করে বসে পড়লাম বেডে। গাল ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে,,, স্পর্শ করতে পারছি না। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আল্লাহর কাছে একটাই কথা বললাম ধৈর্য্য দাও সয্য করার)

আরিয়ানের মাঃ বৌমা,,,,,,

অন্তরাঃ (তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালাম।) আসসালামু আলাইকুম মা,,

মাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,, তোমার গহনা গুলো দাও তো,,,,

অন্তরাঃ মা,,,, ওগুলো আমার মায়ের গহনা। বাবা বিয়ের সময় দিয়েছিলো,,,,। আপনাদের গহনা দেওয়ার কথা ছিলো,,, দেননি তাই মায়ের গহনা দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলো,,,,,

মাঃ তোমার মত ফকিরের মেয়ে বাড়ির বউ করে এনেছি তাই তোমাদের সৌভাগ্য আবার গহনা,,,।

অন্তরাঃ মা,,,, যা বলার আমাকে বলুন,,, আমার বাবা-মাকে কিছু বলবেন না দয়া করে,,,,(একটু উচু গলায় বললাম)

মাঃ তোমার এতবড় সাহস আমার মুখে মুখে কথা বলো,,,, আরিয়ান,,,,

অন্তরাঃ(কোন মেয়েই পারবে না নিজের বাবা-মায়ের অপমান সয্য করতে।)

মাঃ আরিয়ান কোথায় গেলো?? (তিথিকে উদ্দেশ্য করে)

তিথিঃ এখন এসব বাদ দাও,,,,,, নতুন বউ দেখতে এসেছে অনেকে,,,,

মাঃ আচ্ছা,,,, অনুষ্ঠানের ঝামেলা যাক,,, বাড়ি আগে ফাকা হোক এর উচু গলায় কথা বলা বের করছি,,,
,,,,

বিথীঃ আসবো,,,,,??

অন্তরাঃ জী আসুন,,,,,,(উনিই বাকি ছিলেন,,, সেও চলে এলেন)

বিথীঃ তোমার খাবার,,,,, সরি আসতে লেট হয়ে গেলো,,, বাড়িতে অনেক মেহমান,, সব আমাকেই দেখতে হচ্ছে,, তাই তোমার দিকটা তিথিকে দেখতে বলেছি,,, কিন্তু খাবার পাঠাবো তাকে খোঁজেই পেলাম না,,, তাই আমিই নিয়ে এলাম।

অন্তরাঃ(যাক এই বাড়িতে একজন অন্তত মানুষ পেলাম।) না আপু ঠিক আছে,,,,

বিথীঃ তুমি আমার সম্পর্কে ছোট ভাইয়ের বউ আর বয়সেও অনেক ছোট,,,,,,, আমাকে বড় বোনের মত ভাবতে পারো। আরিয়ান তোমাকে অনেক বেশি পছন্দ করে ফেলেছিলো তাই কারো কথা শুনেনি। আমি ওকে বুঝিয়েছিলাম তোমার বয়স অনেক কম কিন্তু কোন কথাই শুনেনি। একটু মানিয়ে নিয়ো কষ্ট করে,,,,।

অন্তরাঃ হুম,,,, (এই বাড়িতে এই একজন মানুষকেই আপন মনে হলো)

বিথীঃ এখন খাবারটা খেয়ে নাও,,, তারপর আমি তোমাকে সাজিয়ে দিচ্ছি,,,, অনেকে তোমাকে দেখতে এসেছে।

অন্তরাঃ আচ্ছা আপু,,,,(খেয়ে নিলাম,,, অনেক ক্ষুদা পেয়েছিলো।)

বিথীঃ এটা খেয়ে নাও,,, (একটা মেডিসিন এগিয়ে দিয়ে)

অন্তরাঃ কীসের মেডিসিন এটা,,,??

বিথীঃ খেয়ে নাও ব্যাথা কমে যাবে,,,

অন্তরাঃ (অবাক হয়ে তাকালাম বিথী আপুর দিকে। কত তফাত আরিয়ান, তিথি আর বিথী আপুর মধ্যে। চুপচাপ মেডিসিনটা খেয়ে নিলাম। তারপর আপু সুন্দর একটা শাড়ি পাড়িয়ে নিচে নিয়ে গেলেন সাথে করে)

★বর্তমান★

রোজঃ তারপর কী হলো,,,??

অন্তরাঃ বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষে আমাদের বাড়িতে চলে গেলাম। আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমি আরিয়ানাকে চিনতে পারছিলাম না। সবার সাথে কী সুন্দর কথা বলছিলো,,,আমার ছোট বোনদের সাথে মজা করছিলো। আমাদের বাড়িতে আমার সাথে খারাপ ব্যবহারও করেনি। ভাইয়াও বাড়ি চলে এসেছে তার সাথে কত আড্ডা। আমার মা সহ প্রতিবেশী সবাই আরিয়ানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ভাইয়াও ভেবে নিলো আমি হয়তো সুখী হবো,,, আমিও ভেবেছিলাম আরিয়ানকে হয়তো ভুল বুঝেছিলাম আমি। দুদিন আমাদের বাড়িতে থেকে আবার চলে এলাম আমার শশুর বাড়ি।
পরদিন সকালেই আমার ভুল ভেঙে গেলো। আরিয়ানকে আমি ঠিকই বুঝেছিলাম।

রোজঃ কেন,,,,কী করেছিলো পরদিন সকালে,,,,,,।

ক্রিংক্রিংক্রিং

রোজঃ এক্সকিউজ মি,,,

অন্তরাঃ ওকে,,,,,(মিসেস রোজের ফোন বেজে উঠতেই উনি ফোন নিয়ে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলেন। আমি তাকিয়ে থাকলাম টেবিলের ওপর রাখা ম্যাগাজিনে ছাপানো একটা কাঁপল ছবির দিকে,,, কানে আসতে লাগলো মিসেস রোজের ফোন আলাপ)

রোজঃ আরে,,, আমি জানিতো লান্সের সময় হয়েছে,,,,খেয়ে নেবো।
,,,,,,,,,,,

রোজঃ হ্যাঁ,,, সব শুধু তোমারই মনে থাকে। খেয়ে নেবো বললাম তো,,,। তুমি খেয়েছো,,,?
,,,,,,,,,,,,,

রোজঃ আচ্ছা খেয়ে নাও আমিও খেয়ে নিচ্ছি,,,
,,,,,,,,

রোজঃ ওকে বায়,,, লাভ ইউ টু,,,,,(ফোন রেখে আবার অন্তরার সামনে চেয়ারে বসে পড়লাম) সরি,,, আসলে,,

অন্তরাঃ স্যার মনে হয় এখনো আপনাকে অনেক ভালোবাসে,,,??

রোজঃ হুম তা বাসে,,,, তোমার বয়সী একটা মেয়ে আছে,,, কানাডায় পড়াশোনা করছে,,, এখন দুজনই একা,,, তাই নিজেরাই নিজেদের দেখাশোনা করি,,, আমার ঠিক সময়ে খাবার না খেলে বিপি লো হয়ে যায়,,, তাই কাছে না থাকলেই কল দেয়,,,,

অন্তরাঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,, আপনি খেয়ে নিন,,, আমি বরং আজ আসি,,, আগামীকাল আবার আসবো,,,,

রোজঃ না তুমি একটু বসো,,, তোমার জীবনের কাহিনী পুরোটা না শুনলে রাতে ঘুমাতে পারবো না।

অন্তরাঃ আপনি সকাল কয়টায় চেম্বারে আসেন??

রোজঃ ৯ টায়,,,,

অন্তরাঃ আমি চলে আসবো,,,, আজ আমারও একটু কাজ আছে,,,

রোজঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,, এসো কিন্তু,,,।

অন্তরাঃ (মিসেস রোজের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেঁসে বের হয়ে আসলাম। বাড়ি ফিরতে হবে,,,,, রাস্তার অপর পাশে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে ওঠলো। হাসিটা কষ্টের ও না আর আনন্দের ও না। বিরবির করে বলে ওঠলাম আপনি সত্যি আমার রুপেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। আমার রুপের সাথে আপনার আমার প্রতি মুগ্ধতাও হারিয়ে গেছে। খোঁজে নিয়েছেন নতুন মুগ্ধতার উৎস। আজ আর চোখে পানি আসে না কষ্টে। কারণ হারানোর কিছু অবশিষ্ট নেই। যা ছিলো আগেই হারিয়ে ফেলেছি। রাস্তার অপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরিয়ান আর তার প্রিয়শীর দিকে একবার তাকিয়ে রিকশায় বসে পড়লাম।) চলুন মামা,,,, আস্তে আস্তে যান আজ আর কোন তাড়া নেই,,,, (এই শহরে সবাই ব্যস্ত,,,, আমার আজ কোন ব্যস্ততা নেই)

ক্রিংক্রিংক্রিং

অন্তরাঃ হ্যাঁ জ্যোতি বল,,,,(জ্যোতি আমার বেস্টফ্রেন্ড)

জ্যোতিঃ কোথায় তুই,,,,,??

অন্তরাঃ বাড়ি ফিরছি,,,,,কেন??

জ্যোতিঃ একটু ভার্সিটির সামনে আয়,,,,

অন্তরাঃ কিন্তু,,,,

জ্যোতিঃ প্লিজ ইয়ার,,,,,

অন্তরাঃ ওকে ওকে আসছি,,,,(রিকশা নিয়ে আমার ভার্সিটির সামনে এলাম। হ্যাঁ আমি এখন অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি,,,,সেটা ভাইয়ার জন্য পসিবল হয়েছে।) কী ব্যাপার জ্যোতি,,,,,??

জ্যোতিঃ আজকে ভার্সিটি এলি না কেন??

অন্তরাঃ ক্লাস তো হয়নি তাই আসিনি,,,,,

জ্যোতিঃ কোথায় গিয়েছিলি এখন,,,???

অন্তরাঃ লইয়ারের কাছে,,,,,।

জ্যোতিঃ আমি কোনদিন বিয়েই করবো না,,,,, তোকে দেখে বিয়ের সাদ মিটে গেছে,,,।

অন্তরাঃ আরে বোকা সবাই এক হয় নাকি,,,,,আর সবার কপাল কী আমার মতো পুড়া হয়,,??? পৃথিবীর সবাই যদি এক হতো আর সবার কপাল যদি আমার মতো পুড়া হতো তাহলে সমাজ থেকে বিয়ে নামাক প্রথাই উঠে যেতো। সমাজে এমন পুরুষও আছে যারা স্ত্রীর সামান্য আঘাতও সয্য করতে পারে না আবার আরিয়ানের মতো পুরুষও আছে যারা,,,,,,,

জ্যোতিঃ প্লিজ তুই আমার জন্য পুরনো কথা মনে করে কষ্ট পাস না,,,,,,,

অন্তরাঃ এখন আর আমার কষ্ট হয়না,,,,। বিয়ে করার আগে শুধু বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করিস সে কোন ধরনের পুরুষ,,,,,

জ্যোতিঃ এখন এসব বাদ দে,,,, চল ফুসকা খেতে যাবো,,,,,,,

অন্তরাঃ এখানেই তো আছে,,,, কোথায় যাবি আবার??

জ্যোতিঃ স্পেশাল ফুসকা খাবো চল,,,,,

অন্তরাঃ (জ্যোতি জোর করে লেকের পারে নিয়ে এলো,,,,, এখানকার ফুসকা সত্যি স্পেশাল,,,, আর সাস্থ্যকর ভাবে বানায়। ফুসকা স্টলের সামনে গিয়ে পা থেমে গেলো। এখন না চাইতেও চোখে পানি এলো,,, আমিও তো মানুষ কোন জড়পদার্থ নই,,,,, কত অভিনয় করা যায় শক্ত থাকার,,,,,,,,, পিছনে ফিরে আসতে নিলে কারো সাথে ধাক্কা লাগলো,,)

,,,,,,সরি মিস,,,, আমি খেয়াল করিনি,,,

অন্তরাঃ (একবার ছেলেটার দিকে তাকিয়ে চলে এলাম। জ্যোতি পিছন থেকে ডাকছে,,,,)

চলবে,,,,,,